রোদহীন বিকালে তুমি পর্ব -১২+১৩

#রোদহীন_বিকালে_তুমি✨
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১২

৩৪.
রুহানা আর রুহান চৌধুরী একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। একটা ছোট্ট রুমে দাঁড়িয়ে আছে তারা।যেখানে ছোট্ট কোনো মেয়ে বাচ্ছার খেলনা আর জামা রয়েছে।রুহানাকে রুহান জড়িয়ে ধরে আছে।রুহান রুহানাকে শান্তনা দিচ্ছে।
রুহানা রুহানকে বলল,,,,”কেনো আমাদের কাছে আমাদের মেয়েটা নেই।কে আমার মেয়েটাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরালো।”

রুহান বলল,,,”কি করবে বলো মেয়েটা এখন কি অবস্থায় আছে কে জানে!আমার মেয়েটা কার কাছে আছে কেমন আছে?”

রুহানা ফোন করে রোদকে।রোদ ফোন ধরতেই বলে,,,”ফারিহাকে নিয়ে চলে আসো দ্রুত আজকে যে তোমার বোনের জন্মদিন সেইটা হয়তো ভু*লে গিয়েছো”

রোদ ওপাশ থেকে বলে,,,”আমি তাড়াতাড়ি আসছি মম”

রোদ তাড়াতাড়ি করে ফারিহার কাছে যায়।আনিশা ফারিহা মাত্রই ক্লাস থেকে বের হলো।পরের ক্লাসটা এখনো ১ ঘন্টা পরে।রোদ ওদের কাছে এসে বলে,,,”ফারিহা আনিশা ইয়ামিন চলো আমার সাথে”

আনিশা বলল,,,,”কোথায় যাবো আমরা রোদ ভাইয়া”

রোদ বলে,,,”দ্রুত চলো!যেয়ে বলছি মম ফোন করে তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।”

আনিশা আলভিকে জানাতে চাইছিলো কিন্তু রোদ বলে পরে সে বলে দিবে।ওরা একটা এ’তি’ম খানার সামনে আসে।রুহান আর রুহানা চৌধুরী আগে থেকেই চলে এসেছেন।ফারিহা রোদকে বলে,,,”আপনি আমাকে বলেননি কেনো আপনার বোন আছে”

রোদ মলিন হেসে বলল,,,”আছে না ছিলো যে আজ থেকে ২০ বছর আগে হা’রি’য়ে গিয়েছে।”

ফারিহা বলল,,,”কিভাবে হা’রা’লো আপনার বোন”

রোদ বলল,,,,”জানি নাহ!সেদিন ঝড় বৃষ্টির দিন ছিলো আমি মম আর আমার রোদুবুড়ি আমার ছোট্ট রোদুকে নিয়ে যায় কেউ একজন চুরি করে।আমরা অবশ্য জানি কে চুরি করেছিলো কিন্তু তাকে খোঁজ করে জানতে পারি সে রোদুকে নিয়ে পালানোর সময়ই এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে।”

আনিশা আর ইয়ামিন ও শুনছিলো পাশ থেকে।ফারিহা বলল,,,,”সেই লোকটা কেনো চুরি করছিলো আর উনি যদি মা*রা গিয়ে থাকেন তাহলে তো আপনার বোনেরও মা*রা যাওয়ার কথা”

রোদ কিছুটা অ’স্থি’র হয়ে বলে,,,”না না আমার রোদুবুড়িআমার ছোট্ট বনু ম*র*তে পারে না ও বেঁ’চে আছে আর ও ফিরবে এটা আমার বিশ্বাস”

ওদের দেখে রুহানা আর রুহান চৌধুরী ওদের কাছে আসে।আনিশার দিকে রুহানা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।কেমন লাগছে ওনার সেদিনও এমন লেগেছিলো যেদিন উনি আনিশাকে প্রথম দেখেছিলেন।মনে হচ্ছিল আনিশা ওনার অনেক আপন কেউ।
রুহান চৌধুরী বলে,,,,”চলো রোদ সবাইকে খাবার দিবে আর ওরা দু’জন কারা”

রোদ আনিশার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,”আমার বোন ও সরি আমি আসলে ওকে বোন বানিয়েছি আমার রোদু তো আমার কাছে নেই তাই ওকে বানিয়েছি।আর ও আমার রোদুর বয়সিই”

রুহান আনিশাকে বলে,,,,”নাম কি তোমার মা”

আনিশাও বলে,,,,”জি আঙ্কেল আমার নাম আনিশা ইসরাত”[লেখিকা ইশা আহমেদ]

আনিশার রুহানার দিকে চো’খ যায়।রুহানাকে দেখে বলে,,,,”আন্টি আপনি এখানে!আপনিই মনে হয় রোদ ভাইয়ার মা”

রুহানা মা*থা নাড়ায় ওরা এ’তিম খা’নায় কিছু সময় কাটিয়ে রোদদের বাসায় যায়।রোদকে ফারিহা বলে,,,”আপনার বোনের একটা ছবি তো দেখান আমাদের”

রোদ তার বোন রোদসী চৌধুরী আনিশার একটা পিক এনে সবাইকে দেখায়।আনিশা ছবিটা দেখে থ’মকে যায়।কি দেখছে সে।ও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,,,,,,,”রো..দ ভা..ইয়া এই মে..য়েটাই কি আপনার বোন”

রোদ বলল,,,”হ্যা আনিশা ওই আমার রোদুবুড়ি আমার বনু।আর মজার ব্যাপার কি জানো তোমার নামও আনিশা আমার রোদুবুড়ির নামও আনিশা।রোদসী চৌধুরী আনিশা।”

ওরা সবাই ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছিলো।আনিশা হুট করে পার্সটা হাতে নিয়ে দৌড়ে চলে যায়।সবাই আনিশার হুট করে চলে যাওয়াতে অবাক হয়।ইয়ামিন দৌড়ে বাড়ির বাইরে যেয়ে দেখলো আনিশা সিএনজি করে চলে গিয়েছে।ইয়ামিন ভেতরে এসে কথাটা বলতেই ফারিহা আর রোদ চি’ন্তা’য় পরে গেলো।

৩৫.
“কিরে মু’খপু’রি এতোদিন পর আমাদের কথা ম’নে পরলো।বড়লোক জামাই পেয়েতো এই পালিত মা-বাবাকে ভু*লে গিয়েছিস।”

আনিশা কোনো কথার উত্তর না দিয়ে সে আগে যেই রুমে থাকতো সেই রুমে দৌড়ে চলে গেলো।গিয়ে নিজের সব কিছু এ’লো’মেলো করে কিছু একটা খুঁ’জতে লাগলো। কিছু সময় পর পেয়েও গেলো।একদৃ’ষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনিশা ছবিটার দিকে।আর তার সেই ছোট চেনটার দিকে যেটা তাকে যখন পেয়েছিলো তখন পরানো ছিলো।

আনিশা ওগুলো জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।আনিশার পালিত মা শারমিন বেগম এসে আনিশাকে বলে,,,,,”কিরে তুই এখানে এসে এইগুলো জড়িয়ে ধরে কাঁদছিস কেনো”

আনিশা চোখ মুছে ফেলে নিজের।শারমিন বেগমকে হুট করে জড়িয়ে ধরে।শারমিন বেগম খুব অবাক হন।কারণ এতো বছরে কখনোই আনিশা তাকে জড়িয়ে ধরছে।তার আজ আনিশার জন্য খারাপ লাগছে সে অনেক অত্যাচার করেছে মেয়েটার উপর। সবকিছু মেয়েটা মুখ বুঝে স*য্য করেছে।শারমিনও একহাত আনিশার পি’ঠে রাখলো।

আনিশা শারমিনকে ছে’ড়ে দিয়ে বলল,,,,”তোমাকে ধন্যবাদ আম্মু আমাকে এতো বছর দেখে রাখার জন্য!”

শারমিন ভ্রুকুচকে বলে,,,”কেনো কি হয়েছে”

আনিশা চো’খ মুছে বলে,,,,,”আমি আমার আসল পরিবার খুঁ’জে পেয়েছি”

শারমিন কিছু বলেন না।কিছু বলার মু’খও নেই।আনিশা শারমিন বেগমের হাতে কিছু টাকা দিয়ে চলে আসে।আনিশা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় শারমিন বেগমের সাথে কিছু কথা বলে আসে।রাস্তায় এলোমেলো পাঁয়ে হাঁটতে থাকে।হুট করে একটা গাড়ির সাথে ধা*ক্কা লাগে আনিশার।আনিশা সেন্সলেস হয়ে পরে।

৩৬.
আনিশা জ্ঞা’ন ফিরতেই নিজেকে আলভির রুমে আবিষ্কার করে।চোখ ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো আলভি তাকিয়ে আছে তার দিকে।চোখে কেমন অ’স্থি’রতা। আনিশা উঠে বসে।আলভি গ’ম্ভী’র কন্ঠে বলে,,,,”কোথায় ছিলে তুমি সারাদিন আর সন্ধ্যায় কেনো এ’লো’মে’লো পায়ে রাস্তায় হাঁটছিলে”

আনিশা ঘাবড়ে যায় আলভির কন্ঠস্বর শুনে।আমতা আমতা করে বলে,,,”আসলে আমি আমার পালিত বাবা মার বাড়ি থেকে ফিরছিলাম”

আলভি হুট করে আনিশার কাছে এসে ওর কাঁ’ধ ঝাঁ’কা’তে ঝাঁ’কা’তে বলল,,,”জানো যখন তুমি আমার গাড়ির সাথে ধা*ক্কা লেগে অ’জ্ঞা’ন হয়ে পরেছিলে তখন কতো ভ*য় পেয়েছিলাম।আর সারাদিন তোমায় খুঁ’জে খুঁ’জে ক্লা’ন্ত হয়েছি আমি।তোমার কি একটু কমনসেন্স নেই”

আনিশা মাথা নিচু করে বলে,,,,”দুঃখিত আমি আসলে আজকে অনেক বড় একটা জিনিস জানতে পেরেছি তার জন্যই ওই বাড়ি থেকে খুশির জন্য…..”

আলভি ভ্রু কুচকে বলে,,,”কি খুশির খবর জেনেছো”

আনিশা আলভিকে হুট করে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,”বলবো কালকেই বলবো আমি আর এ’তি’ম নই আমারও বাবা মা ভাই আছে যারা আমায় খুব ভালোবাসে।আর আমি আজকে নিজের জন্ম…..”

আনিশা টের পেলো ও কি করে বসেছে।ও তাড়াতাড়ি আলভিকে ছেড়ে অন্যদিকে তাকালো।আলভি ভ্রু কুচকে বলল,,,,”নিজের জন্ম কি?”

আনিশা বলে,,,,”ও কিছু না ও জেনে আপনার কি লাভ আপনি তো আর আমায় ভালো…”

আলভি এবার বি*র*ক্ত নিয়ে বলে,,,”কি অ’র্ধে’ক অ’র্ধে’ক কথা বলছো তুমি আনিশা।আমি আহাকে খাবার আনতে বলেছি ও খাবার আনতে গিয়েছে খেয়ে ঘুমাও”

আহা খাবার দিয়ে গেলো আনিশা খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।আলভি তাকিয়ে আছে আনিশার দিকে।আনিশার সেদিনের কথাটা মনে পরছে আলভির।আনিশা হয়তো সত্যিই বলেছিলো এক ছাঁদের নিচে থাকতে থাকতে একে অন্যের প্রতি মায়া জন্মায়।তারও এখন আনিশাকে আর বি*র*ক্ত লাগে না।কিন্তু ভালোবাসে না সে আনিশাকে।কিন্তু খুব করে ফারিহাকে ভু*লে আনিশাকে ভালোবাসতে চাই আলভি।ফারিহা তার জন্য নি’ষি’দ্ধ এখন।

৩৭.
আলভি আর রোদদের পরিবার রোদদের বাড়িতে উপস্থিত। কারণ সবাইকে সকালে আনিশা ডেকেছে রোদদের বাসায়।আলভি মোটেও আসতে চাইনি কিন্তু আনিশা জো*ড় করেই নিয়ে এসেছে।সবাই চিন্তিত কি বলবে আনিশা।আনিশা রুহানা চৌধুরীকে বলল,,,”আপনার মেয়েকে হা’রা’নোর সময় কি আপনার মেয়ের সাথে কোনো চেন ছিলো”

রুহানা হ্যা বলে।আনিশা একটা চেন বের করলো আর চেনের উপরে লেখা ছিলো আনিশা।রুহানা চেনটা দেখে আনিশার হাত থেকে একপ্রকার ছি’নি’য়েই নিলো।বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,”তুমি এই চেনটা কোথায় পেয়েছো এটা তো আমার রোদসীর”

আনিশা হাসে।তারপর বলে,,,,”আজ থেকে ২০ বছর আগে আমার পালিত বাবা মার কাছে একটা লোক আমাকে রেখে তার কোন কাজে গিয়েছিলো কিন্তু লোকটা আর ফেরত আসেনি পরে জানতে পারে লোকটা এক্সিডেন্টে মা*রা গিয়েছে।আমার পালিত বাবা অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলেন তাই আমাকে তার কাছে রেখে দিয়েছিলো।আমি কালকে রোদসী চৌধুরী আনিশার ছবি দেখে নিজের বাসায় গিয়ে এই চেনটা বের করি আর চেনটা আর কারো না আমারই ছিলো”

আনিশার কথা শেঃষ হওয়ার আগেই রুহানা দৌড়ে এসে আনিশাকে জড়িয়ে ধরে।আনিশার সারামুখে চুমু দিয়ে বলে,,,,”আমার রোদসী মা”

সবাই বুঝতে পারে আনিশাই রোদসী চৌধুরী আনিশা।রোদ আনিশাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।তার রোদুবুড়ি তার কাছে ফিরে এসেছে।সবাই আনিশাকে শান্তনা দিলো এতো বছরের জন্য।আলভি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনিশার দিকে।তার কেনো জানি এখন আনিশার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে।

ফারিহা সবই খেয়াল করেছে তার খুব ভালো লাগছে আনিশা তার পরিবার ফিরে পেয়েছে।রোদ তার রোদুবুড়িকে পেয়েছে।রুহান চৌধুরী এতো বছর পর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে।

চলবে……!#রোদহীন_বিকালে_তুমি✨
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৩

৩৮.
আজ সাতদিন হলো আনিশা তার বাড়িতে আছে।আলভি খুব মিস করছে আনিশাকে।আলভি আনিশার সব কান্ডগুলো মনে করে একা একাই হেসেছে।আনিশার ভ*য় পাওয়া মুখ খিলখিলিয়ে হাসির আওয়াজ সবই মিস করেছে।রুহানা তো তার মেয়েকে পেয়ে তাকে ছাড়তেই চাইছে না।আলভি বি*র*ক্তই হয়েছে যখন তারা আনিশাকে রেখে দিতে চেয়েছে।

আলভি আপাতত ফোন নিয়ে বসে আছে।আনিশাকে ফোন দিবে কি দিবে ভাবছে।কিছু না ভেবে কল দিয়েই দিলো।আনিশা বেলকনিতে বসে আলভির কথায় ভাবছিলো।ফোনের শব্দে ধ্যা’ন ভা’ঙে।ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই আলভির নাম দেখে মনটা খুশি হয়ে গেলো।হৃদয়ে খুশির ঢেউ বয়ে যায়।ও খুশি মনে কলটা রিসিভ করে।

রিসিভ করে হ্যালো বলতেই আলভি বলে,,,,”কবে আসছো”

আনিশা আলভির ক*ন্ঠস্বর শুনে হার্টবিট লাফাতে থাকে।ও কাঁ’পা কাঁ’পা কন্ঠে বলে,,,”জানি না মম আর বাবাই মনে হয় এখন যেতে দিবে না।”

আলভি কিছু বলল না।ফোনটা না কে*টে বসে রইলো।আনিশা আলভির নিশ্বাসের শব্দ শুনতে লাগলো।বেশ কিছু সময় পর আনিশা কাঁপা কাঁপা ক’ন্ঠে বলল,,,”শু…নুন আ..পনি কি আ..মাকে কা..লকে নিতে আসবেন”

আলভি কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে,,,,”দেখি আমি সিয়র বলতে পারছি না”

আনিশার মন খা’রা’প হলো।ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,,”আপনি ঠিলমতো ঔষধ খাচ্ছেন তো”

আলভি হুম বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কে’টে দিলো।আনিশা ফোনের দিকে তাকিয়ে দী’র্ঘশ্বাস ফেলল।লোকটা ফোন দিলো আজ সাতদিন পর তাও দুই একটা কথা বলে ফোনটা কে’টে দিলো।আনিশা আলভির ভাবনায় আবার ম’গ্ন হয়ে যায়।তার সব কিছু বি*র*ক্ত লাগছে আলভিকে ছাড়া।

রোদ এসে পেছন থেকে আনিশাকে বলে,,,,”রোদুবুড়ি তুই এই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস চল রুমে চল”

আনিশা রোদের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,”ভাইয়া আমার ভালো লাগছে না আমাকে একটু একা থাকতে দেবে”

রোদ বুঝলো আনিশার ম’ন খারাপ।ও আনিশার পাশে বসলো।তারপর আনিশাকে বলল,,,”আমি জানি তোর আলভির কাছে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু রোদুবুড়ি ও তোকে অনেক ক*ষ্ট দিয়েছে এখন ওকেও একটু বোঝানোর পা’লা।আর ও যে তোকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তা ওকেও বুঝতে হবে”

আনিশা বি’ষ্ম’য়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,,”আলভি আমায় ভালোবাসে তুমি কীভাবে জানলে ভাইয়া”

রোদ হেসে বলে,,,,”আমি ওর বেস্টফ্রেন্ড চিনি ওকে।তোকে মম যেদিন এখানে থাকার কথা বলল তখন আমি ওর চোখে বি*র*ক্তি দিখেছি।ও যাওয়ার সময়ও তোর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তুই খেয়াল না করলেও আমি করেছি”

আনিশা বলে,,,”তো আমি এখন কি করবো ভাইয়া”

রোদ বাঁ’কা হেসে বলে,,,,”আমি এখন যা বলবো তুই শুধু তাই করবি বুঝলি বুড়ি আর কাল সকালে আলভি আসলে আমার কথায় শুধু হ্যা বলবি”

আনিশা মা*থা নাড়ায়।রোদ আনিশাকে ঘুমাতে বলে চলে যায়।আনিশা ভাবতে থাকে তার ভাইয়া কি করবে কাল।

৩৯.
আলভি সকাল সকালই আনিশাকে নিতে বেরিয়ে পরে।আজকে ও ড্রাইভার আনেনি।বি*র*ক্ত লাগে আলভির।তাই নিজেই কাউকে কিছু না বলে একাই আনিশাকে নিতে চলে আসে।আনিশার বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে নামে।অস্থির লাগছে একটু ওর।তাও নিজেকে স্বাভাবিক করে কলিংবেল বাজায়।রোদদের সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দেয়।
আলভি সার্ভেন্টকে বলে,,,,”সবাই কি ঘুম?”

সার্ভেন্ট মা*থা নাড়াতেই আলভি আবার বলে,,,”আনিশার রুমটা কোথায়”

সার্ভেন্ট দেখিয়ে দিতেই আলভি উপরে আনিশার রুমে সামনে চলে আসে।দরজা খোলা দেখে অবাক হয়।ভেতরে ঢু’কে পরে ও।ভিতরে ঢু’কে দরজা আ’টকে দেয়।বিছানায় চোখ যেতেই চোখ আটকে যায় ওর।আনিশা টেডিবিয়ার জড়িয়ে এ’লোমে’লো ভাবে শুয়ে আছে।চুলগুলো আনিশার মুখের উপর পরে আছে।আলভি সোফায় বসে আনিশাকে খুঁ’টিয়ে খুঁ’টিয়ে দেখতে থাকে আনিশাকে।

আনিশা নড়েচড়ে উঠে।আলভি আনিশার পাশে বসে।আনিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।আলভি বুঝতে পেরেছে আনিশা আগে কতো কষ্ট করেছে।এখন তার সুখ সবদিক দিয়ে।আচ্ছে সে কি সত্যি এই মেয়েটার মা’য়া’য় জড়িয়ে পরেছে।এই সাতদিন কেনো মিস করেছ সে।বলতে গেলো ছ’টফট করেছে।ঠিকমতো ঘুমাইনি,খেতেও পারেনি।

৪০.
ফারিহা সবই দেখেছে।ফারিহা নিজের জন্য চা বানাতে নিচে নামছিলো তখনই আলভিকে দেখেছে।ওর কষ্ট লাগলেও একদিক দিয়ে প্রশান্তি পাচ্ছে। কারণ তার আনি আজ তার পরিবার তার ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছে।কিন্তু তার আগের মতো ক*ষ্ট হচ্ছে হালকা ক*ষ্ট হচ্ছে।হয়তো সেও রোদের উপর দুর্বল হয়ে পরছে।

পরারই কথা ছেলেটা প্রচন্ড ভালোবাসে যে তাকে।ও রুমে চলে আসে।রোদ ঘুমাচ্ছে, রোদের দিকে ঝুঁ’কে বলে,,,”আমি আপনাকে ভালোবাসি কি না জানি কিন্তু ভী’ষন ভালোবাসতে চাই!জানি আপনি ভালোবাসেন ভী’ষণ তাই তো এখন আর আলভিকে সেভাবে মনে পরে না।”

রোদ হুট করে ফারিহাকে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।ফারিহা হ’ত’ভ’ম্ব হয়ে থাকে।ঘোর ফিরতেই ফারিহা নিজেকে ছাড়ানোর চে’ষ্টা করতে লাগে।রোদ ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,,,,”তুমি কি আমার প্রেমে পড়ে গেলে নাকি ফারুপরি”

ফারিহার কাছে রোদের কন্ঠটা নে’শার মতো লাগছে।ও নিজেকে সামলে বলল,,,,”মোটেও না আমি আপনার প্রেমে কেনো পরবো আপনি তো শাঁ’কচু’ন্নির বর”

কথাটা বলেই ফারিহা হাসলো।রোদ ফারিহাকে আরো শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরে হেসে বলে বলে,,,,”আমি শাঁ’কচু’ন্নির বর হলে শাঁ’ক’চু’ন্নিটা তো তুমিই”

ফারিহা নিজেই নিজের কথায় ফেঁসে গেলো।রোদ হেসে বলল,,,”ন’ড়া’চ’ড়া করবে না আমি ঘুমাবো ঘুমাতে দেও আমায়”

৪১.
১০টার দিকে সবাই উঠেছে।আনিশা আলভিকে নিজের রুমে দেখে প্রথমে চমকালেও নিজেকে সামলে নিয়েছে।কিন্তু নিজের দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।সে কখনো আলভির সামনে ওড়না ছাড়া যাইনি কিন্তু আজকে!ইস ল*জ্জার কথা আনিশার ল*জ্জায় মা*থা কা*টা যাচ্ছে।কিন্তু আনিশা কখনোই ভাবেইনি আলভি আসবে।প্রচুর খুশি হয় ও।আলভিকে দেখে প্রথমে রুহানা আর রুহান চৌধুরী অবাক হলেও বুঝতে পারলো আলভি তাদের মেয়েকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।

রুহান আর আলভি সোফায় বসে গল্প করছে।রুহানা আর আনিশা রান্নাঘরে।রুহানা পা*গ*ল হয়ে গেছেন।জামাই প্রথম বাড়িতে এসেছে আর আদর যত্ন না করলে হয়।আনিশাও মাকে সাহায্য করছে।রোদ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,,,,
“তা আলভি হঠাৎ আমার বাড়িতে যে কি ম’নে করে আসলি”

আলভি রোদের কথায় পা’ত্তা না দিয়ে বলল,,,,”আঙ্কেল আমি আনিশাকে নিয়ে যেতে চাই অনেক দিনতো হলো এখানে”

রুহান হেসে বলল,,,,”তোমার বউ তুমি নিতে পারো কিন্তু বাবা আমাদের কাছে কিছু দিন থাকলে ভালো হতো মেয়েটাকে অনেকদিন পর পেলাম তো”

রোদ সোফায় বসতে বসতে বলল,,,,”বাবাই কি বলছো কি রোদসী এই বাড়ি থেকে কোথাও যাবে না।এটা ওর বাড়ি আর ও এখানেই থাকবে।আর আলভির বউ মানে কি ও কি মানে রোদসীকে নিজের বউ হিসাবে। ও নিজেই বলেছে মানে না।তাই আমিও আমার বোনকে ওর কাছে দিবো না।এতোদিন ওর কোনো যাওয়ার জায়গা ছিলো না এখন ওর বাবা ভই দু’জনেই বেঁচে আছে। আর আলভি তো কম ক*ষ্ট দেয়নি ওকে।তাই আমি ভেবেছি ওদের ডি’ভো’র্স করাবো”

রুহান অবাক হয় রোদের কথা শুনে ফারিহাও প্রচুর অবাক হয়।আলভি রা*গে নিজের হাত মুঠ করে।রাগ ক’ন্ট্রো’ল করার চে’ষ্টা করতে থাকে।ও নিজেকে ক’ন্ট্রো’ল করে বলে,,,,
“আমি ওকে মানি আর না মানি এটা কোনো কথা না কথা হচ্ছে ও আমার বউ আর আমাদের বাড়িতে ডি’ভো’র্স দেওয়ার রীতি নেই তাই আমি আমার বউকে ছা’ড়’ছি না”

রোদ মনে মনে হেসে মনে মনে ভাবে,,,,”এই ছেলে ভা’ঙ্গ’বে তবু মচকাবে না।আমিও রোদ তোর মুখ থেকে আমার বুড়িকে ভালোবাসার কথা বের করেই ছাড়বো তা না হলে আমার নাম ও রোদ চৌধুরী নয় হুহ”

রোদ বলে,,,,”যেখানে ভালোবাসা নেই সেই সম্পর্ক রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি তোর থেকেও ভালো ছেলে দেখে আমার রোদসীকে বিয়ে দেবো!”

আলভি কিছু না বলে হনহন করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।আলভি বেরতেই রুাহন রে*গে বলল,,,”কি শুরু করেছো তুমি রোদ আমার মেয়েটার সং’সা’র ভা’ঙতে চাইছো কেনো তুমি”

ফারিহাও বলে,,,,”আপনি কি করছেন টা কি আমার ম’নে হয় আলভিও আনিকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তারপরও আপনি ডি’ভো’র্সের কথা বললেন কেনো?”

রোদ হুট করে জো’রে জো’রে হাসতে লাগলো।হাসি থামিয়ে বলে,,,,,”বুদ্ধুটা যে আনিশাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তা আমি জানি কিন্তু ব্যাটা শি’কা’র করবে না আর নিজেও মা’নতে চায় না।তাই একটু না’ট’ক করছি আর কি বাবই তুমি এর পরের বার ও এখানে আসলে ওকে বলবা ডি’ভো’র্সের কথা।”

চলবে,,,,,,!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here