রোদ্দুরে মেঘের বর্ষন পর্ব -১৯+২০

#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৯

“একরাশ বিরক্ত নিয়ে নিজের রুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তানজু!’কারন তার গলার নেকলেসের হুকের সাথে চুল আঁটকে গেছে!’আর সেটাকেই বেশকিছুক্ষন যাবৎ ছাড়ানোর ট্রাই করছে কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ সে!’শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল তানজু!’

“এমন সময় নিজের রুম থেকে বের হলো রিয়াদ!’পরনে তার হলুদ রঙের পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা, চুলগুলো বরাবরের মতো সুন্দর করে গোছানো,হাতে ব্লাক ওয়াচ ব্যাস এতটুকু সাজেই বেশ লাগছে রিয়াদকে!’

“তানজু রিয়াদকে দেখেই দরজার পাশে সোজা হয়ে পিছনে হাত রেখে দাঁড়িয়ে পড়লো!’তানজুকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে রিয়াদও দাঁড়িয়ে বলে উঠলঃ

—“কি হলো দাঁড়িয়ে পরলে যে, যাবে না নিচে?’

“রিয়াদের প্রশ্নে কিছুটা বিস্মিত হয় তানজু!’কিছুটা বিস্মিত কন্ঠ নিয়েই বলে সেঃ

—“হুম যাবো স্যার আপনি যান…

“উওরে কিছু বলে না রিয়াদ, তানজুকে মাথা থেকে পা অবধি স্ক্যান করে সে!’হলুদ রঙের জামদানি শাড়ি, সাথে দু’হাত ভর্তি হলুদ কাঁচের চুড়ি,গলায় হলুদ রঙের পুঁতির নেকলেস, কানে হলুদ রঙের দুল,খোলা চুল,চোখে কাজল সাথে মুখে হাল্কা মেকাপ,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে!’এই প্রথমবার রিয়াদ তানজুকে শাড়িতে দেখছে!’তানজুকে বেশ লাগছে রিয়াদের কাছে!’কিন্তু কোথাও একটা খামতি দেখছে রিয়াদ,সেটা হলো তানজুর মুখ!’যেটা ওর লুকিং এর সাথে একদমই মেচ করছে না!’রিয়াদ বুঝে গেছে তানজু কোনো একটা সমস্যায় পড়েছে!’রিয়াদ তানজুর দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“এনি প্রবলেম তানজু…?’

“রিয়াদের কথা শুনে তানজু মাথা নিচু করে ফেলে!’তানজুর কাজে রিয়াদ কিছুটা অবাক হয়ে বললোঃ

—“কি হয়েছে আমায় বলো…

“তানজু বুঝতে পারছে না এখন তার ঠিক কি করা উচিত,আশেপাশে কাউকেও পাচ্ছে না যে তাকে ডেকে হেল্প চাইবে সবাই বাহিরে গেছে,তারওপর বাহিরে লাউডে মিউজিক বাজছে যার কারনে এখান থেকে কাউকে ডাকলেও কেউ শুনতে পাবে না!’অসহায় ফেস নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তানজু!’তানজুকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিয়াদ আবারো বলে উঠলঃ

—“Can I help you somehow Tanju?'[আমি কি তোমাকে কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি, তানজু?]

“রিয়াদের প্রশ্নে তানজু কিছু বললো না!’তানজুকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠল রিয়াদঃ

—“ঠিক আছে তুমি দাঁড়িয়ে থাকো আমি যাচ্ছি…

“এই বলে রিয়াদ অগ্রসর হতে লাগলো সামনের দিকে!’রিয়াদকে যেতে দেখে তানজু আরেকবার আশেপাশে তাকালো, শেষমেশ আর কোনো উপায় না পেয়ে রিয়াদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলঃ

—“স্যার…

“তানজুর আওয়াজ পেতেই রিয়াদ দাঁড়িয়ে পরলো তারপর আবার তানজুর দিকে এগিয়ে এসে বললোঃ

—“হুম বলো…

“রিয়াদের কথা শুনে মিনমিন কন্ঠে বললো তানজুঃ

—“বলছিলাম কি স্যার?’

“তানজুর কথা শুনে কিছুটা বিরক্ততা ফিল হলো রিয়াদের!’কিছুটা বিরক্ততা নিয়েই বলে উঠল সেঃ

—“হুম বলো, বলছো না কেন তুমি?’…

“রিয়াদের এবারের কথা শুনে তানজু চোখ বন্ধ করে একশ্বাসে বলে উঠলঃ

—“আসলে স্যার আমার গলার নেকলেসের সাথে চুল আঁটকে গেছে আপনি একটু হেল্প করবেন প্লিজ….

“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ চোখ বড় বড় করে বললোঃ

—“কি…

____

“আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তানজু আর ওর পিছনেই রিয়াদ!’তানজু তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে, এখান থেকেই রিয়াদকে স্পর্শ দেখতে পাচ্ছে সে!’

“অন্যদিকে…

“রিয়াদ তাকিয়ে আছে তানজুর পিছনের চুলের দিকে!’কি থেকে কি করবে কিছুই যেন বুঝতে পারছে না রিয়াদ!’এমনটা নয় এই ধরনের কোনো কাজ সে করেনি ফিল্মের একটিং করার সময় এই ধরনের অভিনয় সে করেছে কিন্তু তখন তেমন কিছু ফিল হয় নি তার কিন্তু এখন কেমন নার্ভাস লাগছে রিয়াদের!’রিয়াদ নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না এমন কেন লাগছে তার!’রিয়াদ জোরে শ্বাস ফেলে তানজুর পিছনের চুলগুলো সরিয়ে দিল!’তারপর আস্তে আস্তে নেকলেসের হুকের সাথে আটকানো চুলগুলো ধীরে ধীরে ছাড়াতে লাগলো!’

“রিয়াদের হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো তানজু!’

“কিছুক্ষন পর….

“রিয়াদ তানজুর চুলগুলো ছাড়িয়ে দিয়ে ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলে উঠলঃ

—“হয়ে গেছে!’

“কিন্তু কথাটা হয়তো তানজুর কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি!’তাই চুপচাপ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে তানজু!’তানজুর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে রিয়াদ তাকালো আয়নার দিকে!’তানজু তখনও চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে!’তানজুর কাজে হাল্কা হাসলো রিয়াদ তারপর তানজুর দিকে হাল্কা ঝুঁকে ওর কানের কাছে তাঁর মুখ নিয়ে বললোঃ

—“হয়ে গেছে তো আর কতক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকবে প্রিয়সী….

“প্রিয়সী” নামটা শুনতেই চমকে উঠলো তানজু!’সাথে সাথে চোখ খুলে তাকালো সে!’ততক্ষণে রিয়াদ রুম থেকে বেরিয়ে গেছে!’ তানজু কিছু্ক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে আয়নায় নিজেকে আর একবার দেখে সেও বেরিয়ে গেল রুম থেকে….

___

“সন্ধ্যার আলোকিত পরিবেশের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাসলিমার গায়ে হলুদ!’প্যান্ডেলের চারদিকে জ্বলছে লাইট সাথে ফুল দিয়ে সাজানো স্টেজ!’স্টেজে বসে আছে তাসলিমা আর তার পাশেই হিয়ামিনি!’এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো রিয়াদ!’রিয়াদকে দেখে সবাই তাকিয়ে রইলো!’মেয়েরা তো পুরো হা হয়ে গেছে রিয়াদকে দেখে!’ফিল্মের হিরো বলে কথা,কিছু মেয়েরা তো বলে উঠলঃ

—“ওয়াও,হি লুকিং সো কিউট এন্ড হ্যান্ডসাম…

.

“রিয়াদ ভিতরে আসতে না আসতেই কিছু মেয়েরা তাকে ঘিরে ধরলো,আর বললোঃ

—“ওয়ান সেল্ফি প্লিজ!’

“রিয়াদও না করলো না খুুশি মনে সবার সাথে সেল্ফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে!’সেই মুহুর্তেই সেখানে এন্ট্রি নিলো তানজু,শাড়ির কুঁচি ধরে হেঁটে আসছে সে!’

“এদিকে স্টেজে তাসলিমা কিছুটা হতাশা নিয়ে বলে উঠল হিয়ামিনিকেঃ

—“তানজুর কি এখনো হয়নি হিয়ামিনি,গায়ে হলুদ শেষ হলে আসবে ও…

“তাসলিমার কথা শুনে কোনো উওর দিলো না হিয়ামিনি!’হিয়ামিনিকে চুপ থাকতে দেখে তাসলিমা ওর দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“কি হলো কথা বলছিস না কেন?’

“তাসলিমার কথা শুনে হিয়ামিনি সামনের দিকে আঙুল দিয়ে বলে উঠলঃ

—“ওই দেখো তানজুকে কি লাগছে…?’

“হিয়ামিনির কথা শুনে তাসলিমাও তাকালো সামনের দিকে!’তানজুকে দেখে সেও হা হয়ে গেছে!’তানজুকে শাড়িতে তারাও এই প্রথমবার দেখছে!’আদি তো তানজুকে দেখেই ফ্লাট হয়ে গেছে!’

.

“অন্যদিকে বেচারি তানজু শাড়ি নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে তাকে যে সবাই চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে সেটাই বুঝতে পারে নি!’সে ব্যস্ত তার শাড়ি নিয়ে, শাড়ি পড়ে ঠিক ভাবে হাঁটতেও পারছে না তানজু!’এমন সময় তার কাছে আসলো আদি!’তানজুর মাথায় চাটি মেরে বলে উঠল সেঃ

—“তোকে কি লাগছে রে…

“আদির কাজে তানজু তাকায় আদির দিকে তারপর বলেঃ

—ধুর!’ এসব শাড়ি সামলানো চারটে খানিক কথা আমি তো পড়ে হাঁটতেই পারছি না…

—ওহ…

—“তোর ওহ বলা বাদ দিয়ে আমার হাত ধর আদি…

“তানজুর কথা শুনে আদি কিছুটা চমকে বললোঃ

—“তোর হাত…

—“না পাশের বাড়ির খালাম্মার..

—“তানজু…

—“এতো প্যাক প্যাক কেন করোস তুই হাত দে..

“এরপর তানজু আদির হাত ধরে এগিয়ে যায় স্টেজের দিকে!’

.

“তানজুকে আদির হাত ধরে এগিয়ে যেতে দেখে ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড রাগ হয় রিয়াদের!’ রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে থাকে সে তানজুর যাওয়ার পানে!’

.

“স্টেজের ওপর হিয়ামিনি তাকিয়ে আছে তানজু আর রিয়াদের দিকে!’কিছু একটা নটিছ করছে সে!রিয়াদ তানজু দুজনেই হলুদ পড়ে আছে আর দুজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে!’হিয়ামিনি বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলঃ

—“তাসলিমা আপু তানজু আর রিয়াদ ভাইয়াকে কাপল কাপল মনে হচ্ছে না….

“হিয়ামিনির কথা শুনে তাসলিমা অবাক হয়ে বললোঃ

—“মানে…

—“মানে আবার কি তুমি দেখো না তানজু হলুদ শাড়ি আর রিয়াদ হলুদ পাঞ্জাবি দুজনকে কিন্তু বেশ লাগছে তাই না,রিয়াদ ভাইয়া আমাদের দুলাভাই হলে মন্দ হতো না কিন্তু….

—“তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে হিয়ামিনি কোথায় সুপাস্টার রিয়াদ আর কোথায় আমাদের তানজু,ওদের মধ্যে কতটা দূরত্ব বলতো…?’

“তাসলিমার কথা শুনে নিরব কন্ঠে গালে হাত দিয়ে বলে হিয়ামিনিঃ

—“ভাগ্য কি আর দূরত্ব দেখে আপু….

“হিয়ামিনির কথা শুনে স্টেজে ওপর উঠতে উঠতে বলে উঠল তানজুঃ

—“কিসের দূরত্ব?’

“আচমকা পিছন থেকে তানজুর কথা শুনে চমকে উঠলো হিয়ামিনি!’কিছুটা আমতা আমতা করে বললো সেঃ

—“কই কিছুর দূরত্ব নয় তো…

—“না আমি স্পষ্ট শুনলাম তুই আর আপু মিলে কোনো কিছুর দূরত্ব নিয়ে কথা বলছিস…

“তানজুর কথা শুনে হিয়ামিনি আর তাসলিমা একে অপরের দিকে তাকায় তারপর ওদের মাঝখান থেকে তাসলিমা বলে উঠলঃ

—“ওসব বাদ দে, আগে বল তোর এতক্ষণে আসার সময় হলো সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি আমি….

“তাসলিমার কথা শুনে তানজু তাসলিমার সামনে থাকা হলুদের বাটি থেকে, হাতে একটুখানি হলুদ নিয়ে, তাসলিমার গালে লাগিয়ে দিয়ে বললোঃ

—“সরি আপু সাজতে গিয়ে একটু দেরি হয়ে গেল আর কি?’…

“গান বাজনা, নাচ, হুল্লোড়ের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে গেল তাসলিমার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান!’পুরো সন্ধ্যাটাই খুব আনন্দের সাথে কেটে গেছে তাদের!’

___

“রাত_১১ঃ০০টা….

“শাড়ির কুঁচি ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে তানজু!’ এমন সময় তার হাতের ফোনটা টুং করে উঠলো উপরে রিয়াদের মেসেজ দেখে কিছুটা অবাক হয় তানজু!’তাড়াতাড়ি মেসেজ চেক করতেই দেখলো তানজুঃ

—“ছাঁদে আসো তানজু কিছু কথা আছে ‘কাম ফাস্ট?’

“এতরাতে রিয়াদের এমন মেসেজ দেখে অনেকটাই অবাক হয় তানজু!’অবাক হয়েই বলে সেঃ

—“এত রাতে কি বলবেন আমায় রিয়াদ স্যার?’
!
!#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২০

“রাতের জোৎসা ভরা আলোতে ছাঁদের ওপর নীরবে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ!’কিছুটা মন খারাপ হচ্ছে তার!’অল্প কিছুদিনেই তানজুর পরিবারকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে রিয়াদ!’তানজুর মায়ের মুখে “বাবা” ডাক শুনতে বেশ লাগে রিয়াদের!’সাথে তানজুর বাবার ব্যবহারও,না চাইতেও তানজুর গ্রাম সাথে তানজুর পরিবারকে ভালোবেসে ফেলেছে সে!’এই মুহূর্তে রিয়াদের মনে হচ্ছে এখানে না আসলেই হয়তো ভালো হতো!’বাড়ির নিচে সাজানো প্যান্টেলের বাতিগুলো এখনও জ্বল জ্বল করছে সাথে সবকিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে!’রিয়াদ সেদিকেই নীরবে তাকিয়ে অাছে!’

“আজকে রাতের আকাশের তাঁরাগুলোও জ্বল জ্বল করছে খুব!’রিয়াদ ছোট্ট শ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকালো!’এমন সময় শাড়ির কুঁচি ধরেই ছাঁদে প্রবেশ করলো তানজু!’রিয়াদকে ছাঁদের কিনারায় নিরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হয় সে!’তারপর তেমন কিছু না ভেবে নিজেকে স্বাভাবিক করে এগিয়ে গেল তানজু রিয়াদের দিকে!’তানজু হেঁটে রিয়াদের কাছে এসে ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলে উঠলঃ

—“আমায় ডেকেছিলেন স্যার?’

“হঠাৎই তানজুর আওয়াজ শুনে রিয়াদ তার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো তারপর তানজুর দিকে ঘুরে বললোঃ

—“হুম কিছু কথা ছিল…

—“ঠিক আছে বলুন স্যার..

“তানজুুর কথা শুনে রিয়াদ কিছুক্ষন চুপ করে রইলো!’রিয়াদকে চুপ থাকতে দেখে তানজু তাকিয়ে রইলো রিয়াদের মুখের দিকে!’সে বেশ বুঝতে পেরেছে কিছু একটা হয়েছে রিয়াদের!’তানজু রিয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ

—“কিছু কি হয়েছে স্যার আপনার চোখ মুখ ঠিক লাগছে না…

“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলে উঠলঃ

—“না তেমন কিছু হয় নি…

—“ওহ আচ্ছা, তাহলে বলুন কি বলবেন আমায়?’

“এই বলে তানজু ছাঁদের রেলিং এর ওপর বসে পড়ে!’তানজুর কাজে রিয়াদ তানজুর হাত ধরে বলে উঠলঃ

—“এটা কি করছো পড়ে যাবে তো…

—“না স্যার পড়বো না আপনি বলুন?’

“তানজুর কথা শুনে রিয়াদও আর জোর করলো না তানজুর হাত ছেড়ে দিয়ে পিছন ঘুরে বলে উঠল সেঃ

—“আমাকে যেতে হবে তানজু….

“রিয়াদের কথা শুনে তানজু তেমন কোনো রিয়েকশন না দিয়ে বলে উঠলঃ

—“কোথায় যাবেন স্যার…?’

—“আমাকে কালই ঢাকা বেক করতে হবে তানজু….

“রিয়াদের কথা শুনে চমকে উঠলো তানজু ফট করে রেলিং থেকে নেমে রিয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে বলে সেঃ

—“কেন স্যার আপনার এখানে ভালো লাগছে না…

“তানজুর প্রশ্ন শুনে রিয়াদ তানজুর দিকে তাকালো, তারপর বললোঃ

—“না তেমন কোনো ব্যাপার নয় তানজু,সত্যি বলতে আমার তোমার পরিবার আর তোমার গ্রাম দুটোই বেশ ভালো লেগেছে…

“রিয়াদের কথা শুনে কিছুটা হতাশা নিয়ে বললো তানজুঃ

—“তাহলে কেন যাবেন স্যার?আপুর বিয়ে শেষ হলে তো আমরা এমনি ফিরে যাবো….?’

—”ব্যাপারটা সেটা নয় তানজু?

—“তাহলে কোন কারনে আপনি যাবেন স্যার?’

—“আসলে কাল রাতে আমার নতুন মুভির ডিরেক্টর ফোন করেছিল…

“রিয়াদের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই তানজু বলে বিষন্ন স্বরে বলে উঠলঃ

—“কিন্তু কেন স্যার আপনার নতুন মুভির শুটিংএর তো এখনো এক সপ্তাহের বেশি বাকি…

—“সেটা ছিল তানজু, বাই এনিচাঞ্জ কোনো কারনে সেটা ক্যান্সেল হয়ে গেছে আর শুটিং শুরু হবে পরশু থেকে তাই আমাকে কালই যেতে হবে?’

—“কিন্তু স্যার কাল তো আপুর বিয়ে?’…

—“ডোন্ট ওয়ারি তানজু, তোমাকে যেতে হবে না আমার সাথে এমনিতেও তোমার ছুটির ডেট এখনো শেষ হয় নি তাই তুমি থাকো, আমি আমার কিছু লোককে ফোন করে দিয়েছি ওরা আসবে কাল আমায় নিতে…

—“ওহ্

—“হ্যাঁ আর তুমি তোমার সময় মতো চলে যেও ডোন্ট ওয়ারি….

“রিয়াদের কথা শুনে তানজু কিছুু বললো না চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সে!’তানজুর ভাবনার একদমই বাহিরে ছিল এই বিষয়টা সে ভাবে নি রিয়াদ তাকে এই কথা বলার জন্য ডাকবে!’রিয়াদ চলে যাবে ভেবে তারও খারাপ লাগছে!’

“তানজুকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিয়াদ গিয়ে বসে পড়ে ছাঁদের ওপরে থাকা দোলনার ওপর!’আর তানজুর কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে রিয়াদের পাশে বসে বলে উঠলঃ

—“আপনি কাল কখন যাবেন স্যার…?’

“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ ছোট্ট শ্বাস ফেলে নীরবে বললোঃ

—“এই ধরো কাল দুপুরের দিকে,বা তার আগে আমার লোকেরা চলে আসলেই আমি বেরিয়ে পড়বো…

—“ওহ,

—“হুম…

“তারপর নেমে আসলো দুজনের মধ্যেই কুটকুটে নীরবতা!’রিয়াদের মটেও ইচ্ছে করছে না এখান থেকে যেতে কিন্তু কিছু করারও তো নেই!’আর অন্যদিকে তানজু তো চাইলেও আটকাতে পারবে না রিয়াদকে!’একরাশ বিষন্ন নিয়ে বসে আছে দুজনেই কারো মুখেই কোনো কথা নেই!’

“কিছুক্ষন ওভাবে কাটিয়ে হঠাৎই রিয়াদ আকাশের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“আজ তাঁরারা খুব জ্বলছে তাই না তানজু…

“রিয়াদের কথা শুনে তানজুও তাকায় আকাশের দিকে তারপর তাঁরাদের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“হুম….

“তানজুর ‘হুম’ শুনে রিয়াদ আনমনেই বলে উঠলঃ

—“জানো তো তানজু আমার যখন বাবা মায়ের কথা খুব বেশি মনে পড়ে তখন আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি,আর সবচেয়ে কাছে যে তাঁরা দুটো থাকে সে দুটোর সাথে নীরবে কথা বলি….

“রিয়াদের কথা শুনে তানজু বুঝতে পেরেছে রিয়াদের মন খারাপ!’হয়তো এই জমাজমাট কোলাহল ছেড়ে একাকিত্বে যেতে ইচ্ছে করছে না তার!’

“তানজু বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে তার রিয়াদকে কি বলে সান্ত্বনা দেওয়া উচিত?’তানজু শুধু তাকিয়ে আছে রিয়াদের দিকে আর রিয়াদ আকাশে থাকা তাঁরাগুলোর দিকে..

_____

“সকাল_৬ঃ০০টা….

“ধবধবে সাদা আকাশের নিচে ছাঁদে ওপর দোলনায় ঘুমিয়ে আছে রিয়াদ – তানজু!’তানজু রিয়াদের কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে আর রিয়াদ তানজুর মাথার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে!’চারপাশে সকালের ফুড়ফুড়ে ঠান্ডা বাতাস বইছে!’কাল রাতে এখানে বসে থাকতে থাকতে কখন যে দুজন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারে নি দুজনের একজনও…

“হঠাৎই রিয়াদের ঘুম ভেঙে গেল হাল্কা নড়ে চড়ে উঠলো সে!’রিয়াদ নড়তেই তানজু রিয়াদের গলা জড়িয়ে ধরলো!’সাথে সাথে রিয়াদ তাকালো তানজুর দিকে,,তানজুর ঘুমন্ত ফেসের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সে!’এরই মাঝে মনে পড়লো তার কাল রাতের কথা!’কাল রাতে হয়তো একটু বেশি ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিল রিয়াদ!’রিয়াদ তাকিয়ে আছে তানজুর ঘুমন্ত মুখের দিকে!’সূর্যের হাল্কা তাপ এসে পড়ছে তানজুর মুখে!’কাল রাতের মুখের সাজ এখনও যাই নি তানজুর!’রিয়াদ নীরবে মুচকি হাসলো!’তারপর তানজুর কপালের পাশে লেপ্টে থাকা চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিল সে!’এরই মধ্যে নড়েচড়ে উঠলো তানজু!’তানজুকে উঠতে দেখে রিয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেললো!’

“তানজু চোখ খুলে সামনেই রিয়াদকে দেখে কিছুটা চমকে উঠলো পরক্ষনেই কাল রাতের কথা মনে পড়তেই নিজেকে সামলে নিলো সে!’ হঠাৎই তানজু বুঝতে পারলো সে রিয়াদকে জড়িয়ে ধরে আছে সাথে সাথে লাফ মেরে মাথা তুলে ফেললো তানজু!’তারপর আশেপাশে তাকিয়ে বললোঃ

—“ওহ নো কাল রাতে আমরা এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,

“তানজুর তাড়াতাড়ি দোলনার উপর বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো!’তারপর রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“স্যার উঠুন,রুমে গিয়ে ঘুমান এখানে কেউ দেখে ফেললে প্রবলেম হয়ে যাবে…

“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ কিছু বললো না চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রইলো সে!’রিয়াদকে চুপ থাকতে দেখে তানজুর রিয়াদের একটু কাছে গিয়ে বললোঃ

—“স্যার শুনতে পারছেন আমার কথা…

“এবারের কথা শুনে হাল্কা নড়েচড়ে উঠলো রিয়াদ!’তারপর ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে সেঃ

—“কি হয়েছে তানজু?’

—“স্যার রুমে চলুন তাড়াতাড়ি…

“তানজুর এবারের কথা শুনে রিয়াদ চোখ খুলে ফেললো তারপর হাউসি দিতে দিতে বললোঃ

—“কি হয়েছে তানজু এত সকাল সকাল ডাকছো কেন?”

—“ডাকছি কেন আবার আপনি কোথায় ঘুমিয়ে আছেন স্যার…

—“কোথায়?’

—“ছাঁদে!’ তাড়াতাড়ি রুমে যান স্যার আমিও যাচ্ছি,আমাদের দুজনকে কেউ একসাথে দেখে নিলে প্রবলেম হতে পারে…

“বলেই চলে যায় তানজু!’রিয়াদ কিছুক্ষন তানজুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেঁসে সেও চললো তার রুমের দিকে….

____

“সারাদিন বিয়ের ব্যস্ততায় কাটছে সবার!’ঘড়ির কাঁটায় দুপুর বারোটা পেরিয়ে গেছে!’আর কিছুক্ষনের মধ্যেই তাসলিমার বিয়ে শুরু হবে!’বরপক্ষরা প্রায় চলে এসেছে!’

.

“আয়নার সামনে বসে আছে তাসলিমা আর ওর পাশেই তানজু হিয়ামিনি সাথে কিছু মেয়েরা তাকে সাজাতে ব্যস্ত!’আজকে তাসলিমাকে বেনারসি শাড়ি পড়িয়ে খুব সুন্দর করে কনের বেশে সাজানো হয়েছে!’এমন সময় ওদের সামনে আসলো তানজুর মা, কিছুটা হতভম্ব হয়ে বললেন উনিঃ

—“তোদের হলো বরপক্ষরা তো চলে আসলো বলে…

—“আরে মা টেনশন নিও না, দেখো আমাদের হয়ে গেছে আর আপুকে কি সুন্দর লাগছে..

“এই বলে তানজু ঘুরালো তাসলিমাকে তার মায়ের দিকে!’তাসলিমাকে দেখে বলে উঠলেন তানজুর মাঃ

—“মাশাল্লাহ!’

“তারপর তানজু আর হিয়ামিনির দিকে তাকিয়ে বললেন উনিঃ

—“আর তোরা তৈরি হবি কখন…!’

—“এই তো খালামনি এখনই হয়ে যাচ্ছি…(হিয়ামিনি)

—“হুম তাড়াতাড়ি কর ওনারা তো চলে আসলো বলে…

“বলেই বেরিয়ে গেলেন তানজুর মা!’তানজু তার মায়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকেই বললোঃ

—“হুম মা তুমি টেনশন নিও না এখনই তৈরি হয়ে যাচ্ছি আমরা..

—“হুম তাড়াতাড়ি কর!’….

____

“সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে তানজু,পরনে তার গোলাপি আর গোল্ডেন রঙের মিশ্রিত কালারের লেহেঙ্গা, চুলগুলো খোলা, দু’হাত ভর্তি গোল্ডেন আর গোলাপির সংমিশ্রনে রঙিন চুঁড়ি,গলায় ভাড়ি নেকলেস কানে ভাড়ি দুল,মুখে ভাড়ি মেকাপ,সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে!’হাতে একটা ছোট্ট কুলা নিয়ে নিচে সে!’হঠাৎই তানজুর চোখ যায় রিয়াদের দিকে!’

“সিঁড়ির নিচেই দাড়িয়ে আছে রিয়াদ!’পরনে তার ওয়াইট শার্টের ওপর ওয়াইট কোট,ওয়াইট প্যান্ট চুলগুলো বরাবরের মতোই সুন্দর করে গোছালো,চোখ তার তানজুর দিকে…

“দুজনই চোখাচোখিভাবে তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে…
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে………

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here