রোদ্দুরে মেঘের বর্ষন পর্ব -১৭+১৮

#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৭

“বিছানার উপর শুয়ে আছে রিয়াদ হাতে মোবাইল দেখছে সে!’পড়নে তার ওয়াইট টিশার্ট আর ব্লাক জিন্স!’এমন সময় তার দরজায় নক করলো তানজু,তানজুর আওয়াজ শুনে রিয়াদ শুয়ে থেকেই বলে উঠলঃ

—“কাম তানজু…

“রিয়াদের কথা শুনে তানজু হিয়ামিনিদের দু’মিনিট দাঁড়াতে বলে ভিতরে ঢুকে যায়!’তারপর রিয়াদের সামনে গিয়ে বলে সেঃ

—“স্যার আপনার সাথে কিছু মেয়েরা মিট করতে এসেছে ওই যে আপনাকে বলেছিলাম না হিয়ামিনির…

—“হুম বুঝতে পেরেছি,ঠিক আছে তুমি ওদের দু’মিনিট দাঁড়াতে বলো,…

—“ওকে স্যার…

“এই বলে বাহিরে চলে যায় তানজু!’তানজু যেতেই রিয়াদ বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো!’তারপর একবার মেবাইলে নিজেকে দেখে বলে উঠলঃ

—“চলে আসো ভিতরে…

“রিয়াদের কথা শুনতেই তানজু সবাইকে নিয়ে ভিতরের চলে গেল!’সবাই তো রিয়াদকে দেখেই হা হয়ে গেছে,দু’জনের তো কথা বলাই বন্ধ হয়ে গেছে প্রায়!’রিয়াদ সবার রিয়েকশন দেখে ওদের সামনে গিয়ে মুচকি হেঁসে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললোঃ

—“হাই অল,কেমন আছো তোমরা…?’

“রিয়াদের কথা শুনে সবাই খুশি হয়ে নিজেদের মুখ চেপে ধরলো তাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না রিয়াদ তাদের সামনে দাঁড়িয়ে!’একটা মেয়ে রিয়াদের হাত ধরে বললোঃ

—“আমরা ভালো আপনি?’

—“ভালো!’ তোমার নাম..?’

—“আমি দৃষ্টি…

“দৃষ্টির কথা শুনে আর একটা মেয়ে বলে উঠলঃ

–“আমি মিতু…

—“আমি মধুমিতা..(অন্য আরেকজন)

“এরপর একে একে সবাই নিজেদের পরিচয় দিতে লাগলো রিয়াদও হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলতে লাগলো!’আর তানজু নীরবে দরজার পাশ দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো!’এখানে তার কিছু বলার নেই,এই মুহূর্তে সে নিতান্তই একজন নীরব দর্শক!’অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়…

“সবার সাথে কথা বলতে বলতে বলে উঠল রিয়াদঃ

—“এখন ছবি কি এখানে বসে তুলবে নাকি অন্য কোথাও?’

—“ছাঁদে যাবেন?'(দৃষ্টি)

—“হুম চলো…

—“তারপর রিয়াদ আর বাকি সবাই মিলে একসাথে বাড়ির ছাঁদে চলে যায়,

“ছাঁদের আলোকিত পরিবেশে দাঁড়িয়ে হিয়ামিনি আর ওর বন্ধুরা সবাই মিলে রিয়াদের সাথে ছবি আর অটোগ্রাফ নিতে লাগলো!’সেদিন বিকেলটা ওভাবেই কেটে গিয়েছিল রিয়াদের!’আর তানজুর ওদের কান্ড দেখতে দেখতে!’

“হঠাৎই মুখের সামনে হাতের তুড়ি বাজাতেই তানজু তার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো!’সামনেই আদিকে দেখে বলে উঠল সেঃ

—“হুম হ্যাঁ কি হয়েছে?’

—“কি হয়েছে সেটা তো তুই আমায় বলবি..

—“কি বলবো..

—“এটাই কি ভাবছিস…

“আদির কথা শুনে তানজু একবার আদি আর একবার রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলঃ

—“না তেমন কিছু নয় হয়ে গেছে তোর..

—“হুম…

—“চল তাহলে….

—“হুম চল…

“তারপর আদি আর তানজু একসাথে রুম থেকে বের হতে নেয়’!তানজু কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে আবার দু’পা পিছিয়ে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“আপনার কিছু লাগলে আমায় ডাক দিবেন স্যার…

“উওরে রিয়াদ কিছু বললো না!’রিয়াদ চুপ থাকায় তানজুও পাল্টা কিছু না বলে চলে যায়!’

___

“রাত_৯ঃ০০টা….

“ডিনার টেবিলে বসে রিয়াদ ওর সোজাসুজি তানজু, তানজুর পাশ দিয়েই আদি এরপর হিয়ামিনি,তাসলিমা পাঁচজন একসাথে খাবার খাচ্ছে তাঁরা!’রিয়াদ খাচ্ছে আর কিছুক্ষন পর পর তানজুর আর আদির কাহিনি দেখছে!’বিরক্ত লাগছে তার সাথে রাগও হচ্ছে কারন আদি একটু বেশি কেয়ারিং দেখাচ্ছে তানজুর ওপর!’যে জিনিসগুলো একদমই পছন্দ হচ্ছে না রিয়াদের!’সে কিছু বলবে সেটাও সম্ভব নয় আবার খাবার ছেড়ে উঠে যাবে সেটাও পারছে না!’সবমিলিয়ে একরাশ বিরক্ত নিয়ে বসে আছে রিয়াদ!’চুপচাপ বসে আছে রিয়াদ কিছু খাচ্ছে না,রিয়াদকে খেতে না দেখে বলে উঠল তানজুর মাঃ

—“কি হলো বাবা খাচ্ছো না কেন?’

“তানজুর মায়ের কথা শুনে আদি,তানজু তাসলিমা, হিয়ামিনি সবাই তাকায় রিয়াদের দিকে!’সবার চাহনী দেখে রিয়াদ খাবার মুখে দিতে দিতে বললোঃ

—“হুম এই তো খাচ্ছি..?’

“তানজু তাকিয়ে আছে রিয়াদের দিকে

—“কেমন কেমন যেন লাগছে তার স্যারকে!’কেমন একটু বিহেভ করছে সে শরীর ভালো নেই নাকি!'(মনে মনে)

“তানজুর ভাবনার মাঝে ওর মাথায় চাটি মারলো আদি!’আদির কাজে তানজু অবাক হয়ে বললোঃ

—“এটা কি হলো?’

—“খাচ্ছিস না কেন?’

—“তাই বলে তুই আমায় মারবি?’

“এই বলে তানজুও আদির মাথায় একটা চাটি মারলো!’এরপর শুরু হলো দুজনের মধ্যে মারামারি!’ওদের মারামারির মাঝে আদির মা এসে ওদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বললোঃ

—“তোরা কি শুরু করলি বল তো..

—“তোমার ছেলেরই তো দোষ খালামনি?’

—“আমি কি করছি (আদি)

—“তুই কি করছোস মানে?’

—“হইছি আর বকবক করিস না তোরা এখন খা,দুটোতে সারাদিন শুধু ঝগড়াই করতে থাকে…( আদির মা)

.

“রিয়াদ এবার তার ধৈর্য্যের বাদ ভেঙে ফেললো!’তানজু দিকে তাকিয়ে থেকে খাবার ছেড়ে উঠে যেতে নিতেই ফোনটা বেজে উঠল তাঁর!’রিয়াদ তার হাত ধুয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে উপরে চলে গেল!’রিয়াদের কাজে সবাই জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রিয়াদের যাওয়ার পানে তারা বুঝলো না রিয়াদ রাগ করে উঠে গেল নাকি ফোনটা জরুরি ছিল তার জন্য উঠে গেল!’সবাই দু’মিনিট চুপ থেকে নিজেদের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো!’

“এদিকে তানজু ভাবছে “রিয়াদের কি হলো হঠাৎ সেও বুঝলো না রিয়াদ উঠে কেন গেল”…..

___

“জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনটা তুলে বলে উঠল রিয়াদঃ

—“হ্যালো..

“রিয়াদের হ্যালো শুনে ওপর পাশে রিয়াদের একজন গার্ড বলে উঠলঃ

—“হ্যালো স্যার আপনি কোথায়?’

—“কেন কি হয়েছে?’

—“আসলে স্যার আপনার নেক্সট ফিল্মের ডিরেক্টর আপনার খোঁজ করছে,আপনার নাম্বারের নাকি অনেকবার কল করেছিল কিন্তু পায় নি তাই বাধ্য হয়ে আমায় কল করে স্যার?’

—“ওহ, আসলে আমি যেখানে আছি সেখানে নেটওয়ার্কে খুব প্রবলেম..

—“কেন কি হয়েছে?’

—“তা তো আমায় বলে নি স্যার..

—“ওহ্!’ আচ্ছা আমি দেখছি…

—“ওকে স্যার…

—“হুম!’

“বলে ফোন কেটে দেয় রিয়াদ!’তারপর কিছু একটা ভাবে সে!’রিয়াদের ভাবনার মাঝে হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে বলে উঠল তানজুঃ

—“এনি প্রবলেম স্যার…

“আচমকা কারো কন্ঠ শুনে হাল্কা চমকে উঠলো রিয়াদ! পিছন ফিরে তানজুকে দেখে ওর দিকে তাকায় রিয়াদ!’তারপর তানজুর হাতে খাবারের ট্রে দেখে বলে উঠল সেঃ

—“এগুলো কেন নিয়ে এসেছো?’

—“আপনি তো তেমন কিছু না খেয়েই উপরে চলে আসলেন স্যার তার জন্য?’

—“ওগুলো লাগবে না তুমি নিয়ে যাও তানজু…

—“আপনার কি কিছু হয়েছে স্যার…?’

“তানজুর এবারের কথা শুনে রিয়াদ তার ফোনটা টেবিলের উপর রেখে বলে উঠলঃ

—“না আমার আবার কি হবে?’

—“না মানে বিকেল থেকেই আপনি কেমন একটা বিহেভ করছেন স্যার আপনার শরীর ঠিক আছে তো…?’

“তানজুর কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে কপালে হাত দিয়ে বলে উঠল রিয়াদঃ

—“না তেমন কোনো ব্যাপার নেই তানজু, আসলে আমার মাথাটা একটু ব্যাথা করছে তাই আর কি…?’

“রিয়াদের কথা শুনে তানজু কিছুটা অস্থির হয়ে চটজলদি খাবারের ট্রে টা টেবিলের উপর মোবাইলের পাশে রেখে বলে উঠলঃ

—“আপনার মাথা ব্যাথা করছে আমায় বলবেন না স্যার,আপনি বিছানায় শুয়ে পড়ুন আমি এক্ষুনি আপনার জন্য বাম নিয়ে আসছি…

“এই বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তানজু!’তানজুর কাজে হাল্কা খুশি হয় রিয়াদ!’মুচকি হেঁসে বিছানায় বসে পড়ে রিয়াদ!’এরই মাঝে হাতে বাম নিয়ে হাজির তানজু,রিয়াদকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি রিয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠল সেঃ

—“খুব ব্যাথা করছে স্যার?’

—“ওই একটু..

—“আপনি তাড়াতাড়ি বিছানায় শুয়ে পড়ুন আমি আপনার কপালে বাম লাগিয়ে দিচ্ছি…

—“ঠিক আছে….

“তারপর বিছানায় শুয়ে পড়ে রিয়াদ!’রিয়াদ শুয়ে পড়তেই তানজু রিয়াদের পাশ দিয়ে বসে ওর মাথায় মলম লাগিয়ে দেয়!’তানজুর হাতের স্পর্শ পেতেই রিয়াদ তার চোখ বন্ধ করে ফেললো!’

“তারপর হাজারো কল্পনা জল্পনা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো রিয়াদ তা সে নিজেও জানে না!’

“রিয়াদ ঘুমিয়ে পড়েছে এটা বুঝতে পেরে কিছুক্ষন রিয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ওর গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দিয়ে খাবারগুলো হাতে নিয়ে চলে যায় তানজু…..

_____

“পরেরদিন….

“সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলোতে ঘুম ভাঙলো রিয়াদের!’হঠাৎই মনে পরলো তার কাল রাতের ডিরেক্টরের কথা!’রিয়াদ তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে
ব্রেকফাস্ট সেরে ছাঁদে চলে যায়!’ছাঁদের এক কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ!’এখানে মোটামুটি ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়!’রিয়াদ ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে ফোন করলো ডিক্টেটরকে!’কিন্তু ফোন করতেই নেটওয়ার্ক গায়েব….

.

“এদিকে আরেকজন….

“ছাঁদে উঠে ছোট লম্বা পানির পাইপ হাতে নিয়ে ফুল গাছে পানি দিচ্ছে তানজু!’এই গাছগুলো তানজুর খুব ফেভারিট,নিজের হাতে এগুলো লাগিয়েছে সে!’একরাশ ভালো লাগা নিয়ে ফুলগাছে পানি দিচ্ছে তানজু!’রিয়াদের আগেই এসেছে সে….

.

“রিয়াদ নেটওয়ার্ক আসছে তো যাচ্ছে তাই বিরক্ত হয়ে একবার ছাদের এদিক তো ওদিকে যাচ্ছে এমন করতে করতে রিয়াদের পা এসে থামলো পানির পাইপের ওপর!’এখানে ফুল নেটওয়ার্ক পেতে রিয়াদ দাঁড়িয়ে পরলো সেখানেই!’তারপর আবার কল করলো রিয়াদ!’কল যেতেই কিছুক্ষনের মধ্যেই ফোন ধরে ফেললো ডিরেক্টর!’কিছুটা হতভম্ব হয়ে বললো সেঃ

—“রিয়াদ কোথায় তুমি?’

.

“হঠাৎই পাইপে পানি না আসায় চমকে উঠলো তানজু!’পাইপ ধরে কয়েকবার ঝাকড়ায় সে!’কিন্তু কোনো লাভ না হওয়াতে তানজু এগিয়ে যায় কলের দিকে,রিয়াদ তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল!’রিয়াদের পাইপের ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এটা খেয়াল করে নি তানজু!’সে গিয়ে কলের পাওয়ার আরো বারিয়ে দিল কিন্তু তাতেও কাজ হলো না!’কাজ না হওয়াতে তানজুর পাইপটাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো প্রবলেম কোথায়?

.

—“আসলে আমি একটা জায়গায় বেড়াতে এসেছি, কি হয়েছে এত জরুরি কি ব্যাপার আমাদের শুটিং এর তো এখনো এক সপ্তাহের বেশি বাকি তাহলে…(রিয়াদ)

“রিয়াদের কথা শুনে অপর পাশের ডিক্টেটর বলে উঠলঃ

—“তার জন্যই তোমায় ফোন করা রিয়াদ?’

—“মানে…

”বলেই পা সরিয়ে ফেলে রিয়াদ!’পাইপের মুখটা তানজুর মুখের দিকে থাকায় সাথে সাথে পাইপের ভিতর থেকে পানি এসে পরলো তানজুর মুখের সামনে!’ঘটনাটা হুট করে হয়ে যাওয়াতে তানজু পুরো চমকে উঠলো!’তাড়াতাড়ি মুখ থেকে পানির পাইপ সরিয়ে ফেললো সে!’ভিজে গেছে তানজু….

—“আসলে হয়েছে রিয়াদ (ডিরেক্টর)

“রিয়াদ কিছু শুনবে তার আগেই পিছন থেকে তার গায়ে এসে পানি পরতেই বিষম খায় রিয়াদ!’পিছন ফিরতেই পাইপের পানি এসে পরলো রিয়াদের গায়ে!’হতভম্ব হয়ে বললো সেঃ

—“তানজু এটা কি করছো?’

“হঠাৎই রিয়াদের হতভম্ব হওয়া কথা শুনে সামনে তাকালো তানজু’!সামনেই রিয়াদের ভিজে যাওয়া অবস্থা দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়!’সে যে পাইপটাকে রিয়াদের দিকে ধরে ছিল বুঝতেই পারে নি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে তানজুঃ

—“হায় রে এটা কি হলো,এখন কি করি…?’
!
!
!#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৮

“ভেজালো শরীর নিয়ে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে রিয়াদ তানজুর দিকে!’আর তানজু রিয়াদের চাহনী দেখে তাড়াতাড়ি কল অফ করে আমতা আমতা করে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“বিশ্বাস করুন স্যার আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি,আসলে হঠাৎ করে পাইপের পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি চেক করছিলাম কি হলো,তারপর হঠাৎই আবার পানি আসায় আমি ভিজে যাচ্ছিলাম তাই পাইপটাকে সরিয়ে ছিলাম,কিন্তু পাইপের পানি গিয়ে আপনার গায়ে পড়বে বুঝতে পারি নি,সরি স্যার…

“তানজুর কথা শুনে মুখের পানিগুলো থু দিয়ে বাহিরে ফেললো রিয়াদ!’রিয়াদের কাজে আরো ঘাবড়ে যায় তানজু,হাতের পাইপটাকে ছাঁদের রেলিং এর ওপর রেখে সে দৌড়ে চলে যেতে নেয় রিয়াদের দিকে!’তখন ঘটে আরেকটা ঘটনা!’ছাঁদ জুড়ে পানি থাকায় তানজু পায়ে সিলিপ কেটে সোজা গিয়ে পড়ে রিয়াদের গায়ের ওপর!’

“রিয়াদের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তানজু রিয়াদের চোখর দিকে!’আর রিয়াদ মুখ ভাড় করে তাকিয়ে আছে তানজুর দিকে!’দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে অসম্ভবভাবে রেগে আছে তানজুর ওপর!’তানজু রিয়াদের চোখ দেখে ভয়ে ঢোক গিললো!’তারপর রিয়াদের গলা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বললোঃ

—“আই এক্সট্রিমলি সরি স্যার…

“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ গম্ভীর কণ্ঠে বললোঃ

—“শুধু সরিতে চলতে না তানজু তোমাকে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে…

“রিয়াদের কথায় শুকনো ঢোক গিললো তানজু!’তারপর রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“কি শাস্তি স্যার…

—“তোমার শাস্তি হলো?’

“বলেই রিয়াদ এগিয়ে যেতে লাগলো তানজুর দিকে!’রিয়াদকে এগিয়ে আসতে দেখে ঘাবড়ে যায় তানজু!’তারপর পা টিপে পিছনের দিকে যেতে যেতে ঠোঁট কামড়ে আমতা আমতা করে বলেঃ

—“আপনি এগোচ্ছেন কেন স্যার..?’

—“কেন তোমার ভয় হচ্ছে নাকি…!

“রিয়াদের কথা শুনে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে তানজুঃ

—“ভ…য়…হ…বে কেন?

—“তাহলে ভয় হচ্ছে না তোমার..

“মাথা নাড়ায় তানজু!’তানজুকে মাথা নাড়াতে দেখে বলে উঠল রিয়াদঃ

—“ভয় যখন হচ্ছে না তাহলে কাঁপছো কেন?

—“দেখুন স্যার এটা একটা এক্সিডেন্ট জাস্ট,আর দেখুন আপনি একা তো ভিজে যান নি আমিও তো ভিজে গেছি,

—“তা তো দেখতেই পাচ্ছি….

—“দেখুন স্যার আপনি কিন্তু৷ এমনটা করতে পারেন না…

“বলতে বলতে ছাঁদের রেলিং এর সাথে লেগে যায় তানজু!’এদিকে রিয়াদ এগোতে এগোতে তানজুর অনেকটা কাছে চলে এসে বললোঃ

—“আমি কি পারি আর কি না পারি তা সম্পর্কে তোমার বিন্দুমাএ ধারনা আছে তানজু…?”

“রিয়াদের কথার শব্দে কেঁপে উঠলো তানজু সাথে রিয়াদ এতটা কাছে চলে আসায় তার নিঃশ্বাসও ভাড়ি হয়ে আসছে!’বুকের ভিতর ধুকপুকানি জোরে জোরে ছুুটছে তানজুর!’তানজু রিয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে ঘাবড়ানো কন্ঠে বললোঃ

—“ভুল করে হয়ে গেছে,সরি স্যার প্লিজ…

“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ তানজুর আর একটু কাছে গিয়ে বলে উঠলঃ

—“এক্সিডেন্টলি হোক বা ভুল করে, ভুল যখন করেছো শাস্তি তোমায় পেতেই হবে তানজু!’

“এই বলে ঝুঁকে পড়ে রিয়াদ তানজুর দিকে!’সাথে সাথে ঘাবড়ে গিয়ে তানজু চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে!’তানজুকে চোখ বন্ধ করতে দেখে রিয়াদ মুচকি হাসে তারপর অল্প কিছুক্ষন তানজুর চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে তার পাশে থাকা কলটাকে ফুল স্পিডে অন করে রেলিং এর ওপর তার হাতের পাশেই থাকা পানির পাইপটাকে হাতে নিয়ে তানজুর মাথার উপর ধরে!’সাথে সাথে পাইপ বেয়ে পানি পড়লো তানজুর মাথার ওপর….

“হঠাৎই মাথায় ঠান্ডা কিছু অনুভব হতেই চোখ খুলে তাকায় তানজু!’তানজু তাকাতেই রিয়াদ তানজুর মুখের ওপর পানির পাইপটাকে ধরে হেঁসে বলে উঠলঃ

—“এটাই তোমার শাস্তি তানজু…

“রিয়াদের কাজে আবারো চোখ বন্ধ করে ফেলে তানজু!’তারপর বলেঃ

—“আহ্ স্যার ভিজে যাচ্ছি তো..

“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ পিছনে দিকে এগিয়ে এসে বলেঃ

—“ভেজার জন্যই তো দিচ্ছি…

“রিয়াদের কাজে অবাক তানজু!’তারপর চোখ খুলে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলে সেঃ

—“ঠিক আছে স্যার,আমিও দেখে নিচ্ছি আপনাকে?’…

“এতটুকু বলে তানজু এগিয়ে যায় রিয়াদের দিকে!’
তানজুকে এগোতে দেখে রিয়াদও ছুট লাগায় পিছনে!’তারপর শুরু হয় পানির পাইপ নিয়ে দুজনের মধ্যে লাফালাফি!’পুরো ছাঁদ জুড়ে ছোটাছুটি করছে রিয়াদ তানজু,দুজনেই পানিতে ভিজে যাচ্ছে তাই অবস্থা!’কিন্তু সেদিকে তাদের কোনো হুস নেই তারা তো নিজেদের কাজে ব্যস্ত,পুরো ছাঁদ ভিজে একাকার হয়ে গেছে!’

” হঠাৎই তানজু পাইপটাকে রিয়াদের হাত থেকে নিয়ে রিয়াদের গায়ের ওপর ধরলো!’তারপর হেঁসে বলে উঠলঃ

—“কেমন স্যার,আমার গায়ে পানি দেওয়া না এখন বুঝুন কারো গায়ে ইচ্ছেকৃতভাবে পানি দিলে কেমন লাগে হুহ….

“এদিকে রিয়াদ তানজু তার চোখের ওপর পানি দেওয়ায় চোখ খুলে তাকাতে পারছে না সে!’তাই চোখ বন্ধ করেই সামনের দিকে এগোতে লাগলো রিয়াদ পায়ের কাছে পাইপ থাকায় পাইপের সাথে পা বেজে পড়ে যায় রিয়াদ সোজা তানজুর গায়ের ওপর!’ঘটনাটা হুট করে হয়ে যাওয়াতে তানজু তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় নিচে আর ওর ওপর রিয়াদ!’ঘটনাচক্রে তানজুর হাতের পাইপ ছিঁটকে পড়ে যায় নিচে!’পাইপের পানি এসে পড়ছে সোজা তানজুর মুখের ওপর!’

“রিয়াদ চোখ খুলে তাকিয়ে আছে তানজুর চোখের দিকে,এক অন্যরকম কিছু একটা ফিল হচ্ছে তার!’আজকের মতো আনন্দ এর আগে কখনো করে নি সে!’একরাশ মুগ্ধতা,একরাশ ভালো লাগা আর এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে তাকিয়ে আছে রিয়াদ তানজুর মুখের দিকে!’পানিতে তানজুর মুখ ভিজে একাকার হয়ে গেছে!’রিয়াদ হাল্কা হাসলো তানজুর দিকে তাকিয়ে!’

অন্যদিকে…

“চোখে মুখে পানি পরায় চোখ খুলতে পারছে না তানজু,তারপরও বহুত কষ্টে চোখ খুলে তাকালো সে!’সামনেই রিয়াদকে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে,,রিয়াদের হাসিতে চোখ আঁটকে যায় তানজুর!’তানজুও তাকিয়ে আছে রিয়াদের দিকে,হঠাৎই হুস আসলো রিয়াদ তানজু দুজনের তাড়াতাড়ি রিয়াদ উঠে পড়লো তানজুর ওপর থেকে!’তারপর বলে উঠল রিয়াদঃ

—“তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নিও তানজু না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে…

“বলেই রিয়াদ চলে যায়!’তানজু কিছুক্ষন রিয়াদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে তাড়াতাড়ি কল অফ করে চলে যায় নিচে….

“পুরো ছাঁদ পানিতে ভিজে একাকার অবস্থা!’গাছের পাতারাও ভিজেছে খুব,,

______

“দুপুর ১২ঃ০০টা…..

“পুরো বাড়ি জুড়ে হুল্লোড় পড়ে গেলো বিয়ের!’কাল তাসলিমার গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান শুরু তাই সেই সুবাদে পুরো বাড়ি সাজানোতে ব্যস্ত সবাই!’কখনো হিয়ামিনি তানজুকে ডাকছে আবার কখনো তানজু তাসলিমাকে ডাকছে!’তানজুর বাবাও ছোটাছুটিতে ব্যস্ত!’সবাই এটা ওটা করছে..

.

“সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে পুরো জিনিসটা দেখছে রিয়াদ!’বেশ লাগছে তার, এইভাবে সবাইকে একসাথে আনন্দ নিয়ে কাজ করতে দেখে আরো বেশি ভালো লাগছে রিয়াদের!’তারও ইচ্ছে করছে সবার সাথে মিলে একসাথে কাজ করতে কিন্তু সে জানে এরা তাকে না কোনোকিছু করতে বলবে আর না কিছু করতে দিবে,তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে নিচের সবার কাজ দেখছে!’হঠাৎই রিয়াদের চোখ যায় তানজুর দিকে!’তানজু একটা টুলের ওপর দাঁড়িয়ে দরজার সামনে ফুল লাগাচ্ছে!’পরনে তাঁর ব্লাক চুড়িদার,চুলগুলো খোলা,কোমড়ে ওড়না বেঁধে নিয়েছে তানজু!’তানজুর পাশেই আদি ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,আদিকে মটেও ভালো লাগছে না রিয়াদের!’কিন্তু তারপরও তেমন কিছু করলো রিয়াদ!’

.

—“ওই তুই পারবি না পেত্নী,…(আদি)

কিছুটা বিস্মিত কন্ঠের তানজুর দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে উঠল আদি!’আদির কথা শুনে তানজু আদির কাছ থেকে ফুল নিতে নিতে বললোঃ

—“তোকে কে বলছে আমি পারবো না, একশো বার পারবো…

—“এতো বেশি বুঝোস কেন তুই তারপর পড়ে গিয়ে কোমড় ভেঙে গেলে তোকে কে বিয়ে করবে শুনি…

—“সেটা নিয়ে তোকে না ভাবলেও চলবে…

—“হুম জানি শেষমেশ তো আমার কাছেই আসতে হবে…

—“তোর কাছে যামু কেন,লাগলে আমি রাস্তার পাগলরে বিয়া করমু তারপরও তোরে করুম না…

—“হ তোর জন্য রাস্তার পাগল রা সব বসে আছে…

—“বসে থাক বা শুয়ে তাতে কি আসে যায় আমি তো শুধু ভাবি….

—“কি ভাবোস…

—“এটাই তোকে কে বিয়ে করবে?’

“বলতে বলতে দরজার ওপর ফুল লাগিয়ে নিচে নেমে পড়ে তানজু!’তানজু নামতেই আদি একটু ভাব নিয়ে বললোঃ

—“আমি যাকে বিয়ে করবো দেখবি সে খুব সুন্দরী হবে,,সাথে আমায় খুব ভালো বাসবে…

—“হুম দেখিস আবার সুন্দরী খুঁজতে গিয়ে কয়লা না পাস…

—😒

“আদির চোখের চাহনী দেখে তানজু আদির মাথার ওপর হাত রেখে বললোঃ

—“দোয়া করি তুই যেন আমাদের পাশের বাড়ির ওই কুচুটে বুড়ির মতো সুন্দরী একটা বউ পাস…

“তানজুর কথা শুনে রাগী কন্ঠে বলে আদিঃ

—“তানজুর বাচ্চা তোকে তো আমি,আমার বউ যদি ওই ঝগড়ুটে বুড়ির মতো সুন্দরী হয় তাহলে তোর জামাইও যেন আমাদের ওই মন্টু মিয়ার পোলা ওই চিকনা-চাকনা মোকলেসের মতো হয়,

“আদির কথা শুনে তানজু ভাব নিয়ে বললোঃ

—“ওসব মোকলেস ফোকলেসের বেইল আছে নাকি আমার জামাই তো খুব সুন্দর আর ভদ্র হবে দেখিস…

—“হ একছের…

“এরই ভিতর ট্রাকে করে প্যান্ডেল সাজানোর লোকেরা হাজির!’ওদের দেখে আদি আর কিছু না বলে চলে যায় সেদিকে!”আর তানজুও চলে যায় অন্য কাজের দিকে!’

____

“রিয়াদ কিছুক্ষন আশেপাশে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে যায় তার রুমের দিকে!’এরই মাঝে ফোন বাজলো তার উপরে ডিরেক্টরের নাম্বার দেখে রিয়াদ বেশই অবাক হয়, সে বুঝতে পেরেছে আরজেন্ট কোনো দরকার আছে,, তখন তো ছাঁদে বসে কিছু শুনতেই পারলো না রিয়াদ!’রিয়াদ ফোনটা তুলে চলে যায় তার রুমের ভিতরে!’তারপর কানের পাশে ফোন রেখে বলেঃ

—“হ্যালো….

“রিয়াদের কথা শুনে হতভম্ব কন্ঠে বলো ডিরেক্টরঃ

—“তোমায় কেন পাওয়া যাচ্ছে না রিয়াদ…

—“আই এক্সট্রিমলি সরি…

—“তুমি কোথায় আছো রিয়াদ,তুমি তো দেখছি সোশ্যাল মিডিয়ার একদমই বাহিরে আছো,তোমার ফেসবুক, ওয়াট’সআপ,ইন্সট্রাগ্রাম,টুইটার সবকিছুই তো বন্ধ প্রায়….

—“হ্যা ওই একটু,আসলে আমি একটু রাজশাহীর এদিকে একটা গ্রামে এসেছি আর এখানে নেটওয়ার্কে খুব প্রবলেম,কেন কি হয়েছে?’

—“ওহ কিন্তু তোমাকে যে কাল বা পরশুর ভিতর ঢাকা আসতে হবে রিয়াদ…?’

—“কেন?’

_____

“আজ তাসলিমার গায়ে হলুদ পুরো বাড়ি জুড়ে হুল্লোড় পড়ে গেছে মানুষের, সাথে বাচ্চাদের ছোটাছুটি তো আছেই!’পুরো বাড়ি কাঁপিয়ে লাউডে মিউজিক বাজছে!’বাড়ির সামনেই বড় প্যান্ডেল বেঁধে হলুদের স্টেজ তৈরি করা হয়েছে!’রাতের জোৎসা ভরা আলোতেই হলুদের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে তাসলিমার!’হলুদ রঙের শাড়ি গ্রামীণ পদ্ধতিতে পড়ানো হয়েছে তাসলিমাকে,সাথে হাতে,গলায়,মাথায় গাধা ফুল দিয়ে তৈরি জুয়েলারি পড়ানো হয়েছে তাকে,মুখে হাল্কার ভিতর জর্জিয়াস লুকিং এ সাজানো হয়েছে!’সবমিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাসলিমাকে!’তাসলিমাকে সাজিয়ে বসানো হয়েছে স্টেজে!’তার পাশেই বসে আছে হিয়ামিনি সেও শাড়ি পড়েছে আজকে!’হঠাৎই তাসলিমা বলে উঠল হিয়ামিনিকেঃ

—-“তানজু কই?’
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here