রৌদ্রবিলাসী পর্ব -০৯

রৌদ্রবিলাসী
৯ম পর্ব
লেখক:-#নিয়াজ_মুকিত

পিছনে ফিরে আমি এক অবাক করা দৃশ্য দেখতে পাই।নিজের অজান্তে দুহাত দিয়ে চেপে ধরি নিজের মুখ।চোখের কোণে পানি জমা নেয় আমার,তবে সেটা আনন্দের দুঃখের নয়।আহান ভাই আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে আমার দিকে বাড়িয়ে ধরেছেন একটা গোলাপ।ব্যাপারটা স্বপ্ন কিনা বাস্তব বোঝার জন্য নিজেই নিজের হাতে চিমটি কাটি।নাহ সত্য ব্যাপার।

আহান ভাই হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমার উত্তরের আশায়।তার মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে গোলাপের মধ্যে।অনবরত পানি পাওয়ার কারণে প্রায় নষ্ট হতে শুরু করে পাপড়ীগুলো।সেগুলো নষ্ট হওয়ার আগেই আমি ফুলটা নিয়ে নেই।

আহান ভাই উঠে দাঁড়ান।তারপর একদৃষ্টিতে তাকান আমার দিকে।আমি লজ্জায় তার দিকে তাকাতে পারছি না।তিনি দুহাত দিয়ে আমার মাথা চেপে ধরেন।তারপর জড়িয়ে নেন নিজের বুকের সাথে।তিনি কিছুক্ষন এই অবস্থায় থেকে ছেড়ে দিয়ে বলতে শুরু করেন,

–” আজকের এই আবহাওয়াটা সত্যিই অপুর্ব।এই দিনটার কথা কখনো ভুলবার নয় ”

এমন সময় আহান ভাইয়ের কথার প্রতিধ্বনি তুলে পিছন থেকে কেউ বলে ওঠে,

–” ভুলবার নয় ঠিকই,তবে সেটা এই কারনে নয় অন্য কারণে ”

পিছনে থেকে আসা কণ্ঠস্বরটা চিনতে অসুবিধা হয় না আমাদের।দুজনে একসাথে পিছনে তাকিয়ে দেখি আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে আমার বোন আর সেই মেয়েটা মানে যে নিজেকে আহান ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড দাবী করে।আমি এশা আপুর দিকে তাকিয়ে থমকে যাই কেননা তিনি সেই মেয়েটার হাত থরে আছেন।

আহান ভাই তার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” কি অন্য কারণ শুনি? ”

আহান ভাইয়ের কথা শুনে এশা আপু রহস্যময়ী হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” আজকে তোমার বিয়ে এই দিনটা কেমনে ভুলবে বলো? ”

এশা আপুর মুখের কথা শুনে আমি আর আহান ভাই দুজনে ভরকে যাই।আমিতো এগিয়ে গিয়ে আপুর মাথায় হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি আজও তার মাথায় সমস্যা হলো কিনা?আপু রেগে আমার হাত খুব জোড়ে সড়িয়ে দেয়।তার এমন ব্যবহার আমি আশা করতে পারি না তার কাছ থেকে।অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলি,

–” আপু,এই ফালতু মেয়েটার দেখা কই পাইলি?দুনিয়াতে এর মত ফালতু একটাও আছে কিনা সন্দেহ? ”

আমার কথা শুনে আপু আর মেয়েটা একসাথে হেসে ওঠে।আমি আর আহান ভাই অবাক হয় তাদের দিকে তাকাই।আপু আমার কথার ব্যঙ্গ করে বলে,

–” ফালতু মেয়ে তিথি না তুই,যে অন্য একজনের বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করে আবার তাকে ভালোবাসার কথাও বলে ”

আপুর কথা শুনে আমি মাথা ঘুড়ে পড়ে যেতে ধরেও পড়ে যাই না।আহান ভাই নিচের ঠোটে চিমটি কাটতে থাকে গভীর মনোযোগ দিয়ে।আমি মাথা তুলে আপুর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করি এটা আসলেই এশা নাকি অন্যকেউ।আমার সামনে আমার বোন আমাকে ফালতু বলছে আর আর শত্রুকে ভালো বলছে,ব্যাপারটা সত্যিই অদ্ভুত।

আহান ভাই বেশ মনোযোগী দৃষ্টি ফেলে আপুর দিকে তাকিয়ে বলে,

–” তিথির দেখা কোথায় পেলে? ”

হঠাৎ বৃষ্টি থেমে যায় একেবারে।আকাশটা প্রচন্ড জোড়ে গর্জন করে ওঠে।আকাশের গর্জনের কারণে আহান ভাইয়ের কথা তারা শুনতে পারে না,তাই পুনরায় জিজ্ঞাসা করে,

–” কি বললে? ”

আহান ভাই পুনরায় একই কথা বলে।তার কথা শুনে আপু আর তিথি মুখের মধ্যে রহস্যময়ী হাসি নিয়ে হেসে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে,

–” বোনের সাথে বোনের দেখা হবে এটা স্বাভাবিক,এখানে আবার খুঁজে বের করতে হবে নাকি একজন আরেকজনকে আজব ”

তাদের দুজনের এই কথাটা আমাদের আরো বড় একটা ধাক্কা খাওয়াতে সাহায্য করে।’বোন’কেমনে কি?আহান ভাই তো অবাক হয়ে প্রশ্ন করেই ফেলে,

–” এত তারাতারি কেমনে এত বড় একটা বোন পয়দা করলো তোর বাবা-মা উষু? ”

তার কথা শুনে আমি হেসে ফেলি কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষ আপু রেগে বলে,

–” ও আমার ননদ বুঝলে।ওর ভাই আমার বর সো সে আমার বোন ”

–” ও যদি তোমার বোন হয় তাহলে ওর ভাইতো তোমারও ভাই হবে বর কেমনে? ”

আহান ভাইয়ের যুক্তি আমাকে না হাসিয়ে পারে না।কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষে থাকা দুজন ব্যাক্তি প্রচুর রেগে যান।তারা বেশ চিল্লিয়ে বলে,

–” বিয়েটা হোক আজকে তারপর বুঝবে ”

কথাটা বলে তারা হরহর করে সেখান থেকে চলে যায়।আমরা দুজন তাদের দিকদ চেয়ে হাসলেও ভিতরে খুব বড় একটা চিন্তা জমা নেয়।আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলি,

–” এই বিয়ের কাহিনীটা বুঝলাম না? ”

আমার কথা শুনে আহান ভাইও মাথা নাড়িয়ে বোঝায় তিনিও বোঝেননি।আমরা দুজন আর ছাদে না থেকে সোজা রুমে চলে যাই।প্রথমে আহান ভাই কাপড় চেন্জ করে অথঃপর আমি।ঠিক এই মুহুর্তে আমাদের রুমে একসাথে প্রবেশ করে আমার বাবা-মা প্লাস আমার শশুর-শাশুড়ী।আমি তাদের দাঁড়িয়ে সালাম দেই।আমি স্পষ্ট দেখতে পাই তাদের মুখে একটা দুশ্চিন্তার ছাপ।

তারা সবাই সোফায় বসে পড়ে।আমি বিছানায় আহান ভাইও আমার পাশে।সবার আগে আহান ভাই বলে ওঠে,

–” সবাই একসাথে কেন জানি?কোনো কথা আছে নাকি বাবা? ”

আহান ভাইয়ের কথা শুনে সবার ধ্যান ভাঙ্গে।আহান ভাইয়ের মা দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে,

–” তোমাদের জন্য একটা দুঃসংবাদ নিয়ে এলাম ”

‘দুঃসংবাদ’ কথাটা শুনে আমার অন্তর কেঁপে ওঠে।আহান ভাই সাথে সাথে বলে ওঠে,

–” কি সংবাদ শুনি? ”

আহান ভাইয়ের কথা শুনে উপস্থিত মুরব্বিরা একে অপরের দিকে তাকা-তাকি করে।তাদের এভাবের তাকানোর কারন কে বলবে কথাটা?তাদের অবস্থা বুঝতে পেরে আহান ভাই বলে ওঠে,

–” আরে বলো? ”

আহান ভাইয়ের আশ্বাস পেয়ে আমার মা মাথা তুলে আমাদের দিকে তাকায়।আমি দেখতে পাই তার চোখের কোণে পানি জমে আছে।তিনি আমাদের দিকে একবার তাকিয়ে পুনরায় অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে বলতে শুরু করেন,

–” আমাদের এই এলাকার কালিয়া মাস্তানকে তো তোমরা চেনই? ”
তার কথা শুনে আমরা দুজনেই মাথা নাড়াই।তিনি পুনরায় বলতে শুরু করেন,
–” সে কাল রাতে তার দলবল নিয়ে এসেছিল আমাদের বাসায়।আমাদের অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দিয়েছে।সে নাকি উষার সাথে তার ছোট ভাইয়ের বিয়ে দেবে এবং সেটা আজকেই।যদি আমরা নিজে থেকে উষাকে তার ছোট ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে না আসি তাহলে কেউ বেঁচে থাকবো না আর? ”

কথাটুকু বলে তিনি থেমে যান।আমি বুঝতে পারি কান্না করছে মা।আহান ভাই হালকা হেসে বলে,

–“এইটাই শুধু ”
আহান ভাইয়ের কথা শুনে আম্মু পুনরায় চোখ মুছে বলতে শুরু করে,
–” না,কাল রাতে কালিয়ারা চলে যাওয়ার পরে এশা আসে।সে নাকি একজনকে বিয়ে করেছে এটা আমাদের জানায়।সেই ছেলেটা নাকি অনেক ভালো,অনেক বড় বিজনেসম্যান।তার কথা শুনে আমরা খুশি হতে পারিনা।হুট করে সে কান্নাকাটি শুরু করে।আমরা অবাক হয়ে তার কান্নার কারন জিজ্ঞাসা করলে সে আমাদের পায়ে পড়ে ধপ করে।পায়ে পড়ে বলতে শুরু করে,তার বরের নাকি উষার বয়সী একটা বোন আছে।সেই মেয়েটা নাকি অনেকদিন থেকে আহানকে ভালোবাসে।মেয়েটার পরিবার নাকি যখনি জানতে পেরেছে এশার ভাই হয় আহান তখনি তারা দৃঢ় গলায় বলে দিয়েছে,যদি আহানের সাথে সেই মেয়েটার বিয়ে দিতে পারে তাহলে তার সংসার টিকবে না হলে তাকে বের হয়ে আসতে হবে সেই বাড়ি থেকে। ”

কথাগুলো শুনে আমি আর আহান ভাই থমকে যাই।এইগুলা কোনো দুঃসংবাদ হলো।আহান ভাইতো বলেই ওঠে,
–” এইগুলা তো ভালো খবর ”

উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে আহান ভাইয়ের দিকে তাকায়।আহান ভাইয়ের বাবা বলে ওঠে,

–” তোমরা বুঝতে পারছ কি হয়েছে?তোমাদের আলাদা হতে হবে? ”
–” তো হবো আলাদা…”

চলবে..ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here