রৌদ্রবিলাসী পর্ব -১১ ও শেষ

রৌদ্রবিলাসী
১১ম_পর্ব
লেখক:-নিয়াজ_মুকিত

ছেলেটা আচমকা আমার দিকে তাকিয়ে তারপর তার দলনেতার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” এই মেয়েটাই বস,এই মেয়েটার বিয়ে হবার কথা কালিয়া মাস্তানের ছোট ভাইয়ের সাথে ”

ছেলেটার কথা শুনে দলনেতা আমার দিকে ঘুরে তাকান।তার কড়া নজর ফেলে আমার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষন করতে থাকেন।তারপর তার দলের একজনকে বলেন,

–” ধর মেয়েটাকে? ”

ছেলেটা যখনি আমার হাত ধরতে আসে আহান ভাই ঠিক তখনি ছেলেটার হাতে পা তুলে একটা লাথি মারে।লাথি খেয়ে পিছিয়ে যায় ছেলেটা।আহান ভাই এক হাত দিয়ে আমার হাত চেপে ধরে।আহান ভাইয়ের এমন কার্যকলাপে রেগে যান দলনেতা।আমি মাথা ঘুড়িয়ে আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি আস্তে আস্তে পড়ে যাচ্ছেন মেঝেতে।আমি ভালোভাবে তাকিয়ে বুঝতে পারি পিছন থেকে লাঠি দিয়ে তাকে বারি মেরেছে একজন..

আহান ভাইকে ওই অবস্থায় রেখে আমাকে নিয়ে রুম থেকে বের হন দলনেতা।বাহিরে বের হতেই দেখতে পাই আব্বু-আম্মু,তাদের সাথে আহান ভাইয়ের বাবা-মাকেও বেধে রেখে পাহারা দিচ্ছে একদল মানুষ।আমাদের বের হতে দেখে তারা আমাদের সাথে চলে আসে।

দলনেতা আমাকে একটা গাড়ির পিছনের সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজে সামনের সিটে বসে পড়েন।গাড়ি চলতে শুরু করে।আমি যে জোড়ে চিল্লাবো তারও উপায় নেই কারন লোকটার হাতে রয়েছে ডাবল বেরেলের রাইফেল..

অনেকক্ষন চলার পর গাড়ি এসে থামে একটা বাড়ির সামনে।লোকটা সামনে থেকে বের হয়ে আমাকে গাড়ি থেকে নামায়।তারপর একজনকে ডেকে তাকে নির্দেশ দেন আমাকে একটা ঘরে বন্দি করে রাখতে।

দলনেতার নির্দেশমত আমাকে একটা ঘরে আটকে রাখে তার কর্মচারী।আমি ঘরের মধ্যে ঢুকে লোকটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করেই ফেলি,

–” আচ্ছা,আমি তো আপনাদের কাউকে চিনিনা?আমাকে কেন তুলে নিয়ে আসলেন আপনারা? ”

আমার প্রশ্নটা মনেহয় লোকটার পছন্দ হয়নি।তাই বিরক্তি ভঙ্গি নিয়ে অলসভাবে উত্তর দেন,

–” কালিয়া মাস্তানের সাথে আমাদের বসের শত্রুতা আপনার জন্মের আগে থেকে।এখন আমরা গোপনসুত্রে জানতে পেরেছি কালিয়া মাস্তানের ভাইয়ের সাথে আপনার বিয়ে। তাই আপনাকে তুলে নিয়ে এসে এখানে বন্দি করে রাখলে বিয়েটা আর হবে না।ফলে কালিয়া মাস্তানের মানসম্মানও থাকবে না।এজন্য আপনাকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে ”

আমি মনোযোগ দিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লোকটার কথা শুনি।তার কথা শেষ হতেই আমি হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে বলি,

–” তো তুলে নিয়ে আসার কি দরকার ছিল?আমি আর আমার স্বামীও তো পালিয়ে যাব ভেবেছিলাম।শুনুন আপনার সাথে কথা বলে আমার লাভ নেই,আপনার বসের সাথে কথা বলতে চাই আমি ”

কথাগুলো বলে একটু এগিয়ে যাই দরজার দিকে।লোকটা আমার পথ আটকে ধরে থাকে।তারপর একবার আমার দিকে তাকায় আরেকবার দরজার দিকে।শেষপর্যন্ত অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার পথ ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” আসুন ”

লোকটা দরজা দিয়ে বেড়িয়ে আসলে আমি তার পিছনে পিছনে যাই।একপর্যায়ে লোকটা আমাকে একটা বিশাল বড় রুমের মধ্যে নিয়ে আসে।আমি লক্ষ্য করি রুমটার চারদিকে প্রচুর সোফা বসানো রয়েছে।তারমধ্যে সবচেয়ে মাঝের সোফাটায় বসে আছেন একজন লোক।তাকে চিনতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না আমার।সেই লোকটাই যার নেতৃত্বে আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসা হয়েছে।

লোকটা আমার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে তার কর্মচারীর দিকে তাকিয়ে বলে,

–” এখানে নিয়ে আসলে কেন? ”

আমি উত্তর দেয়ার আগেই আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার কর্মচারী উত্তর দেয়,

–” আপনার সাথে নাকি খুব জরুরী একটা কথা আছে ”

আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার কথা শুনে দলনেতা আমার দিকে তাকিয়ে ভ্র-নাচিয়ে বলে,

–” বলুন কি কথা? ”

আমি এবার লোকটার দিকে সম্পুর্ন চোখ দিয়ে তাকাই।তারপর তার কাছ থেকে অনু‌মতো নিয়ে একটা সোফায় বসে পড়ি।গোয়েন্দাদের মতো চারদিকে সচেতন দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করি এখানে কালিয়া মাস্তানের গুপ্তচর আছে কিনা?কিন্তু উপস্থিত কাউকে দেখে গুপ্তচর মনে হয় না।

আমি এবার কোনোপ্রকার সূচনা-ভূমিকা ছাড়াই দলনেতার দিকে তাকিয়ে সেই প্লানটা বলি যা কালকে আমি আর আহান ভাই করেছি।সাথে তাকে এটাও বলি কালিয়ার ভাইকে আমরা অন্য একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দেব এবং আমি আর আহান ভাই পালিয়ে যাব।

বেশ মনোযোগ দিয়ে আমার কথাগুলো শোনেন দলনেতা।আমার দিকে কড়া দৃষ্টি ফেলে চিন্তা করতে থাকেন,আমাকে বিশ্বাস করা যায় কিনা?খানিকক্ষন চিন্তা করার পর তার মুখের কোণে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।তিনি তার এক কর্মচারীকে কাছে ডেকে বলেন,

–” এদের বাসায় যাও বুঝছো।তারপর আহানকে বলবে তার কাপড়+তার ওয়াইফের কাপড় একটা ব্যাগে গুছিয়ে নিতে।তারপর তাকে নিয়ে সোজা এখানে চলে আসবে ওকে ”

বসের নির্দেশ পেয়ে মুহুর্ত দেরি করে না লোকটা।রওনা হয়ে যায় আহান ভাইকে আনার জন্য।লোকটা ফোন বের করে কাকে যেন ফোন করেন?তারপর সেই ব্যাক্তিকে হুমকি দিয়ে জোগাড় করে নেন দুটো প্লেনের টিকেট।সব কাজ শেষ হলে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলেন,

–” তুমি আর আহান এই কয়েকদিন কক্সবাজারে থাকবে ওকে…”

আমি শুধু মাথা নাড়াই কিছু বলি না।কিছুক্ষনের মধ্যে আহান ভাই চলে আসে।তার কাধে একটা ব্যাগ ঝুলছে সাথে মাথায় ব্যান্ডেজ।আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে অবাক হই,সাধারন একটা লোকের কথায় আহান ভাই কিভাবে ব্যাগ গুছিয়ে এখানে চলে আসলো এই ভেবে।আহান ভাই আমার পাশে এসে বসে লোকটার দিকে তাকায়।

আমরা দুজন একসাথে পুনরায় তাকে আমাদের প্লানের কথা জানাই।আহান ভাই সবকিছু শুনে কিছু বলে না শুধু বলে,ভালোই বুদ্ধি।দলনেতা জানিয়ে দেন আমাদের ফ্লাইট আর ১ঘন্টা পড়ে,সো আমাদের এখন রেডি হওয়া উচিত।তিনি আমাদের একটা রুম দেখিয়ে দেন।

আমি আর আহান ভাই রুমে চলে আসি।আহান ভাই রুমে প্রবেশ করে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে মাথা ঘুড়িয়ে আমার দিকে তাকায়।তারপর দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে বলে,

–” সত্যিই সবকিছু মাথার উপরে দিয়ে যাচ্ছে।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না আমি?তবে যাই হচ্ছে খারাপ কিছু নয় ভালোই হচ্ছে। ”

আমি কিছু না বলে শুধু বসে থাকি।আহান ভাই আরো একটা খুশির খবর দেয় যে,

–” কালিয়ার ভাই নাকি বলেছে,উষাকে বিয়ে করার জন্য সমুদ্রের নিচে যেতে হলেও সেখানে যাবে।সে আরো বলেছে সে নাকি প্রতিজ্ঞা করেছে বিয়ে না করা পর্যন্ত কনের মুখ দেখবে না ”

কথাটা শুনে আমি আরো বেশি নিশ্চিন্ত হই।বুঝতে পারি বিয়েটা ভালোই ভালোই হবে,যা ঘটবে সেটা বাসরঘরে।

১ঘন্টা পর যাত্রা শুরু হয় আমাদের।কিছুক্ষনের যাত্রায় পৌছে যাই কক্সবাজারে।সেই লোকটা আগে থেকে সবকিছু ঠিক ঠাক করে রাখার কারনে ওঠার জন্য মোটেল খুঁজতে হয় না আমাদের।

সেই দিনটা কোনো প্রকার ঘোরাঘুরি ছাড়া শুয়ে বসে কেটে যায়।কিন্তু রাতে ঘটে আজব এক কাহিনী।

আমি রাতে ফ্রেস হওয়ার জন্য ওয়াসরুমে চলে যাই।বের হয়ে একটা সুতোয় পা আটকে যায় আমার।আমি সুতোটা ধরে এগিয়ে যাই দরজার দিকে।দরজার কাছে পড়ে আছে একটা চিরকুট সাথে কিছু পেপার।দুর থেকে দেখে মনে হচ্ছে ডিবোর্স পেপার কিন্তু আসলে কি তাই নাকি অন্যকিছু।আমার তো মনে হচ্ছে সারপ্রাইজ পেপার ডিবোর্স পেপার নয়।কিন্তু আমি পেপারটা হাতে তুলে নিয়ে অবাক হই।আমার ধারণাই ঠিক।সেখানে আহান ভাই বড় বড় করে লিখে দিয়েছে,

–” উষু তুই যদি আমার সাথে সারাজীবন থাকতে রাজি থাকিস তো নিচে সাইন কর বুঝলি?সাইন করে পেপারটা সহ ছাদে আয়।আজ আমাদের বিয়ে ৭দিন পুর্ন হয়েছে সে উপলক্ষে পার্টি হবে বুঝলি।শোন,পেপারটা সহ আসবি ওকে..”

সমাপ্ত..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here