#লঙ্কাবতী
#পর্বঃ০৩+০৪এবং শেষ
#Arshi_Ayat
প্রভা সাদের কাছাকাছি চলে এসেছে।হাতদুটো পজিশনে এনে যখনই ধাক্কা দিতে যাবে তখনই সাদ ঘুরে দাড়ালো আর প্রভার ধাক্কা আচমকা সামলাতে না পেরে সাদ পড়ে যেতে নিলেই প্রভার হাত ধরে ফেললো তবুও শেষ রক্ষা হলো না দুজনই ধুপ করে পড়ে গেলো।
দূর থেকে এটা দেখে সাদিয়া দৌড়ে এলো।সাদিয়ার পিছনে আদিও ছিলো।আর এদিকে প্রভা আর সাদ উঠে দাড়িয়ে ধুলো ঝাড়াছে।আদি এসেই বলল”কি হইছে রে দোস্ত?”
“আরে এই মেয়েটা কোথা থেকে এসে ধাপ করে আমাকে ধাক্কা মারে।ব্যালেন্স রাখতে না পেরে আমি পড়ে যাই।”
প্রভা দাত কটমট করতে করতে বলল”আপনি আমার হাত ধরে আমাকেও ফেললেন কেনো?”
“আরে আমি তোমাকে ফেলতে চাই নি।আমি ভেবেছি তোমার হাত ধরে ব্যালেন্সটা রাখবো কিন্তু তুমিই উল্টো আমার ওপর পড়ে গেলে।”
“আচ্ছা সরি।” প্রভা মুখটা ছোটো করে বলল।
সাদ মুখটা ভেঙচিয়ে বলল”লঙ্কাবতী আবার সরিও বলতে পারে।বাহ!”
প্রভা মুখটা ভেঙচিয়ে চলে যেতে লাগলো।ওর পিছনে সাদিয়াও যেতে লাগলো।সাদি চলে যেতে নিলেই আদি পিছনে থেকে বলল”আমাকেও কেউ এভাবে একটা ধাক্কা দিলে কতো ভালো হতো।”
সাদিয়া আদির কথা শুনতে পেয়ে মনেমনে বলল”কতো বড়ো লুচু কথায়ই বোঝা যায়।”
এবার আদি সাদের সামনে দাড়িয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল”বাবু চলো সেলুনে।”
সাদ ঢোক গিলে বলল”ক..কেনো?”
“ভুলে গেলি?সেদিন যে আমরা বাজি ধরেছিলাম।”
“দোস্ত অন্যকিছু কর তবুও আমার চুলের দিকে তাকাইস না।আমার এতো সুন্দর চুলগুলো ফেলে দিলে কোনো মেয়েই আমার দিকে তাকাবে না।প্লিজ দোস্ত!আমার মাসুম চুলগুলোর ওপর অত্যাচার করিস না।”
আদি একটা ভিলেনী হাসি দিয়ে বলল”সেটা তো হবে না।শর্ত যা ছিলো তাই হবে।”
আদি সাদের দিকে এগুতে লাগলো।সাদ আদির হাত থেকে বাঁচার জন্য ভো দৌড় দিলো।পিছনে আদিও দৌড়াচ্ছে।
————–
সাদের প্রচুর বিরক্ত লাগছে।বারবার নিজের টাকলা মাথায় হাত দিয়ে বিরক্ত হয়ে উঠছে।নিজেকে কেমন যেনো এলিয়েন এলিয়েন লাগছে।সব হয়েছে আদির বাচ্চার জন্য।সাদ দাঁত কটমট করতে লাগলো।এতক্ষণ বসেবসে আদি,তামিম সুমন ওরা মিলে মজা নিয়েছে।সাথে ওর নিজের মা, বাবা তো ছিলোই।আজকে সবাই মিলে ওর মাথা নিয়ে হাসাহাসি করেছে।সাদ নিজের টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ধারালো কাঁচি বের করে নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ১১.০০ টা বাজে।রাত বারোটায় আদি শুয়ে পড়ে।তারমানে আরো একঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।সাদ একঘন্টা বসেবসে ছটফট করতে লাগলো।কখন ১২.০০ টা বাজবে আর কখন ও বের হবে।তো অনেক্ক্ষণ অপেক্ষা করার বারোটা বাজতেই সাদ কাঁচিটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।দুই বাড়ি পরেই আদি দের বাড়ি।আদির বাসার সামনে পৌঁছে সাদ বারান্দা দিয়ে ওর ঘরে ঢুকলো।আদি খাটে খুব আরামে ঘুমিয়ে আছে।সাদ কয়েকবার পরীক্ষা করলো আসলেই কি জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে আছে।যখন নিশ্চিত হলো যে ঘুমিয়ে গেছে তখনই কাঁচিটা বের করে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে মনেমনে বলল”কালকে সকালে বুঝবি মজা।চান্দু।”
এটা বলে কাঁচি দিয়ে উল্টা পাল্টা চুল কাটা আরম্ভ করে দিলো।মুটামুটি চুলের সর্বনাশ করে সাদ আস্তে আস্তে নিজের বাসায় গিয়ে শান্তিতে শুয়ে পড়লো।
——————
আয়নার সামনে দাড়িয়ে আদি ভূত দেখার মতো চমকে উঠে চিল্লিয়ে উঠলো।একি!চুলের এ অবস্থা কেনো?আদির মা এসে দেখে চুলের একদম দফারফা অবস্থা।আদির মা বিরক্তির স্বরে আদিকে বকতে বকতে বলল”চুল ফেলতে সেলুনে যেয়ে ফেলতি।ঘরে ফেলার কি দরকার ছিলো।এখন যা সেলুনে গিয়ে চুল ফেলে দিয়ে আয়।”
আদি কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা।কোনোমতে মাথায় টুপি পড়ে সেলুনে গিয়ে টাকলা হয়ে সোজা সাদের বাসায় গিয়ে ওর ঘরে ঘরে গিয়ে ঘুমের মধ্যেই মারামারি শুরু করে দিলো।সাদও শুরু করলো।একপর্যায়ে মারামারি কর দুজনই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লো।দুজনেই দুজনের দিকে চেয়ে হাসাতে লাগলো।
————-
সাদিয়া আর প্রভা হাটছে কলেজে যাওয়ার জন্য।আকাশে মেঘ করেছে।যেকেনো সময় বৃষ্টি হতে পারে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে।কিন্তু আজ প্রভা আর সাদিয়ার মনে কোনো তাড়াহুড়ো নেই।দুজনেই ঠিক করেছে বৃষ্টি আসলে আসুক ভিজতে ভিজতে যাবো।কিন্তু বৃষ্টি আসলো না।প্রভা আর সাদিয়া ক্লাস রুমে গিয়ে বসতেই ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি পড়া শুরু হলো।দুজনেরই মেজাজ গরম হয়ে গেলো।কেনো!আরো একটু আগে আসলে কি হতো!যেনো বৃষ্টিটা অপেক্ষা করছিলো ওদের ক্লাসে ঢোকার।যাইহোক এখন আর কিছু করার নেই।জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখা ছাড়া।
আর এদিকে সাদ আর আদি বৃষ্টিতে ভিজছে।দুজনই ভিষণ খুশী।অনেকদিন পর ভীষণ তৃপ্তি নিয়ে বৃষ্টির পানি উপভোগ করা যাচ্ছে।সাদ আদির সামনে দাড়িয়ে বলল”বিয়ে করবি কবে শালা?বিয়ের বয়স তো পার হয়ে যাচ্ছে তোর।”
“আর তোর বিয়ের বয়স যেনো বসে রয়েছে।তুই করবি কবে সেটা বল।”
“আরে আমি চাইলেও এখন করতে পারবো না আগে ভাইয়া তারপর আমি।কিন্তু তুই তো এখনি করতে পারিস।”
“হ্যা মাও এগুলো বলে ইদানীং যন্ত্রণা দিচ্ছে।”
“হ্যাঁ তো করে ফেল।মেয়েটা কিন্তু খারাপ না।”
আদি তাজ্জব বনে গেলো সাদের কথায়।তারপর বলল”কোন মেয়েটা?”
“আহা!সোনা গো আমার কিচ্ছু বোঝে না।ওই লঙ্কাবতীর সাথে যে মেয়েটা ছিলো ও।”
“ধূর,কি যে বলিস।” আদি অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল।
সাদ এবার টিটকারি মেরে বলল”হইছে আর লজ্জা পেতে হবে না।”
“ধূর শালা,তুইও তো ওই মেয়েটাকে পছন্দ করিস।”
“তোরে বলছে।ওইটা একটা ঝগড়ুটে মেয়ে।ওকে বিয়ে করার চেয়ে জীবনে বিয়ে না করাই ভালো।”
সাদের কথা শুনে আদি হাসতে লাগলো।সাথে সাদও হাসছে।
——————-
মাত্রই ছুটি হয়েছে কলেজ।কিন্তু এখনও বৃষ্টি হচ্ছে।তবে এখন দুজনের কারোই ভিজতে ইচ্ছে করছে না।কলেজের সামনে ছাউনির নিচে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে রিকশার জন্য।কিন্তু রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না।আর যা পাওয়া যাচ্ছে তারা কেউ যাবে না।প্রায় আধঘন্টা দাড়ানোর পরও যখন রিকশা পাচ্ছে না কেউ তাই আর দাঁড়িয়ে না থেকে হাঁটা শুরু করলো।বৃষ্টিতে ভিজে দুজনেরই অবস্থা খারাপ।হঠাৎ মনে হলো ওদের মাথায় বৃষ্টি পড়ছে না।দুজনই পিছনে তাকিয়ে দেখলো সাদ আর আদি দাড়িয়ে আছে।আদি বলল”আমাদের কাছে দুটো ছাতা আছে।আপনারা এগুলো নিয়ে যান।”
“না,আমাদের বাসা কাছাকাছি।আর আমরা প্রায় ভিজে গেছি।তাই আমাদের ছাতা লাগবে না।আপনারাই রাখুন।”
“আরে সমস্যা নেই।আপনারা আরো ভিজলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।নিয়ে যান।”সাদ বলল।
” আমাদের প্রয়োজন নেই।আপনারা প্লিজ চলে যান।”
আদি ছাতাটা সাদিয়ার মাথায় ধরে বলল”চলুন।”
“মানে?”
“মানে আমরা দুজন একসাথে যাবো।ওরা একসাথে আসবে।”
এটা বলে আদি সাদিয়ার হাতে ধরে হাটতে লাগলো।আর সাদও প্রভার মাথায় ছাতা ধরলো।অগত্যা প্রভার সাদের সাথে হাঁটতে হলো।আগে সাদিয়া আর আদি হাটছে আর পিছনে সাদ আর প্রভা হাটছে।সাদিয়া রাগে গমগম করছে।হঠাৎ আদিকে কিছু বলতে গিয়ে খলখলিয়ে হেসে দিলো।আদি ভ্রু কুচকে বলল”হাসছেন কেনো?”
“আপনার মাথার চুল কোথায়?” এটা বলে সাদিয়া আবার হাসতে লাগলো।আদির এবার রাগ উঠছে।এটা নিয়ে এতো হাসার কি আছে।কিন্তু রাগ উঠলেও কিছু বলতে পারছে না।কিছুক্ষণ হেসে সাদিয়া জিগ্যেস করলো”আচ্ছা এটা হলো কি করে?”
আদি মুখ কালো করে সব বলল।সবশুনে সাদিয়া আবারও হাসতে লাগলো।হাসতে হাসতে দেখলো আদি মুখ কালো করে রেখেছে।সাদিয়া এবার হাসি থামিয়ে বলল”সরি,সরি আর হাসবো না।তবে এমনিতেও খারাপ লাগছে না।”
এবার আদি বলল”তুমি তো আমার কষ্ট বুঝতে পারবা না।চুল হলো ছেলেদের অলংকার।এই চুলের জন্য মেয়েরা আমার ওপর ক্রাশ খেতো।”
সাদিয়া হেসে বলল”থাক সব মেয়ের ক্রাশ খাওয়া লাগবে না।যার খাওয়ার কথা সে অলরেডি খেয়ে ফেলেছে।”
এটা বলে আদির দিকে তাকিয়ে একটা দুষ্ট হাসি দিলো।আদি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদিয়া বলল”আচ্ছা আজকে আসি।সামনেই বাসা।আল্লাহ হাফেজ।ভালো থাকবেন।”
এটা বলে সাদিয়া হাটতে লাগলো।পেছন থেকে আদি মুচকি হেসে বলল”নাম টা?”
সাদিয়া ও মুচকি হাসলো কিন্তু আদির দিকে না ঘুরেই বলল”সাদিয়া শেখ।”
আদিও উত্তর দিলো”আদিব হাসান।
এরপর দুজনই অন্যপথ ধরলো।
এদিকে প্রভা একটা টু শব্দও করছে না।সাদের কথা বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মেয়েটা এমন বোবার মতো হাটলে কিভাবে সম্ভব!
তবুও সাদ নিজের থেকেই বলল”লঙ্কাবতী।”
“আমার নাম লঙ্কা না।নয়না রহমান প্রভাতী।”
“আমি কি বলে ডাকবো?প্রভাতী নাকি নয়না?”
“যেটা ইচ্ছা!”
“আমার একটাও ভাল্লাগছে না।আমি লঙ্কাবতী বলে ডাকবো।”
প্রভা চোখ রাঙিয়ে সাদের দিকে তাকালো।সাদ মেকি হেসে বলল”আচ্ছা নয়না ডাকবো।আর লঙ্কাবতী মাঝেমধ্যে ডাকবো।ঠিকাছে?”
“কখনো ডাকবেন না।”
“আচ্ছা।”সাদ মুচকি হেসে মনেমনে বলল” আমি লঙ্কাবতী ই ডাকবো।দেখে নিও।”
প্রভা বাড়ির কিছুটা সামনে এসে বলল”আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।”
এটা বলে প্রভা চলে যেতে নিলেই।সাদ বলে”শোনো!”
প্রভা ঘুরে দাড়িয়ে বলল”বলুন।”
সাদ নিজের মাথা থেকে টুপিটা সরিয়ে বলল”দেখো।তোমার জন্য আজ আমার চুল নেই।”
প্রভা কিছুক্ষণ বিষ্ময়ে তাকিয়ে ছিলো তারপরই হেসে দিলো।তারপর বলল”আগের থেকে সুন্দর লাগছে।আপনার মাথাটা ছুতে ইচ্ছে করছে।”
সাদ এটা শুনে প্রভার দিকে এগুতে নিলেই প্রভা ভো দৌড় দেয়।
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।আরেক পর্ব রাতে পাবেন।)
#লঙ্কাবতী
#পর্বঃ০৪এবং শেষ
#Arshi_Ayat
সাদের ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।মেয়েটা প্রভার খালাতো বোন।এদিকে সাদ আর প্রভার প্রেম তো চলছেই তবে এটা ওরা দু’জন আর আদি,সাদিয়া ছাড়া কেউ জানে না।যখন পরিবারের সাথে থাকে তখন দু’জনে এমন ভাব ধরে যেনো দুজনের কেউ কাউকে চিনে না।
একটু আগে সাদ আর সাদের ভাই শান এসেছে বিয়ের শপিং দিয়ে যেতে।সাদ চোরের মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে প্রভা আছে কি না!কিন্তু না আশেপাশে প্রভা নেই।সাদ পকেট থেকে ফোনটা বের করে প্রভাকে টেক্সট করলো বাইরে আসতে।প্রভা বসে বসে মেহেদী দিচ্ছিলো।মেসেজের টোন শুনেও দেখতে পারলো না মেহেদী দেওয়ার জন্য।ম্যাসেজ দেওয়ার পরও প্রভা না আসায় সাদ ভাবলো ব্যাস্ত হয়তো সেজন্য আসে নি।তাই আর মাথা ঘামায় নি।শপিং এর ব্যাগপত্র দিয়ে বাসায় চলে এলো।কাল গায়ে হলুদ।এমনিতেই দেখা হবে।আর রাতে তো কথা হচ্ছেই।
————-
এদিকে আদি সাদিয়ার ওপর খুব রেগে আছে।কারণ আজকে আদির জন্মদিন ছিলো কিন্তু সাদিয়া একবারও উইশ করে নি।আদি চেয়েছিলো মনে করিয়ে দিবে কিন্তু সাদিয়া কথা বলার সুযোগও দেয় নি।আদির মন খারাপ তবুও কিছু জিগ্যেস করে নি।এখন রাত ১১.৫৮। আদি নিজের বেডের ওপর বসে ফোন সামনে নিয়ে অপেক্ষা করছে একটা বার সাদিয়া ফোন করে উইশ করুক।কিন্তু না ফোন করছে না।১১.৫৯ এ হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আদি ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই অপর পাশ থেকে সাদিয়া বলল”শুভ জন্মদিন প্রিয়।নিজের খাটের তলায় দেখো কিছু একটা রেখেছি।”
আদি কোনো কথা না বলে লাইনে থাকা অবস্থায় খাটের নিচে দেখলো একটা ছোটো গিফট বক্স।আদি বক্সটা খুলে দেখলো।একটা স্বর্ণের লকেট।লকেট টা খুলে দেখলো একপাশে আদির ছবি আরেকপাশে সাদিয়ার।আদি মুচকি হেসে বলল”এটা তো তোমার গলায় ছিলো কিন্তু আমার ছবি ছিলো না তখন।”
“হ্যাঁ,সেইজন্যই তো লকেট টা পূর্ণ করে তোমায় দিলাম।এটা সবসময় তোমার কাছে রাখবে।”
সাদিয়া আদির ছোটো বোনকে দিয়ে এই লকেট টা ওর খাটের নিচে রেখেছিলো।আদির ছোটোবোনের সাথে আবার সাদিয়ার ভালো সম্পর্ক।বয়সে একবছরের ছোটো আদির বোন।
“আচ্ছা,কিন্তু উইশ দেরি করে করলে কেনো?আমার রাগ হয়েছিলো।”
“আহারে!কিন্তু আমি চেয়েছিলাম সবার শেষে আমি উইশ করবো।”
“ও এইজন্যই আজকে এত ঢং করলে।”
“ঢং মেয়েরাই করে।আর ছেলেরা মেয়েদের ঢং সহ্য করে।আর হ্যাঁ আমার ট্রিট কই?”
“ট্রিট চাও তাই না?আচ্ছা দিবো।তবে কিছুদিন সময় লাগবে।তারপর দিবো।”
“কেনো?”
“স্পেশাল পার্সনের জন্য স্পেশাল ট্রিটতো তাই!”
“আচ্ছা তা নাহয় কিছুদিন অপেক্ষা করলামই।”
আদি হাসলো।তারপর তাদের মধ্যে প্রেমালাপ চলতে লাগলো।
————-
আগের দিন গায়ে হলুদ ছিলো আজকে বিয়ে।বরপক্ষও চলে এসেছে।সবাই বিয়ের আসরে।আর এদিকে সাদ প্রভাকে খুঁজছে।আশেপাশে না পেয়ে কল দিলো।প্রভা সাদের কল পেয়ে সাদের থেকে একটু দূরে এসে দাড়ালো।সাদ মুচকি হাসলো।বিয়ের পুরোটা সময় সাদ আর প্রভা একজন একজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাডছিলো।
সবশেষে বিদায়ের পালা চলে এলো।মুনের সাথে প্রভাও গেলো।আর সাদ সুযোগে প্রভাকে বলল”গিয়ে নিজের হবু শ্বশুর বাড়ি আর হবু বরের ঘরটা দেখে এসো।”
প্রভা কিছু না বলে শুধু হাসলো।
————
কিছুদিন পর আদি ওর বাবা মা নিয়ে সাদিয়ার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায় আচমকাই।সাদিয়ার চোখ গোলআলুর মতো বড় হয়ে গেছে আদিকে আর ওর পরিবারের সবাইকে দেখে।আদি ইশারায় চোখ মারলো।আর সাদিয়া ইশারায় বলল”আপনি এখানে আসছেন কেনো?”
আদি দাঁত বের করে হসে ইশারায় বোঝালো “ইয়ে তো ট্রেলার হ্যায়।আগে আগে হোতা কেয়া হ্যায় দেখো।”
সেদিনই আদি আর সাদিয়ার ঘরোয়া বিয়ে হয়ে গেলো।সাদিয়ার সব স্বপ্ন লাগছে।সাদিয়া বসে বসে গান শুনছিলো ঘরে হঠাৎ ওর মা এসে বলল শাড়ি পড়ে নিতে কারা যেনো এসেছে ওকে দেখতে।সাদিয়া আদিকে একটা ম্যাসেজ দিয়ে শাড়ি পড়ে নিলো।তারপর ওর মা এসে ওর হাতে চায়ের ট্রে দিয়ে ওদের সামনে নিয়ে গেলো।সাদিয়া মুখ তুলে তাকাতেই শক খেলো।আর এরপর থেকে শক খেয়েই যাচ্ছে।ওরা সাদিয়াকে পছন্দ করার পর প্রস্তাব রাখলো আজই যেন বিয়ে হয়।সাদিয়ার পরীক্ষার পর অনুষ্ঠান হবে।তো সেইকথা মতো আজই বিয়ে হয়ে গেলো।এখন একটা সোফায় সাদিয়া আর আদিকে একসাথে বসানো হলো।সাদিয়া ফিসফিসিয়ে বলল”এগুলো কি?”
“কি আবার!আমাদের বিয়ে।”
“এভাবে হুট করে!”
“সারপ্রাইজ দিলাম।”
“এই সারপ্রাইজটা সারাজীবন মনে থাকবে।”
তারপর আদি মুচকি একটু হেসে সবার অগোচরে একটা লকেট সাদিয়ার হাতে দিয়ে বলল”এই লকেট টা আমার ছিলো।আজ আমারটা পূর্ণ হলো।তাই তোমায় দিলাম।”
সাদিয়ার চেহারায় একটা খুশীর ঝলক খেলে গেলো।তারপর একসাথে খাওয়া দাওয়া হলো।রাত ১১ টার সময় আদি’রা বিদায় নিলো।
————–
এভাবে সময়গুলো ভালোই কাটছে ওদের।কখনো,কখনো কলেজ ছুটির পর আদি আর সাদিয়া ঘুরতে যায় আবার কখনো সাদ আর প্রভা।তবে সাদ আর প্রভার কথা এখনো কেউ জানে না।যেদিন সাদ আর প্রভা ঘুরতে যায় সেদিন আদি’রা যায় না।
এইতো আজকে সাদ আর প্রভার প্ল্যান আছে কলেজ ছুটির পর ঘুরতে যাবে।তাই প্রভার কলেজের সামনে সাদ এসে দাড়িয়ে আছে।ছুটি হবে আর দুই মিনিট পর।
কলেজ ছুটি হওয়ার পর সাদ আর আদি বেরিয়ে গেলো একসাথে।
অনেক্ক্ষণ ঘোরাঘুরির পর এবার বাসায় ফেরার পালা।কিন্তু রিকশায় উঠতে না উঠতেই জ্যাম লেগে গেলো।এদিকে বাসা থেকেও ফোন দিচ্ছে কিন্তু প্রভার ফোনে চার্জ না থাকায় ফোন বন্ধ হয়ে গেছে।তাই প্রভার মা সাদিয়া কে কল দিলো।সাদিয়া আদির সাথে কথা বলছিলো হঠাৎ প্রভার মায়ের কল পেয়ে আদির কল কেটে ওই কল টা রিসিভ করলো।প্রভার মা বলল”সাদিয়া প্রভা কোথায়?তোমাদের ছুটিতো একসাথে হয়েছিলো।”
সাদিয়া প্রভার মায়ের কথা শুনে বুঝে গেছে প্রভা এখনো ফেরে নি তাই বলল”আন্টি প্রভা তো আমাদের বাসায়।ওর আসতে একটু লেট হবে।ও নোট করছে তো তাই।”
“আচ্ছা প্রভাকে ফোন টা একটু দাও তো।”
সাদিয়া মনে মনে বলল’সর্বনাশ’।কিন্তু পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বলল”আন্টি প্রভাতো ওয়াশরুমে।ও বের হলে আপনাকে কল করবো।”
“আচ্ছা।”
সাদিয়া কল কেটে সাদকে কল দিলো।সাদ রিসিভ করতেই সাদিয়া বলল”ভাইয়া আপনারা কই?”
“এইতো জ্যামে বসে আছি।”
“তাড়াতাড়ি প্রভাকে বাসায় দিয়ে আসেন।প্রভার মা আমাকে ফোন দিচ্ছে।”
“আচ্ছা,আচ্ছা দেখছি।”
সাদিয়া ফোন কেটে দিলো।সাদ প্রভাকে নিয়ে অনেকটা হেটে গিয়ে আবার রিকশা নিলো।তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় পৌঁছে গেলো।
প্রভা বাসায় আসতেই ওর মা বলল”তোর নোট করা শেষ?”
“হ্যাঁ মা শেষ।”
“আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে।”
প্রভা নিজের ঘরে গিয়ে হাফ ছাড়ালো।তারপর সাদ আর সাদিয়াকে কল দিয়ে জানালো সব ঠিক আছে।
আর এভাবেই চারজনের সম্পর্ক মধুর হয়ে উঠছে।ভালো থাকুক তাদের ভালোবাসা।
সমাপ্ত
(