#লতাকরঞ্চ (১৬)
আমি আবার ঐ আগের জায়গায় গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষন পর প্রান্ত ভাই আসলো।
আমার পাশের সিটে বসার অনুমতি চাইলো।
আমি অবাক হলাম, প্রান্ত ভাই আমার অনুমতি চাচ্ছে, তাও আবার আমার পাশে! ভাবা যায়?
– ব্যাথা কি খুব বেশিই পাইছিস?
– না।
– ঔষধ নিয়েছিস?
– হুম।
– হাতের এই অবস্থা নিয়েও লিমাকে মেহেদী পরাতে গেলি কেন? আর তোর বোনটা এমন কেন? গাঁধা নাকি?
আমি মনে মনে বললাম, হ্যাঁ আমরা সবাই_ইতো গাঁধা শ্রেণীর। আমার বোন গাঁধা, আমি বলদ। আমার গোষ্ঠীর সব হচ্ছে বোকা। আর আপনি একমাত্তর এক জিনিস, চালাক কেবল আপনিই। আহারেএ…
আমি ঢোক গিলে বললাম,
– আপু বলছিলো তাই দিয়ে দিয়েছিলাম। আমার বোনকে আমি বুঝবো, আপনার দেখার বিষয় না।
প্রান্ত ভাই বললো,
– লতা..
– বলেন।
– আমার সাথে একটু সুন্দর করে কথা বলতে পারবি,প্লিজ?
~উত্তর দিলাম না।
প্রান্ত ভাই আবার বললো,
– ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ছেলেটাকে বিদায় করে দিয়েছি, জানিস? বেয়াদব একটা। সাহস কত বড়! আমার..
কথাটা শেষ না করতেই,
প্রান্ত ভাইয়ার আম্মা এসে তড়িঘড়ি করে বলে গেলো যাতে তাড়াতাড়ি শোভার কাছে যায় উনি। শোভা আপু নাকি ডাকতেছে অনেকক্ষন ধরে।
আসলে ডাকাডাকি কিচ্ছু না।
আমার কাছে আসলেই উনার(শোভা আপুর) গায়ে আগুন ধরে; তাই হয়তো এমন করে।
প্রান্ত ভাই সোজা তার মাকে জানিয়ে দিলো আমার সামনে,
– এখন এখান থেকে যান আম্মা। আমি এতক্ষন শোভার কাছেই ছিলাম। কই এতক্ষন তো কিছু বললো না.. এখনি দরকার পড়লো কেন ওর?
উনি বললেন,
– বাবা মেয়েটা একা আছেতো। ডাকছে তোকে। শুধু শুধু এখানে বসে আছিস কেন? যা না।
প্রান্ত ভাইয়ার আম্মা কেন কথাটা বললো তা আমি বুঝতে পেরে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। উনার বউ হিসেবে শোভা আপুকে ভালো লাগে, মানে উনি শোভা আপুকেই বউ হিসেবে চান।
এটা আমি জানি,বুঝি। তাইজন্যই অন্য কারো ধারে কাছে ঘেষতে দেয়না নিজের ছেলেকে।
ভাই বললো,
– আচ্ছা যান। আমি যাচ্ছি।
________________
____________
প্রান্ত ভাইয়া আস্তে আস্তে বলছে,
– শোভার সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার প্ল্যান চলছে এটা আমি জানতাম না। সত্যি বলছি জানতাম না। কেন উনারা এইরকম অপ্রীতিকর ডিসিশনটা নিলো তা ভাবলেই আমার অবাক লাগে।
আচ্ছা,তুই জানতি ব্যাপারটা?
আমি কি বলবো, কি বলবো করে আওড়াতে লাগলাম মনে মনে। তারপর বললাম,
– আপনাদের এসব বিষয় নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না ভাইয়া। আপনি এখন যান দয়া করে। আমার পক্ষে এখন আপনার কোনোরকমের বাঁকা কথা শোনা সম্ভব না। মুড নেই। ভালোও লাগেনা। সো,প্লিজ।
ভাই ক্লান্ত স্বরে বললো,
– আচ্ছা, কোনো উল্টাপাল্টা কথা বলবোনা। শোন, শোভাকে আমি বিয়ে করবো এটা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিওনি।
– তাহলে?
– ও আমার পুরোনো বন্ধু। বয়সে এক বছরের ছোট যদিও। আমার বাসায় আসতে চেয়েছিলো অনেকবার। আনবো আনবো করে আর আনা হয়নি। ও আমার প্রতি একটু বেশিই কেয়ারফুল তাই ও হচ্ছে আমার সেরা বন্ধুদের তালিকার একজন। ব্যস।
কিন্তু আমার আম্মাতো আবার তোদের বাড়িতেই শান্তি পায়। তাই বাসায় না নিয়ে গিয়ে তোদের ওখানেই আনলাম। খুব জোরাজোরি করেছিলো বলেই আনছিলাম। কিন্তু তাই বলে বিয়ে টিয়ে…
আমি অস্বস্তি বোধ করছি।শোভা আপু আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে দূর থেকে।চোখ দিয়ে মনে হয় যেন বলছে,
– তোর এত বড় সাহস তুই আমার প্রান্তিকের সাথে কথা বলিস?
আমি ভাইকে কিছুই জিজ্ঞেস করছিনা। উনি নিজে নিজেই উত্তর দিচ্ছেন, কথা বলছেন।
আবার বলোলো,
– এইজন্যই তো বলি আম্মা শোভাকে কেন এত আদর -আপ্যায়ন করে.. কিন্তু আমিতো শোভাকে বিয়ে করতে চাইনা…
কিছুক্ষন পর কিশোর ভাই আসলো।
এসেই আমার কোলের উপর মেডিসিন রেখে দিয়ে বললো,
– এগুলো প্রেসক্রাইব করা। হাতের জন্য আর তোমার গ্যাস্ট্রিকের জন্য। এই হলো পানি। ছটফট খেয়ে ফেলো।
প্রান্ত ভাই মাথা নিচু করে বসে রইলো।
কিছুক্ষন পর আস্তে আস্তে হেঁটে চলে গেলো।
অত:পর, এনগেইজমেন্ট পার্টি খতম হলো..
★★★(শেষ পর্যায়)★★★
বাড়িতে বসে বসে হোমওয়ার্ক করছি।
প্রান্ত ভাই আজ বাড়িতে আসতেছে।
কিশোর ভাইকে আব্বা আজ জরুরি কাজে ডেকে পাঠিয়েছে।
আমি এখন ফোর্থ ইয়ারের ফাইনালে।
অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছি।
প্রান্তিক ভাই শোভা আপুকে বিয়ে করেনি শেষ পর্যন্ত। উনি নিজেই সটান হয়ে না করে দিয়েছিলো বড় ফুফুকে।
ওদিকে আমার জন্যও নানা জায়গা থেকে হরেক রকমের, হরেক প্রফেশনের পাত্র আসা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে আমাকে একবারো আব্বা সেজেগুজে বসতে দেয়নি কোনো পাত্রের সামনে।
আব্বা কিশোর ভাইকে মনে মনে পছন্দ করে। কিন্তু আব্বা চায় কিশোর ভাই নিজে থেকে প্রস্তাব পাড়ুক। তাই মনে মনে অপেক্ষা করছে।
আম্মা আর আপু অনেক চেষ্টা করেও সাজাতে পারেনি। আব্বার কড়া নিষেধ। আব্বা বলেন, মেয়ে নিলে আসল চেহারা দেখেই নিবে, নকল না।
কিন্তু কিশোর ভাই এখন পর্যন্ত না আমায় প্রপোজ করেছে; না দিয়েছে বিয়ের প্রস্তাব।
সামনের মাসে নাকি বিদেশ চলে যাবে।
কিশোর ভাই আজ আমাদের বাড়িতে আসছেন।
আমার জন্য এবারো কিছু ফুল নিয়ে আসছে।
তবে এবারের ফুলগুলো প্রথমে আমি দেখতে পাইনি। পরে যখন গিফটটের মোড়ক খুললাম, তখন দেখলাম
ম্যাক্সিম গোর্গির বইয়ের মলাট। তুলনামূলকভাবে ভারী।
এত ভারী হওয়ার কথা তো না…
বারান্দায় বসে বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি।
বেশ, চমৎকার তো!
বইয়ের ৫/৬পাতা পর পর দেখা যাচ্ছে হয় চকোলেট নতুবা ফুল আছে। এমনভাবেই পাওয়া যাচ্ছে।
ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম এমন কেন? উনি বললেন,
– তুমিতো নাকি গল্পের বই কম পড়ো। চকোলেট, ফুল এই দুইটাইতো তোমার পছন্দের। তাই আকর্ষণের জন্য রেখে দিয়েছি। এট লিস্ট এগুলো পাওয়ার টানে টানে অন্তত বইটা পড়বা। পড়েও ফেলবা আশা করি।
আমি কথাটা শুনে হেসে দিলাম।
সত্যিই তো!
ভাইয়া কেবল আমায় হাসায়।
কালু এসে কিশোর ভাইকে বললো,,
– আফনাগো দুইজনেরে স্যারে ডাকে।
(কালু স্যার ডাকে আব্বাকে কারণ এটা ডাকলে নাকি তার নিজেকে অফিস কর্মচারী টাইপ কিছু একটা লাগে।)
আমরা দুজন নিচে গেলাম।
পরিবারের সকলে উপস্থিত।
কিশোর ভাই তার আব্বা-আম্মাকে এনেছে।
আমি সকালে উঠে কেবল হালকা করে মুখে ক্রিম দিয়েছিলাম। পরনে ঘরোয়া পোশাক। বিষয়টা আমি কালুর থেকে আধো আধো শুনেছি। পুরোটা বুঝতে পারছিনা,কি হচ্ছে আসলে।
★
কিশোর ভাই আব্বাকে খুব বিনয়ীভাবে বললো,
– স্যার আজ একটা কথা বলি।
আব্বা অবাক হয়ে আছেন। তারপর ও বললো,
– বলো বলো।
কিশোর ভাই বললো,
– আপনাকে না জানিয়েই আমি একটা কাজ করে ফেলেছি। দু:খিত।
আব্বা আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– ব্যাপারটা কি? কি করছো?
কিশোর ভাই আমতা আমতা করে বললো,
– স্যার আপনাদের ড্রয়িংরুমে আমার আব্বা আম্মা এসে বসে আছে।
চলবে..
(