লাভ ফাইট পর্ব -০৫

#লাভ_ফাইট
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৫
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

বিয়েটা এক্সিডেন্টলি হয়ে যায় আমাদের।যার কারণে বিয়ের ব্যাপারে আমার বাবা-মা জানলেও ফালাকের বাবা-মা জানে না।আব্বু ফালাকের থেকে তাদের ফোন নাম্বার নিয়ে তাদের আমাদের বাসায় আসার আমন্ত্রণ জানান।আজ তারা আসছেন।বাসায় একটা উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।আপুও এসেছে।আম্মুর সাথে আপু রান্না বান্নায় সাহায্য করছে।আমায় ঘর গুছানোর দায়িত্ব দিয়েছে। সাদ ভাইয়া আর পায়েল খুনশুটিতে ব্যস্ত।ট্রুথ ডেয়ার খেলছে তারা।সাদ ভাইয়া এই কিছুক্ষণ যখন ডেয়ার নেয় তখন বাদর পায়েলটা সাদ ভাইয়াকে ডেয়ার হিসাবে অনেক গুলো চকলেট আইসক্রিম আনতে বলে।ভাইয়া প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে পায়েলের চাপে ডেয়ার মানতে বাধ্য হয়।ডেয়ার অনুযায়ী ভাইয়া অনেক গুলো চকলেট আইসক্রিম আনে।আমি সেখান থেকে একটা চকলেট কোন আইসক্রিম নিয়ে খাই।
ফালাক এখনো আসে নি।সকালে রওনা দিয়েছে ফালাক।জ্যামে না পরলে যোহরের আজানের আগেই চলে আসবে আশা করা যায়।ফালাকের পরিবার ভোর রাতে রওনা দিয়েছে।সুদুর খুলনা থেকে আসছে তারা।আমি একটু বেশি নার্ভাস তাদের ভাষা নিয়ে। এক অঞ্চলের ভাষা তো অন্য অঞ্চলে বোধগম্য হয় না।হলেও তা অনেক হাস্যকর হয়।যেমন আমাদের এখানে পুরি এক ধরণের খাবারের নাম। কিন্তু সিলেটে গিয়ে যদি কেউ বলে সে পুরি খাবে তাহলে সে গেছে!
ঘর গোছানো শেষ হলে ড্রয়িংরুমে গিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিই।যা ভ্যাপসা গরম পরেছে।মনে হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে আছি।আরেকটু গরম পরুক না!ইয়া হাবিবি বলে উট নিয়ে বের হবো। ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে আপুনি আসে।ওড়না দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলে,,,

” কি পরবি আজকে?”

” জামা।এমনিতে অন্যান্য দিন টিশার্ট পালাজ্জো পরি আজ কোনো এক থ্রীপিস পরবো।”

” ফালাকের বাবা মা তোকে কখনো দেখেছে?”

” থাকি দেশের দুই প্রান্তে।দেখবে কিভাবে?”

” প্রথম দেখতেছে তোকে।আজ শাড়ী পর।”

” আমি পরতে পাই না শাড়ি।”

” আমি পরিয়ে দেবো নি।এখন শাওয়ার নিয়ে আয় যা।তুই বের হলে আমি যাবো।”

আপুনির কথার পিঠে কোনো কথা বলি না আমি।গরম পরেছেও অনেক।চোখে মুখে তীব্র ক্লান্তিভাব।শাওয়ার নিলে হয়তো ভালো লাগবে।
শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে দেখি ফালাক উপর হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।আমি টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বলি,,,

” কখন এলে?”

” এই মাত্র।”

” ফ্রেশ হয়েছো?”

” একটু পরে।অস্থির লাগছে।”

” আপুনি গেলো কিন্তু তাহলে ওয়াশরুমে।”

” আচ্ছা যাক।”

আপু ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে আমায় ডাক দিয়ে হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে যায়।

” কি এইগুলো?”

” শাড়ি আর পাঞ্জাবী।আব্বু টাকা দিয়েছিলো তোদের জন্য কিনতে। দেখতো পছন্দ হয় কি না?”

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিই।আপুনি মুচকী হেসে আমার গালে হাত দিয়ে বলে,,,

” তুই যতটুকু পারিস সাজতে থাক। আমি শাওয়ার নিয়ে আসছি।টি শার্ট পালাজ্জো পরে বিয়ে করেছিস।আজকে রেজিস্ট্রি হবে।আজ অন্তত একটু বউ সাজ।”

খাটের এক সাইটে সব মেকাপ প্রোডাক্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছি।ফালাক সব গুলোই চোখ বুলিয়ে নেয়।অবাক দৃষ্টিতে বলে,,,

” এগুলা কি?”

” মেকাপ।”

” তুমি না বলতা মেকাপ করতে জানো না তুমি।”

” শিখে নিতে কতক্ষণ?মানুষকে দেখাতে হবে না ফালাক ভাই কত সুন্দর বউ পেয়েছে?”

” ফালাক ভাইয়ের বউ ন্যাচারালই অনেক সুন্দর। কাজল,লিপস্টিক দিলেই তাকে মাশাআল্লাহ লাগে।আটা ময়দা দেওয়ার দরকার নাই।”

আমি আড়চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বলি,,,

” ডোন্ট ডিস্টার্ব। সাজতেছি।”

আপুনি বেরুতে বেরুতে আমার সাজা হয়ে যায়।কসমেটিকস গুলো শুধু শুধু কিনেছি।একটাও ভালোভাবে এপ্লাই করতে পারি না।টাকা নষ্ট।ছোট বড় সব অনুষ্ঠানে বিবি ক্রিম,লিপস্টিক, আইলাইনার, মাশকারা ই সব।বিয়ে বাড়ি গেকে শুধু ব্লাশন আর আইশ্যাডো দিই।সব সময় থ্রী পিস পরায় টিপটা আমার গেটাপের সাথে যায়।একসময় ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরতাম।কিন্তু বাদ দিয়েছি পরা।ফালাকের ভাষ্যমতে পশ্চিমা পোশাকে নাকি আমায় মানায় না।বাঙালি পোশাকেই নাকি আমায় অসম্ভব সুন্দর লাগে।আর কোন মেয়ে চাইবে না নিজেকে সুন্দর উপস্থাপন করতে!তাই বাঙালিয়ানার দিকে ঝুঁকি।ফালাকের কথাই সত্য হয়ে দাঁড়ায়।বাঙালি পোশাকে আমি নিজেকে আলাদা ভাবে খুঁজে পাই।তারপর থেকে থ্রীপিস,কুর্তাই আমি পরি।
আজ প্রথমবার শাড়ি পরতে যাচ্ছি।প্রথমবারও না।ছোট বেলায় অনেক পরা হয়েছে শাড়ি।কিন্তু মাঝখানে পশ্চিমা সংস্কৃতির খপ্পরে পরে শাড়ি কি জিনিসটাই ভুলে গেছিলাম।অনেকদিন পর পরা হচ্ছে তো তাই ফার্স্ট টাইম ফার্স্ট টাইম ফিলিং আসছে।
আপুনি শাওয়ার নিয়ে টাওয়েল দিয়ে চুল প্যাচাতে প্যাচাতে রুমে আসে।ফালাক আপুনিকে সালাম দেয়।আমি নতুন টাওয়েল বের করে দিই ফালাককে।ফালাক ওয়াশরুমে চলে যায়।

আপুনি শপিং ব্যাগ থেকে শাড়িটা বের করে মেলে।সাদা-কালো আমার প্রিয় রঙ।শাড়িটা জামদানী। সাদার মধ্যে লাল সুতোর কাজ রয়েছে।আর জমিন লাল।তখন ভালো করে না দেখেই বলেছিলাম শাড়িটা সুন্দর। এখন দেখি আসলেই সুন্দর।আপুনি বেশ পরিপাটি ভাবেই শাড়ি পরাতে পারে।আঁচল সুন্দর করে প্লেট প্লেট করে দেয়।
আমি রেডি হতে হতে ফালাক শাওয়ার নিয়ে বের হয়।ফালাকও সেইম পাঞ্জাবী পরেছে।সাদার মধ্যে লালের কাজ।পেছন পেছন সাদ ভাইয়াও আসে।

” সাদা নাকি শ্যালিকার পছন্দ?তাই তোমার আপু এই শাড়িটা কিনলো।আর পাঞ্জাবিটা তোমার আপু নিজ হাতে হ্যান্ড পেইন্ট করেছে।”

” আপুর গুণ আছে অনেক।আর আমি বে গুণ।শুধু বিছানা সোফায় গড়াগড়ি করি।”

সাদ ভাইয়ার কথার জবাবে বলি আমি।সবাই হেসে দেয়।পায়েল আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়। সেও শাটি পরেছে।প্যাচিয়েছে বলা যেতে পারে।ও তো তাও প্যাচিয়েছে।আমি তো তাও পাই না।

” আপুনি,শাড়ি পরিয়ে দে।আমি ছবি তুলার জন্য যেভাবে শাড়ি প্যাচাই সেভাবে প্যাচিয়েছি।তুই ভালো করে শাড়ি পরাতে পারিস।”

” পায়েলের সাথে আমিও শাড়ি পরে আসছে।তোমরা থাকো।সবাই শাড়ি পাঞ্জাবি পরে সেল্ফি তুলবো।”

আপুনি পায়েলকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।আমি,ফালাক,সাদ ভাইয়া খাটে বসে খোশগল্প করতে লাগি।

” দোয়েল যা ইন্ট্রোভার্ট!ভাবতেই পারিনি ওর এভাবে বিয়ে হবে।”

” আপনারা সবাই ওকে কোন হিসাবে ইন্ট্রোভার্ট বলেন আমি ভেবে পাই না।সারাদিন আমার কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে আমার মাথা খায়।”

সাদ ভাইয়ার কথার জবাবে বলে ফালাক।খানিকটা রাগ হয়।তোর কাছে যদি ইন্ট্রোভার্ট থাকতেই হয় তাহলে তুই কিসের প্রিয় মানুষ? প্রিয় মানুষের কাছে কিসের ম্যাচিউরিটি? খানিকটা অভিমানি কন্ঠে বলে,,,

” হু আমিই তো কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করি।আর অন্য মেয়েরা তো তোকে ফিসফিসিয়ে গান শোনায় তাই না?”

বেশ কিছুক্ষণ আমরা খোশগল্প করি।আপুনি পায়েল সেজে আসে।আমরা সেল্ফি তোলার প্রস্তুতি।সাদ ভাইয়া বেশ লম্বা।আপুনি মাঝে মাঝে তাকে খাম্বা বলে ডাকে,,,

” এই খাম্বা তুমি ফোন হাতে নেও।”

আমরা সবাই হেসে দিই।সেল্ফি তোলা হয়ে গেলে আমরা খাটে গোল হয়ে বসে ছবিগুলো দেখতে লাগি।ছবি গুলো দেখে পায়েল কিছুটা উদাসীন কন্ঠে বলে,,,

” দেখছিস আপুনি আপ্পি?তোদের সবার জামাই আছে।আজ আমারও যদি জামাই থাকতো তাহলে এই সেল্ফিটা পূর্ণতা পেতো।”

পায়েলের কথা শুনে আমরা সবাই এক যোগে হেসে উঠি।আপুনি পায়েলের মাথায় হাল্কা চড় দিয়ে বলে,,,

” বেশি পেকে গেছিস।”

” আচ্ছা ফালাক ভাইয়া!তোমার কি ছোট ভাই আছে?”

” কেন?”

আড়চোখে তাকিয়ে বলে ফালাক।পায়েল লাজুক কন্ঠে বলে,,,

” না মানে..আমারও একটা গতি হতো তো!তাই আর কি!”

আবার আমরা হেসে দেই।এরই মধ্যে কলিংবেলের আওয়াজ!পাশের ঘর থেকে আম্মু চিৎকার দিয়ে বলে,,,

” দোয়েল দরজাটা খুলে দে।”

” বিয়ের কনেকে বলছে দরজা খুলে দিতে।আমি যাচ্ছি।”

ভেংচি কেটে বলে আপুনি।আপুনি উঠে যায়।সাদ ভাইয়া ফালাককে বলে,,,

” তোমার বাবা- মা ই এসেছে হয়তো।”

বলতে না বলতেই আপুনির ডাক,,,,

” ফালাক আংকেল আন্টিরা আসছেন।”

ফালাক উঠে যায়।ফালাকের পেছন পেছন সাদ ভাইয়াও যায়।আমি উঠতে যাবো ঠিক তখনই পায়েল আমার পথ আটকে বলে,,,

” তুই বিয়ের কনে।তুই এক হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে থাকবি।তুই কেন দৌড়ে শ্বশুরবাড়ির মানুষজনকে দেখতে যাবি?”

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

[আসসালামু আলাইকুম। অনেক দিন পর লেখালেখি করা।জানিনা ঠিক ভাবে কাহিনি উপস্থাপন করতে পারছি কিনা😑গল্পটা ধীরে সুস্থে এগোবে।তাড়াহুড়া করলে এলোমেলো হয়ে যাবে কাহিনি। তখন আপনারাও বিরক্ত হবেন আর আমিও।ধন্যবাদ, অনুরোধ রইলো পাশে থাকার।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here