লাভ ফাইট পর্ব -০৯

#লাভ_ফাইট
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৯
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

” আপনি কখনো কাগজের ফুল দেখেছেন?”

ফালাকের কথা শুনে রিসিপশনের মেয়েটা উঠে দাঁড়ায়।জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,

” সরি স্যার?”

” কাগজের ফুল দূর থেকে দেখতে একদম জীবন্ত।কিন্তু কাছে গেলে প্রাণহীণ।আপনাকেও ঠিক সেই রকম লাগছে।”

মেয়েটা লাজুক হাসে।

” হাও ক্যান আই হেল্প ইউ স্যার?”

” ইন্টারভিউ দিতে দিতে গলা শুকিয়ে গেছে।”

মেয়েটা একটা পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলে,,,

” আপনি এটা থেকে পানি খেতে পারেন?”

” আপনার পার্সোনাল এটা?”

” জ্বী।”

” কোনো অসুবিধা হবে না তো?”

” না স্যার।আপনি খেতে পারেন।”

ফালাক পানি খেতে লাগে।হঠাৎই রিসিপশনের মেয়েটা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে ফালাককে বলে,,,

” স্যার আপনার ইন্টারভিউ কেমন হলো?”

ফালাক মুখে পানি নিয়েই মেয়েটার দিকে কিছুক্ষণ বেকুবের মতো চেয়ে থাকে।পানি গিলে বোতলটা রেখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,,,

” অতিমাত্রায় জঘন্য। ”

কথাটা বলেই ফালাক প্রস্থান করে।মেয়েটা বেকুবের মতো ফালাকের যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে।

________

ফালাক বাইরে থেকে এসে ক্লান্ত শরীর দিয়ে ধুপ করে বিছানায় পরে।আজ সব টিউশন থেকে ছুটি নিয়েছিলো সে।দোয়েল বাসায় নেই।ক্লাস করতে গেছে।”বিলাই” এসে ফালাকের গালে পরম আয়েশে নিজের মাথা ঘষতে লাগে। ফালাক বিলাইকে সরিয়ে নিজে উঠে বসে।আলতো করে বিলাইয়ের গায়ে হাত বুলায় ফালাক।একসময় দুষ্টুমির জন্য বিলাইকে পছন্দ করতো না ফালাক কিন্তু এখন পছন্দ করে।দোয়েলের অনুপস্থিতিতে ফালাক বিলাইয়ের মধ্যে দোয়েলকে খুঁজে পায়।
বেশ অনেক সময়ই ফালাক বিলাইয়ের সাথে কাটায় কিন্তু দোয়েলের আসার নাম নেই।ফালাক দোয়েলকে ছাড়া এইটুকু সময়েই অস্থির হয়ে গেছে।না জানি দোয়েল কিভাবে ফালাককে ছাড়া একটা গোটা দিন কাটিয়ে দেয়।এখন তো তাও বিলাই আছে।আগে তো কেউ ছিলো না।একা ছিলো দোয়েল।ইন্ট্রোভার্ট হওয়ায় আশেপাশের ফ্ল্যাটের কারও সাথেই দোয়েল ফ্রীলি মিশতে পারে না।ফালাক বিলাইকে কোলে নিয়ে বলে,,,

” না জানি তোর আম্মু কিভাবে থাকে আমায় ছাড়া।আমি তো ঘন্টা দেড়েকেই অস্থির হয়ে গেছি।বড্ড কষ্ট দিই না তোর আম্মুকে?সব দিক দিয়ে আমি ব্যর্থ।একজন ব্যর্থ ছেলে,একজন ব্যর্থ প্রেমিক,একজন ব্যর্থ স্বামী।একজন ব্যর্থ মানুষ। ”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফালাক।পাশের র‍্যাকে একটা বয়ামে কিছু চানাচুর ছিলো।দোয়েলের চানাচুর খুব পছন্দ। বেশির ভাগ সময়ই দোয়েলের বিছানা বা স্টাডি টেবিলে কাটে।তাই বিছানা আর স্টাডি টেবিলের মধ্যে থাকা র‍্যাকে সব সময় চানাচুর থাকে।যাতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়।ফালাক সেখান থেকে চানাচুর নিয়ে খেতে লাগে।সাথে বিলাইকেও দেয়।কিছুক্ষণ বাদে দোয়েল আসে।

” কখন আসছো?”

ব্যাগটা ওয়ারড্রফের ওপর রাখতে রাখতে বলে দোয়েল।

” এইতো ঘন্টা দেড়েক হলো?”

” ইন্টারভিউ কেমন হলো?”

” জঘন্য। খালি বলে অভিজ্ঞ মানুষ দরকার তাদের।আমি স্টুডেন্ট লাইফে চাকরির এক্সপেরিয়েন্স পাবো কিভাবে?”

” প্যারা নাই চিল।হয়ে যাবে একটা দেখিয়ো।”

কথাটা বলে দোয়েল ওয়াশরুমে যায় শাওয়ার নিতে।বেশ তাড়াতাড়িই বের হয় দোয়েল।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছিলো দোয়েল।হঠাৎ ফালাক ওর পেছনে এসে দাঁড়ায়।

” কিছু বলবে?”

” খুব কষ্ট দিই না তোমায় দোয়েল?”

” হঠাৎ এই কথা কেন?”

” আজ তুমি যখন ছিলে না তখন খেয়াল করলাম বাসায় একা একা কেমন লাগে!”

” বিলাই আছে তো।”

” বিলাই তো বিলাই ই।আর দোয়েল পাখি তো দোয়েল।দোয়েলের শূন্যতা কেউ পূরণ করতে পারে না।”

” আগে যখন দূরে থাকতাম তখন কেমন করতে?”

” তখনকার পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি এক নয় দোয়েল।”

দোয়েল হাল্কা করে ভেজা চুল গুলো বেঁধে রান্না ঘরের দিকে যায়।চারটা বাজে।অথচ দুপুরের খাবার খাওয়া হয় নি। ফালাকও দোয়েলের পেছন পেছন যায়।

” জানোই তো দোয়েল আমার বাবার অবস্থা ভালো না।বাবার টাকা থাকলে এই টিউশনও করতে হতো না চাকরির পেছনে এত ছুটতেও হতো না।তোমায় ঠিকই সময় দিতে পারতাম।”

ফালাক দোয়েলের পেছন পেছন ঘুরছে আর কথা গুলো বলছে।দোয়েল কোনো প্রত্যুত্তর করছে না।চালের ডাব্বা থেকে এক কাপ চাল নেয় পাতিলে।সেগুলো ভালো করে ধুয়ে চুলোয় বসিয়ে দেয়।ফালাক এখনো সেগুলো নিয়েই বকবক করছে।দোয়েল এইবার কিছুটা বিরক্তই হয়। তীব্র বিরক্তি চোখে মুখে নিয়ে সে ফালাকের দিকে তাকায়।ফালাক চুপ হয়ে যায়।

” আমি কি কখনো তোমার কাছে এগুলা নিয়ে অভিযোগ করছি?”

শান্ত গলায় বলে দোয়েল।ফালাক না বোধক মাথা নাড়ায়।

” তো কেন এত কথা বলতেছো তুমি?আমার বেশি কিছু লাগবে না ফালাক।দিন শেষে তোমায় পেলেই হবে।দিন শেষে রাত্রিতে তুমি আমায় যে এক দেড় ঘন্টা সময় দাও।আমার সাথে গল্প করো,আমরা দুজন যে বালিশ ছোড়াছুড়ি খেলি তাই আমার কাছে অনেক।হ্যাঁ একটা সময় ছিলো যখন তোমার এই সময় না দেওয়া নিয়েই আমি মনক্ষুণ্ম ছিলাম।আর তাই ব্রেকাপ করেছিলাম।কিন্তু বিধাতা আমাদের বিচ্ছেদ চাননি।তাই রাতেই সারাজীবনের জন্য আমাদের বেঁধে দেন।আর আমার টাকা পয়সা,গাড়ি বাড়ি কিছুই লাগবে না।শুধু তোমার সাথে ডাল-ভাত আর নুডলস খাওয়ার সামর্থ্যটুকু থাকলেই হবে যা ইতিমধ্যেই তোমার আছে।”

দোয়েল এক নাগারে কথা গুলো বলে।ফালাক অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।শুধু তারজন্য একটা মেয়ে কত স্যাক্রিফাইসই করছে।হাত পুড়িয়ে রান্না করছে।দোয়েলদের বাসায় প্রতিদিনই মাংসভাত খাওয়া হয়।আর এদিকে ফালাকের সামর্থ্য না থাকায় দোয়েল হাসি মুখে ঠিকই ডাল ভাত খাচ্ছে।মেয়েরা সত্যিই স্রষ্টার অবাক সৃষ্টি। হাসিমুখে সব পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

” ফ্রেশ হইছো?বাইরে থেকে যে আসছো ফ্রেশ হওয়া লাগবে না?”

দোয়েলের কথায় ফালাকের ধ্যান ভাঙে।আকষ্মিকতায় কিছুটা চমকে যায় ফালাক।

” কিছু বললে?”

” গোসল করতে বললাম।বাইরে থেকে যে আসছোস ড্রেসও চ্যাঞ্জ করিস নাই।যা ওয়াশরুমে যা।”

ফালাক ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।হঠাৎ পেছন থেকে দোয়েল বলে,,,

” শোন,জামা কাপড় ধুয়ে ফেলিস।”

” তুই আছিস না?”

” হু,আমি তো তোর মাগনা বুয়া!সব করাবি আমায় দিয়ে।নিজের কাজ নিজে করবি।”

ফালাক আর কোনো প্রত্যুত্তর করে না।ওয়াশরুমে যায়।আগে ফালাককে চুমুর লোভ দেখিয়ে দোয়েল কাজ করিয়ে নিতো।যদিও ফালাক সেগুলো বুঝতো।কিন্তু দোয়েলের দুষ্টুমি গুলো ফালাক খুব উপভোগ করতো।তাই সেও দোয়েলের সাথে তাল মেলাতো। এখন দোয়েলের মধ্যে কেমন যেন বাচ্চামি দুষ্টুমি গুলো নেই।বড় হয়ে গেছে দোয়েল।সাংসারিকও হয়ে গেছে।আগের মতো ফালাকের সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করে না দোয়েল।বায়নাও ধরে না ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার।

ফালাক ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসে।দেখে দোয়েল খাবার সাজিয়ে বিছানায় আছে।পাশে বসে আছে বিলাই। ফালাক খেতে বসে।দোয়েল তখনও শুয়েই আছে।

” খাবে না?”

” শরীর টানছে না।তুমি খাও।আমি পরে খাবো নি।”

ফালাক কোনো কথা বলে না।প্লেটে খাবার নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে।

” ওঠো।”

” আমি পরে খাবো বললাম।”

” উঠতে বলছি।”

দোয়েল ওঠে বসে।ফালাক ভাত মাখতে মাখতে বলে,,,

” আংকেল পই পই করে বলে দিছেন তার মেয়ের ভাত খেতে আলসেমি লাগে।এখনো লাগতেছে।তাই দোয়েল পাখি বললো পরে খাবে সে।”

কথাটা বলে দোয়েলের সামনে খাবার ধরে ফালাক।দোয়েল মুখে তুলে নেয়।খেতে খেতে বলে,,,

” আমি বাচ্চা নাকি যে খাইয়ে দিতে হবে।বললামই তো একটু পরে খাবো।”

” কথা না বলে চুপ চাপ খাও।”

চলবে,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here