#লেডি_ডন
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৪
আকাশকে মারতে মারতে আধমরা করে ফেলেছে!আকাশ মাটিতে পড়ে আছে।তখনি কলেজের গেইট দিয়ে এগারোটা হায়েনা প্রবেশ করে হাতে বিশাল বড় বড় অস্ত্র নিয়ে!
আলিফ সাহেব হায়েনা গুলোকে দেখে থরথর করে কাঁপতে শুরু করে!
হায়েনার গলার শব্দ শুনে মাটিতে শুয়েই সজোড়ে হাসতে আরম্ভ করে!
–মেনে বোলা থা,মেরা দেমাগ হাটি তো দূূঘট না ঘাটি!
এখন কার বাপের সাধ্য আছে দেখি,পারলে তোরা আমাকে রক্ত খাওয়া থেকে আটকা!
মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালাম,কিন্তু নিজের শরীরের ব্যালেন্স রাখতে পারছি না।ঢুলে পড়ে যাচ্ছিলাম বারবার।তখনি হায়েনার দল এসে আমায় ধরে ফেলে!
–ভাই আপনি ঠিক আছেন তো?
আপনার এই অবস্থা যে করছে,তাদের তো আজ শসান ঘাট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবো।
–হা আমি ঠিক আছি।আর তোদের কিছু করতে হবে না,ওদের আমিই দেখছি।তোরা খালি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখ।পুরো কলেজ হা হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দৃশ্য দেখছে।এ যেনো এক কাল নেমে এসেছে কলেজ মাঠে!সবাই হায়েনা গুলোর ভয়ে দৌড়ে যে যার মতন নিজেকে আড়াল করে ফেলে।হায়েনা একটার হাত থেকে মেশিন একটা হাতে উঠিয়ে নিলাম।আমায় মারিস তোদের কতবড় সাহস!আজ মেশিনের ডাট দিয়ে মেরে আলিফ সাহেবে মস্তক কয়েকভাগে বিভক্ত করে ফেলবো।
মেশিন নিয়ে আলিফ সাহেবের দিকে ঢুলতে ঢুলতে এগিয়ে গেলাম।আলিফ সাহেব,ঘুমন্ত বাঘ কে জাগাতে হয় না,না হয় নিজের এই প্রাণ হারানোর ভয় থাকে।কিন্তু আপনি সেটাই করলেন।এখন আমার হাত থেকে আপনাকে কে বাঁচাবে?
–এই ছেলে,তুই কাকে কি বলছিস?তুই জানিস না আমি কে?আমার কত পাওয়ার!আমি চাইলে তোকে এখানেই মেরে পুঁতে ফেলতে পারি।
–হা,হা,হা,আলিফ সাহেব,আপনার কথা শুনে প্রচুর হাসি পাচ্ছে!আপনি যা বললেন তা কখনোই পারবেন না!কারন এই যে দেখছেন হায়েনা গুলো,একেকটা রক্ত চোষা হায়েনা।একটা হায়েনা যদি আপনার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায়,তাহলে তিন অক্ষরের আলিফ নামের মতন আপনাকেও মেরে তিন টা খন্ডে বিভক্ত করে ফেলবে।
–এই তোরা তাকিয়ে কি দেখছিস,ছোকড়াটা সহ সব কয়টাকে মেরে কোমায় পাঠিয়ে দে।বদমাশ টা অনেক কথা বলছে দেখি। আমিও দেখতে চাই ওর কতবড় আস্পর্ধা,সে আমায় হুমকি দেয়!
–মা’র খেয়েও মেজাজটা শান্ত করে রেখেছিলাম।কিন্তু এবার মনে হচ্ছে সব কয়টার বারোটা বাজাতেই হবে।মেশিনের ডাট টা উল্টো ঘুরিয়ে আলিফ সাহেবের মাথায় বাড়ি দিতে ধরলাম,তখনি ধাপাস করে উল্টো আমি মাটিতে পড়ে গেলাম।এমন সময় চিপ মিনিস্টারের গাড়ি কলেজের গেইট দিয়ে প্রবেশ করে।
আলিফ সাহেব চিপ মিনিস্টারকে দেখেই সেলুট দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
চিপ মিনিস্টার তার সালামের উত্তর না নিয়ে সোজা আলিফ সাহেবের কলারের মধ্যে ধরে ফেলে।
–এই জানোয়ার,তুই কার গায়ে হাত দিয়েছিস তুই জানিস?এই ছেলের যদি কিছু হয়,তাহলে কবরের তলে গিয়ে লুকালেও শান্তি পাবি না।সেখান থেকে তুলে আবার হত্যা করবে তোকে।শুধু তোকে না,সাথে আমাকেউ উপরের টিকিট ধরিয়ে দেবে।
–মিনিস্টার সাহেব আপনি এসব কি বলছেন উল্টো-পাল্টা?এই টুকু ছেলের কিসের এত ক্ষমতা?
–বাপ তোকে বুঝানোর ক্ষমতা আমার নাই!
বিশ্বাস কর,যেই এগারোজন কে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেখছিস,এগুলা কোনো মানুষ না,এগুলা একেকটা চিতাবাঘ!এখান থেকে একজন ও যদি তোর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায়,তাহলে তোর বংশ সহ কবরের তলে পাঠিয়ে দিবে।
–মিনিস্টার সাহেব,সত্যিই আমার মাথায় কিছু কাজ করছে না!
–আরেহ বেটা তোর মোটা মাথার গুষ্টি মারি।
আগে নিজের জান বাঁচানো ফরজ।তুই যা জাহান্নামে,আমি এই ছেলেকে নিয়ে আগে হসপিটাল যাই।না হয় বেটা পরে আমাকেউ ছাড়বে না।
চিপ মিনিস্টার নিজে আকাশকে মাটি থেকে কোলে তুলে নেয়।পরে আকাশকে নিয়ে সোজা হসপিটালে চলে যায়।হায়েনা গুলোও গাড়ি নিয়ে মিনিস্টারের সাথে সাথে হসপিটাল যায়।
আলিফ সাহেব তখনো সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে!
পিন্টু গেটের বাহির থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব তামাশা দেখছিলো।সে আলিফ সাহেবের মুখে হতাশা দেখে ভিতরে আসে।
–স্যার আপনায় বলেছিলাম এই ছেলে কোনো যেমন তেমন ছেলে না!এই ছেলেকে মারা এত সহজ না।
আর যদি কেউ ভুলে মেরেও দেয়,তাহলে তাকে যেই কবরস্থানে দাফন করবে,সেই কবরস্থানের সব মুর্দার কবর থেকে উঠে পালাবে!এই ছেলে এমন এক খাতারনাক ভাইরাস!স্যার এখন আমি চললাম,আর যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাই।কয়েকজন হুজুরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আগ থেকে খবর দিয়ে রাখিয়েন,যেনো তারা আপনার জানাজা পড়ায়।না হয় এমন বেরেহেম ভাবে আপনাকে মারবে,যে হুজুররা আপনার লাশ দেখার পর কেউ জানাজা পড়ানো তো দূরের কথা,আপনার লাশের কাছে মশা-মাছি পর্যন্ত ভয়ে যাবে না!
–এই পিন্টু তুই কি আমাকে হুমকি দিচ্ছিস?
–নাহ স্যার,আপনায় সতর্ক করছি।
কারন এই চিতাবাঘ টাকে আহার করতে আমি নিজ চোখে দেখেছি।এবার চললাম স্যার।
পিন্টু সেখান থেকে চলে আসে।
আলিফ সাহেবের মাথায় এখনো ঢুকছে না,যে কে এই ছেলে!আর কিসের এত পাওয়ার এই ছেলের,যে মিনিস্টার পর্যন্ত মরনের ভয়ে ছুটে এসেছে!
–ধ্যাঁত মাথাটা যেনো জ্যাম হয়ে গেছে!বাড়িতে যাওয়া দরকার।না হয় মাথা আরো জ্যাম হয়ে যাবে।
পরে তিনি বাসায় চলে যায়।
অন্যদিকে আকাশকে হসপিটালে এডমিট করানো হয়।প্রান্তর বাসার মানুষ খবর পেয়ে তাড়াতাড়ি দৌড়ে হসপিটালে আসে।এসে দেখে চিপ মিনিস্টার আকাশের পাশে বসে আছে।প্রান্তর পরিবার চিপ মিনিস্টারকে দেখে থতমত খেয়ে যায়!প্রান্ত ডাক্তারকে জিগ্যেস করে…
–আকাশ এখন কেমন আছে?
আপনার ওর ট্রিটমেন্ট করছেন তো ভালো করে?
–ইনশাআল্লাহ মোটামুটি ভালো।তোমাদের চিন্তার কোনে কারন নেই।চিপ মিনিস্টার নিজে তদারকি করে নিয়ে এসেছে যেখানে,সেখানে ভালো করে ট্রিটমেন্ট হবে না মানি!
–যাক তাহলে আকাশ ঠিক আছে?
–হা ঠিক আছে।তবে দুই একদিন হসপিটালে রেখে পরে তোমরা বাসায় নিয়ে যেও।
–আচ্ছা ডক্টর,
প্রান্ত আকাশের কেবিনে ঢুকে,তখনি চিপ মিনিস্টার তাদেরকে বলে..
–এই ছেলে তোমাদের বাড়িতে উঠেছে মনে হয়?
–হ্যাঁ স্যার,সে আমাদের বাসাতেই থাকে।
–আচ্ছা ঠিক আছে,তবে তোমরা কিন্তু ওর ভালো ভাবে খেয়াল রেখো।ওর যেনো কোনোকিছুর কমতি না হয়।
টাকা পয়সার দরকার হলে আমায় ফোন দিবে।এই যে ধরো আমার কার্ড।কোনো কিছুর দরকার পড়লেই আমাকে স্বরণ করিও।
–আচ্ছা স্যার,তবে একটা জিনিস মাথায় কাজ করছে না।কে এই আকাশ,আর চিপ মিনিস্টার কেনো ওকে নিয়ে হাসপাতালে আসলো!মাথায় তো কিছুই খেলছে না!নাহ আকাশ সুস্থ হোক,তার থেকে এসবের উত্তর জানবো।
রাতের দিকে আকাশের জ্ঞান ফিরে আসে।
আকাশকে আরো দুইদিন হসপিটালে রেখে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।এই দুইদিন হায়েনা গুলো পুরো হসপিটাল পাহাড়া দিয়েছে।কেউ যেনো আকাশের ক্ষতি করতে না পারে।
বাড়িতে নিয়ে আসার পর..
আকাশ রাতের বেলায় বিছানায় শুয়ে আছে।তখনি প্রান্ত আকাশের রুমে আসে।
–আকাশ তোকে একটা কথা জিগ্যেস করার ছিলো?
–হ্যাঁ বল?
–তুই কে সত্যি করে বল?কি তোর পরিচয়?
আর তোকে আলিফ সাহেব মেরেছে,সেখান থেকে চিপ মিনিস্টার কেনো তোকে উদ্ধার করলো?
–আরেহ আমি কে মানি?কি সব আবোল তাবোল বকছিস হা?
–আমি সত্যি জানতে চাই আকাশ!
–আমি আকাশ মাহমুদ।
আর চিপ মিনিস্টার কেনো আমায় উদ্ধার করেছে তা আমি জানি না।আমি সাধারণ একটা মানুষ।
–ভাই তুই আমায় ধাঁধা পড়াবি?
আমি জানি তোর এই পরিচয় টা নকল!তোর লুকানো একটা পরিচয় আছে।না হয় এত বড় কর্মকর্তা তোকে বাঁচাতে আসতো না।আমি গলায় জোর দিয়ে বলতে পারবো তুই আকাশ মাহমুদ না।
–তুই যখন মোটামুটি শিউর হয়ে গিয়েছিস আমি আকাশ মাহমুদ না,আমার আরো একটা পরিচয় আছে,তাহলে এত বকবক করছিস কেনো?
–ভাই বল না প্লিজ!
–আমি কে সেটা এখন বলবো না।সেটা সময়ে আপনা আপনি যেনে যাবি।এখন প্লিজ এসব নিয়ে আর কথা তুলিস না।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
–এভাবেই চার-পাচঁদিন কাটে।
এখন আকাশ মোটামুটি সুস্থ কলেজে যাওয়ার জন্য।প্রান্ত ও এতদিনে কলেজে যায়নি।আকাশ সুস্থ হওয়ার পর দুজনে একসাথে কলেজে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।কলেজে পৌঁছে দেখে ক্লাস শুরু হতে আরো সময় বাকি আছে।তাই দুজনে বসে বসে ক্লাস রুমের বাহিরে আড্ডা দিচ্ছে।সবাই আকাশের দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে বারবার!কলেজের সবার মনে একটাই প্রশ্ন,কে এই ছেলে?তবে কেউ সাহস করে জিগ্যেস ও করতে পারছে না।পোশাক আশাক দেখে তো তেমন উচ্চ বংশের মনে হয় না,কিন্তু ছেলেটাকে বাঁচানোর জন্য চিপ মিনিস্টার নিজে কলেজে চলে এসেছে।আবার হুট করে দানব কয়েকটাও কলেজে ঢুকে পড়ে!
–ক্লাস শুরু হয়,আকাশ প্রান্ত দুজনেই ক্লাস বসে বসে লেকচার শুনছে।তবে আকাশের ক্লাসের দিকে কোনো মন নেই!
–এসেছিলাম খারাপ পরিবেশ ছেড়ে ভালো কিছু করতে,কিন্তু এই শহরের পরিবেশ টা যে আরো দূষিত তা কখনো জানতাম এই না।নাহ মায়ার বাবা যদি আর বাড়াবাড়ি না করে,তাহলে আমিও সব ভুলে যাবো।কিন্তু আবার যদি কিছু করার ট্রাই করে,তাহলে সত্যি এবার দাফন কাফনের ব্যাবস্থা আমি নিজেই করবো।
আলিফ সাহেব তো ঠান করেই রেখেছে,যে এই ছেলেকে সে কোনো মতেই ছাড়বে না।ওর জন্য চিপ মিনিস্টার ওর কলার ধরেছে।এই ছেলেকে তো ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
আজ কলেজের বাহিরে আমি আমার সমস্ত ছেলেপেলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো।আর ঐ বদমাশটার বারোটা বাজাবো।
ঠিক ঠিক তিনি তাই করেন।তিনার সমস্ত ছেলেপেলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
আকাশ আর প্রান্ত ক্লাস শেষ করে বের হয়।তখনি তারা দেখতে পায় কলেজের বাহিরে অনেক ছেলেপেলে।
এত ছেলেপেলে যে কলেজের বাহিরের কোনো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না!মায়াও এসেছে।
–ওকেহ আলিফ সাহেব,আজ আমার খেল দেখতে পাবেন।
–আকাশ এখন কি করবি রে?
আলিফ সাহেব তো পুরো দলবল নিয়ে চলে এসেছে।
–তুই নিজেকে সেইফ কর।আমি আমারটা দেখছি।
প্রান্ত ক্লাস রুমের ভিতরে ঢুকে পড়ে আবার।
আর আকাশ সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
–এই বদমাশ,এবার পালাবি কোথায়?দেখ আমার কত ছেলেপেলে!এরা সব কয়টা মিলে আজ তোর বারোটা বাজাবে!
–আরেহ আলিফ সাহেব আমি পালাইতে আসি নাই।তোদের উল্টো ধাওয়া করতে আসছি।আজ তোরা সব কয়টা চামচিকা এক জায়গায় আটকে গেছিস।
–এই তোরা মা’র সব কয়টা গিয়ে,আজ ওকে এমন মার মারবি,যেনো সোজা মৃত্যুর দরজায় চলে যায় সে।
আলিফ সাহেবের কথা অনুযায়ী ছেলেপেলে গুলা আকাশকে মারতে আসে।তখনি সেই এগারোটা হায়েনা এসে কোথা থেকে জানি সব কয়টার উপরে ঝাপিয়ে পড়ে।এমন ভাবে লাশ পড়ছে মাটির উপরে যেনো গননা করেও শেষ করা যাবে না।আলিফ সাহেব ভরপুর ছেলে নিয়ে এসেছে।সে বাকিদের অর্ডার করে আকাশকে মারার জন্য,কিন্তু সে তখনি পিছনে ফিরে দেখতে পায় যে তার পিছনে কেউ নাই!সব কয়টা মাটির উপরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে!আর বিশাল একটা হায়েনার দল আলিফ সাহেবের দিকে আক্রমনাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!
চলবে…?
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।
সবাই লাইক কমেন্ট করবেন।অনেক ঘুম ছিলো চোখে,তাও গল্প লিখে দিছি।সবটাই আপনাদের জন্য।সো সবাই লাইক কমেন্ট করবেন।