লেডি ডন পর্ব শেষ

#লেডি_ডন
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#অন্তিম_পর্ব

–মায়া আজ ৪১ দিন ধরে হসপিটালে,সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে!তোর সাথে সেদিন কথা বলে যাওয়ার পর নাকি সে একদম খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলো।
বাসার কারোর সাথেই নাকি কথা বলতো না।একা একা থাকতো।হুট করে একদিন রাতের বেলায় সে সুইসাইড করে বসে!

–সাইমার মুখ থেকে এমন ধরনের কথা শুনে পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেলো আমার!আমি জানি,মায়া আমার জন্যই এমন করেছে!যত যাই হোক,
ভালো তো বাসি তাকে।কলিজায় এক ভয়ংকর রকমের মোচড় দিয়ে উঠলো!সাথে সাথে বুকে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পাড়লাম!মনে হচ্ছে যেনো কলিজাটা কেউ লবণ দিয়ে কাঁচা চিবিয়ে খাচ্ছে!

–আকাশ প্লিজ ভেঙ্গে পড়িস না!

–সাইমা আমায় প্লিজ হসপিটালে নিয়ে চল তো!

–ওকেহ চল..

–সাইমার সাথে হসপিটালে চলে গেলাম।
হসপিটালে গিয়ে দেখি আলিফ সাহেব কেবিনের সামনে বসে বসে ঝিমাচ্ছে!বুঝতে বাকি রইলো না,যে সামনের কেবিনেই মায়াকে রাখা হয়েছে!কোনো কথা না বলে সোজা কেবিনে ঢুকে গেলাম।কেবিনে ঢুকে দেখি মায়া শুয়ে আছে।আর তার মুখে মাক্স লাগানো!

মায়ার এই অবস্থা দেখে ভিতরটা যেনো ফেটে যাচ্ছিলো!এখন আমার কি করা উচিৎ তা আমি জানি না!তবে হ্যাঁ মায়াকে আমি কোনোদিন গ্রহণ করবো না!
তবে তার এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী!কিন্তু দায়ীটা তার জন্যই হতে হয়েছে আমাকে।এসব ভাবছিলাম,তখনি মায়া আমায় হাতের ইশারায় ডাক দিলো..

ধীরে ধীরে মায়ার কাছে গেলাম।
মায়া তুমি এমনটা কেনো করলে?

–কোনো উত্তর নাই…

–মায়া তুমি এমনটা কেনো করলে?
তখনি সে কান্না করে দিলো!
মায়া এসব পাগলামো কেনো করতে গেলে তুমি?

মায়া হাতের ইশারায় আকাশকে মুখের মাক্স টা খুলে দিতে বললো!মেয়েটার চেহারা কেমন যেনো ফেঁকাসে হয়ে গেছে!

–আকাশ আমায় একটা বার বুকে টেনে নিবে?
খুব কষ্ট হচ্ছে আমার!

–মায়া,আমি পাষাণ নই,কিন্তু বিশ্বাস করো এই বুকে তোমার জন্য আর জায়গা নেই।

–প্লিজ একটা বার বুকে নাও না!

–মায়া,আমায় ক্ষমা করো তুমি।আমি তোমায় বুকে নিতে পারবো না।আর তুমি এটা বলো,যে তুমি এমনটা কেনো করলে?

–তুমিই তো বলেছিলে মরে গেলেও তুমি আমায় গ্রহণ করবে না!তাই মরতে চাইলাম।কারন তোমায় ছাড়া আমার খুব কষ্ট হয়!তুমি যখন অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলো,তখন মনে হয় যেনো আমার কলিজা ছিড়ে যাবে।বিশ্বাস করো,আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না,তাই মৃত্যুকে বেছে নিয়েছি!

–মায়া,পাগলামোর লিমিট ক্রস করে ফেলেছো তুমি!
মরে যাওয়াই সব কিছুর সমাধান না।দুনিয়ায় থেকে কিছু করার ট্রাই করো!

–হ্যাঁ,আমি বেঁচে থাকতে চাই,কিন্তু তোমায় নিয়ে।তুমি বলো,তুমি আমায় ছেড়ে যাবে না?সারাজীবন তুমি আমার হয়ে থাকবে?না হয় কিন্তু কখন কি ঘটিয়ে ফেলবো,তা নিজেও জানি না!

–মায়ার কথা শুনে বুকটা ধুপধুপ করছে!
মেয়েটা যদি সত্যিই কিছু করে বসে!একে তো অসুস্থ,দ্বিতীয়ত যে হারে পাগলামো করছে,আল্লাহ জানে কখন কি ঘটিয়ে বসে!নাহ তার থেকে ভালো মেয়েটাকে আশ্বাস দেই।তবে সত্যিকারত্বে না,সে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তার পাশে থাকবো।পরে আমি আমার মতন করে সাইড কেটে যাবো।আর যাওয়ার আগে এমন কিছু কন্ডিশন দিয়ে যাবো,সে আর জীবনেও এসব করার চিন্তা মাথায় আনবে না।আচ্ছা যাও তোমায় ছেড়ে যাবো না।এটা বলা মাত্রই মায়া আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো!

–আমি এখন সত্যি সুস্থ হয়ে যাবো দেখিও,কারন আমার বেঁচে থাকার উৎস আমি পেয়ে গেছি!

–সাপ্তাহ দশদিনের মধ্যে মায়া সুস্থ হয়ে উঠলো!
তাকে পুরোপুরি ভালোবাসা দিয়ে সুস্থ করে তুললাম।তবে আমার মনে অন্য কিছুই চলছে!এখন শুধু মনের ভাবনা টাকে বাস্তবায়নের পালা!মায়া এখন পুরোপুরি সুস্থ।একটা চিঠি লিখে মায়ার হাতে ধরিয়ে দিলাম।
মায়া আমি যাওয়ার পর এটা তুমি খুলবে..

–আচ্ছা…

–আমি চলে এলাম।

অন্যদিকে আকাশ যাওয়ার পর মায়া চিঠিটা খুলে..

–মায়া আমায় ক্ষমা করে দাও!
আমি তোমায় দ্বিতীয় বার আর গ্রহণ করতে পারবো না।কারন তোমাকে নিয়ে আমার ভিতর থেকে সমস্ত ভালোবাসা মরে গেছে!বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা নেই তোমাকে নিয়ে আমার মনে!অনেক ট্রাই করেছি তোমার সাথে মানিয়ে নেওয়ার,কিন্তু তোমার সেই দিনের কৃতকর্ম গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে শুধু আমার!আর এতদিন তোমায় সুস্থ করার জন্য ভালোবাসার নাটক করেছি।এখন তুমি পুরোপুরি সুস্থ।
আমার দায়িত্ব এই পর্যন্তই ছিলো।এবার আমি চললাম।
আর একটা কথা,তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো,তাহলে কোনোদিন আর উল্টা-পাল্টা কিছু করবে না তুমি।ভালোবাসার কসম দিলাম তোমাকে।
আজ থেকে নিজেকে গুছিয়ে নাও।উপর ওয়ালা হয়তো তোমার সাথে আমার জোড়া লিখে রাখেনি,তাই হয়তো তোমার আর আমার মিলন হবে না।তবে যদি উপর ওয়ালার লিখনে তোমার আর আমার মিলন থাকে,তাহলে অবশ্যই আমি তোমার হবো।
মাফ করে দিও আমায় এতদিন তোমার সাথে মিথ্যে নাটক করার জন্য।আমি চলে যাচ্ছি অনেক দূরে।হয়তোবা আর কোনোদিন তোমার সাথে আমার দেখা হবে না।তুমি নিজের খেয়াল রেখো মায়া।
খোদা হাফেজ।

আকাশের চিঠি পড়ে যেনো মাথা ভো ভো করে ঘুরতে থাকে!

–নাহ আকাশ তুমি এটা করতে পারো না আমার সাথে!আমি তোমায় খুব ভালোবাসি আকাশ!প্লিজ এভাবে ফেলে রেখে চলে যেও না!

মায়া আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে!তখনি আকাশের কথা মনে হয়।

–নাহ,সে আমায় ভালো থাকতে বলে গেছে!
আজ থেকে আমি ভালোই থাকবো!আর কখনো কাঁদবো না কলিজা তোর জন্য!যাহ তুই ভালো থাক!
তবে আজ আমি প্রতিজ্ঞা করে নিলাম,হলে হবো তোর,না হয়তোবা কারোর এই না!

অন্যদিকে আকাশ বাসায় চলে যায়!
সে সমস্ত যোগাযোগ অফ করে দিয়েছে মায়ার সাথে!
কলেজ ও পরিবর্তন করে নিয়েছে সে।তবে আকাশের বাসার ঠিকানা মায়া জানে না!তাই আর চাপ নেই!

–খুব কান্না পাচ্ছে মায়ার জন্য!কিন্তু কি করবো,কষ্টটাও যে সে খুব করে দিয়েছে!বুকের ভিতরে এক ধরনের একটা চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছে!মনে মনে ঠিক করে নিলাম,আজকের পর আমি আর কোনোদিন কোনো মেয়েকে গ্রহণ করবো না।কষ্টের শুরুটা যখন মেয়ের কারনে হয়েছে,তো এই জীবনে কোনোদিন আমি আর মেয়ে জাতিকে গ্রহণ করবো না।সারাজীবন সিঙ্গেল থাকবো,বিয়েও করবো না।সোফায় শুয়ে শুয়ে চোখের জ্বল ঝরাচ্ছিলাম।তখনি জাদুগর ফোন দেয়….

–আকাশ ভাই,রোস্টার দেশে আসছে আজ রাতের ফ্লাইটে।আপনি রেডি হয়ে থাকেন তার রক্ত খাওয়ার জন্য।

–হ্যাঁ আমি রেডি,মনের যত হিংস্রতা আছে,সব আমি রোস্টারের উপরে প্রয়োগ করবো!

রাতের বেলায় রোস্টার দেশে আসে।
আকাশ তো পুরোপুরি রেডি।সে আকাশকে শেষ করে দেশে রাজত্ব করবে,কিন্তু হায়েনাটা যে তার শিকার করার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে,সেই খবর রোস্টার জানে না।

–জাদুগর ফোন করে বললো,যে রোস্টার দেশের মাটিতে পা রেখেছে।ভিতরের হিংস্র পশুটা জাগ্রত হয়ে গেলো।ছেলেপেলে নিয়ে রোস্টারের আড্ডায় চলে গেলাম।আজ রোস্টারের শেষ দিন।সে ভেবেছে হয়তো আমি জানবো না,যে সে দেশে এসেছে আমায় মারার জন্য!কিছু সংখ্যক এক্সপার্ট নিয়ে এসে আমায় মেরে দিয়ে চলে যাবে।কিন্তু আমি যে তার কবর খুঁড়ে রেখেছি,সেটা হয়তো সে জানে না।

–ভাই রোস্টার শতাধিক ছেলেপেলে নিয়ে এই আড্ডায় অবস্থান করেছে।

–এই তোরা এদিকে আয়…
হায়েনার টিম টাকে ডেকে আনলাম।
ভিতরে গিয়ে সব কয়টার রক্ত মাংস চুষে খেয়ে ফেলবি,খালি রোস্টার বাদে।সময় দশ মিমিট।
দশ মিনিট পর ভিতরে গিয়ে যেনো রোস্টারকে চেয়ারের সাথে বাঁধা দেখতে পাই।

–ওকেহ ভাই…

–হায়েনা গুলা ভিতরে ঢুকে গেলো,পাঁচ মিনিটের মাথায় তারা বেরিয়ে আসলো।

–ভাই আপনি শুধু রক্ত খাওয়ার জন্য বলেছিলেন,কিন্তু আমরা তাদের হাড্ডি পর্যন্ত ছাড়িনি,সেটার সাধ ও নিয়ে এসেছি!

–রোস্টার কই?

–চেয়ারের সাথে বাঁধা..

–ভিতরে চলে গেলাম।হাতে একটা চাইনিজ কুড়াল।
আজ রোস্টারের রোস্ট বানাবো।
কিরে কামিনা,মুঝে মারনে কে লিয়ে আয়া থা?

–ভাই মুঝে মাফ কার দে?

–চাইনিজ কুড়ালটা দিয়ে সোজা তলপেটে কোপ মেরে দিলাম।ইয়ে লেহ,মাফ কি পেহলা রাউন্ড!আব মাফ কি আখেরি রাউন্ড হোগা,বলেই গলার রগ নামিয়ে দিলাম!
তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম।রোস্টারের খেল খতম।ছেলেপেলে দিয়ে সব কয়টার লাশ নদীতে ভাসিয়ে দিলাম।

বাসায় এসে হাতমুখ ধুয়ে শুয়ে পড়েছি।
আম্মুরা সবাই ঘুম!শুয়ে শুয়ে ভাবছি,যাহ আমার জীবন নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলেছিলো,তাকে তো শেষ করে দিলাম।এবার হয়তো শান্তি মতন থাকতে পারবো।কিন্তু নাহ,আমি ভুল!পথের কাটাকে সরিয়ে দিলেও মায়াকে নিজের মন থেকে সরাতে পারছিলাম না।

দেখতে দেখতে চার বছর হয়ে গেলো!
এখনো মায়া নামক মানুষটার ভালোবাসাকে মনে শপে রেখেছি!হাজার চেষ্টা করেও সরাতে পারলাম না।
অন্য কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষ করে নিজের বিজনেস শুরু করলাম।মোটামুটি সাকসেসফুল মানুষ আমি এখন।নিজের জীবনের এচিভমেন্ট অর্জন করে নিয়েছি।তার পরেও কোথাও না কোথাও যেনো মনের মধ্যে একটা শূন্যতা অনুভব করতাম।তবুও মানিয়ে নিয়েছি নিজেকে!

একদিন সকাল বেলায় নাস্তা করছিলাম।তখনি আম্মু এসে চেঁচামিচি লাগিয়ে দিলো…

–আজ কতদিন ধরে বলছি তোকে বিয়ে করে নিতে,কিন্তু তোর কোনো কথা গায়ে লাগে না।আর কতদিন এভাবে একা একা থাকবি তুই হ্যাঁ?

–মা আমি বিয়ে করবো না।

–সেটা বললে তো আর হচ্ছে না।অনেক শুনেছি তোর কথা।তোকে এটাও বলেছি যে নিজের পছন্দের মেয়ে থাকলে জানাতে,কিন্তু নাহ,তুই তো বিয়েই করবি না।
তবে এবার আমি আর থামবো না।তোকে আমি বিয়ে করিয়েই ছাড়বো।আমি আজ মেয়ে দেখে এসেছি,আমার বান্ধবীর মেয়ে।অনেক পর্দাশীল আর লক্ষী একটা মেয়ে।তুই নিজেকে তৈরী কর বিয়ে করার জন্য!

–মা,বিয়েটা কি করতেই হবে?
না করলে হয়না?

–নাহ,তোর এবার বিয়ে করতেই হবে।এবার তোকে আমি বিয়ে করিয়েই দম নিব।

–মায়ের জেদের কাছে আর পেরে উঠলাম না।
তবে বিশ্বাস,এই মন দিয়ে আর কাউকে ভালোবাসতে পারবো না!ভালোটা আমি একজনকেই বেসেছি,সে হচ্ছে মায়া।আর তাকেই সারাজীবন আমি ভালোবাসবো।আম্মু যতোই জোর করে বিয়ে দিক,তবে ভালোটা আমি মায়াকেই বাসবো।ওকেহ তোমাদের যা ভালো মনে হয় করো।আমার আর কিছু বলার নেই!

–তুই মেয়েকে দেখবি না?

–নাহ,আমার দেখার প্রয়োজন নেই!তোমরা দেখেছো,তাতেই হয়েছে।

এক সাপ্তাহ পর আমার বিয়ে ঠিক হয়।
মনে পাথর চাপা দিয়ে আম্মুর ঠিক করা মেয়েকে বিয়ে করে নিলাম।অনেকটা কেঁদেছি বিয়ের দিন।যেখানে বিয়ের কথা শুনে মেয়েরা কাঁদে,সেখানে আমি ছেলে হয়ে কেঁদেছি!শত কষ্টের ভিড়ে বিয়েটা করে নিলাম।
বাসরঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।আম্মু এসে জোর করে ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো।বাসর ঘরে ঢুকে দেখি একটা মেয়ে ঘোমটা মুড়ি দিয়ে বসে আছে মাথায়।আমি ধীরগতিতে হেটে খাটে গিয়ে বসলাম।অনেক্ক্ষণ চুপ করে ছিলাম,দেখি মেয়েটা কিছু বলে কিনা।কিন্তু নাহ,মেয়েটা চুপচাপ বসে আসে।তাই নিজেই শুরু করলাম।
দেখেন আমি একটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসি।আপনাকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না আমি!
আমার মনে শুধু সেই মেয়েটাই রয়েছে।সেই জায়গা আর কেউ নিতে পারবে না।
তখনি মেয়েটা মুখ থেকে ঘোমটা সরিয়ে লাফ দিয়ে আমার বুকের উপরে উঠে বসলো…

–এই কুত্তা,কি বললি তুই?
তুই অন্য মেয়েকে ভালোবাসিস হ্যাঁ?

–মায়া তুমি!
মায়াকে দেখে এক হাজার বোল্টের একটা শকট খেলাম!মায়া তুমি এখানে কি করছো?

–কি করছি মানে?আমি তো তোর বউ!

–আম্মু তো বললো তিনার কোন বান্ধবীর মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে!

–আমিই সেই মেয়ে!

–তুমি সেই মেয়ে হলে আম্মু যে বললো মেয়ে পর্দা করে?

–তো আমি কি করি হ্যাঁ?
সেদিন তুমি চলে আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো বেগানা পুরুষ আমার চেহারা দেখেনি।পুরোপুরি আড়াল করে ফেলেছি নিজেকে।সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম,যে হলে হবো তোর,না হয়তোবা কারোর এই না।আর আমার ভরসা ছিলো,যে আল্লাহ আমায় কখনো খালি হাত ফিরাবে না।চার বছরে কয়েক লক্ষ্য বার খোদার কাছে তোমায় চেয়েছি।তো খোদা আমায় নৈরাশ করবে কেনো!

–মায়া আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না সত্যি!
একে তো তোমায় আমি বিয়ে করেছি,দ্বিতীয়ত তোমার এই পরিবর্তন!

–সবটার পিছনেই তোমার অবদান রয়েছে।সেদিন তুমি ছেড়ে না এলে হয়তো আমি সেই মায়া এই রয়ে যেতাম।
কিন্তু নাহ,তুমি ছেড়ে আসায় আল্লাহকে আমি চিনেছি।
ধন্যবাদ তোমাকে।আর একটা কথা,আমায় কি এখনো তোমার গ্রহণ করতে অসুবিধে হবে?

–নাহ কখনোই নাহ,বলে ঠুস করে টান দিয়ে মায়াকে নিজের বুকে নিয়ে নিলাম!মায়া তোমায় নিয়ে আর একটা অভিযোগ ও আমার মনে নাই,কারন তোমার এই পরিবর্তন আমার ভিতরের রক্তক্ষরণ টাকে দূর করে দিয়েছে!আমার এমন মায়াকেই দরকার ছিলো।

–হয়েছে বাদ দাও এখন সব পুরানো কথা।
নতুন করে শুরু করবো আমরা।

–আচ্ছা বাদ দিলাম,কিন্তু একটা কথা বলো তো,আম্মু আমায় উনার বান্ধবীর মেয়ের কথা কেনো বললো?

–কারন এটা আমাদের প্লান ছিলো।
তুমি কি ভেবেছো,তুমি আমায় ছেড়ে চলে আসবা,আর আমি তোমার খোঁজ নিব না?
সেটা ভেবে থাকলে একদম ভুল করেছো!
তুমি ছেড়ে আসার পর তোমার আম্মুর সাথে আমি যোগাযোগ করি,তারপর তিনি আমায় একটা রাস্তা দেখিয়ে দেয়।আমি সেই মোতাবেক আমল করি।নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলি।আমি চাইলে তোমার সামনে আসতে পারতাম,কিন্তু তুমিও আমার জন্য বেগানা পুরুষ ছিলে,তাই আর সামনে আসিনি।নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছি।তবে শেষ মেষ তোমায় নিজের করেই পেয়েছি!এখন যত খুশি তোমায় আমি দেখতে পাবো।

–মায়ার কথা শুনে নিজের নামটাই যেনো ভেঙ্গে মাথায় পড়লো মতন অবস্থা!বাপরে বাপ,তুমি মেয়ে না অন্য কিছু?

–আমি তোমার বউ..

–মায়াকে নতুন রূপে পেয়ে কি যে খুশি লাগছে,তা কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না।খুশির ঠেলায় মায়ার ঠোঁটে চুমু বসিয়ে দিলাম।

–এই এই কি করছো?

–কি করছি আবার,আদর করছি..

–নাহ,এখন কোনো আদর ফাদর চলবে না।যাও গিয়ে অজু করে আসো।দুজনে একসাথে মিলে নামাজ পড়বো।পরে যা ইচ্ছে হয় করিও।

–সত্যি তো?
যে নামাজ শেষ করে যা ইচ্ছে হয় করবো?

–হু…

–খুশিতে এক লাফ দিয়ে ওজু করতে চেলা গেলাম।
ওজু করে এসে দুজনে মিলে নামাজ পড়ে নিলাম।
পরে…
পরে আর কি…
পরে বহু কিছু..
যা আমি বলতে পারবো না…
আমার লজ্জা লাগে।
সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here