#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_২
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)
তুই কোন রাজ্যের মহারাণী যে তোকে রাজকার্য চালানোর জন্য দিনের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ষোল ঘন্টা বারান্দায় বসে থাকতে হয়? পড়াশোনা তো সব লাটে উঠছে আপনার। বাইরে এত বড়ো একটা ঘটনা ঘটে গেলো পুরো বিল্ডিং এর মানুষ জড়ো হয়ছে। কিন্তু তোর কোনো খবর নাই।
কিছুক্ষণ থেমে মারিয়া আবার বলে উঠল তোর শান্তির বাতাস খাওয়া শেষ হলে দয়া করে এই প্লেট’টা তোর নাজমা আন্টির বাসায় দিয়ে আয়।
প্রিয়া শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে খুশি হয়। তাহলে তার মা কিছুই বুঝেনি। জব্বর বাঁচা বেঁ*চে গেছে। কিন্তু প্লেটের দিকে তাকিয়ে রা*গ তার থরথর করে বাড়ে। কপাল কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠল,
আম্মু আমি তো এখনো নাস্তা করেনি। নাস্তা খেয়ে দিয়ে আসবো।
তোর নাস্তা করতে করতে সৌরভ ভার্সিটি চলে যাবে। ছেলেটার লুচি আলুরদম বেশ পছন্দ। ও যাওয়ার আগে জলদি গিয়ে দিয়ে আয়।
আর কিছু বলার সুযোগ পায়না প্রিয়া। তার আগে মারিয়া তার হাতে লুচির প্লেট ধরিয়ে দেয়। ভারাক্রান্ত মনে বলে উঠল,
ছেলেটা কত বড়ো বিপদ থেকে বাঁ*চলো। তোর তো হুঁশ নেই, একটু উঁকি দিয়েও ছেলে’টাকে দেখলিও না। এখন যা দেখে আসবি আর এই লুচির প্লেটটাও দিয়ে আসবি।
প্রিয়া রাগে গজগজ করতে করতে প্লেট হাতে নিল। তার মা’কে শ’খানেক ধমক দিল। সে কি তার মা না’কি সৌরবিদ্যুৎ এর মা। ভালো কিছু রান্না হলে সেই ছেলেকে খাওয়াতে হবে কেনো? এত আদিখ্যেতা কীসের ঐ হাঁড়ব*জ্জাতের জন্য।
বাসার দরজা খোলায় ছিল। প্রিয়া প্লেট হাতে ভিতরে প্রবেশ করে। পুরো ঘর এখন খালি আছে। সকালের সেই ভীড় আর হৈ-হুল্লোড় নেই। নাজমা কিচেনে কাজ করছিলো। প্রিয়া আন্টি বলে ডাক দিলে নাজমা বেরিয়ে আসে কিচেন থেকে। হাসি-মুখে প্রিয়ার সামনে এসে দেখে লুচির প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নাজমা প্রিয়ার হাত থেকে প্লেট নিয়ে নিল। তারপর প্রিয়াকে বলল বস আমাদের সাথে নাস্তা কর।
প্রিয়া ইস্ততঃবোধ করছিল। কিন্তু নাজমার জোরাজুরিতে বসল। নাজমা প্লেটের মধ্যে লুচি দেখে হেসে উঠে। প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল মারিয়া সৌরভের জন্য পাঠিয়েছে। প্রিয়া হ্যাঁ বলে মাথা নাড়ায়। নাজমা আবার বলে উঠল যা তো প্রিয়া তুই সৌরভকে ডেকে নিয়ে আয়। সে এখনো নাস্তা করে নাই। লোকজন দেখে রুমে গিয়ে বসে আছে।
প্রিয়া বি*স্ফোরিত নয়নে তাকালো নাজমার দিকে। সে ঐ সৌরবিদ্যুৎ এর রুমে যাবে। অসম্ভব! চোখ বড়ো বড়ো করে বলল কিন্তু আমি কেনো? শোভা আপু কই তাকে বলুন না। নাজমা কিচেনে যেতে যেতে বলল শোভা রুমে আছে। এখন আর বের হবে না। আমিও কিচেনে কাজ করছি তুই ডেকে নিয়ে আয় তো।
প্রিয়া আমতা আমতা করছিল। পরে নাজমার অনুরোধে যেতে বাধ্য হয়।
সৌরভের দরজার সামনে এসে লম্বা শ্বাস নেয়। কীভাবে কথা বলবে সেই অনুশীলন করছে মনে মনে। এই বাসায় এসেছে পাঁচমাস চলছে। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ এর সাথে তার কথা তেমন একটা হয়নি। পাঁচমাসে বোধহয় হু-হা দু’একবার কথা হয়েছে কিন্তু চোখাচোখি হয়েছে অসংখ্যবার। অস্বস্তি হচ্ছিলো কিভাবে কি বলবে?
দরজা হাট করে খোলায় আছে। তাই আর নক করার প্রয়োজন পড়লো না প্রিয়ার।
সৌরভ পায়ের ব্যথাকে একপাশে রেখে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রেডি হতে লাগলো। প্রথমে তাকে কোচিং সেন্টার যেতে হবে। তার কোচিং ব্যাচ আছে সকাল ৭:৩০ থেকে শুরু করে সকাল ৯:৩০ পর্যন্ত। আবার বিকেলেও আছে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত।
অলরেডি ঘড়ির কাটায় সকাল ৭টা এখন। তাই দ্রুত বারান্দা থেকে কালকের শুকাতে দেওয়া একটা আন্ডারওয়্যার নিয়ে নিল। গোসল করে এসেছে পরনে তোয়ালে জড়ানো। আন্ডারওয়্যার পরে মাত্রই তোয়ালে বিছানায় রাখলো। প্যান্ট ডানহাতে ধরা। ঠিক সেই মূহুর্তে প্রিয়া প্রবেশ করলো তার রুমে।
প্রিয়ার এমনিতে এই রুমে আসতে প্রচুর অস্বস্তি হচ্ছিলো। কিন্তু এমন একটা মূহুর্তে এই ছেলের রুমে সে প্রবেশ করায় ল*জ্জায় আর মাথায় তুলতে পারছে না। আর না সে ঐ জায়গা থেকে নড়তে পারছে। যা বলতে এসেছিলো তাও সে বেমালুম ভুলে গেছে।
সৌরভ নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। এই চুন্নি কোথায় থেকে ভূত্নীর মত উদয় হলো। কি এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো সে। তাই তড়িৎ গতিতে প্যান্ট পরে নিলো।
সৌরভ আড়চোখে প্রিয়াকে একবার পরখ করলো। মেয়েটা এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। অদ্ভুত তো! সে গলা খাকারি দিলো।
কি সমস্যা? কারো রুমে প্রবেশ করতে যে নক করতে হয় সে সামান্য ম্যানার্সটুকুও নাই। না’কি চু*রি করার সাথে সাথে ম্যানার্সটুকুও খেয়ে ফেলেছো?
অপমানে মুখ থমথমে হয়ে যায় প্রিয়ার। এসেছিলো কিসের জন্য আর হচ্ছেটা কি? সে তো ইচ্ছে করে আসে নি এই রুমে। তারওপর দরজায় খোলা ছিল। সে কি জানতো সৌরবিদ্যুৎ কাপড় চেইঞ্জ করছে। তাই প্রিয়াও ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। সেও নিরেট গলায় বলল,
কাপড় চেইঞ্জ করার সময় যে দরজা লাগিয়ে দিতে হয় সেটা বোধহয় আপনি ভুলে গেছেন। তাই না? না’কি মনে করিয়ে দিতে হবে আপনাকে।
সৌরভ চোয়াল শক্ত করে রাখলো প্রিয়ার কথা শুনে। হাটুর বয়সী মেয়ে তাকে চোখ রাঙায়। এই মেয়ে তো তার সাথে ভুলবশতও কথা বলেনি। কিন্তু আজ চোখে চোখ রেখে কথা বলছে। মেয়েটার সাহস দেখে সে অবাক হয়ে গেছে। মুখের কোণে সূক্ষ্ম হাসি রেখে বলল,
রুমটা আমার, তাই দরজা খোলা রাখা বা না রাখা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার। কিন্তু তুমি তো বাইরে থেকে এসেছো। তোমার উচিৎ ছিল নক করা। কিন্তু সেটা তো তুমি করবে না। কারন তোমার তো আবার চো*রের মত যেখানে সেখানে ঢুকে পড়ার অভ্যাস আছে।
প্রিয়া রাগে ফুঁসতে লাগলো। ব*জ্জাত ছেলেটা তাকে বার বার চো*র বলছে তাও দুইটা ফুল ছিঁড়ার জন্য। এই ছেলের নাম সৌরভ কে রাখছে? তাকে ঝাটা পি*টা করতে ইচ্ছে করছে। এর মধ্যে নামের মত ন্যূনতম বিশুদ্ধ সুবাস নাই। সেও চোয়াল শক্ত করে বললো,
আপনি আসলে শান্ত, সভ্য লেজ বিশিষ্ট। নামের মত আপনার মধ্যে কোনো গুণ নাই। তাই আপনার নাম সৌরভ না রেখে সার্কাস রাখা উচিৎ ছিল।
কথাগুলো বলে দ্রুত পায়ের কদম ফেলে প্রিয়া বের হয়ে গেলো। পিছনে কি হচ্ছে দেখার আর সাহস করলো না। তাকালে হয়তো একজোড়া র*ক্তচক্ষু নজরে আসতো।
___________________
প্রিয়া দৌড় দিয়ে তার রুমে প্রবেশ করে। প্রত্যুষ বসে তখন তার মোবাইলে গেম খেলছিল। প্রিয়াকে দেখে ত্বরিত রেখে দেয়। সে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো কি করছিলি আমার রুমে? প্রত্যুষ ভ*য়ে আমতা আমতা করতে লাগলো। আপু আমি তো মাত্র তোমার মোবাইল ধরেছি। প্লিজ আম্মুকে বলো না। আমি আর তোমাকে না বলে ধরবো না। প্রিয়া মুখ ভার করে বলল যা তো এখন আমার রুম থেকে। প্রত্যুষ আর কথা বাড়ালো না। বোনের কথামত বের হয়ে গেলো।
মারিয়া প্রিয়াকে সকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য ডাকলো।
প্রিয়া শুনেও না শুনার ভান করে বসে আছে। তার মায়ের জন্যই আজ তাকে এত অপ*মান হজম করতে হয়েছে। এই সার্কাস নিজেকে কি ভাবে? ভার্সিটি পড়ে তাই তার এত ভাব। সেও একদিন ভার্সিটি পড়বে। তখন সে দেখবে এই ছেলের ভাব কোথায় যায়।
এদিকে মারিয়া বার বার প্রিয়াকে ডেকে চলেছে।
অবশেষে মারিয়ার ডাকে অতি*ষ্ট হয়ে সে সকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য উঠলো। নয়তো খাওয়ার ইচ্ছা একদম ম*রে গেছে।
__________
সৌরভ টেবিলেই বসতেই নাজমা লুচির প্লেটটা এগিয়ে দেয়। সে লুচি দেখে বেশ অবাক হলো। তাই মা’কে জিজ্ঞেস করল কখন বানালে? সকালে তো দেখলাম না। নাজমা হেসে উঠে বলল মারিয়া পাঠিয়েছে তোর জন্য। তোকে প্রিয়া কিছু বলেনি। মেয়েটাকে পাঠালাম তোকে ডাকতে কিন্তু সে আমাকে কিছু না বলেই চলে গেছে। প্রিয়াকেও নাস্তা করতে বলেছিলাম। তুই কিছু বলেছিস প্রিয়াকে?
সৌরভ মাত্রই লুচি মুখে দিয়েছিল কিন্তু মায়ের মুখে প্রিয়ার তাকে ডাকার কথা শুনে বিষম খেলো সে। তার মানে ভূত্নী এমনেই এমনেই তার রুমে যায়নি। কিন্তু মা’কে তার কিছুই বুঝতে দেয়নি। তড়িঘড়ি তার নাস্তা সেরে উঠে গেলো।
বাইকে বসে দ্রুত কোচিং এর উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো।
কোচিং করাতে বসে সৌরভের বেশ অস্বস্তি হচ্ছিলো। সে বুঝতে পারছে না তার প্যান্টের ভিতরে কা*টার মত কিছু একটার গুতো লাগছে কেনো? অস্বস্তিতে একবার উঠে আর একবার বসে। উপরন্তু উপায় না পেয়ে সে কোচিং বন্ধ করে বের হয়ে আসে। একটা ওয়াশরুমে প্রবেশ করে। তারপর পরনের সবকিছু খুলে ভালোভাবে দেখতে গিয়ে যা দেখে তাতে তার চক্ষু চড়কগাছ! বিড়বিড় করে বললো এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাঁ*টা কোত্থেকে আসলো?
চলবে,,,,,,,,,
ভালো লাগলে অবশ্যই একটা মন্তব্য করবেন। ধন্যবাদ।