#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_১৫
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)
রুমে গিয়ে পায়চারী করতে থাকে প্রিয়া। ভাবতে গেলে এখনো তার শরীর ঘামতে থাকে। কিন্তু রাগটা অন্য জায়গায় লাগছে তার। এই পর্যন্ত অনেকবার আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখা শেষ। তাও তার নিজেকে নিয়ে সংশয় হচ্ছে। আচ্ছা, সে দেখতে কি এতই খারা*। উজ্জ্বল বাদামী বর্ণের গায়ের রঙের সাথে গোলগাল মিষ্টি চেহারা। কিন্তু এই সৌরবিদ্যুত তাকে বিশ্ব কালো সুন্দরী বললো। সে কি দেখতে এতই বাজে। কত ছেলে তার পিছু পিছু ঘোরে শুধু সেই পাত্তা দেয় না। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ এর চোখে সে দেখতে এতই বিদঘুটে। ফোঁৎ করে একটা নিশ্বাস ছাড়ে। এক সৌরবিদ্যুত তাকে কালো বললে কি আর সে কালো হয়ে যাবে নাকি?
বিছানায় গড়াগড়ি খায়। কিন্তু ঘুম তার আসে না। তাও চোখ বুজে যদি ঘুম নামে তার।
ঊষা লগ্নে আচানক মোবাইলের ভোঁ ভোঁ শব্দে প্রিয়ার ঘুম ভেঙে যায়। নিভু নিভু চোখে মোবাইলের দিকে এক নজর তাকায় সে। তখনো নিদ্রাচ্ছন্ন। সে ভাবনায় মশগুল এত সকাল তাকে কল দিলো কে? গড়িমসি করে কলটা রিসিভ করে। কিন্তু রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকেই রামধমক খেলো সে।
“দশ মিনিটের মধ্যে ছাদে আসবে। স্রেফ দশ মিনিট হাতে আছে। অলরেডি আমার দেরি হয়ে গেছে তোমার জন্য। জলদি ছাদে আসো।”
প্রিয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে কলটা কে*টে দিলো সৌরভ। সে তো এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। মেজাজ তিরিক্ষি করেও তার লাভ নেই। এই সৌরবিদ্যুত-এর বাচ্চা তাকে শান্তিতে একটু ঘুমাতেও দিবে না। মনে মনে শ’খানেক গা*লি প্রীতিকেও দিলো সে। এই মেয়ে নিজের কার্যসিদ্ধি করে পলায়ন করেছে। যদি আর একবার চোখের সামনে তোকে পায় তারপর দেখামু মজা।
দশমিনিটের মধ্যে সে ফ্রেশ হয়ে নিলো। দ্রুত কদম বাড়ালো ছাদের দিকে।
হাঁফাতে হাঁফাতে ছাদে উঠে আসে। নজর বুলালো ছাদের চারপাশে। সকালে তেমন একটা তার ছাদে আসা হয় না। কিন্তু আজকে এসে তার বেশ ভালোই লাগছে। সত্যি সকালটা বেশ চমৎকার! কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ-এর কথা ভেবে তার গা শিউরে উঠলো। এই ব*জ্জাত তাকে হাড়খাটুনী খাটাবে। মুখ বেজার করে সামনে এগুতেই সৌরভকে দেখে সে ভীষণ চমকালো।
মেকি হাতার নীল রঙা গেঞ্জি গায়ে জড়ানো আর পরনে ছাই রঙের সর্ট পরা সৌরভ কোমরে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সর্ট পরায় দুই হাটুই তার উন্মুক্ত। এজন্য পায়ের কালো কুঁচকুচে লোমশকুল পুরাই দৃশ্যমান। এরকম দৃশ্য খুবিই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ছেলেদের জন্য। কিন্তু প্রিয়ার খুব অস্বস্তি লাগলো। এরকম অর্ধ-উলঙ্গ ছাদে আসার কি দরকার ভাই? ছেলে হলে কি এভাবে আসতে হবে। অ*সভ্য পুরুষ মানুষ।
সৌরভ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে প্রিয়ার দিকে। এই মেয়ে এত শান্ত হলো কখন থেকে। ধীরগতিতে এগিয়ে আসে প্রিয়ার কাছে। মুখের সামনে গিয়ে মৃদু একটা হাসি দিলো। তারপর কোমল স্বরে বলল,
কি ব্যাপার! এখানেই কি সং সেজে দাঁড়িয়ে থাকতে এসেছো কাক সুন্দরী?
কাচুমাচু করতে থাকা প্রিয়া আচমকাই সৌরভের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো সে। মুখশ্রী শক্ত করে বললো,
কি করতে হবে বলুন?
সৌরভ ঈষৎ হাসল কিন্তু মনে মনে দোয়া পড়লো। হায় আল্লাহ্! তার কথায় এই মেয়ে চেতে গেলো না তো? পরে আবার কথা বন্ধ করে দিলে। অনেক কিছুই ভাবলো সে। কিন্তু এই পরিস্থিতি তাকে বদলাতে হবে। তার রণচণ্ডীকে ঠিক করতে হবে। সৌরভ প্রিয়ার হাতে একটা কাঁচি ধরিয়ে দিলো।
সে সটান হয়ে বসে প্রিয়াকে বললো,
যাও প্রথমেই অপরাজিতা গাছ থেকে শুরু করবে। শুকনো এবং মরা পাতা গুলো আগে ছাঁটাই করবে। তারপর গাছে মাটি দিবে। মাটি দেওয়া শেষ হলে তারপর পানি দিবে।
প্রিয়া বাগানের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলল। এত গাছ তো পুরোদিন লেগে যাবে তার। কিভাবে করবে সে? মনের মধ্যে তার একটা গানেই বাজলো,
“তোমার দিলে কি দয়া হয় না, ও সার্কাস”
প্রিয়ার কাজের গতি দেখে সৌরভ উঠে দাঁড়ালো। প্রিয়ার হাত থেকে কাঁচি নিয়ে বললো,
যাও মাটি নিয়ে আসো। ঐ কর্ণারে ব্যাগের মধ্যে মাটি আছে।
প্রিয়া মনে মনে খুশি হলো। যাক বাবা সৌরবিদ্যুৎ একটু দয়ালু আছে তাইলে। মাটি আনতে গিয়ে তার চোখে পড়েনি কিন্তু হাতের মধ্যে লেগেছিলো একটু। ব্যস! তাতেই আহ্! বলেই সে দিলো এক চিৎকার।
সৌরভ ভয়ে দৌড়ে আসে। প্রিয়াকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। কিছু কামড় দিয়েছে। সৌরভ প্রিয়ার হাত টেনে ধরে চেক করতে লাগলো। কোনো পোকা কামড় দিলো না’কি? কিন্তু প্রিয়ার মুখে শেষ বাক্য শুনে সে হু হা করে হেসে উঠল।
ইডিয়ট’ তুমি না বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। একটা কেঁচো দেখে ভয় পাও।
কেঁচো দেখলে ভয় পায় না। কিন্তু আমার গা গুলায় বমি আসে।
সৌরভ ত্বরিত বেঞ্চে রাখা পানি নিয়ে আসে। প্রিয়ার হাত ধুয়ে দেয়। তারপর একটু পান করতে দেয়। কিন্তু প্রিয়া পান করে না তার এখনো গা গুলাচ্ছে।
সৌরভ ভেবে পায় না এই মেয়েকে ঠিক করবে কিভাবে? হঠাৎ চোখ পড়লো লেবু গাছের দিকে। দ্রুত গিয়ে সে কয়েকটা লেবুপাতা ছিঁড়ে নিয়ে আসে। তারপর প্রিয়ার হাতে দিয়ে বলে নাও এগুলো নাকের সামনে ধরো। ভালো লাগবে।
প্রিয়া মুখে কিছু না বলেই সৌরভের হাত থেকে লেবুপাতা নিয়ে নিজের নাকের কাছে ধরে। লেবুপাতার সতেজ গন্ধ তার ভিতরের অস্বস্তি দূর করে দেয়। কি মিষ্টি সুগন্ধি তার!
সৌরব অপলক তাকিয়ে থাকে। মনে মনে আওড়াই,
‘পাগলী’
প্রিয়া বসে বসে পা দুলায়। আর মনের সুখে নির্মল বাতাসের সতেজতা অনুভব করে। এই সৌরবিদ্যুত না ডাকলে তো সে কখনো এত সুন্দর সকাল দেখতোই না।
সৌরভ আড়চোখে তাকালো প্রিয়ার দিকে। এই মেয়েকে সে শাস্তিস্বরূপ কাজ করাতে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এই মেয়ে এখানে এসে পা দুলিয়ে বাতাস খাচ্ছে। সে মৃদুস্বরে ডাকলো,
এ্যাই প্রিয়া’ এদিকে আসো তো।
আচমকা সৌরভের মুখে প্রিয়া তার নাম শুনে আৎকে উঠলো। এই ছেলে তাকে খুব কমই নাম ধরে ডাকে। সে ফোঁস করে বললো,
কি ব্যাপার! হঠাৎ করে আপনি আমার নাম ধরে ডাকছেন। সারাক্ষণ তো বিশ্বকালো সুন্দরী, কাকসুন্দরী, প্রিয়ারানী নয়তো নামই ডাকেন না।
সৌরভ নিজের চেপে রাখা রাগটা হাসিতে পরিণত করলো। হো হো করে অট্টহাসিতে ফে*টে পড়লো সে।
প্রিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সে হাসির কিছু বলেছে তো বলে মনে হচ্ছে না। এই সার্কাসের আবার কি হলো?
সৌরভ হাসি থামিয়ে বললো,
আচ্ছা, তুমি আমাকে কয়টা নিকনেমে ডাকো।
প্রিয়া মাথা নত করে ভাবলো। এই সার্কাস কি করে জানে সে অনেকগুলো নিকনেমে তাকে ডাকে।
এত কি ভাবছো? আমি বলছি দাঁড়াও। সৌরবিদ্যুত, সার্কাস, জোকার। আরো একটা আছে ঘসেটি বেগম। সবগুলো নাম ঠিক আছে তো প্রিয়া।
প্রিয়া খুক খুক করে কেশে উঠে। এই ছেলে পুরাই বদের হাড্ডি একটা। সবকিছু কেম্নে জেনে যায় তার মাথায় আসলো না।
সৌরভ এবার কিছুটা ধমক দিলো প্রিয়াকে। তুমি কি হাওয়া খেতে এসেছো না’কি আমার বাগানের কাজ করতে এসেছো।
প্রিয়া ভয় পেলেও মুখে প্রকাশ করলো না। সে নিশব্দে গিয়ে সৌরভের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। কি করতে হবে বলেন?
পানির পাইপ নিয়ে আসো। ধীরে ধীরে পানি দিবে গাছে। একদম গাছের গোড়ায় পানি দিবে না, দূর থেকে পানি ছিটাবে।
প্রিয়া খুব মনোযোগ দিয়ে পানি দিচ্ছিলো। মনে মনে সে ভীষণ খুশি। এই বাগানের প্রতি তার অন্যরকম ভালোবাসা আছে। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ এর ভয়ে কখনো আসে না এই বাগানের কাছে। আজকে সুযোগ পেয়ে ভালোই লাগছে। প্রিয়া ফুলগুলোতে হাত দিয়ে দেখছিলো।
দৈবাৎ সৌরভ কর্কশ শব্দে চেঁচিয়ে উঠল,
কি করছো তুমি আমার ফুলের সাথে? তুমি জানো পুরো একটা বছর লেগেছে এই বাগান সাজাতে। কত কষ্ট করেছি, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এই বাগান তৈরি করেছি। আমার অনেক পরিশ্রমের বাগান এটা।
আচমকা প্রিয়া বলে উঠল কি করবেন এত ফুল দিয়ে?
কি করবো মানে? আমার বউয়ের গয়না বানাবো আমার বাগানের তাজা ফুল দিয়ে। গলার মালা থেকে শুরু করে ফুলসজ্জার রুম সাজাবো বাগানের ফুল দিয়ে। আরও কতকিছু করবো। এই বাগানের মাঝে দোলনা থাকবে আমি আর আমার বউ মিলে রাতের বেলায় এখানে চন্দ্রবিলাশ করবো। বউকে আমার কোলে বসিয়ে তার ঢেউ খেলানো বাঁকা চুলে বেলী ফুলের গাজরা গেঁথে দিবো। গলায় শিউলি ফুলের মালা। হাতে থাকবে গাঁদা ফুলের মালা।
প্রিয়া সৌরভের কথা শুনে মুখ বাঁকালো। বউকে নিয়ে যা খুশি কর না’রে ভাই, তা আমাকে শোনানোর কি আছে? আজব!
সৌরভ প্রিয়ার মুখ বাঁকানো দেখে কপাল কুঁচকে তাকালো। আচ্ছা, তুমি জেলাস ফিল করছো না তো? আই মিন তোমার আবার হিংসে হচ্ছে না তো?
প্রিয়া যারপরনাই অবাক হলো সৌরভের কথা শুনে। সে কোন দুঃখে এই ব*জ্জাতের বউকে হিংসে করবে? তার তো কোনো সমস্যা নেই এই ব*জ্জাত তার বউকে নিয়ে যা খুশি করুক। প্রিয়ার আর ধৈর্য্য হলো না এখানে থাকার। সে উঠে দাঁড়ালো। পায়ের কদম বাড়াতে সৌরভ পিছন থেকে বলে উঠল,
কাল সময় মত চলে এসো।
প্রিয়া দ্রুতই কদম বাড়ায়। সৌরভ নিশব্দে এক নির্মল প্রানখোলা হাসি দেয়। যাও, সেই তো আবার ফিরে আসবেই আমার কাছে।
চলবে,,,,,,,,,,,,
নেন পর পর দুইদিন প্রিয়া সৌরভময় দিলাম। এবার আমারে কিছু গিফটি দেন। নইলে খেলমু না আর।#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_১৬
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)
বেঞ্চিতে বিমূর্ত বসে আছে প্রিয়া, শ্রাবণ, নীল।
সবার চোখে মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট বিদ্যমান। রাঢ়ীকে বার কয়েক কল দিয়েও খোঁজ ফেলো না তারা। আচমকা এই মেয়েটা কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো। শ্রাবণ প্রিয়াকে প্রশ্ন করলো তুই রাঢ়ীদের বাড়ি চিনিস।
প্রিয়া কিছুক্ষণ ভাবলো। বাড়ি না চিনলেও লোকেশন জানে সে। রাঢ়ী কল ধরলে সব জানতে পারতো কি হয়েছে মেয়েটার। কিন্তু এই মেয়ে আচমকা কল ধরছে না কেনো? দৈবাৎ তার মাথায় আসলো রাঢ়ীর চাচাতো বোনের নাম্বার আছে তাকে একবার কল করে জিজ্ঞেস করাই যায়। রাঢ়ীর চাচাতো বোনের নাম্বারে অনেকবার ট্রাই করার পর অবশেষে সে কলটা রিসিভ করে। প্রিয়া উচ্ছ্বসিত হয়ে যায়। সে রাবেয়াকে জিজ্ঞেস করে রাঢ়ী সম্পর্কে। কিন্তু উত্তরে যা শুনে তাতেই স্তব্ধ, বিমূঢ় প্রায়ই। রাবেয়া ফ্যাকাসে গলায় বলে,
রাঢ়ীকে কালকে পাত্রপক্ষ দেখে গেছে। তাদের পছন্দ হয়েছে। আজকে রাঢ়ীদের বাড়ি থেকে লোকজন গিয়ে ছেলেদের বাড়ি ঘর দেখে আসবে। রাঢ়ীর মেঝো আর বড়ো ভাই মিলে যাবে ছেলেদের বাড়ীতে।
প্রিয়া বাকরুদ্ধ এইটুকু শুনে। রাঢ়ীর মেঝো ভাই নিজে বলেছে তাকে এইচএসসি শেষ করার আগে বিয়ে দিবে না। কিন্তু এখন আচমকা কেনো তাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে তার বোধগম্য হলো না। পাত্র ভালো দেখে, না অন্যকিছু। প্রিয়ার হাত-পা প্রচন্ড কাঁপছে। তার বান্ধুবীর এই করুণ পরিণতি তার মনে বিষাদের অনলে দগ্ধ করছে। দীর্ঘ এক তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে সে। রাবেয়াকে জিজ্ঞেস করে,
রাঢ়ী কোথায় এখন? আমাদের কারোর কল উঠাচ্ছে না কেনো?
রাঢ়ী তো কাল থেকে খাওয়া-দাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছে। মেয়েটা চোখের জলে বিছানা ভাসাচ্ছে কিন্তু সেদিকে কারো খেয়ালিই নাই। সবাই বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। ওর ভাইয়া রাঢ়ীকে বিয়ে দিয়ে তারপর বিয়ে করবে এজন্যই এত তাড়া তাদের।
রাঢ়ীকে কল দেওয়া যাবে।
আচ্ছা, দাঁড়াও আমি দেখছি দিতে পারি কি’না?
প্রিয়ার অপেক্ষার অবসান হলো অবশেষে সে রাঢ়ীর নাগাল পেলো।
রাঢ়ী ক্রন্দনরত অস্পষ্ট মিনমিনে সুরে কথা বলে উঠল,
হ্যাঁ, বল।
তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে রাঢ়ী? আমাকে কেনো জানাস নি।
রাঢ়ী ঠুকরে কেঁদে উঠে। আবারো মিনমিনে সুরে বলে উঠল,
প্রিয়া আমি বিয়ে করবো না। আমি আরো পড়তে চাই। আমাকে বাঁচা প্রিয়া, আমি পারবো না এই বিয়ে করতে। একদমই পারবো না। প্লিজ কিছু একটা কর, আমার ভাইয়াদের বুঝা না প্রিয়া। প্লিজ বোন।
প্রিয়া স্তম্ভিত হয়ে আছে। তার হাতে তো কিছু নাই। কিন্তু হ্যাঁ’ সে চাইলে তার ভাইয়ের সাথে কথা বলতে পারে। কিন্তু কাজ হবে কি’না বিশেষ তার জানা নাই। তাও সে মনস্থির করলো রাঢ়ীর ভাইয়ের সাথে কথা বলবে। সে রাঢ়ীর বাড়ি যাবে। শ্রাবণ, নীলকে বললো তোরা যাবি আমার সাথে।
শ্রাবণ, নীল রাজি হলেও সমস্যা হলো অন্য জায়গায় তারা সাথে গেলেও বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না। তাদের দুইজনের প্রাইভেট কোচিং আছে। তাছাড়া নীল, শ্রাবণ দুইজনেই ছেলে। এদেরকে দেখে যদি তাদের পরিবার বিরূপ ধারণা করে বসে। প্রিয়াও ভাবলো এদের কথা। দুইজনের কথায় সত্যিই। কিন্তু সে একা কিভাবে কি করবে? শেষে প্রিয়া নিজে সব ঝুঁকি নিলো সে যাবেই। যাই হয়ে যাক সে রাঢ়ীর ভাইদের সাথে কথা বলবেই।
তিনবন্ধু মিলে রওনা দিলো রাঢ়ীর বাড়ির উদ্দেশ্য। লুবনাকে জিজ্ঞেস করল সে যাবে কি না? লুবনা সাথেই সাথেই নাকোচ করলো সে যেতে পারবেনা। তার মা’ তাকে যেতে দিবে না।
প্রিয়া অতকিছু ভাবলো না আর। তার মাও তাকে আস্ত রাখবে না আজকে। তবুও সে যাবে তার প্রাণপ্রিয় বান্ধুবীকে বাঁচাতে।
________________
মধ্যাহ্নের শেষ প্রহর।
ঘড়ির কাটায় দুপুর ২ঃ৩০। মারিয়া কিছুটা বিচলিত হলেন প্রিয়া এখনো বাসায় ফেরেনি। ফোন দিলেন লাগাতার কিন্তু এই মেয়ে কল ধরার নামই করলো না। তিনি রুষ্ট হলেন মেয়ের এই কান্ডহীন কৃতকার্যে। না বলে কোথায় গেলো? বাসায় আসলে আজকে এই মেয়ের ছাল তুলবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন।
কিন্তু মায়ের মন অস্থির হয়ে আছে। যতই মুখে বলুক, গালি দিক দিন শেষে তারই মেয়ে। অস্থিরতায় মুখে দুপুরের খাবার তুললেন না। বারান্দায় বসে রাস্তার পানে চেয়ে আছেন। মেয়েটা যদি বাসায় ফিরে আসে।
এভাবে দুপুর ঘড়িয়ে বিকেলে গিয়ে ঠেকলো।
প্রিয়া দুরুদুরু বুকে মায়ের কাছে কল করলো।
মারিয়া ত্বরিত কল রিসিভ করলেন। মনের মধ্যে এতক্ষণ যে অস্থিরতা কাজ করছিলো মেয়ের জন্য তা আর বুঝতে দিলেন না। বরং রাগের ফোয়ারা ছুটালেন মেয়ের উদ্দেশ্য।
“কোথায় রে তুই? কয়টা বাজে খবর আছে?”
প্রিয়া নিজেকে তৈরি করে রেখেছিলো। সে জানতো তার মা আজ ভীষণ ক্ষেপে আছে তার উপর। সে শান্ত ও কোমল গলায় বললো,
আম্মু, রাঢ়ীকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে তার ভাইয়েরা। তাই আমি ওর ভাইয়ের সাথে কথা বলতে এসেছি। আম্মু প্লিজ আজকে রাগ করো না। আমি চলে আসবো দ্রুতই। ওর ভাইয়া এখনো বাড়ি আসে নি তাই অপেক্ষা করছি। ওর ভাইয়া আসলে ফিরে আসবো জলদি।
মারিয়া এই কথা শুনে আরো রেগে গেলেন।
তুই কবে’রে এত বুঝদার হয়ে গেলি। তুই বলবি আর রাঢ়ীর ভাইয়েরা তোর কথা শুনবে।
আম্মু আমি ওর মেঝো ভাইয়ের সাথে কথা বলেই চলে আসবো। দেখি না উনাকে বুঝিয়ে কি হয়।
মারিয়া আর কিছু বললেন না। তবে দ্রুতই বাসায় ফিরতে বললেন।
______________
সৌরভ মাত্রই বাসায় ফিরেছে। বাসায় প্রবেশের পূর্বেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তার চোখ চলে যায় প্রিয়ার বারান্দার দিকে। সে অবাক হয় কিছু একটা ভেবে। তবে অত পাত্তা দিলো না। ভাবলো হয়ত মেয়েটা ভিতরেই আছে। কিছুক্ষণ পরেই তো তাকে পড়াতেই যাবে। তখন তো সে দেখবেই।
নিয়ম অনুযায়ী সে বিকেল ৫ঃ৩০টায় প্রিয়াকে পড়াতে ছুটলো। কিন্তু তাদের বাসায় এসে সে বেশ অবাক হয়। ড্রাইনিং রুম পুরায় ফাঁকা। প্রিয়ার এখন বই নিয়ে এখানে বসে থাকার কথা কিন্তু মেয়েটা কোথায় গেলো? সে মারিয়াকে ডাকলো।
আন্টি প্রিয়া কোথায়? পড়বে না আজকে?
মারিয়া সামনে এসে কাচুমাচু করতে লাগলো। কি বলবে সৌরভকে? এই মেয়ের কান্ডজ্ঞান কবে যে হবে? মারিয়া আমতা আমতা করতে লাগল।
কি যে করি মেয়েটা কে নিয়ে? দেখো না আমাকে না বলেই রাঢ়ীদের বাসায় গিয়ে বসে আছে। সেই দুপুরে গেছে এখন বিকেল গড়িয়েও যাচ্ছে তাও মেয়েটার আসার নাম নাই।
সৌরভ চুপচাপ সব শুনলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
প্রিয়া আচমকা রাঢ়ীদের বাড়িতে কেনো গিয়েছে?
মারিয়া ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো। তারপর গম্ভীরস্বরে বললো,
রাঢ়ীকে বিয়ে দিচ্ছে। আর প্রিয়া গেছে বিয়ে ভাঙতে।
সৌরভ দৈবাৎ হো হো করে হেসে উঠল। প্রিয়া বিয়ে ভাঙবে? ওর কথা কে শুনবে?
মারিয়া বিমর্ষ হয়ে বসে রইলেন। ভাবলেন অন্যকিছু একটা। মেয়েটা এতক্ষণ ঐ বাড়িতে কি করছে। আসছে না কেনো?
সৌরব মারিয়াকে পরখ করেই বুঝে গেলেন। তিনি মেয়ের চিন্তাই অস্থির হয়ে আছে। বাইরের পরিস্থিতি আজকাল ভালো নয়। কত বিপদ উৎপেতে থাকে তার কোন ইয়ত্তা নাই। সৌরভ অতর্কিত বলে ফেললো,
আন্টি আমি প্রিয়াকে নিয়ে আসি।
মারিয়া প্রসন্ন হলেন। সৌরভকে তিনি ভালো করেই চিনেন। আর যাই হোক কখনো তার মেয়ের ক্ষতি হতে দিবে না। সৌরভকে নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করা যায়। তাই মারিয়াও সৌরভকে অনুমতি দিলেন ঠিক আছে যাও নিয়ে আসো। তবে কানের নিচে দুইটা দিয়ে তারপর নিয়ে আসবে এই মেয়েকে। এত বড় গুদ্দা(কলিজা) কেমনে হয়ছে এই মেয়ের?
সৌরভ নিশব্দে হাসলো। আজকে মহান এক কাজ করতে যাচ্ছে।
______________
রাঢ়ীদের বাড়িতে হৈ-হুল্লোড় লেগে আছেই। সেই দুপুর থেকে অগণিত মানুষের আনাগোনা। প্রিয়া আসার পর থেকেই রাঢ়ী তাকে ঝাপটে ধরে আছে। এক মূহুর্তের জন্য আলাদা হতেই দিচ্ছে না।
ক্ষণে ক্ষণে রাঢ়ী হু হু করে কেঁদে উঠছে। প্রিয়া সান্ত্বনার বাণীও খুঁজে পেলো না রাঢ়ীর জন্য। রাঢ়ীদের পরিবারের সবাই মেঝো ভাইয়ের কথায় শোনে। ওর ছোটো ভাই বাড়িতেই আছে। কিন্তু বাকি দুই ভাই এখনো বাসায় ফিরেনি। তাই প্রিয়াও বাসায় ফিরতে পারছে না।
সূর্যাস্তের সময় হয়ে গেছে প্রায়। বিকেলের নাস্তা সেরে সবাই বসে আছে। প্রিয়া আজকে তাদের মধ্যেমণি হয়ে বসে আছে। নানান গল্প গুজবে তাদের সময় পার হচ্ছে। কিন্তু শান্তি নেই রাঢ়ীর মনে। অন্যদিকে প্রিয়ার মনে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। না রাঢ়ীর ভাইয়ের সাথে কথা বলতে পারছে আর না সে বাসায় যেতে পারছে। কিন্তু অকস্মাৎ কারো চেঁচামেচিতে প্রিয়ার ঘোর কাটে। চেনা কন্ঠস্বর শুনে প্রিয়া আৎকে উঠে। এই সৌরবিদ্যুত এখানে কি করছে?
প্রিয়া, রাঢ়ী দুইজনেই হতভম্ব সৌরভকে দেখে। সৌরভ মিটমিট করে হাসছে এদের ভ্যাবাচ্যাকা মুখ দেখে।
রাঢ়ীর পরিবার জিজ্ঞেস করলো,
ছেলেটা কে?
প্রিয়া কিছু বলার আগেই রাঢ়ীই আচম্বিত বললো,
প্রিয়ার উডবি হাসবেন্ড। উনার নাম সৌরভ ফায়াজ।
প্রিয়া ভূত দেখার মত চমকালো। তার মাটি খুঁড়ে এখানে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। এতদিন এই সৌরবিদ্যুত তাকে যেখানে সেখানে অপদস্ত করত। আর আজকে এই রাঢ়ীই। সে অগ্নিদৃষ্টিতে রাঢ়ীর দিকে তাকালো। রাঢ়ী মেকি হেসে তাকে ফিসফিস করে বললো,
“বইন তোর ভালোর জন্য বলছি। নয়তো আমাদের পরিবারের সবাই উল্টো পাল্টা ভাবতো তোরে আর সৌরভ ভাইরে নিয়ে।”
প্রিয়া চুপ থেকে কিছুক্ষণ ভাবলো। নীল, শ্রাবণ, রাঢ়ীদের বাসায় আসেনি। তাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে গেছে।
সত্যিই কি সৌরবিদ্যুতকে নিয়ে কিছু ভাবতো! কিন্তু তাই বলে সবার সামনে তার জামাই পরিচয় কেনো দিতে হবে? ব্যাপারটা দিন দিন কেমন সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে! বিয়ে, স্বামী-স্ত্রী এই সম্পর্কগুলো কি এতই ঠুনকো? যাকে তাকে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেওয়া যায়? না চাইতেও তাকে কতজনের কাছে স্ত্রী পরিচয় দিয়েছে সৌরবিদ্যুত। প্রিয়া আর ভাবতে পারলো না তার আগেই সৌরভ বলে উঠল।
“সন্ধ্যো হয়ে যাচ্ছে প্রিয়া। চলো বাসায় চলো। মারিয়া আন্টি আমাকে পাঠিয়েছে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
রাঢ়ীর পরিবার অনেক চেষ্টা করেও সৌরভকে বসাতে পারলো না। প্রিয়াও আর টুঁশব্দ করলো না। চুপচাপ সে বাইকে গিয়ে বসলো।
সৌরভ বাইক চালাচ্ছে আর প্রিয়াকে দেখছে। এই মেয়ে আজকে কোনো বাক্য বিনিময় করছে না কেনো? সৌরভের ভীষণ অস্থির লাগছিলো। এই মেয়ে বকবক না করলে তার ভাতই হজম হয় না। কিন্তু কি হয়েছে এত চুপচাপ কেনো সে বসে আছে? সৌরভ বাইকের গ্লাসে প্রিয়ার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটাকে ভীষণ বির্মষ দেখাচ্ছে। সৌরভ আৎকে উঠলো। নিরাবতা ভেঙ্গে সেই বলে উঠল,
কি হয়েছে প্রিয়া? তোমার কি কোনো কারণে আজকে মন খারাপ?
প্রিয়ার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। সে প্রতিত্তোরে বললো,
যদি বলি কারণটা আপনি? বিশ্বাস করবেন?
সৌরভ নিশব্দে উষ্ণ নিশ্বাস ছাড়লো। শান্ত গলায় বলল হুমম, করবো।
“স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মানে বুঝেন?”
সৌরভ আচম্বিত বাইক কষলো। তারপর প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
“হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?”
কারণ আমি চাই না আপনি আমাকে আর বিরক্ত করুন। যেখানে সেখানে স্ত্রী-প্রেমিকা এই ধরনের শব্দ আমাকে নিয়ে ব্যবহার করুন।
সৌরভ কিছুক্ষণ চুপ থেকেই বললো,
ঠিক আছে। আজ থেকে তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আর কিছু করবো না। যাও বিগত দিনের জন্য সরি। আসলে আমি বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা এত সিরিয়াস হয়ে যাবে। অ্যাই প্রমিজড নেক্সটাইম এরকম ভুল হবে না।
চলবে,,,,,,,,,,
রাঢ়ীর ঘটনাটা আমার বাস্তব ঘটনা থেকেই লিখলাম।
“ব্যাই দ্যা ওয়ে প্রিয়া কি কাজটা ঠিক করলো না’কি ভুল?”