শালুক ফুলের লাজ নাই পর্ব -২৪+২৫+২৬

#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই (২৪)

ধ্রুবর মন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।একটু আগে শাপলা কল দিয়েছে শালুকের ফোন থেকে।আদনান যা যা করেছে সব বলেছে শাপলা ধ্রুবকে।
তারপর থেকে ধ্রুবর মন মেজাজ বিগড়ে আছে।রাগ উঠেছে সপ্তমে।অযথাই মাথা গরম হচ্ছে।

এই শীতের দিনেও ধ্রুবর শরীর থেকে ঘাম বের হচ্ছে। যা নিয়ে ধ্রুব চিন্তায় ছিলো তাই হচ্ছে।

নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো ধ্রুব।এরকম অযথাই রাগে ফোঁসফোঁস করার স্বভাব ধ্রুবর নেই।ধ্রুব মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করার মানুষ।
এই মুহুর্তের অতিরিক্ত রাগ ধ্রুবকে ভাবিয়ে তুলছে।সে কি নিজেকে কন্ট্রোল করতে ব্যর্থ হচ্ছে!

ধ্রুবর দাদী বলতেন, অতিরিক্ত রাগ হলে যাতে মাটির দিকে থাকে তাহলে রাগ মাটি হয়ে যাবে।আর নয়তো পানির দিকে তাকিয়ে থাকতে তাতে রাগ পানি হয়ে যাবে।
এই বিশাল শপিং মলের দুই তলার এই শো-রুমের চৌহদ্দিতে কোনো মাটি নেই আর না আছে ওভাবে দেখার মতো কোনো পানি।বোতলের পানির দিকে তাকিয়ে রাগ কমানোর কোনো উপায় পেলো না।

ফ্লোরে শুয়ে ধ্রুব ১০০ থেকে উল্টো দিকে কাউন্ট করতে শুরু করলো। ২৩ এ এসে ধ্রুব অনুভব করতে পারলো তার রাগ কমেছে। তবুও খানিকটা মনোকষ্ট রয়ে গেলো।
শালুক কেনো তার কাছে এই ব্যাপারটা লুকিয়ে গেছে এই ভেবে।
বুঝতে পারলো না ধ্রুব শালুকের এই ব্যাপারটা।

শো-রুম থেকে বের হয়ে ধ্রুব টিউশনিতে গেলো। দুইটা টিউশনি শেষ করে শেষ টিউশনিতে যাবার সময় ধ্রুবর কেমন ইতঃস্তত বোধ হলো। এই টিউশনিটা ধ্রুবর কাছে কেমন যেনো লাগে।ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়া একটা মেয়েকে পড়ায় ধ্রুব।ফিন্যান্স আর একাউন্টিং। দুই সাবজেক্ট। সপ্তাহে ৩ দিন ফিন্যান্স তিন দিন একাউন্টিং।মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন। কিন্তু ছাত্রীর আচার ব্যবহার কিছুদিন ধরে ধ্রুবর কাছে সুবিধাজনক লাগছে না।
ধ্রুব বাসার বাহিরে দাঁড়িয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলো।তারপর মুখে অতিরিক্ত গাম্ভীর্য এনে বাসায় প্রবেশ করলো।
তার ছাত্রী চেয়ারেই বসে ছিলো। যেনো ধ্রুবর প্রতীক্ষা করছে বসে বসে।
ধ্রুব বসতে বসতে আড়চোখে তাকালো।

মোটা করে চোখে কাজল দিয়েছে মেয়েটা,ঠোঁটে গাঢ় খয়েরী রঙের লিপস্টিক। কানে নীল দুল পরেছে নীল জামার সাথে ম্যাচিং করে।
ধ্রুব একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এই মেয়েটার হাবভাব সুবিধাজনক লাগছে না বলে ধ্রুব প্রথমেই বলে দিয়েছিল সে বিবাহিত। কিন্তু মেয়েটার মধ্যে তার জন্য ভ্রুক্ষেপ নেই।

ধ্রুব গম্ভীরমুখে বললো, “গতকাল যে আর্থিক অবস্থার বিবরণী করতে দিয়েছিলাম আগে ওটা দেখাও।”

ধ্রুবর ছাত্রীর নাম নিশা।নিশা খাতা বের করে বললো, “স্যার, আমার দিকে তাকান।”

ধ্রুব খাতার দিকে তাকিয়ে বললো, “তোমার দিকে তাকানোর কি আছে?তোমার দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য তো আমাকে মাস শেষে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয় না।টাকা দেওয়া হয় তোমার লেখাপড়ার দিকে তাকানোর জন্য।তাই,নিজের সাজগোজ বন্ধ করে মন দিয়ে নিজের মেধাকে সাজাও।পড়ালেখায় মন দাও।”

নিশা ফিসফিস করে বললো, “মন তো স্যার আমার কাছে থাকে না।আপনার কাছে থাকে।”

ধ্রুব শুনতে পেলো কথাটা। কিন্তু জবাব দিলো না। না শোনার ভান করে রইলো। নিশা আবারও বললো,”আমার দিকে তাকালে আজকে আপনি একটা মজার জিনিস দেখতে পাবেন।আজকে আমাকে অন্যরকম লাগছে সেটা দেখতে পাবেন।”

ধ্রুব না তাকিয়ে বললো, “কেনো,তোমার কি আজকে মাথায় শিং গজিয়েছে নাকি?বাজে কথা বন্ধ করো।তোমার অংক মিলে নি।কোনটা কোথায় বসবে তুমি সেটাই এখনো বুঝতে পারছো না।আয়,ব্যয় সব গুলিয়ে ফেলেছ।”

নিশা করুণ সুরে বললো, “আমার মাথাটাই তো গুলিয়ে গেছে স্যার।অংক মিলবে কিভাবে?”

ধ্রুব আবারও খাতায় আর্থিক অবস্থার বিবরণীর ঘর আকলো।তারপর নিশার দিকে খাতা এগিয়ে দিয়ে বললো, “শুরু করো আবার। যেই এন্ট্রি বুঝবে না আমাকে জিজ্ঞেস করবে।”

নিশা ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললো, “আগে এটা বুঝান কিভাবে কারো মনে এন্ট্রি নেওয়া যায়?”

ধ্রুব ভীষণ রাগ হলো। ধমকে বললো, “ফাজলামি করতে বসেছ তুমি?আমাকে জোকার মনে হয় তোমার? নাকি তামাশা করতে ভালো লাগছে?নেক্সট টাইম যদি তোমার এরকম ব্যবহার দেখি তবে আমি তোমার আম্মুকে বলে যাবো আমার পক্ষে তোমাকে পড়ানো সম্ভব না। অন্য টিচার রাখতে।বেয়াদব স্টুডেন্ট আমার চাই না।”

নিশার কলিজায়ভাবে লাগলো ধ্রুবর এই কথাগুলো। ধ্রুব কেনো বুঝতে পারছে না নিশা তাকে ভালোবাসে!শুধুমাত্র ধ্রুবর জন্যই তো নিশা পড়ানোর টাইম হবার আগেই টেবিলে এসে বসে থাকে।নিজেকে সাজিয়ে গুজিয়ে রাখে।আর ধ্রুব কি-না নিশার থেকে নিস্তার পেতে নিজেকে বিবাহিত বলে দাবি করছে?
নিশা ভেবে পায় না সে দেখতে কি এতোই খারাপ!

নিশাকে অংক করতে দিয়ে ধ্রুব শালুককে কল দিলো। শালুক তখন বাংলা দ্বিতীয় পত্র বই নিয়ে বসেছে।ধ্রুবর কল পেয়ে অবাক হলো। এই সময়ে ধ্রুব তো কখনো কল দেয় না।আজ কি হলো হঠাৎ!
তড়িঘড়ি করে শালুক কল রিসিভ করলো। ধ্রুব যথাসম্ভব মধুর স্বরে বললো, “কি করছো?খেয়েছ তুমি? ”

শালুক জবাব দিলো পড়া শেষ করে খাবে তারপর জিজ্ঞেস করলো, “এই সময় তো কল দেন না।আজকে হঠাৎ কি হলো?”

ধ্রুব নিশাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো, “এই সময় তো আমার বউটা আমার কাছে থাকতো বাসায়।তাই কল দিতাম না।কারণ বাসায় গেলে তোমাকে দেখবো।আজকে তো তুমি নেই,তাই খুব মিস করছিলাম।এজন্য কল দিয়েছি।আজ তো বাসায় গেলে দেখবো বাসা ফাঁকা।”

শালুকের কেমন যেনো ভালো লাগলো ধ্রুবর এই কথাগুলো। কেমন হৃদয় প্রশান্ত করে দিচ্ছিলো। ধ্রুব কল রেখে দিলো।নিশা কান পেতে শুনলো সবটা।তবুও ওর বিশ্বাস হলো না। নিশার মনে হলো এই সব ধ্রুবর প্ল্যান।কাউকে আগেই বলে রেখেছিলো হয়তো। তাই নিশাকে সরানোর জন্য এরকম করছে ধ্রুব।
চুপচাপ নিশা অংক করে গেলো। ধ্রুবকে একটা এন্ট্রি ও জিজ্ঞেস করলো না।
অংক দেখতে গিয়ে ধ্রুব টের পেলো নিশা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আর মজার ব্যাপার হলো, অংক এবার ঠিকঠাক মিলে গেছে।

ধ্রুব ভেবে পেলো না নিশার এই কান্নার কারণ কি।তবে এটুকু বুঝতে পারলো এই টিউশনি ছেড়ে দতে হবে খুব শীঘ্রই। এসব কেলেংকারীতে ধ্রুব কিছুতেই জড়াতে চায় না।আর এই ষোড়শীকে বুঝানোর সাধ্য তার নেই।
নিজের বউয়ের চিন্তা করবে না কি অন্য মেয়েকে নিয়ে ভাববে সে।

বাকি সময়ে ধ্রুব আরো দুটো অংক করালো।নিশা একটা কথা ও বললো না ধ্রুবর সাথে। নিশা ভেবেছিলো ধ্রুব একটা বার হলেও জিজ্ঞেস করবে নিশাকে কেনো চুপ করে আছে।
কিন্তু নিশার ভাবনা ভুল করে দিয়ে ধ্রুব ও প্রশ্ন করে নি।সময় শেষ হতেই ধ্রুব উঠে চলে গেলো।

পড়ার টেবিলেই নিশা কান্নায় ভেঙে পড়লো। নাকের জল,চোখের জল একাকার হয়ে গেলো নিশার।
বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে নিশা।যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।এজন্য সব কিছুতে জিতে যাওয়ার একটা মানসিকতা নিশার মধ্যে প্রবল। সব সময় আত্মীয় স্বজন, কাজিনদের মধ্যে ফার্স্ট প্রায়োরিটি নিশার।কেননা নিশার বাবা অনেক টাকার মালিক।তার একমাত্র উত্তরাধীকারি নিশা।
তার উপর নিশা বেশ সুন্দরী। সবদিক মিলিয়ে সবখানে নিশা দেখেছে সবাই তাকে খুব প্রাধান্য দেয়।
কিন্তু এই একটা জায়গায়, একজন মানুষের কাছে নিশা হেরে যাবে তা নিশার ভাবনাতে ছিলো না কখনো।

ক্লাস সেভেন থেকে বেশ কয়েকজন প্রাইভেট টিচার চেঞ্জ করেছে নিশা।পড়াতে পড়াতে সবাই নিশাকে ভালোবেসে ফেলতো।এর থেকে নিশার মধ্যে এক ধরনের অহংবোধ জন্ম নিলো।
সে ভেবেই নিলো এরকমটাই হতে হবে।কিন্তু ধ্রুব অন্যদের চাইতে অন্যরকম হওয়ায় নিশার মনে জায়গা করে নিয়েছে।
স্বপ্নের পুরুষ হিসেবে নিশা যেমন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ, মেধাবী,শ্যামলা,লম্বা ছেলে পছন্দ করে ধ্রুবর মধ্যে তার সবটাই আছে।
নিশা কিছুতেই ধ্রুবর নেশা থেকে নিজেকে বের করে আনতে পারছে না।
উল্টো ধ্রুবর এই কাটখোট্টা ব্যবহারে নিশা আরো প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। অথচ এই মানুষটা কিছুতেই বুঝতে চায় না ওকে।

ধ্রুব বাসায় ফিরে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো। আজ আর রান্না করতে ইচ্ছে করে না।একা একা খেতে ইচ্ছে করে না। পুরো বাসা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। একটা মানুষের অনুপস্থিতে এই বাসাটা ও বুঝে গেছে। ধ্রুবর বুকের ভেতর ভীষণ জ্বালাপোড়া অনুভূতি টের পাচ্ছে ধ্রুব।
কেনো এতো অন্তর পুড়ে যাচ্ছে?
কেনো শালুক এভাবে হৃদয়ে আসন গেড়ে বসেছে।আজ যে শালুক কাছে নেই অথচ ধ্রুব এই সামান্য বিরহ সহ্য করতে পারছে না।

শালুক পড়া শেষ করে খেতে গেলো। আদনান অপেক্ষা করে ছিলো কখন শালুক খেতে যাবে।শালুক খেতে বসে দু লোকমা খেয়েছে সেই সময় আদনান গেলো ভাত খেতে। মা’কে ডেকে ভাত দিতে বললো।
শালুক বুঝতে পারলো আদনান ইচ্ছে করে এই সময় এসেছে।ভাতের প্লেট নিয়ে শালুক দাদার রুমে চলে গেলো।
আদনান বুক ভরা ব্যথা নিয়ে তাকিয়ে রইলো। শালুক কেমন করে তাকে ইগনোর করে যাচ্ছে। এতো ভাব কিভসবে হলো শালুকের?
না-কি ধ্রুবর সাথে থাকতে থাকতে শালুক ও এরকম হয়ে গেছে।

খাওয়ার পর দাদীর রুমে বসে সবাই মিকে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করলো।
রাতে শালুক ঠিক করলো আজকে নিজের রুমে ঘুমাবে। ধ্রুব কি কি রেখেছে ব্যাগে এসব দেখবে।
রুমে গিয়ে শালুক ধ্রুবকে কল দিলো। ধ্রুব ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। গতরাত জার্নি শেষ করে বাসায় এসে দু ঘন্টা ও ঘুমাতে পারে নি।বের হয়ে যেতে হয়েছিলো জীবিকার তাগিদে। সারাদিন খাটাখাটুনি শেষে আজ বিছানায় পিঠ দিয়ে শালুককে ভাবতে ভাবতেই ধ্রুব ঘুমিয়ে পড়লো।
শালুক যখন ধ্রুবকে কল দিয়েছে তখন রাত ১২.১৫ মিনিট।

শালুক ফোন রেখে দিয়ে সবেমাত্র ব্যাগ খুলেছে এই সময় দরজায় টোকা পড়লো। শাপলা ভেবে শালুক দরজা খুলতেই দেখলো আদনান দাঁড়িয়ে আছে। শালুককে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আদনান মুখ চেপে ধরে দরজা বন্ধ করে দিলো।
#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই (২৫)

শালুক হাত দিয়ে খামচে ধরে রেখেছে আদনানের হাত,পা দিয়ে পেছন থেকে লাথি দিচ্ছে কিন্তু আদনান শালুকের মুখ ছাড়ছে না।
ফিসফিস করে বলতে লাগলো, “তোকে আজ শুনতেই হবে আমার কথা। নয়তো আমি শান্তি পাবো না।তুই আমার শুধু, আমার হবার কথা ছিলো।
আমি তো তোকে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দেয়ার জন্যই আশাকে বিয়ে করতে চেয়েছি। মাঝখান থেকে ধ্রুব সব ঝামেলা পাকালো। ”

শালুক খুব জোরে আদনানের হাটুতে একটা লাথি দিলো।প্রচন্ড ব্যথা পেলো আদনান। তবুও শালুকের মুখ ছাড়লো না।

শালুককে সান্ত্বনা দেয়ার ভঙ্গিতে আদনান বললো, “একটু আমার কথা শোন শালুক।আমি তোর কোনো ক্ষতি করবো না।আমি তোকে সত্যি ভালোবেসেছি। আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাবো শালুক তোর বিরহে। আমি সব শেষ করে দিবো শালুক।সবাইকে শেষ করে দিবো।সবার আগে ধ্রুবকে শেষ করে দিব।তোকে আমি একবার হারিয়েছি আর হারাতে চাই না।বিশ্বাস কর আমি তোকে অনেক সুখে রাখবো।”

ধ্রুবর ঘুম ভেঙে গেলো হঠাৎ করেই। বুকের ভেতর কেমন কেঁপে উঠলো ঘুমের মধ্যেই। তড়াক করে ধ্রুব লাফিয়ে উঠে বসলো বিছানায়।
শীত লাগছে অথচ সে গায়ে কম্বল দেয় নি।এজন্যই কি ঘুম ভেঙে গেছে?
ভেবে পেলো না ধ্রুব।ফোন চেক করে দেখে আধা ঘণ্টা আগে শালুক কল দিয়েছে। ধ্রুব কল ব্যাক করলো শালুককে।
রিং হতে থাকলো কিন্তু শালুক রিসিভ করতে পারলো না।

ধ্রুবর কল দেখে আদনানের মাথা খারাপ হয়ে গেলো যেনো।আদনান শালুককে টেনে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে এক হাতে শালুকের মুখ চেপে ধরে ধ্রুবর কল কেটে দিলো।
কল কেটে দেয়ায় ধ্রুব দুই মিনিট অপেক্ষা করলো শালুকের কল ব্যাক করার।কল না পেয়ে আবারও কল দিলো। আদনান বিরক্ত হয়ে কল আবারও কেটে দিলো। এরপর ফোন অফ করে দিলো।

ধ্রুব হতবাক হলো শালুকের ফোন বন্ধ পেয়ে।কথা না বলে শালুক তো ফোন রেখে দেওয়ার মানুষ না।তারপর এখন কি-না ধ্রুবর কল কেটে দিয়ে সে ফোনের সুইচ অফ করে দিয়েছে।
ধ্রুবর বুকের ভেতর জ্বলতে লাগলো। কি হয়েছে শালুকের?
শাপলার ফোন নেই যে শাপলাকে কল দিবে।উপায় না পেয়ে ধ্রুব দাদাকে কল দিলো। কেনো জানি তার বুকের ভেতর খচখচ করছে একটা সন্দেহ।

নুরুল ইসলাম সাহেব এতো রাতে নাতির কল পেয়ে অবাক হলেন।ধ্রুব সোজা বললো, “দাদা,এখনই উপরে যান।শালুকের সাথে আমার এই মুহুর্তে কথা বলতেই হবে।”

চশমা চোখে দিয়ে ধ্রুবর দাদা ফোন নিয়ে উপরে গেলো। প্রথমে শাপলার রুমের দরজায় নক করলো।ঘুম থেকে জেগে শাপলা দরজা খুলে দাদাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। হাই তুলতে তুলতে বললো, “কি হয়েছে দাদা?”

দাদা জিজ্ঞেস করলেন,”শালুক কই?ধ্রুব কল দিয়েছে কথা বলতে। ”

শাপলা আড়মোড়া ভেঙে বললো, “ও তো আজকে ওর রুমে শুয়েছে।আমি ডাকছি চলেন।”

ধ্রুব লাইনে থেকে সব শুনতে লাগলো। বুকের ভেতর ধুকপুক করতে লাগলো ধ্রুবর।

শাপলা কয়েকবার শালুককে ডাকলো,কিন্তু শালুক জবাব দিতে পারলো না। আদনান শক্ত করে দুই হাতে শালুকের মুখ চেপে ধরে রেখেছে। উপায় না পেয়ে শালুক লাথি দিয়ে টুলের উপর থেকে গ্লাস ফেলে দিলো।
ঝনঝন শব্দ তুলে কিছু ভেঙে যাবার শব্দ শুনে শালুকের দাদাও এবার ডাকতে লাগলেন।
কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না।আদনান ঘামতে লাগলো। সেই সাথে সমানে শালুক তাকে খামচি দিচ্ছে।

শালুকের জবাব না পেয়ে দাদা বললেন,”ও মনে হয় ঘুমাই গেছে ধ্রুব।”

ধ্রুব কঠোর স্বরে বললো, “না দাদা,ও জেগে আছে।একটু আগে আমি কল দিয়েছিলাম আমার কল ও কেটে দিয়েছে। আপনি দরজা ভাঙ্গার ব্যবস্থা করেন যদি শালুক দরজা না খোলে।এক্ষুনি দাদা।দেরি করবেন না।”

শালুকের দাদা কিছুই বুঝতে পারছেন না কি করবেন।জোরে জোরে শালুককে ডাকতে লাগলেন।বাহিরে চিৎকার শুনে সবার ঘুম ভেঙে গেলো। একে একে সবাই রুম থেকে বের হয়ে শালুকের রুমের সামনে জড়ো হলো।

শালুকের বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,”কি হয়েছে আব্বা?”

নুরুল ইসলাম সাহেব বিমর্ষ বদনে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,”বুঝতেছি না রে বাবা,ধ্রুব কল দিলো শালুকের সাথে কথা বলবে ফোন দিয়ে যেতে,আমার আগে শালুককে কল দিয়েছে শালুক নাকি কল কেটে দিয়েছে। রিসিভ করে নি।ওর এজন্য চিন্তা হচ্ছে। এখনো লাইনে আছে ধ্রুব।”

নুরুল ইসলাম সাহেব ফোন কানে নিয়ে বললেন,”দরজা তো খোলে না শালুক।”

ধ্রুব বললো, “দরজা ভাঙার ব্যবস্থা করেন দাদা।বড় চাচীকে বলেন গিয়ে দেখে আসতে আদনান কোথায়।”

নুরুল ইসলাম সাহেব বড় পুত্রবধূকে তাই বললেন।আদিবা বেগম উদভ্রান্তের মতো ছেলের রুমে ছুটে গেলেন।মনে মনে আল্লাহকে বলতে লাগলেন ছেলে যাতে রুমে থাকে।আর যাতে কোনো কেলেংকারী না ঘটে।

তার আশা বৃথা হলো। গিয়ে দেখেন রুমে কেউ নেই।তিনি পাগলের মতো হয়ে গেলেন।বাহিরে এসে বললেন আদনান তো ওর রুমে নেই।সেলিম সাহেব সাথে সাথে ছেলের ফোনে কল দিলেন।শালুকের রুমের ভেতর ফোন বেজে উঠলো।

আদনান নিজেও দিশেহারা হয়ে গেছে এই অবস্থায়। সবাই যে এভাবে এসে পড়বে তা তার ভাবনাতেও ছিলো না। সে তো এসেছিলো শুধুমাত্র শালুকের ভুল ভাঙ্গাতে।ভয়ে আদনান দরজা খুলতে গেলো না, শালুকের মুখ ও ছাড়লো না।
এতোক্ষণ ধরে দস্তাদস্তি করে শালুকের শরীরের সব শক্তি যেনো ফুরিয়ে গেলো। নিস্তেজ হয়ে গেলো শালুক।তার উপর মনে ভয় কাজ করছে ধ্রুবকে নিয়ে, ধ্রুব যদি তাকে ভুল বুঝে তাহলে শালুক কি করবে।এমনিতেও তো ধ্রুব জানে শালুক আগে আদনানকে পছন্দ করতো।
ধ্রুব যদি এখনো ভাবে শালুকের মানসিকতা এখনো আগের মতো আছে!

বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা করতে লাগলো শালুকের। ইচ্ছে করলো এক ছুটে পালিয়ে যায় ধ্রুবর কাছে।ধ্রুবর বুকে আছড়ে পড়ে।

বাহিরে দরজা ভাঙ্গার শব্দ শোনা যাচ্ছে। আদনান স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছে শালুকের মুখ চেপে ধরে, শালুক ও তেমনই দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের মনেই দুই রকম ভয়।

শালুকের মনে হচ্ছে এসব স্বপ্ন দেখছে সে,একটু পরেই তার ঘুম ভেঙে যাবে।ঘুম থেকে উঠলে দেখবে সব ঠিকঠাক। কিন্তু শালুকের ভুল ভেঙে গেলো যখন দরজা খুলে সবাই শালুকের রুমে প্রবেশ করলো। দুজনকে এই অবস্থায় দেখে সেলিম সাহেব ছুটে এসে আদনানের হাত থেকে শালুককে ছাড়িয়ে দিলেন।শালুকের বাবা মা এসে শালুককে জড়িয়ে ধরলো। সারা শরীর টলছে শালুকের। নিজেকে ভীষণ দুর্বল মনে হচ্ছে। বাবা মায়ের গায়ের উপরেই শালুক ঢলে পড়লো।

আদিবা বেগমের মাথা হেট হয়ে গেলো ছেলের এই অসভ্যতা দেখে। সেলিম সাহেব আদনানের গালে কয়েকটা থাপ্পড় বসালেন।আদনান নিরবে সব সহ্য করে গেলো। তবুও তার মনে একটাই কষ্ট রয়ে গেলো সে শালুককে কিছুই বুঝিয়ে বলতে পারে নি,শালুকের ভুল ভাঙ্গাতে পারে নি।

ওপাশ থেকে ধ্রুবর বেদনার্ত গলার স্বর শোনা গেলো,ধ্রুব দাদাকে জিজ্ঞেস করলো, “আমার শালুক কই দাদা?ও কেমন আছে?”

কাঁপা কাঁপা গলায় তিনি উত্তর দিলেন,”শালুক অজ্ঞান হয়ে গেছে ধ্রুব।”

ধ্রুব ফোন রেখে দিলো।নুরুল ইসলাম সাহেবের চোখে জল চলে এলো। এই বয়সে এসে নিজের নাতির এতো বেহায়াপনা দেখবেন কখনো ভেবেছেন তিনি?
আদনান তার বড় নাতি,সবার বড় আদনান। কতো আদরের ছিলো এই নাতি।দাদার হাত ধরে ঘুরে বেড়াতো। দাদার কাঁধে চড়ে বাজারে চলে যেতো। প্রথম নাতি হিসেবে,পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে আদনান সবার অনেক ভালোবাসা, স্নেহ পেয়েছে।
সেই স্নেহ এখনো আছে বলেই তো সেদিন এতো বড় ঘটনা ঘটানোর পরেও কেউ আদনানকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে দেয় নি।

সকাল বেলা শালুক নিজেকে মায়ের পাশে শুয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো। ঘড়িতে তখন সাড়ে সাতটা বাজে। হাসনা বেগম তো এতোক্ষণ বিছানায় থাকার মানুষ না।
তবে এখনো শুয়ে আছে যে এখানে?
শাপলা বসে আছে মায়ের পায়ের পাশে।

শালুক বের হতে গেলে হাসনা বেগম ডেকে বললেন, “আগে ধ্রুবর সাথে কথা বল কল দিয়ে। ”

শালুকের অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেলো শুনে।ধ্রুবর সাথে কথা বলবে কিভাবে সে?ধ্রুব কি তাকে বিশ্বাস করবে?যদি তাকে মিথ্যাবাদী ভাবে ধ্রুব?
শালুক সেই আঘাত কিভাবে সহ্য করবে?
ভয়ে শালুক ধ্রুবকে কল দিলো না। চুপচাপ বসে রইলো জানালার পাশে।
কিছুক্ষণ পরেই শালুকের বাবা এলেন রুমে শান্তকে নিয়ে। শান্ত আজ সকাল সকাল উঠে গেছে ঘুম থেকে। পাশে মা’কে না দেখে অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো।
স্ত্রীকে শুয়ে থাকতে দেখে ফয়েজ আহমেদ জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে তোমার? আজ রান্নাঘরে গেলে না যে?”

হাসনা বেগম বিছানায় উঠে বসলেন।কড়া স্বরে বললেন, “কেনো একদিন বান্দিগিরি করছি না বলে কি বুকের ভেতর খচখচ করছে না-কি? বিয়ে করে তো বউ আনো নি,বান্দি এনেছো।২৪ ঘন্টা, ৭ দিন যে চরকির মতো ঘুরে।আত্মসম্মানহীন এক নারী আমি।নিজেকে নিজের ঘেন্না হয় আজ।”

ফয়েজ আহমেদ কিছুই বুঝতে পারলেন না।শান্ত কান্না করে বললো, “নাশতা দাও, খাবো।”

হাসনা বেগম এক অপ্রত্যাশিত কাজ করে ফেললেন।ছেলের গালে একটা চড় মারলেন।শাপলা, শালুক,তার বাবা হতভম্ব হয়ে গেলো হাসনা বেগমের এই ব্যবহার দেখে।শান্ত দিঘির জলের মতো নিরব থাকা এই মানুষটা আজ এতো রেগে আছে কেনো!

হাসনা বেগম স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,”কোনোদিন এই চিন্তা মাথায় ও আনি নি।কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি।তুমি এই মুহূর্তে আব্বাকে গিয়ে বলবে আমরা আলাদা হয়ে যেতে চাই।এই এক ছাদের নিচে আমি আমার মেয়েদের নিয়ে কিছুতেই থাকবো না আর।আমার ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েটার জীবন শেষ হয়ে গেছে, আমার আরেকটা মেয়ের জীবন এখানে থেকে কোনো বিপদে পড়ুক আমি তা চাই না।এই বাড়িতে আমি আর থাকবো না।যতোক্ষণ না তুমি আমাদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বের হবে আমি এবং আমার সন্তানেরা কেউই এক গ্লাস পানি ও মুখে দিব না এই বাড়ির।”

ফয়েজ আহমেদের মাথা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো। কি বলছে হাসনা এসব?উঠে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “পাগল হয়ে গেছো তুমি?কি বলছো বুঝতে পারছো?তুমি নিজে থাকতে পারবে কখনো?
সংসার,শ্বশুর শাশুড়ী, ননদ,জা’দের ছেড়ে বাবার বাড়ি গিয়ে তুমি ২ দিনের বেশি ৩ দিন কখনো থাকতে পারো নি।সবসময় বলতে এদের ছাড়া তোমার দম বন্ধ লাগে।সেই মানুষ কিভাবে এসব বলছো? ”

হাসনা বেগম শান্ত স্বরে বললেন, “তখন আমি জানতাম না, আদর যত্ন করে কালসাপ পুষছি,যে কি-না আমার মেয়েদের উপর ছোবল দিবে।একবারে সে আমার মেয়ের চরিত্রে দাগ লাগাতে পারে নি, এজন্য আবারও চেষ্টা করেছে। আজ ও যখন পারে নি আবারও চেষ্টা করবে সে।আমি আর এরকম কিছু চাই না আমার মেয়েদের জীবনে।তোমার যদি মেয়েদের জন্য কোনো চিন্তা না থাকে তবে তুমি থাকো এখানে,আমি ওদের তিন জনকে নিয়ে বের হয়ে যাবো এক কাপড়ে।”

ফয়েজ আহমেদ দিশেহারা হয়ে গেলেন।তার মাথায় কিছু আসছে না।স্ত্রী যা বলছেন তা কোনো দিক থেকে ভুল না।কিন্তু এভাবে যৌথ পরিবার থেকে চলে যাওয়া তাও তার মন মানছে না।

ফয়েজ আহমেদ বের হয়ে যেতেই হাসনা বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন।

শালুক মায়ের সামনে গিয়ে বললো, “কেনো এরকম করছো মা?তুমি কি পারবে থাকতে? ”

হাসনা বেগম কান্নার জন্য কথা বলতে পারলেন না। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,”আমার ২০ বছর ধরে সাজানো সংসার। মায়া,মমতা, ভালোবাসা দিয়ে সাজিয়েছি তিন জন মিলে।কখনো ওনাদের জা ভাবি নি, বোন ভেবেছি। ছেলেমেয়েদের নিজের সন্তানের মতো ভেবেছি। আজ সব ছেড়ে যাবার কথা বলছি কি অল্প কষ্টে!
আমার মেয়েদের এরকম একটা পরিবেশে আমি আর রাখতে চাই না।এখানে থাকলে ধ্রুব কিছুতেই আর শালুককে আসতে দিবে না এই বাড়িতে।আমি চিনি ধ্রুবকে।যেখানে একবার তার অসম্মান হবে সেখানে সে দ্বিতীয় বার আসবে না।আজকে এই ঘটনার পর ধ্রুব কিছুতেই আর আসবে না বাড়িতে,শালুককে ও আসতে দিবে না।
বাকিটা জীবন আমার মেয়েকে এভাবে থাকতে হবে। আজ শালুকের সাথে এরকম করেছে,পরের বার যে শাপলার সাথে এরকম হবে না কে নিশ্চয়তা দিবে? ”

ফয়েজ আহমেদ নিচে গিয়ে বাবাকে ডাকলেন।তিনি নিজেও বুঝেছেন এটা,এই বাড়িতে থাকলে শালুককে আর এই জীবনের জন্য দেখবে না।ধ্রুব কখনোই শালুককে এখানে পাঠাবে না।
সব ভেবে ফয়েজ আহমেদ বাবাকে বললেন আজকে,এই মুহুর্তেই তিনি স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যেতে চান।

নুরুল ইসলাম সাহেব নরম স্বরে বললেন, “বেশ,যা তোমাদের ভালো মনে হয় তাই করো।যদি মনে হয় আমার নাতনিদের জন্য এতেই ভালো হবে তবে আমি তোমাদের কিছুতেই বাঁধা দিবো না।”

আদিবা বেগম কাপে চা ঢালতে ঢালতে সব শুনলেন।তার হাত পা কাঁপতে থাকলো। কিন্তু বাঁধা দেওয়ার মতো সাহস পেলেন না।
কিভাবে বাঁধা দিবেন তিনি?

একটা হাসিখুশি যৌথ পরিবার ভেঙে যেতে বেশি দেরি হলো না। কেউ কাউকে দোষারোপ করতে পারলো না। অভিযোগ করতে পারলো না।

ধ্রুব কল দিলো কিছুক্ষণ পর। শালুকের সারা শরীর কেঁপে উঠলো। কোনো মতে উঠে ফোন রিসিভ করলো।
ধ্রুব নরম স্বরে বললো, “শরীর কেমন এখন তোমার? ”

শালুক কোনোমতে জবাব দিলো, “ভালো আছি এখন।”

ধ্রুব কোমল গলায় বললো, “আমাকে বলতে বলেছি না শালুক কোনো সমস্যা হলে?গতকাল আদনান তোমাকে রাস্তায় যখন বিরক্ত করেছে কেনো আমার কাছে লুকিয়ে গেলে তখন?আমি বলেছি না আমার কাছে বলতে কোনো সমস্যা হলে।
আজ যদি কোনো বিপদ হতো শালুক? আমি কিভাবে বাঁচতাম?কাকে নিয়ে বাঁচতাম আমি শালুক?তোমাকে আমি বলেছি না আমার আর কেউ নেই তুমি ছাড়া। আমার এই পৃথিবী অন্ধকার তোমাকে ছাড়া। তবে কেনো আমার কাছে লুকিয়ে গেলে?
আমাকে কথা দাও শালুক, আর কখনো আমার কাছে এরকম কিছু লুকাবে না যা তোমার ক্ষতির কারণ হতে পারে। ”

শালুক কেঁদে ফেললো। ভেবেছিলো ধ্রুব তাকে ভুল বুঝবে,এখন ধ্রুবর কথা শুনে শালুকের সব ভয় কেটে গেলো। ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো শালুক। জীবনে এরকম বুঝার মতো একটা মানুষ থাকলে আর কি লাগে সুখী হতে?

শালুক কথা দিলো আর কখনো কোনো কথা সে লুকিয়ে যাবে না যা তার বিপদের কারণ হতে পারে।
#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই (২৬)

নিজেদের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে হাসনা বেগম অপেক্ষা করতে লাগলেন ভ্যান আসার।জিনিসপত্র তেমন কিছু না।জামাকাপড়, বইখাতা, নিজের কিছু হাড়ি পাতিল।
আদিবা বেগম শক্ত হয়ে বসে আছেন চেয়ারে। হাসনা বেগমের বাড়ি থেকে চলে যাবার সিদ্ধান্ত জানার পর থেকে তার মন ভীষণ উতলা হয়ে আছে।
একবার ছেলের ঘরে গিয়ে অত্যন্ত বিশ্রীভাবে কিছু কথা ও বলে এসেছেন তিনি।কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিসেব করে দেখলেন মেয়ে দুটো কে ভালো রাখতে হলে এর চাইতে উত্তম সিদ্ধান্ত আর কিছু নেই।
আদনানকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইলেই কি আদনান যাবে?
তার যদি লজ্জা থাকতো তবে সে প্রথম দিনে এরকম ঘটনা ঘটানোর পরেই লজ্জায়,অপমানে চলে যেতো বাড়ি থেকে। কিন্তু সে যায় নি কোথাও, গাঁট হয়ে বসে ছিলো।

আর যদি যায় ও এখন বাড়ি ছেড়ে, তবুও কতোদিন? ২ মাস,৩ মাস,৪মাস,১ বছর…..
সেই তো বাড়িতে সে আসবেই।তখনও যদি ওর স্বভাব ভালো না হয়?
একই বাড়িতে থাকলে ও যদি আবারও এরকম প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে কারো কোনো ক্ষতি করে?
শাপলা, শালুককে তিনি নিজের মেয়ের মতো দেখেছেন।আফিফা আর ওদের মধ্যে কখনো বিভেদ করেন নি।
তেমনই ব্যবহার করেছে হাসনা তার ছেলে মেয়েদের সাথে। তিন জা বোনের মতো ছিলেন।কেউ কখনো কারো বাচ্চাকে বাঁকা চোখে দেখে নি।

সেখানে শাপলা শালুকের কোনো ক্ষতি হলে তার কলিজায় গিয়ে লাগবে এটাই স্বাভাবিক। আর এটা স্বাভাবিক বলেই তেমনি হাসনা বেগম আদনানকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কাউকে বলছেন না।
মায়ার বন্ধনের মতো কঠিন কোনো শিকল কি এই দুনিয়ায় আছে আর?

বাজারে একটা চার রুমের বাসা ঠিক করে ফয়েজ সাহেব ভ্যান নিয়ে এলেন বাড়িতে।ভ্যান চালককে সাথে নিয়ে নিজে সবকিছু ভ্যানে তুললেন।
বিদায় বেলায় হাসনা বেগম শাশুড়ী মা’কে জড়িয়ে ধরে বিলাপ শুরু করে দিলেন।কাঁদতে কাঁদতে অচেতন হয়ে গেলেন প্রায়।তারপর হুঁশ ফিরতেই স্বামীকে চিৎকার করে বললেন, “আমি যাবো না। আমি এই সংসার ছেড়ে, আব্বা,আম্মা,ভাবীদের ছেড়ে কোথাও যাবো না। এই বাড়ির প্রতিটি দেয়ালে, প্রতিটি ইটের কণার মধ্যে আমি ভালোবাসার ছবি দেখেছি। আমি এই বাড়ি থেকে কোথাও যাবো না। ”

নুরুল ইসলাম সাহেব পুত্রবধূর সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,”পাগলামি করো না বউ মা।আমাদের সবার জন্য ভালো হবে এটা।আমার নাতনিরা নিরাপদে থাকবে।”

হাসনা বেগম বললেন, “আমি পারবো না আব্বা।আমি মরেই যাবো। একা একা আমি থাকতে পারবো না। রোজ সকালে সবার জন্য নাশতা বানানো, মায়ের সুপারি কেটে দেওয়া, সবাইকে বেড়ে খাওয়ানো, অলস বিকেলে সবাই মিলে গল্প করা।কাজ করা নিয়ে ফরিদার সাথে অভিমান করা,বড় ভাবী রান্নাঘরে দেরিতে আসলে মুখ ফুলিয়ে রাখা,মায়ের জন্য অল্প ঝালে অল্প মশলায় আমি ছাড়া কে রান্না করবে আব্বা?
বড় ভাবীর মাথা ব্যথা শুরু হলে আমি না থাকলে কে তার মাথা মালিশ করে দিবে?
এই যে ফরিদা এতো বড় হয়েছে, এখনো পায়ের নখ সুন্দর করে কাটতে পারে না, আমি না থাকলে কে ওর পায়ের নখ কেটে দিবে সুন্দর করে?
রাত বিরাতে ছেলে মেয়েরা পড়তে বসলে যখন বলবে ছোট চাচীর হাতের নুডলস খাবো,পাস্তা খাবো তখন কে বানিয়ে দিবে ওদের?
বড় ভাবী চুলার পাশে বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না,গরমে তার মাথা ব্যথা করে। ফরিদা এখনো রান্নার লবন চাখতে জানে না,মতির মা তরকারি কাটতে গেলে বছর লাগিয়ে দেয়,আমি না থাকলে তো বড় ভাবীকে সারাক্ষণ চুলার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে,ফরিদা লবণ কম বেশি বুঝবে না।
আমি কিভাবে যাবো আব্বা?আমার যে কতো দায়িত্ব আছে এই বাড়ির সবার প্রতি।
স্বার্থপর মানুষের মতো কিভাবে নিজের সুখ,নিজের ভালো থাকার কথা চিন্তা করে সবাইকে ছেড়ে যাবো আব্বা?
আমার তো আব্বা আম্মা মারা গেছেন, আপনারাই আমার আব্বা আম্মা,আমি যে মন ভরে আব্বা আম্মা বলে ডাকতে পারবো না।নিজের মা’কে মনে পড়লে আম্মার পায়ের পাশে গিয়ে বসে থাকতে পারবো না। আমি এতো কিছুর অভাব সহ্য করতে পারবো না আব্বা।”

কেউ কোনো কথা বলতে পারলো না। সবার কপোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
ফয়েজ আহমেদ স্ত্রীকে কোনোভাবে বুঝাতে পারলেন না।সকালে হাসনা যেসব যুক্তি দেখিয়েছে সব যুক্তি তিনি হাসনাকে দেখালেন,হাসনা তাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে। অবশেষে ভ্যান চালককে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।

আদিবা বেগম হাসনা বেগমকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে আছেন।যেনো ছেড়ে দিলেই হাসনা বেগম হারিয়ে যাবে।
যৌথ পরিবারে থাকা মানুষগুলো জানে শূন্যতা কেমন পীড়াদায়ক। একই সাথে একই ছাদের নিচে যে মানুষের সাথে বছরের পর বছর কাটানো হয়,সেই মানুষটা যখন আলাদা হয়ে যেতে চায় তখন বুকটা ফেটে যায় যন্ত্রণায়।
এক শূন্যতা এসে গ্রাস করে। বুকের ভেতরটা পাথরের মতো ভারী মনে হয়।

শালুকের পরীক্ষা শেষ হবার পর দেখলো মেজো চাচা দাঁড়িয়ে আছে। এই মানুষটা এখন তার শ্বশুর। ভাবতেই শালুকের কেমন লজ্জা লাগছে।
মেজো চাচা শালুকের জন্য আইসক্রিম কিনলেন,চিপস কিনলেন,একটা সেভেন আপ কিনলেন হাফ লিটারের।শালুকের কেমন কান্না চলে এলো। তার পিএসসি, জেএসসি পরীক্ষার সময় একদিন বড় চাচা,একদিন মেজো চাচা,একদিন নিজের বাবা যেতেন তার সাথে। প্রতিদিন হল থেকে বের হলে দেখতো সবাই এটা ওটা হাবিজাবি খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার জন্য।

আজ আবারও শালুকের মনে হলো সে ভীষণ ছোট এখনও। মেজো চাচা শালুককে আগে আইসক্রিম খেতে দিলেন।তারপর দুজনে মিলে গল্প করতে করতে বাড়িতে ফিরলো।চাচার থেকেই শালুক জানতে পারলো তারা বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে না কোথাও।শুনে শালুকের স্বস্তি হলো। শালুক জানে এমনিতে ও সে বাড়িতে বেশিদিন থাকতে পারবে না।বছরে এক আধবার আসবে হয়তো। ধ্রুব আগেই বলে রেখেছে ইন্টারে ঢাকায় ভর্তি করাবে শালুককে।তখন কালেভদ্রে বাড়িতে আসতে পারবে হয়তো।
তার জন্য এভাবে বাড়ি থেকে বাবা মা আলাদা হয়ে যাবে এটা শালুক কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না।
এখন চাচার কথা শুনে সে ভারমুক্ত হলো যেনো।

আদনানের বাবা নুরুল ইসলাম সাহেবকে নিয়ে আদনানের রুমে গেলো। তারপর সোজাসাপ্টা জিজ্ঞেস করলো, “তুই কেনো গতরাতে এরকম কাজ করেছিস তার স্পষ্ট কারণ বল এই মুহুর্তে। তা যদি না বলিস তবে আমি নিজ হাতে তোকে পুলিশের হাতে তুলে দিবো নারী নির্যাতনের মামলা দিয়ে।আমি ভুলে যাবো তুই আমার ছেলে।”

আদিবা বেগম নিজেই স্বামীকে বলেছেন ছেলেকে এই কথা বলতে, হয় সে তার উউদ্দেশ্য পরিষ্কার করে বলবে আর নয়তো তিনি ছেলেকে জেলে পাঠিয়ে দিবেন।
নিজের ছেলে বলে বারবার তার অপরাধ ক্ষমা করে দিলে আল্লাহর কাছে তিনি সবচেয়ে বড় অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন।
শালুকের জায়গায় যদি আফিফা থাকতো তখন কি তিনি চুপ করে সহ্য করতে পারতেন?হাসনার জায়গায় তিনি থাকলে কিছুতেই কি মুখ বুঁজে সহ্য করতে পারতেন?
পারতেন না কিছুতে।

বাবা আর দাদার কথাকে আদনান তেমন গুরুত্ব দিলো না। আদিবা বেগম নিজে থানায় গেলেন শালুককে নিয়ে। সন্ধ্যা বেলায় পুলিশ এলো একটা জীপে করে। ১০ মিনিটের মধ্যে আদনানকে ধরে নিয়ে গেলো। শালুকের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আদনান কেমন ভরসাহীন চোখে শালুকের দিকে তাকালো। সেই চোখে হয়তো মিশে ছিলো হতাশা,না পাওয়া,ক্ষোভ,প্রতিহিংসা।

আদনানকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এতে যেনো কারো কোনো সমস্যা নেই। সবাই কেমন রিল্যাক্স মুডে আছে।বিশেষ করে বড় চাচী যেনো একেবারে নির্ভার আজ।
অন্য দিনের চাইতে আজকে তাকে বেশ প্রফুল্ল লাগছে।

সবাই মিলে চা খেলো,ঝালমুড়ি খেলো।এরপর রাতের রান্না বসাতে গেলো তিন জা মিলে।
শালুক পড়তে বসলো। একটু আগে ধ্রুবর সাথে কথা বলেছে।ধ্রুবকে সব জানিয়েছে শালুক,ধ্রুব সব শুনে বললো, “অন্তত তোমার পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত যাতে থানায় আটকে রাখে।তাহলেই আমি নিশ্চিন্ত। ”

নিশাকে পড়াতে যাওয়ার সময় ধ্রুব কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে নিলো।আজ যদি নিশা আগের দিনের মতো করে তবে ধ্রুব আজকেই টিউশনি ছেড়ে দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো। টাকার মায়া করে নিজেদের সম্পর্কের মধ্যে ধ্রুব তৃতীয় ব্যক্তির আগমন কিছুতেই সহ্য করবে না।না হয় খুব অভাবে দিন কাটাবে স্বামী স্ত্রী দুজনে তবুও যেই কারণে নিজেদের সম্পর্কে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে সেই রিস্ক ধ্রুব নিবে না।

নিশা আজও আগেই এসে বসে আছে। ধ্রুব গিয়ে চেয়ারে বসলো। তারপর হিসাববিজ্ঞান বই বের করে নিশাকে গম্ভীরমুখে বললো, “এই অংকটা করো।গতকাল একটা করিয়েছি এটার মতোই।”

নিশা ড্রয়ার থেকে একটা বক্স বের করলো।তারপর ধ্রুবর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, “এটা আপনার জন্য। ”

ধ্রুব রাগী স্বরে জিজ্ঞেস করলো, “কি এটা?”

নিশা মাথানিচু করে বললো, “একটা ফোন।আমার বাবা পাঠিয়েছেন আপনার জন্য। ”

ধ্রুব নিশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, “তোমার বাবা কি আমাকে দেখেছেন কখনো? আমাকে চেনেন তিনি?”

নিশা ভয় পেয়ে গেলো। তারপর বললো, “চেনেন তো,আম্মু তো বলেছেন আপনার কথা বাবাকে।”

ধ্রুব জিজ্ঞেস করলো, “আমার জন্য ফোন উনি কেনো পাঠাবেন?”

নিশা বললো, “আপনার ফোনটা তো বাটন ফোন, তাই পাঠিয়েছেন। ”

ধ্রুব জিজ্ঞেস করলো, “আমার বাটন ফোন সেটা তোমার বাবা কিভাবে জানেন?”

নিশা ঘামতে লাগলো। ধ্রুব তাকে এতো প্রশ্ন করবে সে বুঝে নি।এটা মূলত তার জন্য পাঠিয়েছে, সে ধ্রুবর হাতে বাটন ফোন দেখে ঠিক করে রেখেছে এই ফোনটা ধ্রুবকে গিফট করবে।সে দিচ্ছে বললে নিশ্চয় ধ্রুব নিবে না নিশা জানে।তাই বাবার কথা বললো।

ধ্রুবর প্রশ্ন শুনে নিশা বললো, “আম্মু বলেছে বাবাকে।”

ধ্রুব সাথে সাথে নিশার মা’কে ডাকতে লাগলেন। নিশার মা আফসানা বেগম উদ্বিগ্ন মুখে জিজ্ঞেস করলেন,'”কি হয়েছে স্যার?”

ধ্রুব হেসে জিজ্ঞেস করলো, “এটা নিশার ফোন না আন্টি? ”

আফসানা বেগম বললেন, “হ্যাঁ স্যার,গত পরশু পাঠিয়েছে ওর বাবা ওর জন্য।ও গতমাসে ওর বাবাকে বলেছিলো ওর জন্য একটা ফোন দিতে।”

নিশা ভয়ে চমকে উঠলো। তড়িঘড়ি করে বললো, “কি বলছো আম্মু,এটা তো তুমি বলেছিলে বাবাকে স্যারের জন্য একটা ফোন পাঠাতে, স্যারের হাতে একটা বাটন ফোন দেখে। ”

আফসানা বেগম হতভম্ব হয়ে গেলেন।বুঝতে পারলেন মেয়ে কোনো গড়বড় করেছে তাই আমতা আমতা করে বললেন,”না মানে,হ্যাঁ। আমি বলেছিলাম আসলে।আপনি নিন না ফোনটা।”

ধ্রুব হেসে ফেললো। নিশার মা যে মিথ্যা বলছে তা সে স্পষ্ট বুঝতে পারলো। হেসে বললো, “দেখুন আন্টি,আমি এখানে নিশাকে ফ্রী পড়াচ্ছি না।পড়ানোর বিনিময়ে বেতন নিচ্ছি।আমার যা আছে তাতেই আমি সন্তুষ্ট। আমার বাটন ফোনেই চলে,এন্ড্রয়েড ফোনের যেদিন প্রয়োজন মনে হবে সেদিন আমি নিজেই কিনে নিবো।কারো অনুগ্রহ আমার কখনোই সহ্য হয় না।আমার যা আছে তাই আমার জন্য যথেষ্ট।
আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত আন্টি।এই ফোনটা আমি নিতে পারছি না।আর আরেকটা কথা, আমি আগামীকাল থেকে আর আসবো না নিশাকে পড়াতে।আপনি প্লিজ অন্য টিচার দেখবেন ওর জন্য। আমি এখন আসছি।আসসালামু আলাইকুম। ”

নিশা,নিশার মা কিছু বুঝে উঠার আগেই ধ্রুব বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

রাস্তায় এসে ধ্রুব স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। তারপর হঠাৎ করেই শালুককে কল দিলো।
শালুক হ্যালো বলতেই ধ্রুব বললো,”আমি তোমাকে ভালোবাসি শালুক,আমি তোমাকে ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি।আজীবন আমি তোমাকে ভালোবাসবো শালুক।তুমি সারাজীবন আমার হয়ে থেকো।আমি প্রমাণ করে দিবো এক নারীতে আবদ্ধ থাকে যে পুরুষ সেই পুরুষের চাইতে সুখী আর কেউ নেই।
আমি তোমাকে ভীষণরকম ভালোবাসি। ”

তারপর শালুককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো।
আনন্দে শালুকের দুচোখ টলমল করতে লাগলো। মনে হলো এই পৃথিবীতে সে সবচেয়ে সুখী মেয়ে,যার এরকম একটা স্বামী আছে যে তাকে ভীষণ ভালোবাসে।

চলবে…..
রাজিয়া রহমান
চলবে…….

রাজিয়া রহমান
চলবে……

রাজিয়া রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here