#শুধু_তুই
#পর্ব_৪
#মাসুদ_রানা_তাসিন।
কলি : কবিতা আবৃত্তি করলে অসাধারণ কবির নাম কি।
ফারহা : তো মনে পড়ে না। শুনেছি একবার কুহুল আপির কাছে। তখন থেকেই গাঁথা হয়েছে মনের মানসপটে।
বলতে বলতে উঠে দাড়াতেই অজ্ঞান হয়ে গেল ফারহা।
কলি চিল্লিয়ে পুরো বাড়ি এক করে ফেলল।
মুহুর্তের মধ্যেই পুরো বাড়ি এক হয়ে গেছে।
ইতোমধ্যে ডাক্তার ডেকেছে ফারহার শাশুড়ি। ইত্তেহাদ কে ফোন দেওয়া হয়েছে।
ডাক্তার শুধু বলল মা আপনি চিন্তা করবেন না। ভাবী সুস্থ আছেন, আর ইত্তেহাদ আমার সাথে বাইরে আয় কথা আছে। ইত্তেহাদ ডাক্তারের পিছু পিছু বেরিয়ে আসল।
ডাক্তার : আচ্ছা ইত্তেহাদ আমি তো তোকে চিনতে পারছি না।
ইত্তেহাদ : কেন কি হয়েছে, তুই হঠাৎ এমন করে বলছিস কেন।
ডাক্তার : শোন ইত্তেহাদ যে চলে গেছে, তার আশা ছেড়ে দে। যে আছে তাকে নিয়ে বাঁচতে চেষ্টা কর। আর তুই এত নির্দয় পাষাণ কেমনে হলি।
ইত্তেহাদ : আমি তো আগাগোড়া কিছু বুঝতে পারছি না। নিশ্চয়ই ও প্রেগন্যান্ট, অন্য কারো বাচ্চা আমার ঘাড়ে চাপাতে চায়।
ডাক্তার : তুই যা ভাবছিস তা নয়। পিছুটান বাদ দে, আর নির্দয়ভাবে মারিস না মেয়েটাকে। বাচ্চা মেয়ে বুঝিয়ে বলিস, তাহলেই বুঝতে পারবে। শেষে একটা কথাই বলবো পিছুটান ছেড়ে দে।
ইত্তেহাদ নিশ্চুপ হয়ে গেল। ডাক্তার চলে গেল। ইত্তেহাদ ফারহার কাছে গেল।
ইত্তেহাদ ঘুমন্ত ফারহার মুখ পানে চেয়ে আছে। কি নিষ্পাপ চেহারা, মায়াবী চোখ। ইত্তেহাদ কেমন করে অমানুষের মত মারতে পারল। ইত্তেহাদ ফারহার পাশে শুয়ে পড়ল।
ফারহা পাশ ফিরে জড়িয়ে ধরল।
ইত্তেহাদ ও জড়িয়ে বাহুডোরে আবদ্ধ করল। অবশেষে ইত্তেহাদ ডুবে গেল অতীতের ছেঁড়া খাতায়।
পারিবারিক সম্মতিতে ইত্তেহাদের সাথে বিয়ে ঠিক হয় কুহুলের। সম্পর্কে সে ফারহার চাচাতো বোন।
ইত্তেহাদ খুব এক্সাইটেড বিয়ে নিয়ে। ছোট থেকে পছন্দ করত কুহুল কে। এই বিষয়ে ফারহা জানতো পুরোপুরি।
তবে কুহুল এই বিষয়ে কিছুই জানত না। বিয়ে ঠিক করেছে, সেটাও জানতে পারে বিয়ের দুই দিন আগে।
ইত্তেহাদের সাথে কথা বলার জন্য সবার কাছে বলে। কিন্তু ইত্তেহাদের সাথে কোন ভাবেই কথা বলতে পারে না।
ইত্তেহাদ শপিং, গয়না, ফুল, ডেকোরেশন নিয়ে ব্যস্ত। চারদিকে প্রচুর পরিমাণে কাজ একা ছেলে তাই সবদিক সামাল দিতে হয়। তার উপর বাবা প্রেসারের রোগী।
আবার উত্তেজনা অনুভব করছে, ছোট্ট থেকে যাকে ভালবাসে। তাকে খুব শ্রীঘ্রই আপন করে পাবে। তাই তো খুশি মনে কাজ করে চলেছে।
কিন্তু বিধাতার সৃষ্টির নির্মম পরিহাস অপেক্ষা করছিল। ইত্তেহাদের জন্য যা ইত্তেহাদ ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এল। কাল বিয়ে, দুই বাড়িতেই চরম সাজসজ্জা। চারদিকে আলোর রসনাই, লাল নীল হলুদ সবুজ ও কমলা বাতির ঝকঝকে আলো।
সকাল বেলা হলুদ হল দুই বাড়িতে। দুই বাড়িতে যেন আনন্দের বন্যা বইছে।
সন্ধ্যা বেলায় বরপক্ষ চলে এসেছে, ইত্তেহাদরা সবাই মিলে এসেছে।
মোহর পড়ানো হবে ,তাই আগে রেজিষ্ট্রি করার জন্য সাইন আনতে গিয়ে দেখে। কুহুল ঘরের কোথাও নেই। ফারহা তো ইত্তেহাদরা আসার সাথে সাথেই বেরিয়ে এসেছে। ঘরে ছিল কুহুল ও ওর মামাতো বোন। সেই নিয়ে চলে গেছে কুহুল কে লোক চক্ষুর আড়ালে।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগলো না। সবাই যে যার মতো মন্তব্য করে চলে গেল।
ইত্তেহাদ রাগের চোটে উঠে চলে গেল। তারপর হঠাৎ ইত্তেহাদের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সবাই সেখানে ছুটে যায়। ফারহা চাচির উদ্দেশ্যে বলে আপু রাজি ছিল না। আমাকে বললে আমি ভাইয়া কে বারণ করে দিতাম।
তোমাদের জন্য দুই পরিবারের চুড়ান্ত অপমান হল। ফারহার বয়স সবে চৌদ্দ। বাবা মায়ের সাথে সেও চলে গেল হাসপাতালে।
ইত্তেহাদের বাবা সেদিন ফারহাকে কাছে ডেকে বলেছিল। মা ছেলের বিয়ে দেখে যেতে পারলাম না। তবে তোর যেদিন আঠারো বছর পূর্তি হবে। সেইদিন তুই আমার ইত্তেহাদ কে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করবে। না হলে ইত্তেহাদ যে জীবনে বিয়ে করবে না।
ফারহা না ভেবে কথা দিয়ে দেয়। ইত্তেহাদ কে ডেকে এমন ওয়াদা করে নেয়। তার কিছুক্ষণ পরে তিনি মারা যান। তারপর থেকে ইত্তেহাদ কেমন যেন হয়ে যায়।
ফারহার আঠারো বছর এক দিন সেদিন বিয়ে করে। এজন্য বিয়ের প্রতি যে অবিশ্বাস ইত্তেহাদের।
ফারহার। নড়াচড়া তে অতীত থেকে বের হয়ে গেল ইত্তেহাদ।
ইত্তেহাদ : কি হয়েছে ঘুমিয়ে পড় এখানে।
ফারহা : রান্না বাকি আছে, ছেড়ে দেন আমি রান্না ঘরে যাব।
ইত্তেহাদ : চুপ বেশি কথা বলা পছন্দ নয় আমার। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে নিচে যেতে হবে না। কলি রান্না করে নেবে।
ফারহা : না আমি করব রান্না।
ইত্তেহাদ : চুপ নয়তো তুলে আছাড় মেরে দেব। অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে যেতে হবে না।
ফারহা : ঠিক আছে, তাহলে আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাব।
ইত্তেহাদ : আচ্ছা ঠিক আছে, ঘুমাও।
ফারহা ঘুমিয়ে পড়ল আবার ঔষধের রেশ কাটেনি। ইত্তেহাদ ও ঘুমিয়ে পড়ল।
দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর ইত্তেহাদের মা দেখতে আসল ফারহাকে। এসে দেখে ছেলের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে ফারহা। ইত্তেহাদ ঘুমিয়েছে তাই না ডেকে চলে গেল নিচে।
বারবার আঁচলে মুখ মুছছে ইত্তেহাদের মা। তা দেখে কলি বললো।
কলি : মা কি হয়েছে, কেন কান্না করছ।
মা : এটা দুঃখের কান্না নয় রে মা। এটা আমার সুখের কান্না। তোর ভাই স্বাভাবিক ভাবে ফিরছে মা।
কলি : মা বাবা এটা বুঝতে পেরেই এমন ওয়াদা করিয়েছিল মনে হয়।
হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। কলি দরজা খুলে দিল। একজন কে দেখে সালাম দিল । কলি এই লোকটিকে দেখে অবাক।
চলবে,,,,,,