শুধু তুই ২ ❤️ পর্ব -০৫+৬

#শুধু_তুই
—–(সিজন২)
#পর্বঃ০৫
#Rifat_Amin

আমি প্রহরভাইয়ের দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই উনি ফট করে চোখ খুললেন। ক্লান্ত স্বরে বললেন,

‘ হা করে কি দেখছিস? এভাবে পাগলের মতো দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই। আমি চলে যাচ্ছি রুম থেকে। ‘

উনি হঠাৎ চোখ খুলে এমন কথা বলায় খানিকটা ভরকে গেলাম আমি। নিজেকে স্থির করে বললাম,

‘ আমি আম্মিকে ডেকে দিচ্ছি প্রহরভাই। আপনি আমার রুমেই থাকেন। আপনার শরীরে অনেক জ্বর। ‘

কথাটা শোনামাত্র উনি কঠোর দৃষ্টিতে তাকালেন। বিছানা থেকে নিজেকে উঠিয়ে আমার একদম সামনে এসে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রইলেন। মাথা থেকে টুপিটা খুলে বললেন,

‘ আম্মিকে ডাকবি কেন? কারো ঘুম হয়েছে রাতে? ‘

প্রহরভাই খানিকটা রাগের বশেই কথাটা বললেন আমায়। অথচ আমি রাগের কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না। কিছু কিছু মানুষ থাকে, যাদের মাথায় রাগ সবসময় স্টোক করা থাকে। এবং যখন তখন তারা রাগ সরবরাহ করার ক্ষমতা রাখে। আমি আর কথা বাড়ালাম না। উনি আস্তে আস্তে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। উনি রুম থেকে চলে যাবার পর আমি রুমে কিছুক্ষণ পায়চারি করলাম। আবার ঘুমানোর চেষ্টা চালালাম। কিন্তু ঘুমারাণীর আর ঘুম আসলো না। হঠাৎ মনে হলো একটু প্রহরভাইয়ের রুম থেকে ঘুরে আসা যাক। শত্রু হলেও তো উনি মানুষ। একটু দেখি কেমন আছে, না আছে! ঠিক তখনই আমার ফোন বেজে উঠলো। এই ভোর ভোর আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে দেখে খানিকটা অবাক’ই হলাম। ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম,

‘ কেমন আছো ডিয়ার? শুনলাম তোমার আজন্ম প্রেমিক প্রহর খান নাকি দেশে এসেছে! বেশ ভালো। ‘

আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ফোনের ওপাশে কে রয়েছে! কিন্তু আমার সম্পর্কে এতকিছু জানলো কিভাবে উনি? আমি জিজ্ঞাসু কন্ঠে বললাম,

‘ কে আপনি? আর এত সকালে ফোন’ই বা দিয়েছেন কেনো? ‘

ওপাশের মানুষটা বিকৃতস্বরে হেসে বললো,

‘এত তারাতারি সব ভুলে গেলেন মিস? আস্তে আস্তে সব শেষ করে দেবো আমি। প্রথমেই শেষ করবো প্রহরের সব থেকে কাছের মানুষগুলোকে। যাদের ছাড়া প্রহর নিজের অস্তিত্ব কখনো চিন্তাও করেনি। খুব শীঘ্রই তোমাদের ধ্বংসের প্রহর শুরু হয়ে যাচ্ছে মিস। হা-হা-হা’

এত সকাল সকাল প্রহরভাইয়ের কান্ডে এমনিতেই মন খারাপ আর রাগ জমা রয়েছে! সেখানে এই অপরিচিত মানুষের কথাটায় আমার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলতে শুরু করলাম,

‘ কে ভাই তুই? মাথা আমার এমনিতেই গরম আছে। আবার সকাল সকাল ফোন দিয়ে মাথাটা আরো গরম করিস না প্লিজ? এতই যখন আমার ক্ষতি করার শখ তো করে দেখা না। কুয়োর ব্যাঙ্গের মতো ভয় দেখাচ্ছিস কেন? ‘

রাগের মাথায় যা মাথায় আসলো সব বলে দিলাম। সকাল সকাল ঢং দেখাতে ফোন করেছে হু! আর কোনো জবাব দিলেন না ওপাশের লোকটা। শুধু মুচকি হাসলেন বোধহয়। আমি ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে নিজেও বিছানায় ঝাঁপিয়ে পরলাম৷ ঘুম দরকার ভীষণ।

—–

ভোররাত চারটার দিকে ঘুমিয়েও সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পরলো প্রেম। রেডিওতে আজ একটু দরকারি কাজ আছে। যদিও আজ কোনো শো নেই। যদি পারি ম্যানেজার’কে বলে জবটাও ছেড়ে দিবো। আজকাল কোনো কিছুই যেনো ভালো লাগছে না।
প্রেম রেডি হয়ে প্রহর ভিলার গেটের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইলো। সে কখনো বাসার গাড়ি বা পার্সোনাল বাইক গাড়ি ইউজ করে রেডিওতে যায় না। সপ্তাহে ৩ দিন তাকে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা রিক্সা রিজার্ভ করা থাকে। সেই রিক্সায় করে যাওয়ার মধ্যে আলাদা একটা অনুভূতি বিরাজ করে। সকালের মিষ্টি হাওয়ায় মনটা বেশ ফুরফুরে হয়৷ আজ একটু লেট’ই যেনো করছেন উনি। গতকাল ফোন করার পর তো বললো আসতে পারবে। প্রহর ফোন করার জন্য ডায়াল করবে তার আগেই সেই রিক্সাটা নজরে পরলো তার। কিছুদূর রিক্সারা আগাতেই প্রেম একটু অবাক না হয়ে পারলো না। রিক্সায় বসে আছে সারা। এই সকাল সকাল ওর পাগলামো’টা বেশ বিরক্ত করলো প্রেমকে। রিক্সাটা কাছে আসতেই প্রেম জিজ্ঞেস করলো,

‘আজ এত লেট করলা কেন মামা? ‘

রিক্সাওয়ালা মুচকি হেসে বললো,

‘আপায় কইলো আপনার লগে নাকি জরুরী কথা আছে। তাই উনারে নিয়ে আসান লাগলো। ‘

প্রেম আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ সারার সাথে বসে পড়লো। রিক্সা তাঁর আপন গতিতে চলছে। সারা এতক্ষণ চুপচাপ ছিলো। প্রেমকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে সে মৌনতা কাটিয়ে বললো,

‘ আমার দিকে তাকাচ্ছো না যে? আর কতটা কষ্ট ভোগ করতে হবে আমায় বলতে পারো? ‘

প্রেম সারার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো। কোনো কৃত্রিম প্রসাধনী ছাড়াই এই সকাল সকাল এসেছে সারা। কপালে ছোট্ট কালো টিপ। চোখের নিচে নিদ্রাহীন রাতের প্রমাণস্বরুপ কালো দাগ। ফর্সা ত্বকে কোমল সূর্যের কিরণ পড়তেই তা লালচে আভা ধারণ করলো। আনমোনে হেসে উঠলো প্রেম। ছোট্টকরে একটা শ্বাস ফেলে বললো,

‘ রাতে ঘুমাওনি? ‘

‘ ঘুমাই তো প্রতিরাতেই। শুধু শান্তির ঘুম হয় না। এভাবেই আস্তে আস্তে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি আমি’

বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সারা। এই মানুষটাকেই দেখার জন্য ভোররাতে উঠে বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে সে। আর কত পাগলামী করবে? ভেবে পায়না সারা।
প্রেম আবারো শান্তদৃষ্টিতে সারার পানে চাইলো। প্রেম তার ডানহাত দিয়ে সারার বাম হাতে ছুঁতেই কেঁপে উঠলো সারা। এই প্রথম বুঝি প্রেম তার হাত ধরলো। সে তো বন্ধু ভেবে কখনো হাতটা পর্যন্ত ধরেনি। প্রেম স্বাভাবিক স্বরে বললো,

‘ আমি তোমাকে বিয়ে করলেই কি তুমি আমার কাছে চিরদিন সুখে থাকবে? তুমি হয়তো তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে পাবে। কিন্তু সে তোমায় কখনো ভালোবাসতে পারবে না। ‘

সারা অবাক হয়ে গেলো৷ সে যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সারা তার বাম হাতের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমি সত্যি আমায় বিয়ে করবে? ‘

——

ঐশীর ডাকে যখন আমার ঘুম ভাঙ্গলো, তখন সকাল দশটা ছুঁই ছুঁই। অথচ ১০ঃ৩০ এ কলেজে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে। ঐশী বারবার ডাকছে আমায়। আমি তড়িৎগতিতে উঠে বললাম,

‘ তুই আমায় আগে ডাকতে পারলি না? এত লেট করে কেউ ডাকে? এখন রেডি হবো কখন আর যাবোই বা কখন?’

ঐশী ধুম করে আমার পিঠে একটা কি’ল বসিয়ে দিয়ে বললো,

‘ সেই সকাল আটটা থেকে ডাকছি। অথচ কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়েই আছিস। উঠার নাম গন্ধ নেই। আর এখন এই কথা বলছিস ‘

আমি বামহাত দিয়ে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে সন্দিহান কন্ঠে বললাম,

‘ তুই মিথ্যা বলছিস। ‘

‘হ ভালো হইছে। এবার প্লিজ ফ্রেস হয়ে আয়। ‘

আমি আর কথা না বলে সোজা বাথরুমে দৌড় লাগালাম। আজ ক্লাস মিস করলে নির্ঘাত ফেইল করিয়ে দিবে স্যার। এমনিতেই আমাদের প্রতি সেই ক্ষেপে আছেন প্রতিটা স্যার। আমি খুব তারাতারি রেডি হয়ে ড্রইংরুমে এসেই দেখলাম ঐশী নিশ্চিন্ত মনে ফোন টিপে চলেছে। আমিও এবার ওর পিঠে ঠাস করে একটা কি’ল বসিয়ে রিভেঞ্জ নিলাম। অতঃপর বললাম,

‘ দেরী হয়ে যাচ্ছে। চল। ‘

ঐশী কাঁদো কাঁদো হয়ে আমার দিকে তাকালো। ফোনটা ব্যাগে পুরে বললো,

‘ নাস্তা করে নে। আমি করে ফেলেছি। তারপর যাই’

‘সময় নেই। তারাতাড়ি চল। রিক্সা পাবো না আবার। ‘

ঠিক তখনি ফাতেমা মামি সামনে এসে হাজির। আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভর্ৎসনা করে বললো,

‘ খেয়ে গেলে কি সমস্যা? অন্যের বাড়িতে বসে বসে তো ভালোই গিলছো। এখন ঢং দেখাতে হবে নাকি? ‘

সাথে সাথেই চুপসে গেলো আমার মুখশ্রী। আমি আস্তে করে ঐশীর হাত টেনে বললাম,

‘চল না যাই। ‘

ঐশীও এই মামিকে ভীষণ ভয় পায়। কড়া কড়া কথার জবাব দিতে পারে না। শুধু মাত্র প্রহরভাই আছে, যিনি চোখে চোখ রেখে সবার সাথে কথা বলতে পারে। ঐশী চুপচাপ উঠতেই প্রহরভাই উপর তলা থেকে তীব্র স্বরে বললো,

‘দাড়া দুজন। আমি তোদের কলেজে পৌঁছে দিচ্ছি। ‘

প্রহরভাইয়ের কন্ঠে কোনো কথা শুনলেই আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে কেনো জানি না। এই কথাতেও বিষম খেলাম। উনার কি জ্বর কমে গেলো? উনি যখন আমাদের সামনে আসলেন তখন ফট করে আমি জিজ্ঞেস করলাম,

‘আপনার জ্বর কমেছে? ‘

আমার কথাটা শোনামাত্র প্রহরভাই ভ্রু কুঁচকে চাইলেন। ঐশী আমার হাতে চিমটি দিয়ে বললো,

‘তুই কিভাবে জানলি ভাইয়ার জ্বর এসেছিলো? ‘

ঐশীর কথায় থতমত খেয়ে গেলাম। আড়চোখে একবার প্রহরভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি এখনো একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। এদিকে ফাতেমা মামি প্রহরভাইয়ের সামনে এসে বললো,

‘জ্বর কমেছে বাবু? শুকিয়ে গেছো অনেক। ‘

প্রহরভাই আমার থেকে চোখ সড়িয়ে মুচকি হেসে বললেন,

‘ একজনের অভাবে ভীষণ শুকিয়ে যাছি মামি। তাকে পেলে একদম ভেজা হয়ে যাবো। ‘

মামি বুঝলেন কি বুঝলেন না। ঐশী এদিকে বারবার আমার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জানতে চাচ্ছে প্রহরভাইয়ের সাথে আমার রাতে কথা হয়েছিলো নাকি। আমি কোনো জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলাম। মামি আবার বললেন,

‘ নিশানকে ওভাবে মে’রে কি তুমি ঠিক করছো? এই অপয়া মেয়েটিই হয়তো আমার ছেলেটাকে বস করে নিজের রুমে নিয়ে গিয়েছিলো’

মামি আমার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথা বলতেই প্রহরভাইয়ের চোখ মুখ শক্ত হতে শুরু করলো। কোনো কঠিন জবাব দেয়ার আগেই বাসার মুল ফটকে উপস্থিত হলো সারার ভাই সানভি।

‘ সারাকে তারাতাড়ি বের করে দিন। নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে ‘ (সানভি)
#শুধু_তুই
—-(সিজন০২)
#পর্বঃ০৬
#Rifat_Amin

‘সারা এখন কোথায়? আমি জানি সে এখনেই আছে। ‘ (সানভি)

সারা’র বড়ভাই সানভির কথায় ভ্রু কুঁচকে গেলো প্রহরভাইয়ের। আমি মাথা নিচু অবস্থায় চারদিকটা চোরাচোখে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। ইতোমধ্যে ড্রইংরুম থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ’রা সবাই উপরে চলে গেছে। প্রহরভাই তার সিল্কি চুলগুলো উপরে উঠিয়ে দিতেই বললো,

‘ভেতরে আসো সানভি। তোমার সাথে জরুরী কথা আছে। ‘(প্রহর)

প্রহরভাই কথাটা বলেই সোফার দিকে হাঁটতে লাগলেন। ঐশী সহাস্য কন্ঠে বললো,

‘আমরা তাহলে চলে যাই ভাইয়া! লেট হয়ে যাচ্ছে। ‘ (ঐশী)

প্রহরভাই না চাইতেও বললেন,

‘আচ্ছা যা। ছুটির আগে আমায় টেক্সট করিস! ‘

কথাটা শোনামাত্র ঐশী আমাকে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে নিয়ে এলো। আসার আগে সানভির সাথে একপ্রকার ধাক্কা লেগেই যেতো! ভাগ্যিস মানসম্মান খোয়াতে হলো না। বাসার বাইরে এসেই ঐশীর পিঠে কিল বসিয়ে বললাম,

‘ পাগল নাকি তুই? এখনি কি হতো বলতো? ‘ (আমি)

ঐশী ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

‘কিছুই হতো না। শুধু একটা রোমান্টিক সিন দেখতে পেতাম শুধু!’ (ঐশী)

আমি ওর ফালতু কথার জবাব না দিয়ে একটা রিক্সা দাঁড় করালাম। নিজে রিক্সায় উঠে ঐশীকে টেনে রিক্সায় উঠালাম। এতক্ষণ সে ফোন টিপছিলেন রিক্সায় উঠা বাদ দিয়ে। ওরে রিক্সায় তুলে বললাম,

‘বাসার ভেতরে থাকলে নিজেকে কেন জানি ভদ্র ভদ্র লাগে, একদম নিষ্পাপ। কিন্তু এই জেলখানা থেকে বের হলেই শরীরে একধরনের শক্তি তৈরী হয়। এই শক্তির বলে মা’রপিট করতে ইচ্ছে করে। তোরে মা’রি? (আমি)

ঐশী আঁড়চোখে তাকালো। আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললো,

‘মামা একটু পার্কের দিকে যান তো। ‘ (ঐশী)

আমি ওর কথায় ভ্রু কুঁচকে ফেললাম। পার্কে কেনো যাবো আমরা? বয়ফ্রেন্ড থাকলে না’হয় একটা কথা ছিলো। এই সিঙ্গেল জীবনে এরকম রোমান্টিক প্লেসে গিয়ে নিরীহ মনটাকে কষ্ট দিবো নাকি? আমি ঐশীর দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললাম,

‘ ক্লাসের সময় যে চলে যাচ্ছে! সেটা মাথায় আছে ? এখন আবার পার্কে যাবো কেন? ‘ (আমি)

‘আমরা যাচ্ছি মানে? আমরা আবার কোথায় যাচ্ছি! যাবো তো শুধু আমি। তুই আমার হয়ে আজকের ক্লাসটা করে দে। যত খুশি ফুচকা খাওয়াবো। ‘ (ঐশী)

ঐশীর কথায় চটে গেলাম আমি। রিক্সা চলাকালীন ওর মাথায় গাট্টা মেরে বললাম,

‘ তুই যাবি না কেনো? প্রহরভাইকে কিন্তু সব বলে দেবো। আর আমার জানামতে তোর তো কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই। তাহলে! ‘ (আমি)

এদিকে আমার নড়াচড়ায় রিক্সাওয়ালা মামা পেছনে ঘুরে বললো,

‘আস্তে নরেন আপা ‘

ওনার কথায় আমি বিষম খেলাম। সাথে সাথেই ভদ্র মেয়ের মতো বসে একটা ফোলকা হাসি দিলাম। ঐশী ওর খোলা চুলগুলো পিছনে উড়িয়ে দিয়ে বললো,

‘বয়ফ্রেন্ড হয়নি বলে কি সামনে হবে না নাকি? দেখা করতে যাচ্ছি দোস্ত। ‘(ঐশী)

কথাটা বলেই ঐশী মনে হয় লজ্জায় ম’রে গেলো। অথচ এতক্ষণ যে নির্লজ্জের মতো এত কথাগুলো বললো! আমি ওর কথায় হতাশ হলাম। কন্ঠে দুঃখ দুঃখ ভাব এনে বললাম,

‘ ক্লাস সেম হলে হবে কি? আমি তোর বয়সে একদিন হলেও বড়। বড় বোনের সামনে এগুলা বলতে লজ্জা করলো না? যাই হোক, নাম কি সেই রাজপুত্রের? (আমি)

‘ পুলক চৌধুরী। সেই কিউট দোস্ত। আমরা আজ সেকেন্ড টাইম মিট করতে যাচ্ছি৷ তোকে সাথে নিলাম কারণ, তুই আমাদের পাহারা দিবি চেনা পরিচিত আশেপাশে কেউ আছে কিনা । ‘ (ঐশী)

ঐশীর কথায় নিজেকে এই পৃথিবীর একমাত্র সিঙ্গেল মেয়ে মনে হলো। হায়রে জীবন! রিক্সাওয়ালা মামা দেখলাম মাঝে মাঝে পিছনে ঘুরে তাকাচ্ছে।

—-

‘ভাবতেছি রেডিওর জবটা ছেড়ে দিবো৷ তুমি কি বলো সারা?’ (প্রেম)

রেডিও স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলো প্রেম। সারা আনমনে চেয়ে আছে প্রেমের পানে। আজ কিছু হয়নি তো প্রেমের? প্রেম তো নিজের সিদ্ধান্ত সবসময় নিজেই নেয়। কাউকে জানানোর প্রয়োজনবোধ করে না। তাহলে আজ আমাকে জিজ্ঞেস করছে কেনো? সারা প্রেমের পেশীবহুল বামহাতটা শক্ত করে ধরে বললো,

‘তুমি যা চাও তাই হবে। ‘ (সারা)

প্রেম দুর্বোধ্য হাসলো। গত ছ’মাস ধরে সে এই রেডিওতে কাজ করে। যা যা জানার দরকার ছিলো, সব জানা হয়েছে। এমনকি ম্যানেজারের সাথেও খুব ভালো সম্পর্ক তৈরী করা হয়ে গেছে। এখন শুধু টিভি চ্যানেলে প্রবেশ করার অনুমতি’টা পেলেই হয়।
প্রেম ম্যানেজারের কেবিনের সামনে গিয়ে দরজাটা সামন্য খুলে বললো,

‘ স্যার আসবো? ‘ (প্রেম)

রেডিও ম্যানেজার হলেন মোঃ ইফতেখার উদ্দিন। বয়স মোটামুটি পঞ্চাশের উপরে। ভীষণ গম্ভীর মানুষ। তবে উনার চঞ্চল দুটি চোখ এবং সুতীক্ষ্ণ মেধাশক্তি আছে। যা এই বয়সে উনার সফলতার প্রধান অস্ত্র। পুরো রেডিওটার সবকিছুর মালিক তিনি। এবং সাথে একটা টিভি চ্যানেলেও নিজের কর্তৃত্ব আছে। প্রেম’কে দেখেই তিনি মুচকি হেসে বললেন,

‘গুড মর্নিং ইয়োং ম্যান। কাম হেয়ার। ‘ (ইফতেখার)

প্রেম সারাকে নিয়ে ভীতরে প্রবেশ করলো। স্যারের ইশারা পেয়ে প্রেম, সারা দুজনেই বসে পড়লো। অতঃপর প্রেম নম্রভাবে বললো,

‘ স্যার একটা জরুরী কথা বলতে এলাম। সেটা হচ্ছে, আমি গত ছ’মাস ধরে এখানে কাজ করছি। এবং আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ আমার ‘ গুড মর্নিং’ শো’টা অনেক জনপ্রিয়। আমার ইচ্ছে ছিলো আরো অনেক দিন যদি এই রেডিওতে কাজ করবো। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে আমায় এই জবটা ছেরে দিতে হচ্ছে। আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম যাতে এই শো’টা অন্তত চালু রাখতে পারি। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। তাই নিরুপায় হয়ে আপনার কাছে এলাম। ‘

ইফতেখার উদ্দিন ভ্রুজোড়া কুঁচকে ফেললেন। ডান হাতের সাহায্যে চোখের মোটা ফ্রেমের চশমাটা খুলতে খুলতে বললেন,

‘ তোমার কি সেলারিতে সমস্যা হচ্ছে প্রেম? সমস্যা নেই, তোমার ইচ্ছে মতো সেলারি নিও। তবুও কাজটা তুমি ছেড়ে না। তুমি তো জানোই, আমাদের রেডিও কতটা তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ এবং নির্ভরশীল। ‘ (ইফতেখার)

প্রেম হতাশ হলো। সে জানে, কখনই ইফতেখার উদ্দিন তাকে ছাড়বে না। একবার এই রত্ন ফসকে গেলেই বিরাট লস। এভাবে হবে না দেখে প্রেম তার দ্বিতীয় টেকনিক ব্যাবহার করলো,

‘ ছিঃ ছিঃ স্যার। সেলারিতে কোনো সমস্যা নাই। ইভেন এই কাজটা আমি আমার শখের বসেই করি। এবং আমার নিজেরি যথেষ্ট ভালো লাগে। তবে আমাকে কাজটা ছাড়তেই হচ্ছে! ‘ (প্রেম)

এদিকে দু’জনের কথোপকথনে সারা ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে। আর প্রেমের প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করছে। প্রিয় মানুষের চেনাপরিচিত কন্ঠস্বরও যেনো একমুঠো প্রশান্তি ছড়ায়। অনেকটা সময় এমন হয় যে দেখেও এতটা প্রশান্তি পাওয়া যায় না। যতটা না তার কন্ঠে থাকে। সারা তাকিয়ে আছে প্রেমের থুতনি আর গলার দিকে। প্রেমের গলায় হালকা উঁচু হয়ে থাকা কণ্ঠনালির নড়াচড়া দেখে সারার হৃৎস্পন্দন থেমে যাওয়ার জোগার। সে সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে ফেললো।
এদিকে ইফতেখার উদ্দিন যথেষ্ট ফ্যাসাদে পড়ে গেলো। যাই হয়ে যাক না কেনো! প্রেমকে ছেড়ে দেয়া যাবে না। তিনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘আমি আমার চ্যানেলে একটা শো’র ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি। তুমি ওখানেও কাজ করলে, আবার এখানেও কাজ করলে। তখন ওটা তোমার প্লাস পয়েন্ট হয়ে গেলো। আর আমি নিজে থেকে তোমায় রিকুয়েষ্ট করছি! তুমি থেকে যাও। ‘

প্রেম তার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটা পেয়ে মনে মনে অট্টহাসি হাসলো। তার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার আরো একটা ধাপ অতিক্রম করলো সে। কিন্তু এখনি যদি হ্যাঁ বলে দেই তাহলে সন্দেহের চোখে পড়ে যাবো! প্রেম মাথা নিচু করে বললো,

‘ আপনি যখন এত করে বলছেন, আমি বিষয়টা ভেবে দেখবো। তবে কথা দিতে পারছি না ‘ (প্রেম)

ইফতেখার উদ্দিন খুশি হলেন। চশমাটা চোখে এটে দিয়ে বললেন,

‘কোনো ভাবাভাবি নয় প্রেম! তুমি জয়েন করছো এটাই ফাইনাল। আমি আর কিছু শুনতে চাই না।’ (ইফতেখার)

অতঃপর তিনি সারার দিকে তাকালেন। শান্তচোখে সারাকে পর্যবেক্ষণ করে প্রেমকে বললেন,

‘ কি ইয়োং ম্যান? গার্লফ্রেন্ড নাকি? ‘ (ইফতেখার)

‘ আমাকে দেখে কি এমন মনে হয়? তবে আপনারা পছন্দ করলে বিয়ে করে নিতে পারি ‘ (প্রেম)

ইফতেখার উদ্দিন হো-হা করে হেসে উঠলেন। তাঁর বুঝার আর বাকি রইলো না! তিনি বললেন,

‘ চ্যানেলের শো-টা দুজন মিলে করতে পারো প্রেম। আই থিংক, এটা আরো বেশী হিট হবে । তো তোমার নাম কি মামনি?’ (ইফতেখার)

সারার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ইফতেখার উদ্দিন। সারা নতমুখে জবাব দিলো,

‘ আমার নাম আরশী জাহান সারা। আমার বাবা সাজিদ হোসেন। বিজনেস ম্যান! আপনি বোধহয় চিনেন? আমি আপনাকে আমাদের বাসায় দেখেছিলাম একবার। (সারা)

ইফতেখার উদ্দিন দাঁড়িয়ে পড়লেন। তার প্রিয় বন্ধুর মেয়ে যে সামনেই বসে তা কখনো ভাবেননি তিনি। এদিকে প্রেম ভ্রু কুঁচকে ফেললো। ইফতেখার উদ্দিনের সাথে কি সারার বাবার কোনো সম্পর্ক আছে? তাহলে তো দেখছি সামনের পথটা আরো সহজ হচ্ছে । সারা, প্রেম রেডিও স্টেশন থেকে বেড়িয়ে তাঁদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রিক্সা ধরলো৷ যদিও গন্তব্য অজানা!
তার আগে প্রেম একটা টেক্সট করলো তাঁর বোনের নাম্বারে,

‘ তুই বরাবরই বলছিলি বাবা-মায়ের হ’ত্যাকারী নেই। কিন্তু আমার কাছে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে রশ্নি। চিন্তা করিস না, তোর ভাইয়ের কোনো ক্ষতি হবে না ‘

চলবে?

(আগামী পর্ব থেকে প্রহর-রশ্নির ডিউরেশনটা বাড়িয়ে দেবো। আজকের দিনটা স্কিপ করে যান। হ্যাপি রিডিং 🌼)
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here