#শুধু_তুই
—(সিজন২)
পর্বঃ২১
#Rifat_Amin
বিলাসবহুল হোটেলটার সামনে বিস্তীর্ন মহাসড়ক। তার সাথেই সারি সারি ল্যাম্পপোস্ট দন্ডায়মান। তাঁরা আলো দিচ্ছে। শুভ্র মোলায়েম আলোয় চারপাশটা সিগ্ধ, অদ্ভুতুরে ঠেকছে। ব্যস্ত শহরের ছোট বড় গাড়িগুলো আপন গতিতে আপন গন্তব্যে ছুঁটছে। ঘড়িতে এখন রাত ন’টা বাজে। একটা লম্বা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে, ঢাকা যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠার বন্দোবস্ত হচ্ছে। প্রেম, ফারহান, মিল্লাতভাই সবাই এসে হাজির।
সাথে করে যেসব গার্ডস আনানো হয়েছিলো। তাঁরাও ঢাকা যাওয়ার জন্য গাড়িতে বসে আছে। সব মিলিয়ে তিনটা গাড়ি।
প্রহরভাই উনার নিজস্ব গাড়িতে উঠে প্রেমকে বললো,
‘ রশ্নিকে নিয়ে তোরা পেছনের গাড়িতে ওঠ। একটু একটা থাকতে চাই। ‘ (প্রহর)
কথাটা শোনামাত্র আমার ক্ষুদ্র মনটা ভেঙ্গে গেলো। যদিও উনার সাথে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। কিন্তু খারাপ লাগলো কেনো জানি না। আর কোনো কথাবার্তা না বলে পেছনের গাড়িতে উঠে পড়লাম। আমিও কম যাই না। হু!উনি আমাকে নিজের গাড়িতে না নিলে নিবে না। সমস্যা কি?
প্রেমও আমার দেখাদেখি গাড়িতে উঠে পড়লো। গাড়ি ছেড়ে দেয়ার পর প্রেম বললো,
‘ কেমন কাটলো দুটো দিন? (প্রেম)
আমি অনুভূতিহীন স্বরে বললাম,
‘ জানি না। তবে তোর সাথে ঢাকা যেতে পারলেই ভালো হতো।’ (সারা)
‘ তুই কখন কি বলিস, কিছুই বুঝি না। ‘ (প্রেম)
‘ প্রহর তোমাকে কোনো প্রোপোজাল দিলো না?’ (মিল্লাত)
পেছন থেকে মিল্লাতভাই হঠাৎ এমন কথা বলায় চমকে উঠলাম। পেছনে ফিরে দেখলাম ফারহান কানে গেডফোন ঢুকিয়ে মনোযোগ দিয়ে গান শুনছে। দুনিয়া সম্পর্কে এখন ওর কোনো ধারণা নেই। মিল্লাত ভাই প্রশ্ন করে জবাবের আশায় চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে আছে। আমি উল্টো প্রশ্ন করলাম,
‘ কিসের প্রোপোজাল ভাইয়া ‘ (আমি)
‘ তার মানে করে নাই। ধুর! এই শালাকে দিয়ে কিছুই হবে না। ‘ (মিল্লাত)
‘ আপনি কি ঐশীকে বিয়ে করতে চান? ‘ (আমি)
উনি হতভম্ব হয়ে বললেন,
‘ আরে না! এগ্লা কি বলো তুমি ‘ ( মিল্লাত)
‘ তাহলে উনাকে শালা বললেন কেনো? ‘ (আমি)
সাথে সাথেই হো-হা করে হেসে উঠলো প্রেম। সাথে মিল্লাতভাইও যুক্ত হলেন। আমার হাসি পেলেও হাসতে পারলাম না। আসলে, আমরা অনেক সময় নিজে হাজার কষ্ট বুকে চেপে অন্যকে হাসাতে জানি। অথচ নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করলে একটা উত্তরই পাওয়া যায়। ” মন খারাপ “।
—
‘ আমাকে না বলে তুমি চিটাগং কেনো চলে গেছিলা, বলবা? অনেক মিস করেছি তোমায়’ (সারা)
সারার জবাবে বালিশ থেকে মাথা তুলে তাকালো প্রেম। কিছুক্ষণ আগে ঢাকা ফিরেছে সে। ফ্রেস হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে একটু ঘুমাতে চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু সারার প্রশ্নে আর ঘুমাতে ইচ্ছে হলো না। কোলবালিশটা মাথায় দিয়ে বললো,
‘ প্রহরভাই হঠাৎ ডাকলো। তাই গিয়েছিলাম। তোমাকে জানানোর সময় পাইনি। ‘ (প্রেম)
সারা ক্ষুণ্ন হয়ে বিছানায় ঢপ করে বসে পড়লো। একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছে সে। ফজরের আযান দেয়ায় দুজন নামাজ পরে নিয়েছে তারাতাড়ি। উদ্দেশ্য প্রেম একটু রেস্ট করবে। সারা ওর কাছাকাছি গিয়ে প্রেমের চুলগুলো বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
‘ আমায় মিস করোনি? ‘ (সারা)
‘ না। মাত্র তো একটা দিন হলো। ‘ (প্রেম)
সারা জবাব না দিয়ে হাতবুলিয়ে দেয়া বন্ধ করে দিলো। প্রেম বুঝতে পেরে মাথা ঘুরিয়ে বললো, ‘ ঘুমাবে না? ‘
সারা মাথা নাড়ালো। যার অর্থ ঘুম আসছে না। অতঃপর বললো,
‘এতক্ষণ তো জেগে ছিলে। ঘুম আসে না? আচ্ছা আমি মাথা টিপে দিচ্ছি নাহয়। তুমি ঘুমিয়ে পরো। ‘ (সারা)
‘ আরে নাহহ! একটু ঘুমিয়েছি তো। আমার আবার একবার ঘুম ভেঙে গেলে ঘুমাতে ইচ্ছে করে না। ‘ (প্রেম)
সারার ইচ্ছে হলো প্রেমকে একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসবে। এখনো তেমন আলো ফুটেনি। ভালো লাগবে। কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছে না। মানুষটা অনেক টায়ার্ড হয়তো। প্রেম বিষয়টা লক্ষ্য করতেই বললো,
‘কিছু বলতে চাও? ‘ (প্রেম)
‘ না। কিছু না। ‘ (সারা)
প্রেম হঠাৎ লক্ষ্য করলো সারা শাড়ি পড়েছে। বাসন্তী রঙের শাড়ি। শাড়িতে অনেক সুন্দরই লাগছে মেয়েটাকে। একদম পাক্কা বউ বউ সাজ। সেজেগুজেও বসে আছে দেখছি। আমার ঢাকা ফিরার আনন্দে এই সাজ নাকি? মেয়েটা এত ভালোবাসে কেনো আমাকে। আমি তো কাউকে ভালোবাসতে পারি না। তবে মেয়েটার প্রতি মায়া জন্মেছে। সেই গত তিনবছর ধরে ও আমার পিছনে পড়েছিলো। কত অপমান করেছি, ইগনোর করেছি। তবুও আমায় ছাড়ে নি। বিয়ের পরও এমন কষ্ট সহ্য করবে ও? এদিকে প্রেম সারার দিকে চেয়ে আছে দেখে সারা ভীষণ লজ্জা পেলো। এতক্ষণে ওর মনটা একটু শান্তি পেলো। প্রহরভাইয়ের আম্মুকে বলে কত কষ্ট করে শাড়িটদ পড়লাম। এত সাজলাম। ফাইনালি আমি সার্থক। সারা নিজে লজ্জা পেয়ে প্রেমকেও লজ্জায় ফেলাতে বললো,
‘ কি দেখো অমন? ‘ (সারা)
প্রেম ফিক করে হেসে বললো,
‘ একটা পেত্নীকে দেখি। এমন করে কেউ সাজে? তোমাকে তো এমনেই ভীষণ সুন্দর লাগে। ‘ (প্রেম)
সারা মোটেও মন খারাপ করলো না। বরং একটা বালিশ নিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়লো। চুলগুলোকে পিছনে সড়িয়ে প্রেমের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বললো, ‘ এত কি দেখো। ‘। এতক্ষণ প্রেম সারার তাকিয়েই ছিলো। ইচ্ছে করে মেয়েটাকে লজ্জা ফেলতে আনন্দ হচ্ছে। প্রেম কোনো কথা না বলে ওকে কোলবালিশ বানিয়ে ফেললো। অতঃপর বললো,
‘ কোলবালিশ ছাড়া ঘুম আসে না আমার। এমন একটা ফ্রি জলজ্যান্ত কোলবালিশ থাকতে কি তুলার কোলবালিশ লাগে? তুৃমি তো তুলার থেকেও নরম। ‘ (প্রেম)
লজ্জায় সারার ম’রে যেতে ইচ্ছে করলো। শরীরের উপর মনে হচ্ছে কোনো পাহাড় তুলে দেয়া হয়েছে। কি ওজন মাইরি! সারা মাথা তুলে লজ্জামিশ্রিত স্বরে বললো,
‘ পা সরিয়ে ফেলো। কি ওজন। ‘ (সারা)
প্রেম সাথে সাথে পা সড়িয়ে ফেললো। অতঃপর লাইটটা অফ করে দিয়ে কম্বলের নিচে দুজনকে ঢেকে ফেললো। এখন শেষরাতের সময় বলে একটু ঠান্ডা পড়ছে। মনে হচ্ছে প্রেম রাগ করেছে। কিন্তু সারার খারাপ লাগলো ভীষণ। একটু নাহয় পা তুলেই দিয়েছে। তাই বলে এভাবে বললাম কেন? কষ্ট করে থাকলেই হতো। অতঃপর সারা সাহস করে প্রেমের দিকে এগিয়ে শুলো। ওর বেশীবহুল বাম হাতটা জড়িয়ে ধরে শান্তির ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হলো। প্রেমের শরীর থেকে এক অদ্ভুত নেশালো গন্ধ আসছে। এই গন্ধটা অনেক ভালোলাগে সারার। এর আগেও গাড়িতে অথবা রিক্সায় থাকাকালীন গন্ধটা পেয়েছিলো সে।
—–
‘ ভাইয়া কি তোকে প্রোপোজ করেছিলো? ‘ (ঐশী)
আশ্চর্য! সবাই এই উদ্ভব প্রশ্নটা করছে কেন? উনি আমাকে পছন্দ করতে যাবে নাকি যে প্রপোজ করবে? যদিও ভাগ্যক্রমে এখন বিয়ে হয়েছে। আমি ওর কথার জবাবে মাথায় চা’টি মে’রে বললাম,
‘ কি এসব আবোলতাবোল বলছিস? মাথা ঠিক আছে? নাকি ঐ পুলক ব্যাটা সব খেয়ে ফেলেছে। ‘ (আমি)
ঐশী থামলো না। উপরন্তু পুলকভাইয়ার কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো,
‘ কেন? প্রহরভাই যে তোকে পছন্দ করে, জানিস না? আমার তো মনে হয় তোমরা তলে তলে টেম্পু চালাচ্ছো ‘ (ঐশী)
‘ কে পছন্দ করবে আমায়? প্রহরভাই? কোনো ভোরবেলা যদি দেখি সূর্য পশ্চিমদিকে উঠছে। তাহলে বিশ্বাস করবো। বিয়েটা তো আকষ্মিক হয়েছে। আমরা কেউ মেনে নেইনি। ‘ (আমি)
ঐশী সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বললো,
‘ কিহহহহ! তোরা বিয়ে করেছিস? আর আমরা জানলামই না । দাঁড়া আম্মুকে সব জানাচ্ছি। ‘ (ঐশী)
মুখ ফসকে কোন অঘটন ঘটালাম খোদা। এদিকে কথাটা বলেই ঐশী দৌড়ে দিয়েছে। এখন আম্মিকে জানালে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। নিশ্চই আমাকে বেয়াদব মেয়ে ভাববে! আমি আর সময় নষ্ট না করে ওর পিছু পিছু ছুট লাগালাম। এতক্ষণ আমরা ছাদের মধ্যে ছিলো। মহুর্তেই ও ছাদ থেকে উধাও। আমি দৌড়ে ছাদ পার হয়েছি কি হই নাই। হঠাৎ সামনে একটা দেয়াল হাজির হওয়ায় ধাক্কা খেয়ে ছাদের মধ্যে পরে গেলাম। কোমরটা বোধহয় ভেঙেই গেলো! কোনো মতে পিছনে ফিরে দেখলাম প্রহরভাই। এত লম্বা কেনো উনি? আমি তো ভাবলাম কোনো দেয়াল বোধহয়। কিন্তু এখন সময় নষ্ট করা চলবে না। নিজের কোমরের কথা ভুলে গিয়ে উনাকে বললাম,
‘ ঐশী জেনে গেছে যে আমাদের বিয়ে হয়েছে। তারাতাড়ি আটকান ওকে। ‘ (আমি)
উনি কানেই নিলেন না কথাটা। বরং ঠাই দাঁড়িয়ে আমার কষ্ট দেখছেন। এদিকে উনার সাথে হঠাৎ ধাক্কা খাওয়ায় নাকে ভীষণ ব্যাথা পেয়েছি। কোথায় উনি আমাকে যে একটু রোমান্টিক স্টাইলে কোলে তুলবেন। তাও করলেন না। শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঢং দেখলেন। আমি কষ্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে দেখলাম বাম হাতটা ছিলে গেছে। তবুও সেসব তোয়াক্কা না করে ছুট লাগাবো সাথে সাথেই আমার হাত টেনে ধরলেন উনি। আশ্চর্য বাংলা সিনেমার নাটক করছেন নাকি?
‘ এই শয়তান। বাচ্চাদের মতো দৌড়াদৌড়ি করছিস কেন? ‘ (প্রহর)
আমি ওনার হাত সড়িয়ে নিতে চাইলেও পারলাম না। বরং ধমক খেয়ে চুপসে গেলাম। হায় আল্লাহ! এতক্ষণে ঐশী বোধহয় বলেই দিয়েছে বাসার সবাইকে। উনি আমার হাতটা চেক করে বললেন,
‘ হাতটা ছিলে গিয়েছে। তবুও তেজ কমেনি, ‘ (প্রহর)
‘ তাতে আপনার কি হ্যা? আপনি ঐ সুন্দর নার্স মেয়েটার পিক দেখুন। ‘ (আমি)
উনি ডেভিলমার্কা হাসি দিয়ে ছিলে যাওয়া যায়গায় ফুঁ দিয়ে দিলেন। সাথে সাথেই শিরশির করে উঠলো শরীর। অতঃপর বললেন,
‘ আমারি তো সব ‘ (প্রহর)
#শুধু_তুই
—(সিজন২)
#পর্বঃ২২
#Rifat_Amin
‘ভাইয়া আমাদের না জানিয়েই বিয়েটা করে নিয়েছে আম্মু। তুমি কি কিছু বলবা? আমার রাগ হচ্ছে ভীষণ। (ঐশী)
ঐশী বারবার বলার পরেও আম্মি মাথা তুলে তাকাচ্ছেন না। একদৃষ্টিতে শুধু মেঝের দিকেই তাকিয়ে আছেন। চারপাশে থমথমে অবস্থা! কেউ কোনো কথাবার্তা বলছেন না। ড্রইংরুমে এখন আম্মি, প্রহরভাই, ঐশী, প্রেয়সী বসে আছেন। আঙ্কেল এখনো অফিসে আছেন। আর প্রেয়সী প্রহরভাইয়ের কোলে বসে, আপন মনে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো বুলিয়ে যাচ্ছে, খেলছে, হ-য-ব-র-ল বলছে। আর সেটাই প্রহরভাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে এখানে কিছুই হচ্ছে না। একদম ডন্ট কেয়ার মুডে বসে আছেন। কিন্তু আমি তো শান্ত থাকতে পারছি না। দুঃশ্চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে। তার মানে আম্মি আমাকে মেনে নিবে না? ধুর! মেনে না নিলেই বা কি! আমি তো উনাকে পছন্দ করি না। কিন্তু তবুও মন মানছে না। বিয়ে নামক অদ্ভুত বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকে আমার জীবনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
আমি আমার রুমের দরজা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিলাম এতক্ষণ। তখনি মসজিদে মাগরিবের আযান শোনা গেলো। ইতোমধ্যে যে সন্ধ্যা হয়েছে তা বুঝতেই পারিনি! হঠাৎ আম্মি গম্ভীর স্বরে বললেন,
‘ যাও। সবাই নামাজ পড়তে যাও। আর বাবু, তুই নামাজ পরে একটু আমার রুমে আসিস তো ‘ (আম্মি)
সবাইকে নামাজ পড়তে বলে সোফা থেকে উঠে পরলেন আম্মি। কিন্তু আমার অন্তর আত্মা শুকিয়ে গেলো। আম্মি কেনো ডাকলেন প্রহরভাইকে! প্রহরভাই বললেন,
‘ আমার একটা কাজ আছে আম্মু। পরে আসবো ‘ (প্রহর)
‘ আসতে হবে না তোকে। ‘ (আম্মি)
প্রহরভাই মুচকি হেসে আম্মিকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘ তাহলে আসবো। একশো’বার আসবো। ‘ (প্রহর)
তবুও আম্মির মুখে হাসি ফুটলো না। উনি আম্মিকে ছেড়ে দিয়ে যখন উপরে উঠছিলেন। সাথে সাথেই রুমে ঢুকে পরলাম আমি। দেখে ফেললে আবার পঁচাবে! কিন্তু যা হবার তা হয়েই গেলো। উনি আমার রুমে ঢুকে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘ পড়াশোনা নাই তোর? সামনে যে পরীক্ষা ভুলে গেছিস? বই খাতা নিয়ে পরতে বস। আমি পড়াবো ‘ (প্রহর)
আমি শুকনো ঢোক গিলে পিছনে ফিরে বললাম,
‘ আমার শরীরটা ভালো লাগছে না ভাইয়া। আরেকদিন পড়বো ‘ (আমি)
নেহাত কমন অযুহাত দিলাম। উনি আমার কথা বিশ্বাস না করে হঠাৎ এগিয়ে আসলেন। আমি সামান্য পিছিয়ে যেতেই উনি আমার অযুহাতকে ছুঁড়ে ফেলে নিজের হাত ছুঁয়ে দিলেন কপালে। মহুর্তেই কেঁপে উঠলাম আমি। এবার কিন্তু উনার ছোঁয়ায় কেঁপে উঠিনি। বরং উনার গম্ভীর ধমক খেয়ে চুপসে গেলাম। আহত দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘মিথ্যা বলা শিখে গেছিস তাহলে। তোর শরীর তো ঠিক আছে। এই মিথ্যা বলার কারণে আজ সারারাত তুই পড়বি আর আমি পাহারা দেবো। এটাই তোর শাস্তি। ‘ (প্রহর)
আমি এতক্ষণ চোখ বন্ধ করেই ছিলাম। ভয়ে উনার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। কি ধাঁরালো দৃষ্টি! যেনো দৃষ্টিতেই ঘায়েল করে দিবে। অতঃপর ভয়ে ভয়ে চোখ খুলতেই দেখলাম উনি আমার একদম নিকটে। মুখের উপর উনার দৃষ্টি অবলোকন করতেই অন্তর-আত্মা শুকিয়ে গেলো। আজ উনি চোখ সড়ালেন না। আমি যেনো হতবুদ্ধিতে পরে গেলাম! কি করবো। এখনো নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছেন উনি। উনার তপ্ত নিশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পড়তেই পেছনে সরে পরলাম আমি। উনার প্রতি রাগ হচ্ছিল প্রচুর। রাগটা আরো বাড়লো। যখন দেখলাম উনি শুভ্র পান্জাবী পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এই সাদা রঙটা আমার পছন্দ না এটা কেনো বুঝেন না উনি? যদিও সব কালারেই উনাকে সুন্দর লাগে। তাহলে এই কালারটাই কেনো বারবার! আমি নিজের কৌতুহল আর রাগ দমিয়ে রাখতে না পেরে স্পষ্ট বললাম,
‘ এই সাদা পান্জাবী, সাদা শার্ট, টি-শার্ট কি আপনাকে জাদু করেছে? আমার কিন্তু একদম পছন্দ হচ্ছে না। একদিন দুদিন হলে তাও কথা ছিলো। আচ্ছা আপনি বলুন তো, দেশে ফিরার পর থেকে অন্য কোনো কালারে আপনাকে কখনো দেখেছি? ফর্সা মানুষের এত হোয়াইট কালার মানায় না। একটু ইউনিক কালার চয়েস করবেন। ‘ (আমি)
উনি কথাটা শোনামাত্র উনার সব থেকে শয়তানিমার্কা হাসিটা দিলেন। অতঃপর রুম থেকে বের হতে নিলেই শান্তিতে চোখ বুজলাম আমি। কিন্তু শান্তিটা ছুটে গেলো যখন দেখলাম উনি রুম থেকে বের হবার বদলে দরজা বন্ধ করছেন। বিষয়টা লক্ষ্য করতেই আমার দুটো চোখ রসগোল্লার মতো বড়বড় হয়ে গেলো। আমি ছুটে গিয়ে উনার হাত ধরে বললাম,
‘ এই আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন? খুলুন বলছি। আমি কিন্তু চিৎকার করবো’ (আমি)
উনি কথা শুনলেন না। বরং পেছনে ঘুরে আমাকে দরজার সাথে চেপে ধরে বললেন,
‘ এমন ভাব করছিস যেনো একরুমে থাকিস নি কখনো। তখন তো কিছু মনে হয়নি ‘ (প্রহর)
উনার পেশীবহুল দুটো হাত আমার একদম কাঁধ বরাবর। এদিকে উনার ব্যবহারে সন্দেহ হচ্ছে আমার। আমি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম,
‘ দরজা খুলুন প্রহরভাই। আমি আম্মির কাছে যাবো। আপনি খুব খারাপ। ‘ (আমি)
‘ মা’র’বো একটা থা’প্প’ড়। আম্মির কাছে যাবি মানে! জামাই রুমে কি কি করে সব গিয়ে বলে দিবি তাইনা! আচ্ছা ওসব বাদ। কি যেনো বলছিলি? হোয়াইট কালারে আমায় ভালো দেখায় না? আসলে আমাকে অনেক সুন্দর দেখায়। তুই হিংসে করিস জন্য পড়তে মানা করছিস। কিন্তু তুই যত মানা করবি। আমি তত বেশী বেশী পড়বো। তুই তো আমার মতো এত ফর্সা হতে পারবি না। তাই এমন হিংসে করিস৷ মেয়েরা হলো হিংসার জাত। এদের থেকে দূরে থাকাই উত্তম। তবে তোর কথাই না’হয় মানবো একদিন। সেই দিনটা হবে তোর আমার স্বপ্নের দিন। যেখানে #শুধু_তুই থাকবি। আর কেউ না। ‘ (প্রহর)
উনার হু-ম-কি, পিন্চ করে কথা বলা, আর রোমান্টিক কথাবার্তা একসাথে শোনার সৌভাগ্য হলো। এত কথা বলতে পারেন উনি! জানতামই না। উনি কি আমাকে পছন্দ করেন নাকি? ধুর! কিসব ভাবি আমি। তাহলে কি আমার রঙ নিয়ে খোটা দিতেন! আমি ক্ষেপে গিয়ে উনার শক্তপোক্ত হাতদুটো
সড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে বললাম,
‘ দেখুন। আমি আপনার মতো সাদা বিলাই না হলেও যথেষ্ট ফর্সা আছি। আর হতে চাইনা। এখন আমাকে এখান থেকে যেতে দিন প্লিজ। দুঃচরিত্রহীন মানুষ। ‘ (আমি)
‘ এবারের মতো ছেড়ে দিচ্ছি তোকে। এখন বই নিয়ে ফটাফট পড়তে বস। একটু পর পড়াতে আসবো। ‘ (প্রহর)
উনি কথাটা বলেও ছেড়ে দিলেন না আমায়। অতঃপর উনার নিষ্পাপ আকৃতির অভদ্র মুখশ্রী আমার কানের কাছে নিয়ে বললেন,
‘ খুব তারাতারি আসছি। রেডি হয়ে থাক। ‘ (প্রহর)
শুধু নির্লজ্জের মতো এই কথাটা বলেই থেমে থাকলেন না। টুপ করে আমার গলায় চুমু দিয়ে হুট করে আমায় ধাক্কা দিলেন বিছানায়। অতঃপর একপ্রকার দৌড়ে রুম থেকে পালিয়ে গেলেন। এদিকে আমার অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। লজ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে করলো। বিছানায় শুয়ে থাকতেই যেনো হতভম্ব হয়ে যাচ্ছি বারবার। আশ্চর্য! এটা কি হলো? শেষ পর্যন্ত লজ্জায় এই গরমেও কম্বলের নিচে ঢুকে পরলাম। অথচ কম্বলের নিচেও শান্তি নাই। সেই ভয়ংকর দৃশ্যটা বারবার চোখের সামনে ভাসছে। আর আমি তরতর করে ঘামছি। অবশেষে এসিটা অন করতে বাধ্য হলাম। এর পর উনার সামনে কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবো আমি খোদা!
—
‘ আম্মু আসবো? ‘ (প্রহর)
আম্মি তখন নামাজ শেষ করে তসবি গুনছিলেন। প্রহরকে আসতে দেখে আসার অনুমতি দিয়ে আবারো পূর্বের কাজে মনোযোগ দিলেন। প্রহর রুমে ঢুকে বিছানায় ধপ করে গা এলিয়ে দিলেন। অতঃপর একটু আগের ঘটনা মনে করে অবলীলায় বারবার হাসতে লাগলেন। কি অদ্ভুত মেয়েরে বাবা! অবশ্য আমিও কম অদ্ভুত না। একটু আগে যে কাজ করে আসলাম! তাতে মনে হয় ও আর মুখ দেখাতে পারবে না আমাকে। আবারো শব্দ করে হাসলো প্রহর।
‘ পাগলের মতো হাসছিস যে? বিয়ে করে কি মাথার তার ঢিলা হয়ে গেছে ‘ (আম্মি)
আম্মির কথা শোনামাত্র চুপসে গেলো প্রহর। অতঃপর মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বললেন,
‘ আসলে আম্মু, বিয়েটা এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে তো। তাই কাউকে জানাতে পারিনি। ‘ (প্রহর)
আম্মি বিছানায় না বসে সোফায় গিয়ে বসলেন। অতঃপর মন খারাপ করে বললেন,
‘ তাহলে প্রেমের বিয়েটাও এক্সিডেন্টলি হয়েছে? ও কি এই বাড়ির ছেলে না? পর পর দুটো ছেলের বিয়ে হলো। আর আমি মা হয়েও জানতে পারলাম না।’ (আম্মি)
‘ ইয়ে মানে ‘ (প্রহর)
প্রহর নিজেও আম্মিকে যথেষ্ট ভয় পায়। ছোট বেলায় তো আর কম মা’ই’র খায়নি। এখন অবশ্য আগের মতো ভয়টা নেই। আম্মি চুপ করে থাকতেই প্রহর বললেন,
‘ আমি পরের সপ্তাহে নিউইয়র্ক যাচ্ছি আম্মু। এখন প্লিজ মন খারাপ করে থেকো না’ (প্রহর)
‘ আমি তো মন খারাপ করে থাকছি না৷ তুই যে এমন অঘটন ঘটাবি তাতে আমি অবাক হইনি। কিন্তু তোর বাবা? তিনি তো পুরো শক খেয়ে যাবেন এই অবস্থা দেখলে। আর তুই চলে গেলে তোর বউয়ের কি হবে? ‘ (আম্মি)
‘ তোমরা যা সিদ্ধান্ত নিবা, তাই হবে। ‘ (প্রহর)
প্রহরভাই গম্ভীর কন্ঠে কথাটা বলতেই আম্মি কঠিন স্বরে বললেন,
‘ তোকে আমি মা’র’বো বাবু। বিয়ে করে বলছিস আমরা যা সিদ্ধান্ত নিবো তাই হবে ‘ (আম্মি)
ঠিক তখনি প্রেয়সী দৌড়ে এসে বললো,
‘ বাবা এচেছে আম্মু। তোমায় দাকে ‘ (প্রেয়সী)
প্রেয়সী আদো আদো কথায় প্রহর রুম থেকে বের হয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললো,
‘ তোর মিষ্টি আপু এখন কি করে সেটা জানাবি। ঠিক আছে? তাহলে চকলেট পাবি। ‘ (প্রহর)
প্রেয়সী আর এক মুহুর্ত দেরী না করে কোল থেকে নেমে দৌড় দিলো মিষ্টি আপুর রুমে। প্রহরের হঠাৎ মনে উঠলো, প্রেয়সীর সাথে একটু একান্ত কথা বলতেই তো ভুলে গেছি।
চলবে?
চলবে?