#শুধু_তুমি
#পর্ব-৪
#Nirzana(Tanima_Anam)
সরবের মা ঘরে ঢুকতেই দেখে সরব বেশ রেগে মেগে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। আর নুসরাত বিছানায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে।
হটাৎ মা কে দেখে থেমে যায়।সরব কিছু বলার আগেই সাফিয়া বেগম বেশ ভার গলায় বলে উঠে….
-নুসরাত কোথাই???
সরব মার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে উঠে
-ঘরেই আছে!!
-চলো
আর কথা না বাড়িয়ে সাফিয়া বেগম সোজা সরবের হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে যান…
ঘরে এসে দেখে নুসরাত বিছানার এক কোনায় পড়ে পড়ে চোখের জল ফেলছে।
নুসরাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে ওনি আবার সরবের দিকে দৃষ্টি দেন
-নুসরাত কাঁদছে কেন???
-(..)
-কি হলো বলো!!
–
সরব কিছু বলার আগেই সরবের মা নুসরাতকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করে….
-আমি হয়তো বুঝতে পারছি তুমি কেন কাঁদছো।তবে তুমি যেই কারণে কাঁদছো সেই কারণটাকেই আমি মুছে দিতে চাইছি!!
সরবের মায়ের কথায় এবার নুসরাত বেশ আগ্রহী হয়ে তাকায়!!
-তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই বুঝে নিয়েছিলাম তুমিই আমার সরবের যোগ্য। তাই আগে পিছে না জেনে সরবের সাথে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম।কিন্তু…..
যাই হোক সরব বিয়েটা নিজের ইচ্ছেই করে নি।আমার সরবকে আমি চিনি নিশ্চয় কোনো কারণ ছিলো তাই করেছে….
নুসরাত আরো আগ্রহী হয়ে সরবের মায়ের কথা শুনতে থাকে এতোক্ষনে কান্না কান্না ভাবটা চলে গেছে চোখে মুখে ফুটে উঠেছে কৌতূহল।
সাফিয়া বেগম আরেকটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করে….
-আমার ছেলের নখের যোগ্যতাও তোমার বোনের নেই।যোগ্যতার কথা না হয় বাদ ই দিলাম তোমার ঐ ডিভোর্সি বোনকে আমি কখনোই আমার ছেলের বউ বলে মানি না!!তুমি তোমার বোনকে নিয়ে যাও।
-আসলে
-দেখো নুসরাত এতো আসল নকল আমি বুঝি না। তুমি তোমার বোনকে নিয়ে যাও না তার পর তোমার বাবা মার সাথে কথা বলে আমি অসম্পূর্ন কাজটা আবার সম্পূর্ন করবো।
যাও নিয়ে যাও তোমার বোনকে…..
কথাগুলো বলে সরবের মা নুসরাতের হাত ধরে নিয়ে যায়।উদ্দেশ্য নূহীর কাছে যাওয়া।
নূহীকে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় করবে সে…..
নুসরাত আর শ্বাশুড়িকে একসাথে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখে নূহী বরফের মতো দাড়িয়ে যায়।এতোক্ষন সে এ পাশ থেকে উপাশ পায়চারী করছিলো।।
নুসরাত নূহীর মুখোমুখি হতেই নূহী মাথা নিচু করে বলে উঠে…
-নুসু আপু আমি জানি তোমরা কি চাইছো।আমি তৈরী আছি চলো আমি বাড়ি যাবো।
নুসরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই নূহী বলে উঠে
-আমি আসার সময় নিজের সাথে কিছুই নিয়ে আসিনি তাই নিয়ে যাওয়ার মতোও কিছু নেই
কথাগুলো বলেই নূহী পা বারায়। হটাৎ পেছন থেকে কেউ একজন তার হাত টেনে ধরে…..
[সরব এতোক্ষন নিরব দর্শকের ন্যায় সবার কথা গুলো শুনছিলো তবে নূহী নুসরাতের সাথে বাড়ি যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই খপ করে নূহী হাতটা ধরে নেয়।
এরকম কান্ডে একদিকে যেমন সবাই অবাক তেমনই অন্য দিকে সরব নিজেও যথেষ্ট অবাক।
তবে সরব সামান্য তম বিচলিত না হয়ে বলতে শুরু করে
-নূহী শরিয়ত বলো আর আইনত বলো দুই ভাবেই আমার স্ত্রী তাই আমি নূহীর দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারি না।নূহী কোথাও যাবে না!!
কথাগুলো বলেই সরব নূহীকে টেনে ঘরে নিয়ে যায়
এদিকে সরবের মা আর নুসরাত দুজনই অবাক হয়ে সেখানে দাড়িয়ে আছে।
সরব সবার সামনে দিয়ে নূহীকে ঘরে নিয়ে গিয়ে দুম করে দরজা বন্ধ করে দেয়।
নুসরাত আর এক মুহূর্তও সেখানে দাড়ায় না।গট গট করে বেরিয়ে যায়।
জীবন তাকে এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে এনে দাড় করিয়েছে যেখানে দাড়িয়ে তার নিজের বোনের জন্য কোনো দয়া বা ভালোবাসা কাজ করছে না কাজ করছে শুধু রাগ অভিমান আর হিংসে…..
তবে নূহীর প্রতি এই হিংসের একমাত্র কারণ সরব।যা আগেও ছিলো আর এখনো আছে…..!!
নিজের মনে মনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নুসরাত হাটা ধরে বাড়ির পথে…..
এদিকে সরব নূহীকে ঘরে এনে দুম করে দরজা বন্ধ করে দেয়।
নূহী অন্য দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে…
গাল বেয়ে পানি পরছে।
-কেন করলেন?
-কি করলাম??
-আমাকে যেতে দিলেন না কেন??
-বাড়িতে গেলে তুমি ভালো থাকবে!!
-আমার ভালো থাকা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না!!আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন তবে প্লিজ আমার জন্য আমার আপুকে কষ্ট দিবেন না।আমার আপু আপনাকে অনেক ভালোবাসে…..আমার জন্য আর কিছুই করতে হবে না
-হেই লিসেন আমি তোমার জন্য কিছুই করি নি একজন মানুষ হিসেবে যাস্ট নিজের দায়িত্ব পালন করেছি।।।
-কিন্তু আমাদের বিয়েটা তো…..
-চুপ….আর একটা কথাও না।।
সরব ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।কেন যেন তার ভেতর ভেতর বেশ অস্থির লাগছে।
এদিকে নূহীও চুপ চাপ বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।
আকাশ পানে তাকিয়ে নিজের মনে মনেই বলতে থাকে
“তুমি ভালো থাকো সরব ভাই খুব ভালো থাকো। আমি কখনো তোমার কাছে কিছু চাই নি আজো চাইবো না।তুমি ভালো থাকো তোমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে।তোমার দয়া আমার চাই না”
চলবে……