#শুধু_তুমি
পর্ব-৫
#Nirzana(Tanima_Anam)
-বাবা সরব আমি তোকে শেষ বারের মতো বলছি এই ডিভোর্সি মেয়েকে আমি কিছুতেই তোর বউ বলে মানছি না মানবো না।হয় তুই তোর এই বউ কে বাড়ি ছাড়া করবি না হয় তুই তোর মাকে সারা জীবনের মতো হারাবি….
নিচ থেকে মায়ের গলা বেশ ভালোই শুনতে পাচ্ছে সরব তবে সে দিকে কোনো মনোযোগ নেই। সরব সমস্ত মনোযোগ দিয়ে দেখছে নূহীকে।
বিছানার এক কোনো গুটিশুটি মরে বসে বসে কাঁদছে সে।এলোমেলো চুলগুলো চোখে মুখে লেপ্টে আছে।নূহীর গাল বেয়ে পড়া চোখের পানিগুলো সরবের কাছে ঝকঝকে মুক্তর মতো লাগছে….
সরব বেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করছে নূহীকে।
কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলে গেছে….নাকটা লালটুকটুকে হয়ে আছে।
সরবের ইচ্ছে করছে নূহী লাল টুকটুকে নাকের মাথায় ছোট্ট করে একটা চুমু একে দিতে।কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই।নূহী যে তাকে তার ধারের কাছে ঘেষতে দিবে না তা সরব খুব ভালোভাবে জানে….
নূহী কন্নার কারণ হলো একটু আগে নূহীর মা নূহীকে ফোন করে বেশ কথা শুনিয়েছে।
সরবের অবহেলা সহ্য করতে না পেরে নুসরাত না কি আত্নহত্যার চেষ্টা করেছে…..তাই মা যেন তার উপর রাগে ফেটে পরছে।
তার উপর সরবের মায়ের এতো তিক্ত কথা।
সব মিলিয়ে নূহী কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না….
কাঁদতে কাঁদতে নূহীর হেচকি উঠে গেছে….
সরব বেশ কিছুক্ষন নূহীর দিকে তাকিয়ে থেকে দুম করে নূহীর কাছে চলে যায় তারপর সরব নূহীর গা ঘেষে বসে পড়ে।
সরব কাছে আসতেই নূহী উঠে যায়…
নূহী উঠতে নিলেই সরব দুহাত দিয়ে নূহীর কোমড় জড়িয়ে ধরে।
নূহী বেশ ছট পট করতে থাকে….।সরব নূহীকে কাছে টেনে কোলে বসিয়ে দেয়।
-সরব ভাই কি করছেন ছাড়ুন আমাকে।।
-আগে কান্না থামা তারপর ছাড়বো।
-ছাড়ুন তো।
-না….
-সরব ভাই…..(চিল্লায়ে)
সরব নূহীকে ছেড়ে দেয়।
নূহী সরবের থেকে দূরে সরে আসে…
-নূহী তুই অনেক দিন পর তোর মুখে সরব ভাই ডাকটা শুনলাম…!!
কথাগুলো বলেই সরব দুম দুম করে বেরিয়ে যায়।
দরজায় গিয়ে হটাৎ পেছন ফিরে নূহীর দিকে তাকায়।ততোক্ষনে নূহীর কান্না একেবারে থেমে গেছে।
সরব নূহীর চোখে চোখ রেখে বলতে শুরু করে
-নূহী আমার জন্য একটু অপেক্ষা করলে কি খুব ক্ষতি হতো??আচ্ছা তুই কি কোনো দিনও বুঝিস নি আমি তোকে…..!!
কথাগুলো বলেই সরব ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।।।
নূহী কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে……!!
অতীতে ডুব দেয় নূহী……!!!
ফ্লাশ ব্যাক…..
তখন নূহীর বয়স সবে পনেরো কি ষোল।পৌষের ছুটিতে খালার বাসায় বেরাতে আসে নূহী। খালাতো ভাই বোনের সাথে নদীতে বেশ শখ করে নদীতে গোসল করতে এসে হটাৎ পায়ে কিছু একটা জড়িয়ে যায়।পা আলগা হতেই স্রোতের টানে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো নূহী।পাড়ে দাড়িয়ে সবাই বেশ চিৎকার চেচামেচি করছিলো তবে সাহস করে কেউই নূহীকে বাঁচাতে এগিয়ে যাচ্ছিলো না কারন নূহী ততোক্ষণে পাকে পড়ে গেছে। তার উপর খর স্রোতা নদী।
পানিতে বেশ কিছুক্ষন হাবুডুবু খাওয়ার পর নূহীর যখন তলিয়ে যাওয়ার যো তখন হটাৎ করে কেউ একজন এসে নূহীকে টেনে ধরে তারপর আর কিছু মনে নেই নূহীর…..
জ্ঞান ফিরার পর নূহীর চোখ যায় চেয়ারপ বসে থাকা ধবধবে পাঞ্জাবী পড়া এক যুবকের দিকে।
হটাৎ অচেনা মুখ দেখে বেশ হকচকিয়ে যায় নূহী।ধরফর করে উঠে সজোরে খালামুনি বলে চিৎকার দিয়ে উঠে নূহী।পাশের ঘর থেকে নূহীর খালা খালু সহ খালাতো ভাই মুহিদ ছুটে আসে নূহীর কাছে।
মুহিদ নূহীকে শান্ত করে পরিচয় করিয়ে দেয় সেই অপরিচিত যুবকের সাথে।
সেই যুবকটি ছিলো মুহিদের বন্ধু।নূহীকে নদী থেকে এই লোকটিই বাচিঁয়েছে…..
নূহী ভাইয়ের কাছে সব যখন জেনে জীব বের করে ছোট্ট করে কামড় দেয়।
তারপর যুবকটির দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছোট্ট করে ধন্যবাদ জানিয়ে দেয়।।।।
নূহীকে বিছানায় সুয়ে দিয়ে সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
বেশ কিছুক্ষন শুয়ে থেকে নূহী গুটি গুটি পায়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে।
বাড়ির করিডোর পেরিয়ে উঠোনে পা রাখতেই দেখে চুলার পাশে খালা বসে বসে ধূপী বানাচ্ছে আর তার পাশে মুহিদ আর মুহিদের বন্ধু বসা।
নূহী মুহিদের কাছে এগিয়ে যায়।নূহীকে দেখে মুহিদ বলে ওঠে
-কি রে শাঁকচুন্নি তোকে না শুয়ে থাকতে বললাম।
-দেখো মুহিদ ভাই তুমি তোমার ডাক্তারি তোমার রোগীদের উপর ফলাও আমার উপর না।হুহ আমি এতো শুয়ে শুয়ে থাকতে পারবো না এখন আমি খালামুনিকে হেল্প করবো।
-ঔ শাকচুন্নি….. যা ঘরে যা এখন চুলার কাছে একদম যাবি না।
-উফ্ মুহিদ ভাই৷৷
মুহিদের পাশে থাকা যুবকটি নূহীকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে….
-তোমার গায়ে হালকা জ্বর এখন আগুনের কাছ যাবে না।আগুনের থেকে দূরে বসো…..
নূহী মুখ বাকিঁয়ে সরে আসতেই সে আবার বলে উঠে…
-আমি তোমাকে আগুনের থেকে দূরে বসতে বলেছি ঘরে বসতে বলিনি।।
নূহী বেশ শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় লোকটির দিকে।তার কি মনে করে বলে উঠে
-আচ্ছা আপনার নাম কি আমি আপনাকে কি বলে ডাকবো
যুবকটি মুচকি হেসে জবাব দেয়
-আমার নাম সরব।তুমি আমায় সরব ভাই বলে ডেকো…..
সেদিনের সেই যুবকটিই ছিলো সরব।
-নূহী…..
হটাৎ মায়ের গলা পেয়ে নূহী বেশ হকচকিয়ে যায়। অতীত থেকে বর্তমানে পা রাখে সে।নূহী দরজার দিকে তাকাতেই দেখে দরজায় নূহীর মা দাড়িয়ে আছে।রক্ত চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
নূহী একটা ঢোক গিলে মায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতেই নূহীর মা সজোড়ে নূহীকে ধাক্কা দেয়।
-খবর দার আমাকে মা বলে ডাকবি না।অপয়া অলক্ষুণে মেয়ে কোথাকার।নিজের সংসার তো করতে পারলি না।দুদিন যেতে না যতে স্বামী ঘার ধাক্কা দিয়ে বার করে দিলো।চরিত্রহীনা মেয়ে কোথাকার নিজের জীবনটা তো শেষ করলি
এখন এসে নিজের বোনের জীবনটাও শেষ করার জন্য……
এতো টুকু বলে বেশ বড় একটা দম নেন নূহীর মা।নূহী শান্ত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
ততোক্ষনে নূহীর শ্বাশুড়ি উপস্থিত হয়।
নূহীর মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে বলত থাকে..
-আপনার এই ছোট মেয়েকে নিয়ে যান।নুসরাত সুস্থ হলে আমি নিজে দাড়িয়ে থেকে সরব আর নুসরাতের বিয়ে দিবো।….যান এই মেয়েকে নিয়ে যান এখান থেকে।
নূহীর মা আর একদন্ড না দাড়িয়ে নূহী টেনে তোলে তারপর কোনো কথা না বলেই নূহীকে টানতে টামতে নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে থাকে।
নূহী মায়ের সাথে যেতে যেতে একবার পেছন ফিরে তাকায় ঘরটার দিকে।এই দুদিনেই যেন এই ঘরটা তার নিজের হয়ে গেছে….।।।একদম মন চাইছে না এই ঘর ছেড়ে যেতে।তবুও যেতে হবে দূরে অনেক দূরে।তার বোনের সংসার থেকে দূরে……
চলবে……
(চেষ্টা করবো।ধন্যবাদ)