##শুধু_তোমারই_জন্য পর্ব ২
#সাবানা খাতুন
কাঁকন বাড়িতে ঢুকতে যাবে তখনই পাশের বাড়ির একজন কাকিমা বলল আরে কাঁকন তুই এখানে তোর বাবা তো হাসপাতালে,কাঁকন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল হাসপাতালে কেন? কাকিমা বলল আরে তোর বাবার হার্ট আ্যটাক হয়ে ছিল আরে ঐ বাড়িতে যে ছেলেটা থাকে না যে কলেজে পড়ে সেই তো হাসপাতালে নিয়ে গেছে।কাঁকন ছুটে যায় হাসপাতালে গিয়ে দেখে অর্নব দাঁড়িয়ে আছে,কাঁকন গিয়ে টেনশনে বলল বাবা কোথায় আর আমাকে জানাননি কেন? একসাথে এত কথা বলতে অর্নব বলল তোমার বাবাকে ডাক্তার দেখছে আর তোমাকে বলার সময় ছিল না।ঠিক সেই সময় ডাক্তার বেরিয়ে এল কাঁকন গিয়ে জিজ্ঞাসা করল ডাক্তার বাবু বাবা কেমন আছে?ডাক্তার বলল চিন্তার কোনো কারন নেই এখন আপাতত সুস্থ আছেন,ঠিক সময়ে আনা হয়েছিল তাই চিকিৎসা হয়েছে কিন্ত খেয়াল রাখবেন আর একটা আ্যটাক এলে উনি কিন্ত বাঁচতে নাও পারেন, thank you ডাঃ বলল কাঁকন,রিশেপ্সনে গিয়ে কাঁকন জানতে পারে অর্নব টাকা দিয়ে দিয়েছে।
অর্নব কে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য ঘুরতেই দেখল সেখানে অর্নব নেই অনেক খুঁজেও কাঁকন অর্নব কে পেল না।পরেরদিন ভার্সিটিতে এসেও অর্নব কে দেখতে পেল না।বাসার সামনে থেকে যাতায়াত করেও অর্নবের দেখা পেল না। কাঁকন কাউকে জিজ্ঞাসা করতেও পারছে না লজ্জায় ।একদিন লজ্জা ভুলে গিয়ে বাসার মালিককে অর্নবের কথা জিজ্ঞাসা করতে বাড়ির মালিক বলল আমি তো জানিনা কোথায় গিয়েছে । প্রত্যেক দিন যেখানে অর্নব আড্ডা দিত সব জায়গায় খুঁজেও পেল না হঠাৎ করে যেন মানুষটা উবে গেছে ।প্রায় ৫ দিন পর কাঁকন অর্নবের দেখা পেল যেন তার বুকে আনন্দের হালকা বাতাস বয়ে গেল ।অর্নব ভার্সিটিতে রকে বসে বন্ধুদের সাথে গানের লড়াই খেলছিল ,কাঁকন গিয়ে গলা ঝাড়া দিয়ে বলল শুনছেন অর্নব শুনেও না শোনার ভান করে গান গাইতে লাগল কাঁকন এবার জোরে চিৎকার করে ডাকল, পাশ থেকে রাহুল চোখ মটকে বলল আরে অর্নব তুই কানে কালা তখন থেকে তোকে ডাকছে শুনতে পাচ্ছিস না? অর্নব ঘাড় ঘুরিয়ে বলল কে ডাকছে দেখে কাঁকন দাঁড়িয়ে ।অর্নব বলল ধন্যবাদের প্রয়োজন নেই হাত তুলে বলল ইটস্ ওকে ।কাঁকন চোখ বড় বড় করে বলল এই ফালতু খবর কে দিল যে আমি আপনাকে ধন্যবাদ দেব ? আপনার টাকা দিতে এসেছি আর আপনি যা করেছেন সেটা আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে তাই করত, হুম,,,, অর্নব আস্তে করে বলল তাই এত জেদ তোমার, সামান্য ধন্যবাদ বলতেও তোমার লজ্জা লাগছে কাঁকন চোখ বড় বড় করে বলল মানে কি বলতে চাইছেন?এইবার অর্নব কাঁকনের মুখের সামনে মুখ নিয়ে আসতেই কাঁকনের হৃদপিন্ডের আওয়াজ শুনতে পেল ,বলল তাহলে চারিদিকে আমার খোঁজ করছিলে কেন? আর আমার বাড়ি মালিকের কাছে আমার এত খবর নিচ্ছিলে কেন?
কাঁকন থতমত খেয়ে বলল. আ…..আমি খোঁ…খোঁজ নিচ্ছিলাম এই ফালতু কথা কে বলল আপনাকে? অর্নব এইবার খুব জোরে হাসল সাথে সাথে তার বন্ধুরাও হেসে উঠল বলল আরে আমিতো বাড়ি গিয়েছিলাম।কিন্ত আমার জাসুস সব জায়গায় আছে বুঝলে ,কাঁকন অর্নবের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে চলে গেল। অর্নবের মনে অন্য রকম অনুভূতি হল কাঁকন কে নিয়ে ।এরপর ভার্সিটির ইলেকশান চলে এল সবাই ব্যস্ত ভোটের জন্য , অর্নব জানল কাঁকন তার অপজিটে দাঁড়িয়েছে ।অর্নব অনেকবার করে কাঁকন কে বোঝাল যাতে করে সে ভোটে না দাঁড়ায় ,কিন্ত কাঁকন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সে ভোটে দাড়াবেই ।কাঁকন বলল আমাকে সবাই বিশ্বাস করে এই দায়িত্ব দিয়েছে আমি তা যথাযথ পালন করব। একদিন রাহুল অর্নব কে বলল কি করবি এ মেয়ে তো তোর পদ কাড়িয়ে নেবে, এখনো কারোর এত হিম্মত হয়নি যে তোর সামনে দাঁড়ায় , তুই এই মেয়েকে এত পাওা কেন দিস, আমার তো মনে হচ্ছে তুই ওর প্রেমে পড়েছিস।অর্নব দাঁত কড়মড়িয়ে বলল আমার সাথে দুশমনি আমি যখন বললাম আমার সাথে যোগ দিতে তখন নাটক করল ,আর এখন অপজিশনে লড়ছে এর একটা ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে কাউকে মুখ দেখাতে না পারে।আর কি বললি আমি প্রেম পড়েছি অর্নব চৌধুরির পেছনে ঐরকম ২০ টা মেয়ে ঘোরে তুই ভালই জানিস। রাহুল বলল কি করবি তুই তুলে এনে রেপ করবি? অর্নব রাহুলের মাথায় জোরে চাঁটি দিয়ে বলল এই তোর ঘরে মা বোন নেই? আর অর্নব চৌধুরি কি এত ছোটো লোক যে এইরকম জঘন্য কাজ করবে ।মেয়েদের সাইজ করার জন্য খালি রেপ একটা শাস্তি নয় আরো অনেক পদ্ধতি আছে বুঝলি। রাহুল মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল তাহলে কি করবি? অর্নব বলল সময় হলে দেখতে পাবি।
কাঁকন তার বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে দেখল অর্নব বসে আছে তার বাবার সাথে এতে কাঁকন অনেক অবাক হয় য়আর দুজনে খুব গল্প করছে যেন কত দিনের পরিচিত।কাঁকন কে দেখে তার বাবা বলল মা তুই এসেছিস ভালই হয়েছে তখন থেকে ছেলেটা বসে আছে এক কাপ চা করে দেনা আমি করতে পারলে করে দিতাম আমাদের বাড়িতে প্রথম এসেছে। সে দিন ও না থাকলে আমাকে তুই পেতিস না ,অর্নব বলল থাক আঙ্কেল আর এইসব কথা কেন তুলছেন মুখ ঘুরিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল এ কথা কে বোঝে একটা ধন্যবাদ।😊 দেওয়া যায় না এত অহংকার ,কাঁকনের বাবা বলল বাবা তুমি কিছু বললে অর্নব বলল না না আঙ্কেল কিছুই না কিন্ত কাঁকন ঠিক শুনল মুখ বাঁকিয়ে বলল ঠিক আছে বাবা তোমাকে কি আমি কাজ করতে বলেছি তুমি রেস্ট নাও,বাড়িতে অতিথি এলে তাকে সম্মান করতে হয় ন্যাকা হয়ে বলল আর তাকে কি খালি মুখে ফেরানো যায়, আমি চা করে আনছি ,বলে চলে গেল রান্না ঘরে, আবার তারা গল্প করতে লাগল।কাঁকন শুনতে পেল তার বাবা অর্নব কে জিঞ্জাসা করছে তার বাবা কি করে,অর্নব কি বলল সে শুনতে পায়নি।
কাঁকন রাগে গজগজ করতে লাগল ।একদম বাড়িতে এসে উঠেছে যে বাহঃ কি সাহস আর বাবা টাও তার ফ্যান হয়ে গিয়েছে,চা করে এনে দে কোথাকার কে তাকে চা করে দাও আমার ইচ্ছে হচ্ছে চায়ে বিচুটি পাতার রস দিয়ে দেই কিন্ত বাবা আছে না। কাঁকন চা আর বিস্কুট নিয়ে এল ,অর্নব চা খেয়ে দেখল ভিষণ টেস্টি আদৌ এইরকম চা ও কোথাও খেয়েছে কিনা ওর মনে পড়ে না,বুঝলে বাবা আমার এই এক মেয়ে ও মা মারা যায় ও যখন ১৪ বছরের ।আমি চাকরি থেকে রিটায়ার্ড হয়েছি আজ ২বছর পেনশনে আমাদের বাপ মেয়ের ভালই চলছে, তা চা কেমন হল? অর্নব বলল খুব সুন্দর, কাঁকনের বাবা বলল শুধু চা নয় ও রান্নাও ভাল পারে । তা বাবা আজকে দুপুরে আমাদের এখানে তোমার নিমন্ত্রণ রইল ,এইবার কাঁকন চমকে উঠে বলল বাবা কি বলছ তুমি আর অর্নব বেচারা জোরে বিষম খেল কথা শুনে ।কাঁকনের বাবা বলে উঠল ঠিক আছো তো বাবা,অর্নব মাথা নাড়িয়ে বলল ঠিক আছে,আরে আঙ্কেল এসবের কোনো দরকার নেই , কাঁকনের বাবা বলল কি বলছ বাবা তুমি আমার জন্য যা করলে সেটার তুলনায় এটাতো অনেক নগন্য । অর্নব হাসল মাএ আর কাঁকন রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগল।
অর্নব চলে যেতেই কাঁকন বলল তুমি না বাবা কি যে কর আমাকে না জিজ্ঞাসা করে হূটহাট করে যা পারো তাই বলে দাও লোককে ।তো কি হয়েছে একবেলা খাওয়ালে কি বিশাল সমস্যা হয়ে যাবে তোর , আমি খাওয়ানোর কথা বলছি না বলছি তুমি কি ওকে চেন নিশ্চয় নয় ।দেখ ও আমার প্রান কর্তা এইটুকু কৃতজ্ঞ তা দেখানো উচিত নয় কি ,আর এটাই ওর পরিচয় বলল কাঁকনের বাবা,উফ বাবা তুমিও না কাঁকন আর তর্ক না করে দুপুরের রান্নার আয়োজন করতে লাগল।অর্নব দুপুরে খেতে এসে দেখল অনেক তরকারি , আর সবগুলি দারুন হয়েছে, বিশেষ করে পায়েস টা অসাধারণ হয়েছে । কাঁকনের বাবা হাত ধুতে গেলে কাঁকন অর্নবের পাতে পায়েস দিল অর্নব বলল আরে কি করছ আমি কি রাক্ষস নাকি এত খেতে পারব ,কাঁকন চোখ কে গোল গোল করে বলল না যদি খান তাহলে আমার সাথে লড়তে পারবেন তো?অর্নব এইবার বলল তাহলে একটু বেশি করে তুমিও খাও বলেই পায়েস নিয়ে কাঁকনের মুখে গুঁজে আর গালে মাখিয়ে দিল কাঁকন চমকে উঠে তাড়াতাড়ি ভিতরে চলে যায় ,আর অর্নব হাসছে কান্ড দেখে।
পরের দিন কলেজে এলে কাঁকনের বেস্ট ফ্রেন্ড নিশা বলল এই জানিস অর্নব না তার মনোয়ন পএ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কাঁকন অবাক হয়ে বলল কিন্ত কেন? নিশা বলল আমার মনে হয় ও তোকে ভয় পেয়েছে , কাঁকন বলল ধুর আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে ভয় পাবে মনে হচ্ছে অন্য কোনো ব্যাপার আছে বুঝলি আমাকে তদন্ত করতে হবে ,ছাড় না তোর আর কোনো প্রতিপক্ষ নেই তুই জিতে গিয়েছিস ।কিন্ত কাঁকনের মন মানছে না সে একবার গিয়ে অর্নব কে জিঞ্জাসা করবে এই সবের মানে কি?
কাঁকন বয়েজ কমনরুমের সামনে গিয়ে দেখল অর্নব ভেতরে বসে কি একমনে যেন লিখছে।রুমে ঢুকে গিয়ে ঝুঁকে দেখল কার একটা ছবি আঁকছে ,অর্নব হকচকিয়ে গিয়ে দেখল কাঁকন সামনে হাত মুড়ে দাঁড়িয়ে, অর্নব বলল তুমি কি আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে এসেছো, যে এত ভাল রান্না পারে আমি শুনেছি সে ভাল ঝগড়াও করতে পারে, কাঁকন জিঞ্জাসা করল আপনি এমন কেন করলেন? কি করলাম আমি, এই যে ভোটে দাঁড়াবেন না শুনলাম আমাকে ভয় পেয়ে গেলেন নাকি হেরে যাবেন তাই? তাতে তোমার কি এবার তুমি আরামসে জিততে পারবে ,এইবার কাঁকনের উপরে ঝুঁকে গিয়ে একদম মুখের সামনে মুখ এনে অর্নব বলল তোমার মতো সুন্দরী মেয়ের কাছ থেকে হারাটা অনেক মজার,আর ভয় সত্যি পেয়ে গিয়েছি তোমার রূপ দেখে। কাঁকনের নিঃশ্বাস জোরে জোরে পড়তে লাগল কয়েক মিনিট দুজন দুজনের চোখাচোখি তাকিয়ে থাকল এইবার লজ্জায় ,ভয়ে কাঁকন বলল আ….আমি। কি হল বল কিছু, আ…আ….আপনি আমার উপ…উপর থেকে উঠুন ,বলেই কাঁকন বেরাতে যাবে বেঞ্চের উপর দেখল সেই কাগজ যেখানে ছবিটা আঁকা আছে কাঁকনের। কাঁকন মুচকি হাসি হেসে বেরিয়ে গেল ।অর্নব হাসছিল তা দেখে।
পরের দিন শুনল কাঁকন ও মনোয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছে, রাহুল শুনে বলল এই তোরা কি টম এন্ড জেরি খেলছিস ,কাল তুই আজ ও ভোট থেকে সরে দাঁড়াল ব্যাপার টা কি ? একে অপরের পেছনে পড়ে আছিস কেন? অর্নব হাসতে হাসতে বলল বলেছিনা সময় এলে সব দেখতে পাবি।