#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১২
” মা, শুভ্রতাকে আমার রুমের আশেপাশে কিছুতেই আসতে দেবে না। প্রয়োজনে বাড়িতেই যেন না আসে।”
নিহানের মুখে এমন কথা শুনে রাবেয়া বেগম একটু অবাকই হলেন। নিহান যে শুভ্রতাকে পছন্দ করে সেটা তিনি জানেন। শুভ্রতা ডিভোর্সি হওয়াতেও কোন সমস্যা নেই৷ নিহানের বাবা আমির আগামী মাসে এলেই আবিরার বিয়ের পরপরই নিহান আর শুভ্রতার বিয়ের কথা বলবে।
মিসেস রাবেয়া ছেলের দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেন, ” শুভ্রতা এই বাড়িতে আসবে না মানে? তুই এই কথা বলার কে?”
” আমি কেউ নই?”
” হতে পারিস তুই তোর কাজের জায়গায় বড় কিছু কিন্তু এই বাড়িতে তোর বাবার পরে আমি যা বলব তাই হবে।”
” মা আমি তেমন কিছু বলি নি শুধু বলেছি শুভ্রতা যেন আমার রুমের আশেপাশেও না আসে।”
” কেন কি করেছে ও?”
” কিছু করে নি।”
” তাহলে আসবে না কেন?”
” এমনিই আসবে না মা, এত প্রশ্ন কোরো না তো প্লিজ।”
নিহান নিজের রুমে চলে যায়, মিসেস রাবেয়া সেদিকেই তাকিয়ে থাকেন আর ভাবেন এই ছেলের হলো টা কি!
কিছুক্ষণ আগে-
শুভ্রতাকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে নিহান তার বাইক নিয়ে নিজের বাড়ি চলে আসছিল। শুভ্রতা প্রথমে নিহানের বাইকে আসতে চায় নি কিন্তু নিহানও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না। ঠিকই বাইকে নিয়ে এসেছে বাড়িতে তবে রাস্তায় তাদের একটা কথাও হয়নি। শুভ্রতা নিজের বাড়ির ভেতরে ঢুকবে ঠিক তখনই নিহান তাকে ডাক দেয়। শুভ্রতা পিছন ফিরে তাকায়।
” এদিকে আয় শোন।”
শুভ্রতা নিহানের কথায় এগিয়ে যায় নিহানের দিকে। সে গিয়ে নিহানের সামনে দাঁড়ায়।
” হ্যাঁ বলেন।”
” ক্লাস কবে?”
” আগামীকালই, কেন?”
” কয়টায় বের হবি?”
” সাড়ে আটটায়।”
” আচ্ছা আমি পৌঁছে দেব যে কয়েকদিন এখানে আছি।”
” আমি একাই যেতে পারব আপনার রেখে আসতে হবে না।”
” বলেছি না আমি রেখে আসব!”
” আমি এখন যেতে পারি কি!”
নিহান সম্মতি জানালে শুভ্রতা বাড়ির ভেতরে চলে যায় আর নিহান নিজেও বাড়িতে চলে আসে।
~~
সন্ধ্যা পর শুভ্রতা ফোনটা নাড়াচাড়া করছে অভিককে কল দিবে কি না সেটা ভাবছে। শুভ্রতার মা মিসেস আয়েশা এসে নাস্তা দিয়ে যান মেয়েকে। আরেক প্লেট নাস্তা ডাইনিং টেবিলে রেখে স্নিগ্ধাকে ডাকেন যেন সে ওগুলো নিহানদের বাসায় দিয়ে আসে। স্নিগ্ধা পড়া ছেড়ে উঠে আসে নাস্তা দিতে যাবে তাই। শুভ্রতা নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে স্নিগ্ধা নাস্তার প্লেটটা নিবে ঠিক তখনই শুভ্রতা বলে,
” তুই পড়, তোর না পরিক্ষা? আমি দিয়ে আসছি নাস্তা।”
” আমিই যাচ্ছি আপু, পড়ার মাঝে বিরতি প্রয়োজন। আর ও বাড়িতে গেলে মন একদম ভালো হয়ে যাবে আমি এসে পড়ায় মন দিতে পারব। ”
” ও বাড়িতে গেলে মন ভালো হবে কেন?”
স্নিগ্ধা হাসি হাসি মুখ করে জবাব দেয়, ” নিহান ভাইয়া আছে না! উনি থাকলে মন ভালো না হয়ে উপায় আছে নাকি?”
শুভ্রতা ভ্রু কুচকে স্নিগ্ধার দিকে তাকায়। স্নিগ্ধার মুখে লজ্জার ভাব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। স্নিগ্ধা নাস্তার প্লেটটা নিলে শুভ্রতা সাথে সাথে তার হাত থেকে নিয়ে নেয়।
” কি হলো আপু?”
” তুই পড়তে বোস যা, পড়তে ইচ্ছে না করলে হাটাহাটি কর ভালো লাগবে। আবিরা আপুর সাথে আমার প্রয়োজন আছে আমিই নিয়ে যাচ্ছি এগুলো। ”
” মা…….”
মাকে ডাকতে দেখে শুভ্রতা প্লেটটা রেখে স্নিগ্ধার মুখ চেপে ধরে। এতক্ষণে মিসেস আয়েশা চলেও আসেন। দুই মেয়েকে এমন অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করেন, ” এই কি হয়েছে তোদের?”
স্নিগ্ধা শুভ্রতার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মায়ের দিকে এগিয়ে যায়। ” দেখো না মা, তুমি আমাকে বললে নাস্তা দিতে যেতে এখন আপু এসে বলছে আপু যাবে।”
মিসেস আয়েশা বেগম শুভ্রতাকে বলেন, ” তুই তো পড়তেই বসিস নি, যা পড়তে বস। নাস্তা দিয়ে এসেছি ওগুলো শেষ কর যা। আর এখানে ওদের চারজনের নাস্তা আছে একসাথে নাস্তা করবে ওরা।”
সংখ্যাটা চার শুনে জানতে চায়, ” কোন চারজন?”
” নিহান, আবিরা,নেহা,স্নিগ্ধা। তুই যা পড়তে বস। আর শোন কালকে নিহানকে বলবি দিয়ে আসতে নিয়ে আসতে, ওই ছেলের কথা তো বলা যায় না কখন রাগে ফুপে উঠবে।”
” সে আমি দেখে নেব। এখন আমার আবিরা আপুর সাথে কথা আছে।”
” দুজনই যা ঘুরে আয়।”
আয়েশা বেগম দুবোনকেই যেতে বলে নিজের রুমে চলে গেলেন। শুভ্রতা নাস্তার প্লেটটা স্নিগ্ধাকে দিয়ে সেটা নিয়ে যেতে বলল। দুজনই নিহানদের বাড়িতে রওয়ানা দিল।
~~
শাকিরা তার নানাবাড়ি থেকে এসেছে সন্ধ্যায়। সে তার মায়ের সাথে গিয়েছিল, যদিও কিছুদিন সেখানে থাকার কথা ছিল কিন্তু সেখানে আর থাকা হয়ে ওঠে নি। মূলত সেখানে একটা অনুষ্ঠান শেষ করে কিছুদিন থেকে তারপর আসার কথা ছিল। সেখানে হয়েছে এক কান্ড, শাকিরার আন্টির দেবর তার ছেলের জন্য শাকিরাকে পছন্দ করেছে। আগামীকাল তাকে দেখতে আসবে জন্য তাদের তাড়াতাড়ি চলে আসতে হয়েছে। শাকিরার মা আসার পর থেকেই বাড়ি পরিস্কার করার কাজ করছেন। শাকিরা আসার পর থেকে সেই যে মন খারাপ করে বসে আছে অন্যদিকে তার কোন মন নেই। চোখে তার পানি টলমল করছে। তারা বলেছে ছেলেকে নিয়ে আসবে যদি পছন্দ হয়ে যায় তাহলে বিয়েটা কলকেই হয়ে যাবে। ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে রায়হানকে কল দিবে কি না সেটা ভাবছে। রায়হান তাকে পছন্দ করে কি না সেটাও সে জানে না শুধু বুঝতে পারে হয়তো পছন্দ করে। রায়হান তো কখনো কিছু বলে নি তাকে।
শাকিরার মা তার কাছে এসে বলে,
” খেয়ে নে কিছু আমি আয়েশা ভাবির কাছে থেকে আসছি। উনি না থাকলে কালকে কীভাবে সবকিছু করব! ”
শাকিরা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আগের মতোই বলে, ” মা আমি এখন বিয়ে করব না। তুমি উনাদের নিষেধ করে দাও প্লিজ।”
” একদম না। ছেলে কত ভালো একটা জব করে, কোনকিছুর অভাব নেই তোর জন্য আমি আর এমন ছেলে পাব? শুধু আল্লাহর কাছে বল যে ছেলে যেন তোকে পছন্দ করে।”
” মা…”
” কি হয়েছে? তুই কাউকে পছন্দ করিস? কারো সাথে সম্পর্কে নেই তো বল?”
” কারো সাথে সম্পর্কে নেই আমি কিন্তু আমি এই বিয়ে এখনই করতে পারব না৷ ওদের আসতে নিষেধ করো প্লিজ। বাবাকে বলো ওদের ফোন করে যেন নিষেধ করে দেয়।”
” এরকমই কিছুই তোর বাবা করবে না। চুপচাপ খেয়ে নে আমি আসছি।”
শাকিরার মা রুম থেকে বেরিয়ে গেলে প্রচন্ড খারাপ লাগতে শুরু করে তার। সে যে রায়হানকে পছন্দ করে সেটা আগেই বাসায় বলা যাবে না পরে যদি রায়হানের কাছে এসব নিছক পাগলামি মনে হয়! সে এবার ফোনটা হাতে নিয়ে সাহস করে রায়হানের ফোন নম্বরটা বের করে কল দেয়। কয়েকবার রিং হতেই ফোন রিসিভ হয়। ওপাশ থেকে কেউ ব্যস্ত গলায় বলে,
” কে বলছেন?”
শাকিরা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বলে, ” আমি শাকিরা।”
ওপাশের পরিবেশটা হয়তো একটু ঠান্ডা হয়ে যায়, নিম্নস্বরে বলে, ” হ্যাঁ বল, হঠাৎ কল দিলি যে?”
” না মানে একটা কথা বলতে কল দিয়েছিলাম। কথাটা জরুরি….”
” হ্যাঁ বুঝেছি কথাটা জরুরি, জরুরি না হলে কল আসতো না। এবার কথাটা কি সেটা বল।”
শাকিরা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকেও নিজের কথাটা বলার সাহস জোগাতে না পেরে বলল, ” আপনি কি কাউকে পছন্দ করেন? ”
” এটা তোর জরুরি কথা?” রায়হান কথাটা বলে হাসতে থাকে।
” বাড়ি থেকে আমার বিয়ের কথা চলছে, কাল দেখতে আসবে। ছেলের যদি আমাকে পছন্দ হয়ে যায় তাহলে হয়তো কালই বিয়েটা হয়ে যাবে। আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?”
শাকিরার কথায় রায়হানের হাসি বন্ধ হয়ে যায়। হুট করে এমন কথা সে আশা করে নি। সে যে শাকিরাকে পছন্দ করে এটা তো তার মামাবাড়ির সব কাজিনরা জানে। শাকিরার যে বিয়ের কথা চলছে এই কথাতো তাকে কেউ বলে নি! মাত্র ব্যবসা শুরু করেছে সে এখনই কি বাড়িতে বিয়ের কথা বলা ঠিক হবে!
” আমাকে বিয়ে করবেন রায়হান ভাইয়া? আমি সেই ক্লাস নাইন থেকে আপনাকে পছন্দ করি কখনো বলার সাহস পাইনি৷ এই যে এখনো আমার শরীর কাঁপছে। আপনার সামনে কখনো বলতে পারব না। আমি জানি না ভুল বুঝেছি কি না, আপনিও হয়তো আমাকে……”
শাকিরার কথা শেষ করতে না দিয়ে রায়হান বলে ওঠে, ” ছেলে কি করে?”
” কিসের একটা জব করে আমি জানি না।”
” মামা-মামি রাজি দুজনই?”
” হ্যাঁ। ”
” আমি পরে কথা বলছি তোর সাথে, একটু ব্যস্ত আছি আমি।
শাকিরাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কলটা কেটে দেয় রায়হান। শাকিরা ফোন হাতে নিয়ে রায়হানের কলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
#চলবে…..