শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব -১৩+১৪

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৩+১৪

” ডাক্তারসাহেব আপনি সিঙ্গেল?”

অভীককে কল দিয়েই শুভ্রতা কথাটা বলে। পাশে আবিরা বসে মুখ টিপে হাসছে। সে নিজের মানুষের প্রতি আস্থাশীল, মানুষটা তাকে অসম্ভব ভালোবাসে সেটা সে বোঝে। শুভ্রতা ওপাশের মানুষটার জবাব শোনার অপেক্ষায় আছে কিন্তু ওপাশ থেকে কোন জবাব আসছে না দেখে শুভ্রতা আবার বলে,

” ডাক্তারসাহেব!”

” জি বলুন, স্যরি আমার এক পিচ্চি পেশেন্ট ফোনটা নিয়ে নিয়েছিল। কে বলছেন?”

” আমি শুভ্রতা, ওই যে সেদিন গিয়েছিলাম আপনার কাছে চেকআপ করাতে। ”

” প্রতিদিন তো অনেকেই আসে কীভাবে মনে রাখি বলুন তো!”

” সেটাও কথা, আপনাকে একটা মেয়ে বলেছিল আপনি দেখতে শুভ্র মেঘের মতো সুন্দর সেটা কি মনে আছে?”

” হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে, আপনি তাহলে কল দিয়েছেন! কোন প্রয়োজন?”

” হ্যাঁ প্রয়োজন তো। আমার না আপনাকে অনেক ভালো লেগেছে, ভালো লাগা মানে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন?”

ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শোনা যায়। শুভ্রতা ভ্রু কুচকে আবিরার দিকে তাকায়। আবিরাও এতক্ষণ চুপচাপ কথা শুনছিল। অভীকের হাসির কারণ সেও বুঝতে পারছে না।

অভীকের হাসি থামলে শুভ্রতা বলে, ” আপনি এভাবে হাসলেন কেন? আমি কি হাসির কিছু বলেছি আপনাকে?”

অভীক বলে, ” আ’ম স্যরি, আমি সিঙ্গেল নই। ”

” বিয়ে করে নিয়েছেন?”

” না তবে খুব জলদি করব। যোগাযোগ থাকলে
দাওয়াত পাবেন।”

” যোগাযোগ রাখবেন বলছেন?”

” যোগাযোগ রাখতে চাইলে প্রতিদিন কথা বলতে হবে এমন ব্যাপার নাহ। এই যে আজ আমাদের কথা হলো আমি নম্বরটা রেখে দিলাম। বিয়ের সময় আমার হবু স্ত্রীকে দিয়ে আপনাকে দাওয়াত দেয়ালাম! জানেন তো বিয়েতে মেয়েপক্ষরা বেশি মজা করে?”

” হ্যাঁ বুঝেছি। সত্যিই আপনার কেউ আছে? তখন হাসলেন কেন?”

” আপনার মতো কেউ এভাবে জিজ্ঞেস করে নি তাই হাসলাম। হ্যাঁ আমার কেউ আছে সত্যিই কেউ আছে। আমি এখন টিনেজ বয়সে নেই যায় ভালোবাসার মানুষ থাকা সত্ত্বেও অন্যকাউকে হাতে রাখার জন্য বলব আমার পছন্দের মানুষ নেই। অনেক আগেই আমার বিয়ের বয়স হয়েছে, আমার বন্ধুদের বাচ্চাও হয়ে গিয়েছে। আমিও খুব জলদি বিয়ে করব, দাওয়াত কিন্তু পাচ্ছেন। ”

আরও কিছুক্ষণ কথা চলল দুজনের মধ্যে। শুভ্রতা কথা বলছে আর আবিরা শুনে মিটিমিটি হাসছে। একসময় শুভ্রতা কথা শেষ করে আবিরার দিকে তাকিয়ে বলে, ” আপু আমি এখন আর কোনভাবেই এই প্রেমকে সাপোর্ট করি না। আমার তো মনে হলো উনি ভালো আর সেদিনও এরকমই মনে হয়েছিল। তুমি যদি সত্যিই পছন্দ করো তাহলে উনাকে বলো উনার বাবা-মাকে বলে যেন বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। এ বাড়িতে রাজি করানোর জন্য আমি আছি। উনি তোমাকে জানিয়েছে ভালোবাসার কথা আর তুমি সময় নিয়েছো এবার বলে দাও তুমি প্রেম না বিয়ে করবে।”

” আমিও সেটাই ভাবছি রে। আমি এমন অনেক সংসার দেখেছি যারা কি না ভালোবেসে বিয়ে করেছে কিন্তু পরবর্তীতে ভালোবাসা টিকিয়ে রাখতে পারে নি। ”

” এই যে আমাকেই দেখো না!”

” আমি তোকে বলি নি বোন, তুই ছাড়াও অনেক আছে। তুই তো অল্প বয়সে একটা ভুল করেছিলি। দোয়া করি একটা সঠিক মানুষ এবার তোর জীবনে আসুক।”

” জীবনে যদি কখনো আর কাউকে প্রয়োজন হয় সেটা আমার বাবা ঠিক করবে, এসবের মাঝে আমি আর যাব না। আমার বাবা আমার জন্য যাকে সঠিক ভাববেন আমি তাকেই বিয়ে করব কিন্তু এখন আমার মেইন ফোকাস থাকবে পড়াশোনায়। কিছু কিছু মানুষকে বুঝিয়ে দিতে হবে আমি পড়ে পড়ে মা’র খাওয়ার মেয়ে নই।”

” তুই অবশ্যই পারবি। আমাদের সব কাজিনদের মধ্যে তুই-ই একমাত্র যে কী-না পড়াশোনায় সিরিয়াস।”

” দোয়া কোরো আপু। আচ্ছা আপু আমি এখন যাই তবে।”

” আচ্ছা ঠিক আছে যা।”

শুভ্রতা আবিরার রুম থেকে বেরিয়ে হাটা শুরু করে। কিছুদূর এসেই হাতের বাম দিকে নিহানের রুম। রুমে লাইট অন, কিন্তু কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না। শুভ্রতা একবার সেদিকে তাকিয়ে আবার রওয়ানা দেয় নিজের বাড়ির দিকে।
~
স্নিগ্ধা তখনও বাড়ি আসে নি। শুভ্রতা বাড়িতে ঢুকেই মায়ের রুমে চলে যায়৷ সেখানে তার মা আর শাকিরার মা আঞ্জুয়ারা বেগম কিছু একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছিল। শুভ্রতা যেতেই আঞ্জুয়ারা বেগম মুখে হাসির রেখা টেনে বললেন,

” এই যে শুভ্রতাও চলে এসেছে। শোন মা কাল শাকিরাকে দেখতে আসবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে হয়তো কালই বিয়েটা হয়ে যাবে। তুই কিন্তু কালকে শাকিরাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবি।”

কথাটা শোনামাত্র রায়হানের কথা মনে পড়ে গেল তার। শাকিরা আর রায়হান দুজনই একে অপরকে পছন্দ করে সেটা তারা কাজিনরা সবাই জানে। ওরা দুজনই শুধু একে অপরকে বলে ওঠার সাহস পায় নি। শুভ্রতা কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে বলে,

” শাকিরা কাউকে পছন্দ করে কি না সেটা জেনে নিয়েছেন? আমি হয়তো ভুল মানুষকে পছন্দ করেছিলাম আমার মতো সবাই ভুল কাউকে পছন্দ করবে এমনটা না। আপনি একবার ওর থেকে জেনে নিয়েন ও কাউকে পছন্দ করে কি না।”

আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ” সত্যি বলতে মা তোর ব্যাপারটার পর থেকে এইসব প্রেম ভালোবাসার ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে৷ ভালোবাসার ক’টা বিয়ে টিকে বল তো?”

” হতে পারে শাকিরা কারো সাথে হারাম সম্পর্কে নেই শুধুমাত্র একাই ভালোবাসে যা প্রকাশ করে নি কখনো।”

” তুই যেহেতু বলছিস তাহলে শুনে দেখব।”

” ওটাই ভালো হবে কাকি। আপনারা কথা বলেন আমি তাহলে রুমে যাই।”

” ঠিক আছে কালকে তাহলে আমাদের ওখানে শাকিরার সাথে সাথে থেকো কিন্তু।”

” ঠিক আছে, আপনি আগে শাকিরার সাথে কথা বলেন কাকি।”

শুভ্রতা রুম থেকে চলে যায়। আয়েশা বেগম মেয়ের কথায় কিছু সন্দেহ করে৷ শাকিরার ব্যাপারে কি শুভ্রতা কিছু জানে! আঞ্জুয়ারা বেগম চলে গেলে তিনি শুভ্রতার রুমে যান। শুভ্রতা তখন পড়ছিল। তিনি গিয়ে বিছানায় বসেন। হাতের কাছে থাকা গোলকটা নাড়াচাড়া করতে করতে বলেন,

” শাকিরা কাউকে পছন্দ করে? তুই কিছু জানিস?”

” হ্যাঁ মা, রায়হান ভাইয়াকে পছন্দ করে। রায়হান ভাইয়াও শাকিরাকে পছন্দ করে কিন্তু কেউ কাউকে বলে উঠতে পারে নি। ”

” কি বলিস! রায়হান পছন্দ করে শাকিরাকে! মেয়েটার ভাগ্য হয়তো ভালো। ওর মতো ছেলে পাওয়া মুশকিল। আঞ্জুয়ারাকে বলা উচিৎ ছিল, ওরা কোনভাবেই রায়হানকে অপছন্দ করবে না।”

” হ্যাঁ মা আমিও তাই ভাবছি। দেখি কাল কি হয়! এখন যাও আমি পড়ছি, পড়া শেষ করতে হবে তাড়াতাড়ি। ”

” ঠিক আছে দশটার দিকে খেতে আয়।”

” আচ্ছা মা যাও এখন।”

আয়েশা বেগম চলে গেলে শুভ্রতা পড়ায় মনোযোগ দেয়। ফাউজিয়া আর শুভ্রতা দুজন ঠিক করে নিয়েছে প্রতিদিন কতটুকু করে পড়বে। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন কমপ্লিট করতে হবে৷ সে আর কোনকিছুতে সময় ব্যয় না করে পড়তে থাকে।
~~
রাতের খাওয়া শেষ করে বিছানায় বসে ফোন ঘাটাঘাটি করছে শুভ্রতা। ঘুমঘুম ও লাগছে তবুও সে ঘুমোচ্ছে না কারণ একটু পরেই তার বাবা এসে ডাকবে দুই রাকাত নফল এবং দুই রাকাত শোকরানা নামাজের জন্য। শুভ্রতার প্রতি জন্মদিনেই তার বাবা এমন কাজ করেন। তাদের বাড়িতে জন্মদিন পালন করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। শাহাদাত সাহেব প্রতিবছর এই দিনে মেয়েকে নিয়ে নামাজ আদায় করে সৃষ্টিকর্তাকে শুকরিয়া জানান আরো একটা বছর মেয়েকে তার সাথে রাখার জন্য।

অতীতের দিনগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমে চোখ লেগে যায় শুভ্রতার। দরজায় নক করার শব্দে আচমকা ঘুমটা ভেঙে যায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত বারোটা দশ বাজে। শুভ্রতা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার ওপাশে শাহাদাত সাহেব দাঁড়িয়ে আছে। বাবাকে দেখে মুখে হাসি ফুটে যায় শুভ্রতার।

” বাবা!”

শুভ্রতা গিয়ে শাহাদাত সাহেবকে জড়িয়ে ধরে। শাহাদাত সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকেন। হঠাৎ তিনি বুঝতে পারেন শুভ্রতা কান্না করছে। তিনি শুভ্রতাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে মুখ উঁচু করে দেখেন তিনি সত্যিই বুঝেছেন, শুভ্রতা কান্না করছে।

” কি হয়েছে মা? কান্না করছিস কেন?”

” বাবা মৃ*ত্যুর দিকে আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম তাই না?”

” সে তো প্রতি সেকেন্ডেই আমরা মৃ*ত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি মা। জীবনে শুধু মাত্র ওটাই আসল সত্য। আমাদের উচিৎ যেকোন সময় মৃ*ত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা। চিন্তা করে দেখতে হবে আমাদের থলিতে কি আছে ক*বরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সবসময় নিজেকে পাপ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবি মা। এখন চল নামাজ পড়বি না?”

” হ্যাঁ বাবা তুমি বোসো একটু আমি আসছি।”

” ঠিক আছে যা। ”

শুভ্রতা বাবাকে বসিয়ে রেখে ওযু করতে চলে যায়। বাবার সাথে নামাজ আদায় করার অনুভূতি বেশ অন্যরকম। শুভ্রতা চিন্তা করে সবগুলো দিন যদি এভাবে বাবার পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা যেত!

#চলবে……

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৪

শুভ্রতা সকাল সকাল তৈরি হচ্ছিল ভার্সিটিতে যাবে জন্য। স্নিগ্ধা তখনো পড়ছে আজকেও পরিক্ষা আছে তার তবে সেটা দুপুরবেলা। শুভ্রতা তৈরি হয়ে বের হতেই নেহা এসে সামনে দাঁড়ায়। শুভ্রতা থেমে যায়,

” কি রে রাস্তা আটকে দাঁড়ালি কেন?”

” ভাইয়া বলেছে তোমাকে দাঁড়াতে। ভাইয়া তোমাকে নিয়ে যাবে।”

” ভাইয়াকে বলে দে আমি বাসে করে যাব। দশ মিনিটের মধ্যে বাস চলে আসবে। আমার জন্য শুধু শুধু ওখানে যেতে হবে না। রাস্তা অল্প হলে কথা ছিল না শুধু শুধু এতদূর যেতে হবে না।”

” নেহা, ওকে বলে দে আমি এমনি এমনি যাব না। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাব আমার দাওয়াত আছে সেখানে তাই যাচ্ছি আর এমনি এমনি গেলেও তার কোন সমস্যা থাকার কথা না।”

শুভ্রতা কথা শেষ করতেই নিহান সেখানে এসে তার কথা শেষ করে। নেহা এবার কিছু না বলে মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে যায়। শুভ্রতা কাধের ব্যাগ ঠিক করে বলে, ” দেখুন নিহান ভাই আমাই একাই যেতে পারব, এতদিন যাওয়া আসা করছি আমার কোন সমস্যা হয় না এখনো হবে না। আপনি একা চলে যান ”

” আমি আমার সাথে তোকে যেতে বলেছি শুভ্রা, সবসময় এরকম ঘাড় ত্যাড়ামি করবি না একদম।”

” আমার থেকে দূরে থাকুন, একা থাকতে দিন তাহলে আমার কোনকিছুই আপনার কাছে ত্যাড়ামি লাগবে না। আমি চাই না আমার আশেপাশে আর কোন পরপুরুষ থাকুক।”

” আমি পরপুরুষ হয়ে গেলাম?”

” নন? দেখুন এখন এত কথা বলার কোন ইচ্ছে নেই আমার। আমাকে যেতে দিন এখন, সরুন সামনে থেকে। আপনাকে দেখে সবাই ভয় পেলেও আমি ভয় পাই না।”

” আমি চাই ও না তুই ভয় পাস। শুধু যেরকম করছিস এরকম করিস না।”

” আমি এবার আসছি।”

” সোজা গিয়ে বাইকের পাশে দাঁড়াবি, আমি স্নিগ্ধার কাছে থেকে আসছি। আমি যদি বাহিরে এসে দেখি যে তুই নেই তাহলে কিন্তু তা*ন্ডব বাধিয়ে দেব শুভ্রা।

শুভ্রতা কোন কথা না বাড়িয়ে বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। সে আপাতত চায় না কোন পুরুষ মানুষ তার আশেপাশে থাকুক। নিহান তো নয়-ই কারণ শুভ্রতা জানে নিহান তাকে এখনো পছন্দ করে। সে যদি নিহানের সাথে নরম হয় তাহলে নিহান আবার তার দিকে পা বাড়াবে। শুভ্রতার মতে সেটা ঠিক না। নিহান যে অবস্থানে আছে এই অবস্থানে থেকে সে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে। সে নিহানের যোগ্য নয়। মোটকথা শুভ্রতা এখন আর কোনরকম সম্পর্কে জড়াতে চায় না। সে কঠিনভাবে নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করতে হয় যেন ভবিষ্যতে কারো ওপর নির্ভর করতে না হয়। কিছু মেয়ে কোন একটা সময় এসে আর পছন্দের কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে না। সেই মেয়ে নির্দিষ্ট একটা সময়ে এসে চায় তার পরিবারের মানুষগুলোকে ভালো রাখতে হাসিখুশি রাখতে, ভালো একটা অবস্থানে থাকতে, সবার চোখে নিজের সম্মান দেখতে চায় সে আর এগুলো অর্জন করতে অবশ্যই ভালোভাবে পড়াশোনার কোন বিলল্প নেই।

শুভ্রতা সোজা গিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। বাড়িতে দেরি হওয়ায় রাস্তায় দাঁড়ানো অবস্থায় মিনিট পার হতেই বাস চলে আসে। শুভ্রতা বাসে উঠে বসে। অন্যদিন সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কিন্তু আজ বাসে স্টুডেন্ট কম থাকায় কয়েকটা সিট খালি রয়ে গেছে। বাস চলতে শুরু করে আর প্রায় চল্লিশ মিনিট পর ভার্সিটিতে পৌঁছেও যায়।

শুভ্রতা বাস থেকে নেমেই দেখে ফাউজিয়া অপেক্ষা করছে। শুভ্রতা গিয়ে ফাউজিয়ার সামনে দাঁড়ায়।

” তুই এখানে?”

” আমি মাত্রই রিকশা থেকে নামলাম। নেমে দেখি বাস ঢুকছে তাই দাঁড়ালাম। তুই আমাকে চিনতে পারলি?”

” তুই আমাকে চিনলে আমি কেন চিনব না? চোখ দেখেই তোকে চিনে ফেলতে পারি আমি।”

” একটা কথা ছিল। ”

” হ্যাঁ বল না। ”

” তোর কাছে কিছু টাকা হবে?”

” হ্যাঁ হবে কিছু টাকা, কেন কি করবি?”

” আম্মুর ওষুধ কিনতে হবে। ব্যাংকের চেকবইটা পাইনি সকালে, আজ গিয়ে খুঁজতে হবে। বারোশো টাকা লাগবে, হবে তোর কাছে? আমি কালকেই দিয়ে দেব।”

” হ্যাঁ আছে টাকা৷ ক্লাসে চল, দিয়ে দেব। আমি মেয়ে হিসেবে মাকে ওষুধ কিনে দিতেই পারি। তোর ফেরত দিতে হবে না কোন টাকা।”

” না না আমি ফিরিয়ে দেব। ”

” বেশি কথা কেন বলিস? চল ক্লাসে।”

“ঠিক আছে চল।”

শুভ্রতা আর ফাউজিয়া দুজন ক্লাসের দিকে হাটা শুরু করে দেয়। ফাউজিয়া মাঝেমাঝে শুভ্রতার দিকে তাকাচ্ছে আর ভাবছে ” এরকম বন্ধুও পাওয়া যায়!” ফাউজিয়া সামনে তাকালে শুভ্রতা বলে ওঠে,

” আজ সন্ধ্যায় শাকিরাকে বিয়ের জন্য দেখতে আসবে বুঝলি? আমার আবার তাড়াতাড়ি ওদের বাড়িও যেতে হবে। মেয়েটা কি যে চিন্তা করছে কে জানে! সকালে ওর কাছে যেতেও পারি নি পড়া জমে ছিল তাই।”

” তুই না বলেছিলি তোর কোন যেন ভাইকে শাকিরা পছন্দ করে?”

” হ্যাঁ দুজনই দুজনকে পছন্দ করে কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলতে পারে নি। এভাবে যদি শাকিরার অন্যকোথাও বিয়ে হয়ে যায় তাহলে কেমন বাজে ব্যাপার হবে ভাবতো! রায়হান ভাইয়া কোন সময়ই প্রেম বিষয়টা পছন্দ করে না তাই শাকিরাকে তার বিষয়টা বুঝতে দেয় নি এমনকি কয়েক বছর আমাদের বাড়িও আসে নি ভাবতে পারছিস!”

” এমন কেন?”

” কারণ কাছাকাছি থাকলে অনুভূতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে তাই। ভাইয়া অসম্ভব ভালো মানুষ। সকালে ভাইয়াকে কল দিয়েছিলাম রিসিভ করে নি। ক্লাসে গিয়ে আবার কল দিয়ে শাকিরার বিষয়টা জানাতে হবে।”

” হ্যাঁ জানিয়ে দে, আচ্ছা শোন না ম্যাম তো পড়া দাগিয়ে দেবে পরিক্ষার জন্য বই এনেছিস?”

” হ্যাঁ এনেছি।”

” এখন কি ক্লাসেই বসবি নাকি বাহিরেই বসবি?”

” ক্লাসেই চলে যাই বাহিরে কি করব!”

” ঠিক আছে চল।”

ফাউজিয়া আর শাকিরা রুমে এসে ব্যাগ রেখে বসে। হঠাৎ কোন কথা মনে পড়ার ভঙ্গিতে ফাউজিয়া বলে ওঠে, ” গতকাল সন্ধ্যায় কি হয়েছে জানিস?”

” তুই না বললে জানব কীভাবে? শুভ্রতা কথাটা বলে ফাউজিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

” আরে মজা করিস না শোন।”

” হ্যাঁ জান বলো। ”

” আবার!”

” আচ্ছা আচ্ছা বল।”

” সন্ধ্যায় সাহিল স্যারকে দেখলাম।”

” কোথায়?”

” আমাদের বাসা ছেড়ে কিছুদুর গিয়ে একটা পুরাতন দোতলা বাড়ি আছে সেই বাড়ির গেইট দিয়ে ফুল হাতে বেরিয়ে রাস্তার দিকে গেল দেখলাম।”

” স্যার কি বিবাহিত! নাকি স্যার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন?”

” তা জানি না, শুধু দেখলাম ফুল হাতে সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পরে কোথায় যেন যাচ্ছেন।”

” তুই কোথায় গিয়েছিলি?”

” আমি আর আম্মু একটা স্টুডেন্টের বাসায় গিয়েছিলাম, যাওয়ার সময়ই স্যারকে দেখলাম।”

” জানি না বাবা, কার কোথায় কি চলছে কে জানে! কিন্তু স্যার তো বলেছিল উনি অবিবাহিত!”

” হ্যাঁ সেটাই ভাবছি। আচ্ছা বাদ দে যা হওয়ার হয়েছে।”

দুজন এবার অন্য কথা শুরু করে। ফাউজিয়া শুভ্রতার সাথে থেকে থেকে সে নিজেও এখন একটু মিশুক হয়ে গিয়েছে। নিজে থেকেই এখন অনেক কথা বলে আর শুভ্রতা বসে বসে শোনে।

ফাউজিয়া কথা বলছেই এমন সময় শুভ্রতা তার ব্যাগ থেকে নুডলসের বক্স বের করে ফাউজিয়াকে এগিয়ে দেয়। ফাউজিয়াকে বক্সটা খুলতে বললে ফাউজিয়া বক্সটা খোলে। বক্সটা খুলতেই নুডলস দেখে ফাউজিয়ার মুখে হাসি ফুটে যায়।

” নুডলস!”

” হ্যাঁ আমি রান্না করেছি আসার আগে।”

” আমার জন্য?”

” হ্যাঁ পুরোটা তোর জন্য তবে তোর যদি দয়ার শরীর হয় তাহলে আমাকে এখান থেকে একটু দিতে পারিস।”

” এতটুকু দয়া আমি করতেই পারি, দে চামচ দে।”

শুভ্রতা ব্যাগ থেকে চামচ আর পানির বোতল বের করে দেয়। ফাউজিয়া চামচটা ধুয়ে নিকাবের নিচে দিয়ে নুডলস খাওয়া শুরু করে। ফাউজিয়ে নিজে খাচ্ছে আর মাঝেমাঝে শুভ্রতাকে খাইয়ে দিচ্ছে। এরকম দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। দুজনের খাওয়া শেষ না হতেই সাহিল শেখ ক্লাসে প্রবেশ করেন। দুজন তাড়াহুড়ো করে বক্স আটকে ব্যাগে রেখে দেয় লুকিয়ে পানিটাও খেয়ে নেয়। ফাউজিয়ার অবস্থা দেখে শুভ্রতা হাসতে থাকে, ফাউজিয়াকে দেখে স্কুল লাইফের কথা মনে পড়ে যায়। ক্লাসে লুকিয়ে কতকিছুই যে খাওয়া হতো সবার, কতই না মজা হতো!!

#চলবে….

আজকে মন ভালো থাকায় দুই পর্ব একসাথে দিলাম, তবে গল্প পোস্ট দেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে জন্য রিচেক দেওয়া হয় নি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন সকলে, সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here