#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৮
” আমি তোকে বিয়ে করতে চাই শুভ্রা, আমি আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে নতুন একটা সুন্দর সম্পর্কে জড়াতে চাই। যেখানে আমরা সারাজীবন একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞা করব,শুধু আমি তুই আর ভালোবাসা থাকবে।”
” আপনি বারবার একই কথা কেন বলছেন বলুন তো নিহান ভাই? আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না, একদমই সম্ভব না।”
” কেন বিয়ে করা সম্ভব না বল আমায়। আমি ছেলে হিসেবে ভালো নই? ”
” কোন ছেলের সাথে আপনার তুলনা করা ভুল। আপনি যথেষ্ট ভালো ছেলে। হয়তো লাখে একটা করে পাওয়া যেতে পারে তা আমি জানি না। আপনি এত ভালো ছেলে জন্যই আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না নিহান ভাই। আর তাছাড়া আমি এখন বিয়েতেই জড়াতে চাই না। আমি আমার জীবনটা নতুনভাবে গোছাতে চাই যেখানে শুধু আমিই থাকব। আমি আপাতত আমার জীবনের সাথে কারো জীবন জড়াতে চাই না নিহান ভাই। ”
নিহান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, শুভ্রতার কথা শুনছে। শুভ্রতা কথা শেষ করলে নিহান বলে ওঠে, ” এত খারাপ থাকা আমি ডিজার্ভ করি না শুভ্রা। তুই আমাকর এত খারাপ থাকার উপায় হোস না প্লিজ। ”
” আর কত নিহান ভাই? বিয়েতো একবার করলাম, করে দেখেছি তো কেমন হয় বিয়ের পরের জীবন, আর নাহয় না-ই দেখলাম। আপনার ভালো থাকা প্লিজ আমার সাথে জড়াবেন না নিহান ভাই। আমার প্রতি আপনার ভালোবাসার কথা বলে শুধু শুধু সম্পর্কটা খারাপ করছেন। ”
” ভালোবেসে কাউকে বিয়ে করে তো দেখলি। ওর প্রতি তোর কত বছরের স্যরি কয় মাসের ভালোবাসা ছিল যাকে বিয়ে না করে থাকতে পারিস নি? নয়মাস নাকি একবছর? আমি তোকে সাতটা বছর ধরে পছন্দ করি ভালোবাসি। এটা এপাক্ষিক ভালোবাসা, এখানে কোন ভেজাল নেই। আমার কি অধিকার নেই এত ভালোবেসেও ভালোবাসার মানুষের সাথে ঘর করার?”
” নিহান ভাই আপনার সাথে আমার কোন শ*ত্রুতা নেই। যদি কোন মানুষ জানতে পারে কেউ তাকে ভালোবাসে সে তখন সেই ব্যক্তির সম্মানের, ভালোবাসার মানুষ হয়ে যায় শ*ত্রু বা অপছন্দের মানুষ না। সেক্ষেত্রে আমি আপনাকে সম্মান করি আমি চাই না আপনি আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করুন যার শরীরে ডিভোর্সি ট্যাগ লেগে গেছে। আপনি সুন্দর সুপুরুষ, কর্মক্ষেত্রেও একজন সফল আমি আপনাকে ডিজার্ভ করি না। এত পার্থক্যে মিল হয় না নিহান ভাই। মিল হতে হলে অবস্থান কাছাকাছি হতে হয় আকাশ পাতাল কখনো এক হতে পারবে না নিহান ভাই। আমি দোয়া করি আপনি আপনার মনের মতো অন্যকোন মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হন। ”
” তার মানে কোন ডিভোর্স, বিপত্নীক লোক তোকে ডিজার্ভ করে?”
” হয়তো তাই।”
” কি করলে আমি তোকে পাব বলতে পারিস? কাউকে বিয়ে আর তারপর ডিভোর্স দিয়ে তো আর তোকে পেতে চাইব না আমি। অন্যকোন মেয়েকে বিয়ে করলে তার জীবনটা শুধু নষ্টই হবে। আচ্ছা শুভ্রা ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষকে তো বিয়ে করেছিলি ভালো থাকতে পারিস নি, এবার যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে তাকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখ ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখব। আমি তোকে ছাড়া আমাকে আমার একটা দিন কল্পনা করতে পারছি না শুভ্রা। এত অসহায় আমার কোনদিন লাগে নি।”
নিহানের কণ্ঠ ভারী শোনাচ্ছে। পৃথিবীর সমস্ত কষ্ট যখন বুকে এসে ভর করে, না পাওয়ারা এসে ভীড় করে তখনই গলা ভারী হয়ে যায়। প্রিয় মানুষগুলো বুঝতেই পারে না তাদের কেউ ঠিক কতটা চায়! মানুষ তার ভালোবাসার মানুষকে ঠিক কতটা ভালোবাসে সেটা সে জানলে ফিরিয়ে দিতে পারতো না।
” ভালোবাসা একদিন কমে যায় নিহান ভাই। ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেলে তাকে হারানোর ভয়টা চলে গেলেই ভালোবাসা কমে যায়। ভালোবাসা ততদিন থাকে যতদিন হারানোর ভয়টা থাকে। হারানোর ভয়টা চলে গেলেই ভালোবাসা হারিয়ে যায়। তখন সবাই মনে করে পেয়েই তো গেছি, সে এবার আর ছেড়ে যেতে পারবে না তখন ধীরে ধীরে গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। যার অত্যাধিক ভালোবাসা পেয়ে অভ্যাস সেই শখের পুরুষ যখন ভালোবাসা, গুরুত্ব কমিয়ে দেয় তখন একটা মেয়ের বেঁচের থাকার ইচ্ছেটাই মাঠে মা*রা যায়।”
” “শোন শুভ্রা ভালোবাসা সময়ের সাথে গাঢ় হয়, হালকা নয়। সময়ের সাথে ভালোবাসা যদি কমে যায় তাহলে সেটা ভালোবাসা নয় সেটা মোহ। তোর প্রতি যদি আমার মোহ থাকতো তাহলে আমি নিশ্চয়ই এখন আর তোকে নিয়ে ভাবতাম না। তাই শুধু শুধু অতীত নিয়ে না ভেবে জীবনকে রাঙাতে শিখে নে। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না থাকবেও না। অতীতকে ভুলে আমাকে একবার ভালোবেসে দেখনা প্লিজ, সবটা অন্যরকম হয়ে যাবে।”
” আমার রঙহীন জীবনে আপনার রঙধনুর সাত রঙে রাঙানো জীবনটাকে জড়াতে চাই না আমি নিহান ভাই। আমার সাথে আপনি জড়িয়ে গেলে যে সবকিছু নিকষ কালোতে আচ্ছাদিত হয়ে যাবে।”
শুভ্রতার কথার পরিপ্রেক্ষিতে নিহান নরম স্বরে বলে ওঠে, ” রঙহীনের সাথে রঙ মেশালে পুরোটা রঙীন হয়, রঙহীন নয়।”
শুভ্রতা কি বলবে এখন? ভালোবাসায় যে নিহান তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে। কীভাবে বের হবে সে এই গোলকধাঁধা থেকে? ভালোবাসার কাঙাল সে, একটু ভালোবাসা পেলেই থেকে যেতে চায় সে। ভয় লাগে এই ভালোবাসাও যদি কমে যায়? নিহানকে নিয়ে ভাবা তার জীবনের দ্বিতীয় ভুল হবে না তো? কিন্তু নিহানের সাথে তার কোনভাবেই মিলে না। নিহান অতি ভালো ছাত্র ছিল, তারপর এমন একটা জায়গায় আছে সে হিসেবে শুভ্রা একদম জিরো। এত অমিলে মিল হবে কীভাবে? এত অমিলের মানুষ খুব করে যেমন ভালোবাসতে পারে ঠিক তেমনই ছুড়ে ফেলতেও পারে। শুভ্রতার ভাবনার যেন শেষ হচ্ছে না। বয়স কখনো মানুষের ম্যাচুরিটি হতে পারে না, পরিস্থিতি মানুষকে ম্যাচিউর করে তোলে। যে যত বিপদে পড়বে কষ্ট পাবে সে তত শিখবে সিদ্ধান্ত ভালো নিতে পারবে।
শুভ্রতাকে চুপ থাকতে দেখে নিহান বলে, ” ভালোবাসি শুভ্রতা, খুব ভালোবাসি বিশ্বাস কর। ”
” আমি এখনই বিয়েতে জড়াতে চাই না নিহান ভাই আমি আমার ক্যারিয়ার গড়তে চাই।”
” আমি সাহায্য করব তোকে।”
নিহানকে আর কি বলে নেতিবাচক উত্তর দিবে সেটা ভেবে পাচ্ছে না শুভ্রতা। মানুষটার ভালোবাসা যে তাকে আর না বলার সুযোগ দিচ্ছেই না। কিন্তু সমাজ! মানুষ বিষয়টা দেখবে কীভাবে? একটা মেয়ের মাস দুই আগে ডিভোর্স হয়েছে এত কম সময়ের মধ্যে আরেক বিয়ে তার ওপর কাজিনের সাথে। সবাই ভাববে কাজিনের সাথে হয়তো সম্পর্ক ছিল তাই হয়তো বিয়েটা টিকে নি।
নিহান আবার বলে ওঠে, ” তুই শুধু আমার হয়ে যা শুভ্রা বাকিসব আমি দেখে নেব। তুই যদি চাস আমি তোর কাছে স্বামীর অধিকার ততদিন চাইব না যতদিন না তুই চাইবি।”
” নাটক, সিনেমার ডায়ালগ। ”
” এটা আমি তোকে কথা দিচ্ছি। প্লিজ আমার মানুষ হয়ে যা না। আমার ব্যক্তিগত একটা মানুষ যেন আমি বলতে পারি এই পৃথিবীতে একটা মানুষ আমারও আছে। প্লিজ শুভ্রা, আমি তোর ভালোবাসা নামক শুভ্র রঙে নানানরকম রঙ ছিটিয়ে দিতে চাই। শুভ্র রঙের সাথে অন্য রঙ মিশলে খুব একটা খারাপ কিন্তু লাগবে না। প্লিজ আমার হয়ে যা।”
শুভ্রতা নিহানের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার দুই চোখে পানি জমেছে এখনই গড়িয়ে পড়বে। একটা মানুষ আসলেই এত ভালোবাসতে পারে? সে তো ইমতিয়াজকে ভালোবেসেছিল তবে সেটা তো নিহানের মতো ছিল না! ছেলেরা ভালোবাসলে সেটা আসলেই ভয়ং*কর হয়।
শুভ্রতার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে, নিহান হাত এগিয়ে মুছতে গিয়েও হাত ফিরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে, ” চোখের পানিটা মুছে নে শুভ্রা, আমার মানুষের চোখে আমি পানি দেখতে চাই না। সে তো তার চোখের পানি মুছে দেওয়ার অধিকার আমায় দেয় নি আমি মুছেও দিতে পারব না। আমি এই দায়িত্ব কখনো নিতেও চাইব না। আমি আমার ভালোবাসার মানুষের চোখে কষ্টের পানি আসতে দেব না ইন শা আল্লাহ। ”
শুভ্রতা কিছু বলছে না দেখে নিহান বলে, ” একটা সুযোগ আমাকে দেওয়া যায় না শুভ্রতা?”
” ভালোবাসা কমে যাবে নিহান ভাই, কম ভালোবাসা আমার সহ্য হয় না। ”
” কমবে না, একফোঁটাও কমবে না আরও বাড়বে দেখিস।”
শুভ্রতা আর কিছু বলছে না। তার এখন কান্না পাচ্ছে ভীষণভাবে৷ কারণটা ঠিক কি সেটা আপাতত অজানা। তার এখন একলা ঘরে একটু কান্না করা প্রয়োজন, কষ্টে তার বুক ভারী হয়ে নেই তবুও কান্না করতে হবে। শুভ্রতা দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায় নিহান একপলকে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে।
#চলবে……
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ভালো কিছু কমেন্ট করে লেখার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ রইল।