#শুভ্র_রাঙা_প্রেম 🤍
#পর্ব_১২
#Usha (Writer)
২৩.
আদৃতা ঘুম ভাঙতেই দেখলো ও দোলনায় ঘুমিয়ে ছিলো।অবাক হলো কিছুটা কারণ এর আগেও অনেকদিন ও দোলনায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো কিন্তু সকালে ঠিকই ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বিছানায় পেয়েছিলো।আদিয়াত কি তবে ওকে দেখেনি নাকি দেখেও গিয়ে শুয়েছিলো?আদৃতার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো।
দোলনায় থেকে উঠে সুন্দর করে ডায়েরিটা জায়গা মতো রেখে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।আদিয়াত রুমেও নেই দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো আদৃতার কিন্তু তবুও সেদিকে ওতো পাত্তা দিলো না।
নিচে যেতেই দেখলো মিসেস.তৌসি বসে আছেন মুখ ভার করে।আদৃতা তার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো
~কি হয়েছে মা আপনার?আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?
মিসেস.তৌসি আদৃতার কথার জবাব না দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
~আদিয়াতের সাথে তোমার কোনো ঝামেলা হয়েছে?
আদৃতা চমকে গেলো।কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না।
মিসেস.তৌসি আদৃতার ভাবভঙ্গি লক্ষ্য করে বললেন
~আদিয়াত তোমায় খুব ভালোবাসে আদৃতা।ওকে কখনো কোনো পরিস্থিতিতেই অবহেলা করো না কিংবা কষ্ট দিও না।পরে দেখা যাবে তোমার নিজেরই আফসোস করতে হবে।
আদৃতা মাথা নিচু করে রইলো দেখে মিসেস.তৌসি কথা ঘুড়িয়ে বললেন
~যাও ব্রেকফাস্ট করে নাও।
তারপর তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন।আদৃতা সার্ভেন্ট এর থেকে খবর নিয়ে জানলো আদিয়াত নাকি সকাল হতেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছে।কিছু খেয়েও যায়নি।আদৃতার নিজেরও আর খেতে ইচ্ছা করলো না।
__♥__
কথামতো আজকে ইফাজ এলো তিষার সঙ্গে দেখা করতে।তিষা বেশ হেসে হেসেই কথা বলছে আর ইফাজ হু হা জবাব দিচ্ছে কিন্তু ওর সম্পূর্ণ মনোযোগ মোবাইলের দিকে।
তিষা হঠাৎই কথার মাঝে ইফাজের হাত থেকে ওর ফোনটা কেড়ে নিলো।ইফাজ চমকে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তিষার হাত থেকে নিজের ফোন নিয়ে ওর গালে ঠাস করে থা’প্প’ড় মে’রে দিলো।
তিষা গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে ইফাজের দিকে তাকিয়ে বললো
~তুমি আমায় মা’র’লে ইফাজ?
ইফাজ রেগে গিয়ে চিৎকার করে বললো
~কি ইফাজ হ্যা?ইফাজ ভাই বল।আমি তোর খালাতো ভাই হই তোর জামাই না।আমার টাকার আর তোর বোনের খোঁজ খবরের দরকার ছিলো তাই তোর সাথে রিলেশনে গিয়ে তোর থেকে টাকা নিয়েছি আর সকল খোঁজ খবর নিয়েছি।আমার বউ আছে আর ওকে নিয়েই আমি ভালো আছি।তুই একদম বিরক্ত করবি না আমায় বলে দিলাম।
তিষা একদম চুপ হয়ে গেলো ইফাজের কথায়।ইফাজ ওকে ঠকালো কথাটা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে তিষার।ইফাজ উঠে চলে গেলো।কিন্তু তিষা বসেই রইলো।ওর বাইরের কোনো খেয়াল নেই এই মুহূর্তে।ও বিরবির করে বললো
~তুমি আমায় ঠকালে ইফাজ?তোমার বউ আছে?তুমি বিবাহিত?তুমি বিয়ে করলে কবে?আর আদৃতার খবরেরই বা কি দরকার ছিলো তোমার?
…
আদিয়াত অফিসে এসে সিসি ক্যামেরা চেক করতেই ওর কাছে সবকিছু পরিষ্কার হলো।কাল আদৃতা এসেছিলো ওর অফিসে।আর তখনই তোহা নিজের কথার ধরণ পাল্টে ফেলে।আর আদৃতা তখন তোহার বলা সব কথা শুনেই আদিয়াতকে ভুল বুঝে ছিলো।আদিয়াত হাসলো।তারপর আস্তে করে বলে উঠলো
~এতোদিনেও আমার প্রতি তোমার একটু বিশ্বাস জন্মালো না আদৃপাখি?সামান্য একটা বিষয়েই আমায় অবিশ্বাস করলে?তুমি কি এতোদিনেও বুঝলে না তোমায় আমি ঠিক কতোটা ভালোবাসি?
তখনই ওর ফোনে নোটিফিকেশন আসলো।আননোন নাম্বার থেকে কয়েকটা ফটো এসেছে।ও ফটোগুলো দেখে নিচের ম্যাসেজটা দেখতেই কপালের রগ ফুলে উঠলো রাগে।
২৪.
আদিয়াত ইফাজকে কল করে নিজের গোডাউনে আসতে বলে নিজেও সেখানে গেলো।
আদিয়াত আসার কিছুক্ষণের মধ্যে ইফাজ আসলো।ইফাজ আসতেই আদিয়াত ইফাজের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো
~বল কি চাই তোর?আমাকে এতো পিক কেন পাঠালি?
ইফাজ হেসে বললো
~ওহ্ বুঝে গিয়েছিস সেটা আমি ছিলাম।যাইহোক বুঝে যখন গিয়েছিস তখন আর কি?দেখ তোর বউয়ের চরিত্র কেমন?
আর বলতে পারলো না।তার আগেই আদিয়াত জোরে ঘুষি মা’র’লো ওর মুখ বরাবর।তারপর বললো
~তোর সাহস কি হয় আমার আদৃর চরিত্র নিয়ে কথা বলার?তুই জানিস ছবির ছেলেটা কে?ওরা ভাই-বোনের মতো ছিলো আর তুই ওদের নিয়ে ছি….।
ইফাজও থেমে থাকলো না।মুখে ঘু’ষি মা’রা’য় রেগে গিয়ে ও নিজেও আদিয়াতকে মা’র’তে শুরু করলো।
এরমধ্যেই রিশান এলো।অনেক কষ্টে ওদের ছাড়ালো।দু’জনেরই মুখ দিয়ে র’ক্ত পড়ছে।আদিয়াত এখনো হিং’স্র বাঘের মতো ইফাজের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইফাজ কাউকে ফোন করলো কিছুক্ষণের মধ্যে দু’জন লোক এসে ইফাজকে ধরে হসপিটালে নিয়ে গেলো।
আর রিশান এসে আদিয়াতের কপাল ব্যান্ডেজ করে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছিলো?আদিয়াত সবকিছু বললো।তখন ওর মোবালের পিকগুলো ছিলো আদৃতা আর একটা ছেলের।আর ম্যাসেজটা ছিলো
~দেখ তোর এতো ভালোবাসার আদৃপাখির ন’ষ্টা’মি!!
আদিয়াত ম্যাসেজ দেখেই বুঝেছিলো এটা ইফাজই দিয়েছে।আর তারপর তো…!
রিশান হঠাৎই আদিয়াতকে জিজ্ঞেস করলো
~ আচ্ছা দোস্ত এই ইফাজের সাথে তোর কিসের এতো শত্রুতা?
আদিয়াত বললো
~আদৃতাকে আমি ভালোবাসি প্রায় আরো ৫ বছর আগে থেকে।ও একটা হোটেলে জব করতো সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম একবার অর্ণবের সাথে।ঐখানে এক দেখায়ই আমি ওর প্রেমে পড়ি এরপর থেকে ঘনঘন সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়া-আসা করতাম।ওর খবরও রাখতাম। আমি একজন মহিলাকে টাকা দিয়ে বলেছিলাম যেভাবেই হোক সে যেন ঐ বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয় আর ওর খবর আমায় দেয় সবসময়।এরপর যেদিন ঐ ইফাজ ওর সাথে খারাপ আচরণ করেছিলো সে আমায় ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলো।আর তখন আদৃ ইফাজকে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছিলো আমিও ঠিক তখনই আমার লোক দিয়ে ঐ ইফাজকে তুলে আনি।তারপর ইচ্ছেমতো শিক্ষা দিয়েছিলাম।যেই দুইবছর নিখোঁজ ছিলো সেই সময়টা বেশিরভাগই ও হসপিটালেই ছিলো।এরপর সুস্থ হওয়ার পর থেকে ওর সমস্ত রাগ আদৃতার সঙ্গে সঙ্গে আমার ওপরেও এসে পড়েছে।
রিশান সব শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
~ওহ্।আচ্ছা তুই এবার বাড়ি যা।গিয়ে রেস্ট নে,এই শরীর নিয়ে আর অফিসে যেতে হবে না।
আদিয়াত কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো
~ঠিক আছি আমি।
রিশান রেগে বললো
~হ্যা তুইতো সবসময়ই ঠিক থাকিস।আজ যদি তুই বাড়ি না গিয়ে অফিসে যাস তো তোর খবর আছে বলে দিলাম।চুপচাপ বাড়ি যা রেস্ট নে।
আদিয়াত আর কিছু বললো না।কিছুটা সময় ওখানেই বসে রইলো তারপর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
__♥__
আদিয়াত রুমে গিয়ে দেখলো আদৃতা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।পড়নে শুভ্র রঙের চুড়িদার,অবাধ্য চুলগুলো বাতাসে উড়ে মুখে এসে পড়ছে বারবার।কিন্তু আদৃতা আনমনা হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের পানে।
আদিয়াত ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আদৃতা কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুরে একপলক আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।আদৃতা মনে মনে ভাবলো আদিয়াতের কপালে কি হয়েছে?আর আদিয়াতের মাথা বেশ গরম ছিলো রিশানের কারণে আবার এখন আদৃতার এমন ব্যবহারে প্রচুর রেগে গেলো।আদৃতার বাহু চেপে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো
~সমস্যা কি তোমার হ্যা?আমায় এভাবে ইগনোর কেন করছো?
আদৃতা আদিয়াতের দিকে একপলক তাকিয়ে বললো
~আমার ডিভোর্স চাই।আপনি আমায় ডিভোর্স দিয়ে দিন।
আদিয়াত এমনিতেই প্রচুর রেগে ছিলো তারপরে আবার ডিভোর্সের কথা শুনে আদৃতার বাহু ছেড়ে টেবিলের পাশে থাকা গ্লাসটা জোরে ছুড়ে মা’র’লো।তারপর চিৎকার করে বললো
~তোর সাহস কি করে হয় ডিভোর্সের কথা মুখে আনার?তুই কি ভেবেছিস তুই বললেই আমি তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো?বিয়েটা কিন্তু আমি তোর ইচ্ছেতে করিনি বরং ব্ল্যাকমেইল করে করেছি তবে তুই ভাবলি কি করে ডিভোর্স চাইবি আর আমি দিয়ে দিবো?কি হলো বল।
আদৃতা কেপে উঠলো আদিয়াতের চিৎকার করে বলা কথাগুলো শুনে..তারপর কোনোমতে নিজেকে সামলে বললো
~আপনার কয়জনকে লাগবে?আপনি আমায় দয়া করে বিয়ে করেছিলেন যেন আমি তিষার বিয়ের পর একা না হয়ে যাই আর আমার ক্ষতি যেন না হয়।তবে এখন কিসের এতো অধিকার দেখাচ্ছেন?আমায় আমার মতো ছেড়ে দিন আর আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করে নিন।
আদিয়াত শান্ত হয়ে আদৃতাকে বলে উঠলো
~আমি জানি তুমি আমার অফিসে গিয়েছিলে এবং ঐ মেয়েটার বলা প্রতিটা কথাই শুনেছো।কিন্তু আগে আমায় ক্লিয়ার করতে দাও সবকিছু তারপর তোমার যা ইচ্ছে তাই বলো।
আদৃতা সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠলো
~কি ক্লিয়ার করবেন আপনি?এই তো যে আপনি ঐ মেয়েটাকে চেনেন না,মেয়েটা কেন এমন করলো তা জানেন না?কি ঠিক বললাম না মি.আদিয়াত?আসলে কি বলুন তো আপনি না একজন ক্যারেক্টারলেস ব্যাক্তি।
আদৃতা আর বলতে পারলো না তার আগেই আদিয়াত আগের থেকে দ্বিগুণ চিৎকার করে বললো
~তুই এইমুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে বেড়িয়ে যা।
আদৃতা কিচ্ছু বললো না।চোখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেলো।
কিন্তু শুধু রুম থেকেই বেড়োয় নি বরং বাড়ি থেকেই বেড়িয়ে গেলো।আদৃতাকে বাড়ি থেকে বেড়োতে দেখে মিসেস.তৌসি দৌড়ে আদিয়াতের কাছে গিয়ে বললো
~কি হয়ে আদিয়াত?মেয়েটা এমন করে বেড়িয়ে গেলো কেন?
আদিয়াত চমকে গিয়ে বললো
~মানে?কোথায় গিয়েছে?
মিসেস.তৌসি অস্থিরভাবে বললেন
~তা তো জানি না দেখলাম বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে।বেশি দূর যেতে পারেনি তুই যা তাড়াতাড়ি…
আদিয়াত আর একমুহূর্তও বসে থাকলো না।দৌড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আদৃতা হাঁটতে হাঁটতে মেইন-রোডের মাঝখানে চলে গিয়েছে।ওর আশেপাশের কিচ্ছু খেয়াল নেই।আনমনা হয়ে হাঁটছে। আদিয়াত আদৃতাকে খুঁজতে খুঁজতে দৌড়ে আসতেই দেখলো
আদৃতা রাস্তার একদম মাঝখানে হাঁটছে।মুহূর্তেই আদিয়াতকে ঘিরে ধরলো একরাশ ভয় আর অস্থিরতা।একটা ট্রাক আদৃতার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। আদিয়াত চিৎকার করে আদৃতাকে ডাকলো কিন্তু তা হয়তো আদৃতার কান অবধি পৌঁছালো না। আদিয়াত দৌড়ে আদৃতার সামনে যাবে তার আগেই ট্রাকটা এসে আদৃতাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো।এক নিমিষেই আদৃতার শুভ্র রঙের চুড়িদারটা যেন টকটকে লাল হয়ে গেলো।
সমাপ্ত।
((