শুভ্র রাঙা প্রেম পর্ব -১০

#শুভ্র_রাঙা_প্রেম 🤍
#পর্ব_১০
#Usha (Writer)

১৯.
আদিয়াত দু’বার ডাকার পরেও যখন আদৃতা শুনলো না তখন আদৃতার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই আদিয়াত আঁতকে উঠলো।ও যাদের থেকে আদৃতাকে দূরে রাখতে চেয়েছিলো শেষে তাদের সাথেই কিনা আদৃতার দেখা হয়ে গেলো?

দূর থেকে সেই ব্যাক্তিটিও আদৃতার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।চোখে-মুখে রয়েছে ভয়ংকর এক হাসি।নাহ্ আদৃতা আর ওখানে তাকিয়ে থাকতে পারলো না।মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলেই আদিয়াত নিজের বাহুতে পরম যত্নে আগলে নিলো ওকে।
আদিয়াত রাগী দৃষ্টিতে একবার সামনের দিকে তাকিয়ে আদৃতাকে কোলে তুলে নিলো।

গাড়িতে আদৃতা কে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসলো।আদৃতার চোখে-মুখে পানি ছেটাতে গিয়েও সড়ে আসলো।এখন আদৃতা উঠলেই অস্থির হয়ে যাবে।মানুষের ভয়ংকর কোনো অতীত যখন তাকে তাড়া করে বেড়ায় তখন সে মানুষটাই জানে তার অবস্থাটা।

বাড়ির সামনে এসে আদৃতার চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো।আদৃতা ধরফরিয়ে উঠলো।তারপর কিছুটা ভিতু দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকালো।আদিয়াত ওকে অভয় দিয়ে বললো
~ শান্ত হও আদৃপাখি।এখানে কেউ নেই।ভয় পেও না তুমি।নামো গাড়ি থেকে..।
আদৃতা গাড়ি থেকে নেমে গেলো।আদিয়াত গাড়ি পার্ক করে আদৃতাকে বললো
~চলো বাড়িতে?
আদৃতা বেশ দ্রুত হেঁটে বাড়িতে ঢুকলো।

বাড়িতে ঢুকতেই মিসেস.তৌসির মুখোমুখি হলো।মিসেস.তৌসি শক্ত কন্ঠে বললো
~কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?
আদৃতা চুপ রইলো।ওর ভাল্লাগছে না কোনো কথা বলতে এখন।
আদিয়াত আদৃতার অবস্থা বুঝতে পেরে মা’কে উদ্দেশ্য করে বললো
~একটু বাইরে গিয়েছিলাম মা।আসলে এই বাড়িতে আসার পর আদৃতা তেমন একটা বের হয়নি তাই ওকে একটু ঘুরিয়ে আনলাম।
মিসেস.তৌসি আদৃতার দিকে একপলক তাকিয়ে বললেন
~আগে তো তুমি যখন যেখানে যেতে মা’কে বলে যেতে।তবে এই কয়েকদিনে কি এমন হলো যে মা’কে বলে যাওয়ার সময়টা অবধি পাচ্ছো না?
আদিয়াত বললো
~সরি মা।তুমি রুমে ছিলে তাই আর বলে যাওয়া হয় নি।এখন আমরা দু’জনই ক্লান্ত। পরে কথা বলি?
মিসেস.তৌসি কথা বাড়ালেন না।বললেন
~বেশ যাও তবে।

__♥__
আদৃতা রুমে এসে শাড়িটা পাল্টে একটা চুড়িদার পড়লো।হুট করেই আদৃতার মধ্যে বেশ অপরাধবোধ কাজ করছে..।আদিয়াত ওকে নিয়ে একটু ঘুরতে চাইলো আর আজকেই এরকম হতে হলো?আদিয়াত কিনা কি ভাবলো।আচ্ছা গাড়িতে যে আদিয়াত বলছিলো এখানে কেউ নেই,ভয় না পেতে?আদিয়াত কি তবে সব জানে?নাহ্ আদিয়াত কি করে জানবে?আচ্ছা আদিয়াত কই?ভাবলো একবার গিয়ে দেখবে আদিয়াত কোথায় কিন্তু মাথা ব্যাথার জন্য আর গেলো না।শুয়ে পড়লো।

অন্যদিকে..
আদিয়াত ছাদে এসে রিশানকে কল করে বললো
~ দোস্ত আজকে আদৃতাকে নিয়ে বাইরে গিয়েছিলাম একটু কিন্তু ঐখানে হুট করে ঐ ইফাজের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো।আদৃতাও ওকে দেখেছে।আমার মনে হয় ঐ ইফাজের বাচ্চা আমাদের ফলো করছে।

~হায়রে..।আচ্ছা দাড়া দেখছি আমি।(রিশান)

আদিয়াত ফোন কে’টে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে
~ইফাজ হচ্ছে মিসেস.তৃণার ছেলে।হ্যা এই ইফাজই আদৃতার সাথে প্রচুর খারাপ আচরণ করেছে ওকে বাজেভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছে।আদৃতার অসুস্থ থাকায় যখন নিজের ঘরে শুয়ে ছিলো তখন ওকে অপবিত্র করার চেষ্টা করেছে।কিন্তু আদৃতা সেদিন আর সহ্য করতে পারেনি।যখন মিসেস.তৃণার কাছে বলেছিলো তখন তিনি বলেছিলেন তার ছেলে এরকম না।আদৃতা নাকি তার ছেলেকে ফাঁ’সা’নো’র চেষ্টা করছে।আরো কত কি..।সেদিন আদৃতা তাদের মা-ছেলেকে অনেক কিছু বলেছে শেষে পুলিশ ডাকার ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছিলো।সেদিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ইফাজ শুধু আদৃতার উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলেছিলো
~আমাকে এই ইফাজকে তুই অপমান করলি।এর ফল ভালো হবে না।তোকে আমি শান্তিতে থাকতে দিবো না।আমার অপমানের প্রতিশোধ আমি নেবোই।~

আদৃতা এরপর অনেক ভয়ে থাকলেও ১ বছর পার হওয়ার পর প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো ইফাজ নামক মানুষটাকে..।কিন্তু আজ আবার তার সাথে দেখা হয়ে গেলো।

২০.
কে’টে গেছে ৪মাস….
এই ৪ মাসে ইফাজের কোনো খোঁজ পায়নি আদিয়াত আর রিশান।
মিসেস.তৌসির সাথে এখন আদৃতার বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।মিসেস.তৌসি এখন আদৃতার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করেন।
সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই বদলেছে..।আদিয়াতের সাথে এখন আদৃতার সম্পর্কটাও বেশ ভালো আছে।দু’জন এখন বন্ধুর মতোই থাকে..।আদিয়াত আদৃতাকে নিজেরমতো করে গড়ে নিয়েছে।এখন আর আদৃতা আগের আদৃতা নেই।এখন আদৃতাকে কেউ কিছু বললে আদৃতা চুপচাপ শোনেই না বরং জবাবও দিয়ে দেয়।
অর্ণব আর তিষার সম্পর্কটা দিনদিন খারাপ পর্যায় যাচ্ছে। অর্ণব এখন তিষাকে সহ্য করতে পারে না।আর তিষা?সে তো এসবে মাথাই ঘামায় না।অর্ণবের টাকা দিয়ে বেশ ভালো মতোই আছে..।শপিং পার্টি ক্লাবে যাওয়া এসব তো ওর নিত্য দিনের কাজ।সংসারের দিকে কোনো মনোযোগ নেই ওর।

ক’দিন আগে অর্ণবকে আদৃতাকে ডেকে এমনি জিজ্ঞেস করেছিলো
~ আচ্ছা অর্ণব তুমি তো সম্পর্কে আমার ছোট তাই তুমি করেই বলি?তুমি আমায় দেখলেই মাথা নিচু করে হাঁটো কেন?তিষা আমার সাথে কথা বলা নিয়ে ঝগড়া করেছিলো বলে?
অর্ণব সেদিন অপরাধী কন্ঠে বলেছিলো
~তিষার কথাই আমি আপনার সাথে কথা বলা বন্ধ করিনি ভাবি।বরং লজ্জায় আপনার সাথে কথা বলা বন্ধ করেছি ভাবি।আমার রুমের পাশের রুমটাই তো আপনাদের।তাই আমি জানতাম আপনারা তিষার বলা সব কথাই স্পষ্ট শুনেছেন।সেই জন্য আপনার সাথে কথা বলতে আমার লজ্জা করছিলো।তিষা আপনাকে নিয়ে আজেবাজে কথাও বলেছিলো..।এতোকিছুর পরেও আপনার সাথে কি করেই বা কথা বলতাম?

আদৃতা হাসলো।ছেলেটা লজ্জায় ওর সাথে কথা বলেনি এতোদিন আর ও কিনা ভাবলো তিষার কথায় ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে?আদৃতা মুচকি হেসে বললো
~তোমার লজ্জা পাওয়ার দরকার নেই ভাই।যে বলেছে সেই যখন লজ্জা পাচ্ছে না তখন তুমি শুধু শুধুই লজ্জা পেও না।তিষাটা বড্ড অবাধ্য হয়ে গেছে।ও তো তোমার বউ।ওকে ঠিক করে তৈরি করে নাও ভাই।ও সারাদিন বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ফোনে চ্যাট করছে,হাসছে এগুলো নিশ্চয়ই তোমার চোখে পড়ছে?তবে চুপ করে আছো কেন?ওকে কিছু বলছো নাই বা কেন?তোমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে ওকে শাসন করার।

অর্ণব সেদিন কিছুই বলেনি হালকা হেসেছিলো।
….
আদিয়াত অফিসে নিজের কেবিনে বসে কিছু ফাইল দেখছিলো।ঠিক তখনই কেউ একজন পারমিশন না নিয়েই ভেতরে ঢুকলো।আদিয়াত কেবিনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ তুলে তাকালো।তোহাকে দেখে প্রচুর অবাক হলো কিন্তু পরেই রেগে ওর দিকে তাকিয়ে বললো
~ পারমিশন না নিয়ে কারো কেবিনে ঢুকতে হয় না জানেন না?আর আপনার এখানে কি দরকার?
তোহা মুচকি হেসে আদিয়াতের সামনে এসে ওর শার্টের কলার টেনে ঠিক নিজের মুখ বরাবর এনে বললো
~তোমায় দরকার।

আদিয়াত তোহার হাত থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে ঠাস করে থা’প্প’ড় মা’র’লো ওর গালে।তোহা গালে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে আদিয়াতের দিতে তাকিয়ে বললো
~তুমি আমায় মা’র’লে?
আদিয়াত হেসে দিয়ে বললো
~মেয়েরা নাকি লাজুক প্রকৃতির হয়?কিন্তু তোমায় দেখে তো মনে হয় না তোমার একটুও লজ্জা আছে?তুমি কি আসলেই মেয়ে তোহা?
তোহা রেগে গিয়ে বললো
~মানে টা কি হ্যা?তুমি কিন্তু আমায় অপমান করছো আদিয়াত।
আদিয়াত এবার জোরে হেসে দিয়ে বললো
~তোমার অপমানবোধ আছে?
তোহা রেগে-মেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোনে মিসড কল এলো।ও হুট করেই নিজের রূপ যেন পাল্টে ফেললো।তারপর হেসে বললো
~আমি জানতাম আদিয়াত তুমি কখনো আমায় ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতেই পারো না।জানো আমি তো প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে তুমি আদৃতা মেয়েটাকে বিয়ে করলে কেন?কিন্তু তুমি যখন বললে তুমি ঐ অাদৃতা মেয়েটাকে দয়া দেখিয়ে বিয়ে করেছো তখন আমি এতো খুশি হয়েছিলাম তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না।তুমি আসলেই এত্ত ভালো ঐ মেয়েটা একা বাড়িতে থাকলে মেয়েটার যেকোনো ক্ষতি হতে পারতো সেইজন্যই তো তুমি ওকে বিয়ে করেছো?যাইহোক এখন ওকে ডিভোর্স দিয়ে দাও আর তারপর চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।ওই মেয়েকে নাহয় তোমার বাড়িতেই রেখে দিলে সার্ভেন্ট হিসেবে..।ঐ মেয়ের কোনো যোগ্যতা আছে তোমায় বউ হওয়ার?

তোহার কথায় আদিয়াত অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।তোহা কি বললো এগুলো কিছুই বুঝলো না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here