#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ২৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
হোস্টেলে গিয়ে দেখি পৃথা রুমে নেই। আমি এটা নিয়ে তো বেশি মাথা ঘামালাম না। হয়তো কোনো কাজে গেছে। সোজা ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। বারবার মাথায় এই কথাই ঘুরছে লোকটা কি আসলেই অনুতপ্ত ?? নাকি এটা আবার কোনো নতুন ছল ? কেনো যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না এসব। তাই মাথাটাকে এখন ফ্রেশ করা খুব জরুরি। খুব।
সৌরভ আর পৃথা সামনাসামনি বসে আছে। পৃথা চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে সৌরভের দিকে তাকিয়ে আছে। আর সৌরভ অপরাধবোধ নিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। খনিকসময় পর পৃথা নিজের বসার স্থানে আরও মজবুত করে বসে বলে,
” আপনি কি সত্যিই ঈপ্সিতা কে ভালোবাসেন ?? নাকি আবার কোনো ফন্দি আটছেন ?? শুনেন যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আমি আপনাকে কখনোই এবিষয়ে হেল্প করব না। ”
সৌরভ সাথেসাথে মাথা উচু করে বলে,
” না না। এরকম কিছুই এবার হবে না। তোমাকে তো সবটাই বললাম। আমি মন থেকে ঈপ্সিতা কে নিজের কাছে চাইছি। এবার আর কোনো কষ্ট ওকে ছুঁতে পারবে না। এটা আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি। ভরসা করতে পারো আমাকে। ”
পৃথা কফির কাপটা টেবিলে রেখে উঠে দাড়ায়। বলে,
” ঠিক আছে। আমি হেল্প করবো। কিন্তু আবার যদি একই কাজ করতে দেখি তাহলে আমি নিজে কোনো স্টেপ নিতে বাধ্য হব। কারণ এটা আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের জীবনের ব্যাপারে প্রশ্ন। আর আমি যা বলছি তা করেই দেখাবো। সময় আর জায়গা মেসেজ করে দিবেন। আসি। ”
বলেই পৃথা কফিসপ থেকে বেরিয়ে যায়। সৌরভ বসা থেকে উঠে দাড়ায়। চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে এক বাঁকা হাসি দেয়। আর সেই হাসিতে তার আঁকাবাঁকা দাত গুলো ঝিলিক দিয়ে উঠে। ভাবে এবার তার মায়াপরী কে একেবারে নিজের করেই দম নিবে সে।। এই ঘৃনা আর ভালোবাসার লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়বে সে।
*******
আমি হোস্টেলের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। হটাৎ করেই যেনো মনটা বিষণ্ণ লাগছে। নিজেকে অনেক একা মনে হচ্ছে। কাউকে এখন আমার খুব প্রয়োজন। খুব করে মনের কথা বলার জন্যে কাউকে আমার প্রয়োজন। তাই আর দেরি না করে ফোন টা হতে নিয়ে মাকে ফোন লাগলাম। খানিকক্ষণ রিং হওয়ার পর মা ফোনটা ধরে হেলো বলতেই আমার প্রাণ জুড়িয়ে গেলো। কতদিন পর মার কণ্ঠ শুনছি। আমি নিজের উপচে পড়া কান্না কে চাপা দিয়ে বলি,
” কেমন আছো মা ?? ”
” ভালো। তুই ? এতদিন পর ফোন দিলি। আমি ফোন দিলেও তো ধরিস না। ”
আমি হাসলাম। বুঝলাম মার অনেক অভিমান হয়েছে আমার উপর। মুচকি হেসে বলি,
” কি করবো বলো ?? এখন তো আর আগের দিন নেই। বদলে গেছে সবকিছু। ”
” হুম বুঝেছি ,, মেয়ে আমার সংসারী হয়ে গেছে। তাই সময় হয়না। এরকম হয় বিয়ের পর। তাই মানিয়ে নে। আমি একদিন আসবো নে তোকে দেখতে। ”
আমি বিষন্ন মনে বলি,
” আর আসার দরকার নেই মা। আমি ও বাড়ি থেকে চলে এসেছি। ”
মা আমার কথায় খুব বড় ঝটকা খেলেন। বিস্মিত গলায় বলেন,
” চলে এসেছিস মানে ?? কোথায় এসেছিস ?? কি বলছিস তুই এসব ?? ”
” একেবারে চলে এসেছি ওই বাড়ি থেকে। আর এখন পৃথার হোস্টেলে আছি। ওই হোস্টেল মানে একটা দুই রুমের বাসা ভাড়া নিয়েছি। এখানেই থাকি। ”
মা অবাক হয়ে বলেন,
” কিন্তু কেনো ?? কেউ কিছু বলেছে ?? আকবর [ আমার শ্বশুর ] তো কিছু বললো না। কি হয়েছে মা বল। আর হোস্টেলে কেনো ? এই বাড়িতে এলে কি হতো। সমস্যা হতেই পারে কিন্তু তার তো সমাধানও আছে। কি হয়েছে বল আমাকে। সৌরভ কি কিছু বলেছে ?? ”
আমি ক্ষীণ আওয়াজে বলি,
” অনেক সমস্যা মা। আর এগুলোর কোনো সমাধান হয়না। আর প্লিজ তুমি আমাকে সেই সমস্যা বলতে বলো না। আমি বলতে পারবো না। আর খুব জলদি ডিভোর্সও হয়ে যাবে। ”
মা এবার আঁতকে উঠলেন। বলেন,
” কি সব বলছিস তুই ?? দেখ মা বাসায় আয়। একসাথে সামনাসামনি মিলে নাহয় কথা বলবো। মাথা ঠাণ্ডা কর। ঝোঁকের বসে কাজ করা ভালো না। ”
আমি এবার চিৎকার করে বলি,
” মা আমি এতটাও অবুঝ নই যে ঝোঁকের বসে কাজ করবো। আমি ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর প্লিজ তোমাদের কোনো সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দিও না। হাত জোড় করছি তোমার কাছে। আমাকে আমার মত বাঁচতে দেও। আর চিন্তা করো না আমি বাবার মানহানির কারণ হবো না। আমি নিজের পেট নিজে চালাবো। এইটুকু যোগ্যতা আমার আছে। আমার মনে হয়েছে তোমাকে জানানো দরকার তাই জানিয়েছি। আর বাবাকে বলো তার মেয়ে ডিভোর্সের পর তার মাথার উপর চাপবে না। একা একাই চলতে পারবে। ”
বলেই আমি ফোন রেখে দিলাম। অনেক কান্না পাচ্ছে আমার। আর পারলাম না। জোড়ে চিতকার করে মাটিতে বসে চোখের জল ছেড়ে দিলাম। নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছে। পরিবার থাকা সত্বেও নিজেকে অনেক , অনেক একা মনে হচ্ছে। মা বারবার ফোনে কল দিচ্ছে। কিন্তু এখন উনার মুখে সমঝোতার কথা শুনতে আমার মোটেও ইচ্ছে করছে না। হটাৎ কেউ আলতো হতে আমার কাধ ধরলো। হাতের স্পর্শই জানান দিচ্ছে এ পৃথা। আমি পিছন ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম। এই ভরসার হাত আমার অনেক দরকার ছিল। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বলতে লাগলাম,
” আমার সাথেই কেনো এসব হয় পৃথা ??বলতে পারিস। আমিতো মানিয়ে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। ও আমাকে অত্যাচার করা পরও আমার কেনো যেনো ওর প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মাতো না। আলাদা টান অনুভব করতাম আমি ওর প্রতি। হয়তো স্বামী বলে। কিন্তু সেদিন এর পর থেকে আমার সব অনুভতির মরে গেছে পৃথা। মরে গেছে। মাও বলছে ফিরে যেতে। কিন্তু আমি এতটা বেহায়া কি করে হবো বল। ওতো কখনোই আমাকে যোগ্য সম্মান দেয়নি। তাহলে আমিই কেনো ? বলতে পারিস। ”
পৃথা ঈপ্সিতার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর বারবার নিজের ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। সৌরভ এখনও লাইনে আছে। মানে ঈপ্সিতার সব কথা শুনেছে ও । ভালোই হলো একদিক থেকে জানতে পারলো ইপ্সিতার মনের কথা।
পৃথা আমাকে জড়িয়ে ধরেই বলতে লাগলো
” ঈপশি কান্না থামা। এভাবে কাদলে অসুস্থ হয়ে পড়বি। আচ্ছা এক জায়গায় জাবি আজ। আমার ফ্রেন্ডের পার্টি আছে একটা। নিউ ফ্রেন্ড। যাবি ওখানে ?? মন ভালো হয়ে যাবে তাহলে। ”
আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুখ মুছে বললাম,
” না তুই যা। আমার শরীর ভালো লাগছে না। ”
” আরে দূর। চল তো। ভালো লাগবে গেলে। জলদি কর। ”
বলেই আমাকে টেনে উঠিয়ে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিল। আমিও ফ্রেশ হয়ে একটা ত্রি পিস পড়ে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে রেডী হয়ে গেলাম। দুজনই রেডী হয়ে ঘর তালা মেরে বেরিয়ে পড়লাম পার্টির উদ্দেশ্যে।
আমরা দুজন একটা ক্যাফেতে এলাম। আমি ভাবছি পার্টি কি এই ক্যাফেতে হবে ? পৃথা হটাৎ বলে উঠে,
” দোস্ত , আমার একটু বাসায় যেতে হবে। আর্জেন্ট। তুই রুফটপে চলে যা। আমি জাস্ট আধা ঘন্টার মধ্যে আসছি। ওকে। জাস্ট half an hour.. তুই যা। ”
বলেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পৃথা একটা রিক্সা ভাড়া করে চলে গেলো। যাক বাবা। এখানে কাউকে চিনি না। কিভাবে যাবো ? আবার বাইরেও দাড়িয়ে থাকতে পারবনা। শীতের সময়ও রোদের প্রকোপ অনেক বেশি। কি আর করার। পৃথা কে হাজারটা বকা দিয়ে রুফটপের দিকে এগুলাম
একটু পর একটা মেয়ে এসে আমাকে ফুলের একটা তোরা দিলো। আমি অবাক হয়ে বললাম,
” এটা আমার ? ”
” ইয়েস ম্যাম। প্লিজ আমার সাথে চলুন। ”
বলেই মেয়েটা আমাকে নিয়ে রুফটপের দিকে এগুলো। আমি তো অবাক চরম সীমায় আছি। ওখানে গিয়ে মেয়েটা আমার চোখ একটা কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দিল। আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো তার আগেই মেয়েটা বললো,
” ম্যাম , প্লিজ এটা খুলবেন না। It’s a request.. ”
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম। আজ কি সব হচ্ছে আমার সাথে। পার্টি পৃথার ফ্রেন্ডের আর ওরা স্পেশাল ফিল করাচ্ছে আমাকে। রুফটপে ঢুকার সাথে সাথে আমার উপর ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে পড়লো। আমি আরো অবাক হলাম তাতে। মেয়েটা আমাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে বললো,
” ম্যাম প্লিজ এখানে অপেক্ষা করুন। আশা করি আপনার বিরক্ত লাগবে না। ”
বলেই মেয়েটা চলে গেলো। খানিকক্ষণ পর কেউ হটাৎ করেই আমাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো। এতে আমি চমকে উঠলাম। তার শরীরের ঘ্রাণ নিতেই বুঝলাম যে এ সৌরভ। কিন্তু উনি এখানে কেনো ?? উনার স্পর্শ করার সাথেসাথে আমার শরীর ঘৃণায় রিরি করে উঠলো। আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলে উনি আরো শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে ধীরে ধীরে নাক ঘষতে থাকেন। আমি এবার রীতিমতো কেপে কেপে উঠছিলাম। আমি উনার থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে জোরাজোরি করতে লাগলাম। কিন্তু যত জোরাজোরি করছি উনি ততই আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরছেন। উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে ধীরে ধীরে ঠোঁট ছুয়ে মিহি গলায় বলেন,
” হুসস।একদম নড়বে না। এই প্রথম তোমার এত কাছে এসেছি। ঘ্রাণ নিতে দাও। উফফ কি মাতাল করা ঘ্রাণ তোমার … কি পারফিউম দিয়েছ আজ ,, ইপশিপাখি……???
উনার এইভাবে স্পর্শ করাতে আমি বারবার কেপে কেপে উঠছিলাম। পরক্ষণে আমার রাগ সপ্তম চড়ে গেলো। আমি কিছু বলতে যাবো , উনি তার আগেই আমার ঘাড়ে মুখ গুজে বলে উঠলেন,
” জানো ইপসিপাখি , চোখে কাপড় বাঁধা অবস্থায় তোমাকে কতটা অপরূপ লাগে ?? জানো তুমি সেটা ?? আর এই যে রাগের কারণে তোমার নাকটা লাল হয়ে আছে মনে চাচ্ছে টুপ করে একটা কামড় বসিয়ে দেই। কিন্তু দেখো নেহাৎ আমি ভদ্র ছেলে তাই এইকাজটা করতে পারছি না। কিন্তু সুযোগ আসলে কিন্তু ছাড়বো না। মনে রেখো কথাটা,, আমার ইপশিপাখি । ”
উনার এইসব লাগামহীন কথাবার্তায় আমার কান রীতিমত গরম হয়ে যাচ্ছে। রাগ লাগছে সেই সাথে কিছুটা লজ্জাও লাগছে।
#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ২৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
উনার এইসব লাগামহীন কথাবার্তায় আমার কান রীতিমত গরম হয়ে যাচ্ছে। রাগ লাগছে সেই সাথে কিছুটা লজ্জাও লাগছে। পরক্ষণে উনার করা ব্যবহারগুলো মনে পড়ায় আমি আমার চোখ থাকে কাপড় খুলে ধাক্কা মারে উনাকে আমার থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে আমার হাতে টান খাই। আমি অবাক হয়ে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার আর উনার হাত একটা হ্যান্ডকাপ দিয়ে একসাথে জোড়া লাগানো। আমি এসব দেখে উনার দিকে রাগী চোঁখে তাকাই। উনি আমার চাহনি দেখে ভাবলেশহীন ভাবে বলেন,
” জানি তুমি ছটফট করবে। তাই আগে থেকেই রেডী হয়ে এসেছি। দেখছো আমি কতটা ইন্টেলিজেন্ট। ”
বলেই নিজের শার্টের কলার ঝাকালেন উনি। আমি উনার দিকে চোখ পাকিয়ে বলি,
” এসব করে আপনি কি বুঝাতে চাইছেন ?? এত সহজে আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিবো। এতটা সহজ সবকিছু ?? ”
এবার উনি এক হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,
” তুমি ক্ষমা করবে। একবার না হাজারবার তুমি ক্ষমা করবে। কারণ আমি তোমাকে বারবার মানাবো। তুমি শতবার আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে আমি হাজারবার তোমার মায়ায় জড়িয়ে যাবো। আর সেই মায়ায় তোমাকেও জড়াতে বাধ্য করবে। তখন তুমি বুঝবে ভালোবাসা কতোটা তৃপ্তি দেয়। বুঝলে আমার ইপশিপাখি। “”
উনি এমনভাবে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলছেন যে উনার ঠোট বারবার আমার কানে ছুঁয়ে দিচ্ছে। আর উনার এসব স্পর্শে আমি কেনো যেনো বারবার কেপে কেপে উঠছি। কিন্তু না আমাকে শক্ত হতে হবে। এত তারাতারি গললে চলবে না। আমি উনার বুকে হাত দিয়ে উনাকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলে উনি আরো শক্ত করে আমার কোমর জড়িয়ে নিজের দিকে টেনে ধরেন। আমি এবার মাথা উচুঁ করে উনার চোখের দিকে তাকিয়ে চড়াও গলায় বলি,
” ভালোবাসা ?? সত্যি ?? কিন্তু এত সহজে আপনি আমাকে ভালোবাসকেন কি করে ?? আপনিইতো একদিন বলেছেন আমি আপনার ভালোবাসার যোগ্য নই। তাহলে ?? এখন কোথা থেকে আসলো এই সো কল্ড নামধারী ভালোবাসা ?? ”
উনি এবার সিরিয়াস হয়ে বলেন,
” জানিনা। যদি বলো কখন থেকে ভালোবাসি তাহলে আমার উত্তর হবে জানিনা। ভালোবাসা কখনো বলে কয়ে আসে না ইপশিপাখি। এটাতো মনঘটিত ব্যাপার। যদি মন কাউকে ভালোবাসতে চায় তাহলে আমার তোমার সেখানে করার কিছুই থাকে না। আমরা তখন মনের কাছে হার মেনে তার কথা শুনতে বাধ্য হই। তোমাকে কেনো ভালোবাসি তার উত্তরও হবে জানিনা। ভালোবাসতে কি কোনো কারণ লাগে ইপশিপাখি ?? নির্স্বার্থহীন কি ভালোবাসা যায়না ?? সবসময় কি কারণটাই মুখ্য ?? তোমার একেকটা কথা , কথা বলার সময় ঠোঁটের আকিবুকি ,, সেই হাসি যার কারণে তোমার মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায় ,,, সেই সবকিছুর প্রেমে পড়েছি আমি। তোমার আরো কত শত নাম না জানা কারণের প্রেমে পড়েছি আমি, তা আমার নিজেরও কাছে ধোঁয়াশা ইপশিপাখি।। “”
আমি উনার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কেনো যেনো মনে হচ্ছে উনার এই চোখ অন্তত বেইমানি করবে না আমার সাথে। কিন্তু না। আমি বিশ্বাস করবো না উনাকে। আমি ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নিলাম উনার থেকে। উনি আমার কোমর ছেড়ে দিয়ে একটু সরে দাঁড়ালেন। সামনে তাকিয়ে বললেন,
” বিশ্বাস করার মত এখনও অনেক সময় পরে আছে। আপাদত সামনে তাকাও। ”
আমি মাথা উচু করে সামনে তাকালে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। রাতের আকাশে অনেকগুলো ফানুস উড়ছে। যেনো মনে হচ্ছে একঝাঁক জোনাকিরা উড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে আলো ছড়িয়ে মুখরিত করছে চারিদিক। হটাৎ আকাশে লাইটের মত করে কিছু একটা জ্বলে উঠে। সাথে জ্বলজ্বল করে উঠে “” I LOVE YOU JAN “””। আর এই লেখা দেখে আমার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়। এতটা চমক আমাকে কেউ কখনো দেয়নি। কিন্তু হটাৎ আমার মনে পড়ে এসবই অভিনয়। নতুনভাবে আমাকে কষ্ট দেওয়ার ফন্দি ছাড়া আর কিছুই নয় এসব। এসব ভেবেই আমার চোখের কোণে থাকা জল গড়িয়ে গেল বেয়ে মাটিতে পড়ে। আমি আমার মাথা নিচু করে ফেলি। হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে চোখটা মুছে নিজেকে সামলে নিচ্ছি আমি। সৌরভ ঈপ্সিতার মনের অবস্থা একটু হলেও আন্দাজ করতে পারছে। তাই সে ঈপ্সিতার কাছে গিয়ে মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে নিজের দিকে ফিরায়। আদুরে গলায় বলে
” কি হয়েছে ?? ভালো লাগে নি এসব ?? ”
আমি ঘৃনা মিশ্রিত গলায় বলি,
” আমার এসব জাস্ট অসহ্য লাগছে। কাটা গায়ে কেনো নুনের ছিটে দিচ্ছেন আপনি?? আমি আপনাকে শুধু ঘৃনা করি। তাই এসব করে কোনো ফায়দা নেই। আমাকে মুক্ত করুন প্লিজ। মুক্ত করুন। আমি আপনার দেওয়া কোনো আঘাতই ভুলতে পারছিনা। আর আমি ভুলতে চাইও না।””
বলেই আমি মাথা নিচু করে চোখের জল ছেড়ে দিলাম। উনি করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। হটাৎ উনি আমার উনার হ্যান্ডকাপ পড়া হাতকে টান মারেন। যার ফলে আমি উনার দিকে ঝুঁকে যাই। উনি অপরহাত দিয়ে আমার সামনে পড়া ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলেন,
” এখন আমি কিছু বলবো আর তুমি মন দিয়ে শুনবে।
প্রথমত আমার দোষ আমি তোমাকে সবার সামনে অপবাদ দিয়েছি। হ্যা আমি মানছি এটা আমার অন্যায় ছিল। কিন্তু সেই সময় সেখানে তোমার বাবা মা , অভ্র আর তোমার বোন ছিল। আর আমার পরিবার থেকে আমার মা আর বাবা ছিলেন। তাই এই কথাটা পাঁচকান হয়নি। আর আমার ফ্যামিলিতো বিশ্বাসই করেনি এই কথা।
দ্বিতীয়ত আমি কি কখনো তোমার বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে অপমান করেছি ?? যা করেছি বন্ধ কামরার ভিতর করেছি। কারণ আমি এতটাও নিচ ছিলাম না যে নিজের বউকে বাড়ির লোকের খোটা শোনাবো।
তৃতীয়ত আমি তোমাকে সহ্য করতে পারতাম না। সবসময় তোমাকে দেখলেই রাগ উঠতো। আর একজনের প্রতি রাগ উঠলে তার সবকিছুই তখন অসহ্য লাগে। তাই তোমার হাতের বানানো কিছুই খেতাম না। আর বাকি রইলো মুখের কথা গুলো। তখন আমি নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারেনি। তাই তোমাকে যাচ্ছেতাই কথা শুনিয়েছি।
আর এসব কিছুই অন্যায় ছিল আমি মানি। কিন্তু এসব কিছুর জন্যে আমি sorry বলেছি তোমাকে। বারবার ফিরে গিয়েছি তোমার কাছে। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো কিন্তু প্লিজ তোমার ঐ ঘৃণার চাহনি আমি সহ্য করতে পারবো না। ”
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললাম। এই চাইনা নতুন করে আবার এই লোকের মায়ায় জড়াই। উনি হটাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে মুখ গুজে ধীর গলায় বলেন,
” জানো তোমার ঐ ঘৃণার চাহনি দেখলে আমার বুকে তখন অসহ্য যন্ত্রণা হয়। তোমার ঐ ঘৃনা শব্দ আমার বুকে ছুরীঘাত করে। সইতে পারছিনা আমি আর ইপশিপাখি। মাফ করে দেও না ইপশিপাখি। কথা দিচ্ছি আর কখনই কোনো কষ্ট তোমাকে চুট পারবে না। প্রমিজ। ”
আমি উনার কথা শুনে নিরবে চোখে জল ফেলছি। উনি যতই বলুক আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমি কোনমতেই পুরনো কথা ভুলতে পারছিনা। আমার একবার মনে হয় উনি অনুতপ্ত তো আবার মনে হয় এসবই নিছক অভিনয়। নতুনভাবে আমাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো পায়তারা। কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
না না এত সহজে আমি উনাকে ক্ষমা করবো না। এত সহজে একদমই না। উনার করা ব্যাবহার গুলো পাই পাই করে আমি উনাকে ফিরত দিবো। উনি আমার ঘৃনারই যোগ্য। কখনও ভালোবাসার না। কখনোই না।
চলবে…
[ জানি গতকাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি আজ বাড়ি থেকে বাসায় আসছি। ইভেন আমার প্রচন্ড লেভেলের ঠান্ডা লেগে গিয়েছে।সেই সাথে মাথা ব্যাথা । তবুও লিখেছি। অনেক খারাপ হয়েছে জানি। কিন্তু প্লিজ বকবেন না। আমি অসুস্থ তাই এরকম হয়েছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপী রিডিং💓 ]
চলবে….
[