শূন্য থেকে আসে প্রেম পর্ব ২৫+২৬

#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ২৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

উনি যত আমাকে জড়িয়ে ধরছেন ততই আমার রাগ লাগছে। একসময় আমি না পারতে কেঁদেই দিলাম। উনি আমার কান্নার আওয়াজ শুনে আমাকে তারাতারি ছেড়ে দিয়ে ব্যাস্ত গলায় বলেন,

” কি হয়েছে ইপশপাখি?? Are you ok ?? Tell me damm it … শরীর খারাপ লাগছে ?? কিছুতো বলো.. ”

আমি কাদতে কাদতে বললাম,

” আমকে ছেড়ে দিন প্লিজ। আমার অসহ্য লাগছে। আমি বাসায় যাবো। প্লিজ। ”

” ওকে ,, ওকে don’t cry.. তুমি বাসায় যাবে তাইতো ?? চলো আমি তোমায় দিয়ে আসবো। “”

বলেই আমার হাত ধরে রুফটপ থেকে বের হয়ে আসলেন। আমাকে ড্রাইভিং সাইটের পাশে বসিয়ে নিজে গাড়ি চালাতে লাগলেন। আমি জানালার দিকে বিষন্ন মনে তাকিয়ে আছি। উনি আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে কঠোর গলায় বললেন,

” আজ ছেড়ে দিচ্ছি। তাই বলে সবসময় কিন্তু তা করবো না। আর আমি ফোন দিলে সেকেন্ডের ভিতর ফোন রিসিভ করবে। নাহলে সোজা বাসায় এসে পড়বো। অ্যান্ড সেই সাথে আমার লাভ টর্চার শুরু করে দিবো। এখন বলো তুমি কি তা চাও বেবি ?? ”

বলেই বাকা হাসলেন উনি। আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভয়ে এক ঢোক গিলে বলি,

” না না। ফোন ধরবো। ”

উনি আমার গাল টেনে দিয়ে বলেন,

” Thats like my girl.. ওকে এখন বাসায় যাও। ”

আমি মাথা নিচু করে বাসায় চলে এলাম। ঘরে ঢুকে দেখি পৃথা পালংয়ে বসে চিপস খাচ্ছে আর মুভির দেখছে। আমি রাগে সোজা গিয়ে টিভিটা অফ করে দিয়ে ওর দিকে তাকাই। ও আমার রাগী চেহারা দেখে খানিকটা ভরকে গিয়ে বলে,

” আসলে আরাফাত [ পৃথার bf ] এসেছিল। ওর সাথেই ডেটিংয়ে চলে গিয়েছিলাম। রাগ করিস না বনু। প্লিজ। ”

আমি ওর পাশে বসে কাদ কাদ গলায় বলি

” তোমার ডেটিংয়ের চক্করে পড়ে আমি যে ওই গম্ভীর মুখটার পাল্লায় পরলাম তার বেলায়। জানিস ও আমাকে আজ কত টর্চার করেছে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ”

পৃথা আমার কাছে গেসে উত্তেজিত গলায় বলে,

” এই এই কি করেছিস তোরা বল না। ওই কিস বা হাগ করেছিস ?? আরে বল না কি করেছিস। না শুধুই চোখে চোখ রেখে কথা বলা পর্যন্তই ছিল ?? ”

আমি ওর এসব বেশরম কথা শুনে চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকাই। ও ভরকে গিয়ে বলে,

” ওকে বাবা। বলা লাগবে না। Its your Private time.. hidden রাখাই ভালো। ”

আমি এক ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি,

” আজ যা হয়েছে সব দুঃস্বপ্ন ছিল তাছাড়া আর কিছুই নয়। আর খুব শীগ্রই এই সম্পর্কের ইতি টানবো আমি। ”

পৃথা আমার হাত ধরে অনুনয় করে বলে,

” মাফ করে দে উনাকে। উনি উনার ভুল বুঝতে পেরেছে। আর কত শাস্তি দিবি। তোর মনে হচ্ছে না এসব বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে এখন। ”

” না একদমই মনে হচ্ছে না। উনার দেওয়া আঘাত গুলো থেকে এসব অনেক নগণ্য। তুই বুঝবি না। ”

বলেই আমি ব্যাগটা কাধে নিয়ে আমার রুমে চলে আসি। ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে কি মনে করে জানালার দিকে তাকাই। দেখি সৌরভ ভাইয়া বাসায় নিচে অনবরত পায়চারি করছেন আর বারবার ফিন চেক করেছেন। কিন্তু উনি এখনো বাইরে দাড়িয়ে কি করছেন ? থাক আমার কি ? আমি ফ্রেশ হয়ে এসে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ফোনের লক খুলেই দেখি ৪৩ টা মিসকল। আর সব এসেছে সৌরভ ভাইয়ার নম্বর থেকে। হটাত আমার ফোন বেজে উঠলো। আমি জলদি রিসিভ করলাম। নাহলে আবার ঘরে চলে আসবে। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে উনি চিৎকার করে বলে উঠলেন,

” কোথায় ছিলে তুমি ?? এতক্ষণ লাগে ফোন রিসিভ করতে ?? আমাকে জালাতে অনেক ভালো লাগে তাই না ? তোমার চিন্তায় চিন্তায় আমি মরে গিয়েও শান্তি পাবনা। কবরে গিয়েও তোমার চিন্তা আমাকে তাড়া করে বেড়াবে। ফোন কোথায় থাকে তোমার?? আনসার মি dammit.. ”

আমি উনার ধমক শুনে কেপে উঠলাম। কোনোমতে বললাম,

” ফ.ফোন স.সাইলেন্ট ছিল। ”

” Oh i see.. তোমার ঐ রাস্কেল ফোন যদি আর কখনো সাইলেন্ট থাকে তাহলে আমি ওই ফোনকে এক আছার দিয়ে ভেঙে ফেলবো। I promise..”

আমি কিছু না বলে চুপ থাকলাম। আমার নিজেরও অনেক ভয় লাগছে উনার এই অসম্ভব রাগকে।উনি নিজের রাগকে যথাসম্ভব শান্ত করে বলেন,

” তুমি বাসায়?? ”

আমি আস্তে করে বলি,

” হুমম.. ”

” বাসায় গিয়ে ফোন করা গিয়েছিল না ?? এদিকে আমি চিন্তায় মরে যাচ্ছিলাম আর উনি একটা ফোন দেওয়া উচিত মনে করলেন না। বাহ । ”

উনার এই শান্ত আওয়াজেও যে কতটা রাগ লুকিয়ে আছে তা আমি ভালই বুঝতে পারছি। আমি তবুও সাহস জোগার করে বলি,

” বাসায় আসলে ফোন দেওয়া কি জরুরী ছিল ?? আপনিতো বাসায় দিয়ে গেলেন। তাহলে ?? এত চিন্তার কি আছে ? ”

” এসব তুমি বুঝবে না। একদিন বলেছিলাম না তোমাকে যেদিন সত্যিকার অর্থে কাউকে ভালোবাসবে সেদিন বুঝবে এই চিন্তার অর্থ কি ? ”

আমি এই কথার উত্তরে নিরব থাকলাম। কেনো যেনো এই “ভালোবাসা ” ওয়ার্ড টা আমার একদম ভালো লাগে না। একদমই না। কিছুক্ষণ দুজন নিরব থাকার পরে উনি বলেন,

” ফোন রেখে ঘুমাতে যাও। পরে কথা হবে। ”

আমি উনার কথা শুনে সাথে সাথে ফোন কেটে দিলাম। উনি হয়তো আশা করেছিলেন যে মাই কিছু বলবো। কিন্তু না এত সহজ না এতোকিছু ভুলা।

পরদিন…

উকিলের কেবিনের সামনে অপেক্ষা করছি । একটু পরই আমার সিরিয়াল আসবে। বুকের ভিতর খুব শূন্যতা অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছু যেনো হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি। একটু পর উকিলের PA এসে আমার নাম ধরে ডাকে। আমি কেবিনের ভিতর ঢুকে ধীর পায়ে উকিলের সামনে গিয়ে বসি। উকিল টা মধ্য বয়স্ক এক লোক। লোকটা চশমাটা চোখের উপরে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

” ডিভোর্স কেনো চান ?? ”

আমি নিজেকে সামলে বলি,

” একসাথে থাকা টা দুর্বিষহ হয়ে উঠছে তাই। ”

” কোনোভাবেই কি সম্পর্কও জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেছেন ?? ”

” হ্যা। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ”

” তাহলে আপনি ডিভোর্স চান এটাই ফাইনাল ?? ”

আমি জিব দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে বলি,

” হুমম। ”

“ঠিক আছে। আমি পেপারস রেডী করে রাখবো। কিছুদিন সময় লাগবে। আর আজ আপনার হাসবেন্ড কে ফোন দিয়ে জানানো হবে। kindly পেপারগুলোতে নিজের ইনফো গুলো লিখে সাইন করে দিন। ”

আমি কাপা কাপা হাত নিয়ে কলমটা হাতে তুলে নিলাম। কলমের সূক্ষ্ম অংশ দিয়ে পেপারগুলো তে সাইন করে দিলাম।

” আপনি এখন আসতে পারেন। ডিভোর্সের কাগজ রেডী হলে আপনাকে কল দেওয়া হবে। ”

” ধন্যবাদ। ”

বলেই আমি কাধের ব্যাগটা ঠিক করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলাম। রিকশা ভাড়া করে সেটাতে চড়ে বসলাম আমি। চোখগুলো আমার ছলছল করছে। যেকোনো সময় কান্নার জুয়ারে ভেসে যেতে পারে এই দুটো চোখ। কিন্তু আপাদত কান্না করা বারণ আমার।

বাসায় ঢুকেই নিজের রুমে চলে এলাম। দরজাটা বন্ধ করে মুখর চেপে ধরে চাপা কান্না কাদতে লাগলাম। এত কষ্ট কেনো লাগছে আমার। আমি তো উনাকে ঘৃনা করি তাহলে ?? এতটা কষ্ট পাওয়া কি আদৌ উচিত আমার ? আমি ওয়াশরুমে ঢুকে চোখ মুখ ধুয়ে বের হয়ে এলাম। এখন আবার পার্ট টাইম জবের জন্যে বের হতে হবে। কোনোমতে একগ্লাস পানি আর ব্রেড খেয়ে ঘর তালা মেরে বেরিয়ে গেলাম।

সন্ধেবেলা ….

ক্যাফে থেকে বেরিয়ে রাস্তায় রিক্সা খুঁজছি আমি। আজ কোনমতেই সৌরভ ভাইয়ার সামনে পড়া যাবে না। আমি নিশ্চিত যে এতক্ষণে ডিভোর্সের ব্যাপারটা উনার কানে গেছে। যায় হোক যতই জোড় করুক না কেনো আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকবো। উনি যা করছেন তার তুলনায় ডিভোর্স সঠিক কাজ হবে।
হটাৎ আর সামনে একটা গাড়ি জোড়ে ব্রেক করলো। আমি খানিকটা ভয় পেয়ে সরে দাড়ালাম। গাড়ি থেকে সৌরভ ভাইয়া সানগ্লাস পড়ে বের হলেন। উনার চোখ মুখ আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না। রাগে রীতিমতো বোম হয়ে আছেন। আমি আমার জায়গায় জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে আছি আর কাধের ব্যাগটা শক্ত করে খামচে ধরে আছি। উনি আমার সামনে এসে দাতে দাত চেপে ক্ষীণ সুরে বলেন,

” গাড়িতে উঠো । আজ তোমার ডানা কাটার ব্যাবস্থা করছি। ”

আমি আমার ব্যাগটা কে আরো শক্ত করে খামচে ধরে বলি,

” না। আপনি এখান থেকে চলে যান। আমি যাবনা আপনার সাথে। ”

এবার উনি আমার কাছে এসে নাকের সামনে একটা স্প্রে দিলেন। সাথে সাথে মার মাথা ঘুরতে লাগলো। কিছুসময় পর আমি উনার বুকে ঢলে পড়লাম। সৌরভ ঈপ্সিতার মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে বলে,

” এটা তোমার প্রাপ্য ছিল ইপশিপাখি। আজ তুমি যা করেছ এর ফল তুমি খুব জলদি হাতে পাবে। আমার হাত থেকে ছাড়া পাওয়া কি এতই সহজ আমার রাজ্যের রানী ?? ”
#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ২৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

কানে আযানের আওয়াজ আসতে আমি চোখ পিটপিট করে তাকালাম। মাথাটা হালকা ভার ভার লাগছে। কিন্তু এই রুমটা আমার অনেক অপরিচিত লাগছে। আমি পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি সৌরভ ভাইয়া একটা চেয়ারে বসে গালে হাত দিয়ে একধ্যানে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। উনার এই চাহনি দেখে আমি অসস্তি নিয়ে উনার দিকে তাকাই। হটাৎ উনি চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার পাশে বসে গভীর ভাবে আমার চোখ নিজের চোখ রাখেন। এবার আমি এই প্রেমাশক্ত চাহনি উপেক্ষা করতে পারছিনা। আমি একনজর উনার দিকে তাকিয়ে আবার মাথানিচু করে ফেলি। উনি আমার দিকে একটু ঝুঁকে মাতাল গলায় বলেন,

” Don’t do this to me ইপশিপপাখি.. তোমার ঐ ঘুমঘুম চেহারা আমার বুকের ভিতরে তোলপাড় করে দিচ্ছে। কই আগে ত এমন হয়নি । তাহলে এখন কেনো ওই মায়াময় চেহারা দেখলে নিজেকে সামলে নিতে কষ্ট হয় ?? মনে হয় কোনো একটা বড় অঘটন ঘটিয়ে ফেলি।কিন্তু কেনো ?? বলতে পারো এই অনুভতির কারণ কি ?? ”

আমি উনার এসব নেশাময় কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি। যতই উনাকে দূরে রাখার চেষ্টা করি না কেনো উনার এসব বেসামাল কথাগুলো আমার চেহারার লজ্জার কারণ হয়ে দাড়ায়। উনি আমার গাল টা টেনে সরে দাড়ান। হাসি মাখা মুখ নিয়ে বলেন,

” জানো তোমার ঐ লজ্জামাখা মুখ আমার বুকে বানের মত বিধে। তাই এখন লজ্জা না পেয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসো। দুপুরের খাবার এখনও খাওয়া হয়নি । So Go fast.. ”

আমি এবার হুশে আসলাম। চোখ সুরু করে উনার দিকে তাকিয়ে বলি,

” এটা কার বাসা ?? কোথায় নিয়ে এসেছেন আপনি আমায় ?? ”

উনি বিছানা থেকে উঠে দাড়ালেন। শরীরটা মোচড় দিয়ে বলেন,

” তোমার জামাইয়ের। ”

আমি অবাক হয়ে বলি,

” এটা আপনার বাসা ?? ২ টা বাসা আপনার ?? আগের বাড়ি, ওটা ?? ”

” জ্বি না। আগের বাড়ি ওটা তোমার শুশুড়ের। আর এই বাসা আমার নিজের টাকায় কিনা। বুঝলে আমার রাজ্যের রানী ?? ”

আমি আর কিছু বললাম না। হটাৎ উনি আমার হাত ধরে টান মেরে বিছানা থেকে উঠিয়ে নেন। আমি চমকে উনার দিকে তাকাই। উনি আমাকে ওয়াশরুমে সামনে এনে বললেন,

” Just 10 minutes.. এই সময়ের মধ্যে ফ্রেশ গিয়ে আসবে। Go .. ”

আমি উনার হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। একবারে সাওয়ার নিয়ে নিলাম। কিন্তু এখন বিপদ হচ্ছে আমার ড্রেস। এইবাসায় তো মনে হয়না আমার কোনো ড্রেস আছে। আমি শরীরে টাওয়েল জড়িয়ে ওয়াশরুমে দরজা টা একটু খুলে উকি মেরে দেখলাম উনি আছেন কিনা ?? হুমম। উনি সোফায় বসে ফোন টিপাচ্ছেন। আমি লজ্জা নিয়ে ক্ষীণ আওয়াজে বলি

” শুনছেন…. ”

উনি ফোন থেকে মাথাটা ফুলে আমার দিরক তাকালেন। আমি মাথাটা নিচু করে বললাম,

” একটু এদিকে আসেন না প্লিজ। ”

উনি চোখে মুখে দুষ্টু হাসি নিয়ে আমার সামনে এস দাড়ালেন। বাঁকা হেসে বলেন,

” কি ব্যাপার বলতো ?? একসাথে সাওয়ার নেওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি ?? ইচ্ছে থাকলে বলতে পারো i don’t mind.. you know তোমার একমাত্র জামাই বলে কথা। ”

বলেই আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকালেন উনি। আমি চোখ গরম করে দরজাটা আরো একটু লাগিয়ে নিজেকে আড়াল করে বলি,

“একদম না। দেখছেন না আমার সাওয়ার নেওয়া শেষ। আপনি তো ভারী লুচু। চোখ কোথায় কোথায় যাচ্ছে আপনার ?? হুমম ?? ”

এবার উনি চোখে মুখে সিরিয়াস ভাব এনে বলেন,

” বুঝলাম। তো বলো কি করবো ?? ডাকলে কেনো ?? ”

আমি মাথাটা নিচু করে বলি,

” আমার জামা ?? ”

” ওহ সিট। আমি তোমার জামা আনতে ভুলে গেছি। Sorry sorry.. ওকে তুমি আমার জামা কাপড় পরে বের হও আমি এরমধ্যে দোকান থেকে তোমার জামা কাপড় নিয়ে আসছি। ওকে.?? ”

উনার কথা শুনে এবার আমার কেঁদে দেওয়ার মত অবস্থা। উনার জামা কাপড় আমি পড়ব ?? ছি কিরকম লাগবে দেখতে। কিন্তু না পরেও উপায় নেই। আমি তাই অসহায় মুখ নিয়ে মাথা নেড়ে হে বলি। সাথেসাথে উনার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়। কিন্তু কেনো ?? উনি তারাতারি করে ওয়ার্ডরোবে থেকে একটা শার্ট আর জিন্স এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন,

” জলদি করো। ওকে । I’m waiting… ”

আমি উনার দিকে সন্দেহ নিয়ে তাকাই। এতো খুশির কি আছে বুঝলাম না। আমি উনার হাত থেকে জামা কাপড় নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

ওয়াশরুমে দরজাটা খুলে আমি ধীর পায়ে বের গিয়ে আসলাম। দাত দিয়ে ঠোট টা কামড়ে চারিদিক চোখ বুলিয়ে দেখলাম উনি কোথাও নেই। মনে হয় জামা আনতে গিয়েছেন উনি। যাক বাবা বাঁচা গেলো। নাহলে এইরকম অবস্থায় দেখলে আমি তো লজ্জায় মরেই যেতাম। হটাৎ কেউ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলে আমি চমকে যাই। গায়ের ঘ্রাণ নিতেই বুঝি সৌরভ ভাইয়া। আমি শক্ত হয়ে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলাম। উনি আমার শার্ট টা একটু উঠিয়ে খালি কোমরে নিজের ঠান্ডা হাত দিয়ে চেপে ধরলে আমি পুরো কেপে উঠি। উনি আমার ঘাড়ে ধীরে ধীরে ঠোঁট বুলাতে বুলাতে কোমরে আরো শক্ত করে নিজের হাত চেপে ধরেন। মাতাল গলায় বলেন,

” নেশা ধরিয়ে দিয়েছ বউ । নেশা ধরিয়ে দিয়েছ। আমার ২৬ বছর জীবনে আমি কখনো এতটা বেসামাল হয়নি। কিন্তু আজ তার এইরূপ দেখে পরে আমি নিজেকে সামলাতে হিমসিম খাচ্ছি।আমার কল্পনার থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে। কি আছে তোমার মধ্যে যা আমাকে এতটা টানে বলবে কি ?? ”

উনার এইসব কথা শুনে আমার শরীর ঝঙ্কার দিয়ে উঠলো। আমি চোখটা খিচে বন্ধ করে দাড়িয়ে আছি। আমি উনাকে বাঁধা দিতে চাইলেও বাঁধা দিতে পারছিনা। উনাকে কেনো যেন ঘৃনা করতে চাইলে ঘৃনা করতে পারিনা। দূরে ঠেলতে চাইলেও আরো কাছে এসে ধরা দেয়। ছেড়ে দিতে চাইলে আরো শক্ত নিজের মায়ায় জড়িয়ে নেয়। কিন্তু এতকিছুর ভিড়ে আমি কেনো যেনো উনাকে ক্ষমা করতে পারছিনা। কি চলছে আমার মনের মধ্যে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। হটাৎ উনি আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেন। আমি রীতিমত কেপে কেপে উঠছি। উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবো সেই শক্তি টাও পাচ্ছি না। কোনোমতে কাপা কাপা গলায় বলি,

” ছ. ছার. ছাড়ুন..প্লিজ।

উনি আমার গলা শুনে সেখানেই থেমে গেলেন। আমার গলায় মুখ রেখে জোড় জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছেন। যার ফলে উনার ঠোট বারবার আমার গলা ছুঁয়ে যাচ্ছে। আর আমি জমে শক্তি হয়ে দারিয়ে আছি। কিছুসময় পর উনি আমার থেকে সরে দাঁড়ালেন। আমি মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আমার দিকে একনজর তাকিয়ে বলেন,

” নিচে খাবার রেডী। খাবে চলো। ”

আমি মাথা নিচু করে উনার পিছু পিছু চললাম। খাবার টেবিলে সামনে এসে দেখলাম অনেক ধরনের খাবার রান্না করা। কিন্তু এত খাবার কে রাধল। উনি আমার কাছে একটা চেয়ার টেনে সেটাতে আমাকে বসিয়ে নিজের আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লেন। একটা প্লেটে খাবার নিয়ে লোকমা বানিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলেন। আমি লজ্জায় মিয়ে যাওয়া সুরে বলি,

” আমি খেতে পারবো। ”

উনি আমার গাল চেপে ধরে ভাতের লোকমা মুখে ঢুকিয়ে বলেন,

” চিবাও। এখন থেকে আলাদা খাবো না। একসাথে একপ্লেটে খাবো। তাহলে ভালবাসা বাড়বে। So এখন থেকে এটাও অভ্যেস করে নাও। ”

আমি ভাত খাওয়া বন্ধ কর দিয়ে ছলছল চোখে বলি,

” ভালোবাসা ?? এর মানে কি জানেন আপনি ?? জোড় করে কি ভালোবাস হাসিল করা যায় ?? ”

উনি নিজের মুখে খাবার পুরে বলেন,

” জোর ?? এটাকে তো জোড় বলে না ইপশিপপাখী। নিজের অধিকার আদায় করা আমি খুব ভালো করে জানি। আর এসব করছি কারণ তুমি তো সোজা কথার মানুষ না। তাই এই বাঁকা পথ ধরতে হয়েছে। আর খাবার খাওয়া পর তোমাকে আমি এক উত্তম শিক্ষা দিবো। Wait for it baby.. ”

বলেই আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলেন উনি। আর আমি সেই বাকা হাসির দিকে তাকিয়ে ভয়ে এক ঢুক গিলি। না জানি কোন ঝড় আমার উপর যায় ?? ডিভোর্সের ব্যাপারটা এতো সহজে উনি মেনে নিবেন এটাতো হতেই পারে না। এতদিনে উনার এই রূপটা আমি খুব ভালো করেই চিনেছি।

চলবে..
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here