শেষটা সুন্দর পর্ব ১০

#শেষটা_সুন্দর
#পার্ট_১০
#নিশাত_জাহান_নিশি
,

,

,

–“আমি তোমারে শিখাইয়া দিতাছি কেম্নে গাছে উঠবা। প্রথমে শাড়ি টা ভালো কইরা কোমড়ে গুইজ্জা লও।”

চাঁদনী ও লক্ষী মেয়ের মতো কোঁমড়ে শাড়িটা ভালো করে গুজে নিলো। লোকটা আবার চেঁচিয়ে বলল,,,,,

–“এইবার দুহাত দিয়া গাছটারে আন্জা কইরা ধরো।”

চাঁদনী কপাল কুঁচকে কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,,,,,

–“ভাই আন্জা অর্থ বুঝলাম না।”

–“আরে, আন্জা মানে হইল জড়িয়ে ধরা। এবার বুজ্জ?”

চাঁদনী মাথা নাঁড়িয়ে হ্যা বুঝালো। লোকটির কথা মতো চাঁদনী গাছটাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল।

লোকটি আবার চেঁচিয়ে বলল,,,,,

—“এবার দুই পা দিয়া গাছটারে আন্জা কইরা ধইরা শরীরের সব ভর গাছটার উপর ছাইড়া দও।”

চাঁদনী গাছটাকে আঁকড়ে ধরে মুখটা কাঁচু মাচু করে লোকটার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

–“ভাই আপনি এক্টু নিচে নেমে আমাকে প্র্যাকটিক্যালি শিখিয়ে দিবেন? আসলে আমি আপনার কথার আগা মাথা বুঝছি না। শুদ্ধ, অশুদ্ধ এই দুই এর মিশ্রণে আমি হয়রাণ।”

আচমকা লোকটি গাছটাকে আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,

–“না না আমি নামুম না। মাগো আমার ডর করে। আফা… সাপটা কি অহনো ফুসফুস করতাছে?”

–“এখন এক্টু কমেছে ভাই। প্লিজ আমার জীবন বাঁচান ভাই। আমি আপনাকে দুটো বাংলা মদ কিনার টাকা দিবো।”

লোকটা বএিশ পাঁটি বের করে বলল,,,,

–“রহেন, আমি আইতাছি।”

ঐদিকে নূর হাসতে হাসতে উন্মাদ প্রায়। সামনে তৈরি হওয়া একের পর এক ঘটনা গুলো নূর কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারছে না। সে চাইলে ও হাসি বন্ধ করতে পারছে না। মন প্রাণ খুলে হাসছে সে। চাঁদনী আড় চোখে নূরের দিকে তাকাচ্ছে। চাঁদনী মনে মনে তৃপ্তির হাসি হাসছে। সে পারছে নূরকে হাসাতে। নূর কিছুটা সময়ের জন্যে হলেও অতীত টাকে ভুলতে পারছে। বলা যায় না, হয়তো এক্টু পরেই নূর আবার উওাল হয়ে উঠবে।

লোকটি নিচে নামতে নামতে গাছের মাঝামাঝিতে চলে এসেছে। চাঁদনী লোকটিকে ইশারা দিয়ে বলল আরো নিচে নামতে। লোকটি ও চাঁদনীর কথা মতো গাছের প্রায় নিচের অংশে নেমে এলো। চাঁদনী এখনো গাছ আঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি চাঁদনীর থেকে এক হাত উপরে আছে। বাঁদড়ের মতো উনি গাছটিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।

হুট করে চাঁদনী লোকটির পা দুটো টেনে ধরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,

–“বেটা নেশাখোর। আমাদের থেকে ক্ষতি পূরণ নেওয়ার খুব শখ তোর তাই না? তোর সাহস দেখে আমি টোটালি শকড। নেশা ভান করে গাড়ি চালাবি আবার আমাদের থেকেই ক্ষতিপূরণ চাইবি? তুই যে ইচ্ছা করে তোর বাইকটা আমাদের বাইকের সাথে লাগিয়েছিস আমি খুব বুঝতে পেরেছি। তাই তো এতো ছলছাতরি করে তোকে ভাগে আনলাম।”

চাঁদনী কথা গুলো বলছে আর লোকটির পা ধরে টানছে। লোকটি চেঁচিয়ে বলছে,,,,,

–“আফা প্লিজ আমারে মাফ কইরা দেন। আর জীবনে ও ইতা কাম করতাম না। আর জীবনে ও আপ্নে গো চোখের সামনে পড়তাম না। আজকের জন্য আমারে মাফ কইরা দেন। পা টা ছাড়েন আমার। না হয় প্যান্ট খসে পড়ে আমার ইজ্জত নিলামে উঠবে। আমারে ইজ্জতহারা কইরেন না আফা। দোহাই লাগে আম্নের। আইজ্জা আমি আন্ডারওয়্যার ও পড়ছি না। প্যান্টটা কোনো রকমে খুইল্লা গেলে আম্নে আমার সম্পদটা দেইক্ষা ফেলাইবেন।”

নূর এবার হাসি থামিয়ে বসা থেকে উঠে গেলো। চাঁদনী যেভাবে লোকটির পা ধরে টানছে কখন যে পায়ের বদলে প্যান্ট খুলে চাঁদনীর হাতে চলে আসে। আল্লাহ্ মালুম। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই নূরকে পরিস্থিতি কন্ট্রোল করতে হবে।

নূর চাঁদনীর সামনে দাঁড়িয়ে রাগী দৃষ্টিতে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“চাঁদ ছাড়ো। যা হওয়ার হয়ে গেছে। রাস্তায় এসব সিনক্রিয়েট করা মানায় না। লোকজন জড় হবে। সবাই তোমার উপর আঙ্গুল তুলবে। ছাড়ো উনাকে।”

চাঁদনী তবু ও লোকটির পা ছাড়ছে না। সমানে লোকটিকে টানছে। লোকটির কাঁচু মাচু মুখটা দেখে নূরের খুব হাসি পাচ্ছে। চাঁদনীর টানাটানি দেখে নূরের হাসির পরিমাণ যেনো আরো বেশি বেড়ে যাচ্ছে।

টানাটানির এক পর্যায়ে লোকটির প্যান্ট খুলে চাঁদনীর হাতে চলে এসেছে। ভাগ্যিস আকাশে রাতের আর্বিভাব ঘটেছে। না হয় লজ্জায় মাথা কাটা যেতো। লোকটি এবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেই দিলো। চাঁদনী লোকটার প্যান্ট হাতে নিয়ে বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদনী ভাবে নি এতো সহজে লোকটির প্যান্ট খুলে হাতে চলে আসবে।

চাঁদনী জিভ কেটে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নূর দৌঁড়ে উল্টে থাকা বাইকটাকে সোজা করে বাইকে বসে বাইকটা স্টার্ট করে বাইকটা নিয়ে চাঁদনীর সামনে এসে উওেজিত কন্ঠে বলে উঠল,,,,,

–“চাঁদ তাড়াতাড়ি বাইকে উঠো। এখানে আর বেশিক্ষন থাকা যাবে না। লোকজন এসে তোমাকে র‍্যাপার বলে জেলে পুড়ে দেবে। প্লিজ তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠো।”

লোকটা এখনো ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেই যাচ্ছে। হাতে থাকা প্যান্টটা চাঁদনী লোকটার গায়ে ছুড়ে মেরে বলল,,,,,,

–“তোর লজ্জা থাকলে আর জীবনে ও নেশা ভান করে গাড়ি চালাবি না।”

কথা গুলো বলেই চাঁদনী বাইকের পিছনে উঠে বসে পড়ল। নূর এবার ভোঁ ভোঁ করে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। লোকটা ফটাফট গাছ থেকে নেমে প্যান্টটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে মিনমিন করে বলল,,,,

–“গেলো রে গেলো। আজ আমার মান সম্মান গেলো।”

নূর বাইক চালাচ্ছে আর চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,

–“চাঁদ তুমি এক্টু বেশিই বাড়াবাড়ি করেছ। কি দরকার ছিলো উনাকে নিয়ে এতো টানাটানি করার? ফিফটি পার্সেন্ট ভুল কিন্তু তোমার ও ছিলো।”

চাঁদনী নূরের কাঁধে হাত রাখতে গিয়ে ও নিজেকে দমিয়ে নিলো। কারণ সে জানে নূর এখন এক ঝটকায় ওর হাতটা সরিয়ে দিবে। চাঁদনী কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল,,,,,

–“হান্ড্রেড পার্সেন্ট দোষ উনার ই ছিলো। তোমার দিকে ফেরার আগে আমি ভালো করে সামনের দিকটা চেইক করে নিয়েছিলাম আমার সামনে কোনো গাড়ি ই ছিলো না। কিন্তু ঐ মাতালটা মাতলামি করে উড়া ধুরা গাড়ি চালিয়ে উইদাউট এ্যানি হর্ণ আমার বাইকের সাথে এসে নিজের বাইক লাগিয়ে দিলো। নেহাত আল্লাহ্ আমাদের রক্ষা করেছে। না হয় এতক্ষনে মরে ভূত হয়ে যেতাম। আমি কিচ্ছু বাড়াবাড়ি করি নি। যা করেছি একদম ঠিক করেছি। লজ্জা থাকলে আর কখনো ড্রাংক অবস্থায় বাইক চালাবে না।”

নূর কিছুটা কৌতুহল নিয়ে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“তার মানে তুমি ইচ্ছে করে লোকটাকে সাপের ভয় দেখিয়েছিলে?”

–“হুম ইচ্ছে করে। লোকটাকে হেনস্তা করার জন্য। তুমি যে রেগে আমার সাথে ফুসছিলে আমি খুব বুঝতে পেরেছি। তা ও আমি ওভার এক্টিং করে লোকটাকে সাজা দিলাম। কেমন হয়েছে আমার সাজা?” (বএিশ পাটি বের করে)

নূর হেসে হেসে বলল,,,,,

–“আমি তো খুবববব মজা পেয়েছি। দুই পাগলের পাগলামী দেখে।”

চাঁদনী নূরের দিকে এক্টু ঝুঁকে নূরের হাসিটা মুগ্ধ নয়নে দেখছে। চাঁদনী আনমনা হয়ে মিনমিন করে বলল,,,,,

–“তোমার মায়াভরা হাসিটা দেখার জন্য আমি পাগল হতে ও রাজি আছি। তোমার হাসি মুখটা দেখার জন্যই তো এতো মেলো ড্রামা করলাম। আমি পেরেছি কিছুটা সময়ের জন্য হলে ও তোমাকে হাসি খুশি রাখতে। বাড়িতে গেলে হয়তো আবার আপসেট হয়ে যাবে। রোজ আপুকে ভীষণভাবে মনে পড়বে তখন। আবার তুমি রোজ আপুর জন্য পাগলামী করবে। তখন কিভাবে আমি তোমাকে সামাল দিবো? তোমার বিষন্ন মুখটা আমি দেখতে পারি না। বুকের ভিতর বৈরী আবহাওয়ার তান্ডব শুরু হয়। নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়।”

প্রিয় মানুষ গুলোর বিষন্নতা আমরা তেমন এক্টা সহ্য করতে পারি না। তখন মনে হয় যেকোনো উপায়েই হোক তাকে হাসাতে হবে। তার চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলতে হবে। তার মনের ভিতর জমে থাকা কালো মেঘ গুলোকে সূর্য্যের আলোর কাছে হার মানিয়ে দিতে হবে। সূর্য্যের প্রখর তাপে মেঘ গুলো উবে সূর্য্যের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে। যার ফলে তৈরি হবে এক্টা মিষ্টি হাসি। এই হাসিটা দেখেই নিজেকে উচ্ছলতায় ভাসিয়ে দিতে মন চাইবে। আমরা মানুষরা বড়ই বিচিএ। মনে মনে হাজারো কিছু ভেবে নিজের মনকে শান্তনা দিতে উঠে পড়ে লাগি। যেমনটা চাঁদনী এতোক্ষন নূরকে নিয়ে ভেবেছে। নিজের মনকে এক প্রকার শান্তনা দিয়ে সে নূরকে নিয়ে অনেক কিছু ভাবছে।

নূর হাসি থামিয়ে এক ধ্যানে বাইক চালাচ্ছে। বাতাসে চাঁদনীর চুলগুলো হাত খোঁপা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের বাতাসের সাথে উড়িয়ে দিচ্ছে। যার প্রভাব নূরের চোখে মুখে উপচে পড়ছে। নূর কিছুটা বিরক্ত হয়ে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“চাঁদ, খুব বিরক্ত লাগছে আমার। প্লিজ চুল গুলো বেঁধে রাখো।”

চাঁদনী মুখটা কালো করে বলল,,,,,

–“খোপা থেকে চুল গুলো ছুটে গেছে। এখন খোপা করতে নিলে আমি বেসামাল হয়ে পড়ে যাবো।”

নূর নাক মুখ কুঁচকে বলল,,,,,

–“তাহলে আমার মুখের সামনে থেকে চুল গুলো সরাও। অস্বস্তি লাগছে আমার।”

–“অস্বস্তি লাগছে কেনো? রোজ আপুর চুল কখনো তোমার চোখে মুখে পড়ে নি?”

–“চাঁদ প্লিজ, রোজের সাথে নিজেকে তুলনা করতে যেও না। রোজের চুলের স্মেলটা ছিলো অন্য রকম। আমাকে মাতাল করার জন্য যথেষ্ট ছিলো।”

মুহূৃতেই চাঁদনীর মুখটা বিষন্নতায় ছেঁয়ে গেলো। চাঁদনী নূরের মুখের সামনে থেকে চুল গুলো সরিয়ে হালকা পেচিয়ে নিলো। যেনো উড়ে গিয়ে নূরের চোখে মুখে না পড়ে।

চাঁদনী চুপ হয়ে বসে আছে। কোনো কথা বলছে না। নূর গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে বাতাসের বেগে ছুটল বাইক নিয়ে। চাঁদনী বেসামাল হয়ে বার বার পড়ে যেতে নিচ্ছে। তবু ও সে নূরকে ধরছে না। এক প্রকার রাগ হচ্ছে ওর। রাগটাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য সে বাইকের পিছনের অংশটা মুঠ করে ধরে রেখেছে।

*
*

প্রায় দশ মিনিট পর ওরা বাড়ি এসে পৌঁছে গেলো। নূর বাইক নিয়ে সোজা বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। আয়মনের গাড়িটা বাড়ির বাগানে পার্ক করা। নূর ও বাড়ির বাগানে এসে বাইকটা পার্ক করল। চাঁদনী প্রথমে বাইক থেকে নেমে বাড়ির সদর দরজায় ঢুকে গেলো। নূর বাইকের চাবিটা হাতে নিয়ে চাঁদনীর পিছু পিছু হাঁটা ধরল।

ড্রইং রুমে বাড়ির মুরুব্বিরা জট পাকিয়ে বসে আছে। চাঁদনীর আম্মু, আব্বু নূরের আম্মু, আব্বু, জায়মার আম্মু, আব্বু, নীড়, আয়মন, সোহানী সবাই উপস্থিত ড্রইং রুমে। লাবিবা আর হিমেল এক্টু আগেই বাড়ি চলে গেছে।

নূর আর চাঁদনী এক সাথেই ড্রইং রুমে ঢুকল। নূর সবাইকে এক সাথে দেখে মাথাটা নিচু করে যেই না সামনের দিকে পা বাড়াল অমনি নূরের আব্বু হাবিব আবরার নূরকে উদ্দেশ্য করে গর্জন দিয়ে বলল,,,,,

–“নূর তোমার সাথে আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ন কথা আছে। কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি এক চুল ও এখান থেকে নড়বে না।”

নূর পিছু ঘুরে হাবিব আবরারকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“তোমাদের গুরুত্বপূর্ন কথা ঠিক কি হবে তা আমার ভালো করে জানা আছে। তোমরা সবাই কান খুলে শুনে রাখো, আমি চাঁদকে বউ হিসেবে মানতে পারব না। বউ ভাত, রিসেপশান আমি কিছুই করতে পারব না। তোমরা অনেক মেলো ড্রামা করে আমার ঘাঁড়ে চাঁদকে চাপিয়ে দিয়েছ। আমি বাধ্য হয়েছিলাম চাঁদকে বিয়ে করতে। তোমাদের জন্য চাঁদের জীবনটা ও নষ্ট হয়ে গেলো। এর দায় ভার কিন্তু আমি নিতে পারব না। আমি শুধু রোজকে ভালোবাসি আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শুধু রোজকেই ভালোবেসে যাবো। আঠারো বয়সী মেয়েটাকে তোমরা কিভাবে পারলে এক্টা পঁচিশ বছরের ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিতে? মেয়েটার নাক টিপলে এখনো দুধ বের হবে! ওর বাচ্চামী স্বভাবটা ও এখনো পর্যন্ত যায় নি। কিছু এক্টা না পেলে হাত পা ছুড়াছুড়ি করে বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে। তোমরাই বলো না, এই অল্প বয়সী মেয়েটা কিভাবে পারবে কোমড় বেঁধে সংসার করতে? আমি এই বিয়ে মানি না। আমি নিজের জীবন নষ্ট করতে পারব। বাট চাঁদের গোছানো জীবনটা নষ্ট করতে পারব না। আশা করি তোমরা তোমাদের উওর পেয়ে গেছো?”

কথা গুলো বলেই নূর সিঁড়ি বেয়ে রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজাটা আটকে দিলো। ড্রইং রুমে উপস্থিত সবাই থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদনী চোখে জল আর মুখে হাসি নিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“তোমরা এভাবে ভেঙ্গে পড়ছ কেনো? দেখছ না আমি কতো স্ট্রং আছি? আমাদের এই মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। সবাইকে খুব স্ট্রং হতে হবে। নূর ভাইয়াকে এই খারাপ পরিস্থিতি থেকে বের করতে হবে। রোজ আপু নূর ভাইয়ার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়ে চলে গেছে। আমরা আবার নূর ভাইয়ার জীবনটা সুন্দর করে গুছিয়ে দিবো। যথেষ্ট ধৈর্য্যশীল হতে হবে আমাদের। বউভাত, রিসেপশান সব হবে। তোমরা সব কিছুর আয়োজন করো। আমি নূর ভাইয়াকে ঠিক রাজি করিয়ে নিবো। তাছাড়া আমি তো শুধু এই বাড়ির বউ না, সমানভাবে এই বাড়ির মেয়ে ও। আমি এখন কোমড় বেঁধে সংসার করতে পারব না। এখন আমার শুধু এক্টাই লক্ষ্য নূর ভাইয়াকে স্বাভাবিক করা। যেদিন আমি নূর ভাইয়াকে পুরোপুরি স্বাভাবিক করতে পারব ঐদিন থেকেই আমি কোমড় বেঁধে সংসারে লেগে পড়ব।”

কথা গুলো বলেই চাঁদনী সিঁড়ি বেয়ে নূরের রুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পড়ল। চাঁদনী কিছুটা ইতস্তবোধ করছে রুমের দরজা ধাক্কাতে। আদৌ দরজাটা ভিতর থেকে লক নাকি খোলা চাঁদনী বুঝতে পারছে না। জড়তা কাটিয়ে চাঁদনী রুমের দরজাটায় হালকা ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে দরজাটা খুলে গেলো। চাঁদনী এক্টা মলিন হাসি দিয়ে রুমে ঢুকে পড়ল।

ঐদিকে নূরের আব্বু হাবিব আবরার মাথায় হাত দিয়ে ঠাস করে সোফায় বসে অনুশোচনার দৃষ্টিতে চাঁদনীর আম্মু, আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“ঘোর পাপ করেছি আমরা চাঁদের সাথে নূরের বিয়ে দিয়ে। চাঁদের সুন্দর জীবনটাকে আমরা নিজের হাতে ধরে নষ্ট করে দিলাম। আমার ছেলেটা খুব একঘুয়ে। ওকে মানানো এতো সহজ না। চাঁদ আদৌ আমার ছেলেটাকে মানাতে পারবে কিনা তা ও জানি না।”

উপস্থিত সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পড়ে আছে। বলার মতো কোনো ভাষা নেই কারোর।

চাঁদনী পুরো রুমটা ঘুরে ঘুরে নূরকে খুঁজছে। ওয়াশরুমের সামনে যেতেই চাঁদনী শাওয়ারের আওয়াজ পেলো। চাঁদনী মুচকি হেসে বেডের উপর দুই পা ভাঁজ করে বসে পড়ল আর মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,,

–“নূর ভাইয়া শাওয়ার নিচ্ছে। আমি বরং এখানে বসেই ওয়েট করি। ইসসসস…. আজ নূর ভাইয়ার বুকের কুচকুচে কালো তিলটা দেখার সৌভাগ্য হবে আমার। ভাবতেই কেমন সাই ফিল হচ্ছে।”

চাঁদনী এসব বলছে আর লজ্জায় মুর্ছা যাচ্ছে। প্রায় বিশ মিনিট পর নূর গায়ে এক্টা টাওয়াল জড়িয়ে রুমে ঢুকে পড়ল। নূরের ভিজা চুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। পুরো শরীরটায় শুভ্রতা ছড়িয়ে পড়ছে। বুকের কালো কুচকুচে তিলটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ঠোঁট গুলো লাল হয়ে আছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গুলোতে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। মারাত্ন সুন্দর লাগছে নূরকে। চাঁদনী হা করে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। আর নূর নিচের দিকে তাকিয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুচছে।

নূর যেই না নিচের দিক থেকে চোখ উঠিয়ে সামনের দিকে তাকাল অমনি সে চোখ লাল করে চাঁদনীর দিকে তাকাল। নূরের লাল লাল ফোলা চোখ গুলো দেখে চাঁদনীর বুকটা কেঁপে উঠল। চাঁদনী বুঝে গেছে নূর এতক্ষন ওয়াশরুমে বসে বসে চোখের জল গুলো শাওয়ারের পানির সাথে স্রোতের মতো ভাসিয়ে দিয়েছে।

কষ্ট কমানোর কি নিদারুন উপায় আমাদের। মনের কষ্টটাকে হালকা করার জন্য চোখে জমিয়ে রাখা জল গুলোকে আমরা বিনা দ্বিধায় স্রোতের মতো ভাসিয়ে দেই। তখন মনটা হালকা হয়। প্রশান্তি মিলে। মনে হয় বুকের উপর থেকে এক্টা ভারী বোঝা হালকা হয়ে গেছে। মনের ক্ষতটা যখন গভীর হয় তখন কিছু সময়ের এই কান্নাটা মনের ক্ষতটাতে সারানোর জন্য যথেষ্ট নয়। জীবনের অনেকটা সময় পাড় করে ক্ষতটাকে বুকের ভিতর বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়। আপনার চারপাশে হাসি খুশি উপচে পড়লে ও আপনার বেহায়া মনটা ঠিক কষ্টের বোঝা বয়ে নিয়ে বেড়াবে। হয়তো কিছুটা সময়ের জন্য আপনি বাধ্য হয়ে খুব হাসবেন কিন্তু খুশিটা যখন মিইয়ে যাবে তখন আপনি ঠিকই চোখের জলে নিজেকে ভাসিয়ে দিবেন। বুকের ভিতর জমে থাকা ভয়ংকর কষ্টটা তখন আবার জো দিবে। যেটা এখন নূরের সাথে হচ্ছে।

চাঁদনীর চোখে পানি জমে এলো। চোখের অবাধ্য পানি গুলো লুকানোর জন্য চাঁদনী নূরের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
পরবর্তী পর্ব পড়তে ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প পেইজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন এবং গল্পের লিংক পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন। কমেন্ট বক্সে গ্রুপের লিংক দেওয়া আছে
#চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here