শেষটা সুন্দর পর্ব ১৭

#শেষটা_সুন্দর
#সিজন_২
#পার্ট_১৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

,

,

—“আমি বলেছিলাম না, সে আসবে! তাকে আসতেই হবে। কারণ, কেউ একজন তার জন্য অধীর আগ্রহে সময় গুনছিলো। আমি জানতাম এই মানুষটা কখনো তার কথার খেলাফ করবে না।”

বাড়ির সবাই চাঁদনীর কথা শুনে থমকে যায়। চাঁদনী মুখ ফিরিয়ে সামনে তাকায়। নূর দাঁড়িয়ে আছে সামনে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে নূরের। শার্টের প্রথম বাটন টা খোলা। ফোল্ড করা হাতা গুলো ঝুলে আছে। স্পাইক করা চুল গুলো এলো মেলো হয়ে আছে। দেখতে কেমন উইয়ার্ড লাগছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো মাথার কিছুটা জায়গা কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। পায়ের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, পায়ের এক্টা নখ উল্টে আছে। হাত থেকে দু এক ফোঁটা রক্ত টপটপ করে পড়ছে।

নূরের এই অবস্থা দেখে চাঁদনী বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলার পরিস্থিতিতে নেই সে। নূর মাথাটা নিচু করে রেখেছে। হুট করে হাবীব আবরার এসে নূরের মাথাটা তুলে ঠাস করে ডান গালে পাঁচ আঙ্গুল বসিয়ে দিলো। এতে নূরের কোনো হেল দোল নেই। সে আবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

চাঁদনী এবার না পেরে হাবীব আবরারকে উদ্দেশ্য করে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,

—“তুমি কি পাগল হইছ? দেখছ না… আমার নূরের চোখ, মুখের কি অবস্থা? নিশ্চয়ই ওর সাথে খারাপ কিছু হইছে। না বুঝে কেনো ওর গায়ে হাত তুল্লা?”

কথাগুলো বলেই চাঁদনী নূরের জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,

—“এই….নূর ভাইয়া। বলো না তোমার কি হইছে? তোমাকে এমন ক্ষতবিক্ষত দেখাচ্ছে কেনো? আমাকে বলো প্লিজ!”

সবাই এসে নূরের পাশে জট পাকিয়ে দাঁড়াল। সাবরিনা আবরার কাঁদছে আর নূরকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,

—“নূর বাবা…প্লিজ খুলে বল কি হয়েছে তোর?”

নূর চাঁদনীকে বুক থেকে সরিয়ে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবীর আবরারকে জড়িয়ে ধরে কান্নাসিক্ত কন্ঠে বলল,,,,,

—“আ’ম স্যরি আব্বু। আ’ম এক্সট্রেমলি স্যরি। আজ আমার জন্য তোমার মান সম্মান নষ্ট হলো। বিশ্বাস করো, আমি এমনটা ইচ্ছে করে করি নি। কিছুটা বাধ্য হয়ে করেছি। প্লিজ ফরগিভ মি আব্বু। প্লিজ ফরগিভ মি!”

হাবীব আবরার নূরকে ছেড়ে রাগী কন্ঠে বলল,,,,,

—“কি এমন হয়েছে তোমার সাথে? যার জন্য তুমি আমার মান সম্মান খুঁইয়ে দিলে?”

সবাই অনেক আগ্রহ নিয়ে নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদনী ও চোখে অসংখ্য জল নিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। নূর মাথাটা নিচু করে বলতে শুরু করল,,,,,

—“আমি বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের পাশের গলিতে ছোট্ট এক্টা এক্সিডেন্ট হয়। রিকশাচালককে বাঁচাতে গিয়ে বাইক অপিজিট সাইডে ঘুরানোর সময় বাইক উল্টে পড়ে যাই। এতে কোনো লাভ হলো না আরেকটা মিনি মাইক্রো এসে রিকশাওয়ালার গাড়ি উল্টে দেয়। রিকশা ওয়ালার অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। হাত কেটে, পা কেটে, মাথা ফেঁটে অঝড়ে রক্ত পড়ছিলো। আঙ্কেলটা বৃদ্ধ বয়সী। উনাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিলো। উনাকে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসছিলো না। এমনকি মাইক্রো ড্রাইভারটা ও পালিয়ে গেছে। তাই আমি উনাকে হসপিটালে নিয়ে যাই। ঐ খান থেকে আসতে আসতে অনেকটা সময় লেগে যায়। আমি বুঝতে পারি নি এতোটা সময় পাড় হয়ে যাবে। আজকের ঘটনাটার জন্য আমি সত্যিই খুব অনুতপ্ত।”

নূরের কথা শুনে বাড়ির সবাই খুব অনুতপ্ত। রিকশা ওয়ালার চিকিৎসা করতে গিয়ে নিজের চিকিৎসা করা হয় নি। যার ফল নূরের শরীরের কেটে কুটে যাওয়া অংশ গুলো। নূর এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হাবীব আবরার নূরের মাথাটা উঁচু করে নূরের কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,

—“আ’ম স্যরি নূর। আমি না বুঝেই তোমাকে মেরেছি। তোমার অন্তত বাড়িতে এক্টা ফোন করে দেওয়া উচিত ছিলো।”

নূর অপরাধীর দৃষ্টিতে হাবীব আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“ফোনের ব্যাটারী ডাউন হয়ে গিয়েছিলো আব্বু। তাছাড়া কারো ফোন নাম্বার আমার মুখস্ত নেই।”

হাবীব আবরার কিছু বলতে যাবে তার আগেই চাঁদনী নূরকে ওর দিকে ফিরিয়ে নূরের কেটে যাওয়া কপালে হাত দিয়ে বলল,,,,,

—“নিজের দিকটা ও তো ভাবতে হবে নাকি? দেখো তো কপাল, হাত, পা কেটে কি অবস্থা হয়েছে তোমার! আঙ্কেলটার সাথে সাথে নিজের ট্রিটমেন্টটা করে নিলে কি এমন মহা ভারত অশুদ্ধ হতো?”

নূর অনুশোচনার দৃষ্টিতে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

—“নিজের ট্রিটমেন্ট করতে নিলে আরো দেরি হয়ে যেতো। এমনিতে ও অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। আজ আমার জন্য সবার মান সম্মান ডুবল।”

চাঁদনী হুট করে নূরকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,

—“তুমি ফিরে এসেছ এটাই অনেক। মান সম্মান লাগবে না আমাদের। মান সম্মান দিয়ে চার পাঁচটা বাড়ি কিনা যাবে না! সো চুপ থাকো। রুমে চলো। তোমার এখন ট্রিটমেন্ট দরকার।”

কথাগুলো বলেই চাঁদনী নূরকে টানতে টানতে বাড়ির ভিতর ঢুকে নিজেদের রুমে চলে গেলো। বাড়ির সবাই খুব লজ্জিত। কিছু না জেনেই নূরকে নিয়ে অনেক কিছু ভেবেছে তারা। যেটা ভাবা একদমই উচিত হয় নি। কাউকে বাঁচানো বা হেল্প করা দোষের কিছু না। উল্টো এটা দোষের হতো যদি হেল্প না করেই গাঁ ঢাকা দিয়ে চলে আসত।

চাঁদনী নূরকে রুমে নিয়ে খাটের উপর বসিয়ে দিলো। নূর মাথাটা নিঁচু করে রেখেছে। চাঁদনী এক্টু নিচু হয়ে নূরের শার্টের বাটন খুলতে শুরু করল। নূর না চাইতে ও চাঁদনীর দিকে তাকাল। হুট করেই নূরের মধ্যে কেমন এক্টা ভালো লাগা শুরু হলো। চাঁদনীর শুভ্র মুখটার দিকে নূর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। খুব মায়াবি লাগছে চাঁদনীকে। এই মুহূর্তে নূরের খুব ইচ্ছে করছে চাঁদনীকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখতে। কিন্তু মনের কথা মনেই রয়ে গেলো।

শার্টের বাটন খুলে চাঁদনী নূরের শার্টটা গা থেকে খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারল। নূর সোজা হয়ে বসে আছে। নূরের বুকের কুচকুচে কালো তিলটা চাঁদনীকে খুব টানছে। ইচ্ছে করছে তিলটাকে নখ দিয়ে খুঁটতে। আপাতত চাঁদনী ওর ইচ্ছেটাকে সাইডে রেখে ডেস্কের উপর থেকে ফার্স্টএইড বক্সটা নিয়ে এলো। নূর ওর দৃষ্টি সংযত করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

ফার্স্টএইড বক্সটা নিয়ে চাঁদনী নূরের পাশে বসল। নূরকে হেচকা টান দিয়ে চাঁদনী ওর দিকে ঘুরিয়ে নিলো। নূরের নিচু হওয়া মুখটা উপরে তুলে চাঁদনী তুলো আর স্যাভলন নিয়ে কপালের কাটা অংশগুলোতে খুব সাবধানে ওয়াশ করতে লাগল। নূর চোখ জোড়া বন্ধ করে রেখেছে। সে কিছুতেই চাঁদনীর দিকে নজর দিতে চায় না। সুন্দুরী মেয়েদের দিকে একবার তাকালে নজর ফিরানো যায় না। আর যদি সে মায়াবতী হয় তাহলে তো কথাই নেই। মায়াবতী মেয়েদের দিকে বেশিক্ষন নজর দিয়ে রাখলে সেটা প্রেম নজর হয়ে যায়। একবার প্রেমে পড়লে ভালোবাসায় ও পড়তে হবে। যেটা নূরের জন্য নিষিদ্ধ। চাঁদনী ঠিকই বলেছে, নিষিদ্ধ জিনিসেই আমাদের আর্কষন থাকে বেশি।

চাঁদনী এক এক করে নূরের হাত, কপাল ওয়াশ করে এবার পায়ের কাছে গেলো। পায়ে হাত দেওয়ার সাথে সাথেই নূর পা টা উঠিয়ে উওেজিত কন্ঠে বলল,,,,,

—“এই না না…. পায়ে হাত দিও না। ফাস্টএইড বক্সটা আমাকে দাও আমি ওয়াশ করে নিচ্ছি।”

চাঁদনী মুচকি হেসে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

—“তোমার অর্ধাঙ্গিনী আমি। পায়ে হাত দেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। চুপচাপ বসে থাকো। আমার কাজ আমাকে করতে দাও।”

কথা গুলো বলেই চাঁদনী নূরের উল্টানো নখটার দিকে তাকাল। নখটা উল্টে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। চাঁদনীর চোখ থেকে ও দু এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। চাঁদনী অশ্রুসিক্ত কন্ঠে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

—“ব্যাথা লাগে না তোমার?” নখটা কেমন উল্টিয়ে গেছে।”

নূর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বুকে হাত রেখে বলল,,,,

—“এর চেয়ে ও বেশি ব্যাথা এই বুকটাতে ধারণ করি। যা সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই ব্যাথাটা কাউকে দেখানো যায় না। ঔষুধ ছাড়াই একান্তে সহ্য করে নিতে হয়।”

—“এই ব্যাথাটা তো আমার ও হয় নূর ভাইয়া। ঔষুধ টা ও আমার ধারে কাছেই আছে। অথচ দেখো… কি দুর্ভাগা কপাল আমার। ঔষুধ নিজে থেকেই আমার কাছে আসতে নারাজ। সে চায় আমি বিনা চিকিৎসাতেই মরি!”

নূর অন্যদিকে তাকিয়ে কথা ঘুড়ানোর জন্য মুচকি হেসে বলল,,,,,

—“যা হওয়ার হয়ে গেছে। সবাই হয়তো এখনো না খেয়ে আছে। আমার ও বেশ ক্ষিদে পেয়েছে। চলো খেয়ে নেই।”

চাঁদনী নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল গুলো মুছে আবার নূরের দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হাসি টেনে বলল,,,,

—“তুমি কিন্তু কথা দিয়েছিলে বউভাতের পর আমার সাথে আমাদের বাড়ি যাবে।”

—“খেয়ে নেই। তারপর না হয় যাবো।”

চাঁদনী মুচকি হেসে বসা থেকে উঠে ফাস্টএইড বক্সটা নিয়ে ডেস্কের উপর রেখে দিলো। নূর কাবার্ড থেকে আরেকটা শার্ট নামিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো। হাত ব্যাথার কারণে নূর শার্টের বাটন গুলো লাগাতে পারছে না। চাঁদনী ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে নূরের সামনাসামনি এসে একের পর এক বাটন গুলো লাগিয়ে দিচ্ছে। নূর বার বার তার দৃষ্টি সংযত করছে। চাঁদনীর মায়াবী চোখ দুটো নূরকে মায়ায় জড়িয়ে দিচ্ছে। যেটা এই মুহূর্তে বড্ড বেমানান।

শার্টের বাটন লাগানোর পর চাঁদনী এক্টু উঁকি দিয়ে নূরের অগোছালো চুল গুলো হাত দিয়ে সেট করে দিচ্ছে। নূর মলিন হেসে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদনী কিছুটা লজ্জা পেয়ে নূরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—“আচ্ছা….তোমার চোখ গুলো এতো সুন্দর কেনো? কেমন নীল মার্বেলের মতো। শুধু নীল মার্বেল না খানিকটা সমুদ্রের নীল স্রোতের মতো। আমার খুব ইচ্ছে করে এই স্রোতে ডুব দিতে। ডুবে যাওয়ার ভয় ও আছে। আমি কিন্তু সাঁতার জানি না।”

—“ডুবে গেলে মরবে তুমি। তাই তোমার দৃষ্টিতে আমি দৃষ্টি রাখতে কুন্ঠাবোধ করি। কারণ, এই দৃষ্টিতে ডুবেই কেউ একজন মরেছে।”

—“আমি তো সেই কবেই মরেছি নূর ভাইয়া। সব মৃত্যুর আর্তনাদ হয় না। কিছু কিছু মৃত্যু শুধু আত্নার হয় না। মনের ও হয়। তোমার চোখের নীল সমুদ্রে ডুবে আমি বারং বার মরতে চাই। সেই তোমার ঠোঁটের স্পর্শেই আবার দেহে প্রাণ ফিরে পেতে চাই।”

নূর কথা ঘুরানোর জন্য ঠোঁট উল্টে বলল,,,,,

—“ক্ষিদার জ্বালায় তো আমি মরেই যাবো। তখন তোমাকে বাঁচাব কি করে?”

চাঁদনী মাথায় হাত দিয়ে জিভ কেটে বলল,,,,,

—“ইসসস রে আমার আক্কেল জ্ঞান বলতে কিছুই নেই। চল চল চল,,, আমরা আগে খেয়ে নেই।”

কথাগুলো বলেই চাঁদনী নূরকে টানতে টানতে রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে ড্রইং রুমে চলে এলো। বাড়ির সবাই ড্রইং রুমে থম মেরে বসে আছে। নিস্তদ্ধ হয়ে আছে পুরো ড্রইংরুম। চাঁদনী নূরকে নিয়ে সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে এক গাল হেসে বলল,,,,,

—“তোমরা আর আপসেট হয়ে থেকো না। যা হওয়ার হয়ে গেছে। চলো আমরা সবাই মিলে খেয়ে নেই।”

চাঁদনীর কথা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল। বাড়ির মহিলারা দ্রুত পায়ে হেঁটে ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাতে শুরু করল। খাবার সাজানো শেষে সবাই এক এক করে চেয়ারে বসে পড়ল। সবাই মোটামুটি বসে গেছে। শুধু নূর আর চাঁদনী দাঁড়িয়ে আছে। ওরা মানুষ দুজন। অথচ এক্টা চেয়ার খালি পড়ে আছে। চাঁদনী মুচকি হেসে নূরকে চেয়ারে বসিয়ে নূরের কোলে সে বসে পড়ল। নূর বেকুব হয়ে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদনী বএিশ দাঁত বের করে হাসছে। উপস্থিত সবাই লজ্জায় মাথাটা নিঁচু করে রেখেছে।

চাঁদনী সাবরিনা আবরারকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—“খালামনি…তুমি আজ আমাদের দুইজনকে খাইয়ে দিবে। রাজি বলো?”

সাবরিনা আবরার এক গাল হেসে নূর আর চাঁদনীকে লোকমা ধরে খাওয়াতে শুরু করল। দুজনই খুব মজা করে খাচ্ছে। নূর বার বার চেয়ে ও চাঁদনীর কোমড়ে হাত দিতে পারছে না। চাঁদনী এক্টু এক্টু করে নূরের কোল থেকে খসে পড়ছে। নূরের হিজিটেড ফিল হচ্ছে চাঁদনীকে ধরতে। এক পর্যায়ে চাঁদনী শাড়ি পিছলিয়ে টেবিলের উপর পড়তে নিলেই নূর চাঁদনীর কোমড়ে ধরে চাঁদনীকে সামলিয়ে নেয়। চাঁদনীর নরম পেটে নূরের হাতের স্পর্শ পেয়ে চাঁদনী খিলখিল করে হাসছে আর বলছে,,,,,

—“নূর ভাইয়া প্লিজ আমার পেট থেকে হাতটা সরাও। খুব সুরসুরি লাগছে আমার। কেমন জানি অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।”

চাঁদনীর কথা শুনে নূর লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেলল। উপস্থিত সবাই একসাথে বিষম খেয়ে মাথা চাপড়াতে লাগল। নূরের পাশে বসে থাকা আয়মন নূরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,

—“রোমান্স করার এক্টা নির্দিষ্ট সময় থাকে। হুট করে যখন তখন এভাবে ঐ সব জায়গায় ধরলে তো বেচারা পুচকি মেয়েটা এমন করবেই।”

নূর দাঁত গিজগিজ করে আয়মনের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,

—“শালা তোর বোন পড়ে যাচ্ছিলো। তাই বাধ্য হয়েছি ধরতে। না হয় আমার বয়ে গেছে এই পুটকি মেয়ের পেটে হাত দিতে।”

চাঁদনী এখনো হাসছে আর ছুটাছুটি করছে। নূর ফিসফিসিয়ে চাঁদনীর কানে কানে বলল,,,,,

—“এখন ছেড়ে দিলেই তুমি ধপাস হয়ে পড়ে যাবে। তুমি যদি বলো আমি এখনি তোমাকে ছেড়ে দিবো।”

চাঁদনী হাসি থামিয়ে এক্টা শুকনো ঢোক গিলে বলল,,,,

—“তাহলে আরো টাইট করে ধরো।”

কথাটা বলেই চাঁদনী নূরের হাতটা আরো টাইট করে ওর পেটে জড়িয়ে নিলো। চাঁদনীর পেটে হাত রাখতে নূরের খুব আরাম লাগছে। তাই সে ও আর বারণ করে নি। প্রায় পনেরো মিনিট পর সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলো।

চাঁদনী নূরের কোল থেকে উঠে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—“আমরা এখন বাড়ি যাবো নূর ভাইয়া। শার্ট টা চেইন্জ্ঞ করে পান্জাবি পড়ে এসো।”

নূর আর কথা না বাড়িয়ে বসা থেকে উঠে রুমে গিয়ে এক্টা লাল পান্জাবি পড়ে আবার নিচে নেমে এলো। উপস্থিত সবাই নূরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। নূর পান্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে আয়মনের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল। চাঁদনী এক ছুটে নূরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সবার সামনে নূরের কপালে এক্টা চুমো খেয়ে লজ্জায় হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে ফেলল।

নূর চোখ বড় বড় করে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদনী দৌঁড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা বাগানে পার্ক করা গাড়িতে বসে পড়ল। চাঁদনীর কান্ড দেখে বাড়ির সবাই হু হা করে হেসে দিলো। নূর খানিক বিরক্তি নিয়ে পান্জাবির হাতা গুটানো শুরু করল।

নূর এবার সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসে পড়ল। চাঁদনীর পাশের সিটে নূর বসেছে। চাঁদনী লজ্জায় এখনো লজ্জাবতী হয়ে আছে। নূর চোখ মুখ লাল করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। সবাই সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসে পড়ল। নূর শেষ বারের মতো ওর আম্মু, আব্বু আর নীড়ের দিকে তাকিয়ে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।

গাড়ি ছেড়ে দিলো চাঁদনীদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। চাঁদনী গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে সাবরিনা আর হাবীব আবরারকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে মারল। তারা দুজনই চাঁদনীর কান্ড দেখে মুচকি হাসল।

গাড়িতে সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। চাঁদনীদের গাড়িতে আয়মন, হিমেল, লাবীবা আর জায়মা ও আছে। সবাই খুব হাসাহাসি করছে, কথা বলছে শুধু নূর আপসেট হয়ে আছে। চাঁদনী ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে সে নিজে ও চুপ হয়ে গেলো। মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে গেছে।

কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে থেমে গেছে চাঁদনীদের বাড়ির সামনে। সাথে সাথে মাগরিবের আযান ও পড়ে গেছে। সবাই এক এক করে গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ঢুকে গেলো। শুধু চাঁদনী আর নূর গাড়িতে বসে আছে। চাঁদনী মলিন হেসে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,

—“কি হয়েছে নূর ভাইয়া? তোমাকে এতো আপসেট দোখাচ্ছে কেনো?”

নূর কিছু না বলেই গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। চাঁদনী মুখটা কালো করে গাড়ি থেকে নেমে নূরের পিছু পিছু বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। নূর সোজা সিঁড়ি বেয়ে চাঁদনীর রুমে ঢুকে গেলো। চাঁদনী ও আস্তে ধীরে হেঁটে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে ঢুকে গেলো।

নূর রুমে ঢুকেই চাঁদনীর বারান্দায় দাঁড়িয়ে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ফুঁকতে শুরু করল। চাঁদনী ধীর পায়ে হেঁটে নূরের পাশে দাঁড়াল। হুট করেই নূর মুচকি হেসে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—“আমি তোমার সাথে এক্টা চুক্তি করতে চাই চাঁদ।”

চাঁদনী মলিন হেসে বলল,,,,

—“কি চুক্তি নূর ভাইয়া?”

নূর কিছুটা সিরিয়াস হয়ে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—“আমি তোমার থেকে কিছুটা সময়ের জন্য দূরত্ব চাই। আশা করি আমাদের দুই জনের জন্যই ভালো হবে। আমি দ্বিতীয়বার তোমার প্রেমে পড়তে চাই। খুব গভীরভাবে তোমার সাথে জড়াতে চাই। যতোটা জড়ালে দ্বিতীয়বার কাউকে হারাতে হবে না। যদি ও হারাতে বসি তাহলে যেনো তার সাথে আমি ও যেতে পারি। এর জন্য আমার কিছুটা সময় লাগবে। কাছে থেকে কোনো ভালোবাসাই উপলব্ধি করা যায় না। দূরে থেকে এর সঠিক তাৎপর্য বুঝা যায়। আমার মন বলছে দূরে থেকেই আমি তোমার গুরুত্ব বুঝতে পারব। তুমি কি আমার পাশে থাকবে চাঁদ?”

চাঁদনীর চোখ থেকে টুপটাপ জল গড়িয়ে পড়ছে। এটা কি সুখের জল, কষ্টের জল নাকি রাগ অভিমানের জল? আপাতত কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। উপর ওয়ালা সব আবেগের প্রকাশ শুধু এক রং এর জল দিয়েই তুলে করেছে। একেক টা আবেগের প্রকাশ একেক টা কালারের জল দিয়ে তুলে ধরলে হয়তো ভালো হতো। তাহলে অন্তত বিভ্রান্তি হতো না। জলের কালার দেখেই বুঝে নেওয়া যেতো কে কোন উদ্দেশ্যে কাঁদছে।

চাঁদনীর চোখ দু্টো স্থির হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।

#চলবে,,,,,,,

(অনেকেই ভেবেছেন হয়তো ঐটা মাহিন ছিলো। যারা মাহিন ভেবেছেন তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। মাহিন কালকের পর্বেই আসবে। তবে ভিলেন হিসেবে না। মাহিনের ও আলাদা এক্টা গল্প থাকবে।)

6 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here