শেষটা সুন্দর পর্ব ১৩

#শেষটা_সুন্দর
#সিজন_২
#পার্ট_১৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

,

,

—“মানুষ সব কষ্ট সহ্য করতে পারে নূর ভাইয়া। কিন্তু ভালোবাসার কষ্ট সহ্য করতে পারে না।”

নূর কান্নাসিক্ত কন্ঠে চাঁদনীকে বুকে চেঁপে ধরে বলল,,,,,,

—“আমি ও তো ভালোবাসার কষ্টটা সহ্য করতে পারছি না চাঁদ। ভেতরটা সাগরের চেয়ে ও উওাল হয়ে আছে। আগুনের চেয়ে ও বেশি জ্বলছে। আই কান্ট এক্সপ্রেস দ্যাট। এই অনন্তকালের দূরত্বটা আমি মানতে পারছি না।”

চাঁদনী অশ্রুসিক্ত চোখে নূরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,,,

—“তোমার আর রোজ আপুর মধ্যে আদৌ কোনো দূরত্ব নেই নূর ভাইয়া। কারণ তোমাদের দুইজনের ভালোবাসাটাই ছিলো প্রকাশিত। দুইজন দুইজনকে ব্যাপকভাবে ভালোবেসেছ। হুম…. এখন রোজ আপু নেই ঠিকই, কিন্তু তুমি এক মুহূর্তের জন্য ও রোজ আপুকে ভুলতে পারছ না। হয়তো রোজ আপুর ও তোমাকে খুব মনে পড়ে। দুজন দুজনের মনে আছো। তাই আমার মনে হয় না তোমাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব আছে।

চাঁদনী এবার আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—“দূরত্ব তো তোমার সাথে আমার নূর ভাইয়া। তোমার বউ হয়ে তোমার পাশেই আছি। হয়তো ভালোবাসাটা ও আকাশ পরিমান। অথচ দেখো, এতো কাছাকাছি থেকে ও এতো ভালোবেসে ও তোমার আর আমার মাঝে আকাশ সমান দূরত্ব। তোমার মনের কোথাও আমি নেই। আচ্ছা…. তোমার কি মনে হয় না, এই দূরত্বটা পৃথিবীর সবচেয়ে যন্ত্রনাময় দূরত্ব?”

চাঁদনী কথা গুলো বলছে আর চোখ থেকে টলটলিয়ে পানি পড়ছে। চাঁদনীর চোখের দিকে বেশি ক্ষণ দৃষ্টি রাখতে পারে নি নূর। চাঁদনীর কথা গুলো শতভাগ সত্য হলে ও কোথাও না কোথাও এক্টা তীব্র হাহাকার আছে। রুহের হায় আছে। নূর বুঝতে পেরে ও এই মুহূর্তে বুঝতে চাইছে না। কারণ দুজনেই ভালোবাসা নামক মায়া বনে বন্দী। যেখান থেকে সঠিক পথ খুঁজে বের হওয়া সম্ভব না। এক্টা ঠিকঠাক রাস্তা লাগবে। শুধু মাএ সময় ই পারবে এই রাস্তার সন্ধান দিতে। সময় সবকিছু পাল্টে দিতে পারে। আমাদের ইহকাল, পরকাল সবই তো সময় দ্বারা আবদ্ধ।”

নিচে পড়ে থাকা সিগারেটটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূর। নষ্ট হয়ে গেলো সিগারেট টা। এই মুহূর্তে এই নষ্ট সিগারেট টাই খুব দরকার ছিলো ওর। চাঁদনীর কথা গুলো ওর বুকে গিয়ে বিঁধেছে। কষ্ট গুলো ধোঁয়ার সাথে উড়িয়ে দিতে মন চাইছে। নিজেকে এক্টু হালকা করতে মন চাইছে।

চাঁদনী বুঝতে পেরেছে তার কথা গুলোতে নূর খুব আঘাত পেয়েছে। তাই সে চোখের পানি গুলো মুছে ব্যালকনি থেকে উঠে বেডে রাখা খাবারের প্লেইট টা নিয়ে আবার ব্যালকনিতে পা মেলে বসল। নূর এখনো এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

চাঁদনী ভাত আর তরকারী মেখে লোকমা তুলে নূরের মুখের কাছে ধরে বলল,,,,,,

—“হা করো নূর ভাইয়া।”

নূর নিচের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চাঁদনীর দিকে তাকাল। মুখে মলিন হাসি ঝুলিয়ে চাঁদনী নূরের মুখের কাছে লোকমা ধরে আছে। নূর চাঁদনীর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—“খাবো না আমি। নিয়ে যাও এসব।”

—“খেতে হবে। না খেলে শরীরে জোর পাবে না।রোজ আপুর জন্য কাঁদতে পারবে না।”

নূর মুখটা কালো করে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“চাঁদ প্লিজ ফান করো না। খাবারটা সরাও।”

চাঁদনী কিছুটা কড়া কন্ঠে বলল,,,,

—“তোমাকে খেতেই হবে। খাবার আমি সরাব না।”

নূর ও এবার কড়া কন্ঠে বলল,,,,,

—“আমি খাবার খাবো না।”

চাঁদনী এবার দাঁত কিড়মিড় করে খাবারের প্লেইটটা হাতে নিয়ে ব্যালকনি থেকে উঠে নূরের পিছনে দাঁড়িয়ে নূরের টি শার্ট ধরে টেনে হেছড়ে নূরকে ওর দিকে ঘুড়িয়ে নিলো। নূর বেকুব হয়ে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদনী চোয়াল শক্ত করে নূরের মুখ চেপে ধরে জোর করে মুখে খাবার পুড়াচ্ছে আর দাঁত কিড়মিড় করে বলছে,,,,

—“তুই খাবি না তোর ঘাড় খাবে। খা বলছি। তাড়াতাড়ি খা। না হয় তোর মুখ চেপে লম্বা করে দেবো। তখন তোকে কার্টুনের মতো লাগবে। আমার সাথে ত্যাড়ামি করিস তাই না? খাবার গুলো তাড়াতাড়ি ভিতরে ইন কর। আউট করলে তোর খবর আছে।”

নূর শুকনো ঢোক গিলছে আর চাঁদনীর রণচন্ডী রূপ দেখছে। চোখ, মুখ লাল করে চাঁদনী ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। তার উপর তুই তুকারি ও করছে। নূর ভাতের লোকমাটা গিলছে আর চাঁদনীর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। নূর কোনো রকমে এক্টা লোকমা গিলল। চাঁদনী আবার আরেকটা লোকমা নূরের মুখের কাছে ধরল। নূর মুখটা সরিয়ে নিলো। চাঁদনী আবার চোখ লাল করে নূরের গাল চেঁপে ওর দিকে ঘুরিয়ে নূরের মুখে আরেকটা লোকমা ধরে বলল,,,,,

—“এই…তোকে কি এখন ছোট বাচ্চাদের মতো বাবু, সোনা, মনা, যাদু, লক্ষী, কুপি, মোমবাতি এসব বলে খাওয়াতে হবে? ভালোয় ভালোয় খেয়ে নে। না হয় আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”

নূর আবার শুকনো ঢোক গিলে লোকমাটা মুখে পুড়ে ভিতরে ইন করে দিলো। এভাবে পাঁচ থেকে ছয়টা লোকমা খাওয়ার পর নূর আবার মুখ ফিরিয়ে নিলো। চাঁদনী আবার চোখ মুখ লাল করে নূরের গলা চেঁপে ধরে বলল,,,,,

—“আর মাএ দুইটা লোকমা আছে। ভালো ছেলের মতো খেয়ে নে। আমাকে বেশি ঘাটাবি না। না হয় আরো এক প্লেইট ভাত এনে জোর করে তোর ভিতরে ইন করাব। আউট করার উপায় ও পাবি না। রোলার দিয়ে উওম মধ্যম দিবো আর মুখ দিয়ে খাবার পুড়ব। মুখটা হা করে ভালোয় ভালোয় খেয়ে নে।”

চাঁদনীর ব্যবহারে নূর রীতি মতো শকড। নূর চাঁদনীর দিকে ভয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুখটা হা করল। চাঁদনী তাড়াতাড়ি মুখে লোকমা পুড়ে দিলো। নূরের গলা দিয়ে খাবার নামছে না। কেমন আটকে আটকে যাচ্ছে। চাঁদনী আঁচ করতে পেরে দৌঁড়ে রুম থেকে এক গ্লাস পানি এনে নূরের মুখের কাছে ধরল। নূর একটানে পানি ভর্তি গ্লাসটা পানি শূন্য করে ফেলল।

চাঁদনী আবার নূরের মুখের কাছে লাস্ট লোকমাটা ধরল। নূর এবার বসা থেকে উঠে চাঁদনীর হাতটা ঘুরিয়ে চাঁদনীর মুখে লোকমাটা পুড়ে দিলো। চাঁদনীর গাল দুটো ফুলে আছে। চোখ দুটো গোল গোল হয়ে বড় হয়ে আছে। লোকমা টা সে গিলছে ও না আবার ফেলছে ও না। চাঁদনীকে এই অবস্থায় দেখে নূরের খুব হাসি পাচ্ছে। নূর এক্টা শয়তানি হাসি দিয়ে চাঁদনীর দুই গালে দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে পিন্চ মারছে আর বলছে,,,,,

—“এই….তোমার গাল দুটো এতো শক্ত কেনো? মেয়েদের গাল তো খুব নরম হয়। তাহলে কি তুমি মেয়ে না?”

চাঁদনী চোখ লাল করে নূরের দিকে তাকিয়ে এক ঢোকে সব গুলো ভাত পেটের ভিতর ইন করে বলল,,,,,

—“না গো। আমি মেয়ে না। আমি লেসবো। এই লেসবোর সাথেই তোমার সংসার করতে হবে।”

কথাগুলো বলেই চাঁদনী নূরকে ভেংচি কেটে রুমে ঢুকে গেলো। হুট করে নূর পিছন থেকে চাঁদনীকে ডেকে বলল,,,,,

—“চাঁদ….আরেক প্লেইট ভাত নিয়ে এসো।”

চাঁদনী কিছুটা অবাক হয়ে নূরের দিকে তাকাল। নূর মুচকি হেসে বলল,,,,,

—“অবাক হওয়ার কি আছে? আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে আজ। প্লিজ নিয়ে এসো না।”

চাঁদনী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। রুমে থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে চাঁদনী কিচেন রুমে ঢুকে গেলো। প্রায় পাঁচ মিনিট পর চাঁদনী ভাত আর তরকারি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে রুমে ঢুকে গেলো। নূর খাটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। চাঁদনী খাবারের প্লেইট টা নিয়ে নূরের পাশে বসল।

হুট করে নূর চাঁদনীর হাত থেকে খাবারের প্লেইট টা ছিনিয়ে নিয়ে ভাত, তরকারি মেখে চাঁদনীর মুখের কাছে লোকমা ধরল। চাঁদনী অবাক হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। নূর মুচকি হেসে জোর করে চাঁদনীর মুখে খাবার পুড়ে দিলো। চাঁদনী চোখ বড় বড় করে নূরের দিকে তাকিয়ে খাবার গুলো পেটে পুড়ে নিচ্ছে। পর পর পাঁচ লোকমা খাওয়ার পর চাঁদনী মুখ ফিরিয়ে নিলো। নূর আর জোর না করে পানির গ্লাসটা চাঁদনীর দিকে বাড়িয়ে দিলো। চাঁদনী হাসি মুখে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে দৌঁড়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। চোখের অবাধ্য জল গুলো খুব তাড়া করছিলো তাকে। তাই অশ্রুবিলাস করার জন্য ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে। নূরের সামনে কাঁদতে চায় না সে। তাহলে হয়তো নূর আবার আপসেট হয়ে যাবে।

চাঁদনী শাড়ির আঁচল দিয়ে জল গুলোকে মুচছে। কান্নার সাথে সাথে তার মুখে হাসি ও লেগে আছে।
মানুষ তো শুধু কষ্টেই কাঁদে না। প্রচন্ড সুখে ও কাঁদে। চাঁদনী এখন সুখের কান্না কাঁদছে। চাঁদনী ভাবতে ও পারে নি, নূর এতো যত্ন করে তাকে খাইয়ে দিবে। ভাবনার বাইরে যদি প্রত্যাশিত কিছু হয়ে যায় তখন খুব খুশি লাগে। এই খুশিটাকে কয়েকটা শব্দে প্রকাশ করা যায় না। প্রকাশ করতে না পারার কারনেই চোখের কোণে অবাধ্য জল রা এসে ধরা দেয়। তখন বুক ভাসিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে।

পানি খেয়ে চাঁদনী রুমের ভিতর ঢুকে গেলো। নূর এখনো প্লেইট হাতে নিয়ে বসে আছে। চাঁদনী এক ভ্রু উঁচু করে নূরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,,,

—“এভাবে বসে আছো কেনো? যাও হাত ধুয়ে এসো। প্লেইট টা কিচেন রুমে রেখে এসো।”

নূর মুখ ফুলিয়ে বলল,,,,

—“পারব না। পানি দাও আমি প্লেইটে হাত ধুবো। এরপর প্লেইটটা তুমি কিচেনে রেখে আসবে।”

চাঁদনী চোখ লাল করে কোঁমড়ে হাত দিয়ে নূরের দিকে এক্টু ঝুঁকে বলল,,,,,

—“অলসতা ঘুচাবো তোমার। এতো দিন আমার খালামনিকে খুব জ্বালিয়েছো। ভেবেছ আমাকে ও জ্বালাবে? আমার সাথে মোটে ও পারবে না। বৃথা চেষ্টা করো না।”

কথা গুলো বলেই চাঁদদনী নূরকে খাট থেকে টেনে হেছড়ে নামিয়ে পেছন থেকে নূরকে ঠেলতে ঠেলতে রুম থেকে বের করে নিলো। নূর মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে,,,,

—“ইসসস…. মেয়েটা আজ আমাকে কাজ করিয়েই ছাড়বে। পঁচিশ বছরে কখনো হাত ধুঁয়ে খাবার খাই নি। আর আজ কিনা প্লেইট ধুঁতে বলল। না না, এসব মেয়েলি কাজ মোটে ও করা যাবে না। আমি বরং কোনো এক্টা বুদ্ধি করে এখান থেকে পালাই। কাশি দিয়ে গলাটা ঠিক করে নূর জোরে জোরে চিল্লাচ্ছে আর বলছে,,,,

—“চাঁদ ভালো হচ্ছে না কিন্তু। ছাঁড়ো আমাকে। আমার খুব ইয়ে পেয়েছে।”

চাঁদনী নূরকে ঠেলতে ঠেলতে সিঁড়ির কাছে নিয়ে এসেছে। সর্ব শক্তি দিয়ে চাঁদনী নূরকে ঠেলছে। নূরের ইয়ে কথা শুনে চাঁদনী কিছুটা অবাক হয়ে বলল,,,

—“ইয়ে পেয়েছে মানে?”

নূর চাঁদনীর দিকে ফিরে মেইন পয়েন্টে হাত দিয়ে মুখটা কাচু মাচু করে বলল,,,,

—“শি শি পেয়েছে। খুব ইমার্জেন্সি। আর এক্টু চেঁপে রাখলেই আউট হয়ে যাবে। প্লিজ ছাড়ো আমায়।”

চাঁদনী নাক, মুখ কুঁচকে বলল,,,,,

—“ছ্যা। শি শি পাওয়ার আর সময় পেলো না। আচ্ছা ব্যাপার না। তুমি এখানেই আউট করে দাও।পরে আমি পরিষ্কার করে দিবো।

নূর মুখটা হা করে চোখ দুটো বড় বড় করে বলল,,,,

—“এ্যা।”

চাঁদনী এক গাল হেসে হেলেদুলে বলল,,,,

—“এ্যা না হ্যাঁ। আমি তোমার দিকে তাকাবো না। মুখটা আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখব। তবু ও তোমাকে হাত থেকে ফসকাতে দেবো না। দেখি দেখি…. তাড়াতাড়ি সেরে ফেলো। না হয় হিসু গুলো পেটে জমে ভয়ংকর অবস্থা হয়ে যাবে।”

নূর সমানে শুকনো ঢোক গিলছে আর মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—“হায় হায়! এই কি করলাম। এই মেয়ে তো এখানেই আমাকে হিসু করিয়ে ছাড়বে। যা নাছোড়বান্দা মেয়ে। ওহ্ আল্লাহ্ প্লিজ হেল্প মি। এই কেলেঙ্কারি থেকে আমাকে উদ্ধার করো।”

চাঁদনী মনে মনে হাসছে আর বলছে,,,,,

—“নিজেকে খুব শেয়ানা মনে করো তাই না? এবার চাঁদের জাল থেকে বেড়িয়ে দেখাও। তোমাকে এখানেই হিসু করিয়ে ছাড়ব। হিসু না আসলে ও জোর করে করাব।”

নূর চাঁদনীর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,,

—“প্লিজ চাঁদ বুঝার চেষ্টা করো। লজ্জা বলে ও তো এক্টা বস্তু আছে। এক্টা মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবে নির্লজ্জের মতো হিসু করা যায় না। প্লিজ আমাকে যেতে দাও।”

—“আচ্ছা যেতে দেবো। আগে তুমি দৌঁড়ে গিয়ে কিচেনে প্লেইটটা রেখে হাতটা ভালো করে ধুঁয়ে মুছে এসো।”

নূর রাগ দেখিয়ে বলল,,,,

—“না আমি পারব না।”

চাঁদনী নূরের সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে এক চোখ মেরে বলল,,,,,

—“তাহলে আমি ও তোমাকে ছাড়ছি না। এখানেই তোমাকে হিসু করতে হবে।”

নূর কিছুটা বিরক্ত হয়ে চোখ দুটো লাল করে বলল,,,,

—“আমার দুই নম্বর ও পেয়েছে। এবার তো ছাড়ো।”

—“দাঁড়াও… খালামনিকে ডেকে বলছি, তোমার ছোট বেলার কমোডটা দিয়ে যেতে। কমোডে বসেই তুমি দুই নাম্বারটা সেরে নিও।”

নূর এবার প্রচন্ড রেগে চোয়াল শক্ত করে গর্জন দিয়ে বলল,,,,

—“চাঁদ আমার সামনে থেকে সরো। না হয় এখনি কানের নিচে দুটো বাজিয়ে দিবো।”

চাঁদনী কোমড়ে এক হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে নূরের কলার চেপে চোখ লাল করে বলল,,,,,

—“শুনো নূর ভাইয়া… আমি তোমার গর্জনে এক্টু ও ভয় পাই না। কি ভেবেছ তুমি? জোরে এক্টা ধমক দিলেই আমি ভয় পেয়ে লেজ গুটিয়ে পালাবো? তোমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তোমার অলসতা আজ আমি ঘুচিয়েই ছাড়ব। তাড়াতাড়ি নিচে যাও। হাতটা ওয়াশ করে প্লেইটা কিচেন রুমে রেখে এসো।”

চাঁদনীর থ্রেডে নূর কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। এরপর ও সে জায়গা থেকে নড়ছে না। চাঁদনী নূরের কলারটা ছেড়ে নূরের হাত ধরে টানতে টানতে সিঁড়ি বেয়ে কিচেন রুমের বেসিনের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।

নূর রাগী দৃষ্টিতে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনি গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিবে। চাঁদনী মুচকি হাসি দিয়ে নূরকে ইশারা করে বলল বেসিনে প্লেইটটা ধুঁতে। নূর নিরুপায় হয়ে ট্যাব ছেড়ে প্লেইট টা ওয়াশ করছে আর মনে মনে চাঁদনীকে সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুচ্ছে। প্লেইট ধোঁয়া শেষে নূর এবার হাতটা ও ভালোভাবে ওয়াশ করে নিলো। চাঁদনী ওর শাড়ির আঁচল দিয়ে খুব যত্ন করে নূরের হাত দুটো মুচছে আর বলছে,,,,

—“ছেলে হয়েছ বলে এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থেকো না। মাঝে মাঝে হাত পা নাঁড়িয়ে এক্টু কাজ করে দেখো। তখন বুঝবে, মেয়েরা কতো কষ্ট করে এক্টা সংসার সামলায়। তোমাদের এক্টু সাহায্য পেলে আমাদের খুব স্বস্তি মিলে। তখন তোমাদের প্রতি দ্বিগুন সম্মান বেড়ে যায়।”

নূর মুখটা বেঁকিয়ে বলল,,,,,

—-“এ্যা। জ্ঞান দিতে এসেছে আমাকে। নিজে তো মেয়ে হয়ে ও রান্না ঘরের ধারে কাছে ঘেঁষো না। খালামনি সবসময় তোমার নামে নালিশ দেয়। তুমি এক্টা অকর্মের ঢেঁকি।”

চাঁদনী নিচের দিকে তাকিয়ে জিভ কেটে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,

—“ধুর বাবা। কি দরকার ছিলো এতো জ্ঞান দেওয়ার। এখন তো নিজেই ফেঁসে গেলাম। আম্মুটা ও না এক্টা ছোঁচা মুখো। কি দরকার নিজের মেয়ের নামে এতো বদনাম করার। কালই বাড়িতে গিয়ে আম্মুর সাথে আড়ি কেটে দিবো।”

চাঁদনীর নীরবতা দেখে নূর আর কথা না বাড়িয়ে কিচেন রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে সোজা রুমে ঢুকে যায়।

#চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here