#শেষটা_সুন্দর
#সিজন_২
#পার্ট_১৪
#নিশাত_জাহান_নিশি
,
,
চাঁদনীর নীরবতা দেখে নূর আর কথা না বাড়িয়ে কিচেন রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে সোজা রুমে ঢুকে যায়।
চাঁদনী ও নূরের পিছু পিছু রুমে ঢুকে গেলো। চাঁদনী রুমে ঢুকেই ওয়াড্রপের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে লাবিবা আর জায়মার নাম্বারে ম্যাসেজ করে বলে দেয়, কাল যেনো সকাল সকাল এই বাড়িতে চলে আসে।
নূর বেড থেকে এক্টা বালিশ নিয়ে সোজা ব্যালকনিতে চলে গেলো। ব্যাপারটা চাঁদনীর মোটে ও ভালো লাগে নি। তাই সে মুখটা ফুলিয়ে নূরের পিছু পিছু ব্যালকনিতে চলে গেলো। নূর বালিশটা ফ্লোরে রেখে যেই না শুতে যাবে অমনি চাঁদনী নূরের জায়গাটা দখল করে নেয়। নূরের আগেই চাঁদনী বালিশটাতে শুয়ে পড়ে। নূর চোখ লাল করে চাঁদনীর দিকে তাকিযে আছে। চাঁদনী পাওা না দিয়ে বড় এক্টা হামি তুলে চোখ দুটো বন্ধ করে বলল,,,,,,
—“আমি ও তোমার সাথে ঘুমাবো। আমার পাশেই শুয়ে পড়ো।”
নূর চোয়াল শক্ত করে বলল,,,,,
—“চাঁদ বেশি বাড়াবাড়ি করছ। আমার মোটে ও ভালো লাগছে না। তুমি এক্ষনি বেডে গিয়ে শুবে।”
চাঁদনী চোখ খুলে কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,
—“না না না। আমি তোমার সাথে ফ্লোরে ঘুমাবো।”
নূর চাঁদনীর হাত চেঁপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বলল,,,,
—“ফ্লোরে ঘুমালে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে। সো তুমি বেডে ঘুমাবে।”
চাঁদনী নূরের হাতটা সরিয়ে শুয়া থেকে উঠে আসাম ধরে বসে মুখটা ছোট বাচ্চাদের মতো করে বলল,,,,
—“ফ্লোরে ঘুমালে তোমার ও ঠান্ডা লেগে যাবে। সো তুমি ও আমার সাথে বেডে ঘুমাবে।”
নূর মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। সে জানে চাঁদনীর সাথে সে কিছুতেই পেরে উঠবে না। নূর কিছুটা হাল ছেড়ে মুখটা কালো করে বসা থেকে উঠে ধীর পায়ে হেঁটে বেডের উপর পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল।
চাঁদনী বএিশ পাঁটি বের করে ফ্লোরে পড়ে থাকা পিলো টা নিয়ে সোজা বেডে এসে নূরের পাশে পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল। নূরের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে চাঁদনীর উপর খুব বিরক্ত। চাঁদনী ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে বসা থেকে উঠে বেড গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বেডের দু পাশে দুটো বালিশ পেতে দুইজনের মাঝখানে এক্টা কোল বালিশ রেখে দিলো।
বিছানা গুছিয়ে চাঁদনী নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
—“বিছানা গোছানো হয়ে গেছে নূর ভাইয়া। শুয়ে পড়ো। রাত তো অনেক হলো।”
নূর এখনো একই অবস্থায় বসে আছে। মুখটা নিচু করে নূর চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—“আমি তোমার সাথে এক বিছানায় ঘুমোতে পারব না চাঁদ। প্লিজ আমাকে জোর করো না।”
চাঁদনী মলিন হেসে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—“চিন্তা করো না নূর ভাইয়া। আমি তোমার থেকে বউ এর অধিকার চাইব না। আমাদের মাঝ খানে অনেক বড় এক্টা দেয়াল আছে। যেমনটা মনের জগতে আছে তেমনটা বাহিরের জগতে ও আছে। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।”
নূর এবার পিছু ফিরে দেখল, ওদের দুইজনের মাঝখানে বড় এক্টা কোল বালিশ পাতা আছে। নূর মলিন হেসে আর দেরি না করে বেডের ডান পাশে শুয়ে পড়ল। নূর চোখ বন্ধ করে মাথায় এক হাত দিয়ে শুয়ে আছে। চাঁদনী লাইট অফ করে নূরের বাম পাশে শুয়ে পড়ল।
রাত তিনটা,,,,,,
নূর অনেকক্ষন ধরে নড়াচড়া করছে। কতোক্ষণ এইপাশ তো কতোক্ষণ ঐ পাশ। কোনো কিছুতেই সে শান্তি পাচ্ছে না। নাক মুখ কুঁচকে কপালে হাত দিয়ে রেখেছে নূর। ঐদিকে চাঁদনী বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। দিন দুনিয়ার হুশ নেই।
নূরের প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে। মাথা ব্যাথার তীব্র যন্ত্রনায় সে শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। নূর আর টিকতে না পেরে শুয়া থেকে বসে ঘুমন্ত চাঁদনীরর দিকে তাকাল। চাঁদনী ছোটো বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে ঘুমিয়ে আছে। নিষ্পাপ লাগছে চাঁদনীকে। নূর এক দৃষ্টিতে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুতেই তার ইচ্ছে করছে না ঘুমন্ত চাঁদনীকে জাগাতে। তাই সে আবার চোখ বন্ধ করে ব্যাথাটাকে তুচ্ছ মনে করে নাক, মুখ খিঁচে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর চাঁদনী কিছুটা নড়ে চড়ে উঠল। তার পেটের উপর ভারী কিছুর অস্তিত্ব পেয়ে সে চোখ জোড়া খুলল। চাঁদনী পেটের দিকে লক্ষ্য করে দেখল, নূরের এক্টা হাত চাঁদনীর পেটের উপর পড়ে আছে। চোখে ঘুম নিয়ে চাঁদনী নূরের দিকে তাকিয়ে দেখল…নূর নাক, মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে।
চাঁদনী কিছুটা উওেজিত হয়ে শুয়া থেকে বসে পড়ল। নূরের হাতটা এক হাত দিয়ে ধরে চাঁদনী নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—“কি হয়েছে নূর ভাইয়া? তুমি নাক মুখ খিঁচে রেখেছ কেনো?”
নূর চোখ বন্ধ করে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—“মাথাটা খুব ব্যাথা করছে চাঁদ। খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।”
চাঁদনী পেরেশান হয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে নূরের কপালে আলতো করে ম্যাসাজ করতে লাগল। চাঁদনীর নরম হাতের ছোঁয়া পেয়ে নূর চোখ মেলে তাকাল। চাঁদনী নরম স্বরে নূরকে বলল,,,,,,
—“চোখ বন্ধ করো। ঘুমানোর চেষ্টা করো। আমি মাথায় ম্যাসাজ করে দিচ্ছি। দেখবে, কিছুক্ষন পর মাথাব্যাথা হাওয়ায়ায়ায়া হয়ে গেছে।”
—“তুমি ঘুমাবে না?”
—“না, আমি শুধু তোমাকে দেখব। ঘুমন্ত অবস্থায় তোমাকে অনেক গলুমলু লাগে। কিউট এক্টা ছোট্ট বাচ্চার মতো লাগে।”
নূর মলিন হেঁসে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল। চাঁদনী খুব যত্ন করে নূরের মাথায় ম্যাসাজ করে দিচ্ছে। প্রায় আধা ঘন্টা পর নূর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। চাঁদনীর ও কেমন ঝিম লেগে এসেছে। তাই সে নূরের বুকে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়ল।
*
*
সকাল আটটা,,,,,,
নূর আর চাঁদনী দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। নূরের বুকে চাঁদনী মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। নূর ও চাঁদনীকে বুকে চেপে ধরে রেখেছে। দরজায় অনেকক্ষন যাবত খটখট আওয়াজ হচ্ছে। কেউ অনেকক্ষন ধরে দরজা ধাকাচ্ছে।
দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে চাঁদনীর ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। চাঁদনী কপাল কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করছে। খুব কষ্টে চোখ জোড়া খুলে চাঁদনী সামনের দিকে তাকাল। অমনি সে নিজেকে নূরের বুকে আবিষ্কার করল। চাঁদনী চোখ পিটপিট করে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। নূরের ঠোঁটে গুলো কেমন লাল হয়ে আছে। চাঁদনীর খুব ইচ্ছে করছে নূরের ঠোঁটে এক্টা চুমো খেতে। চাঁদনী কিছুটা লজ্জা পেয়ে নূরের দিকে এক্টু এগিয়ে খুব সাবধানে নূরের ঠোঁটে এক্টা চুমো খেয়ে নিলো। বেচারা নূর বুঝতেই পারে নি, কেউ তাকে ঘুমের মধ্যেই চুমো খেয়ে নিয়েছে।
চাঁদনী লজ্জায় মুখটা ঢেকে রেখেছে। নূর এক্টু নড়েচড়ে আবার চাঁদনীকে টাইট করে জড়িয়ে ধরল। ঐদিকে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ বেড়েই চলছে। চাঁদনী মোচড়া মুচড়ি করতে লাগল নূরের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য। নূর কিছুটা বিরক্তি নিয়ে কপালটা কুঁচকে বলল,,,,,
—“রোজ….প্লিজ এতো নড়াচড়া করো না। এক্টু শান্তিতে ঘুমোতে দাও।”
হুট করে চাঁদনীর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। চোখ দুটো উওাল হয়ে উঠল। মুখটা কালো করে চাঁদনী মিনমিন করে বলতে লাগল,,,,
—“তাহলে এতোক্ষণ নূর ভাইয়া আমাকে রোজ আপু ভেবে জড়িয়ে রেখেছে? অবশ্যই এটাই তো স্বাভাবিক! নূর ভাইয়া তো শুধু রোজ আপুকেই ভালোবাসে।”
চাঁদনী এবার প্রচন্ড রাগ দেখিয়ে নূরের থেকে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ধস্তাধস্তির জ্বালায় নূর এবার বাধ্য হয়ে চোখ মেলে তাকাল। মুহূর্তেই নূরের মিনমিনে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। নূর এক ঝটকায় চাঁদনীকে ছেড়ে শোয়া থেকে উঠে গেলো। রাগে নূরের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। চাঁদনী ছাড়া পেয়ে শোয়া থেকে উঠে শাড়িটা ঠিক করতে করতে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। চাঁদনী যেই না দরজার খিলে হাত দিতে যাবে অমনি নূর চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
—“শাড়িটা পড়া হয় নি। ওয়াশরুমে গিয়ে ঠিক করে এসো। আমি দরজা খুলছি।”
কথাটা বলেই নূর বেড থেকে উঠে দরজার সামনে দাঁড়াল। চাঁদনী দৌঁড়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো। চাঁদনী কোমড়ে হাত দিয়ে দেখল, কোমড় থেকে শাড়িটা লুজ হয়ে নিচের দিকে ঝুলে আছে। চাঁদনী বিরক্তি নিয়ে শাড়িটা ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
নূর যেই না দরজা খুলল অমনি আয়মন আর হিমেল ধরফরিয়ে রুমে ঢুকে পড়ল। নূর কিছুটা অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকাল। আয়মন আর হিমেল সন্দেহের দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—“এতোক্ষন লাগল কেনো দরজা খুলতে?”
নূর ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে বলল,,,,,
—-“ঘুমিয়েছিলাম। তাই লেইট হয়েছে।”
হিমেল শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,,,,,
—“ঘুমিয়েছিলি নাকি অন্য কিছু করছিলি?”
নূর কিছুটা রেগে বলল,,,,,
—“অন্য কিছু করছিলাম মানে?”
—“এমা… এমন ভাবে বলছিস মনে হচ্ছে ভাঁজা মাছটা ও উল্টে খেতে জানিস না।” (আয়মন)
নূর কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল,,,,
—“না জানি না। কারণ চাঁদের সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।”
আয়মন কিছুটা মন খারাপ করে বলল,,,,
—” ওকে বুঝলাম। আয়মন এবার পুরো রুমটায় চোখ বুলিয়ে বলল,,,,
—“চাঁদ কোথায়?”
নূর মুখটা বেঁকিয়ে বলল,,,,,
—“ওয়াশরুমে।”
হিমেল বএিশ পাঁটি বের করে বলল,,,,,
—“চাঁদ ভাবীর শাওয়ার নেওয়া হলে, নিশ্চয়ই তুই শাওয়ার নিতে যাবি?”
নূর বেশ বুঝতে পেরেছে হিমেল কোন মাইন্ডে কথাটা বলেছে। তাই সে চোখ লাল করে বসা থেকে উঠে হিমেল আর আয়মনকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে রুম থেকে বের করছে আর বলছে,,,,,
—“সাত সকালে চলে এসেছে আমাকে জ্বালানোর জন্য। যা দুইটাই আমার রুম থেকে বের হ।”
আয়মন আর হিমেল দাঁত কেলিয়ে হেসে হেসে বলছে,,,,,
—“তোমার রিসিপশানের এরেন্জমেন্ট করতেই এসেছি আমরা। এভাবে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলে তোমার বউভাত টাই হবে না।”
নূর দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,,,,
—“বউভাত মাই ফুট। লাগবে না আমার বউ ভাত।”
হুট করে চাঁদনী ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কোঁমড়ে দুই হাত গুজে নূরের পিছনে দাঁড়িয়ে বলল,,,,,
—“কি বললে তুমি? বউ ভাত তোমার ফুট?”
নূর এবার ঠেলাঠেলি বন্ধ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। আয়মন আর হিমেল ও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। চাঁদনী তেড়ে এসে নূরের কলার চেঁপে ধরে বলল,,,,,
—“ঐ সময় কি বলেছ আবার বলো?”
নূর এক্টা শুকনো ঢোক গিলে বলল,,,,,
—“কই কিছু না তো। আমি আবার কি বললাম?”
চাঁদনী নাকটা ফিলিয়ে বলল,,,,,
—“সত্যি কিছু বলো নি?”
নূর এক্টা মলিন হাসি দিয়ে বলল,,,,
—“না না একদম না। কিছুই বলি নি আমি।”
চাঁদনী এবার নূরের কলারটা ছেড়ে এক্টা মুচকি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আয়মন আর হিমেল হেসে কুটিকুটি। দুইজনই হাসতে হাসতে নূরের খাটের উপর গা এলিয়ে দিলো।
নূর কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে আয়মন আর হিমেলকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—“এই মেয়ে বহুত ডেন্জারেচ! ওর সাথে আমি ঠিক পেরে উঠি না। জানিস কাল কতো বার আমাকে নাকানি চুবানি খাইয়েছে? জোর করে আমাকে দিয়ে কাজ ও করিয়েছে। এখন যদি ব্যাপারটা চেঁপে না যেতাম তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে রোলার দিয়ে পিষে পিষে রোল বানাতো। যখন তখন আমার কলার চেঁপে ধরে। কিছু বলতে পারি না সহ্য ও করতে পারি না। কিছু বললেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে কেটে পুরো বাড়ি এক করে ফেলবে। এরপর সবাই এসে আমাকে কেলানি দিবে। বিশেষ করে আম্মু। তাই শান্তি বজায় রাখার জন্য নিজেকে দমিয়ে নিলাম।”
আয়মন আর হিমেল হাসি থামিয়ে শোয়া থেকে বসে পড়ল। দুজনই নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—“চাঁদ ই ঠিক আছে তোর জন্য। একেবারে খাম্বার মতো সোজা করে ফেলবে তোকে।”
নূর চোখ রাঙ্গিয়ে ওদের দুইজনের দিকে তাকাল। আয়মন কিছুটা ভয় পেয়ে বসা থেকে উঠে নূরের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,
—“নিচে চল। আঙ্কেল বলেছে তিনজন মিলে বউভাতের এরেন্জমেন্ট করতে। কিছুক্ষন পরেই সোহানী আপুরা চলে আসবে। এলাকার লোকজন ও চলে আসবে।”
নূর কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলল,,,,
—-“তোরা যা। আমি এক্টু পরে আসছি।”
কথাটা বলেই নূর ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। আয়মন আর হিমেল কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে নীড়ের রুমে চলে গেলো।
চাঁদনী কিচেনে গিয়ে সাবরিনা আবরারের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। কাজের কাজ তো মোটেও করছে না কেবল অকাজ করে বেড়াচ্ছে। সাবরিনা আবরার খুব ভালো রান্না করতে পারে। তাই পুরো বউভাতের রান্না আজ উনি নিজের হাতেই রাঁধবে। তিনজন মহিলা উনার সাথে হেল্পার হিসেবে আছে। সবজি, থেকে শুরু করে মাছ, মাংস সব উনারা কেটে কুটে দিচ্ছে। আর সাবরিনা আবারার উনার হাতের যাদু দিয়ে রান্না করছে। মাঝ খান থেকে চাঁদনী খন্তি নাড়া করছে। মাঝে মাঝে হাতে গরম ভাপ ও লেগে যাচ্ছে। সাবরিনা আবরার অনেক বলে ও চাঁদনীকে কিচেন থেকে বের করতে পারছে না।
হুট করে পিছন থেকে কেউ এসে চাঁদনীর চোখ দুটো চেপে ধরল। চাঁদনী বএিশ দাঁত বের করে খিলখিল করে হেসে বলে উঠল,,,,
—“লাবু চোখটা ছাড়। আমি জানি তুই আর জাম্বু চলে এসেছিস।”
লাবিবা চাঁদনীর চোখ থেকে হাতটা সরিয়ে বলল,,,,
—“উফফফ…. ধরে ফেললি। আমরা ভেবেছি তোর সাথে এক্টু লুকা ছুপি খেলব।”
চাঁদনী পিছু ফিরে জায়মা আর লাবীবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,
—“চাঁদের সাথে নো লুকাছুফি! চাঁদ কিন্তু খুব ধুর্ত।”
জায়মা চাঁদনীকে ছেড়ে মুখটা বাঁকা করে বলল,,,,,
—“ধুর্ত না ছাই। তোর মাথায় তো গোবর ভরা।”
চাঁদনী চোখ লাল করে লাবিবাকে ছেড়ে যেই না জায়মাকে ধরতে যাবে অমনি জায়মা দিলো এক ভৌঁ দৌঁড়। পুরো ড্রইং রুম জুড়ে দৌঁড়াচ্ছে জায়মা। আর চাঁদনী জায়মার পিছু পিছু ধাওয়া করছে। অনেক চেষ্টা করে ও চাঁদনী জায়মাকে ধরতে পারছে না। চাঁদনী কিছুটা হাঁফিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,,,,
—“দাঁড়া জাম্বুর বাচ্চা। খেয়ে দেয়ে শক্তি করে নেই। এরপর তোকে ধরব।”
কথাটা বলেই চাঁদনী কিচেনে দৌঁড় দিলো। লাবিবা আর জায়মা ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে পড়ল।
চাঁদনী পেটে হাত দিয়ে মুখটা কুচকে সাবরিনা আবরারকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদি কন্ঠে বলল,,,,,
—“ওওও খালামনি। কিছু খেতে দাও না। খুব ক্ষিদে পেয়েছে আমার।”
সাবরিনা আবরার জিভ কেটে বলল,,,,
—“এই রে। আমি তো ভুলেই গেছি। আজ আমি আমার মেয়ের ফেভারিট মাটন বিরিয়ানি রান্না করেছি। নূর আর তোর খাবারটা তুলে রেখেছি। দাঁড়া দাঁড়া আমি এক্ষনি দিচ্ছি।”
কথাটা বলেই সাবরিনা আবরার চাঁদনীর হাত ধরে চাঁদনীকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গেলো। হটপটের ঢাকনাটা তুলে উনি দুইটা প্লেইটে বিরিয়ানী বাড়ছে। বিরিয়ানীর ঘ্রাণটা চাঁদনী নাক টেনে টেনে পেটের ভিতর ঢুকিয়ে নিচ্ছে।
হুট করে লাবীবা আর জায়মার মধ্যে তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেলো। দুজনই ফোন নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করেছে। এক পর্যায়ে লাবীবা জায়মার হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে দিলো এক ভোঁ দৌঁড়। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে লাবীবা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। ঐদিকে, আয়মন, নূর আর হিমেল সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। লাবীবা পিছনের দিকে তাকিয়ে হাসছে আর দৌঁড়াচ্ছে। হুট করে লাবীবা সিঁড়ির ঘর্ষনে পা উল্টে পড়ে যেতে নিলেই কেউ তাকে আষ্টেপিষ্টে ধরে ফেলে।
লাবীবা ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে রেখেছে। আয়মন লাবীবাকে বুকের ভিতর চেঁপে ধরেছে।
চাঁদনী বিরিয়ানির প্লেইট টা হাতে নিয়ে চোখ গুলো গোল গোল করে মুখে হাত দিয়ে লাবিবা আর আয়মনের দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,
—“ওমা গো…. টুরু লাভ!”
#চলবে,,,,,,,,