শেষ অধ্যায়ে তুমি পর্ব -৩৪+৩৫

#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৩৪ (চিঠি)

মিহালের জন্য লেখা চিঠিটা সবাই পড়ে এরপর যে যার যার চিঠি পড়ে। লিরা ও ফাইজা নিজেদের চিঠি দেখানোর পর সবাই যার যার রুমে গিয়ে নিজেদের চিঠি খুঁজতে থাকে পরে পেয়ে সেগুলো পড়তে থাকে,

লিরার চিঠি,—–
প্রিয় লিরা,
তুই আমার জন্য টিচারদের কাছে সবচেয়ে বেশি বকা খেয়েছিস কিন্তু কখনো আমাকে ছেড়ে যাস নি বা আমাকে দোষারোপ করিস নি। সবসময় সাপোর্ট করেছিস আর ঠান্ডা মাথায় আমাকে সামলিয়েছিস।
ভালোবাসি বান্ধবী❤। দোয়া করি তুই তোর ভবিষ্যতে কখনো এ রকম সমস্যার সম্মুখীন না হোস। সবার খেয়াল রাখবি।
~তূর

ফাইজার চিঠি,—–
প্রিয় ফাইজা,
তুই একটু শর্ট টেম্পারড কিন্তু মনের দিক দিয়ে ভালো। কোন সিদ্ধান্ত তুই হেলা ফেলা করে নেস না যা অত্যন্ত ভালো। আমার সাথে কোনো কিছু খারাপ হলে তুই আমাকে মনোবল দিয়ে যেতি সব সময়।
ভালোবাসি বান্ধবী❤। সব সময় নিজের মনের কথা শুনবি তবে অবশ্যই ভালো ক্ষেত্রে। সবার খেয়াল রাখবি।
~তূর

রণক ও জারিনের চিঠি,—-
প্রিয় লাভবার্ড,
শোন রণক, জারিনকে কখনো কষ্ট দিবি না। তোর অতীতে থাকা আমার প্রতি ভালবাসার অনুভূতি সব ভুলে যাবি কিছুই মনে রাখবি না আর আমি জানি তুই সবটাই ভুলে গিয়েছিস প্রায়।
জারিন তোকে প্রথম দেখা থেকেই ভালোবাসে। আমার প্রথম বন্ধুত্ব ও প্রথম দিন ভার্সিটিতে পরিচয় তো জারিন, লিরার ও অর্কর সাথে তারপর তোদের সবার সাথে।
জারিন, এটা মনে করবিনা যে রণক আমাকে ভালেবাসে! আমি জানি রণক তোকে অনেক বেশি ভালবাসে। সবার খেয়াল রাখবি।
ভালোবাসি তোদের❤
~তূর

অর্কর চিঠি,—–
প্রিয় অর্ক,
দোস্ত তোরে কি বলবো বল! তুমি আমার জীবনে এমন একটা ভাই যে নিজের বোনের একফোঁটা কষ্ট দেখতে পারে না। তুই অনেক রাগী তবে আমি জনি তুই তোর প্রিয় মানুষদের যারা কষ্ট দেয় তাদের জন্য রাগী।
রাগটা একটু কমাও না হলে জীবনে বউ পাবি না😒। তুই মাঝে মাঝে মজা করে বলতি আমার বোনকে বিয়ে করবি কিন্তু আমার বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। পারলে প্রিতিশার অনুভূতিকে মেনে নিস।
যাওয়ার আগে আরেকটা দায়িত্ব দিয়ে যেতে চাই মিহালের একটু খেয়াল রাখিস, আমি জানি মিহালের কোন দোষ নেই কিন্তু আমি এখানে থাকলে মানসিক ভাবে ভেঙে পরবো যতই মিহাল আমায় ভালোবাসুক।
সবার খেয়াল রাখিস।
ভালোবাসি ভাই❤
~তূর

তাওহিদ ও আসফির চিঠি,—–
প্রিয় তাওহিদ,
তুই সব সময় বাস্তববাদী, কল্পনায় তুই বিশ্বাসী না। মানুষ বাস্তবে কষ্ট পেলে কল্পনায় সুখ খুজে নেয়! কিন্তু তুই সেই মিথ্যা আশ্বাসে বাঁচতে চাস না।
সত্যি বলতে এটা যে মানাতে পারে সেই জীবনে সুখী কারন সে বাস্তবতা মেনে নেয়। অনেক চুপচাপ মানে কম কথা বলিস।
তুই আমাকে কখনো বলিস নি মিহালকে ভুলে যেতে আবার এটাও বলিস নি ওরে ভালেবাসতে! সব সময় বলতি বাস্তবতা মেনে নে।
ভালোবাসি দোস্ত❤
~তূর

প্রিয় আসফি,
তুই সবার কথা শুনিস, চুপচাপ স্বভাবের একটা গম্ভীর ভাব তোর মধ্যে থাকে যেটা তুই আমাদের বন্ধুমহলে দেখাস না।
তুই খুব কেয়ার করিস সবার তাই তোর জন্য কি বলবো কম পরে যাবে তবে সবসময় সবার কথা শুনলে তো হবে না! নিজের একটা স্টিল অ্যাটিটিউড বানাবি। আমি জানি তুই ভিনদেশে এসে কিছুটা অ্যাটিটিউড বানাচ্ছিস।
ভালোবাসি দোস্ত❤
~তূর

নাদিয়া ও শাফকাতের চিঠি,
প্রিয় নাদু বেবি,
তুই তো আমার কিউটি😘। তোরে আমি এতো এতো ভালবাসি। আমার সিঙ্গেল লাইফের তুই আমার জানটুস। আর শাফকাত ভাইকে তুই প্রথমদিকে জেলাস করার জন্য আমাকে ফোন দিয়ে একদম লুতুপুতু মার্কা কথা বলতি আর ভাই ক্ষেপে যেতো😅।
পরে ভাই যখন জানতে পারল তখন ভাই যে কি খুশি হইছে আমার এখনো মনে আছে। আমি জানি তুই ভাই কে একা পেয়ে সারাদিন জ্বালাস, একটু কম জ্বালাবি আমার ভাইকে।
ভালোবাসি জানটুস❤

আর শাফকাত ভাই, আমার দুষ্টু নাদু বেবিরে একটু বেশিই ভালবাসবেন যাতে ওর চন্চলতা হারিয়ে না যায়। যদি আমার নাদু বেবিরে কষ্ট দিছেন তাহলে দেখবেন আপনার চুল থাকবে না। হুহ!
আমার পুচকু/পুচকি আপনারে জেলে দিবে তার মায়ের জানটুসরে কষ্ট দেয়ার জন্য।
~তূর

রিজভী ও তাইজুলের চিঠি,—–
প্রিয় দুই দেবর বা ভাসুর,
আপনাদের সাথে অতো ভালোভাবে কখনো কথা বলি নাই তবে রিজভী ভাইকে আমার ভাসুর টাইপ লাগে আর তাইজুল ভাইকে দেবর।
আপনারা আমাকে ছোট বোনের মতো দেখেন ঠিক আমিও বড় ভাইয়ের মতো দেখি।
মিহালের দিকে খেয়াল রাখবেন। মিহাল যাতে কোনো ভুল কিছু না করে তাই ওর সাথে থাকবেন যেভাবে পাঁচ বছর থাকছেন। আপনাদের ভাতিজা বা ভাতিজির জন্য কিন্তু আপনারাই চাচ্চু! বাকিরা তো মামা, খালা ও খালু।
ভালো থাকবেন আর ওর খেয়াল সাথে সবার খেয়াল রাখবেন।
~তূর

রাফির চিঠি,—–
প্রিয় রাফি,
তুই বিচক্ষণ প্রকৃতির গম্ভীর। তুই সবসময় দুই দিকই ভাবিস। মিহাল যখন বিয়ে করলো তখন তুই মিহালের দোষ একেবারে দিস নাই কারন তুই সবদিক বিবেচনা করেই ভাবছিস।
আশা করবো কোন অবিবেচকের মতো কাজ করবি না।
আমার জীবনে তুই আমার ভাই যাকে আমি কিভাবে বর্ণনা করবো জানি না। তুই আর অর্ক সবসময় আমাকে বোনের মত ট্রিট করেছিস আর এমন না যে বাকিরা আমাকে বোনের মত দেখিনি! তারাও বোন প্লাস বন্ধুর মতো দেখেছে।
~তূর

ইনায়ার চিঠি,—–
ইনায়া,
তোকে প্রিয় বললাম না কারন আমি তোর প্রিয় হয়ে উঠতে পারিনি। তুই সবসময় কোন কাজ করার পর গিল্ট ফিল করিস। তানজিনার কথায় বা তানজিনার কথা ভেবে এমন অনেক কাজ করিস যা তোকে “বন্ধুত্বে অন্ধ” এমন ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ করে। পরে কিন্তু তুই ঠিকই গিলটি ফিল করিস কিন্তু ভেবে দেখ এই গিল্ট ফিল করে লাভ কি যদি তুই পরবর্তীতে ওই একই কাজ করিস!
সাত বছরেও আমি তোর বন্ধু হয়ে উঠতে পারিনি, এটা আমার ব্যর্থতা।
পারলে তানজিনার থেকে দূরেই থাকিস নাহলে একসময় একাকীত্ব তোকে ভর করবে তখন পাশে তুই কোন ফ্রেন্ডকে পাবি না এমনকি তানজিনা কেও পাবিনা।
তোর বলা আজকের কথা গুলো কোন শত্রুও তার শত্রুকে এভাবে বলে কিনা জানি না।
একবার নিরপেক্ষ হয়ে ভাবার চেষ্টা করিস কে ভুল আর কে ঠিক।
~তূর

সবাই সবার চিঠি পরে চোখের জল ধরে রাখতে পারে না। নাদিয়া, শাফকাত, তাওহিদ ও আসফির একদিন আগে পরিক্ষা শেষ হয়েছে তাই তারা সকাল আটটার দিকে সানফ্রান্সিসকোর উদ্দেশ্যে রওনা করে আর দুপুর দুইটার পর বাংলোতে এসে পৌঁছায়।
তূর দুপুর দেড়টার কিছুক্ষণ আগেই বাংলো থেকে বেরিয়ে যায়। তূর বেরিয়ে যাবার প্রায় বিশ মিনিট পর সবাই বাংলোতে ফিরে।

সবার চিঠি সবাই জোরে পড়ে তাই সবাই শুনতে পায়। রাফি সোফাতে মাথা নিচু করে বসে আছে আর ইনায়া এক কোনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ইনায়া তার নিজের চিঠিটা জোরে পড়তে চাইনি কিন্তু রাফি ওর হাত থেকে চিঠিটা ছিনিয়ে নিয়ে নিজেই জোরে জোরে পড়ে। রাফি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর উঠে গিয়ে ইনায়ার ডান গালে জোরে একটা থাপ্পড় দেয়।
থাপ্পরের শব্দ সবাই সেদিকে তাকায় কিন্তু কেউ বাধা দিতে আসে না। সবাই আজ এতোটা কষ্ট পেয়েছে ইনায়ার জন্য তাই কেউ কিছুই বলছে না।

রাফি বলে,
রাফি: মানা করেছিলাম তূরকে এমন কোন কথা বলতে কিন্তু তুই তাও বললি। এই তোর মাথায় কি বুদ্ধি নেই মাথা কাজ করে না তোর! কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল তুই বুঝতে পারিস না! তূর মিহালের জীবনে না থাকলেও তোর বান্ধবী ঠিকই ডিভোর্স দিতো। তোর বান্ধবীর ডিভোর্সটা কনফার্ম করছে কখন যখন ডাক্তার আরিফ তারে প্রপোজ করছে তখন। তাহলে তখন ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে তারপর ডাক্তার আরিফ জানতে পারলে এই সমস্যাটা হতোই।

ইনায়া গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিইবা বলবে সে! তানজিনার কথায় সে এতটাই প্রলুব্ধ হয়েছে যে অন্য কিছু ভাবতেও পারেনি।
গালে হাত রেখেই ইনায়া কাঁপা কাঁপা তোতলানো স্বরে বলে,
ইনায়া: তূতূর সেসেও কিন্তু ভুল ককরছে।

রাফি: একদম চুপ। এইটুকু ভুল সে কারো ভালোর জন্য করেছে। আগে নিজের দোষ স্বীকার করতে শিখো।

কথা গুলো বলে রাফি বাইরে বেরিয়ে চলে যায়।

চলবে,#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৩৫ (বোনাস)

সন্ধ্যার সময় এরিক, এলিনা ও ম্যাক্স লিরাদের সাথে দেখা করতে আসে তূরের মিসিং হবার খবর শুনে তবে এলেক্স কিছু কাজের বাহানায় আসেনা।

মিহাল বাদে বাকি ছেলেরা আসেপাশে খুঁজতে থাকে। তারা বাস স্ট্যান্ড, লোকাল ট্রেনের স্ট্যান্ড, এয়ারপোর্ট সব জায়গায় খুঁজেছে কিন্তু কোথাও পায়নি! পাবেই বা কিভাবে তূর তো এখন এলেক্সের বাড়িতে আছে।
মিহাল যে সেই বিকেলে রুমের দরজা লাগিয়ে বসে আছে এখনো খুলেনি তারউপর দুপুরের লাঞ্চটাও করেনি। মিহাল দরজা লাগিয়ে তূরের লেখা চিঠিটা অনেকবার পড়লো, চিঠিটা পড়ে সে এটা বুঝতে পেরেছে যে,
“তানজিনার জন্য যে ওইদিন খারাপ লেগেছে এইটা বলেছে সাথে নিজেকে দোষারোপ করেছে এটাই তূরকে কষ্ট দিয়েছে। তূর ওকে (মিহাল) হারানোর ভয় পেয়েছে আর আজকে তো তানজিনা কথা গুলো বলার সময় সে(মিহাল) কোনো প্রতিবাদ করেনি কিন্তু সে তো ভেবেছিল সব বলার পরে একসাথে প্রতিউত্তর করবে। তূর তা বুঝেনি তাই এটার অন্য মানে বের করে ফেলেছে সাথে ইনায়ার কথা গুলো তো আছেই!
প্রেগনেন্সির এই সময়টা মেয়েদের মন মানসিকতা অনেক পরিবর্তন হয় আর তূরের সাথে ও সেটাই হয়েছে।”
কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিহাল তারপর তূরের সাথে ছবি যেটা দেয়ালে লাগানো আছে সেটার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,

মিহাল: এতটু অপেক্ষা করতে আমি আসার। এই অবস্থায় কোথায় গিয়েছো, কিভাবে গিয়েছো কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি। ওরা সবাই মিলে তোমায় যতই খুঁজুক আমি জানি তুমি এখনো এই শহরেই আছো। ফিরে আসোনা জলদি করে! আমি তোমার ফেরার অপেক্ষায় আছি।

রাফি সেই যে দুপুরে বাহিরে বের হয়েছে এখন রাত নয়টা বাজে এখনো ফেরেনি। ইনায়া মনে মনে উুসখুস করছে কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছেনা।
তানজিনা এয়ারপোর্টে বসে আছে রাত এগারোটার দিকে ফ্লাইট সে ভেবেছিল আরিফ তার সাথে যাবে কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হবার পর আরিফের কোন পাত্তা পায়নি সে আর।
আরিফ তানজিনাকে বলেছে, তানজিনার রোগীদের সাথে মিশুকতা, বাচ্চাদের সাথে দুষ্টামি, সবার সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলা ও অবশ্য সাথে বাহ্যিক রূপ টাও আরিফের নজর কেরেছিলো। তবে সে তো তানজিনার মনে নিজের প্রতি একটা প্রবল অহংকারী সত্তা আছে যা অন্যকে খুশি রাখতে পারেনা।

রাত দশটার দিকে রাফি বাংলোতে ফিরে। সে আজকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে এসেছে যা কারো জীবনের উপলব্ধি হিসেবে কাজ করবে।

রাফি নিজের রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে আর এই প্রতিটা ঘটনা ইনায়া বিছানার একপাশে বসে বসে দেখেছে।

পরেরদিন সকালে সবাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে থমথমে মুখে বসে আছে। মিহাল এখনো রুম থেকে বের হয়নি তাই অর্ক ব্রেকফাস্ট নিয়ে মিহালের রুমে নক করে। মিহাল দরজা খুলে দিয়ে বেরিয়ে আসে তারপর সকলের উদ্দেশ্যে বলে,

মিহাল: তোমরা কেউ আর তূরকে খুঁজবে না! তূর নিজ থেকেই ফিরে আসবে। যে স্বেচ্ছায় হারিয়ে যায় তাকে খুঁজেও কূল পাবে না।

কথাগুলো বলে সবার সাথে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করে আবার রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। ব্রেকফাস্ট শেষ করেই রাফি আবার বাইরে বেরিয়ে যায়। ওরা কেউ ইনায়ার সাথে একটুও কথা বলছে না।

তূরের সাথে ইতিমধ্যে এলেক্সের বাবার কথা হয়ে গেছে সে তূরের ট্রান্সফারের বিষয়টা লক্ষ্য রাখছেন। এলেক্স বলেছে তূরকে “লস এঞ্জেলেস”
এ কোন একটা ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হতে কারণ লস এঞ্জেলেসে এলেক্সের মা থাকে তার গ্রেনীর(নানু) সাথে। তূরের মুখ থেকে এলেক্স সবকিছু শুনে সে নিজের মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে তূরের উপর তাই সে বলেছে তার মায়ের সাথেই তার মায়ের বাড়িতে থাকতে। আর তূরের জন্য এই অবস্থায় হোস্টেলে থাকা ভালো না। তূর প্রথমদিকে রাজি হয়নি কিন্তু এলেক্স তার মা কে দিয়ে বলিয়েছে এরপর তূর রাজি হয়েছে এক শর্তে,
” তূরকে এলেক্সের মায়ের বুটিক হাউসে একটা জব দেওয়া লাগবে!”
কারণ তূর আগে যে জবটা করত সেটা তো এখন ছেড়ে দিবে আর ওখানে গিয়ে এত তাড়াতাড়ি এই জবটা পাবেনা তাই এলেক্সের মায়ের বুটিক হাউসের জব করতে চায়। এলেক্সের মাও সানন্দে রাজি হয়ে যায়।
কালকে তূর “লস এঞ্জেলেস” এর উদ্দেশ্যে রওনা হবে সাথে এলেক্স যাবে ওকে পৌঁছে দিতে।

এলেক্সের মা খুব মিশুক সে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তূরকে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসতে শুরু করেছে ওর খেয়াল রাখতে শুরু করেছে।

_________
আজ এক সপ্তাহ হলো তূর বাংলো ছেড়ে চলে গেছে। ওরা কেউ ইনায়ার সাথে কথা বলে না এমনকি রাফিও না। এখনতো রাফি নিজের সুটকেস গুছিয়ে কোথায় যেন চলে যাচ্ছে!

সবাই এসে রাফিকে থেকে ধরলে রাফি বলে,
রাফি: আমি আমার ক্রেডিট ট্রান্সফার করে নিয়েছি অন্য একটা ইউনিভার্সিটিতে তাই আমি সেখানে চলে যাচ্ছি।

সবাই অবাক হয়ে যায় রাফির কথা শুনে আর ইনায়া তো কাঁদতে থাকে।
অর্ক: কি বলছিস তুই? তুই কোথায় ট্রানস্ফার করেছিস?
রাফি: সরি রে দোস্ত! আমি বলবোনা আমি কোথায় ট্রানস্ফার করেছি।
শাফকাত: দেখো রাফি তূর চলে গেছে তাই সকলের মন খারাপ এখন আবার তুমি চলে যেওনা।

রাফি: ভাই, আমার যেতে হবে। আমার এখন নিজেকেই দোষী মনে হচ্ছে! আমি যদি এই মেয়েটাকে (ইনায়া) ভালোবেসে বিয়ে না করতাম তাহলে আজকে এত কিছু হতো না। কারণ ইনায়াকে ওর বাবা-মা গার্জিয়ান ছাড়া বাহিরের দেশে আসতে দিতো না।

সবাই মিলে রাফিকে অনেক বুঝায় কিন্তু রাফি কারো কথা না শুনে চলে যেতে নিলে ইনায়া এসে রাফির পা জড়িয়ে ধরে বলে,
ইনায়া: প্লিজ! রাফি প্লিজ! যেওনা আমায় ছেড়ে। তোমার এত দিনের ইগনোরেন্স আমি এটা বুঝতে পেরেছি আমি ভুল ছিলাম! আমি মানছি আমি ভুল ছিলাম! প্লিজ যেওনা।

রাফি: পা ছাড়ো আমার!
ইনায়া তাও পা ছাড়ছে না দেখে রাফি ধমক দিয়ে বলে পা ছাড়তে।
রাফি: কি বললা তুমি? তুমি ভুল বুঝতে পারছো! কিন্তু বুঝে লাভ কি? তুমি তো সেই আবারো একই ভুল করবা! তোমার একটা শিক্ষা না হওয়া পর্যন্ত তুমি শুধরাবে না। তূর একা একা আছে না আমাদের কাউকে ছাড়া! এবার তুমিও সহ্য করো একা থাকার কষ্ট! তবে তুমি একা থাকছো না তোমার সাথে ওরা সবাই থাকছে।

ইনায়া: আমি তোমাকে ছাড়া থাকবো কিভাবে! প্লিজ যেওনা।

রাফি আর কারো কথা না শুনেই সবকিছু নিয়ে বেরিয়ে যায়। ইনায়া দরজার কাছে বসে কাঁদতে থাকে। ওরা সবাই একবার চেয়েছিল ইনয়ার কাছে গিয়ে সান্ত্বনা দেবে পরে কি মনে করে আর না যেয়ে যার যার রুমে চলে যায়।

রাফি কোথায় গিয়েছে কোথায় ট্রান্সফার করেছে কেউ জানে না এমনকি সে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার বন্ধ করে রেখেছে এবং সব ধরনের সোশ্যাল সাইট থেকে ডিএক্টিভেট।

কেটে গেছে আরো তিনদিন। এরমধ্যে ইনায়া রাফি যেদিন চলে যায় সে দিন তানজিনাকে ফোন দিয়েছিল। ফোন দিয়ে সব বলার পর তানজিনা বলে,
তানজিনা: দেখ ইনায়া, আমি তোকে একবারো তূরের সাথে মিসবিহেভ করতে বলিনি। মিহালের আমি বর্তমান থাকা অবস্থায় তূরকে বিয়ে করার কথাটা শুনে আমার রাগ হয়েছিল তাই আমি তোকে শেয়ার করেছিলাম কিন্তু তুই তো তূরকে একদম যা তা বলে দিলি! তূর যে প্রেগনেন্ট এটা খেয়াল করিস নি। আমার যদি তখন তূরকে কিছু বলার হতো আমি তূরকে নিজেই ফোন করে সব বলতাম। কিন্তু আমি ওকে কিছুই বলিনি।
সেদিন তোদের ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে তূরকে কথাগুলো শোনানোর কারণ হচ্ছে আমার আরিফের সাথে বিয়েটা ভাঙার পথে তাই।

ইনায়া: এখন তুই সব দোষ আমার উপর দিয়ে দিচ্ছিস! তুই আমাকে যেভাবে কথাগুলো বলেছিস আমি সেভাবেই সেই ধরনেরই প্রতিউত্তর করেছি। আর এখন তুই আমার ওপর সব দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজে ভালো হয়ে যাচ্ছিস।

তানজিনা: তোকে কি আমি একবারো বলেছিলাম বিবেচনা না করে প্রতিউত্তর কর? বলিনি তো? তুই নিজের মনের মধ্যে এসব ধারণা পুষে রেখে করেছিস।

সেদিন তানজিনার সাথে কথা হওয়ার পর ইনায়া বুঝতে পারে সে এতদিন সত্যিই “বন্ধুত্বে অন্ধ” হয়েছিল! যা এখন তার নিজের জীবনেই ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে এমন একটা ফ্রেন্ডের জন্য নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছে যে সেই ফ্রেন্ড তার দুঃখে তার পাশে নেই!!

রাফি চলে গেছে এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। ইদানিং ইনায়ার শরীরটা অনেক খারাপ করছে। মুখের রুচি চলে গেছে বমি হচ্ছে। তার ইচ্ছে করছিলো কাউকে বলতে, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। কিন্তু কি ভেবে আর না বলে নিজেই একা একা চলে যায়।

ডাক্তার যখন বলে ইনায়া প্রেগনেন্ট ছয় সপ্তাহের! তবে ইনায়ার প্রেগনেন্সিতে বাচ্চাটার জীবনের ঝুঁকি আছে কারণ ইনায়ার শরীর অনেক দুর্বল আর অনেক স্ট্রেসের মধ্যে যাওয়ার কারনে খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম হয়েছে।
ডাক্তার ইনায়া কে বলেছে, stress-free থাকতে নাহলে মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর যেহেতু এটা প্রথম বাচ্চা তাই রিস্কটা একটু বেশি।

বাচ্চাটার কথা শুনে ইনায়া খুশি হয় কিন্তু পরমুহুর্তেই মুখটা চুপসে যায়। সেই তো রাফিকে বাচ্চা নেওয়ার কথা বলেছিল যখন জানতে পেরেছিল তূর প্রেগন্যান্ট, আর এখন তো রাফিই নেই তারউপর বাচ্চাটার রিস্ক আছে! ডাক্তার বলেছে টেনশন ফ্রি থাকতে কিন্তু কিভাবে?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here