শেষ থেকে শুরু ২ পর্ব -০৬+৭

#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_৬
#নন্দিনী_চৌধুরী

১০.
প্রাপ্তিকে কোলে নিয়ে বারান্দার দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ। মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে মেয়েটা। কান্না করছিলো উঠেই। তাই মুগ্ধ কোলে করে বারান্দায় নিয়ে এসেছে। এখন মেয়েটার কান্না থেমে গেছে। মুগ্ধ প্রাপ্তিকে ফ্রেশ করিয়ে ফিটার নিয়ে ওকে খাওয়াতে বসে। প্রাপ্তিও আসতে আসতে করে দুধটা খেয়ে নেয়। সাদাফ অফিসে চলে গেছে। পুরা বাসায় এখন মিসেস হাসান আর মুগ্ধ আছে। মুগ্ধ প্রাপ্তিকে নিয়ে নিচে আসে। মিসেস হাসান রান্না ঘরে রান্না করছে। মুগ্ধ প্রাপ্তিকে নিয়ে সেদিকে যায়। মুগ্ধকে দেখে মিসেস হাসান হাঁসি দিয়ে বলে,

মিসেস হাসান:আরে তুমি এখানে?
মুগ্ধ:এইতো ওকে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলাম।
মিসেস হাসান:আচ্ছা তুমি বসো তোমার জন্য একটা জিনিশ বানিয়েছি। খেয়ে বলো কেমন হয়েছে।
মুগ্ধ গিয়ে সোফায় বসলো। মিসেস হাসান বাটিতে করে গুড়ের পায়েস নিয়ে আসলো। বাটিটা মুগ্ধের দিকে এগিয়ে দিলো। মুগ্ধ বাটি হাতে নিয়ে টেবিলে রাখলো। তারপর প্রাপ্তিকে এক সাইডে কোলে রেখে বাটি থেকে একটু একটু করে পায়েস নিয়ে খেতে লাগলো। প্রথম চামচ মুখে দিয়ে মুগ্ধ অনেক অবাক হলো। মুগ্ধ মিসেস হাসানের দিকে তাকিয়ে বললো,
মুগ্ধ:উম! পায়েসটা অনেক মজা।
মিসেস হাসান:আমার সাদাফের এই পায়েস অনেক পছন্দ।
মুগ্ধ:ওহ আচ্ছা।
মিসেস হাসান:তোমার বাড়িতে কে কে আছে মা?
মুগ্ধ:আমার বাবা মা আমি ছোট থাকতে মারা গেছে। আমার ভাই আছে বড়। আমি আমার চাচার সাথে থাকি। চাচা চাচি আর দুইটা চাচাতো বোন আছে।
মিসেস হাসান:ওহ আচ্ছা।
মুগ্ধ পায়েসটুকু খেয়ে প্রাপ্তিকে নিয়ে রুমে আসে। প্রাপ্তিকে এখন গোসল করাবে তাই। ওয়াটার হিটার দিয়ে পানি গরম করে নেয় মুগ্ধ। তারপর প্রাপ্তিকে গোসল করানো শুরু করে। গোসল শেষে ভালো করে শরীল মুছে দিয়ে পাউডার, ক্রিম,লোশন শরীলে মেখে দেয়। তারপর হালকা শীতের জামা পড়িয়ে দেয় প্রাপ্তিকে।

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রুহি মেহেরের সামনে বসে অফিসের ফাইল দেখছে। মেহের তাকে এখানে বসে কাজ করতে বলেছে। মেহের এক মনে ল্যাপ্টপে কাজ করছে। রুহি ওর মতো কাজ করছে। ওদের কাজের মাঝে একটা মেয়ে আসে মেহেরের কেবিনে। মেহের তাকে দেখে হাঁসি মুখে বলে,
মেহের:কেয়া তুমি!
কেয়া মাহিরের কাছে এসে বলে,
কেয়া:হ্যা আমি। কেমন আছো তুমি?
মেহের:হ্যা ভালো আছি তুমি কেমন আছো?
কেয়া:হ্যা ভালো। দেশে আসলা জানালেও না এটা ঠিকনা।
মেহের:সরি। আসলে এসেই বোনকে নিয়ে বিজি ছিলাম।
কেয়া:আই নো দেট। তা এ কি তোমার নিউ পিএ?
মেহের:হ্যা মিট হিম। সি ইজ মিস রুহি। আর মিস রুহি এ হচ্ছে আমার ফ্রেন্ড কেয়া।
রুহি কেয়ার দিকে মুচকি হাঁসি দিয়ে বলে,
রুহি:হ্যালো ম্যাম।
কেয়া:হ্যালো। আচ্ছা যেটা বলার জন্য আসলাম শুনো। আমার বাবা তোমাকে যেতে বলেছে। আর সাথে আমার বিয়ের কার্ড দিয়ে গেলাম। আসবে কিন্তু অবশ্যই আর তোমার ওই মিষ্টি পিএকেও নিয়ে আসবে কেমন। আর সাথে মুগ্ধকেও।
মেহের:আচ্ছা যাবো। প্রমিস।
কেয়া:ওকে আসি তাহলে।
কেয়া চলে যায়। আর মেহের রুহি আবার কাজে মন দেয়।

~অন্যদিকে~
সাদাফ আজকে দুপুরে বাসায় আসছে। অফিসের কাজ আজকে দুপুরে শেষ করে চলে আসছে। সাদাফ রুমে এসে দেখে প্রাপ্তিকে নিয়ে মুগ্ধ হাঁসছে আর পাপ্তিও হাত পা ছুড়ে ছুড়ে খেলছে। সাদাফ এই দৃশ্য দেখে অনেক খুশি। কিছু সময়ের জন্য সে মুগ্ধের জায়গায় প্রিয়াকে কল্পনা করে। সাদাফের কল্পনার মাঝে মুগ্ধ সাদাফকে দেখে বলে,
মুগ্ধ:আপনি!
মুগ্ধের আওয়াযে কল্পনা থেকে বেরিয়ে আসে সাদাফ। মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বলে,
সাদাফ:আজকে অফিসে তেমন কাজ ছিলোনা। তাই চলে এসেছি।
সাদাফ কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। গোসল করে এসে প্রাপ্তিকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগে। মুগ্ধ দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে। এর মাঝে মিসেস হাসান ওদের খেতে ডাকে। সাদাফ প্রাপ্তিকে নিয়ে চলে আসে নিচে মুগ্ধসহ। খাওয়া দাওয়া শেষ করে প্রাপ্তিকে মুগ্ধের কোলে দিয়ে সাদাফ বারান্দায় গিয়ে বসে। মুগ্ধ প্রাপ্তিকে ঘুম পাড়িয়ে সেখানেই বসে থাকে। কিছুসময় পর সিগারেটের গন্ধ নাকে আসে মুগ্ধের। গন্ধের উৎস খুঁজে দেখে সাদাফ বারান্দায় বসে সিগারেট খাচ্ছে। মুগ্ধ সেটা দেখে অবাক হয়ে বলে,

মুগ্ধ:আপনি স্মোক করেন?
আচমকা মুগ্ধের এমন প্রশ্নে ভেঁবাচেকা খেয়ে যায় সাদাফ। তাও নিজেকে সামলে বলে,
সাদাফ:সবসময় না। মাঝে মাঝে করি।
মুগ্ধ:আপনি জানেন আপনার ঘরে বাচ্চা আছে। তা জেনেও আপনি রুমে স্মোক করছেন। কেমন মানুষ বলুনতো আপনি। আপনি জানেননা সিগারেটের গন্ধ বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর।
সাদাফ:আরে আমিতো রোজ খাইনা। বললামতো মাঝে মাঝে খাই।
মুগ্ধ:মাঝে খান আর প্রত্যেকদিন খান। ঘরে কেন খাবেন। বাহিরে যেয়ে খেয়ে আসুন এসব ছাইপাঁশ।
সাদাফ:আশ্চর্য এখন আমার ঘরে আমি কি করবোনা না করবো তার জবাব আপনাকে দেবো নাকি। আপনি শুধু প্রাপ্তির দেখা শুনা করার কাজে আছেন। আমার কাজে বাধা দেওয়ার কাজে আপনাকে রাখা হয়নাই।
মুগ্ধ:শুনুন আপনার কাজে বাধা দেওয়ার মতো ইচ্ছা আমার নেই। আমি প্রাপ্তির জন্যই বলছি। আপনি এখানে স্মোক করছেন তার গন্ধ আমি রুমে বসে পাচ্ছি। তাহলে সেটাতো প্রাপ্তিও পাচ্ছে। তাইতো বলছি টাকা দিয়ে এই মরণ বাহিরে বসে খেয়ে আসবেন।
মুগ্ধের কথায় সাদাফ বুঝতে পারে সে ভুল করেছে। তাই আর কিছু না বলে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।

মুগ্ধ সাদাফের চলে যাওয়া দেখে ভেংগিয়ে বলে,

“এহ আসছে ওনাকে পটাতে ওনার কাজে বাধা দিতে। যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা যত্তসব।”

মুগ্ধ গিয়ে আবার প্রাপ্তির পাশে গিয়ে বসে থাকলো।

~২দিন পর ~

রুহি রেডি হচ্ছে মেহের তাকে ফোন করে বলে দিয়েছে রেডি হয়ে অফিসে এসে থাকতে। সে তার বোনকে নিয়ে একেবারে আসবে। রুহি রেডি হয়ে বেরিয়ে যায় অফিসে যাওয়ার জন্য।

১১.
মুগ্ধকে সাদাফ আজকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিয়েছে। সাদাফের কোথাও একটা দাওয়াত আছে সেখানে যাবে সেই জন্য। মুগ্ধ বাসায় এসে দেখে সামিয়ার সাথে দেখা কররে আশেপাশের আন্টি খালারা আসছে মুগ্ধ তাদের সালাম দিয়ে নিজের ঘরে যাচ্ছিলো তখন এক মহিলা বলে উঠে,
মহিলা:বুঝিনা বাবা আজকালদের মেয়েদের কোনো লজ্জা শরম নাই কেন। ডিভোর্স হয়েছে স্বামী তাড়িয়ে দিয়েছে কোথায় ঘরে বসে থাকবে তানা দেখো বাহিরে গিয়ে ধেই ধেই করছে।
আরেকজন মহিলা: হ্যা একে ডিভোর্সি তার উপর বাজা একটুতো লজ্জা থাকা উচিত। বলি ও সালমা মেয়েকে সাবধানে রেখো জানতো বাজা মেয়ে মানুষ ভালা না সংসারের জন্য।
মুগ্ধ তাদের কথাগুলো শুনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের কার্নিশে পানি এসে জমে গেছে।
সালমা কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজার দাঁড়ানো মেহের মহিলাদের উদ্দেশ্যে করে বললো,
মেহের:মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলেন আন্টিগন।

মেহেরকে দেখে সালমা আর কথা বলেনা চুপ করে বসে থাকে। মেহের মুগ্ধের কাছে গিয়ে ওর হাতে শপিং ব্যাগ দিয়ে বলে,
মেহের:এখানে ড্রেস আছে পরে রেডি হয়ে নিচে আয়।
মুগ্ধ বুঝতে পারছে ভাই তার রেগে আছে তাই সে ব্যাগটা নিয়ে রুমে চলে যায়।
মুগ্ধ যেতেই মেহের আবার সেই মহিলাদের কাছে গিয়ে বলে,

মেহের:তো কি জানি বলছিলেন যে আমার বোনের লজ্জা থাকা উচিত সে ডিভোর্সি আর জানি কি হ্যাঁ বাজা। হাউ ডেয়ার ইউ টু টক লাইক দেট। আমার বোনকে এভাবে বলার সাহস হয় কিভাবে আপনাদের। আমার বোন লজ্জা কেন পাবে সে কি চুরি করেছে না খুন করেছে না জেল খেটে এসেছে। আমার বোন তার স্বামীকে ছাড়েনি তার স্বামী তাকে ছেড়েছে অন্য নাড়ীর জন্য। তাহলে আমার বোন কেন লজ্জা পাবে কেন লুকিয়ে থাকবে। আপনাদের এই সমাজে যে নিয়ম বানিয়ে রাখছেন ডিভোর্স হলে সেই মেয়েকে কালো চোখে দেখেন। ডিভোর্স তো না জেনো কোনো পাপ করে ফেলছে সে। একবার ও চিন্তা করেন যেই মেয়েটার ডিভোর্স হয়ে যায় তার ভেতরে কি হয় কতটা যন্ত্রনা হয়। সমাজের প্রত্যেক লোক তাকে নিয়ে কথা শোনায়। চা ওয়ালা থেকে শুরু করে রাস্তার বাজে ছেলেরা আপনাদের মতো আন্টিগনরাও। মেয়েটা বেঁচে থেকেও মরে যায় আপনাদের এসব কথা শুনে। একটা মেয়ে কোনোদিন স্বইচ্ছায় ডিভোর্সি হয়না যদিনা ওই মেয়ে খারাপ হয়। আজকাল পরোকীয়ার কারণে হাজার ঘর ধ্বংস হচ্ছে। কই যখন কোনো ছেলের ডিভোর্স হয় তখন সেই ছেলেটাকেতো আপনারা এসব বলেননা। তবে কেন একটা মেয়েকে বলেন। যেখানে সে নিজ ইচ্ছায় ডিভোর্সি হয়না। আর বাজা! একবার ও কি মুখে আটকায় না এই নোংড়া শব্দটা উচ্চারণ করার সময়। একটা নারী হয়ে অন্য নারীকে কিভাবে এই শব্দটা দিয়ে আঘাত করেন আপনারা। বাজা কেউ ইচ্ছা করে হয়না। আল্লাহর ইচ্ছায় সব হয়। আল্লাহ তায়ালার যাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে বানিয়েছেন। আল্লাহ না করুক আপনার ঘরের মেয়ে বাজা হলে তাকে জিজ্ঞেস করবেন কেউ যদি তাকে এই শব্দটা বলে তার কলিজা কতটা জ্বলে।

মেহেরের কথা শুনে মহিলারা চুপ হয়ে যায়। তারপর আসতে আসতে একজন একজন করে উঠে চলে যায়। তারা যেতেই মেহের সালমাকে বলে,
মেহের:আমি জানি আপনি আমাদের ভালোবাসেননা পছন্দ করেননা। কিন্তু তাই বলে বাহিরের লোকের সামনে আমার বোনকে অপমান করেন। সাহস পান কিভাবে আপনি
মেহেরের কথায় ভয় পেয়ে যায় সালমা। আমতা আমতা করে বলে,
সালমা:তারা তো ভুল কিছু বলেনি তাইনা।
মেহের:Shut Up. কি ভুল কিছু বলেনি। এসব কথা বলার সাহস আসে কোথা থেকে ওনাদের। আর শুনুন সময় আসলেই বুঝতে পারবেন কোনটা সঠিক কোনটা ভুল। কে যে ভালো আর কে যে খারাপ। দুধের মধ্য চুনা দিয়ে বেশিদিন চলা যায়না।

কথাটা বলেই মেহের মুগ্ধের রুমে চলে যায়। আর সালমা ভাবতে থাকে কি বলে গেলো এটা মেহের। তবে কি সে কিছু জানতে পেরেগেছে!
#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_৭
#নন্দিনী_চৌধুরী

১২.
মেহের মুগ্ধের রুমে এসে দেখে মুগ্ধ খাটে বসে আছে মাথা নিচু করে। বুঝাই যাচ্ছে নিঃশব্দে কান্না করছে সে। মেহের এসে বোনের পাশে এসে বসলো। মুগ্ধ ভাইকে দেখে চোখের পানি মুছে ফেললো। মেহের বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,

মেহের: লোকের কথার জবাব দিতে পারিস না। আর আমার সাথে ঠিকই রাগ দেখিয়ে বসে থাকিস।
মেহের কথা শুনে মুগ্ধ ওর দিকে তাকায় তারপর বলে,
মুগ্ধ:লোকের কথার জবাব দেওয়ার কি আছে তারাতো সত্যিটাই বলেছে।
মেহের:কি সত্যি বলেছে?[রেগে]
মুগ্ধ:যা সত্যি তাই।
মেহের মুগ্ধের গালে ঠাস করে লাগিয়ে দেয় একটা থাপ্পড় আর চিৎকার করে বলে,
মেহের:খবরদার যদি আর একটা বাজে কথা বলিস। লোকে কোন সত্যি কথাটা বলেছে হ্যা? তুই কি ডিভোর্সি ইচ্ছা করে হয়েছিস নাকি ইচ্ছা করে ছেড়েছিস আরিশকে। তোকে আরিশ ঠকিয়েছে। তোর বিশ্বাস ভেংগেছে। যে তোর ত্রুটির জন্য তোকে ছেড়ে অন্য নারীর কাছে গেছে। তার জন্য তুই কেন সমাজের কাছে নিচু হবি। শোন আমার বোন হয়ে তোকে কেউ কথা শুনিয়ে যাবে আর তুই চুপ করে থাকবি তা হবেনা। দরকার পরলে মেরে রেখে আসবি বাকিটা আমি দেখে নেবো। আর যদি কোনোদিন শুনছিনা যে লোকে কিছু বলছে আর তুই তাদের জবাব না দিয়ে এসে এখানে বসে ছিচকাঁদুনি দের মতো কাঁদছিস তাহলে তোর খবর আছে। এখন যা রেডি হয়ে আয়। তোকে নিয়ে একটা দাওয়াতে যাবো। আর কোনো রিপ্লাই না যেটা বলছি সেটা কর।

মুগ্ধ আর কথা বাড়ায় না ব্যাগটা নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চ্যাঞ্জ করে আসে। একটা ব্লাক লং ড্রেস এনেছে মেহের। মুগ্ধ সুন্দর করে ওড়না দিয়ে হিজাব বেধে নিলো আর হালকা একটু সাজলো। তারপর বেড়িয়ে পরলো মেহেরের সাথে যাওয়ার জন্য।
মেহের অফিস থেকে রুহিকে নিয়ে চলে আসলো কেয়াদের পার্টিতে। সেখানে আসতেই কেয়ার বাবা মেহেরদের আপ্যায়ন করলো। মেহের মুগ্ধের আর রুহির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর কেয়ার কাছে গেলো। কেয়াকে আর ওর বরকে অভিনন্দন জানালো। মুগ্ধ আর রুহিকে কেয়ার সাথে রেখে মেহের কেয়ার বাবার সাথে কথা বলতে যায়। মেহের কেয়ার বাবার সাথে কথা বলছে তখন কেয়ার বাবা বলে,
কেয়ার বাবা:তোমাকে আমার আরেক বিজনেস পার্টনারের ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই দাঁড়াও।
কেয়ার বাবা ইশারা করে ডাকলো একজনকে তারপর বললো অমুককে ডেকে আনতে। লোকটা গিয়ে ডেকে আনলো তাকে। কেয়ার বাবা সামনে থাকা লোকটাকে মেহেরকে দেখিয়ে বললো,
কেয়ার বাবা:মিট মেহের হি ইজ মাই ফ্রেন্ড সায়েদ হাসান এর এক মাত্র ছেলে সাদমান হাসান সাদাফ। বর্তমানে হাসান গ্রুপ ওফ কম্পানির মালিক ও। বাবার মারা যাওয়ার পর বিজনেসের সব দায়িত্ব ও পালন করছে।
মেহের:হ্যালো।
সাদাফ:হ্যালো।
কেয়ার বাবা: সাদাফ এ হলো আরিয়ান খান মেহের। মেহেরাব খানের বড় ছেলে। সেও তোমার মতো একজন নাম করা বিজনেস ম্যান।
সাদাফ:আমি নাম শুনেছি অনেক ওনার।ভাবিনি এভাবে দেখা হয়ে যাবে।
মেহের:আমারো ভালো লাগলো আপনার সাথে দেখা করে।
এভাবে ওরা কথা বলার পর খাওয়া দাওয়া করে মেহেররা চলে গেলো। পুরোটা সময় মুগ্ধের সাথে দেখা হয়নি সাদাফের।

~পরেরদিন~
মুগ্ধ ক্লাস করে চলে আসে সাদাফের বাসায়। এসে প্রাপ্তিকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে দেয়। তারপর কিছুটা সময় প্রাপ্তিকে নিয়ে খেলে ওকে গোসল করিয়ে দেয়।
তারপর সাদাফের মা আর মুগ্ধ মিলে খাবার খেয়ে নেয়। সন্ধ্যায় সাদাফ বাসায় আসে। অফিসের মিটিং শেষ করে বাসায় এসে পরে। মুগ্ধ সাদাফকে বাসায় আসতে দেখে বলে,
মুগ্ধ:আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো।
সাদাফ:কি?
মুগ্ধ:বলছিলাম যে প্রাপ্তির ঠান্ডার জামা কাপড় তেমন নেই। ঠান্ডাও পরেছে অনেক। তাই কিছু জামা কাপড় কিনতে হবে।
সাদাফ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৮টা বাজে। এখনো মার্কেট খোলা থাকে। তাই সাদাফ মুগ্ধকে বলে,
সাদাফ:আপনি প্রাপ্তিকে রেডি করে নিচে আসুন। মার্কেটে যাবো।
মুগ্ধ:আচ্ছা।
সাদাফ ফ্রেশ হয়ে শীতের একটা জামা পরে নিচে চলে যায়। মুগ্ধ প্রাপ্তিকে একটা গরম কাপড় আর একটা রেবিটের হুডি ওয়ালা জ্যাকেট পরিয়ে রেডি করে নিচে আসে। সাদাফ ওদের দেখে গাড়িতে গিয়ে বসে। তারপর মুগ্ধ গিয়ে গাড়ির পিছনের সিটে বসে। সাদাফ গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিছু সময়ের মাঝে মার্কেটে এসে পৌছায় ওরা। মুগ্ধের অনেক শীত লাগছে সাথে কোনো শীতের কাপড় নেই ওর। আর আজকে ঠান্ডা লাগছে অনেক। মার্কেটে ঢুকে সাদাফ মুগ্ধ সোজা চলে যায় কিডস এরিয়ায়। সেখানে গিয়ে প্রাপ্তির জন্য জামা কাপড় দেখতে লাগে দুজনে। সাফাদের যা পছন্দ হয় সেটা মুগ্ধের পছন্দ হয়না। তাই মুগ্ধ সাদাফকে বলে,
মুগ্ধ:আপনি রাখুন জামা চুজ করা। আপনার চুজ করা জামা পরলে ওকে মেয়ে কম জোকার লাগবে বেশি।
সাদাফ:তাহলে আপনি খুঁজেন দেখি।
মুগ্ধ:হ্যাঁ আমিই খুঁজবো। নিন ওকে ধরুন।
মুগ্ধ প্রাপ্তিকে সাদাফের কোলে দিয়ে। জামা চুজ করতে লাগলো। ৪৫মিনিট ধরে প্রায় ৫০টার মতো জামা চুজ করে বের করেছে মুগ্ধ। সাদাফ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে বলে,
সাদাফ:এই জন্যই কেউ বলেছিলো। জীবনে আর যাই করোনা কেনো মেয়ে মানুষ নিয়ে শপিং করতে এসোনা। এরা সব জিনিশ নিয়ে এতো কনফিউজ থাকে পুরো ৩দিন লাগিয়ে দেবে শপিং করতে করতে।
অবশেষে জামা চুজ করা শেষ করে মুগ্ধ।
কাউন্টারে বিল দিতে আসলে,কাউন্টারে থাকা মেয়েটা ওদের দেখে বলে,
মেয়েটা:আপনারা খুব মজার কাপল।বেবির জন্য কাপড় চুজ করতে গিয়ে কি মজা করলেন আপনি আর স্যার। অনেক সুন্দর কাপল আপনারা। আপনাদের আর আপনাদের বাচ্চার জন্য অনেক দোয়া রইলো।
সাদাফ মেয়েটাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোনে কল আসে। মুগ্ধ আর রিপিট কিছু বলতে যায়না। জিনিশ নিয়ে বেড়িয়ে আসে ওরা। তারপর সাদাফ মুগ্ধকে নিয়ে মেয়েদের দোকানে ঢুকে। মুগ্ধ বুঝতে পারেনা এখানে কেন এসেছে সাদাফ। সাদাফ দোকানে ঢুকে বলে,
সাদাফ:শীতের গায়ে দেওয়ার চাদর আছে লেডিস?
দোকানদার:জ্বি স্যার আছে।
সাদাফ:দেখানতো।
দোকানদার কত গুলা লেডিস চাদর দেখালো। সব গুলার মাঝে একটা নীল রং এর একটা চাদর পছন্দ হলো সেটা নিলো।
চাদরটা নিয়ে মুগ্ধের দিকে এগিয়ে দিলো সাদাফ আর বললো,
সাদাফ:বাহিরে এখন অনেক ঠান্ডা। নিজের সাথে ঠান্ডার কাপড় রাখবেন। নাহলে অসুস্থ হয়ে যাবেন।
মুগ্ধ কেমন দ্বিধা লাগছিলো সাদাফের থেকে এটা নিতে। সাদাফ সেটা বুঝতে পেরে বলে,
সাদাফ:দ্বিধা লাগার কিছু নেই। নিন এটা।
মুগ্ধ ওটা নিয়ে গায়ে দিলো। সাদাফ প্রাপ্তিকে নিয়ে খেলনার দোকানে গেলো। অনেক গুলা খেলনা কিনে নিলো মেয়ের জন্য। একটা বাবু নেওয়ার ট্রলি নিলো।
কেনাকাটা শেষ করে করে চলে আসলো বাসায়। মুগ্ধ আর যায়নি সেখান থেকেই বাসায় চলে আসলো।

১৩.
দেখতে দেখতে রুহি এখন অনেকটা ফ্রি মেহেরের সাথে। ভয় পাওয়াটা কমে গেছে অনেক মেহেরকে। মেহেরেরও অনেক ফ্রেন্ডলি লাগে রুহিকে।

এদিকে মুগ্ধ আর প্রাপ্তির রিলেশন ও অনেক ভালো হয়েছে। প্রাপ্তি অনেক ভালো মিশেগেছে মুগ্ধের সাথে। সাদাফ এখন টেনশন মুক্ত মেয়ের দেখাশুনা নিয়ে। সাদাফের মা আর মুগ্ধের ও অনেক শখ্যতা হয়েছে।

এদিকে সায়মা আরিশকে বিয়ের জন্য পাগল করে দিয়েছে। তাই আরিশ বিয়ে করার ডিসিশন নিয়েছে। আগামী পরশু তারা বিয়ে করবে।

সামিয়ার শশুড়বাড়ি থেকে সামিয়াকে দেখতে এসেছে ওর শাশুড়ি শশুড়। সামিয়ার স্বামী বর্তমানে ঢাকার বাহিরে আছে তাই সে আসেনি। সামিয়ার শাশুড়ি মুগ্ধকে দেখে সামিয়ার কাছে জিজ্ঞেশ করে,

সামিয়ার শাশুড়ি:এটা তোমার চাচাতো বোননা! যার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু সন্তান জন্ম দিতে না পারায় স্বামী ছেড়ে দিয়েছে।
সামিয়ার ওর শাশুড়ির বলার ধরন একদম পছন্দ হয়নাই। তাও সে বলে,
সামিয়া:জ্বি ও আমার চাচাতো বোন।
সামিয়ার শাশুড়ি:শুনো তুমি কিন্তু সাবধানে থেকো। এসব মেয়েদের সংস্পর্শে যাবানা। এরা কিছু দিলে খাবানা। বুজলে নাহলে বাবুর ক্ষতি হবে।
সামিয়ার শাশুড়ি এগুলা বলছিলো তা মুগ্ধ দরজার আড়াল থেকে শুনলো। শুনে চুপ করে চলে আসলো রুমে। এসে নিরবে কেঁদে নিলো। তারপর রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলো ক্লাসে যাওয়ার জন্য।

সামিয়া ওর শাশুড়ির কথা শুনে বললো,
সামিয়া:মাফ করবেন মা। একটা কথা না বলে পারছিনা। আপনি আমার বোনকে এভাবে বলছেন আপনি কি ভুলে গেছেন আপনার নিজ মেয়ের বিয়ে হয়েছে আজ ৫ বছর এখনো তার বাচ্চা হয়নি। সে হিসাবে সেওতো বন্ধা হলো তাইনা। তাহলে সে যদি আমাকে দেখতে আসতে পারে আমাকে খাওয়াতে পারে। তবে আমার বোন কি অপরাধ করেছে।চিন্তা ধারা পাল্টান মা নাহলে জীবনে উন্নতি হবেনা।

সামিয়ার শাশুড়ি সামিয়ার কথায় অনেক লজ্জা পেলো।

মেহের মুগ্ধের জন্য একটা ইন্সুরেন্স করে রেখেছিলো আগামীকাল তারিখ সেটা মেয়াদ পুরন হবে। মুগ্ধ জানেনা এই কথা। মেহের এটা মুগ্ধের পড়াশুনার জন্য করে দিয়েছিলো। মেহের জানে তার বোন এখন তার থেকে টাকা নেবেনা। তাই এটা উঠিয়ে বাবার নাম করে দেবে।

মেহের অফিসে এসে দেখে আজকে এখনো রুহি আসেনি। তাই রুহির নাম্বারে কল দেয় কিন্তু ফোন অফ। মেহের ভাবলো হয়তো আসতে কোনো কারনে লেট হচ্ছে। তাই আসছেনা এখনো।

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here