#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_১৪
#নন্দিনী_চৌধুরী
২৬.
দেখতে দেখতে আরো ১ মাস কেঁটে গেলো। এই ১মাসে সাদাফ মুগ্ধের সম্পর্ক আপনি থেকে তুমিতে এসেছে যদিও সেটা শুধু সাদাফের পক্ষ্য থেকে। মুগ্ধ আগের ন্যায় তাকে আপনি বলেই সম্বোধন করে। তবে প্রাপ্তি আর মুগ্ধের সম্পর্ক বেশ গভীর হয়েছে।প্রাপ্তিতো যেনো তার এই মাকে ছাড়া একদম থাকতেই পারবেনা। প্রাপ্তির মুখে এখন কথা ফুঁটেছে। আদো আদো কন্ঠে মা বাবা বলতে পারে। প্রাপ্তির মুখ থেকে প্রথম মা ডাক শুনে মুগ্ধ একদম থমকে গেছিলো। এক এমন অনুভুতি হচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো প্রাপ্তি যেনো ওর নিজের সন্তান। প্রথম মা ডাক শোনার অনুভুতিটা বেশ দারুন ছিলো মুগ্ধের।
ইদানিং সাদাফ মুগ্ধ প্রাপ্তিকে নিয়ে বাহিরে ঘুরে আসে। নানা রকম জিনিশ কেনাকাটা করে। মানে যে কেউ দেখে ভাববে এরা একটা পার্ফেক্ট ফ্যামিলি। অনেকেতো বলেই ফেলে সরাসরি তখন সাদাফ শুধু মুচকি হাঁসে। আর মুগ্ধ তাদের ভুলটা ভাংগাতে গেলে সাদাফ বাঁধা দেয়। এতো সবের মাঝেও কেউ কারো মনের অনুভুতিকে প্রাধান্য দিতে পারছেনা। সাদাফের সামনে প্রিয়ার দেয়াল দাঁড়ানো। প্রিয়াকে সে ঠকাবে কিভাবে তাই সে ভাবে। আর মুগ্ধ সেতো যেনো আর নতুন শুরুর কথা ভাবতেই পারেনা। হৃদয় ভাংগার যন্ত্রনা একবার সয্য করে উঠাই তার জন্য অনেক ছিলো। ২য়বার একই ভুল সে করবেনা।
~অন্যদিকে~
সায়মা অবশেষে কনসিভ করেছে। হ্যাঁ তার গর্ভে এখন আরিশের অনাগত বাচ্চা। সায়মার যেনো খুশি আর ধরেনা। এখন অপেক্ষা শুধু আরিশকে জানানো। রাতে আরিশ বাসায় আসে। ক্লান্ত শরীর একদম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে সে বিছানায়। সায়মা আরিশকে এভাবে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসে আর বলে,
সায়মা:কি ব্যাপার! তোমার কি মন খারাপ?
আরিশ: আমার বিজনেসে খুব খারাপ সময় চলছে সায়মা।
সায়মা: মানে?
আরিশ:আমার এই নিয়ে ৩টা বড় বড় ডিল ক্যান্সেল হয়ে গেলো। কম্পানির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে এতে।
সায়মা:থাক চিন্তা করোনা ঠিক হয়ে যাবে সব।
আরিশ:হুম।
সায়মা:তোমাকে একটা জিনিশ বলার আছে।
আরিশ:কি?
সায়মা:তুমি বাবা হতে যাচ্ছো!
আরিশ অবাক হয়ে বলে,
আরিশ:কিহ সত্যি!
সায়মা:হ্যাঁ
আরিশের যেনো খুশি ধরেনা আরিশ সায়মাকে জরিয়ে ধরে খুশিতে। অবশেষে সে বাবা হতে যাচ্ছে।
🌸
সালমা খান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। একে একে তার সব টাকা আসার পথ বন্ধ করে দিয়েছে মেহের। সালমা খানের যেনো মাথায় বাজ পরেছে এতে। সালমা খান বুঝতে পারছেনা কি করবেন উনি। কিভাবে সব আগের মরো ওনার হাতের মুঠোয় আসবে।
তাহলে কি মেহের সব জেনে গেলো। তার এতোবছরের লুকানো সত্যি কি তবে সে জেনে গেলো। তবে এবার কি হবে। এবার যে তাহলে তাকে কেউ রক্ষা করতে পারবেনা মেহেরের হাত থেকে।
মেহের অফিসে বসে কাজ করছে রুহি ওর কেবিনে বসে মেহেরকে দেখছে। রুহি আর পারছেনা নিজের অনুভুতিগুলো লুকিয়ে রাখতে। রুহি পারলে ছুটে জরিয়ে ধরে মেহেরকে বলে, “ভালোবাসি আপনাকে স্যার ভালোবাসি। আমিযে আপনাতে পাগল হয়েগেছি স্যার। আপনি আমাকে ঘ্রাস করে ফেলেছেন স্যার।”
কিন্তু কোনো এক কারণে আর সেই সাহস করা হচ্ছেনা রুহির।
মেহের এর মাঝে রুহিকে কেবিনে ডাকে। রুহি কেবিনে আসলো। মেহের রুহিকে কফি বানিয়ে দিতে বলে। রুহি মেহেরকে কফি বানিয়ে দেয়। তারপর মেহের রুহিকে কিছু ফাইল দেয় চেক করার জন্য। রুহি এখানে বসেই চেক করতে লাগে ফাইলগুলো। এর মাঝে মেনেজার আসে মেহেরের রুমে। মেহের রুহিকে ফাইল নিয়ে ওর কেবিনে চলে যেতে বলে। রুহি ফাইল নিয়ে চলে আসে।
মেনেজার রুমে ঢুকে বলে,
মেনেজার:স্যার এইযে ফাইল।
মেহের:হ্যাঁ বলো কি কি জানতে পারলা?
মেনেজার:স্যার আপনার চাচি মুগ্ধ ম্যামকে তার কাছে রেখে তার খেয়াল রাখার কথা বলে প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০হাজার টাকার মতো উঠাতেন। মুগ্ধ ম্যামের নামে যেই একাউন্ট ব্যাংকে করা ছিলো তাতে প্রতি মাসে ১লাক্ষ টাকা আসতো। আর সেই টাকা আপনার মামা দিতো। কিন্তু টাকা নিয়েও সে ম্যামের যত্ন নিতোনা। অত্যাচার করতো অনেক। এরপর স্যার ম্যামের এই বিয়ের কথা জানিয়েও প্রায় ৫লাক্ষ টাকা সে নিয়েছেন। আর সব থেকে আজব এইটা যে তিনি টাকা নেওয়ার সময় সব জায়গায় নিজেকে মুগ্ধ ম্যামের মা দাবি করেছেন।
মেহের:হুম বুঝতে পারলাম। এখন সব একাউন্ট সিল করে দিয়েছো?
মেনেজার:জ্বি স্যার।
মেহের:গুড। এখন যাও তুমি।
মেনেজার চলে গেলো। মেহের চেয়ারে হেলান দিয়ে কপালে আঙ্গুল দিয়ে ঘুরাচ্ছে।
২৭.
মুগ্ধ সারাদিন পর বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিলো। তার ভাই এখনো বাসায় আসেনি। মুগ্ধ রুমে বসে কফি খাচ্ছে আর বই পড়ছে। বই পড়ছে এমন সময় ওর মোবাইলে কল আসলো। মুগ্ধ ফোন হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার। মুগ্ধ কল রিসিব করে সালাম দিলো,
মুগ্ধ:আসসালামু আলাইকুম।
ওপাশ:…………
মুগ্ধ:হ্যালো কে বলছেন?
ওপাশ:……….
মুগ্ধ:আরে আজব কথা বলছেন না কেনো?
ওপাশ:…………
মুগ্ধ:পাগল নাকি দূর।
মুগ্ধ মোবাইল কেঁটে দিয়ে আবার বই পড়ায় মন দিলো।
সাদাফ নিজের রুমে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশে অনেক সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে আজকে। সাদাফ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার কল্পনার রাজ্যে শুধুই তার বসবাস।”
“তার মাঝেই নাহয় নিহীত থাকুক আমার সর্বনাস।”
~আরো ৭ দিন পর~
আরিশের শরীর ইদানিং খুব খারাপ যাচ্ছে। শরীরে গোপন জায়গায় কেমন জানি লাল লাল রেশের মতো উঠেছে। তারপর ইদানিং কাশির সাথে রক্ত আসছে তার। আরিশ তাই ঠিক করে ডাক্তার দেখাবে। আরিশ ডাক্তার দেখিয়ে আসে ডাক্তার অনেক গুলো টেস্ট দেয় ওকে। যার রিপোর্ট আসতে দেড়ি হবে জানিয়েছে ডাক্তার।
এদিকে সায়মা ফেজবুকে একদম বড় বড় করে লেখে ছেড়েছে তারা বাচ্চা বাবা মা হতে যাচ্ছে। অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে ওদের।
এই পোস্ট মুগ্ধ দেখে কেন জানি কষ্ট পায়নি। হয়তো এখন আর এই মানুষটার কথা সে ভাবেনা তাই।
রুহি এসে দাঁড়িয়ে আছে সেই কখন থেকে মেহেরের সামনে। মেহের কাজ করেই যাচ্ছে রুহিকে খেয়াল করছেনা। রুহির এবার অনেক বিরক্ত লাগছে।
মেহের:কিছু বলবেন?[ল্যাপ্টপের দিকে তাকিয়ে]
রুহি:জ্বি স্যার।
মেহের:বলেন।
রুহি:স্যার আসলে,,,,
মেহের:কি?
রুহি:স্যার আসলে আমি না একটু ছুটি চাচ্ছিলাম।
মেহের:হ্যাঁ নিয়ে নেন সমস্যা নাই।
রুহি:সত্যি!!
মেহের:হুম।
রুহি খুশি মনে চলে আসে ছুটি নিয়ে। আসলে ছুটি নেওয়ার প্রধান কারণ আগামীকাল রুহির জন্মদিন। তাই সে আজকের দিন আর কালকের দিনের ছুটি নিয়েছে।
পরেরদিন,,,,,
রুহি সকালে উঠে আল্লাহর দরবারে নামাজ পরে শুকরিয়া আদায় করে নেয়। তারপর এতিমখানায় গিয়ে বাচ্চাদের জামা কাপড় খাবার দিয়ে আসে ওর সামার্থ্য মতো। রুহি বাসায় এসে দেখে ওর নামে কেউ পার্সেল রেখে গেছে। রুহি পার্সেলটা ওপেন করে দেখে একটা গোলাপের বুকে তাতে বার্থ ডে উইশ করে কার্ডে লেখা। সাথে বার্ডে কেক। আরো কিছু গিফটস। রুহি বুঝতে পারলোনা এই পার্সেল কে দিয়ে গেছে।
#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_১৫[ধামাকা]
#নন্দিনী_চৌধুরী
২৮.
হাতে রিপোর্ট নিয়ে বসে আছে আরিশ। রিপোর্ট দেখে যেনো আকাশ ভেংগে মাথার উপড় পরেছে ওর। কিছুতেই যেনো মানতে পারছেনা এই রিপোর্ট তার। কিন্তু ডাক্তারি রিপোর্ট কি আর ভুল হতে পারে। তাও আবার ৩বার টেস্ট করানো রিপোর্ট। আরিশের চোখের কার্ণিশ বেঁয়ে পানি থামছেনা। সে যে আজ একদম ভেংগে গেছে। তার অস্তিত্বটা যে আজ মিথ্যে। তাঁর সব স্বপ্ন যে মিথ্যে। আজ সে বুঝতে পারছে তাঁর পাপের ফল সে পেয়ে গেছে আর পেয়ে যাবে। আজ কেন জানি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে ইচ্ছা করছেনা। সে যে আজ একটা নর্দমা। হ্যাঁ না জেনে সে যে কত বড় ভুল করে ফেলেছে।
কিছু ঘন্টা আগে,,,
ডাক্তারের কথা মতো আরিশ আজকে এসেছে রিপোর্ট নিতে। ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষা করছে ডাক্তারের কেবিনে যাওয়ার জন্য। কিছুসময় পর তাকে ভেতরে আসতে বলে ডাক্তার। আরিশ ডাক্তারের রুমে গিয়ে চেয়ারে বসে। চেয়ারে বসে আরিশ ডাক্তারকে বলে,
আরিশ:ডাক্তার রিপোর্ট?
ডাক্তার:দেখুন মিস্টার আরিশ,আমি আপনাকে এখন যে কথা গুলো বলবো সেগুলা শুনে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করবেন। আমার অনেক আগে আপনাকে এটা বলা দরকার ছিলো কিন্তু আমি আপনার মিসেস এর কথা শুনে আপনাকে বলিনি। আসলে মিস্টার আরিশ আপনি এইডস রোগে আক্রান্ত পাশাপাশি আপনি বাবা হতে অক্ষম। আপনার এই অক্ষমতাটা আগেই ধরা পরেছিলো সেই সময় চিকিৎসা করলে আপনি ঠিক হয়ে যেতেন। কিন্তু এখন অনেক দেড়ি হয়ে গেছে আপনি এখন এইডসে আক্রান্ত। এই এইডস রোগ আপনার কোনো এইডস রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যাক্তির সাথে শারীরিকভাবে মিলনের কারণে আপনার হয়েছে। আমি কি বলছি আপনি বুঝতে পারছেনতো। আপনি কি নিষিদ্ধ পল্লীতে গিয়েছিলেন। কারণ সাধারনত এই রোগ সেখানেই বেশি থাকে।
আরিশ ডাক্তারের কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে যায়। এসব কি বলছেন ডাক্তার। সে বাবা হতে অক্ষম মানে। তাহলে সায়মা যে প্রেগন্যান্ট। তাহলে এটা কিভাবে হলো। আর এডস সেটা বা কিভাবে কারন সেতো সায়মা ছাড়া আর কাউকে এখন ছোঁয়নি। আরিশ ডাক্তারকে বললো,
আরিশ:ডাক্তার আপনি এসব কি বলছেন। আমি বাবা হতে অক্ষম মানে। আমি বাবা হতে অক্ষম হলে আমার স্ত্রী কিভাবে প্রেগন্যান্ট হতে পারে বলেন। আপনার এই রিপোর্ট ভুল আছে ডাক্তার। আর আমার স্ত্রী বাদে আমি কাউকে স্পর্শ করিনি। তাহলে এডস কোথা থেকে আসবে?
ডাক্তার:আমি একবার না ৩বার টেস্ট করেছি আরিশ। এই রিপোর্ট একদম সত্যি। আর আপনার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট সেটা হতেই পারেনা। কারণ মিস মুগ্ধের বাচ্চা ধারনের ক্ষমতা থাকলেও আপনার নেই সেই ক্ষমতা। তাহলে সে আপনার বাচ্চা গর্ভে ধারণ করবে কিভাবে?
আরিশ বুঝতে পারে ডাক্তার মিসেস বলতে এখনো মুগ্ধকে বুঝতেছে। আরিশ ডাক্তারকে সব বললো। সব শুনে ডাক্তার বললো,
ডাক্তার:এটা আপনি ভুল করেছেন মিস্টার আরিশ। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা আপনার স্ত্রীর আছে ক্ষমতা নেই আপনার। সেদিন টেস্ট এর রিপোর্ট যখন আমি মুগ্ধকে জানাই সে আমাকে অনেক অনুরোধ করে আপনাকে সত্যি কথাটা না বলতে। সে বলে অক্ষমতা যেনো আমি তারই বলি। তাই আমি আপনার অক্ষমতা লুকিয়ে এটা বলেছিলাম মুগ্ধ বাচ্চা জন্ম দিয়ে পুরোপুরি ক্ষমতা রাখেনি। আর মিস্টার আরিশ আমার মনে হয় আপনার বর্তমান স্ত্রী একাধিক অনেকের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। যার কারণে তাদের কারো মাঝের একজনের এডস আপনার স্ত্রীকে আক্রমন করেছে এবং তা আপনাতে সংক্রমণ হয়েছে। আপনার স্ত্রী আপনি দুজনেই রিস্কে আছেন। আর এটা আমি জোর দিয়েই বলছি আপনার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান আপনার না।
ডাক্তারের কথা শুনে আরিশ একদম পাথর হয়ে গেলো। সব যেনো তার এক নিমিষেই এলোমেলো হয়ে গেলো। এ কি করে ফেললো সে। একি পাপ করলো সে! আরিশ বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। ডাক্তার আরিশকে অনেকগুলো মেডিসিন দিলো।
আরিশ ডাক্তার কেবিন থেকে বিধস্ত পায়ে এসে বাহিরে বসলো। চিৎকার করে কাঁদছে আরিশ। আজ যে সে কত বড় অপরাধ করেছে তা বুঝতে পেরেছে। তার নতুন শুরুটা যে একদম মিথ্যে। তার সব সত্যিতো সেদিন শেষ যেদিন সে আসল সোনাকে ছেড়ে নোকল সোনাকে আপনা করেছে।
বর্তমানে,,,
আরিশ আসতে করে উঠে দাঁড়ালো। এখন তার অনেক হিসাব মিলানো বাকি আছে। সায়মার পেটে তার সন্তান নেই। তাহলে এই সন্তান কার। কার সাথে এই পেট বাজিয়েছে সায়মা তাকে জানতে হবে। তবে সরাসরি বললে সায়মা অস্বিকার করবে তাই তাকে অন্যভাবে জানতে হবে। আরিশ গাড়ি নিয়ে বাসায় আসলো। সায়মা মনের আনন্দে বসে বসে ফোন চাপছে। আরিশ বাসায় এসে রুমে এসে সায়মাকে ডাক দিলো। আরিশের আওয়াজ পেয়ে সায়মা বারান্দা থেকে রুমে আসলো। সায়মা আসার আগে আরিশ রিপোর্ট সব লুকিয়ে নিলো। সায়মা এসে আরিশকে জরিয়ে ধরে বলে,
সায়মা:কি হলো ডাকলে যে।
আরিশ:হ্যাঁ শুনো প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কয়েকদিন পর পর চেকাপ করানো ভালো। আজ বিকালে তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো। বাবু ভালো আছে কিনা দেখতে হবেতো।
সায়মা:আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার দেই।
আরিশ:হুম।
আরিশ ওয়াশরুমে এসে দেয়াল ঘেষে বসে। আর কত নাটক করবে সায়মা তার সাথে। আর কত মিথ্যা বলবে জানেনা আরিশ। তবে এর শেষ খুব তাড়াতাড়ি করবে।
২৯.
সাদাফ ইদানিং এখন মুগ্ধকে একটু বেশিই চোখে হারাচ্ছে। যদিও সেটা মুখে বলেনা তবে চালচলনে বুঝিয়ে দেয়। সাদাফের মা বেশ বুঝতে পারছে ছেলে তার প্রেমে পরেছে। এবার শুধু বলা বাকি। সাদাফ সোফায় বসে কাজ করছে আর আড়ালে মুগ্ধ কে দেখছে। মুগ্ধ প্রাপ্তিকে নিয়ে খেলছে। প্রাপ্রি আদো আদো বুলিতে মা মা করছে। সাদাফ উঠে খাটে গিয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করে বললো,
সাদাফ:আমার মা টা কাকে বেশি ভালোবাসে মাকে নাকি বাবাকে?
প্রাপ্তি সাদাফের প্রশ্নে কি বুঝলো সে আদো আদো গলায় মা বললো।
প্রাপ্তির কথায় সাদাফ মুখ ফুলিয়ে বললো,
সাদাফ:যাহ্ বাবা,,বাবার তো কোনো আদর নেই দেখছি মাই সব হু😒।
মুগ্ধ:হাহাহা।
সাদাফ:হাঁসছো কেনো?
মুগ্ধ:আপনার কথা শুনে।
সাদাফ:চলো।
মুগ্ধ:কোথায়?
সাদাফ:বাহিরে যাবো। ওকে রেডি করে দেও।
মুগ্ধ প্রাপ্তিকে রেডি করে দিলো। তারপর ৩জনে মিলে ঘুরতে আসলো। বেশ ভালোই কাঁটলো ওদের দিন।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দেখতে দেখতে ৪দিন চলে গেলো আরিশ সায়মাকে টেস্ট করিয়ে নিয়ে আসলো সায়মার অজান্তে। সায়মা জানতেও পারেনি আরিশ যে ওর বাচ্চার ডিএনে টেস্ট করিয়েছে আর ওর এডস। রিপোর্ট ডাক্তার ৫দিন পর নিতে আসতে বলছে।
এদিকে,,,,
সাদাফ সারাদিন পর কাজ করে বাসায় এসে রুমে ঢুকে দেখে মুগ্ধ একটা গোলাপী কালারের শাড়ি পরে আছে। শাড়িটা প্রিয়ার ছিলো। মুগ্ধের গায়ে এটা দেখে সাদাফের মাথা গরম হয়ে গেলো। কারন এই শাড়িটা সাদাফ প্রিয়াকে প্রাপ্তি হবার কথা শুনে কিনে দিয়েছিলো। মুগ্ধ পিছনে ফিরে ছিলো বলে সাদাফকে দেখেনি। সাদাফ সোজা গিয়ে মুগ্ধকে ঘুরিয়ে চিৎকার করে বলে,
সাদাফ:এই মেয়ে তোমার সাহস হয় কিভাবে প্রিয়ার শাড়ি পরা। আর আলমারি বা খোলার সাহস পাও কোথা থেকে। এটা আমার প্রিয়ার শাড়ি আমার প্রাপ্তির মায়ের শাড়ি। নিজেকে প্রিয়া বানাতে চাও। হ্যাঁ প্রিয়ার জায়গা নিতে চাও। কোন সাহসে এটা তুমি পরেছো। প্রপ্তি তোমাকে মা কি মনে করা শুরু করলো তুমি ওর মায়ের জায়গা একদম নেওয়ার পরিকল্পনা করছো। কিভেবেছো এতে আমি পটে যাবো কোনোদিন না। শোনো তুমি কোনোদিন চাইলেও পারবেনা প্রিয়ার জায়গা নিতে। প্রিয়া প্রিয়াই আর তুমি তুমিই থাকবা। ফারদার যেনো আর কোনোদিন আমার প্রিয়ার কোনো কিছু তোমাকে ধরতে না দেখি।
সাদাফের হঠাৎ এমন ধরায় মুগ্ধ ভয় পেয়ে যায় আর এখন সাদাফের বলা এই কথাগুলো শুনে লজ্জায় কষ্টে তার ভিতরটা শেষ হয়ে যায়। মুগ্ধ কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আসে। আর কোনো কথা না বলে চুপ করে বেড়িয়ে যায়। মুগ্ধ চলে যেতেই সাদাফের মা উপড়ে আসে। এতোক্ষনে উপড়ে সাদাফের চিৎকার করে বলা কথাগুলো সব শুনেছে সে। সাদাফের মা এসেই সাদাফের গালে একটা থাপ্পড় মারলো আর বললো,
সাদাফের মা: মানুষ তুই! কি বললি এগুলা তুই মেয়েটাকে। কোনো কথা বলার আগে একবার ভেবে বা দেখেনিস না। প্রাপ্তি ওর গায়ের জামাটায় তরকারি ফেলে দিয়েছিলো। মেয়েটা ওই জামা পরে থাকবে দেখে আমি ওকে একটা শাড়ি বের করে দিয়েছিলাম। আর তুই মেয়েটাকে এতোগুলো কথা শুনালি। আরে মেয়েটাকে তুই কোনোদিন দেখেছিস তোকে পটানোর জন্য কিছু করতে। মেয়েটা বরাবর নিজের মতো করে থেকেছে। আজ তুই মেয়েটাকে যা যা বললি এরপর পারবি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে? পারবি ওর সাথে কথা বলতে। ভেবেদেখিস আজ তুই কত বড় অন্যায় করেছিস।
সাদাফের মা কথাগুলো বলে চলে আসলেন। আর সাদাফ বসে পরলো খাটে। রাগের মাথায় সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে। না জেনে সে মুগ্ধকে কতগুলো কথা শুনালো। কি করবে সে এবার। কিভাবে মুগ্ধের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। সাদাফ মাথায় দুইহাত চেপে বসে রইলো।
~এদিকে~
মুগ্ধ বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে চলে আসে। আজ সাদাফের কথা গুলো কেনো জানি তাকে অনেক আঘাত করেছে। কেন আঘাত করলো তাকে। তবে সেতো ইচ্ছা করে শাড়িটা পরেনি। প্রাপ্তি তার জামাটা নষ্ট করে দিয়েছিলো বলেইতো পরেছিলো। যদি জানতো যে এই শাড়ি তার প্রিয়তমা স্ত্রীর তবে তো সে এটা পরতোনা। মুগ্ধ কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনা সে সাদাফকে ভুলাবে। সেতো এই জীবনে আর কোনো সম্পর্কে জরাবেনা। সেখানে এসব তো সে ভাবতেই পারেনা। মুগ্ধ সাদাফের প্রতি এক পাহাড় সমান অভিমান নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। যাবেনা সে কাল থেকে আর। হবেনা সে আর প্রাপ্তির মা।
#চলবে