#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১২
রায়ান তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে!!
মনের মধ্যে চলছে নাবিলার বলা বিভিন্ন কথা আবার চোখ বন্ধ করলে আয়ানার মুখটা দেখতে পাচ্ছে!!
বাড়ি পৌঁছে আয়ানাকে ঘরে এসে রায়ান রেস্ট নিতে বলল!!
নিজে চলে এলো রান্নাঘরে!!
রায়ান হালকা কিছু বানিয়ে ঘরে এসে দেখে আয়ানা কোনোমতে চেন্জ করে বিছানাতে গা এলিয়ে দিয়েছে!!
রায়ান–আয়ানা উঠুন!!এই স্যুপ খেয়ে ওষুধ খেতে হবে!!
আয়ানা কোনোমতে চোখ খুলে বলে–নাহ প্লিজ!!কিছু খেলে আবারও খারাপ লাগবে!!
রায়ান উপায়ন্তর না পেয়ে একহাতে টেনে তুলল আয়ানাকে!!
তারপর এক চামচ স্যুপ মুখে ধরল!!
আয়ানাও জেদ করে মুখ না খুলে অন্যদিকে ফিরে আছে!!বেশ খানিক জোড়াজুড়ির পর রায়ান বেশ জোড়ে একধমক দিল!!
আয়ানা কেঁপে উঠে দ্রুত মুখ খুলতেই রায়ান স্যুপ ভর্তি চামচ আয়ানার মুখে দিয়ে দিল!!
আয়ানা কাঁদোকাঁদো মুখ করে খাওয়া শেষ করতেই রায়ান বলল–আপনার যে উঠতে বসতে ধমক প্রয়োজন তা ভালোই বুঝেছি!! ওষুধ খান এখুনি!!
আয়ানা মুখ বেকিয়ে ওষুধ খেয়ে আবারও শুয়ে পড়ল!!
রায়ান রান্নাঘর ক্লিন করে এসে দেখে আয়ানা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে পুরো বিছানাতে!!!
রায়ান ধীর পায়ে আয়ানার কাছে গিয়ে আয়ানাকে ঠিক করে শুয়িয়ে দিতে গিয়ে বুঝল আয়ানার জ্বর আসছে!!
দ্রুত আয়ানার গায়ে কাথা মুড়িয়ে দিয়ে,,বাটিতে পানি নিয়ে আয়ানার পাশে বসে মাথায় জলপট্টি দিতে দিতে এক মুহূর্তে চোখে পড়ল শ্যামবর্ণ আয়ানার ঘুমন্ত মুখ খানা!!একদৃষ্টিতে তাকিয়ে খানিক স্ক্যান করে নিল আয়ানাকে!!!
নিজের মুখটা একটু কাছে নিয়ে আয়ানার হাতটা হালকা স্পর্শ করে বলল–ভাববেন না!!আপনার হাতটা আপনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি ছাড়ব না!!আপনি নিজের দায়িত্ব নিতে পারবেন সেদিনই দেখা যাবে!!!
অপরদিকে,,
শান্ত আর আয়ানার বাবা মুখোমুখি বসে আছে!!
অনেক খোজাখুজির পর শান্ত আয়ানার বাবা মাকে খুজে পেয়েছে!!!
শান্ত–আঙ্কেল,,কোন সাহসে আয়ানার বিয়ে দিলেন??
আয়ানার বাবা শক্ত কন্ঠে বলল–তা ছাড়া উপায় ছিল??
কোম্পানি পুরো লসে চলছে,লোন পেন্ডিং আছে,,তারওপর বিগত ৮ মাস কোনো মেয়ে ডেলিভারি দিতে পারিনি বলে ওদিকার আয় ও তো বন্ধ!!তোমার বাবা কোনো সাহায্য করেনি!!
শান্ত চেয়ারে লাথি দিয়ে বলল–ওই লোকটা তো সব কাজে বাধা দেওয়ার জন্য সবসময় বসে থাকে!!যাই হোক আয়ানাকে ডিভোর্স করিয়ে আনতে হবে!!
আয়ানার বাবা–খুব কি দরকার ওকে এসবের মধ্যে আনার??
শান্ত কপাল কুঁচকে বলল–সৎ মেয়ের জন্য কি দরদ উতলে পড়ছে এখন!!!
আয়ানার বাবা আর কিছু বলতে পারলেন না!!আয়ানা তার স্ত্রীর ১ম ঘরের মেয়ে!!আয়ানার জন্মের আগেই আয়ানার বাবা মারা যায়!!তখন আফজাল(আয়ানার বাবা)আয়ানার মাকে বিয়ে করে আনেন!!
আয়ানা যদিও এসব জানে না!!
শান্ত ঘুরে আবারও বলল–আপনি পরশু গিয়ে আয়ানাকে বলবেন সব ঠিক আছে এখন আর ওকে এই মিডিলক্লাস ফ্যামিলির মধ্যে থাকতে হবে না!!
আফজাল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে চলে যায়!!
শান্ত সিগারেট ধরিয়ে বসে বলে–তোমাকে দরকার আয়ু!!তাড়াতাড়ি এসো!!কতগুলো টাকার মামলা বলোতো!!
বলে সিগারেট টানতে লাগল!!!
অপরদিকে,,,
আয়ানার মাথায় জলপট্টি দেওয়ার একপর্যায়ে জ্বর কমে আসলে রায়ান উঠে নিজে ফ্রেস হয়ে নেয়!!
কলিং বেলের আওয়াজ পেতেই সদর দরজার দিকে গিয়ে দরজা খুলে দেখে তার মা আর দাদি!!
দাদি–ছুড়ি কিরম আছে??
রায়ান–ঘুম দাদি!!
রেশমি–কিছু খেয়েছে আর ওষুধ??
রায়ান–স্যুপ খায়িয়ে ওষুধ খায়িয়েছি!!
রেশমি ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন–বড় হয়ে গিয়েছিস তো!!!
রেশমি আর রায়ানের দাদি ঘরে চলে গেল!!!
রায়ানও ঘরে গিয়ে আয়ানার পাশে বসে জ্বর চেক করতে লাগল!!
আচমকা আয়ানার মোবাইলের ম্যাসেজের টোনে রায়ানের কপাল কুঁচকে ওঠে!!
কোনো কিছু না ভেবে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল সোয়াইপ করতেই লক খুলে গেল!!
সদ্য আসা ম্যাসেজ দেখে রায়ানের কপাল আগের থেকে বেশি কুঁচকে উঠল!!
চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিয়ে মনে মনে বলল–আজব তো ওনার ফোনের ম্যাসেজে আমার সমস্যা কোথায়!!আর আমি বা অসভ্যর মতো ওনার ম্যাসেজ কেন চেক করলাম!!!
তারপর ফোন রেখে আবারও চোখ পড়ে আয়ানার ঘুমন্ত মুখে!!
পরদিন সকালে,,,
আয়ানা চেয়ারে পা তুলে বসে পরোটা আর আম খাচ্ছে!!
রেদোয়ান আর রায়ান চা খেতে ব্যস্ত!!
আর রেশমি বিরিয়ানি রান্না করছে!!
কলিং বেল আর ক্রমাগত দরজা নক করার আওয়াজে সবাই কপাল কুঁচকে নেয়!!!
রায়ানের দাদি সদর দরজার কাছে বসে থাকায় তিনি খুলে দেন!!
দরজা খুলতেই বেনারসি পরিহিতা নাবিলা ছুটে এসে বসে থাকা রায়ানকে কোনোরকমে জড়িয়ে ধরে!!
এমন দৃশ্য এ আয়ানা ইতিমধ্যে প্লেট রেখে চোখ গুটিগুটি করে তাকিয়ে আছে!!!
রেদোয়ান সহ বাকি সবাই ও বিরক্তি চাহনীতে তাকিয়ে আছে!!
রায়ানের দাদি দৌড়ে এসে নাবিলাকে এক ঝটকায় দূরে ঠেলে বলল–ঐ মাইয়া!!লজ্জা শরম নাই??হগ্গলের সামনে আরেক পুরুষরে জড়াইয়া আছোস!!!
রায়ান ও উঠে দাঁড়িয়ে আছে!!
নাবিলা কে ভালো করে দেখে কিছু বলবে তার আগেই নাবিলা রায়ানের হাত ধরে বলল–আমি পালিয়ে এসেছি রায়ান!!বাবা আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল,,হুট করেই!!প্লিজ!!
রেদোয়ান চড়া গলায় বলল–তা বিয়ের বয়স হলে বিয়ে তো দেবেই!!বিয়ে না করে এখানে কি??
নাবিলা এবারও তোয়াক্কা না করে রায়ানকে জড়িয়ে ধরে বলল–পালিয়ে তোমার কাছে এসেছি!!ম্যারি মি প্লিজ!!!
রায়ান–নাবিলা,,
রেদোয়ান –ম্যারি মি মানে কি?ও তো আগেই ম্যারিড!!
নাবিলা ঘুরে বলল–ও তো বিয়েটা মানে না আঙ্কেল!!আমি কথা দিচ্ছি,, আয়ানার কোনো অযত্ন হবে না!!আমি বাড়ির বউ হয়ে সব দায়িত্ব নিবো!!
রেদোয়ান –বাড়ির বউ??আমার বাড়ির বউ একজনই সে হলো আয়ানা মা!!আর কেউ যদি বিয়ে করে অন্য কাউকে যেন আমার বাড়ি থেকে চিরতরে বেরিয়ে যায়!!
কথাটা রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে চলে গেল রেদোয়ান!!
রায়ানের দাদি আবারও মুখ বাকিয়ে বলল–ওই বিলজ্জ মাইয়া,,ছাড় আমার নাতি রে!
রায়ান হাত দিয়ে দাদি কে থামিয়ে বলল–আমি এখন কি করি বলোতো নাবিলা??!!
আয়ানা শক্ত মুখে এগিয়ে এসে ঝাড়া দিয়ে নাবিলার হাত ছাড়িয়ে রায়ানের বুকে মাথা রেখে বলল–ওর হাতটা ছেড়ে,বাড়ি থেকে বের করবেন!!
রায়ান তো পুরো ফ্রিজড!!
নাবিলা চেচিয়ে বলল–প্লিজ আয়ানা,,আই লাভ হিম!!
আয়ানা রায়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল–ও আমার!!কাউকে দেবো না!!
রায়ানের মা নাবিলাকে শান্ত হতে বলে অন্য ঘরে নিয়ে গেলেন,রায়ানের দাদিও মুচকি হেসে চলে গেল!!
রায়ান আর আয়ানা এখনো একি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে!!
আয়ানা–এভাবে জমে না থেকে জড়িয়ে ধরুন!!আই লাভ ইউ!!
রায়ান সেন্স এ এসে বলল–আপনার মাথা ঠিক আছে??
আয়ানা রায়ানের হাত ধরে নিজের মুখে বুলিয়ে নিয়ে বলল–আম পারফেক্ট!!
রায়ানের কথা শোনার অপেক্ষা না করে আয়ানা চলে গেল!!!
রায়ান বিড়বিড় করে বলতে লাগল–হলোটা কি??
তারপর নাবিলাকে বসিয়ে রাখা ঘরের উদ্দেশ্য করে পা বাড়াল!!
দরজায় রায়ানকে দেখেই নাবিলা দৌড়ে এসে রায়ানের পা জড়িয়ে ধরে কান্নাভেজা গলাতে বলল–আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি রায়ান!!ডোন্ট লিভ মি!!তোমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে সংসার করার কথা ভাবতেও পারি না!!!
রায়ান চোখ বন্ধ করে নিল,,যতই হোক ৪ বছর একটা মানুষকে ভালোবাসে,,সময়টা হুট করে বদলে গেলেও অনুভতি তো বদলানো যায় না!!
নিজের কাছে আজ তার নিজেকেই সবচেয়ে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে!!!
নাবিলার হাত ধরে টেনে তুলে রায়ান চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল—
#চলবে
বিঃদ্রঃ এখন থেকে প্রতিদিন দিবো!!!কেমন হচ্ছে জানাবেন সবাই!!!😊♥️