শেষ পাতার তুমি পর্ব ১১

#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১১

আয়ানা আর দাদি ঘরে এসে আয়ানা দাদিকে সাজাতে শুরু করল!!

দাদি–আমারে ফরসা বানাবি বেশি কইরা!!আর চোখে লাল দিয়া দিবি আর ঠোঁট খয়েরি লিবিসটিক!!বোঝছোস!!

আয়ানা–টেনিস বুড়ি চুপ করে বসো তো!!দেখছি আমি!!

রায়ান হুট করে ভেতরে এসে চমকে উঠে চিল্লিয়ে তার মাকে ডাকতে লাগল!!!

তার মা আসতেই বলল–মা,,কে উনি??ওমন উল্টো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার বারান্দায়??

রায়ানের মা কিছু বলার আগেই একজন ঘুরে বলল–সারপ্রাইজ!!!

রায়ান–দাদি!!!ও মাই গড!!!

রায়ানের দাদি হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে বলল–কিরকম লাগতাছে ক দেহি??তর বউ সাজাইছে!!

রায়ান–বাহ!!ভালোই লাগছে!!

দাদি দাঁত মেলে বলে–তর বউ ভালোই সাজায়!!আইজ ওই পাশের বাড়ির বুড়িরে দেহামু আমার নাতবৌ সাজাইছে মোরে!!ওর সাজাইন্না নাতিন তো গেছে বে হইয়া!!

দাদি খুশিতে আয়ানার দিকে ঘুরে বলল–ওই ছুড়ি!! তুল ফডো আমার নাতির লইগা আমার!!

রায়ানের মা যেতে নিলেই বলল–বৌমা যাও কই??আসো ফডো তুলি!!

রায়ানের মা শাশুড়ীর ডাকে রায়ানের পাশে এসে দাঁড়ায়!!

আয়ানা তাদের ৩ জনের কয়েকটা ছবি তুলতেই আবারও রায়ানের দাদি বলে–ওই ছুড়ি,, সেলফি ল দি!!আমার নাতি লম্বা ওরে ফোন দে!!

রায়ান এগিয়ে গিয়ে নিজের ফোন বের করে আয়ানাকে

ইশারা করে দাদির পাশে দাঁড়াতে বলল!!

আয়ানা ধীর পায়ে দাদির পাশে দাঁড়াতেই বেশ কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো রায়ান!!!

রায়ানের দাদি–মেলা হইছে!!ওই নাতবৌ তুই রেডি হ!!আর বাবু তুই ও!!যামু গা আমরা জনমদিন খাইতে!!চলো বৌমা রেডি হইবা তো!!!

রায়ানের মা আর দাদি যেতেই আয়ানা আলমারি খুলে কিছু খুজতে শুরু করল!!

রায়ান–আসলে,, তখনের ঘটনাতে কি আপনি রাগ করেছেন!!!

আয়ানা কিছু না বলে নিজের কাপড় হাতে বাথরুমে চলে গেল!!

রায়ান বোকার মতো খানিক দাঁড়িয়ে থেকে নিজের পাঞ্জাবি বের করে আয়ানার বের হবার অপেক্ষা করতে লাগল!!!

আয়ানা বের হতেই রায়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে শুকনো ঢোক গিলে নিল!!

আয়ানা সাদা আর কালো মিশেল একটা চুড়িদারি জামা পড়েছে!!

শ্যামবর্ণ গায়ে জামাটা বেশ লাগছে!!

রায়ান আয়ানার গম্ভীর মুখ দেখে আর কিছু না বলে সাদা পাঞ্জাবি নিয়ে বাথরুমে চলে গেল!!

তারমধ্যে আয়ানা শাশুড়ীর দেওয়া হালকা কিছু গহনা পড়ে মাথায় ওড়না টা আটকে দিয়ে বাইরে চলে যায়!!

রায়ান বেরিয়ে আয়ানাকে না দেখতে পেয়ে নিজের মতো রেডি হয়ে বেরিয়ে যায়!!!

রিক্সা করে জন্মদিনের বাড়িতে পৌছে প্যান্ডেলের ভেতরে গিয়ে বসল!!

জন্মদিনের গিফটের টাকার খামটা আয়ানার শাশুড়ী দিতে গিয়েছে!!

রায়ান ফোন চাপছে,রায়ানের দাদি আরেকজন বুড়ির সাথে নিজের সাজের কথা শোনাচ্ছেন,,আয়ানা রায়ানের পাশে চুপ করে বসে আছে!! প্যান্ডেলে থাকা ফ্যানের হাওয়া একটুও আয়ানার গা অবধি পৌছাচ্ছে না!!

আয়ানার শ্যামবর্ণ মুখখানা ঘেমে একাকার!!

এরইমধ্যে একজন মহিলা এসে আয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে বলল–ওমা!!তুমি রেশমী ভাবির ছেলের বউ নাকি!!!

রায়ানের মা পেছনে এসে দাঁড়িয়ে বলল–জি ভাবি!!!

মহিলাটিকে রায়ান আর আয়ানা সালাম দিলো!!

ইতিমধ্যে রায়ানের দাদি আর সেই আরেক সাজুনি বুড়ি ও এসে দাঁড়িয়েছে তাদের পাশে!!!

মহিলাটি আয়ানাকে খুঁটিয়ে দেখে বলল–ভাবি গো!!বউয়ের গায়ের রঙ তো বেশ কালো!!

রেশমী কিছু বলার আগেই রায়ান বলল–গায়ের রঙ দিয়ে কি হবে কাকি!!মানুষটা ভালো এটাই অনেক!!

রায়ানের কথাতে মহিলাটি দমল বলে মনে হলো না!!আবারও বলল–শুনেছি নতুন বউয়ের বাপ মা নাকি বিয়ে দিয়েই পলাতক!!তা কি দিলো তাদের জামাইকে??

আয়ানা ইতিমধ্যে চোখ নামিয়ে নিয়েছে চোখে ভিড় করেছে ছোট্ট ছোট্ট অশ্রুবিন্দু!!

রায়ানের দাদির সাথে থাকা আরেক বুড়ি ঝাঝালো কন্ঠে ঐ মহিলাকে বলল–তুই চুপ কর ছেড়ি!!তর বাপে আমার পোলারে বিয়ার সময় কি দিছিলো রে!!

মহিলাটি শাশুড়ীর কথা শুনে দমে গেল!!

আর দ্রুত প্রস্হান করল!!

রায়ান আয়ানার অবস্থা বুঝে ফিসফিস করে বলল–এসব কানে নিবেন না!!

আয়ানা মাথা নাড়াল ঠিকই তবে মনে ভিড় করে আছে ভয়াবহ কষ্ট!!

কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠানের খাবার দেওয়া হলো!!

আয়ানাতো মোটামুটি বিরক্ত!!! কোনোমতে খেয়ে উঠে হাত ধুতে নিলে বাধল আরেক বিপত্তি!!

ড্রাম ভর্তি পানি মগ দিয়ে তুলে একটা সাবান দিয়ে সবাই হাত ধুচ্ছে!!সাবানের অবস্থা দেখে আয়ানা চোখ মুখ কুঁচকে নিল!!

কোনোমতে হাত ধুয়ে চলে এলো!!পুরো ঘটনাটা রায়ান বেশ তীক্ষ্ণ নজরে দেখে নিয়ে আবার অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রইল!!

সবার খাওয়া শেষে খানিক গল্পে মেতে উঠল সবাই!!

আয়ানা সোফাতে চুপ করে বসে আছে পাশে রায়ান বসে!!

আর তাদের ঘিরে আছে একদল সিনিয়র সিটিজেন!!

তারা নতুন বউ বর দেখছে!!

আয়ানার মাথা নিচু করে থাকতে থাকতে ঘাড়ে ব্যাথা করছে!!

কেক কাটার ডাক পড়তেই সবাই ঐদিক গেল হাফ ছাড়ল আয়ানা!!

রায়ান আয়ানার হাফ ছাড়া দেখে হালকা হাসল!!

রায়ানের দাদি দ্রুত এগিয়ে এসে আয়ানার হাত ধরে বলল–চল!!সোয়ামীর সাথে পরে কথা কইস!!

আয়ানা দাদির সাথে যেতেই রায়ান ফিসফিস করে বলল–আর কথা!!কথাই তো বলছে না!!

রায়ানও কেক কাটার জায়গায় গিয়ে আয়ানার পিছনে দাঁড়াল!!

কেক কাটা শেষে সবাইকে হাতে কেক দেওয়া হলো!!

কেকটা একটু মুখে নিয়েই আয়ানার শরীর কেমন যেন করতে লাগল!!

আয়ানা দ্রুত এক বাচ্চার থেকে বাথরুম চিনে বাথরুমে চলে গেল!!

আয়ানাকে ছুটতে দেখে রায়ানও গেল পিছু পিছু!!

আয়ানা বেসিনের সামনে গিয়ে কেক ফেলে হাত ধুয়ে নিল!!

আয়ানার কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে,, বমি আসছে কিন্তুু করতে পারছে না!!

রায়ান এসে আয়ানার এমন অবস্থা দেখে এগিয়ে এলো!!

রায়ান–আপনার কি বেশী শরীর খারাপ লাগছে??

আয়ানা কোনোকিছু বলার মতো অবস্থাতে নেই!!

রায়ান কোনোদিক না ভেবেই আয়ানার মাথার কাপড় সরিয়ে বেসিনের কল থেকে পানি নিয়ে মাথায় দিল!!মাথাটা হালকা চেপে ধরে বলল–কুল!!

বলতে বলতেই আয়ানা বমি করে দিল!!

রায়ান আস্তে করে আয়ানার মাথায় আরেকটু পানি দিয়ে দিল!!

আয়ানা একেবারে নেতিয়ে পড়েছে তার যে হেঁটে যাওয়ার শক্তি নেই তা বোঝাতেই রায়ানকে হাত নাড়িয়ে ইশারা করল যে পারবে না!!

রায়ান–আমি কোলে নিয়ে গেলে কি খুব সমস্যা হবে??

আয়ানা চোখ বন্ধ করে নিল!!

রায়ান ধীরে কোলে নিয়ে ভিড় থেকে দূরে একটা জায়গায় বসাল!!

ফ্যান ছেড়ে আয়ানার পাশে বসে বলল–পানি খাবেন?

আয়ানা মাথা নাড়িয়ে না জানিয়ে সোফাতে মাথা এলিয়ে দিল!!

রায়ান মাথা যন্ত্রনা করছে এই ভেবে আয়ানা কপালে হাত রেখে হালকা ম্যাসাজ করতে লাগল!!

আয়ানা চোখ বন্ধ করে আছে!!মনে মনে ভাবছে–আচ্ছা,, আমার কি উচিত এই লোকটাকে ভালোবাসা??লোকটা কি ভালো নাকি খারাপ??ভালোবাসার ভবিষ্যত কি কষ্ট পাবো??!!

এসব ভাবনার মাঝখানেই নিজের শাশুড়ীর ফিসফিস আওয়াজ শুনে হালকা চোখ মেলল!!

রেশমী আয়ানার মাথায় হাত রেখে রায়ানকে বলল–গরম আর গ্যাসট্রিকের কারণে হয়েছে!!

তুই ওকে বাড়ি নিয়ে যা আর মোড়ের মাথার ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে নিবি!!যে নাম বলেছি!!যাহ সাবধানে!!

আমরা চলে আসবো!!

আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে আবার চলে গেলেন!!

রায়ান কোনোমতে আয়ানাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল!!

বাইরে থেকে রিক্সা নিয়ে উঠল দুজনে!!

আয়ানা ক্লান্তিতে মাথাটা এলিয়ে দিলো রায়ানের কাঁধে!!রায়ানও হালকা হাতে ধরে বসল!!

আয়ানা মনে –এই লোকটা আমার স্বামি!!শুধু আমার!!আমি ওর সাথেই থাকবো!!সবচেয়ে বেশি অধিকার আমার ওর ওপর!!ও কাকে ভালোবাসত আমি জানি না তবে এবার ওকে আমাকে ভালোবাসতেই হবে!!বউ হবো আমি ওর!!এবার থেকে শুরু হবে মিশন রায়ান!!

চোখ বন্ধ করে আয়ানা এসব ভেবেই যাচ্ছে!!

আর অপরদিকে ব্যস্ত চোখে রায়ান তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে!!

মনের মধ্যে চলছে নাবিলার বলা বিভিন্ন কথা আবার চোখ বন্ধ করলে আয়ানার মুখটা দেখতে পাচ্ছে!!

#চলবে

১০৫০ শব্দের পর্ব♥️😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here