#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৪
হসপিটালে নিলে জানা যায় অতিরিক্ত মেন্টাল প্রেসারে নাবিলা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গিয়েছে!!
কথা গুলো বলেই থামল কাকা!!রায়ানের স্হির দৃষ্টি নাবিলার মুখের ওপর!!!
আচমকা,,
বাথরুমের দরজাতে খট করে শব্দ হওয়ায় রায়ানের হুস আসে!!!
রায়ান সামনে তাকিয়ে দেখে আয়ানা দাঁড়িয়ে আছে কোমড়ে হাত দিয়ে!!
রায়ান চোখ মুখ হাত দিয়ে মুছে উঠে বসে বলে–কি হয়েছে জান??এমন করে দেখছো কেন?
আয়ানা ওমনি করে দাঁড়িয়ে বলল–আমার খিদে পেয়েছে!!
রায়ান বসে থাকা অবস্থায় আয়ানাকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে বলল–আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আয়ু!!
আয়ানা অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল!!
কিছুক্ষণ পর রায়ান ফুপিয়ে কেঁদে উঠল!!
আয়ানা হালকা করে মাথায় হাত দিয়ে বলল–কাঁদছেন কেন??
রায়ান—আমার কি খুব অপরাধ ছিলো নাবিলাকে ভালোবাসাটা??কি করবো বলোতো আমি ১ম ওকে ভালোবেসেছি!!ও চলে যাওয়ার পর তুমি আমাকে বলেছিলে ২য় বারও ভালোবাসা যায়!!তারপর তুমিই কেন আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছো??
আয়ানা—আপনি কি কখনো আমাকে ভালোবেসেছেন??ভালোবাসলে ঘর থেকে বের করে দিতে পারতেন নাহ!!আরেকজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে আমাকে সহ নাবিলা আপুকেও অপমান করেছেন!!!
রায়ান ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল–ওই মেয়েকে আমি তো চিনতামই না!!তাহলে কিভাবে সম্পর্ক থাকবে বলো??
আয়ানা কিছু বলবে তার আগেই দরজা নক করার আওয়াজ এলো!!
বাইরে থেকে রেদোয়ান সাহেব ডাকছেন!!
রায়ান হকচকিয়ে গিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আয়ানার মুখটা দুহাতের মাঝে নিয়ে বলল–বাবা এখনো জানে না আমি তোমায় তুলে এনেছি!!প্লিজ লুকিয়ে থাকো একটু!!
আয়ানা কোনোকথা ছাড়া আলমারির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল!!
রায়ান হাফ ছেড়ে দরজা খুলল!!রেদোয়ান সাহেব স্টিকের সাহায্য নিয়ে ভেতরে এসে বললেন–কি রে এতো সময় লাগলো যে??
রায়ান আমতা আমতা করে বলল–না মানে বাবা একটু ঘুমিয়ে ছিলাম!!
রেদোয়ান –ও ও!!বেশ কয়েকদিন তো তোর পাত্তাই পাওয়া যায়না!!
রায়ান–আসলে একটু কাজ ছিল!!
রেদোয়ান –চল পাড়ার মোড় থেকে চা খেয়ে আসি!!
রায়ান থতমত মুখ করে বলল–বাবা,,আমি দুপুরে ভাত খাইনি!!খেয়ে তারপর সন্ধ্যার দিকে যাবো!!
রেদোয়ান –সে কি!!তুই ও না!!নিজের যত্ন নে একটু!!
কথাটা বলে রেদোয়ান চলে গেল,,
রায়ান দরজা দিয়ে বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিয়ে নিল!!
আয়ানা আলমারির পেছনে দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে!!
রায়ান দ্রুত হাত টেনে বের করে এনে বলল–কি হয়েছে আয়ু!!!খিদে পেয়েছে অনেক??সরি জান!!এখুনি খাবার আনছি!!
আয়ানা হালকা কন্ঠে বলল–বাবা!!
রায়ান –চিন্তা করো না!!বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসে!!
কথাটা বলে আয়ানার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে রায়ান দ্রুত খাবার আনতে গেল!!
আয়ানা কান্না আটকে বিছানাতে বসে পড়ল!!
রায়ান দ্রুত খাবার নিয়ে এসে আয়ানার সামনে বসে বলল–আয়ু,এইযে খাবার!!
অপরদিকে,,
শান্ত –আয়ু রায়ানের কাছেই আছে!!
আফজাল–এখন তাহলে কি করব??
শান্ত–কাল যাবো!!আয়ুকে আনতে!!
আফজাল –ওকে!!আর এবারের কাজটা করতেই হবে!!
আয়ু খাবারটা খেয়ে বিছানাতে শুয়ে আছে!!!রায়ান বেশক্ষণ বেরিয়েছে!!
আজ রায়ানের মুখ থেকে নাবিলার কথাটা শুনে আয়ানার বেশ খারাপ লেগেছে!!মানুষটা নেই তারজন্য আজও রায়ান এতোটা কষ্ট পায়!!
আয়ানা আনমনেই বলে উঠল–আজ ওনারা দুজন এক হলে কতো খুশি থাকতো সবাই!!!
হঠাৎ ই হানা দেয় কিছু তিক্ত অতীত আয়ানার চোখে,,,
নাবিলার দাফনকাজ শেষ হওয়া অবধি রায়ান এক কোণে চুপটি করে দাঁড়িয়ে ছিল কারণ আজ এখানে তার কোনো অধিকার নেই!!!
নাবিলাকে কবর দেওয়ার পর রায়ান এলোমেলো পায়ে হেঁটে ব্রিজের কাছে এসে দাঁড়ায়!!
সময়টা পড়ন্ত বিকেল,ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে আরও মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি তবে রায়ানের কাছে তা বিষাক্ত!!
চোখের পানি বন্ধ হয়েছে বেশক্ষণ তবে রায়ানের মনে হচ্ছে তার বুকের কোথাও খুব ব্যাথা হচ্ছে!!
কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে দেখল রায়ান!!
সেই কাকা দাঁড়িয়ে আছে!!!
ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে!!
কাকা–বৃষ্টিতে ভিজিস না!!!
রায়ান নীরব!!!
কাকা–দেখ,,নাবিলা হয়তো তোর ভাগ্যে ছিল না!!আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ,তিনি যা করেন তা সকলের ভালোর জন্য!! শেষে একটাই কথা বলবো আবারও শুরু কর!!!
রায়ানের স্হির দৃষ্টি সামনের দিকে!!!
কাকা একটু দুরত্বে দাঁড়িয়ে আছে কারণ চেষ্টা করেও রায়ানকে একচুল নড়াতে পারেনি!!
এরপর আচমকা রায়ান খুব দ্রুত হাঁটতে শুরু করল!!
কাকাও বেশ দূর ডাকতে ডাকতে গেল কিন্তুু একসময় আর নাগাল পেল না!!!
রায়ান হেঁটে বাড়িতে এসে দেখে তার বাবা বসে আছে টেবিলে!!
রায়ানকে দেখতেই রেদোয়ান রেগে জিজ্ঞেস করলেন–এভাবে সারারাত আর সারাদিন কোথায় ছিলি??
রায়ান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে!!
রেদোয়ান –ঘরে বউ আছে খেয়াল নেই তোর!!
রায়ান এবার চিৎকার করে উঠল–সব তোমার জন্য হয়েছে!! তুমি দায়ী!!তোমার জন্য নাবিলা আমাকে ছেড়ে পরপারে চলে গিয়েছে!! তুমি মেইন কালপ্রিট!!
রায়ানের চিল্লাচিল্লিতে ইতিমধ্যে বাসার সবাই জড়ো হয়েছে!!
রেদোয়ান হা করে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে!! যে ছেলে কোনোদিন মাথা উঁচু করে কথা বলে নি আজ সে বাবার সাথে চিল্লাচ্ছে!!
রায়ান আবারও বলল– ঐদিন অতিরিক্ত ভিড় থাকার কারণে কেউ একজন শপিংমলে নাবিলাকে বেশ আপত্তিকর ভাবে স্পর্শ করে!!ওর পেছনে তুমি দাঁড়িয়ে থাকায় ও কিছু বিবেচনা না করেই তোমাকে থাপ্পড় মারে!!এটা ওর ভুল ছিল তারওপর সবটা না জেনে পাড়ার মোড়ে তোমায় দেখে অপমান করে এটাও ভুল ছিল তবে তুমি যা করলে তা পাপ!! কারণ তুমি আমার জীবন নষ্ট করেছো!!নাবিলার মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী!!
রেদোয়ান সাহেব ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়েন!!
রেশমী আর দাদি এগিয়ে এসে রায়ানকে বকাবকি করতে শুরু করে!!!
আয়ানা দৌড়ে এসে রায়ানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে–আপনি বাবার সাথে এমন করে কথা বলবেন না প্লিজ!!
বলা মাত্রই রায়ান সর্বশক্তি দিয়ে আয়ানার গালে এক চড় বসাল!!
আয়ানা ঘুরে নিচে পড়ে গেল!!
আর রায়ান ঘটঘট করে হেঁটে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল!!!
আয়ানার এতোশক্ত চড় খেয়ে মাথা ঝিম ধরে গিয়েছে!!
দাদির হাহাকারে হুস ফিরে দেখে তার শ্বশুর সেন্স হারিয়েছে!! আয়ানা দ্রুত উঠে পানি নিয়ে এলো!!দাদি বালিশ এনে মাথার নিচে দিয়ে দিল!!
মুখে পানির ছিটা দিলে বেশকিছুক্ষণ পর রেদোয়ানের সেন্স ফেরে!!রেদোয়ান উঠে বসে পানি খেয়ে বলল–আমি ওর জীবনটা শেষ করে দিলাম রেশমী!!!
রেশমী কাঁদতে কাঁদতে বলল–নাহ গো!!তুমি যা করেছো তা ঠিক!!বাবা – মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না!!
রেদোয়ান –নাহ গো!!ও ঠিক আমি ভুল!!
কথাটা বলে রেদোয়ান উঠে ঘরে চলে গেল!!রেশমী মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল!!
দাদি রায়ানের দরজার সামনে এসে বলল–আইজ আমার পোলার কিছু হইলে তর খবর আছে!!তরে কত্তো কষ্ট কইরা আমার পোলা মানুষ করছে!!টিউশনি করছে,পিয়নের চাকরি করছে আইজ তুই এই ফেরত দিলি!!আমার পোলা নাইট গার্ডের চাকরি করছে তর জন্য!! তরে ভালো ইস্কুলে পড়াইছে!!
আরও নানা কথা দাদি বকবক করতে লাগল!!
আয়ানা শ্বাশুড়ির হাত পা মালিশ করছে কারণ রেশমী অনেক টেনশন সহ্য করতে পারে না!!
আয়ানা শ্বাশুড়ির পা জড়িয়ে কেঁদে দিল!!!
রেশমী আয়ুর মাথায় হাত রেখে বলল–সবর কর মা!!
অপরদিকে,,
শান্ত চেয়ারে বসে পেপারওয়েট ঘোরাতে ঘোরাতে বলল–সরি আয়ু!!প্লানে একটু চেন্জ আনলাম!!তুমি রায়ানকে ভালো না বাসলে এটা করতে হতো না!!
বলেই হাসতে লাগল!!
#চলবে
১০০০শব্দের পর্ব♥️
বিঃদ্রঃ গল্পটার থিমটা সাজিয়ে লিখেও মনমতো হচ্ছে না!!!গতকালের পর্ব পোস্ট করার আগেই আমার নোট থেকে হারিয়ে গিয়েছে!! তাই আজ আবারও লিখে সাজিয়ে দিতে দেরি হলো