শেষ পাতার তুমি পর্ব ২৩

#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২৩

মোটামুটি বিয়ের আগের দিন অবধি রায়ানের দেখা না পেয়ে আয়ানা–আপনি ভালো থাকুন সবসময়,, আমার জীবনে জড়িয়ে নিজের ক্ষতি করবেন না!!!(মনে মনে)

কিন্তুু ঠিক আগমুহূর্তে আয়ানাকে ভরা বিয়ে বাড়ি থেকে সবার চোখে ধুলো দিয়ে রায়ান নিয়ে চলে গেলো!!!

বাকিটা ১ম পর্বে সবারই জানা।

বর্তমান,,

আয়ানার সাড়া না পেয়ে রায়ান মাথা তুলে দেখে আয়ানা সোফাতে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

রায়ান মাথা তুলে উঠে দাঁড়িয়ে আয়ানাকে কোলে নিয়ে বিছানাতে শুয়ে দিল,,কপালে চুমু দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে রইল।

মাঝরাতে,,

কারো হাত গায়ে পড়ায় ঘুম ভেঙে যায় আয়ানার,চোখ মেলে উঠতে না পেরে দেখে রায়ান তার হাত পা আয়ানার উপর তুলে দিয়ে ঘুমাচ্ছে।

আয়ানা তো অবাক!

রায়ানের হাত পা চেষ্টা করেও সরাতে না পেরে রায়ানকে ডাকতে শুরু করলো।

বেশক্ষণ ডাকার পর,,

রায়ান ঘুম ঘুম কন্ঠে –ক্ষিদে পেয়েছে নাকি?

আয়ানা বিরক্ত কন্ঠে–না!

রায়ান–তাহলে?

আয়ান–আপনার হাত-পা সরান,দম বন্ধ লাগছে আমার।

রায়ান হাত-পা সরিয়ে এক টানে আয়ানাকে বিছানার মাঝে এনে নিজের ভর সব আয়ানার ওপর ছেড়ে দিলো।

আয়ানা হালকা জোড়ে–বাবাগো! মরেই যাবো।

রায়ান আয়ানার হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে বলল–হাত-পা তে দম বন্ধ হলে এখন কেমন লাগছে?

আয়ানা–কি ভারি আপনি! বিছানাতে যান।

রায়ান–নো,,এখানেই শোবো আমি।

আয়ানা–কি খান বলুন তো?এত্তো ভারি কেন?

রায়ান হেসে দিয়ে বলল–তা কি তোমার মতো চিকনি হবো! আমি পারফেক্ট আছি।

আয়ানা–ঠিকাছে,,নামুন।আমাদের__

শেষ করার আগেই রায়ান আয়ানার ঠোঁট আকড়ে নিলো।

আয়ানা ছুটোছুটি করেও তেমন লাভ হলো না।

আয়ানা শান্ত হতেই রায়ান ছেড়ে দিয়ে বলল–এক কথা বারবার কেনো বলো?পেপারে সই করলেই তালাক হয় না।

আয়ানা –বাবা পেপার সাবমিট করেছিলো।

রায়ান–তুমি বা আমি কেউ হাজির হই নি কোর্টে,,তাই কেস ও ওঠে নি।তালাকও হয় নি।

আয়ানা–মানে?

রায়ান মুচকি হেসে আয়ানার ঠোঁটের পাশে ঠোঁট ছুয়ে বলে–মানে তুমি আমার বউ।

কথাটা বলে রায়ান আয়ানার গলাতে মুখ ডুবিয়ে দেয়,,

রায়ানের ঠোঁটের বিচরণে আয়ানা বারবার কেঁপে উঠছে।

নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত করে কাঁপা গলাতে আয়ানা প্রশ্ন করলো–তাহলে আপনার প্রেমিকা রিদির কি হবে? আর ঐ বাচ্চা?

রায়ান থেমে গিয়ে মুখটা তুলে আয়ানার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল–বিলিভ মি আয়ু, রিদি আমার ভার্সিটির জুনিয়র ছিলো, একদম ছোট বোনের মতো সবসময় সাহায্য করেছি।ও কেন এমন বদনাম আমার নামে করছে জানি না।বাট তুমি আমার ভার্সিটি লাইফের যেকোনো বন্ধুকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো।

আমি তখন নাবিলার সাথে রিলেশনে ছিলাম, এতো ভালোবাসার পরও কখনো নাবিলার হাত ধরা ছাড়া আর কিছুই করিনি।তুমিই একমাত্র নারী আমার জীবনের যাকে আমি গভীর ভাবে স্পর্শ করতে চাই আর কেউ না।

আয়ানা এবার কেঁদে উঠলো বলল–আমি বাবাকে ঐদিন মারিনি।আপনি কেন আমায় বিশ্বাস করলেন না?পুলিশে ধরিয়ে দিলেন।

রায়ান –ট্রাস্ট মি আয়ু।আমরা কেউ কেস করিনি।ঐ__

আয়ানা থামিয়ে বলল–জানি আমি শান্ত আর বাবা।

রায়ান–তুমি জানো!

আয়ানা–হুমম।বাড়িতে যাওয়ার পর কিছুটা জানতে পেরেছি বাকিটা নিজে আড়ালে আবডালে দাঁড়িয়ে কথা শুনেছি। বেশিরভাগ সময় ড্রাগসের জন্য ঘুমিয়ে থাকতাম।

রায়ান–তাহলে আমায় ইগনোর করছো কেন?

আয়ানা ছলছল চোখে তাকিয়ে নিজের হাত রায়ানের থেকে ছাড়িয়ে রায়ানের মুখ নিজের হাতে মাঝে নিয়ে কপালে, চোখে,গালে চুমু দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে দিল।

দুজনের চোখেই পানি চিকচিক করছে।

ছোট্ট শ্বাস নিয়ে আয়ানা বলল–আমার সাথে আপনি জড়ালে আপনারও ক্ষতি।তাই সরে যেতে চাই আমি।

আপনার কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারবো না।

রায়ান–আর আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।আই নিড ইউ।

আয়ানা –কিন্তুু

রায়ান–কোনো কিন্তুু না।জাস্ট টেল মি ডু ইউ লাভ মি?

আয়ানা অন্যদিকে মুখ করে কাঁদতে শুরু করলো।

রায়ান–টেল মি আয়ু।ডু ইউ লাভ মি অর নট?

আয়ানার মুখ ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে রায়ান আবারো একই প্রশ্ন করল।।

আয়ানা দম ধরে বলল–আই ডু।আই লাভ ইউ বাট আমার সাথে থাকলে আপনার ক্ষতি হবে।

রায়ান আয়ানার উপর থেকে উঠে পাশে বসে আয়ানাকে একটানে বসিয়ে দেয়।

রায়ান–তোমাকে ভালোবাসি তাই তোমার সমস্যা আমারও সমস্যা।

আয়ানা–শান্ত মেরে ফেলবে আপনাকে।আপনার পরিবারের অবস্থা দেখুন।বাবা-মায়ের কি অবস্থা, নিজেকে দেখুন।আপনি সিগারেট ও খান এখন।তাহলে বুঝুন আমি কতো বড় বিপদ আপনাদের জন্য।

রায়ান মাথা চেপে আয়ানার গাল চেপে নিজের কাছে এনে বলল–চুপ।বেশি কথা বলবি না।সিগারেট আমি খেয়েছি কারণ তুই আমার থেকে দূরে চলে গিয়েছিলি।আর তুই আমার।তোর সমস্যা ও আমার।

আয়ানা ফুপিয়ে উঠল।

রায়ান কান্নারত মুখটা ছেড়ে তাকিয়ে রইল তার প্রিয়তমার দিকে।

বেশ জোড়ে চেপে ধরাতে আয়ানার শ্যাম বর্ণ গালে একটু ছাপ পড়ে গিয়েছে।

কান্না করার ফলে ঠোঁট দুটো অনবরত কাঁপছে।

রায়ান আয়ানার কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে চোখের পানি মুছে বলল–আমরা একসাথে থাকব।হয় বাঁচবো নয়তো মরবো।এটা নিয়ে আর কোনো কথা হবে না।আর এখন যা হবে দুজনে মিলে সামলাবো।।

আয়ানা নাক টেনে বলল–সব বললেন,এটা বললেন না যে আপনি আমায় ভালোবাসেন কিনা?

রায়ান আয়ানার ঠোঁট কুট করে কামড় বসিয়ে দিয়ে বলল–এটা মুখে বলতে হবে?

আয়ানা নাক ফুলিয়ে –না বললে আমি কালই চলে যাবো।

রায়ান হেসে দিয়ে বলল–লাভ ইউ মিসেস রায়ান।

আয়ানা হেসে দিলো।

আয়ানা এবার রায়ানের কোলে বসে রায়ানের বুকে মাথা রাখলো।

রায়ান খাটের গায়ে বালিশ দিয়ে হেলান করে বসে আয়ানাকে জড়িয়ে ধরলো।

আয়ানা–আপনি জানেন আমার ফার্স্ট কিস নিয়ে কত স্বপ্ন ছিলো?আপনি কেমনে জোড় করে ধরে আজ কিস করে দিলেন।

রায়ান একটু জোড়ে হেসে বলল–এটা আমাদের ফার্স্ট কিস নয় আয়ু।

আয়ানা ধপ করে উঠে বসে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে বলে-মানে?আগে কবে কিস করেছি?কই আমার তো মনে নেই।

রায়ান আবারো আয়ানাকে বুকে টেনে নিয়ে বলল–তখন তুমি সজ্ঞানে ছিলে না।শান্ত ড্রাগস দিচ্ছিলো।

আয়ানা–সে যাই হোক।স্বপ্ন তো পূরণ হলো না(কাঁদো কাঁদো)

রায়ান–বলোতো এখন পূরণ করে দেই।

আয়ানা–নাহ দক্কার নাই।

তাদের কথার মাঝেই দূর থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে এলো।

আয়ানা রায়ানকে ছেড়ে উঠতে নিলেই,

রায়ান-কই যাবা?

আয়ানা-আযান হচ্ছে, নামাজ পড়বো আর আপনিও পড়বেন।

আয়ানা উঠে ফ্রেস হয়ে নামাজ পরে নিলো।

রায়ান নামাজ এ দাঁড়াতেই আয়ানা ঘরের বামে থাকা জানালার কাচ হালকা সরিয়ে রাস্তার দিকে দৃষ্টি রাখলো।

রায়ান নামাজ শেষ করে আয়ানার কাছে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল–রাস্তায় কি দেখছো?দেখার হলে তোমার বর কে দেখো।

আয়ানা হেসে বলল–দেখুন আপনার ঘর থেকে ঐ কৃষ্ণচূড়ার গাছটা দেখা যায়।আমার খুব ভালো লাগে দেখতে।

রায়ান কাঁধে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলল–জামাটা চেন্জ করে শাড়ি পরো।তোমার চুড়ি,চেইন আর নাকফুল আলমারির ড্রয়ারে আছে পরে নেও।

আয়ানা অবাক ভাবে ঘুরে–মানে?

রায়ান–মানে একদম নতুন বৌ এর মতো রেডি হয়ে যাও আগে যেমন থাকতে।

আয়ানা–কিন্তুু?

রায়ান–কোনো কথা না।রেডি হও তারপর বাকিটা বলবো।
#চলবে
১০১০ শব্দের পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here