শেষ পাতার তুমি পর্ব ২২

#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২২

আফজাল–তালাকের কাগজ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আর আসল কপি কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে আশা রাখি মাসখানেকের মধ্যে পুরোপুরি তালাক হয়ে যাবে। এখন বলছো বউ??

রায়ান–আগে তালাক হোক!!তারপর না হয় বউ বলবো না।

আফজাল থতমত খেলেও তা প্রকাশ না করে শক্ত কন্ঠে বলল–তালাক তো হবেই।

রায়ান মুখের হাসি বজায় রেখেই বলল–আমি তো বলিনি তালাক হবে না!!যেদিন হবে সেদিন দেখা যাবে।।

আফজাল চোখ মুখ শক্ত করে কিছু বলবে তার আগেই ফোন আসাতে ফোন হাতে বেরিয়ে গেলো।

রায়ান একজন মেইড কে ডেকে আয়ানার ঘরের উদ্দেশ্যে গেল।।

দরজা হালকা চাপানো ছিলো।।

দরজা খুলে বিছানার দিকে তাকাতেই রায়ানের চোখ ছলছল করে উঠলো।।

বিছানাতে চোখ বন্ধ অবস্থায় পরে আছে আয়ানা।।

হাতে স্যালাইন চলছে,,মাথায় আর বাম হাতে ব্যান্ডেজ।

বাম হাত যে ভেঙে গিয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে।

রায়ান ধীর পায়ে ভেতরে এসে বিছানার পাশে বসলো।।

আয়ানার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে দিল।।

রায়ান একটু আয়ানার দিকে একটু ঝুঁকতেই দরজাতে নক হলো।।

রায়ান সোজা হয়ে বসতেই দরজা ঠেলে আয়ানার মা প্রবেশ করলো।।

রায়ান– আসসালামু আলাইকুম মা।।

আয়ানার মা চোখের পানি মুছে রায়ানের দিকে এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল– আলাইকুম আসসালামু।।

রায়ান –চিন্তা করবেন না মা।।

আয়ানার মা–তুমি আমার মেয়েকে বাঁচাও বাবা!!কাল ওকে আমিই সিড়ি থেকে ফেলে দিয়েছি!!নাহলে শান্ত ওকে আজই নিয়ে যেতো।

রায়ান–মা আপনি শুধু আয়ুর দিকে খেয়াল রাখুন!!বাকিটা আমি দেখছি!!ভরসা রাখুন।

আয়ানার মা–তোমার ওপর ভরসা করি বলেই মেয়েকে তোমার হাতে দিতে চাইছি বাবা!!!যাই হোক,,তুমি আমার একমাত্র জামাই।।ঝামেলার জন্য খাতির হবে না তা তো না!!এই যে ট্রে দিলাম,,সব শেষ করতে হবে কিন্তুু।

রায়ান–মা।

আয়ানার মা–কোনো কথা না! আয়ুকে ডেকে দিচ্ছি আমি!!তবে ডেকেও লাভ নেই।

রায়ান–মানে??

আয়ানার মা চোখের পানি ফেলে বললেন–কাল ওকে দুবার ড্রাগস দিয়েছে!তারওপর কড়া ডোজের ওষুধ চলছে!!জেগে উঠলেও তেমন হুসে থাকবে না।

রায়ান ছোট্ট শ্বাস নিয়ে বলল–আমি দেখছি মা।

আয়ানার মা রায়ানকে বসিয়ে,, আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে আয়ানাকে ডাকতে লাগলো।।

খানিক ডাকাডাকির পর,,

আয়ানা বাচ্চাদের মতো চোখ খুলে তাকালো।

ততক্ষণে হাতের ক্যানোলা খুলে দিয়েছে তার মা।।

আয়ানা চোখ খুলতেই আয়ানার মা বলল–দেখ আয়ু মা,,রায়ান এসেছে।।

আয়ানা খানিক ঘুমুঘুমু চোখে তাকিয়ে রইল রায়ানের দিকে।।

আয়ানার মা ওদের প্রাইভেসি দিয়ে ঘর থেকে দরজা বন্ধ করে চলে গেলো।

রায়ান আয়ানার পাশে বসে বলল–হাতে আর মাথায় অনেক ব্যাথা তাইনা??

আয়ানা ঠোঁট উল্টে বলল–হুমম!!!হাতে বেশি ব্যাথা!

রায়ান মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে বলল–ঠিক হয়ে যাবে!!

আয়ানা–আমি আর কথা বলবো না আপনার সাথে!! ভুলে গিয়েছেন আপনি আমায়!

রায়ান মুচকি হেসে আয়ানার কপালে চুমু দিয়ে বলল–একদমই ভুলিনি।।

আয়ানা আচমকা ছলছল চোখে বলল–বাবা!!

রায়ান–বাবা ঠিক আছে।

রায়ান মনে মনে ভাবছে –আয়ু অচেতনেও বাবা কে মনে রেখেছে

রায়ান ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলল–কথা বলা বন্ধ করো না আয়ু প্লিজ!!আমি সরি

আয়ানা মাথা নাড়িয়ে না জানালো

রায়ান–তাহলে বলো কি করলে আমার সরি তুমি নেবে???

আয়ানা ভেবেও তেমন কিছু জানাতে পারলো না

রায়ান– ক্লোজ ইউর আইস

আয়ানা চোখ খানিক ঘুরিয়ে চোখ হালকা বন্ধ করে নিল

রায়ান একটু এগিয়ে দুগালে আর কপালে চুমু দিয়ে বলল–এবার সরি মেনে নেও

আয়ানা চোখ বন্ধ রেখেই ধরা গলাতে বলল–আমি কি বেবি??

রায়ান এবার ফিক করে হেসে বলল–না!! তুমি আমার বেবির মা!!

রায়ান এবার আয়ানাকে একটু কাছে টেনে ঠোঁটে ছোট্ট করে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলল–তোমার হয়তো কিছুই মনে থাকবে না!!!তাই আর না এগোনো ভালো

আয়ানা কি বুঝলো তা কি জানি তাই মাথা নাড়িয়ে রায়ানের কোলে বসে বুকে মাথা রাখলো

রায়ানও বেশ আলতো হাতে আয়ানাকে জড়িয়ে নিলো

ঘন্টাখানিকের মধ্যেই আয়ানা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল!

রায়ান একদৃষ্টিতে আয়ুর দিকে তাকিয়ে আছে

আয়ানাকে বিছানাতে শুয়ে দিয়ে রায়ান আয়ানার মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো

রায়ান সোজা হাসপাতালে এসে তার বাবার কেবিনে গেলো

রায়ান—কেমন আছো বাবা??

রেদোয়ান বালিশে পিঠ ঠেকে বসে আছেন

রেদোয়ান –এইতো ভালো বাবা!!দেখা হলো আয়ু মা এর সাথে??

রায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল–কোনোরকম

রেশমি–কেমন আছে আয়ু??

রায়ান এর বাবার হাত কপালে ঠেকিয়ে কেঁদে দিলো!

আর বলল—ও ভালো নেই মা!!!ওকে যতক্ষণ আঘাত করা হবে ততক্ষণ সেইফ থাকবে

কথাটা শুনে রেশমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল

রেদোয়ান ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল–কাঁদিস না।!সব ঠিক হয়ে যাবে!

অপরদিকে,,

শান্ত ড্রাগস সাজাচ্ছে,, কতটুকু আয়ুকে আজ পুশ করবে তা নিয়ে বেশ ভাবনা চিন্তা করছে সে

আফজাল সামনে বসে বেশ বিরক্ত চোখে তা দেখছে!

না পেরে আফজাল বলেই দিলো

আফজাল–এখন তো আয়ু আমাদের হাতে মুঠোয় তাহলে কি ওকে আর ড্রাগস দেওয়ার দরকার আছে????

শান্ত না তাকিয়ে বলল–পড়াশোনা করেছেন কতটুকু??

আফজাল–মানে???

শান্ত–পড়াশোনা করলে এটা জানতেন একবারে ড্রাগস বন্ধ করে দিলে মানুষ মরে অবধি যেতে পারে!!তাই ডোজ কমিয়ে আনতে হয়!!!আর আয়ুকে মারা আমার উদ্দেশ্য নয়!

আফজাল বিড়বিড় করে তারপর উঠে চলে গেলো!!

অপরদিকে,,

আজ আয়ানার কিছুটা সেন্স আছে!!!সকাল থেকে তার রেদোয়ানের কথা বেশ মনে পড়ছে!!

আয়ানা ফ্রেস হয়ে বিছানাতে বসে আছে!!

তখনি আফজাল সাহেব এসে বললেন–গুড মর্নিং মামনি!!

আয়ানা দুর্বল হাসি দিয়ে বলল–মর্নিং!

আফজাল–তোমার মায়ের সাথে আজ ডাক্তারের কাছে যাও!!কাজ না পড়লে আমিই যেতাম!!দ্রুত সুস্থ হতে হবে তো

আয়ানা–ওকে বাবা!!

আফজাল আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো!!!

আয়ানা সকালের নাস্তা করে মায়ের সাথে বের হলো!!

আয়ানা মনমরা হয়ে গাড়ির কাচের জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখছে!

আয়ানার মা আজ শান্তর সামনে পরার আগে আয়ানাকে নিয়ে এসেছে

আয়ানার দিকে তাকিয়ে আয়ানার মা চোখের পানি ফেলে দিলো!!!

গাড়িটা হুট করে থামতেই আয়ানা আশেপাশে তাকিয়ে,, আস্তে করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো!!

মায়ের হাত ধরে ভেতরে এলো

আয়ানা ভ্রু কুচকে আশেপাশে তাকাচ্ছে!!

আয়ানাকে একটা রুমে এনে বসিয়ে তার মা বেরিয়ে গেলো,,

আয়ানা কিছু বলবে তার আগেই শ্বশুর বাড়ির লোকজন দেখে থম মেরে বসে রইল!!

রেদোয়ান কোনোমতে কাছে এসে বসে বললেন–কেমন আছিস মা??

আয়ানা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে!!

সবাই কথা বললেও আয়ানা কোনো কথাই বলছে না!!

একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রায়ানের তা চোখ এড়ায় নি!!

রায়ানকে এগিয়ে আসতে দেখে বাকিদের নিয়ে রেশমি বেরিয়ে গেলো!

রায়ান পাশে বসে হাত ধরতেই আয়ানা কেঁপে উঠে হাত সরিয়ে নিলো!!

রায়ান হালকা হেসে বলল–হাত সরিয়ে নিচ্ছো কেন??গতদিন কিস করার সময় তো সরে যাও নি!!

আয়ানা নাক মুখ কুঁচকে বলল–মিথ্যা কথা!!

রায়ান–আমি মিথ্যে বলি না জানো!!বাড়ি যাবে কবে?

আয়ানা চোখ মুখ শক্ত করে বলল–আমার জন্য আপনাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে,,,গতদিন আপনার বাবা মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছে!! আমার মতো খুনীকে আপনাদের বাড়িতে যেতে বলছেন আবার!

রায়ান কিছু বলবে তার আগেই ঠাস করে দরজা খুলে প্রবেশ করলো আফজাল আর শান্ত

আয়ানাকে হেচকা টেনে আফজাল নিজের পাশে টেনে নিয়ে বলল—সাহস তো কম নয় আমার মেয়েকে এভাবে পটাবে ভেবেছো??আমার মেয়েকে পুলিশে দিয়েছো,,জেলে রাত থেকেছে আমার মেয়ে তারপরও আশা করো তোমার হাতে ওকে আবার তুলে দিবো

রেদোয়ান ভেতরে এসে বলল–এসব বাজে কথা!!

শান্ত –কোনো বাজে কথা নয়!!প্রমাণ আছে আপনারাই আয়ুর নামে কেস করেছেন বলে ওকে এরেস্ট করা হয়েছিলো!!

রায়ান–বাজে কথা বলবেন না!!

আয়ানা হাতে বেশ চোট পেয়েছে!!

আফজাল,শান্ত,রায়ান সমানে তর্ক করে যাচ্ছে

আয়ানা একপর্যায়ে ধপ করে নিচে পরে গেলো

আয়ানার মাকে এগিয়ে আসতে দেখেই আফজাল জোরে এক থাপ্পড় দিলো

তিনি ছিটকে সরে পড়লেন

আয়ানাকে শান্ত কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো

রায়ান রাগে নিজের হাত খামচে ধরেছে

এই ঘটনার পর আয়ানা বেশ অসুস্থ হয়ে পরে!!রায়ান বহু চেষ্টা করেও আয়ানার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি

মাস চারেক পর জানতে পারে আয়ানা সিড়ি থেকে পরে গিয়েছে,, চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছে

এমন সময় হাসপাতালের ওষুধ চুরির অপরাধ আর ওটি রুমে ভুল ইনজেকশন দেওয়ার কারণে রেশমির নামে কেস হয়,,রেশমি চাকরি চলে যায়

রায়ান বুঝতে পারে কাজটা শান্তর

তাও বহু উপায়ে শান্তর ইনফরমেশন কালেক্ট করে যাচ্ছে সে

এখন রায়ানের মূল উদ্দেশ্য আয়ানা

এভাবে কাটে আরও ১৪ মাস,,

রায়ানকে আয়ানার সব খবর তার শাশুড়ী দেন!!বারবার আঘাত আর ড্রাগসের কারণে আয়ানার বড়ি প্যারালাইসিস হয়ে গিয়েছিল,,ধীরে ধীরে সুস্হ হচ্ছে

রায়ান বারান্দা তে বসে আছে,,

অপেক্ষা আয়ানার দেশে ফেরার!!কারণ আয়ানা সুস্থ হলেই শান্ত তার প্লান মতো নেমে পরবে

আয়ানাকে আর আঘাত করা যাবে না

এতোসব টেনশনের মাঝে বেশ ভালোভাবে রায়ান সিগারেটের নেশা ধরিয়ে ফেলেছে

রায়ান বা হাতে সিগারেট আর ডান হাতে ফোনে আয়ানার একখানা ছবি দেখছে

ছবিতে আয়ানা হাসপাতালে বসে কারো দিকে তাকিয়ে হাসছে!!

মুখে হাজারো ক্লান্তির মাঝে একটুকরো হাসিটা রায়ানের কাছে মেঘের ফাকে একফালি রোদের মতো লাগছে

রায়ান ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল–জানিনা কিভাবে তোমাকে ভালোবেসেছি তবে যখন তোমায় ভালোবেসেছি তখন তুমি শুধু আমার!!আমি আর তোমাকে হারাতে পারবো না!!নাবিলাকে হারিয়ে আমি ভেঙে পড়েছি তোমার কিছু হলে মরে যাবো

তারপর বার দুই সিগারেট টেনে ফেলে দিলো

উঠে ঘরে গেল!!

অপরদিকে,,

শান্ত আয়ানার ভিসার কাজ করছে,,কিন্তুু বারবার ভিসার প্রপোর রিজেনের জন্য ভিসা রিজেক্ট হচ্ছে!! অফিসে যোগাযোগ করেও তেমন লাভ হয়নি!!টাকার অফার করলে তা সি সি ক্যামেরা তে ধরা পড়ার দরুণ তার এক লোক জেলে রয়েছে!!শান্তর মেজাজ টপে উঠে আছে!!অপরদিকে আয়ানাকে ডিলারের হাতে দিতে হবে দ্রুত

অন্যদিকে,,

আফজালের ষড়যন্ত্রে রায়ানের বাবাকে কিডন্যাপ করে এনে বেশ টর্চার করা হয়েছে সেই ভিডিও দেখিয়ে কেউ তাকেও ব্লাকমেইল করছে!!সব দিক থেকে শান্ত ঘেটে আছে

রায়ানকে ধরে এনে মারধোর করেও লাভ হয়নি!!শান্ত বুঝেছে রায়ান এসবের কিছুই জানে না

বাড়িতে লোক পাঠিয়ে ও ইনফরমেশন নিয়েছে কিন্তুু ফলের ফল কিছুই হয়নি

রায়ান খেতে বসেছে,,

টুং করে ফোন বেজে ওঠাতে ভ্রু কুচকে ফোন হাতে নিলো

ম্যাসেজ পরে আবারএ খাওয়াতে মনোযোগ দিলো!!

রেদোয়ান –তোর শরীর কেমন??

রায়ান–ভালো বাবা!!

রেদোয়ান –আয়ু মার কোনো খবর নেই না??

রায়ান মাথা নিচু করে আছে!!

রেশমি চোখের পানি মুছে বলল–মেয়েটাকে শেষ অনেক অসুস্থ দেখেছিলাম!!কেমন আছে কে জানে!!!

রায়ান খাওয়া শেষ করে উঠে ঘরে গিয়ে আবারও সিগারেট ধরালো

খাওয়ার সময় আয়ানার মায়ের ম্যাসেজ ছিলো!!

আয়ানা এখন সুস্থ,, পরশু ফিরছে দেশে!!

রায়ান সিগারেটে টান দিয়ে বলল–বি রেডি আয়ু!!শ্বশুরবাড়ি ব্যাক করতে হবে

তারপর ফোনে আরও একটা মেসেজ দেখে জোরে হেসে দিলো

শান্তর নাজেহাল অবস্থা আজকাল বেশ মজা দেয় রায়ানকে!!

আজ অনেকদিন পর,,দেশের মাটিতে পা রাখলো আয়ানা!!!মন ভরে শ্বাস নিয়ে নিলো

গাড়িতে উঠে বাড়ি আসার পথে রায়ানের বাড়ির মোড় চোখে বাধতেই চোখ ভিজে এলো

আয়ানা–আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়েই দিলেন!!!এতো অপছন্দ করতেন আমায়??এখন নিশ্চয়ই খুব ভালো আছেন,,উটকো ঝামেলাটা যে বিদায় হয়েছে!!তবে আপনি হয়তো জানেন না আপনার এই উটকো ঝামেলাটা আপনাকে অনেক ভালোবাসে!!!(মনে মনে)

বাড়ি পৌঁছে আফজাল সাহেবের সাথে দেখা করলো আয়ানা!!!

শান্তর সাথে টুকটাক কথা বলে ঘরে গেল রেস্ট নিতে!!

ফ্রেস হয়ে বিছানাতে গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো আয়ানা

কারো গভীর চাহনিতে চরম অস্বস্তিতে ঘুম ভেঙে গেলো আয়ানার!!

চোখ খুলে চিৎকার করবে দেখে মুখ চেপে ধরে সামনে বসে আছে রায়ান!!

আয়ানাকে উঠে বসতে দেখে রায়ান বলল–চিৎকার করো না

বহুদিন পর রায়ানকে দেখে আয়ানা বারবার চোখ ঘষছে!!

আয়ানা খুব মনোযোগ দিয়ে রায়ানকে স্ক্যান করছে,,

চুল এলোমেলো,মুখটা কেমন শুকিয়ে আছে,হাতে মাথাতে ছোট ব্যান্ডেজ,,চোখ মুখের অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছে কেউ বিদুম কেলিয়েছে

আয়ানা একটা ছোট শ্বাস নিয়ে বলল–আপনি এখানে??

রায়ান–তো কোথায় থাকবো??

আয়ানা–মানে? এভাবে এক ঘরে কেউ দেখলে খারাপ ভাববে

রায়ান–বউ এর ঘরে বরকে দেখলে কেউ খারাপ ভাবে না জান

রায়ানের কথার ধরণ শুনে আয়ানার মেজাজ চটে গেল কপট রাগ নিয়ে বলল–ডিভোর্স হয়েছে আমাদের!!

রায়ান–এই কথাটা তোমার বাপ বলেছে তাইনা??

আয়ানা–মুখের ভাষার কি শ্রী!!

রায়ান হেসে বলল–ওমনই!!আমার ঘুম হারাম করে খুব শান্তিতে ঘুমোচ্ছিলে!!

আয়ানা রাগ দেখিয়ে বাথরুমে চলে গেল!!!

রায়ান খানিক হেসে চলে গেলো!!!

অপরদিকে,,,

শান্ত–বারবার ভিসা রিজেক্ট হচ্ছে!!আইনি ঝামেলা হলে আয়ুকে পরে পাচার করতে ঝামেলা হবে!!

আফজাল–তাহলে এখন কি করবে??

শান্ত–বিয়ে করবো!!

আফজাল–মানে??

শান্ত–আয়ুকে বিয়ে করবো!!আমি একটু দুবাই যাচ্ছি!! এদিকটা সামলাবেন!!রায়ানের সাথে যেন আয়ুর দেখা না হয়!!আমি এসে আয়ুকে বিয়ে করে দুবাই নিয়ে যাবো!!!তার আগে এ কথা পাঁচকান করবেন না

কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে শান্ত চলে গেলো

পরদিন রাতে শান্ত রীতিমতো দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে চলে গেলো

রায়ান সময়মতো সব খবর পেয়ে যাচ্ছে

আয়ানা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে!! আচমকা পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরে কাধে মুখ গুজে দেওয়ার কারণে আতকে উঠে ছিটকে সরে গেল

পেছন ঘুরে দেখে রায়ান!!

আয়ানা চড়া গলাতে বলল–আপনি???

রায়ান–তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হয়েছিলো তাই!!

আয়ানা হেসে–আমার মতো খুনীকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো!!

রায়ান চোয়াল শক্ত করে বলল–চুপ!!ফালতু কথা বলে মুড নষ্ট করবে না!!

আয়ানা ধুপধুপ করে ছাদ থেকে নেমে গেলো

এরইমধ্যে রেদোয়ান স্ট্রোক করাতে রায়ানের সাথে আর আয়ানার কোনো যোগাযোগ থাকে না!!তবে রায়ান প্রতিটা মুহুর্তের খোঁজ রেখেছে!!

রেদোয়ানের পুরো সুস্থ হতে ৫ মাস সময় চলে যায়!!

এরই মাঝে রায়ান খবর পায়,আয়ানা আর শান্তর বিয়ে!!

সেদিনই আয়ানার সাথে দেখা করার জন্য চলে যায় সে!!

বারান্দা দিয়ে ঘরে এসে সদ্য গোসল করে আসা আয়ানাকে হুট করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রায়ান!!

রায়ান নাক মুখ শক্ত করে –বিয়ে করছো??কয়বার বিয়ে করতে হবে তোর??

আয়ানা–তালাক হয়েছে,,এখন আমি বিয়ে করতেই পারি!!

রায়ান–থাপড়ে তোর গাল ফাটিয়ে দেবো!!তালাক কি মুড়ি নাকি মোয়া যে তুই, তোর পাতানো বাপ চাইবি আর পাবি!!!কোনো তালাক হয়নি!!বাড়ি যাবি তুই আমার সাথে!

আয়ানা–আমি খুনী!!ঐ বাড়িতে গেলে সবার ক্ষতি হবে!!

রায়ান–তোর মুখ একটু বেশিই চালাচ্ছিস!!

রায়ান আর আয়ানা একদফা তর্ক করার পর,,

আয়ানা জোর দিয়ে বলল–আমি বিয়ে করবো!!যাবো না আপনার সাথে!!!

রায়ান কথাটা শোনা মাত্রই আয়ানার গলাতে মুখ ডুবিয়ে বেশ জোরে কামড়ে ধরলো

আয়ানা চিৎকার করতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো

রায়ান মুখে তুলে বলল–বিয়ে কিভাবে করিস আমিও দেখবো

কথাটা বলে চলে গেলো!!

আয়ানা দ্রুত আয়ানার সামনে এসে দেখে গলাতে দাঁতের দাগ বসে লাল হয়ে গিয়েছে!!!

আয়ানা তাই কলার ওয়ালা জামা নিয়ে চেন্জ করতে গেলো!!!

মোটামুটি বিয়ের আগের দিন অবধি রায়ানের দেখা না পেয়ে আয়ানা–আপনি ভালো থাকুন সবসময়,, আমার জীবনে জড়িয়ে নিজের ক্ষতি করবেন না (মনে মনে)

কিন্তুু ঠিক আগমুহূর্তে আয়ানাকে ভরা বিয়ে বাড়ি থেকে সবার চোখে ধুলো দিয়ে রায়ান নিয়ে চলে গেলো

বাকিটা ১ম পর্বে সবারই জানা!

#চলবে

২১৪০ শব্দের পর্ব♥️

বিঃদ্রঃ অতীত শেষ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here