শেষ বিকেলে এলে তুমি পর্ব -১০+১১

#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#পর্ব_১০
#Tahmina_Akhter

কাছের এক হসপিটালে এসে গাড়ি থামিয়ে দিয়ে আয়াত ভাই নেমে পড়লেন। কারের বেক সাইডের ডোর খুলে কাজল আপুকে কোলে নিয়ে আমাকে ইশারা করলেন গাড়ি লক করে আসতে।আমি গাড়ি লক করে আয়াত ভাইয়ের পিছু পিছু যাচ্ছি।

আয়াত ভাই তড়িঘড়ি করে হসপিটালে প্রবেশ করতেই ওয়ার্ড বয় এসে স্ট্রেচারে করে কাজল আপুকে কেবিনে নিয়ে গেলেন।

ডাক্তার আপুকে চেক করে বললেন,

-আসলে, উনি মানসিক ভাবে সুস্থ নন। মাত্রারিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে উনার বিপি কমে যাওয়াতে চেতনা হারিয়ে ফেলেছেন।যথা সম্ভব চেষ্টা করবেন উনাকে হাসিখুশি রাখার জন্য। স্যালাইন শেষ হলে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন। আসছি আমি।

বলে বেরিয়ে গেলেন ডক্টর। কাজল আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মুখটা মলিন হয়ে আছে। চোখের নিচে যেন গাঢ় কাজলের লেপন দেয়া। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।

এরইমাঝে, আয়াত ভাই কেবিনে প্রবেশ করলেন। উনি বাইরে গিয়েছিলেন ঔষধ নিয়ে আসতে।
আয়াত ভাই এসে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। এদিকে আমার মোবাইলে বারবার কল আসছে রিসিভ করা দরকার। তাই আয়াত ভাইকে বলে কেবিনের বাইরে চলে এলাম। আবার মোবাইল বেজে উঠতে কল রিসিভ করতে ওপাশ থেকে রায়হান আঙ্কেল বলে উঠলো,

-কি রে, তোরা কোথায়?এখনো বাড়িতে ফিরে আসিস না কেন?সময়ের খবর আছে তোদের রাত আটটা বাজে।

-আসলে,আঙ্কেল হয়েছে কি?

-কি হয়েছে? কাজল কোথায়?

-আসলে আঙ্কেল, কাজল আপু হঠাৎ করে সেন্স হারিয়ে ফেলছেন তাই উনাকে নিয়ে আমরা হসপিটালে এসেছি। আপনি চিন্তা করবেন না আপু সুস্থ আছে স্যালাইন দেয়া শেষ হলে আমরা বাড়িতে ফিরে আসবো।

খট করে ওপাশ থেকে কলটা গেলো হয়তো আঙ্কেলের আর কিছু বলার নেই। কি বলবেন উনি!সদ্য মা হারানো মেয়েটিকে যখন কন্যা দারস্থ করে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মেয়েটি এ যাবতকালে যাকে বিশ্বাস করে বাকি পথটুকু চোখ বুঁজে পাড় করতে চেয়েছিলো সে জানালো, সে কখনও তার ভালোবাসার মানুষ ছিলো না, নিছক তার ছলনা ছিলো।
মেয়ে বিশ্বাসঘাতকতা সইতে পারেনি হয়ে গেলো ভারসাম্যহীন।
কোনো বাবা এই দৃশ্য সইতে পারবে না যেখানে তার সন্তান গায়ের রঙের জন্য কটু বাক্য শুনবে,কালো রঙ দেখে তাকে বিক্রি করতে হবে চড়ামূল্য দিয়ে।সর্বশেষ, সন্তানকে দেখবে কারো সামনে নত হয়ে থাকতে।কিন্তু, এই সন্তান ছিলো একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রেরণা।
তবুও, তো তিনি ভেঙে পরেন নি। মেয়েকে এই পর্যন্ত তিনি সামলে যাচ্ছেন কোনোপ্রকার টুঁ শব্দ ছাড়া।

মোবাইলে আবারও কল আসার কারণে রুশার ধ্যানভগ্ন হলো।স্ক্রীণে তাকিয়ে দেখলো নাজ কল করেছে। রিসিভ করতে শুনতে পেলো,

-হ্যালো, রুশা। কেমন আছিস, দোস্ত?

-আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।তুই কেমন আছিস?

-ভালো। কি হয়েছে তোর? এভাবে কথা বলছিস কেন?

অল্প কথায় নাজকে সব বুঝিয়ে বললাম। সব শুনে নাজ বললো,

-দেখ, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। জায়ান লোকটা যদি বিয়ের পর এই কান্ড করতো তখন তোর আপু কি হতো? বুঝতে পারছিস তুই!তোর আপুকে বলিস, যা হয়েছে বাদ দিয়ে সামনের জীবনের কথা ভাবতে।

-তুই একদিন এসে না-হয় আপুর সাথে দেখা করে যাস?

-আচ্ছা, আসবো একদিন। এখন শোন যে কারণে কল করেছি।আদিল স্যার কাল সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন মর্নিং শিফটে।

-মর্নিং শিফটে! কিন্তু, কেন?

-কি জানি? তুই চলে আসিস;এখন রাখছি।

-আচ্ছা,

কল কেটে কেবিনে প্রবেশ করতে দেখলাম, আয়াত ভাই চোখ মুছে ফেলেছেন। আচ্ছা, উনি কি কাঁদছেন?

উনাকে আর বিষয়ে জিজ্ঞেস করে বিব্রতবোধ করাতে চাই না। তাই দেখেও না দেখার ভান করে আপুর বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।কিন্তু, মনে একটা প্রশ্ন খালি খচখচ করছে, আয়াত ভাই কাঁদল কেন? কাজল আপুর জন্য!

রাত দশটায় আপুকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি আমরা। আপুর এখনো জ্ঞান ফিরে আসেনি। হয়তো আরো ছয়ঘন্টা পর অর্থাৎ ভোরের দিকে জ্ঞান ফিরে আসতে পারে।আয়াত ভাই যখন আপুকে কোলে করে এনে আপুর বিছানায় রাখলেন। আঙ্কেল এসে আপুর কপালে চুমু খেয়ে কেঁদে দিলেন, আর বারবার বলতে লাগলেন,

-এগুলো সব আমার কৃতকর্মের ফল। আমার স্ত্রী আমায় ছেড়ে চলে গেলো অভিমান নিয়ে।আমার ফুলের মতো মেয়েটা দিন দিন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। আর আমার?
হে, আল্লাহ আর কত পাপের শাস্তি দিবেন আমায়।আমার মেয়েটার মনের দুঃখ নিমেষে ভুলিয়ে দেন আপনি।আর যত শাস্তি দেয়ার আমাকে দিন কারণ আমি গোনাহগার।

আয়াত ভাই আঙ্কেলেকে ধরে রুমে নিয়ে গেলেন। কিন্তু, উনার বিলাপ এই রুম পর্যন্ত শোনা যাচ্ছিলো।
আর আমি ভাবছি, আঙ্কেলের মতো ভালো মানুষ আবার কি পাপ করেছেন? নাকি শুধুই উনার মুখের কল্প কথা!

সে রাতে আমি কাজল আপুর সাথে ঘুমিয়েছি।ভোরের দিকে আপুর জ্ঞান ফিরে আসে।কিন্তু,কিছুসময় পর উনি আবারও ঘুমিয়ে পড়েন হয়তো ঔষধের হাই ডোজ পাওয়ারের জন্য।

——————-

সাড়ে সাতটা বাজে বাড়ি থেকে বের হয়েছি হসপিটালের উদ্দেশ্য। মনে মনে আদিল স্যারকে বকছি। কি দরকার ছিলো আজ এত জরুরি ভাবে তলব করার?
আপু অসুস্থ উনাকে কে দেখাশোনা করবে? ফাহিমা খালা নাকি কাল এতিমখানা থেকে আর বাড়িতে ফিরে আসে নি। উনি উনার ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছেন। কোনোভাবে আদিল স্যারের ক্লাস এটেন্ড করে বাড়িতে চলে যাবো।

ভাবতে ভাবতে হসপিটালে পৌঁছে গেলাম। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টের দিকে এগুতে লাগলাম।
হাঁটার সময় মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমার পিছু পিছু আসছে? পিছনে ফিরে তাকাতে দেখলাম একটি কুকুর। হয়তো খুদা লেগেছে তাই ঘুরঘুর করছে।রাস্তার পাশের দোকান থেকে একটি পাউরুটির প্যাকেট কিনে এনে ছিঁড়ে কুকুরটি সামনে রাখতে গপাগপ খাওয়া শুরু করলো।

আমি কুকুরটির খাওয়া দেখে হালকা হেসে হাঁটা শুরু করে দিলাম।

-রুশা, এই যে রুশা হাসান?

ওমা, আমাকে আবার কে ডাকছে? চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে কাউকে দেখলাম না। আবারও আমার নাম ধরে ডাক দিতে দেখলাম আদিল স্যার আমায় ডাকছেন। উনি কার থেকে নামছেন হয়তো এইমাত্র এসেছেন। কার পাকিং লটে রেখে আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। এরপর, বললেন

-কেমন আছো,রুশা?

-আলহামদুলিল্লাহ,ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন, স্যার?

-এই তো ভালো। চলো হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি৷তা পড়াশোনার কি অবস্থা?

-মোটামুটি ভালো।

-ডাক্তারি পড়াশোনায় মোটামুটি দিয়ে কিছু হয় না বুঝলে। এখানে পড়া নিয়ে এবং নিজেকে নিয়ে সবসময় কনফিডেন্ট থাকতে হয় যে আমি পারবো এন্ড আই এম দি বেস্ট।

-জি, স্যার। খেয়াল রাখবো আর পড়াশোনা ঠিকভাবে করবো।

-এই তো একটা ভালো কথা বললে।রুশা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।

-জি বলুন, স্যার।

-আসলে, আমার এক ডাক্তার বন্ধু আছে চাইলে তুমি ওর কাছে থেকে পড়াশোনার ব্যাপারে হেল্প নিতে পারো?

-নো স্যার। থ্যাংক ইউ। আসলে আমাদের এলাকায় আমি কোচিং করছি আর আমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন যিনি আমার পড়াশোনায় অত্যাধিক পরিমাণে সাহায্যে করেন। তাই আমার আর হেল্পের প্রয়োজন নেই। যদি প্রয়োজন হয় আমি আপনাকে জানাবো এন্ড আই এম স্যরি, স্যার।

-ওয়াই, ইউ সে স্যরি?

-এই যে আপনার হেল্প নিতে চাইছি না।

-আরে বোকা মেয়ে, এই জন্য তুমি স্যরি বলছো!
বরং, আমি খুশি হয়েছি যে তুমি কোনো ভণিতা ছাড়া সত্য কথা বলেছো।যদি কোনোকিছুর প্রয়োজন হয় তবে আমাকে নয়তো সুলতানা ম্যামকে জানাবে, ঠিক আছে।

আমি মাথা নাড়িয়ে স্যারের কথায় সায় জানিয়ে হাঁটতে লাগলাম।। হাঁটতে হাঁটতে আমরা ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে পড়লাম।স্যার আমাকে বিদায় জানিয়ে উনার চেম্বারে চলে গেলেন। আর আমি ক্লাসরুমে প্রবেশ করলাম।

ওমা এরইমধ্যে কে যেন আমায় জড়িয়ে ধরলো। এমনভাবে চেপে ধরছিলো যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।
#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#পর্ব_১১
#Tahmina_Akther

ওমা,এরইমধ্যে কে যেন আমায় জড়িয়ে ধরলো। এমনভাবে চেপে ধরছিলো, যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।

-রুশা,কেমন আছিস,দোস্ত?তোকে একদিন না দেখে মনে হচ্ছে কতদিন দেখি না!

-আরে, ছাড় আমাকে;নাজ।যেভাবে চেপে ধরেছিস আরেকটু সময় গেলে আমি সোজা পটল তুলবো।

নাজ,আমাকে ছেড়ে দিলো। ওফ্ফ বাবা, এতক্ষণে নিশ্বাস প্রাণভরে নিশ্বাস নিলাম। রেগে নাজকে কিছু বলতে যাব তার আগে দেখলাম,ও আমার দিকে কিউট একটা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে।এভাবে, কেউ হাসিমাখা চেহারা নিয়ে তাকিয়ে থাকলে কিছু বলা যায়?

আমিও হালকা হেসে নাজকে জরিয়ে ধরে বললাম,

-নাজ,তুই আমার জীবনে না এলে বুঝতে পারতাম না, জীবনে একটা বন্ধু না থাকা মানে জীবন বৃথা। কখনো বদলে যাস না দোস্ত, নয়তো আমি আবারও ভেঙে পড়বো।

-আমি বদলে যাবো!এটা তোর মনে হয়?তাহলে, তুই ভুল ভাবছিস। বন্ধুত্বের হাত প্রথমে আমি বাড়িয়েছি। অতএব আমি কখনো এই হাত ছেড়ে যাবো না। তবে, একটা জিনিসের জন্য আমার মা’কে বকা দিতে ইচ্ছে করছে, জানিস?

-আন্টিকে বকা দিবি কেন? উনি আবার কি করলো?

-দেখ, আমার যদি একটা ভাই থাকতো তাহলে তোকে আমার ভাবি বানিয়ে সারাজীবনের জন্য তোর সাথে থাকতে পারতাম৷ কিন্তু, মা কি করলো?আমাকে ছেড়ে চলে গেলো, তাহলে আমার ভাই আসবে কোত্থেকে?

-তুই,যে অনেক বড় পাঁজি এটা জানিস?

-হুম, জানি তো।

বলে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো নাজ আর ওর হাসির সঙ্গে আমিও তাল মিলিয়ে হেসে দিলাম।

-অনেক তো হলো হাসাহাসি এবার নিজেদের জায়গায় গিয়ে বসো।

আদিল স্যারের গলা না! আমি আর নাজ পিছনে তাকিয়ে দেখি আদিল স্যার দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তারমানে, স্যার আমাদের জন্য ভিতরে আসতে পারছেন না!

-জি, স্যার।

বলে দুই বান্ধবী নিজেদের জায়গায় গিয়ে বসলাম। ক্লাসের কিছু স্টুডেন্ট আমাদের কান্ড দেখে হেসে উঠলো সাথে আদিল স্যার যোগ হলেন।লজ্জায় আর কারো দিকে মুখ তুলে তাকায়নি এই নাজের জন্য এমনটা হলো।

আদিল স্যার হাসি থামিয়ে মুখ গম্ভীর করে বললেন,

-তোমরা সবাই কেমন আছো?

-জী, স্যার আমরা সবাই ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

সব স্টুডেন্ট একসাথে বলে উঠলো।

-আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আজ থেকে আমি আর তোমাদের ক্লাস করাবো না।

-কিন্তু, কেন স্যার?

সবাই হতভম্ব এবং অবাক হয়ে গেলো আর রুশা ভাবছে এই জন্য কি স্যার আমাকে তার ফ্রেন্ডের কাছে পরার জন্য রেফার করতে চেয়েছেন?

-আসলে,আমাকে সরকারি বিসিএসের জন্য ২ বছর বাধ্যতামূলক রংপুরের একটি গ্রামে থাকতে হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি মেডিকেল কোর ক্যাপ্টেন হিসেবে পদায়ন হবার জন্য।
ইন্টার্নশিপের পর এভাবে ক্লাস করালে তো কিছু হবে না তাই এই সিদ্ধান্ত। আশা করছি তোমরা সবাই তোমাদের নতুন স্যারের সাথে আমার সাথে যেভাবে চলেছো ঠিক সেভাবে ফ্রি চলবে।

-স্যার, আপনি এভাবে হুট করে কেন চলে যাচ্ছেন?

রিধিমা হালকা কান্না স্বরে বললো। রিধিমার কান্ড দেখে নাজ ফিক করে হেসে ফেললো তবে সবার আড়ালে আর মনে মনে বলছে,

-দেখো কিভাবে ন্যাকা কান্না করছে! যেন স্যার ওকে সব জায়গায় বলে যাবে।

-আমি হুট করে কোথাও যাচ্ছি না।আগে থেকে সব তৈরি করা ছিলো আর আজ যাবার ডেট পড়লো। এই কথা জানানোর জন্য তোমাদের সকলকে আজ আসতে বলেছি কিন্তু মিসবাহ হয়তো আসেনি!
কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে, স্যরি।আবারোও দেখা হবে দু’বছর পর, ইনশাআল্লাহ। দশটায় আমার ট্রেন, অতএব চলি এখন।
সবাই ভালো থেকো, আল্লাহ হাফেজ।

আমরা সবাই দাঁড়িয়ে পড়লাম স্যারকে বিদায় জানানোর জন্য। স্যার ক্লাস রুমে থেকে বের হতে সকলে স্যারের পিছু পিছু বের হলাম।
বের হয়ে দেখলাম আমাদের সিনিয়র যারা আছেন তারা সকলে একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্যারকে বের হতে দেখে সকলে স্যারের দিকে এগিয়ে এসে নানান কথা বলতে লাগলো।
আমি বেশ অবাক হয়েছি, স্যারের এত জনপ্রিয়তা দেখে। কারণ, এত ইয়াং এইজে স্যার উনার স্টুডেন্টদের কাছে বেশ প্রিয়।

স্যার সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন কিন্তু হুট করে দাঁড়িয়ে পড়লেন। এরপরে, উল্টো ঘুরে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,

-ভালো থেকো রুশা।পড়াশোনা করে একজন বেস্ট শিশু বিশেষজ্ঞ হয়ে আমাদের সবাইকে তুমি তাক লাগিয়ে দিও।তোমার চোখে আজ যে স্বপ্ন আছে তা আমি, তোমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা সকলে তাদের স্বপ্ন বানিয়েছে আশা করি তুমি সকলের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপদান করবে।

স্যার চলে গেলেন। আর আমি স্যারের আদেশ বাণী গুলো আমার ছোট মাথায় সেভ করে রাখলাম।আদিল স্যার, এত বড় একজন ডক্টর কিন্তু মনে একফোঁটাও অহমিকা নেই। আমার মতো একজন স্যারের ফেভারিট স্টুডেন্ট ভাবতে অবাক লাগে!

স্যার, চলে যাওয়াতে কিছু সিনিয়র আপিরা তো চোখের পানি ফেলে একাকার করে ফেললো।

নাজ কৌতূহল দমাতে না পেরে এক সিনিয়র ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো,

-আচ্ছা, ভাইয়া। আমরা তো জানি স্যার খুবই রাগী কিন্তু আজকে যা দেখলাম তাতে মনে হলো স্যারের ফ্যানবেজ অনেক।কারণটা কি এত জনপ্রিয়তার?

-স্যার, বেশ কিছু দিন আগেও আমাদের কাছে রাগী স্যার হিসেবে পরিচিতি ছিলেন। কিন্তুবেশ মর্মাহত হয়েছিলাম আমরা সকলে।এরপরে, বুঝলাম আসলে স্যার আমাদের ভালোর জন্য একটু বকাঝকা করে।
তো যা বলছিলাম, উনার গত জন্মদিনের সেলেব্রিশন পার্টিতে আমরা সকলের রিকুয়েস্টে উনার জীবন সম্পর্কে আমাদের জানায়। ।

-কি,হয়েছিলো?

আমি প্রশ্ন করলাম। কারন,আমার মনে কৌতূহল জেগে গেলো স্যারের জীবন সম্পর্কে জানার জন্য।

-আসলে,স্যার একটি মেয়েকে ভালোবাসতো কিন্তু মেয়েটির অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে। তবুও স্যার এখনো উনাকে ভালোবাসে।

-উনার মতো ওয়েল সেটেলড পার্সন যদি ভালোবাসায় ব্যর্থ হয় তবে আমরা কি হবো?

নাজ ভাবুক স্বরে বলে উঠলো।

-আসলে,স্যার একতরফা ভালোবেসেছেন। মেয়েটিকে জানায় নি।

-ওকে ধন্যবাদ ভাইয়া। আসি আমরা।

বলে নাজ আমার হাত ধরে ক্লাস রুমে নিয়ে গেলো।ক্লাসে আসার পর দেখলাম অনেকেই নেই তাই সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়িতে চলে যাবো। না জানি কাজল আপুর এখন কি অবস্থা? যেই ভাবা সেই কাজ ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হতে যাবো তার আগে নাজ আমার হাত ধরে বললো,

-কি রে, কই যাচ্ছিস?

-বাড়িতে চলে যাচ্ছি, আজ মনে হয় না ক্লাস হবে। দেখছিস না বেশিরভাগ স্টুডেন্ট নেই। তাছাড়া, বাড়িতে কাজল আপুকে দেখার মতো কোনো মেয়েমানুষ নেই। তাই আমি চলে যাচ্ছি।

-চল, আমিও যাবো। আজ তোদের বাড়িতে।

-আচ্ছা, চল তবে।

দুই বান্ধবী রওনা হলাম কুঞ্জ বাড়ির উদ্দেশ্যে।

বাড়ির সামনে আসার পর রিকশা থামিয়ে নেমে পড়লাম। এরপর,ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম নাজকে নিয়ে। নাজ হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে,আর মনের সুখে গুনগুন করে গান গাইছে।

আমি ওর কান্ড দেখে হাসছি আর মনে মনে ভাবছি,

-একটা মানুষ নিজেকে ঠিক কতটুকু সুখি মনে করলে এই রকম হেসে খেলে দিন পাড় করতে পারে।মা নেই, বাবা সারাবছর পাড় করে দেন কেস সমাধান করতে করতে।নিজের পাশে কাউকে ছায়া হিসেবে পায় না নাজ।এই যে ওর সুখি দেখানো ভাবটা এটা কি আসলে সত্যি নাকি মিথ্যা!

বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করে ড্রইংরুমে এসে দেখলাম, কাজল আপু সোফায় শরীর এলিয়ে বসে আছে।উনার পাশে বসে আছে রায়হান আঙ্কেল ঠিক উনার সামনের সোফায় বসে আছে আয়াত ভাই।

ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে কাজল আপুর পায়ের কাছে বসে পড়লাম। নাজ, কাজল আপুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।হয়তো কিছু একটা ভাবছে!

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here