#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_১১
#নন্দিনী_চৌধুরী
২৩.
মেহেরাবখান মারা গেছেন আজকে এক সপ্তাহ।এক সপ্তাহে মেহের মুগ্ধ দুইজনেই অনেকটা চুপচাপ ছিলো।মেহের একটু বেশিই চুপচাপ ছিলো।তবুও নিজেকে শক্ত রেখে সবদিক সামলেগেছে।আজকে মুগ্ধকে কলেজে দিয়ে গেছে সে।মুগ্ধ চুপচাপ আসতে করে হেঁটে যাচ্ছে ক্লাস রুমে।ক্লাসে আসতেই সাদিয়া এসে তাকে জরিয়ে ধরলো।
সাদিয়া:মুলা কেমন আছোস?
মুগ্ধ:ভালো। তুই কেমন আছিস?
সাদিয়া:ভালো।চল বোস।
মুগ্ধকে নিয়ে সিটে বসলো সাদিয়া।মুগ্ধ মেহেরাব মারা যাওয়ার পরেরদিন সাদিয়াকে কল দিয়ে জানিয়েছিলো তার বাবা মারা গেছে।কিছুদিন সে কলেজে আসবেনা।আজকে প্রথম ক্লাস সাদাফের।সাদাফ ক্লাসে আসলো।ক্লাসে এসেই তার চোখ গেলো মুগ্ধের দিকে।সাদাফ একটা মুচকি হাসি দিয়ে ক্লাস শুরু করলো।ক্লাসে পড়ানোর ৫মিনিটের মাঝে প্রিন্সিপাল আসলেন।
প্রিন্সিপাল:মিস্টার সাদাফ আমাকে ৫মিনিট সময় দেওয়া যাবে?
সাদাফ:জি স্যার অবশ্যই।
প্রিন্সিপাল:আজকে আপনার ক্লাসে আরেকটি নতুন ছাত্রী জয়েন করছে।
সাসাফ:কে?
প্রিন্সিপাল:এইযে এই মেয়েটা।আসো মা ভিতরে আসো।
সাদাফ সহ সবাই তাকালো মুগ্ধতো তাকিয়ে অবাক হলো মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো,
“সায়মা!”
সায়মা ভিতরে ডুকলো।সায়মাকে দেখে সাদাফ অবাক হলো।প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে তাকিয়ে বলে,
সাদাফ:স্যার ইনিতো…
প্রিন্সিপাল:হ্যা এ হলো সায়মা ইসলাম।মেহেরাবের খানের মেয়ে।মেহেরাব খানকেতো চিনেন যিনি গত এক সপ্তাহ আগে মারা গেলেন।এ হচ্ছে তার ছোট মেয়ে।তার আরেক মেয়েও এই ক্লাসে আছে।মেহরুবা ইসলাম মুগ্ধ কই?
মুগ্ধ আসতে করে বলে উঠে,
মুগ্ধ:জি স্যার।
প্রিন্সিপাল:হ্যা এইতো।এই হলো দুইবোন।
সাদাফ:ওহ আচ্চা।[স্যার আপনি না বল্লেও আমি তা অনেক আগেই জানি।কিন্তু এই মেয়ে এখানে কেন?চোখমুখ দেখে মনেতো হচ্চেনা পড়ার জন্য এসেছে।তাহলে আসছে কি মুগ্ধের…..।]
প্রিন্সিপাল:ওকে আমি আসছি।আপনি ক্লাস কেরি ওন করেন।
প্রিন্সিপাল স্যার চলে গেলো।সাদাফ সায়মাকে সিটে গিয়ে বসতে বললো।সায়মা সিটে বসার সময় মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয়।সাদাফ ক্লাস করাচ্ছে আর সায়মার মুভমেন্ট দেখছে।ক্লাস শেষ হতেই সাদাফ চলে যায়।বাকি ক্লাস গুলো মুগ্ধ তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে আসে।সে সায়মার মুখোমুখি হতে চায়না।তাড়াহুড়ো করে বাসায় এসে পড়ে মুগ্ধ।বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো সে।ভালো লাগছেনা তার।সায়মা এই কলেজে কেন।কিছুই বুজতে পারছেনা সে।এদিকে সাদাফ কলেজের পর মুগ্ধকে খুজতেছে কিন্তু পাচ্ছেনা পরে সাদিয়ার থেকে জানতে পারে মুগ্ধ বাসায় চলে গেছে।সাদাফ ও তাই সাদিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।
সোফায় মাথায় মাথা নিচু করে বসে আছে আরিশ।হাতে তার একটা ফাইল।হ্যা আরিশের হাতে প্রোপার্টির ফাইল।মুগ্ধ তাকে যে প্রোপার্টি দিয়ে দিয়েছে সেই ফাইল এটা।এখানে খুব সুন্দর করে লেখা।আরিশের বাবা মুগ্ধকে যেই ৪০% সম্পত্তি দিয়েছিলো।তা মুগ্ধ সজ্ঞানে নিজ ইচ্ছায় আরিশের নামে করে দিয়েছে।এখন আরিশ এই সব সম্পত্তির মালিক।আজকে সকালেই ফাইলটা হাতে এসেছে তার।আরিশ মাথাত দিয়ে বসে আছে।
সম্পত্তি যদি মুগ্ধ আমার নামেই করে দেয়। তাহলে ও আমাকে মারতে কেন চাইবে।আর ডিভোর্স এর পর তো এই সম্পত্তি ওর নিয়ে যাওয়ার কথা।তানা ও আমাকে এই সম্পত্তি দিয়েদিয়েছে।যেই সম্পত্তির জন্য ও আমাকে মারতে চাইলো।সেই সম্পত্তি ফেরোত দিয়ে দিলো কিন্তু কেন?
আরিশ পাশে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে ওর বাবার উকিলকে কল করলো।দুইবার রিং হবার পর কল রিসিভ হলো।
আরিশ:আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
উকিল সাহেব:ওয়ালাইকুমুস সালাম।কেমন আছো আরিশ বাবা?
আরিশ:আলহামদুলিল্লাহ।আপনি?
উকিল সাহেব:ভালো।বউমা কেমন আছে?
আরিশ:জ.জি ভালো।আংকেল আপনার কাছে কিছু কথা জানার জন্য কলদিয়েছিলাম।
উকিল সাহেব:হ্যা বলো কি কথা।
আরিশ:আচ্ছা আংকেল বাবা যে একটা উইল করেছিলেন যেখানে তিনি বলেছিলেন আমার ওয়াইফ সম্পত্তির ৪০%পাবে।আচ্ছা কোনোভাবে যদি আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায় তখন কি সেই সম্পত্তি নিতে পাড়বে বা আমাকে দিয়ে দিতে পারবে?
উকিল সাহেব:যদি তোমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।তাহলে আইনোতো প্রোপার্টি সে নিতে পারবে আবার চাইলে নাও নিতে পারে কিন্তু তোমার নামে করে দিলে সেই প্রসেস হতে অনেক সময় লাগবে।কিন্তু যদি ডিভোর্স না হয় তোমরা একসাথে তাহলে তখন তোমার নামে করে দিতে চাইলে সেইটা অনেক তাড়াতাড়ি হয়।কিন্তু তুমি এটা জানতে চাচ্ছো কেন?
আরিশ:আসলে আমার সাথে মুগ্ধের ডিভোর্স হয়ে গেছে।এখন আমার কাছে ফাইল এসেছে যেখানে লেখা মুগ্ধ ওর ভাগের প্রোপার্টি আমাকে দিয়ে দিয়েছে।এখন আপনি বলছেন ডিভোর্স এর পর এই প্রসেস হতে সময় লাগে কিন্তু আমার তো এক মাসের ভিতরেই এসে পড়েছে।মুগ্ধ কি আপনার কাছেগেছিলো এই কাজের জন্য?
উকিল সাহেব:না তবে মুগ্ধকে তুমি ডিভোর্স কেন দিলে।মুগ্ধ আমার কাছে এসেছিলো জুলাই মাসে।আমাকে বলেছিলো ওর ভাগেরটা তোমার নামে করে দিতে আমি তখন না করেছিলাম।আমার মনে হয় ও অন্য কারো মাধ্যমে করেছে।তুমি একটা কাজ করো ফাইলটার দ্বিতীয় পেজে দেখো ইসু তারিখ দেওয়া আছে আর রিলিস তারিখ দেওয়া আছে।সেই তারিখ দেখো কোন মাসের কয়তারিখ।
আরিশ:জি দেখছি।
আরিশ ফাইল চ্যাক করে উকিল সাহেবকে বলে,
আরিশ:এখানে ইসু ডেট দেওয়া জুলাইয়ের ২২তারিখ আর রিলিস ডেট আগষ্টের ৫ তারিখ।
উকিল সাহেব:তোমাদের ডিভোর্স হয়েছে কবে?
আরিশ:আগষ্টের ৭তারিখ।
উকিল:মানে এইটা তোমাদের ডিভোর্সের আগেই মুগ্ধ করেছে।ডিভোর্সের আগেই মুগ্ধ সম্পত্তি তোমাকে দিয়েদিয়েছে।কিন্ত তুমি ফাইল পেয়েছো আজকে।
আরিশ:কিহ!
উকিল:হুম।এখন আমাকে বলো তুমি মুগ্ধকে কেন ছাড়লে এতো ভালো লক্ষ্যি মেয়েটাকে তুমি ছাড়লে।
আরিশ:সে অনেক বড় কাহীনী পরে জানাচ্ছি আপনাকে।
বলেই কল কেটে দিলো আরিশ।সব উলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে তার।মুগ্ধ যদি ডিভোর্সের আগে সব সম্পত্তি তার নামেই করে দেয় তাহলে তাকে মারতে চাইলো কেন।আর যদি তাকে মারতেই চাইলো তাহলে সম্পত্তি তাকে দিলো কেন।আচ্ছা কোথাও এমন নয়তো যে কেউ মুগ্ধকে ফাঁসিয়ে দিলো।এমন যদি হয় তাহলেতো আরিশ জীবনের সব থেকে বড় ভুল করে ফেললো।না তাকে জানতে হবে যে আসলে ব্যাপরটা কি।হ্যা তাকে জানতে হবে।
সাদাফ দাঁড়িয়ে আছে তার রুমে বারান্দায়।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে তার।আজকে সে সব সত্যি জানতে পারেগেছে।কে তার মেহুরাণী আর তার সাথে এতো নোংড়া একটা চাল চেলেছে।সাদাফ হাত মুষ্টি বদ্ধো করে আছে।
সাদাফ:এতো বড় একটা খেলা খেলেগেছো তুমি।এভার আমি তোমার সাথে খেলাটা খেলবো।ঠিক সেইভাবেই যেভাবে তুমি আমার থেকে আমার মেহুরানীকে কেড়ে নিয়েছিলে।আমি তোমার থেকে তোমার নিজেকে কেড়ে নেবো।মিস সায়মা তৈরি হয়ে যাও।নিজের পাপের হিসাব দেওয়ার জন্য।এই সাদমান হাসান সাদাফ তোমাক্র ভোজাবে তার সাথে চিট করার শাস্তি ঠিক কি।আমি এখন বুজতে পারছি তুমি কেন কলেজে এসেছো।তোমার ভয় এটাই আমি সব জেনেযাই কিনা তাইতো।এভার দেখো তোমাকে কিভাবে আমি সায়েস্তা করি।
২৪.
মেহের আর রুহি গেছে ডাক্তারের কাছে।মুগ্ধ আজকে বাসায় একা।মেহের বলেছিলো সাথে যেতে কিন্তু মুগ্ধ যেতে চায়নি।মুগ্ধ নিজের রুমে বসে আছে।তখন ওর ফোনে কল আসলো।মুগ্ধ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সাদাফ লেখা।সাদাফ নামটা দেখেই ভয় পেলো।তাও ফোনটা রিসিভ করলো।
মুগ্ধ:হ.হ্যালো।
সাদাফ:মিস মুগ্ধ!
মুগ্ধ সাদাফের ডাকটা শুনে থামকে গেলো।এক আলাদা শীহরণ কাজ করছে তার ভিতর।নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
মুগ্ধ:জ.জি স্যার।
সাদাফ:আগামিকাল আমাদের বাসায় আসবেন।
মুগ্ধ:ক.কেন স্যার।
সাদাফ:আগে তোতলানো বন্ধ করেন।
মুগ্ধ:জি।
সাদাফ:আগামিকাল সাদিয়ার এংগেজমেন্ট।মেহের ভাইয়াকে বাবা নিজে দাওয়াত দিছে অফিসে।আর আমি আপনাকে দিলাম।
মুগ্ধ:এটাতো সাদিয়া বললেই হতো।
সাদাফ:সাদিয়া আপনাকে বলা আর আমি বলা একই ।বিকালে সাদিয়া আপনাদের বাসায় যাবে ওর সাথে আসবেন।মার্কেটে যাবে সাদিয়া।
মুগ্ধ:জি আচ্ছা।
সাদাফ:গুড।
বলেই কল কেটে দিলো সাদাফ।মেয়েটা ওকে এতো ভয় পায় কেন আল্লাহ জানে।যাইহোক ভয় পেলেও বউটা তার কিউট লাগে।
সাদাফ:আর কিছুদিন মেহুরানী।এরপর তোমাকে আমার ঘরের রানী করে নিয়ে আসবো।তোমার সব কষ্ট মুছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।
বিকালে সাদিয়া, মুগ্ধ সাদাফ মিলে শপিং করতে আসছে।সাদিয়াকে একটা গোলাপি কালারের লেহেংগা কিনে দিছে।সাদাফ মুগ্ধের জন্য একটা লেমন কালার লেহেংগা নিয়েছে কিন্তু সেটা সাদিয়ার হাত দিয়ে দিয়েছে যাতে মুগ্ধ না বুজে এটা সাদাফ দিয়েছে।আরো কিছু জিনিশ তারা কিনাকাটা করে।রাত ৮টায় বাসায় আসলো।
পরেরদিন,,,,
মুগ্ধ রেডি হচ্ছে।লেমন কালার লেহেংগাটা বেশ ভালোই ফুটেছে মুগ্ধের গায়ে।সাথে হালকা সাজ।চুল গুলো কার্ল করে এক সাইডে দিয়েছে।রেডি হয়ে মুগ্ধরা বেরিয়ে পরলো সাদাফদের বাসার উদ্দ্যেশে।সাদাফদের বাসায় আসার পর সাদাফের বাবা মেহেরদের সহরে গ্রহণ করলেন।সাদাফের বাবা মেহেরের সাথে কথা বলছে সাদাফের মা রুহির সাথে।মুগ্ধ সাদিয়ার কাছে যাওয়ার জন্য সাদিয়া রুমে গেলো আসার আগে সাদিয়ার মায়ের থেকে জেনে নিলো কোন রুমে সাদিয়া থাকে।মুগ্ধ সাদিয়ার রুমে এসে দেখে সাদিয়াকে রেডি করাচ্ছে।মুগ্ধ গিয়ে সাদিয়াকে জরিয়ে ধরলো।
মুগ্ধ:সাদু পাদু তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে।
সাদিয়া:তোকেও সেই লাগছেরে মূলা।ভাইয়ার চয়েজ আছে বলতে হবে।
মুগ্ধ:কি বললি?
সাদিয়া:এই যা কি বললাম এটা।আরে কিছুনা বললাম সুন্দর লাগছে তোকে।
মুগ্ধ:আচ্ছা তুই থাক আমি আসছি।
মুগ্ধ বেরিয়ে গেলো সাদিয়ার রুম থেকে।মুগ্ধ বেরোনোর সময় দেখলো পাশে রুমের দরজার সাদাফ দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।সাদাফ যখন ফোনে কথা বলে তখন হাত নারে এটা মুগ্ধের খুব ভালো লাগে।তাছাড়া সাদাফের হেয়ার স্টাইল্টা মুগ্ধের বেশ সুন্দর লাগে।মুগ্ধ একটু তাকিয়ে চোখ নামিয়ে চলে আসে।সাদাফ ফোনে কথা বলে নিচে এসে দেখে মুগ্ধ সোফায় বসে আছে। হেসে হেসে কথা বলছে সাদাফের মায়ের সাথে।সাদাফের ভাবনাত চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে মুগ্ধকে।আনমেনেই বলে উঠে,
“আমি বার বার শতবার বহুবার তোমার প্রেমে পরে যাই প্রিয় তোমার অই হাসির প্রেমে।বার বার খুন হতে চাই তোমার ভালোবাসায়।”
#শেষ_থেকে_শুরু
#বোনাস
#নন্দিনী_চৌধুরী
২৫.
সাদিয়া আর রাজীবের এংগেজমেন্ট।সাদিয়া আর রাজীব দুই বছর রিলেশনে ছিলো।রাজীব একজন সিনিওর পুলিশ অফিসার।চাকরি পাওয়ার পরপরেই সাদিয়ার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।সাদিয়ার ফ্যামিলির সবাইও রাজী হয়ে যায়।সাদিয়া অবশেষে তার ভালোবাসাকে পাচ্ছে।
সাদাফ আড়ালে আড়ালে মুগ্ধকে দেখে যাচ্ছে।যেনো হাজার বছর পর আজ দেখছে সে মুগ্ধকে।মুগ্ধ সাদিয়ার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে মাঝে মাঝে একটু ছবি তুলছে।সাদাফ ৫০টার বেশি ছবি উঠিয়ে রেখেছে ফোনে মুগ্ধের।সাদাফের এক বন্ধু সাদাফের কাছে এসে ওর হাতে একটা গিটার দিয়ে বললো,
সাদাফ:দোস্ত আমাদের আজকে একটা গান শোনা তোর বোনের বিয়ে উপল্লখ্যে।
সাদিয়া:হ্যা ভাইয়া শোনা না।
সাফাফ:আচ্ছা
সাদাফ:”তুমি না ডাকলে আসবোনা”
“কাছে না এসে ভালোবাসবোনা”
“দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়”
“নাকি চলে যাওয়ার বাহনা বানায়”
“দুরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পপটা পুরোনো
“ডুবে ডুবে ভালোবাসি তুমি না
বাসলেও আমি বাসি”
পুরা গানটা সাদাফ মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে গাইলো।সাদাফের গানের মাঝে একদম হারিয়েগেছিলো মুগ্ধ।সাদাফের গানের গলা খুব ভালোলেগেছে মুগ্ধের।সাদাফ গান শেষে উঠে চলে যায়।মুগ্ধ সাদাফের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া করে নিলো।সাদিয়া আজকে জোর করে মুগ্ধকে রেখে দিয়েছে তাদের বাসায়।মেহের প্রথমে রাজী হচ্ছিলোনা।পরে সাদাফ আসস্ত করলো যে মুগ্ধের কোনো সমস্যা হবেনা।মেহেররা চলে যাওয়ার পর।সাদিয়া মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে নেয়।সাদিয়া মুগ্ধকে একটা সুতির জামা দিলো পরতে।ফ্রেশ হয়ে মুগ্ধ সেটা পরে নেয়।অনেক ক্লান্ত থাকায় সাদিয়া বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে যায়।কিন্তু মুগ্ধের ঘুম আসছেনা।এটা তার একটা সমস্যা নতুন জায়গায় ঘুমাতে পারেনা।তাই মুগ্ধ আসতে করে উঠে যায় বিছানা থেকে।রুম থেকে বেরিয়ে আসে।এই ২য় তোলায় দুইটা রুম সামনে একটা বড় বেলকোনি।মুগ্ধ আসতে করে বেলকোনিতে যায়।বেলকোনিতে চারটা সোফা।অনেকগুলা ফুলের গাছ মরিচ বাতি লাগানো নানা রংএর।মুগ্ধ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।ভালোই লাগছে তার এখানে।তখন পিছন থেকে সাদাফ বলে উঠে,
সাদাফ:”এতো রাতে এখানে কি করছেন মিস মেহুরানী।”
সাদাফের হঠ্যাৎ কথায় চমকে যায় মুগ্ধ।তাড়াতাড়ি পিছনে ফিরে দেখে সাদাফ দুইহাত ভাজ করে দাঁড়ানো।সাদাফের পরনে একটা ব্লাক গেঞ্জি আর টাউজার।সাদাফকে দেখে মুগ্ধ মাথা নিচু করে বলে,
মুগ্ধ:জ.জি.ঘ.ঘুম আ.আসছিলোনা ত.তাই এখানে আসছিলাম।
সাদাফ:আ.আপনি ত.তোতলানো বন্ধ করে তারপর কথা বলেন।
মুগ্ধ:জ.জি।
সাদাফ:আমি বাঘ না ভাল্লুক ও না।তাই নরমাল হোন আগে।
মুগ্ধ:জি
সাদাফ মুগ্ধকে ক্রোস করে বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
সাদাফ:আচ্ছা মিস মেহুরানী আপনি কি কোনোদিন কারো চোখ থেকে প্রেমে পড়েছেন?
সাদাফের কথাটা শুনে চমকে যায় মুগ্ধ।প্রেম কি জিনিশ সেটা সে কোনোদিন জেনেনি।যখন কৈশোরে পা দিয়েছে তখনই ছোট মা বিয়ে দিয়ে দিলো আরিশের সাথে।বিয়ের পর আরিশের সাথে মানিয়ে নিতে অনেক সময় লেগেছিলো।আরিশের কেয়ার দেখে সে তার ছোট মনের এককোণায় জায়গা দিয়েছিলো আরিশকে কিন্তু সে ঠকালো তাকে।ভালোবায়ায়া জিনিশটা বুঝার আগেই ভালোবাসা জিনিশটার প্রতি অবিশ্বাস এসেগেছে তার।
মুগ্ধ আসতে করে উত্তর দিলো,
মুগ্ধ:নাহ্।
সাদাফ:হুম পিচ্চি মানুষ কেম্নে প্রেমে পড়বেন বলেন।আমি পড়েছি একটা ছোট পরীর চোখের প্রেমে।
মুগ্ধ:তাই কিভাবে।
সাদাফ:আমি যখন ভার্সিটতে তখন আমাদের ভার্সিটির সামনে একটা গার্লস স্কুল ছিলো।সেখানে অনেক মেয়েরা পড়তো।আমি কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে সেভাবে তাকাতাম না।কিন্তু একদিন একটা মেয়ের সাথে আসার পথে ধাক্কা লাগে।মেয়েটা সম্ভবত খুব দুর্বল ছিলো তাই আসতে ধাক্কাও পরে যায়।আমার অপরাধ বোধ কাজ করায় তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।সেও আমার হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো।তার সেই মায়াবি চোখ দুটো দিয়ে একটু সময় আমার দিকে তাকিয়ে ছুটে চলে যায় স্কুলে।মেয়েটার মুখ স্কাফ দিয়ে বাধা তাই মুখ দেখতে পাইনি।শুধু চোখ দুটো দেখেছিলাম।আর সেই চোখ দুটোর প্রেমেই আমি পড়েযাই।
মুগ্ধ:তারপর তাকে বলেদিয়েছেন মনের কথা?
সাদাফ:নাহ্ বলা হয়নি তাকে মনের কথা তার আগে তাকে হারিয়ে ফেলেছি।
মুগ্ধ:অহ।
সাদাফ:হুম।জানেন মিস মেহুরানী এই দুনিয়াটা গোল। আমার বিশ্বাস একদিন তার সাথে আমার দেখা হবে। আর আমার মনের কথা আমি তাকে জানাবো।
মুগ্ধ:হ্যা নিশ্চই।আচ্ছা আমি এখন যাই।কাল সকালে আবার ক্লাস আছে।
বলেই মুগ্ধ রুমে চলে যায়।সাদাফ তখনো রেলিং ধরে বাহিরে তাকানো।
“ঠকায় একজন তবে বিশ্বাস উঠে যায় সবার থেকে।আমি জানি মুগ্ধ তুমিও সেই অবস্থায় আছো।কিন্তু আমি তোমাকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখাবো।যেখানে তোমার সব শেষ সেখান থেকে একটা নতুন শুরু করবে শেষ থেকে শুরু করবে।”
সাদাফ আপনমনে কথা গুলো বলে নিজের রুমে চলে আসলো।দুইজন দুই প্রান্তে একজন ভালোবাসার জন্য মরিয়া আরেকজন জীবন সামনে নেওয়ার জন্য।
সকালে,,,,
সাদাফ,মুগ্ধ,সাদিয়া তিনজন কলেজে চলে আসলো।সাদিয়া আর মুগ্ধকে ক্লাসে পাঠিয়ে সাদার টিচার রুমে চলে আসলো।ক্লাসে আসতেই মুগ্ধ দেখলো সায়মা আর আরো কিছু মেয়ে একসাথে বসে কথা বলছে।মুগ্ধ তাদের পাত্তা না দিয়ে সাদিয়ার সাথে অন্য এক বেঞ্চে গিয়ে বসলো।কিছুক্ষনের মধ্য অই মেয়েগুলোর ভিতর থেকে একটা মেয়ে এসে মুগ্ধের সামনে দাঁড়ালো।
মেয়েটা:মুগ্ধ আমি শুনলাম তুমি নাকি ডিভোর্সি।
মেয়েটার কথা শুনে চমকে যায় মুগ্ধ তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,
মুগ্ধঃমানে কি বলছো এগুলা?
মেয়েটাঃঢং করোনাতো জেনো ভাজা মাছ উলটে খেতে পারোনা।সব শুনেছি তোমার ব্যাপারে।হুহ তুমি ডিভোর্সি। তোমার স্বামী তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে।তাইতো বলি আমাদের থেকে তোমাকে অনেক বড় বড় লাগে।কিন্তু তুমি কলেজ ফরমে অবিবাহিত লিখেছো কেন।অহ আচ্ছা বুজেছি নিশ্চইন কলেজে কোনো ছেলে পটানোর জন্য রাইট।
মুগ্ধ মেয়েটার কথা শুনে এভার রেগে গেলো উঠেই মেয়েটার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দিলো।তারপর চিৎকার করে বলতে লাগলো,
মুগ্ধঃমাইন্ড ইউর ল্যাংগোয়েজ।কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা কি শেখানো হয়নি তোমাকে।দেখেতো ভালো ঘরের মনে হয় কিন্তু ব্যবহারতো রাস্তার মেয়েদের মতো।লিসেন হ্যা আমি একজন ডিভোর্সি। তাতে কোন মহাভারত অসুদ্ধ হয়েছে।আমি ডিভোর্সি তাতে তোমাদের কি সমস্যা তোমরা কি আমাকে এক বেলা এসে খাবার দিচ্ছো।নাকি আমাকে এসে শান্তনা দিচ্ছো।নাকি আমি তোমাদের কোনো পাকাধানে মই দিয়েছি।আরে ডিভোর্সি বলে যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে।শুনো মেয়ে বাংলাদেশে গড়ে হিসাব করলে প্রতিদিন ৩০টার বেশি ডিভোর্স হয়।সেই সবগুলা ডিভোর্সে শুধু মেয়েটার দোষ থাকেনা।ছেলেদের ও থাকে।মেয়েদের চেয়ে একটা ছেলে একটা সম্পর্ক অনায়াসে ভেংগে ফেলে।জাস্ট মোহে পরে ভুলে যায় তার যে একটা স্ত্রী আছে।একটা পুরুষ প্রথমে হয় ছেলে তারপর হয় স্বামী তারপর হয় বাবা।এই ভুমিকা গুলো পালন করা এতোটা সহজ না তেমনি একটা মেয়ে প্রথম মেয়ে তারপর স্ত্রী তারপর মা হয়।এই দায়িত্ব পালন করে একটা সম্পর্ক মজবুত হয়।কিন্তু একটা পুরুষ সে কি করে একটা পরোনাড়ীর পাল্লায় পরে নিজের এই দায়িত্ব গুলা ভুলে যায়।জরিয়ে যায় পরোকীয়ায়।তেমনি একটা নারীয়ও জরিয়ে যায়।এক পর্যায় ডিভোর্স হলে দোষ শুধু মেয়েদের।মেয়ে স্বামীকে সুখ দিতে পারেনি,চোখে চোখে রাখতে পারেনি আঁচলে বেধে রাখতে পারেনি তাই আজ ছেড়ে গেলো।এখন বলোতো একটা বিয়ে মানে কি শুধুই শারীরিক চাহিদা এটা পেলেই কি সংসার একদম সুখের হয়ে গেলো।না কোনোদিন না বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক হারাম কে হালাল করে বিয়ে।বিয়ের সম্পর্ক টা মজবুত থাকে বিশ্বাস,ভরসা,আস্থা,পাশে থাকে এই সব প্রতিশ্রুতি নিয়ে।তাহলে কেন বিয়ে করে স্বামীকে আচঁলে বেঁধে রাখবো চোখে চোখে রাখবো।আমি তাকে বিশ্বাস করলে আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার দায়িত্ব তার তাই না।কিন্তু না রাখেনি।এইযে তুমি বলছো কলেজের ফরমে কেন আমি ডিভোর্স তা লেখিনি।শোনো কোনো আইনে এটা লেখা নেই যে ডিভোর্সি হলে তা সব জায়গায় ঢোল বাজিয়ে বলতে হবে।আর জানি কি বলছিলে অন্য ছেলে পটাবো শুনো আমি তাদের মতোনা যারা ডিভোর্সের চারদিনের মাথায় অন্য কাউকে বিয়ে করবো।সো আশা করি নেক্সট টাইম বুঝে শুনে কথা বলবা।আদার ওয়াইজ আমি প্রিন্সিপালকে জানাবো।
কথাগুলো বলে মুগ্ধ ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসলো।আর মেয়েটা মাথা নিচু করে লজ্জায় দাঁড়িয়ে রইলো।
সাদাফ ক্লাসে এসে দেখে মুগ্ধ নেই।সবাইকে এরকম দেখে সাদাফ বলে,
ক্লাসে কি হয়েছে এরকম থমথমে কেন।আর মিস মুগ্ধ কোথায়?
সবাই চুপ করে আছে।সাদাফ তাই সাদিয়াকে জিজ্ঞেশ করলো,
সাদাফঃমিস সাদিয়া কি হয়েছে ক্লাসে?
সাদিয়া শুরু থেকে শেষ সব বলে দিলো।সব শুনে সাদাফের খুব রাগ লাগছে।বেশ ভালোই বুজতে পারছে এগুলা সায়মার কাজ তবুও নিজেকে সামলে বলে,
আজকে যে ঘটেছে সেটা জেনো আর না ঘটে।তাহলে নেক্সট টাইম কলেজ থেকে আউট করে দেওয়া হবে।কারো পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কেউ কথা বলবেন না।
সাদাফ কোনো রকম ক্লাস শেষ করে মুগ্ধকে খুঁজতে বেরিয়ে গেলো।মুগ্ধের ফোন ওফ।সাদাফের খুব চিন্তা হচ্ছে।সাদাফ তাই মেহেরকে কল লাগায়।মেহেরতো কথা শুনে পাগল প্রায় বাসায় কল দিয়ে জানতে পারলো মুগ্ধ বাসাও যায়নি।তাহলে মুগ্ধ গেলো কোথায়?
মুগ্ধ আজকে মায়ের কবরের এখানে এসেছে।মায়ের কবরটা খান বাড়ির অপর পাসের সাইডে দেওয়া এখানে শুধুই মায়ের কবর আর বাবার কবর দেওয়া।মায়ের কবরের কাছে এসে মাথা রেখে কাঁদছে। ছোট বেলায় এভাবেই কাঁদতো মুগ্ধ।আজ মাকে খুব মনে পড়ছে।
মুগ্ধঃকেন চলে গেলে মা কেন চলে গেলে।আমি যে এখন কারো কোলে মাথা রেখে কাঁদতে পারিনা।আমাকে যে কেউ এখন আর তোমার মতো আদর করেনা।আজ আমি ডিভোর্সি বলে সবাই যা ইচ্ছা বলে।জানো মা ভাইয়া আছে বলেই আজ বেঁচে আছি নাহলে অনেক আগেই চলে যেতাম তোমার কাছে।আর নিতে পারছিনা এসব।তবুও আমি লড়ে যাচ্ছি রোজ লড়ে যাচ্ছি।ক্লান্ত হয়ে গেছি লড়তে লড়তে।সেই ছোট বেলা থেকে লড়াই করে আসছি।আমার সাথে কেন হয় এমন।
#চলবে
আজকে আমি খুশি কারণ আম্মু আমাকে নতুন ফোন দিয়েছে।তাই এতো খুশি।বাবা নেই আমার বাবার পর মায়ের কাছে এই ফোনের আবদার করেছিলাম।আজকে আম্মু সেটা কিনে দিয়েছে।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
#চলবে
🙆♀️আজকে বোনাস দিমু।আজকে আমি অনেক খুশি।তাই খুশির ঠেলায় লেখতে পারিনি বেশি।তাই রাতে আরেকটা পার্ট দিমু।প্লিজ রাক কইরেন না।ভুল ত্রুটি মাফ কইরেন।