শেষ_থেকে_শুরু পর্ব ১২+১৩

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_১২
#নন্দিনী_চৌধুরী

২৬.
সায়মা মুগ্ধের কলেজে এসেছে আজকে এক সপ্তাহ হয়েছে।এই একসপ্তাহ সাদাফ সায়মার থেকে মুগ্ধকে অনেক আগলে রেখেছে।ক্লাসে সাদাফ সব টিচারকে বলে দিয়েছে যেনো সায়মার উপর নজর রাখে।সাথে সাদিয়াতো আছেই দেখার জন্য।সাদাফ কোনোভাবেই চায়না সায়মা বুজতে পারুম সাদাফ সব জেনে গেছে।

মুগ্ধ মেহের টেবিলে বসে নাস্তা করছে। সেদিন মুগ্ধকে খুজতে খুজতে মেহের মায়ের কবরের অখানে গিয়ে দেখে মুগ্ধ সেন্সলেস হয়ে আছে।মেহের ওকে বাসায় নিয়ে আসে ডাক্তার দেখায়।ডাক্তার জানায় অতিরিক্ত কান্না করার কারনে সেন্সলেস হয়ে গেছে।সাদাফ তো পাগলের মতো ছুটে আসছিলো মুগ্ধকে দেখার জন্য।

মেহের মুগ্ধ খাচ্ছে তখন মেহেরের ফোনে একটা কল আসে মেহের ফোন রিরিভ করে।

মেহেরঃহ্যালো বলো।
………….
মেহেরঃএটাতো খুব খুশির কথা।এতোদিনে আমার মনের ইচ্ছা সত্যি হলো।এটাই চেয়েছিলাম আমি।আচ্ছা আমি দেখছি দাড়াও।

মেহের কল রেখে উঠে টিভি অন করলো।টিভিতে সব চ্যানেল নিউজে ব্রেকিং নিউজ উঠেছে।

ব্রেকিং নিউজ শহরের একজন সুনামধন্য বিজনেস গ্রুপ ARS এর মালিক আরিশ ইসলাম একজন প্রতারক।প্রতারনা করে তার বাবা এই ব্যবসা শুরু করেছিলো সেও প্রতারনা করে গেছে সব ব্যবসায়িদের সাথে।ভালো প্রডাক্ট এর জায়গায় অসাধু খারাপ প্রডাক্ট সেল করতেন তারা।টপ বিজনেস টাইপুন আরিয়ান গ্রুপ”স ওফ কম্পানির মালিক আরিয়ান ইসলাম মেহের এই ব্যাপারটার তদন্ত করে নিশ্চিত হয়ে পুলিশকে জানান।পুলিশ তাদের অফিস ফ্যাক্টোরি তালাস করে অনেক পচা অসাধু প্রডাক্ট পান।এখন পুলিশ মিস্টার আরিশকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছেন।এছাড়াও প্রায় ১০লাখ টাকা তারা আত্তসাৎ করেছেন এই ভুয়া প্রডাক্ট সেল করে।

খবর শুনে খাওয়া অফ করে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ।আরিশকে হাতকোরা পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।মেহের বাকা হাসছে এসব দেখে।

রুহি:একি ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
মেহের:হুম অসাধু কাজ করলে পুলিশ কি এসে জরিয়ে ধরবে নাকি এভাবেই হাতকোরা পরিয়ে নিয়ে যাবে।
মুগ্ধ:এটা হতে পারেনা।ভাইয়া আমি জানি আরিশ কোনো অসাধু কাজ করেনা।এটা কি করে হতে পারে।
মেহের:অনেক কিছুই তো তুই জানতি তাইনা।কই সব কি তোর জানা মতো হয়েছে হয়নি তাহলে চুপ করে দেখ কি হচ্ছে।
মুগ্ধ জানে এটা মিথ্যা এটা হতেই পারেনা আরিশ অসাধু কাজ করেনা।

আরিশকে পুলিশ স্টেশনে আনা হয়েছে।সারারাস্তা আরিশ চুপ করে ছিলো।বলার মতো কিছু নেই তার।সে কাকে বলবে যে সে আসলে এসব করেনি।তার অফিসের সব দায়িত্ব সে ম্যানেজারের হাতে দিয়েছিলো।তাহলে এসব কি করে হলো সে কিভাবে জানবে।সায়মা সালমা আসছে আরিশকে ছাড়ানোর জন্য কিন্তু জামিন হবে না জানিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

মেহের অফিসের চেয়ারে বসে হাঁসছে আর বলছে,

কেমন লাগছে আরিশ।সবার সামলে অপমানিতো হতে আজ সব মিডিয়া টিভি নিউজে তুই।তুই আমার বোনকে কাঁদিয়েছিস।ওকে অপমান করেছিস।তোর জন্য বোনটা আমার মরতে বসেছিলো।ওর চোখের এক একটা পানির দাম তোর চোখের পানি ঝরিয়ে আমি নেবো বলেছিলাম না এইতো শুরু।পথের ফকির হয়েছিস এবার হবি একদম একা।কেউ থাকবেনা তোর।তোর মিসেসে হিসাব তো নেবে সাদাফ আর আমি নেবো তোর হিসাব।এক একটা হিসাব দিবি তুই আর দেবে মিসের সালমা।জীবন বিষিয়ে দেবো আমি তার।যেই সম্পত্তির জন্য এতো কিছু আমার মাকে মারলো সেই সম্পত্তি আমি ওনাকে পেতে দেবোনা।বেঁচে থেকেও উনি মরার জন্য আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চাইবে।যতটা কষ্ট আমি পেয়েছি আমার বোন পেয়েছে তার দশগুন বেশি কষ্ট ফেরত দেবো।এটা আমার চ্যালেঞ্জ আর প্রমিস।

সাদাফ তার এক ইনফোর্মারের সাহায্যে জানতে পারে যে দুই বছর আগে সায়মা তার সাথে মুগ্ধ সেজে অভিনয় করেছে।সাদাফ যখন মুগ্ধকে দেখে সেদিনের পর প্রায় মুগ্ধকে দেখতো কিন্তু মুগ্ধের মুখ দেখতোনা।কারন মুগ্ধ মুখ ডেকে আসতো।এরপর একদিন সাদাফ ওর মনের কথা জানাবে বলে ঠিক করে।একটা চিঠি লেখে দেয় অর বন্ধুর কাছে এবং দেখিয়ে দেয় কোন মেয়েকে দিতে হবে কিন্তু ওর বন্ধু ভুল করে চিঠি দিয়ে দেয় সায়মাকে।এরপর সায়মা মুগ্ধ সেজে সাদাফের সাথে অভিনয় করে।কিন্তু এসব কেন করেছে তাতো শুধু সায়মাই বলবে।সাদাফ সব জানার পর সায়মাকে কলেজে দেখে মেহেরকে সব জানায় এবং এটাও বলে মুগ্ধের জন্য গার্ড বারিয়ে দিতে।মেহের সব জানার পর।চারটা গার্ড দিয়েছে কলেজে।তবে তারা পরিচয় লুকিয়ে ক্লাস স্টুডেন্ট সেজে মুগ্ধের উপর নজর রাখে।সাদাফ আর মেহেরের প্ল্যানিং মতোই সব হচ্ছে।মেহের এটাও জানে সাদাফ মুগ্ধকে পছন্দ করে।মেহের জানিয়েছে এতে তার আপত্তি নেই কিন্তু তার বোনের মতেই সব হবে।

মুগ্ধ ক্লাসে এসে আজকে আনমনে বসে আছে।সাদাফ সেটা লক্ষ্য করছে।ক্লাস শেষ হতেই।সাদাফ মুগ্ধকে নিজের রুমে ডাকে।

মুগ্ধ সাদাফের রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।যাবে কিনা যাবে সেই দন্দে আছে।আসতে করে নক করলো মুগ্ধ ভিতর থেকে সাদাফ বলে,

সাদাফ:কাম ইন।
মুগ্ধ আসতে করে রুমে গেলো।সাদাদ চেয়ারে বসে বই দেখছে।মুগ্ধকে দেখেও বইয়ের পাতা থেকে চোখ সরায়নি।বইয়ের পাতায় চোখ রেখেই বলে,

সাদাফ:মিস মুগ্ধ!
মুগ্ধ:জি স্যার।
সাদাফ: আপনি আগামিকাল আমাদের বাসায় আসবেন।আগামিকাল সাদিয়ার কাবিন।
মুগ্ধ:জি স্যার জানি।সাদিয়া বলছে।
সাদাফ:গুড আজকে ক্লাস করা লাগবেনা।বাহিরে জান গিয়ে দেখবেন সাদিয়া গাড়িতে আছে গিয়ে বসেন।শপিং যাবো।
মুগ্ধ:জি স্যার।

মুগ্ধ রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সাদাফ মুচকি হাসলো।আর বললো,

আর কিছুদিন এরপর সব পাপের সাজা সবাইকে দেওয়া হবে।যতটা অপমান তোমাকে অতটাই অপমান ফেরত পাবে মিস সায়মা।

এদিকে আরিশ জেলে আছে এটা সায়মা মানতেই পারছেনা।কিভাবে সে আরিশকে বের করবে জেল থেকে সেটাই বুজতে পারছেনা।

সায়মা:এখন কি করবো মা আরিশক্র কিভাবে বের করবো?
সালমা:আরিশের চিন্তা বাদ দে।জেলে গেছেতো গেছে ওর জন্য চিন্তা করে লাভ নেই।
সায়মা:মা!আরিশ আমার স্বামী।সে জেলে আর তুমি বলছো আমি চিন্তা করবোনা।
সালমা:আরে স্বামী তো কি হয়েছে।তোকে আমি আবার আরেক জায়গায় বিয়ে দেবো।আরিশের কাছে এখন কিছু নেই পথের ফকির ও।
সায়মা:মা!চুপ করো।কি জাতা বলছো।আমি আরিশকে ভালোবাসি হ্যা মানছি ওকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছি কিন্তু তাও ভালোবাসি।জানিনা ও যেদিন সব জানবে সেদিন কি হবে।আর তুমি এসব বলছো।আমি যাচ্ছি তুমি থাকো।
সালমা:এই মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেছে।আরিশকে ভালোবাসে মানে।সায়মা শোন..।

আরিশকে জেলে দেখতে আসছে মেহের।আরিশকে যেই সেলে রাখা হয়েছে সেই সেলে এসে দাঁড়িয়েছে মেহের।

মেহের:আরিশ!
আরিশ কারো ডাক শুনে সামনে তাকিয়ে দেখে মেহের দাঁড়ানো।মেহেরকে দেখে মাথা নিচু করে নিলো।
মেহের আবার ডাক দিলো।
মেহের:আরিশ!
আরিশ এভার উঠে সামনে গেলো।জেলের সিকে হাত দিলো।

আরিশ:জি বলেন।
মেহের:পাপ বাপকেও ছাড়েনা জানোতো।জেনাকারীকে আল্লাহ কোনোদিন মাফ করেনা।জেনাকারী আল্লাহর সব চেয়ে অপন্দনীয় বান্দা।তুমি সেই কাজটা করেছো।আমার বোনকে ঠকিয়ে।সায়মার সাথে জেনায় লিপ্ত হয়েছে।আজ তোমার এই ধংস।আমার বোন আমার কাছে খুব দামী।ওর চোখের জল ঝরিয়েছো তুমি।আমি তোমাকে একদিন বলেছিলাম তুমি আফসোস করবে কাঁচকে হিরা ভেবে নিজের কাছে নিয়েছো আর হিরাকে কাঁচ ভেবে সরিয়ে দিয়েছো।অনেক বড় ভুল করেছো তুমি আরিশ।এই নেও এটা ধরো।এখানে এমন কিছু আছে যা দেখার পর তুমার পায়ের তলার মাটি সরবেই সাথে নিজের উপর করুনা হবে।যে তুমি কি ভুল করেছো।
আরিশের হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে চলে আসলো মেহের।
আর আরিশ বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।

সাদাফরা সবাই শপিং করে ফিরেছে।সাদিয়ার জন্য লাল একটা শাড়ি সাথে কিছু গহনা।মুগ্ধকে একটা গোলাপি রং এর জামদানি কিনে দিছে সাদাফ নিজ হাতে।মুগ্ধ প্রথমে নিতে চায়নি পরে সাদাফের জোরাজুরিতে নিলো।শপিং শেষে সবাই বাসায় এসে পরলো।

পরেদিন,,,,,

মুগ্ধ সাদাফের দেওয়া শাড়িটা পরলো।সাথে দেওয়া গহনা।হাল্কা সাজ চুল গুলো খোপা করে নিয়েছে।এরপর চলে এসেছে সাদাফদের বাসায়।রুহি অসুস্থ থাকায় মেহের রুহি আসেনি।মুগ্ধ একাই এসেছে।এসে সোজা সাদিয়ার রুমে গেলো।সাদিয়াকে এখনো রেডি হচ্ছে।মুগ্ধ বেরিয়ে এসে দেখে সাদাফ একটা কালো শার্ট পরেছে যার প্রথম দুই বোতাম খুলা যার কারনে বুকের কিছুটা দেখা যাচ্ছে।চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে রুম থেকে বের হচ্ছে সাদাফ।সাদাফকে দেখে মুগ্ধ মুচকি হাসলো।

মুগ্ধ সাদাফদের সেই বেলোকনিতে এসে দাঁড়ালো।একটু পর ছেলেরবাড়ির লোকেরা আসবে।মুগ্ধ দাঁড়িয়ে আছে তখন সাদাফ ডাক দিলো।

সাদাফ:মেহুরানী!
সাদাফের ডাকে মুগ্ধ ফের চমকে গেলো।এক আলাদা মাতাল করা নেশা আছে তার ডাকে।মুগ্ধ আসতে করে উত্তর দিলো,

মুগ্ধ:জি।
সাদাফ:আপনার সাজ তো ইনকম্পলিট।
মুগ্ধ:কি?
সাদাফ:হ্যা সাজ ইনকম্পলিট।একটা জিনিশ মিসিং আছে।
মুগ্ধ:কি মিসিং আছে আমি তো সব কিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছি।
সাদাফ:এটা মিসিং আছে।
মুগ্ধ সাদাফের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে বেলিফুলের মালা।বেলিফুল মুগ্ধের খুব পছন্দ।খোপায় বেলিফুল পরতে খুব পছন্দ করে সে।সাদাফ আসতে করে মুগ্ধের পিছনে এসে খোপায় নিজ হাতে পরিয়ে দেয় বেলিফুলের মালা।মুগ্ধ নিজ অজান্তেই হেসে দেয়।এক আলাদা ভালো লাগা কাজ করছে তার ভেতর।এক আলাদা শিহরন বয়ে যাচ্ছে।
সাদাফ এভার মুগ্ধের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

“এখন মেহুরানীকে দেখতে একদম পার্ফেক্ট লাগছে।ঠিক একটা বউয়ের মতো।”

কথাটা বলে সাদাফ চলে আসে।আর মুগ্ধ লজ্জায় লাল হয়েগেছে।এ কেমন অনুভুতি হচ্ছে।এক আলাদা অনুভুতি ছেয়ে গেছে তার মাঝে।
#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_১৩
#নন্দিনী_চৌধুরী

২৭.
জেলের সেলে দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে আরিশ।চোখ গুলো ভিজে গেছে চোখের পানিতে।সে যে তার জীবনের কত বড় ভুলটা করেছে সে চাইলেও তা ঠিক করতে পারবেনা।সে সব থেকে অধম কাজ করছে।তার কোনো ক্ষমা হয়না।

আরিশ মেহেরের দেওয়া প্যাকেটা খুলে সেখানে একটা ফোন কয়েকটা কাগজ আছে।আরিশ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ফোনে কোনো সিম নেই।কয়েকটা ভিডিও ফ্লোডার আছে।আরিশ ভিডিও ফ্লোডার গুলো অন করলো।

প্রথম ভিডিও,

ভিডিওটাতে মেহের বসা একটা সোফায় তার সামনে বসা একটা লোক।লোকটার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক মেরেছে লোকটাকে।

মেহের লোকটার দিকে তাকিয়ে বলছে,

মেহের:বল কার কোথায় তুই আরিশকে মারতে চেয়েছিলি?
লোকটা:বিশ্বাস করেন স্যার।আমি নিজের ইচ্ছায় মারতে চাইনাই।আমাকে একটা মেয়ে বলছিলো মারতে।
মেহের:কোন মেয়ে দেখতে এ কিনা সেই মেয়ে?
লোকটি:জি স্যার।এটাই সেই মেয়ে যার কোথায় আমি ওই ছেলেটাকে মেরেছিলাম।এই মেয়েটা আমাকে ওই ছেলের ছবি দিয়ে বলেছিলো আমি যেনো ছেলেটাক মারি তবে একেবারে জেনো মেরে না ফেলি।ওর কথামতোই আমি ছেলেটাকে অর্ধেক আহত করেছিলাম পরে ওই মেয়েটাই বাঁচিয়েছিলো ছেলেটাকে।এর বদলে আমাকে ৪লাখ টাকা দিছে।

২য় ভিডিও,
এখানে তিনজন ডাক্তার কে বেঁধে রাখা হয়েছে তাদের সামনে মেহের বসা।

মেহেরঃকার কোথায় আপনারা প্রেগ্ন্যাসির মিথ্যা রিপোর্ট বানিয়েছিলেন?
ডাক্তারঃআমি কিছু ইচ্ছা করে করিনি লোভে পরে করে ফেলেছি।অই মহিলা আর মেয়েটা আমাকে ৫লাখ টাকা দিয়েছিলো বলেছিলো প্রেগ্ন্যাসির মিথ্যা রিপোর্ট বানাতে।
ডাক্তার ২য়ঃআমাকে বলেছিলো সুইসাইডের মিথ্যা রিপোর্ট দিতে।আমি দিয়েছি বদলে ৮লাখ টাকা দিয়েছে আমাকে।
ডাক্তার ৩য়ঃআমাকে বলেছে মিস্কেরেজের মিথ্যা রিপোর্ট বলতে আমি বলেছি বিনিময় ৬লাখ টাকা পেয়েছি।

সব গুলা ভিডিও দেখে স্তব্দ হয়ে যায় আরিশ।এ কাকে সে বিশ্বাস করলো।কাকে বিশ্বাস করে নিজের সব শেষ করলো সে।নিজের স্ত্রীকে ঠকালো।আরিশ পরের কাগজ গুলো খুললো।দুইটা চিঠি সেখানে।প্রথম চিঠিটা মেহেরের।

প্রথম চিঠি,
আরিশ
আমি জানি এই সব সত্য যখন জানবে তখন তুমি অনুতপ্ত হবে।তখন তুমি এটাই ভাব্বে যে তুমি কি ভুল করেছো।কিন্তু এই অনুতপ্ত হয়ে এখন কোনো লাভ নেই।তুমি আমার বোনকে অনেক কষ্ট দিয়েছো।তোমার জন্য মরতেও বসেছিলো বোনটা আমার।তাই কোনোদিন যদি তুমি জেল থেকে ছাড়া পাও তবে ভেবোনা আমার বোনকে ফিরে পাবে।আমি কোনো দিন আমার বোনকে তোমার কাছে ফেরত দেবোনা।

২য় চিঠি,

আরিশ,
জানি তুমি ভালো নেই।তোমাকে জেলে নেওয়া হয়েছে আমি জানি।এটাও জানি এই কাজ গুলো তুমি করোনি।ফাঁসানো হয়েছে তোমাকে আশা করি এখানে থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে।তবে কিছু কথা আমি জানি এতোদিনে তুমি সম্পত্তির ফাইলটা পেয়েগেছো।আর কিছু হলেও তোমার ভুল ভেংগেছে।হয়তো তুমি এখন অনুতপ্ত তোমার কাজে।হয়তো ভাবছো কি করলে এটা।জানো আরিশ আমি অনেক আগেই ভুজেগেছিলাম তুমি আর আমার নেই।তুমি অন্য কারো হয়েগেছো।কারন যেই নারী একটা পুরুষের সাথে মিলিতো হয়ে সে বুঝে ভালো সেই পুরুষটাকে।আমিও বুজতাম তুমি পরোনারীর সাথে থেকে আসছো।তার পার্ফিউমের ঘ্রানে বুজতাম।শার্টে লিপ্সটিক দেখে বুজতাম কিন্তু কিছুই বলতাম না।আমি চেয়েছিলাম তোমার ভুলটা শুধরে দেবো।তোমাকে ঠিক করে আনবো।কিন্তু তার আগেই তুমি আমাকে ছেড়ে দিলে।আমারই বোনের সাথে পরোকীয়ায় লিপ্ত হয়ে।সম্পত্তির প্রতি আমার কোনো লোভ ছিলোনা আর না এখনো আছে।আমি শুধু চাইতাম একটা ভালো মানুষ আমার জীবনে আসুক।আমাকে ভালোবাসুক।তুমি এসেছিলে আমার জীবনে।সুখ কিছু দিয়েছিলে কিন্তু বরাংবর দুঃক্ষ দিলে।আর তাও এমন দুঃখ যার ক্ষমা করা যায়না।আমার বাবাও এই কাজ করেছিলো ছোট মায়ের সাথে পরোকিয়ায় জরিয়ে আমার মাকে কেড়ে নিলো।ভাইয়া আমাকে জানাইয়েছে বাবা নাকি ছোট মায়ের সাথে পরোকীয়া করতো।মা অনেক কেঁদেছিলো বাবার পা ধরে কিন্তু লাভ হয়নি।শেষ পরীনতি আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।আমি চাইনি আমার মায়ের মতো পরীনতি আমার হোক তাই তুমি বলা মাত্রই তোমার জীবন থেকে আমি চলে এসেছি।তুমি আর সায়মা আমাকে অনেক অপমান করেছো।কোনো প্রতিবাদ করিনি।কারন আমি জানতাম যে আমি ঠিক।আর সেটা একদিন তুমি জানবা।তুমি ডিভোর্সের চারদিনের মাথায় বিয়ে করে নতুন ঘর বাঁধলে আর আমি তখনো লোকের কথা শুনতাম।সবাই নানা ভাবে অপমান করতো আমাকে।এমনকি দুইবার নিজের ইজ্জত হারাতেও বসে ছিলাম আমি।একবার বাঁচায় ভাইয়া আরেকবার সাদাফ স্যার।এই মানুষ গুলোর জন্য আমি আজ বেঁচে আছি।তোমাদের জন্য মরতেও বসেছিলাম আমি।ভাইটা আমার পাগল হয়েগেছিলো।তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য সব হয়েছে।
যাই হোক আর কিছু বলতে চাইনা।ভালো থেকো আর হ্যা একটা কথা।

“আরিশ তোমার ওপর আমার কোনো রাগ নেই সত্যি কিন্তু আমি তোমাকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারবোনা।”

তাই কোনোদিন আমার সামনে এসোনা ক্ষমা চাইতে।তুমি আমার জীবনের শেষ।আমার জীবনের শেষ থেকে শুরু হবে অন্য ভাবে যেখানে থাকবেনা কোনো প্রতারণা।কোনো লাঞ্চনা।

ইতি
মুগ্ধ।

চিঠি দুটো পরে হাউমাউ করে কাঁদছে আরিশ।কত বড় ভুল করলো সে।সায়মা বিশ্বাস করে সব হারিয়ে ফেললো সে।এমনকি পরোকীয়ার মতো নোংড়া কাজেও সে লিপ্ত ছিলো।

আমি নিজ হাতে সব শেষ করে দিয়েছি মুগ্ধ।ঠিক বলেছো আমাকে ক্ষমা করা যায়না।আমার মতো পশুকেন ক্ষমা করা যায়না।সব শেষ করে দিয়েছি নিজ হাতে।

মেহের মুগ্ধকে জানায়নি যে তাদের বাবাই মেরেছে তাদের মাকে আর সালমা সায়মার কথাও জানায়নি।মেহের জানে বোন তার অনেক কষ্ট পাবে।তাই যেটুকু জানানোর সেটুকু জানিয়েছে।

সালমা বেগমের বাসায় এসেছেন পুলিশের লোকেরা।সালমা তো কিছুই বুজতে পারছেনা কি হচ্ছে।

সালমাঃআপনারা এখানে কি কারনে?
পুলিশঃম্যাম আপনার বাসাটা সিল করে দেওয়া হয়েছে।আইনতো এই বাসা এখন আরিয়ান খান মেহেরের।তার কথা মতে আপনি এই বাসায় থাকতে পারবেন না।আপনাকে আজকের মধ্য বাসা ছেড়ে যেতে বলার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সালমাঃমানে কি বলছেন এসব?
পুলিশঃএইযে দেখুন।
সালমা ফাইল নিয়ে দেখে আসলেই এই বাসা এখন মেহেরের ইভেন সব সম্পত্তি এখন মেহেরের নামে করা।সালমা বুজতেই পারছেনা এসব কিভাবে হলো।সালমার ভাবনার মাঝে কল আসে তার ফোনে।কল রিসিভ করতেই মেহের অপাশ থেকে বলে উঠে,

মেহেরঃবিকালের মধ্য বাসা থেকে চলে যাবেন।আর ভুলেও চালাকি করবেন না। বাসার চারপাশে আমার গার্ডস আছে। ইভেন বাসায় সিসিটিভি ক্যামেরাও লাগানো। সো কোনো চালাকিনা এক কাপড়ে বেরিয়ে আসবেন।বিকালের পর আপনাকে বাসায় পেলে আপনার মেয়ে জামাই যেখানে আসে সেখানেই আপনাকে দিয়ে আসবো।

বলেই কল কেটে দিলো মেহের।

আজকে কলেজ অফ।মুগ্ধ তাই বাসায় বসে আছে।বসে বসে একদম বরিং লাগছে তার কিছুই ভালো লাগছেনা।মুগ্ধ টিভি ওন করলো কিছু দেখার জন্য তখন খবরের চ্যানেলে দেখলো,

ব্রেকিং নিউজ বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মেহেরাব খানের ২য় স্ত্রীকে তাদের বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।জানা যায় তিনি এতোদিন ছলনা করে মেহেরানের প্রথম পক্ষ্যের ছেলেমেয়েকে ঠকিয়ে সব অর্থ সম্পত্তি নিজের নামে করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু মেহেরাব খানের বড় ছেলে আরিয়ান ইসলাম মেহের বাঁচিয়ে নেন তাদের সম্পত্তি আর বের করে দেন ওনাকে এই বাড়ি থেকে।

মুগ্ধ নিউজ দেখে অবাক।কি হচ্ছে এসব।কাল আরিশ আজ ছোট মা।সালমাকে ঘিরে ধরেছে প্রেসের লোকেরা কোনো মতে তাদের কে পার করে রিকশায় উঠেছেন সে।গন্তব্য সায়মার কাছে যাওয়া।

মেহের অফিসের চেয়ারে বসে নিউজ দেখছে আর হাসছে।

যেখানেই যান মিসেস খান আপনাকে আমি এতো সহজে ছাড়ছিনা।যান মেয়ের কাছে এর পরের পালা আপনার মেয়ের।
আমার মা বোনের সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি আপনারা পাবেন।

সালমা বেগম এসেছেন সায়মার কাছে সায়মার সেম অবস্থা।আরিশের বাসা অফিস সব সিল মেরে দেওয়া হয়েছে।কেউ থাকতে পারবেনা।সায়মা দাঁড়িয়ে আছে বাসার সামনে।এখন কি করবে সে কিছুই মাথায় আসছেনা তার।আচ্ছা ধোরা পরে যাবে নাকি তারা।সাদাফ মেহের কি সব জেনে গেলো।সালমা বেগম মেয়ের কাছে এসে দেখেন মেয়েও তার মতো অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কোনো পথ দেখতে পাচ্ছেনা তারা।কি হচ্ছে এসব তাদের সাথে।কোথায় যাবে এখন তারা।

#চলবে

#চলবে

ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।🤲শরীর ভালো লাগছেনা।তাই ছোট হইছে।মাফ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here