শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে পর্ব ১২

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে 🖤
#পার্ট_১২
#Writer_Liza_moni

ভোর ৬ টার দিকে আয়রার জ্ঞান ফিরে আসে। নিজেকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে রাতের সব কিছু মনে পরে যায়।
ফ্লোর থেকে উঠে বসলো সে। মাথাটা কেমন ভারি হয়ে আছে।বসা থেকে দাঁড়িয়ে সে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেল।এখনো সে একটা অবয়ব দেখতে পাচ্ছে ।পর্দায় ছায়া পড়েছে। একদম মানুষের মতো প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। আয়রা সাহস করে এগিয়ে যায় বেলকনিতে।

বেলকনিতে এসে কাউকে দেখতে পেল না সে।তাই আবার রুমে এসে পর্দার দিকে তাকালো। মানুষের মত ছায়া দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বেলকনিতে গাছ ছাড়া তো কিছুই নেই। আয়রা আবারো গেল বেলকনিতে।

ক্যাকটাস গাছের ছায়া পড়েছে পর্দায়। অদ্ভুত একদম মানুষের মতো। আয়রা গাছের টবটা তুলে আছাড় মারল।

রেগে গিয়ে বলল
আজাইরা গাছ তোর জন্য আমি রাতে ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ছি।
.
.
সময় যাচ্ছে নিজের গতিতে। থেমে নেই সে কারো জন্য। হিতৈষী চলে যাওয়ার আজ ১২ দিন পেরিয়ে গেছে।প্রান্ত আজ বান্দরবান থেকে ফেনীতে ফিরে যাবে।
এখন বেলা ১০টা। হিতৈষীর মৃত্যুর পর থেকেই এই বাড়ির সব মানুষ কেমন রোবটের মত হয়ে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ কথা বলে না কারো সাথে।

আয়রা ও কেমন চুপ হয়ে গেছে। আগের মতো আর তেমন রুম থেকে বের হয় না।

প্রান্ত তৈরি হয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চললো মেইন রোডের দিকে। আয়রা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে প্রান্তর চলে যাওয়া দেখছে। হিতৈষীর মৃত্যুর পর থেকে মা আর রান্না করেন না।আয়রাকেই রান্না করতে হয়।মাঝ রাতে হিতৈষী আর আয়জা ছবি বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে মাকে ফুঁপিয়ে কান্না করতে দেখে আয়রা। চোখ ভিজে যায় তার ও।

কিন্তু নিজেকে শক্ত করে মায়ের চোখের পানি মুছে মাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে আয়রা।তার মা টা কেমন জানি চুপচাপ হয়ে গেছে। সন্তান যে হারায় সে জানে সন্তান হারানোর কষ্ট কেমন হয়?
.
.
প্রান্ত বাসে জানালার পাশে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার।মনে হচ্ছে যেনো সে কিছু একটা ফেলে যাচ্ছে।

আয়রা রান্না ঘরে গিয়ে রান্নার জোগাড় করতে লাগলো। এমন সময় মা রুম থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে আলু কাটতে বসলেন।

মাকে রান্না ঘরে দেখে অবাক হলো আয়রা।
আম্মু তুমি রুমে যাও আমি রান্না করতে পারবো।

মা চোখ রাঙিয়ে আয়রার দিকে তাকালেন। ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,,
আগামীকাল থেকে কলেজে যাবি। রান্না করতে হবে না তোকে।যা এখান থেকে।

মায়ের ধমকে আয়রা কেঁপে উঠল।আর কিছু না বলে সেখান থেকে সে রুমে চলে আসলো।
বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আয়রা আর তার মা ছাড়া বাড়ীতে কেউ নেই।বাবা কাজে গেছেন।

আয়রা ছাদে যাবার সময় চোখ পড়লো প্রান্ত যেই রুমে ছিল সেই রুমের দিকে।
এত কিছু ঘটে গিয়েছে যে আয়রা প্রান্ত কে কোনো শাস্তি দিতে পারেনি।
রুমে ঢুকে চার দিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো আয়রা।প্রান্তর গায়ের গন্ধ এখনো এই রুমে আছে। বিছানার উপর একটা খাম দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল আয়রার।সে খামটা হাতে নিয়ে দেখলো খামের ভেতর একটা চিঠি।

কৌতূহল বসতো আয়রা খাম থেকে চিঠি টা বের করে পড়তে শুরু করলো,,,

শুনো আয়রা,,,
তোমার জন্য এই চিঠি। তুমি আগের মতো আর তেমন কথা বলো না, চুপ করে রুমে বসে থাকো তাই আমাকে এই চিঠি লিখতে হচ্ছে।
জীবনের একটা সময় না একটা সময় আমাদের ঠিকই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।এটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তুমি তোমার দুইটা বড় বোন হারিয়েছো। আর তোমার মা বাবা তাদের দুই মেয়ে। আমি তোমাদের দেখে অবাক হয়েছি, হিতৈষী তোমাদের আপন কেউ না।রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই ওর সাথে তোমাদের। হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন সে। তারপর ও তোমরা তাকে এত আপন করে নিয়েছো? সত্যি বলতে এমন মানুষ আমি প্রথম দেখেছি। নিজেকে শক্ত করো মেয়ে। তোমার মা বাবার এখন তুমি ছাড়া আর কেউ নেই।এই ভাবে চুপ হয়ে গেলে তাদের মন খারাপ আর ও বেশি হবে। আমি তো কয়েক দিনের অতিথি ছিলাম মাত্র। দুই মাস থাকার কথা থাকলেও থাকতে পারছি না। আমার কাজ শেষ তাই ফিরতে হচ্ছে। আমি কী কাজে এসে ছিলাম সেটা না হয় অজানাই থাক। কোনো দিন দেখা হলে বলবো তোমায়।
সামনে তোমার পরিক্ষা। পড়ালেখায় মন দাও। জীবন তো এখন ও বাকি।
অনেক বকবক করে ফেলছি।আর কিছু বলবো না।
ভালো থেকো।

ইতি আদনান প্রান্ত।

আয়রা চিঠি টা পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চাইলেই কী সব কিছু ভুলে যাওয়া সম্ভব?যে হারায় সে বুঝে, হারিয়ে ফেলার কষ্টটা কত জঘন্য হয়।
.
.
রাত প্রায় ১০টা।আয়রা বিছানায় শুয়ে শুয়ে প্রান্তর কথা গুলো খুব গভীর ভাবে ভাবছে।
নিজেকে শক্ত করতে হবে।মা বাবার মুখে সেই আগের মতই হাসি ফুটিয়ে তুলতে হবে।

বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করে ফেসবুকে লগ ইন করলো আয়রা। অনেক দিন পর ফেসবুকে আসলো। অনেক মেসেজ, নোটিফিকেশন,জমে আছে।
সে গুলো দেখতে লাগলো সে।
.
.
প্রান্ত লং জার্নি করে এসে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে।পিঠ ব্যথা করছে তার। চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

আহ শান্তি।
আসার পর থেকেই মা তাকে জেকে ধরেছিল,, আয়রার বোন হিতৈষী কী করে মারা গেলো?

প্রান্ত প্রতি উত্তরে বলে ছিল,,
হায়াত শেষ তাই আল্লাহ তাকে নিয়ে গেছে। আপাতত এত প্রশ্ন ভালো লাগছে না।
.
.
প্রান্ত ফেসবুকে গিয়ে দেখলো আয়রা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেনি এখন ও।
প্রান্ত চাইলেই মেসেজ দিতে পারে, কিন্তু না সে দিবে না।

অন্য দিকে আয়রা ফেসবুকে প্রান্তর আইডি খুঁজতে লাগলো।ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এর দিকে চোখ পড়তেই প্রান্তর আইডি ভেসে উঠে।

অজান্তেই মুচকি হাসলো সে।ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে আয়রাই আগে টেক্সট দিলো,,,

আসসালামুয়ালাইকুম, কেমন আছেন? আপনি কি ঠিক মতো বাড়ি পৌঁছেছেন?

মেসেঞ্জারে টুং করে শব্দ হলে প্রান্ত সেখানে গিয়ে দেখে আয়রার মেসেজ। মুচকি হাসে সে ও।

ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আর আমি অনেক আগেই বাড়ি এসে পৌঁছাইছি।
.
আচ্ছা। ধন্যবাদ 💕
.
কেন?
.
চিঠির জন্য।
.
ওহ আচ্ছা। বুঝতে পারছো নিশ্চয়ই আমি কী বলতে চাইছি?
.
হুম। নিজেকে শক্ত করতে হবে।মা বাবা কে ভালো রাখতে চাইলে।
.
তুমি খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে। খুব সহজেই অনেক কিছু বুঝতে পারো। তোমাকে চঞ্চলতায় মানায়।এই ভাবে তোমাকে এমন চুপচাপ হয়ে বসে থাকা মানায় না।
.
.
প্রান্তর মেসেজ সিন করে রেখে দিয়েছে আয়রা। রিপ্লাই করেনি। বিষন্নতায় ছেঁয়ে আছে মন। একাকিত্ব যেনো গ্রাস করেছে তাকে।কারো সাথে কথা বলতে মন চাইছে না ইদানিং। হিতৈষী কে ভীষণ মনে পড়ছে আজ।

হিতৈষী বেঁচে থাকলে আয়রা তাকে বলতে পারতো তার প্রথম প্রেমের কথা।
প্রান্তর প্রতি তৈরি হওয়া আবেগের কথা।

লোকটা কে জ্বালাতে গিয়ে কখন যে তার প্রেমে পড়ে গেছে সে নিজেও জানে না।

চার দিকে কেমন শূন্যতা বিরাজ করছে। আয়রা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালো।বর্ষা শেষের দিকে। শ্রাবণ মাসের আর তিন ,চার দিন আছে।
আকাশে আজ মেঘ নেই।তারা দেখা যাচ্ছে শুধু।অর্ধ চাঁদ। আয়রা আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

আয়জা আপু, আর হিতৈষী আপু,,
কেমন আছিস তোরা দুজন?

আমার কাঁধে এত সব দায়িত্ব দিয়ে তোরা ঐ দূর আকাশের তারা হয়ে গেছিস। আচ্ছা হিতৈষী আপু ভালোবাসায় কী অনেক যন্ত্রনা?মন হারিয়ে ফেললে কি আর ভালো থাকা যায় না?

জানিস আমার না ঐ খচ্চর প্রান্তর কথা খুব মনে পড়ছে।দেখতে ইচ্ছে করছে হঠাৎ। এমন কেন হচ্ছে বলতো?

চলবে,,,, 🍁

(অসুস্থ ভীষণ। তার জন্যই নিয়মিত গল্প দেওয়া হচ্ছে না। দোয়া করিয়েন আমার জন্য।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here