শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে পর্ব ১৩

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে 🖤
#পার্ট_১৩
#Writer_Liza_moni

শরৎ এর নীল আকাশ,,স্বচ্ছ নীলের মাঝে তুলোর মত সাদা মেঘের ভেলা ভাসছে।সাদা কালো রঙের একটা শাড়ি পড়ে কাশফুল হাতে নিয়ে বড় একটা মাঠের মাঝখানে উদাসীন হয়ে হাঁটছে আয়রা। খোলা চুল বাতাসে উড়ছে।মন ভালো নেই তার।আজ থেকে প্রায় দশটা দিন আগে প্রান্তর সাথে কথা হয়েছে তার।
প্রেমালাপ না, ভালো আছেন?
ভালো আছি।এমনি কয়েকটা কথা হয়। মনটা কেমন
অশান্তিতে ভরে গেছে। বিষন্নতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না সে।

হিতৈষী চলে গেল আজ অনেক দিন। আয়রার চেয়ে ও হিতৈষী শাড়ি পরতে ভালবাসত খুব।হাতে গোনা কয়েকটা শাড়ি ছাড়া আর শাড়ি নেই আয়রার। তার পরনের শাড়িটা ও হিতৈষীর।

মা বাবা আগে থেকে অনেক টা স্বাভাবিক হয়েছেন। তবে বাড়িতে এখন আর হাসির আওয়াজ পাওয়া যায় না।সবাই মুচকি হেসে উড়িয়ে দেয়।মন খুলে হাসে না অনেক দিন।

এই পিচ্চি শুনো,,

আয়রা থামলো।হাঁটা থামিয়ে পাশ ফিরে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

আপনি আবার আমার কল্পনায় আসছেন?

না তো। তুমি আমাকে নিয়ে কল্পনা ও করো বুঝি?

আয়রা হাঁটতে লাগলো আবার। তারপর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,,

কিছু মানুষ কল্পনায় সুখি। বাস্তবে না। তাদের দলে আমি ও আছি। আপনাকে নিয়ে ভাবতেই আমার ভালো লাগে।

প্রেমে পড়েছো বুঝি?

হা হা হা।প্রেম সেতো এক অদৃশ্য বস্তু।তারে ছোঁয়া যায় না।দেখা যায় না।অনুভব করা যায়।আর আমি তো যে দিন আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে, সেদিনই মন হারিয়ে ফেলেছি।

এতো ভালোবাসো আমায়?

জানি না। আপনাকে একটু ছুঁয়ে দেখি? আয়রা হাত বাড়ায় প্রান্ত কে ছুঁয়ে দেখতে।
না নেই।প্রান্ত তার আশে পাশে কোথাও নেই।

আয়রা আনমনে হাসলো।সে আগেই জানতো এটা তার ভ্রম।প্রান্ত তো ফেনীতে। বান্দরবান আসবে কীভাবে?এটা তার কল্পনার প্রান্ত ছিল।
.
.
পশ্চিমের আকাশে সূর্য ডুবে যাওয়ার দৃশ্য ছাদে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছে প্রান্ত। লাল নীল হলুদ কমলা এত রঙের মিশ্রণ দেখে মনটা এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।

সূর্যোদয় যেমন সুন্দর ঠিক তেমনি সূর্যাস্ত ও সুন্দর।
আর এটাই প্রমাণ করে যে,, শুরুর মতো শেষটা ও সুন্দর হয়।

ভাইয়া,,,
ছোট বোন প্রিয়ার ডাকে পেছনে ফিরে তাকায় প্রান্ত।
কিছু বলবি?

প্রিয়া প্রান্তর দিকে এগিয়ে এসে বললো,,
মা তোর জন্য মেয়ে দেখছে।

জানি।

তুই কি মায়ের পছন্দতেই বিয়ে করে ফেলবি?

জানি না রে।

আচ্ছা ভাইয়া আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি?

কী কথা?

তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?

প্রান্ত প্রিয়ার চুল টেনে দিয়ে বললো,,
তোর বয়স কত?

১৬ বছর।

আমি তোর কত বছরের বড়?

নয় বছরের।

তাহলে তুই আমাকে এই সব জিজ্ঞেস করিস কী করে?

মুখ দিয়ে।

প্রান্ত প্রিয়ার মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো অনেক পেকে গেছিস।যা নিচে যা। না হলে মাকে বলে কেলানি খাওয়াবো।

প্রিয়া ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,,
তোর মতো কুত্তা মার্কা উগান্ডার মতো ভাই যেনো আর কোনো মেয়ের না হয়। অভিশাপ দিলাম তোরে,, জীবনে ও বিয়া হইতো না দেখিস।

শোকুনের অভিশাপে গরু মরে না।ভাগ এখান থেকে।
.
.
চার দিকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। আয়রা নামাজ পড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে বসে আছে আজান শেষ হওয়ার জন্য।

আজান শেষ হলে নামাজ পড়ে মায়ের কাছে গেলো।মা বিছানায় বসে ছিলেন। আয়রা গিয়ে মায়ের পাশে বসলো।

চা বানাই?খাবা?

হুম।

আয়রা উঠে চলে যাওয়ার সময় মা বলে উঠলো,,
শুন আয়রা,,

বলো,,

সামনে তো তোর পরিক্ষা। পড়ালেখায় মনোযোগ দে। রেজাল্ট ভালো হলে ঢাবি তে এপ্লাই করবি। আমার মেয়ে যথেষ্ট মেধাবী। আমি জানি মন দিয়ে পড়া লেখা করলে অবশ্যই তুই চান্স পাবি।ঢাকায় চলে যাবো না হয় আমরা।

আয়রা কিছু বললো না। রান্না ঘরে চলে গেল তার আর মায়ের জন্য চা বানাতে।

চুলায় গরম পানি বসিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়রা। পড়ায় মন বসাতে না পারার কারন অনেক। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো প্রান্ত। লোকটা কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে এসে আমার মনটাই চুড়ি করে নিয়ে চলে গেছে।
.
.
প্রান্ত বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় লেপটবে কিছু একটা কাজ করছে। বাবার ব্যবসায় জড়িয়েছে আজ সপ্তাহ খানেক হয়েছে।

এমন সময় প্রান্তর মা রুমে এসে তার পাশে গিয়ে বসলেন।

কিছু বলবা আম্মু? মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো প্রান্ত।

মা মোবাইল হাতে নিয়ে একটা মেয়ের ছবি প্রান্ত কে দেখিয়ে বললো,,

দেখ তো পছন্দ হয় নাকি?

প্রান্ত মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে হা হয়ে গেল।

মা প্রান্তর মুখের রিয়েকশন দেখে হাসলেন। পছন্দ হয়েছে?

এটা তো আয়রা।আফরিন আন্টির মেয়ে।
ওর ছবি তোমাকে কে দিলো?আর মেয়েটা মাত্র এইচএসসি পরীক্ষা দিবে।

হুম। তোর আফরিন আন্টি দিয়ে ছিল ছবিটা। মেয়েটা কে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।

আয়রা কে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিবে?

না। বিয়ে তো দিতে চাচ্ছে না। আমি তো জোর করলাম। এমন মেয়ে কে কেউ হাত ছাড়া করে? তোর সাথে ওকে খুব সুন্দর মানাবে।

মা আমার মাথা ধরেছে খুব। এক কাপ কফি দাও তো। গরম হতে হবে,,

আচ্ছা আমি যাচ্ছি।

মা চলে গেলে প্রান্ত মোবাইল হাতে নিয়ে মেসেঞ্জারে আয়রা কে টেক্সট দিলো।
.
.
আয়রা চা বানিয়ে মায়ের কাছে নিয়ে গেলো। বাড়িতে এখন সে আর তার মা ছাড়া কেউ নেই।বাবা আছরের দিকে বের হয়েছেন যে এখনো ফিরেননি।

আয়রা চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,,
কোথাও বেড়াতে গেলে ভালো হইতো।এই এক জায়গায় কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে।

আমাদের বাড়িতে যে একটা ছেলে বেড়াতে এসে ছিল তার কথা মনে আছে তোর?

হ্যাঁ। কেন বলো তো?

ওর মা তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।প্রান্তর বউ করতে চান তোকে।

মায়ের কথা শুনে আয়রা বিষম খেলো।মনে লাড্ডু ফুটলো তার।

তুমি কি বলছো?

আমি তো রাজি হয়নি।

মায়ের কথা শুনে আয়রার উজ্জ্বল মুখ খানি চুপসে গেল।

আমার মেয়ে পড়ালেখা করবে। নিজের একটা পরিচয় তৈরি করবে। বিয়ে টিয়ে এই সব পরের কথা।

ধুর,, বিয়ের পর কী পড়ালেখা করা যেতো না নাকি?
এখন যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেন উনি। তাহলে কি হবে?
মনে মনে বললো আয়রা।
.
.
রুমে এসে পড়তে বসছে সে।বইয়ের পাশে মোবাইল দেখে হাতে নেওয়ার জন্য শয়তান উস্কে দেয়।বই বন্ধ করে মোবাইল নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।ডাটা অন করতেই মেসেঞ্জারে টুং টুং করে মেসেজ আসতেই থাকে। সেখানে প্রান্তর টেক্সট দেখে আয়রা অজান্তেই হাসলো।

এই মানুষটা জানেই না যে আমি সারাদিন তার টেক্সটের জন্য অপেক্ষায় থাকি।

“এই পিচ্চি,,
তোমার কী এখন বিয়ে করার ইচ্ছে আছে?”

“থাকবে না কেন?”

“এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হবে না। পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হও।”

“সেটা আপনাকে বলতে হবে না। আমার অনেক শখ জাগছে যে আমি আমার বিয়ে খাবো।”

“মার্চে তোমার পরিক্ষা।আর এখন তোমার বিয়ের শখ জাগছে?”

“হ্যাঁ জাগছে।”

“পিচ্চি তুমি বড় হইলা না।”
.
.
প্রান্ত তার নিজের ও ভালো লাগে আয়রা কে। তবে সেটা শুধুই ভালো লাগা।
ভালোবাসা না।

আয়রার মনে এক অদ্ভুত শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে জ্বলন্ত আগুনের উপরে কেউ বরফ গলানো ঠান্ডা পানি ঢেলে শান্ত করে দিয়েছে।

“ভালোবাসা কখনো কাউকে বলে আসে না। হঠাৎ চলে আসে মানুষের জীবনে।এই ভালোবাসা নামক জিনিসটা কেমন অদ্ভুত না? কাউকে হাসায়, কাউকে কাঁদায়। কাউকে বাঁচতে শিখায় আর কাউকে মরতে।কেউ ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে জীবন্ত লাশ হয়ে যায়।আর কেউ ভালোবাসার মানুষ কে সারা জীবনের জন্য নিজের করে পেয়ে নতুন করে জীবন গড়তে শিখে যায়। তবু ও দিন শেষে একটাই কথা সবার মুখে শোনা যায় সেটা হলো,, ভালোবাসা সুন্দর ♥️।”

বালিশ বুকে জড়িয়ে ধরে প্রান্তর সাথে হালকা ঝগড়া করছে আর বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে হাসছে আয়রা। অনেক দিন পর মেয়ের মুখে হাসি দেখে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আয়রার মা ও হাসলেন। বুঝলেন তিনি আয়রার মোবাইলের স্ক্রিনে প্রান্তর ছবি দেখে যে তার মেয়ে মন হারিয়ে বসে আছে।বিয়েতে অমত করে আর লাভ নেই।মেয়ে যাকে ভালোবাসে,যার সাথে সুখী থাকতে পারবে বলে মনে করে,, তার সাথেই বিয়ে হোক। ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলার কষ্টটা যেনো আমার মেয়েকে না ছোঁয় আল্লাহ।এই মেয়েটা ছাড়া আমাদের আর এই দুনিয়ায় কেউ নেই।

চলবে,,,, 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here