গল্পের নাম : #শ্রাবনের_মেঘ
লেখিকা : ফারিয়া
পর্ব : ৩
মেঘা একটি শুকনা ঢোক গিললো, এভাবে প্রায় ১০ মিনিট চুপ থাকার পর তাকে তাগাদা দিতেই বলে উঠলো,
” ক..”
পুরো কথা শেষ করার আগেই চেনা দুটি কন্ঠস্বর পেলো, মুখ তুলে উপরে তাকাতেই যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো। দেখলো শ্রাবন এবং রাজ দাঁড়িয়ে আছে। চেয়ারম্যান দাঁড়িয়ে বলে,
” এই ছেলে কে তুমি? সাহস কি করে হয়, আমার ছেলের বিয়ে আটকানোর? ”
শ্রাবন হেসে বলে,
” কারন, আপনার ছেলেকে এখন থানায় নিয়ে যাবো। বিয়েটা না আটকালে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতো। ”
শান ভয় পেয়ে গেলো। তবুও, জোর গলায় বলে উঠলো,
” মানে কি এসবের? আমি কি করেছি? কি প্রমান আছে আপনার কাছে, হুটহাট এসে বললেই বিশ্বাস করবো? ”
শ্রাবন হেসে বললো,
” আমি কে? আচ্ছা এটা একটু পরেই বুঝবা। তবে এটা জানা জরুরি নয়। ”
শ্রাবন ল্যাপটপ অন করে সবাইকে কয়েকটা ভিডিও দেখালো। যেটাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, শান একটি ব্যাগ নিয়ে হাটছে। কিছুদূর এগোতেই একটি টেবিল দেখা যায়, যেখানে বসে আছে মেঘার বাবা। তবে সাধারন গ্রামের পোশাকে নয়, বরং বড় ব্যবসায়ীদের মতো পোশাকে। দুজনে ই/য়া/বা ডিল করছিলো, কিছুক্ষন পর দুটো মেয়েকে হাত পা বা/ধা অবস্থায় নিয়ে আসা হলো এবং মাইক্রোতে জোর করে উঠানো হলো। তারপর দুজনে হ্যান্ডশেক করে চলে গেলো। এমন আরও কয়েকটি ভিডিও দেখানো হলো, জসিম মিয়া এবং শান একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঘামতে শুরু করলো। সীমান্তবর্তী গ্রাম হওয়ায় ওরা নারী পা/চা/র এবং মা/দ/ক ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলো। যা কেউ কখনো জানতেও পারে নি, উপযুক্ত সাক্ষী প্রমানের মাধ্যমে তখনই ওদের দুজনকে এ/রে/স্ট করা হয়।
শাওন চৌধুরী বসে পড়ে, আর বলতে শুরু করে,
” ছোটবেলায় আমার ছেলের মা মারা যাওয়ার পর, ঠিকমতো শাসন করা হয়নি। যখন যা চাইতো পেয়েই যেতো, ওর করা অ/ন্যা/য় প্রশ্রয় দিয়েই এমন অবস্থা হয়েছে। একমাত্র ছেলে, তাই কিছু বলতেও পারি নি। আজ আমার কারণের এসব দেখতে হচ্ছে। পারি নি আমি ছেলেটাকে মানুষ করতে, আমি জানতাম ও আমার পাওয়ারে অনেক কিছুই করে। তবে এটা জানতাম না যে, ও খারাপ কিছু করে। কেউ কখনো অভিযোগ ও আনে নি, ভাবতো তাদের চেয়ারম্যান খুব খা/রা/প। আচ্ছা আপনারাই বলুন, আমি কি অন্যায়কে মেনে নিতাম কখনো? না, আপনারা চেনেন নি আমায়। মাফ করে দিবেন আমায় ”
এই বলে উনি কাদতে কাদতে চলে গেলো। উপস্থিত এক মহিলা বলে উঠলেন,
” আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে, তা এই বিয়ে ভেঙে যাওয়া মেয়েকে কে বিয়ে করবে? মানলাম তুমি ঈর ভালোর জন্যই করেছ। এখন, তুমি কি তার দায়ভার নেবে? পারবে আমাদের মেঘাকে বিয়ে করতে? ”
শ্রাবন যেনো এই অপেক্ষাই করছিলো। মেঘা এতোক্ষন চুপ থাকলেও, এবার মুখ খুললো। সে বলে উঠলো,
” না, উনি আমাকে সাহায্য করেছে এতোটুকুই। উনার তো অন্য পছন্দ থাকতেও পারে, তাছাড়া অচেনা মানুষকে কিভাবে বিয়ে করি? ”
শ্রাবন বললো,
” আমি মেঘার সাথে আলাদা কথা বলতে চাই। আপনারা যদি একটু বাইরে যেতেন উপকৃত হতাম। ”
শ্রাবনের কথামতো সবাই বাইরে চলে গেলো। শ্রাবন রাগীস্বরে মেঘাকে বললো,
” আর একটু দেরি করে আসলে কি হতো বলো তো? কি করতে যাচ্ছিলে তুমি? আমি ঠিকসময়ে না এলে তো ঠিকই কবুল বলে ঢেং ঢেং করে শানের বউ হয়ে যেতে। ”
মেঘা কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো,
” আমি কি করতাম বলুন? আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আসবেন না। অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পরেও যখন আপনি এলেন না, তখন আমার মনে হয়েছিলো সব শেষ। তবে আমি বউ হতাম না, আজই আ/ত্ন/হ/ত্যা করতাম। ”
শ্রাবন বলে উঠলো,
” থা/প্প/ড় চিনো? বে/য়া/দ/ব মেয়ে। কতোবার বলেছি এসব বলবেন না? আর কখনো এমন শুনলে বুঝবা। ”
শ্রাবন এবার মেঘার নত করে রাখা মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
” মেঘপরি! তাকাও আমার দিকে। ”
এতো সুন্দর নাম শুনে মেঘা স্তব্ধ হয়ে গেলো। উপরে তাকাতেই শ্রাবন বললো,
” নামটা তোমায় দিলাম, আমার উপর যখন বিশ্বাস করে এতোকিছু করতে পেরেছো। তখন পারবে না, আমার সাথে সারাটি জীবন থাকতে? মেঘপরি, আমি কি আমার কথা রাখি নি? রেখেছি তো। আজ এই সময় তোমায় কথা দিচ্ছি, কখনো কোনো আ/চ/ড় লাগতে দেবো না। সারাজীবন পাশে থাকবো। ”
মেঘা কিছু একটা ভেবে রাজী হয়ে গেলো। তারপর ওদের বিয়ে হয়ে গেলো। কাল সকালেই ওরা চলে যাবে। বিয়েটা আবারও হবে খুব ধুমধাম করেই৷ পরেরদিন সকালে গাড়িতে বসে শ্রাবন বললো,
” আজ তোমাকে একটা গান ডেডিকেট করতে ইচ্ছে হচ্ছে জানো? মানে গানের কয়েকটা লাইন।
আমি গোপনে ভালোবেসেছি,
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছি
তোমায় নিয়ে যাবো বলে,
একবার এসে দেখো
এসে বুকে মাথা রেখো ”
মেঘা মুগ্ধ হয়ে শুনলো, কারন শ্রাবনের গানের গলা খুবই সুন্দর। কলেজে থাকতে অনেক ফাংশন ও করেছে। পথে মেঘা একটা কথাও বলেনি। চুপচাপ ছিলো। বাড়ি ফিরতেই ঘটলো এক বিপত্তি,
চলবে,
{