শ্রাবনের মেঘ পর্ব -০২

গল্পের নাম : #শ্রাবনের_মেঘ
লেখিকা : ফারিয়া
পর্ব : ২
রাজ বলে উঠলো,
” মেঘা আমার বোন, তবে আপনি কে ভাই? আর ওর ব্যাপারে এতো ইন্টারেস্ট কেনো? গ্রামে কি নতুন নাকি? ”

শ্রাবন মুচকি হেসে বললো,
” ও কি আপনার নিজের বোন? ওর একটু ডিটেইলস দেওয়া যাবে? আর কারণ আছে বলেই এতো ইন্টারেস্ট। আর গ্রামে নতুন বলতে, আমি এখানে থাকার জন্য আসি নি। কেনো এসেছে দেখবেন? ”

শ্রাবন নিজের আইডি কার্ড দেখালো, রাজ বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। তা দেখে শ্রাবন হেসে দিলো, রাজ বিষ্ময়ের রেশ কাটিয়ে বললো,
” সেই বিখ্যাত সিক্রেট ডিটেক্টিভ শ্রাবন আপনি? ”

শ্রাবন মাথা নাড়ালো, রাজ আবারও বলে উঠলো,
” ও মাই গড, আমি খুব সৌভাগ্যবান। যেই ডিটেক্টিভকে কেউ দেখে নি, আজ আমি তার সামনে এবং সে নিজে এসে কথা বলেছে। ওয়েলকাম স্যার, বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি? ”

শ্রাবন হেসে বললো,
” স্যার না, ভাইয়া বলবেন। যেহেতু আমরা সমবয়সী, তাই তুমি করেই বলবো আমরা। তুমি ছাড়া যেনো কেউ আমার পরিচয় না জানে। এখন বলো, মেঘার ডিটেইলস। ”
রাজ বললো,
” চলুন, গ্রামটা আপনাকে দেখাতে দেখাতে বলি সব। ”

দুজনে গ্রামটা ঘুরলো, মেঘার সবকিছু শুনে শ্রাবনের খারাপ লাগলো। ভাবলো, তাকে নিজের করে নিবেই। মেঘা আর শ্রাবন এক হয়ে তাদের নাম হবে ‘ শ্রাবনের মেঘ ‘। বাহ! সুন্দর তো, এখন বাড়িতে কিছু জানাবে না।
🍂
কেটে গেলো দুদিন। শ্রাবন এই দুইদিন এসেছিলো সেই ঘাটে কিন্তু মেঘার দেখা পায় নি। এই দুদিন শ্রাবন ঘুমাতে পারেনি, সারাক্ষন মেঘার সেই কাজলকালো চোখ তার সামনে ভেসেছে। নিজের মুঠোফোনে থাকা ছবিগুলো বার বার দেখেছে। আজও এসেছে, ঘাটের দিকে তাকাতেই মনটা অন্যরকম ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো। কারণ, মেঘা এসেছে আজ। এগিয়ে যেতেই দেখে, মেঘা পানিতে ঝাপ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শ্রাবন দৌড়ে গিয়ে তার হাত টেনে ধরলো, মেঘা শ্রাবনের বুকে আছড়ে পড়লো। হঠাৎ এমন হওয়ায় মেঘা ভয় পেয়ে গেলো। শ্রাবনের তো মনে হচ্ছিলো, তার জীবন থেমে গিয়েছে। নিজেকে সামনে নিয়ে বললো,
” এই মেয়ে, কি করতে যাচ্ছিলে তুমি? সাহস তো কম না ”

কোনো এক আগন্তুকের মুখে এমন কথা শুনে মেঘা ভরকে গেলো, বলে উঠলো,
” আমার যা ইচ্ছা তাই করবো, কে আপনি? আগে তো দেখি নি গ্রামে। আপনি নতুন তাই আমার ব্যাপারে জানেন না, জানলে বুঝতেন কেনো এই কাজ করতে যাচ্ছিলাম। ”

শ্রাবন ওকে ছেড়ে বিড়বিড় করে বললো,
” তোমার ব্যাপারে সবকিছু জেনেই নিয়েছি মেঘপরি। ”

মেঘা বললো,
” কি বিড়বিড় করছেন? কেনো আমাকে আটকালেন? ”

শ্রাবন বললো,
” দেখো, আমি কে তুমি জানো না। আর কেনো এমন বাচ্চামি করছিলে বলো? ”

মেঘা ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো আর বলা শুরু করলো,
” আজ আমার বিয়ে, সবচেয়ে জঘন্য এক মানুষের সাথে। আমার বাবা টাকার লোভে বিয়ে দিতে চাইছে এবং যার সাথে বিয়ে সে প্রতিশোধ নিতেই বিয়ে করতে চাইছে। ও যে আমায় মে/রে ফেলবে তা আমি জানি। গ্রামের চেয়ারম্যানের একমাত্র ছেলে, তাই কিছু বলতে পারছ্র না কেউ। আমার পক্ষে থাকার মানুষ নেই। ”

শ্রাবন বুঝতে পারলো, কাল রাজ এই কথা তো বলেনি। হয়তো ভুলেই গিয়েছিলো। সে মেঘাকে আস্বস্ত করে বললো,
” তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো, আমি থাকতে তা হতে দেবো না। আমার উপর ভরসা রাখতে পারো। তবে আমি তোমাদের গ্রামে থাকতে আসি নি, আমি এসেছি এক বিশেষ কাজে। পুরোটা হয়ে গেলেও, শেষ একটা প্রমান লাগবে। তুমি কি পারবে আমায় সাহায্য করতে? তাহলে আমার এক সপ্তাহ লাগবে না গ্রামে এবং ভয় নেই, তোমাকে উদ্ধারের দ্বায়িত্ব আমার। তুমি শুধু তোমার বাবাকে গিতে বলো, তুমি রাজী। ”

শেষের কথাটা শুনে মেঘা স্তব্ধ হয়ে রইলো। মেঘা এখনো শ্রাবনের পরিচয় জানেই না, সে শ্রাবনের কথামতো সব করবে বললো। হুট করে মেঘা শ্রাবনকে বলে উঠলো,
” আচ্ছা, আপনি তো আমার কেউ নন। তাহলে কেনো আমায় সাহায্য করবেন? যদি সাহায্য করতে চেয়েও না করেন? যদি আমায় পা/চা/র করে দেন? ”

মেঘার এমন বাচ্চামো কথা শুনে শ্রাবন ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
” মেঘা, তুমি এখনো বাচ্চাই আছো। বিশ্বাস একবার করেই দেখো। ”

মেঘা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললো,
” আপনি আমার নাম কিভাবে জানেন? ”

শ্রাবন বললো,
” অন্যসময় তা জেনো। এবার বাড়ি যাও ”

মেঘা মাথা নাড়িয়ে বাড়ি চলে গেলো। গিয়ে তার বাবাকে সম্মতি জানাতেই মেঘাকে বুকে জড়িয়ে নিলো। প্রথমবার বাবার আদর, ভালোবাসা পেয়ে মেঘা কিছুক্ষনের জন্য সুখ অনুভব করলো।
🍂
আহম্মেদ ভিলায় আজ রান্নার তোড়জোড় চলছে। বাড়ির বড় বউ, অর্থাৎ শেফালী আহম্মেদের একমাত্র বোন তানজিলা বেগম, তার ছেলে রিশান এবং মেয়ে রিশা আসবে বলে কথা। বিকাল হতে হতেই চলে এলো ওরা, রিশা এসেই শ্রাবনের ঘরে উকি দিলো। ইফতি তা লক্ষ্য করে বললো,
” কি খুজছো রিশা? শ্রাবনকে? ও তো নেই। ”

রিশা বললো,
” ইয়ে মানে না। আচ্ছা শ্রাবন ভাইয়া কিসে জব করে বলোতো? যখনি আসি, দেখি সে নাই। ”

ইফতি মেকি হেসে বললো,
” ছোট এক জব করে, আমার কল এসেছে ”

এই বলেই কেটে পড়লো। কারন, পরিবারের সদস্যরা ছাড়া কেউ জানেই না শ্রাবন কিসে জব করে। তানজিলা বেগম বললেন,
” আপা, এবার কিন্তু কথা পাকা করেই যাবো। আমার মেয়েটা তো শ্রাবন বলতে পা/গ/ল। আর তুই আমি তো ছোট থেকেই বেয়ানি হওয়ার কথা বলি। ”

শেফালী আহম্মেদ হেসে বললো,
” হ্যাঁ, তাই তো। তোর মেয়েকে আমার বাড়ির বউ করে আনার জন্য তো আমরা ব্যাকুল। তবে শ্রাবন নেই, আর ওর অনুমতি ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারবো না। ওর খুশীতেই আমার খুশী, তাছাড়া তুই তো জানিস শ্রাবন কেমন রাগী এবং জেদি। ওর সম্মতি না থাকলে কিছুই করা সম্ভব নয়। ”

এসব শুনে তানজিলার মুখ কালো হয়ে গেলো, বোনের ছেলেটি সোনায় সোহাগা। একবার বিয়ে দিতে পারলে, অঢেল সম্পত্তি তাদের। মূলত, সম্পত্তির জন্যই বিয়ে দিতে ব্যাকুল তারা। যেকোনো ভাবে শ্রাবনকে রাজী করাতে পারলেই হবে। আপাতত বোনের মন জয় করে চলাই মুখ্য।
🍂
প্রায় সন্ধ্যা হতেই মেঘাকে সাজানো শুরু করলো। মেঘা শুধু পুতুলের মতো তাকিয়ে দেখছে। তার শুধু একটাই চিন্তা, সেই আগন্তুক আসবে তো? তবে তার নামটাই জানা হলো না, ধুর। সঠিক সময়মতো কাজী এবং শানের পরিবার চলে এলো। মেঘা এবার ভয়ে অস্থির, উনি এখনো এলো না কেনো? তবে কি উনি শানের দলের কেউ? এতো বড় ধো/কা! এতোকিছু ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কাজী তাকে বললো,
” মা বলো আলহামদুলিল্লাহ কবুল ”

মেঘা শুকনো ঢোক গিললো, এভাবে প্রায় ১০ মিনিট চুপ থাকার পর তাকে তাগাদা দিতেই বলে উঠলো,
” ক..”

চলবে?

{

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here