গল্পের নাম : #শ্রাবনের_মেঘ
লেখিকা : ফারিয়া
পর্ব : ৯
{ নিচের কথাগুলো পড়ার অনুরোধ রইলো }
🍂
পরেরদিন সকাল থেকে আত্নীয় আসা শুরু হয়েছে, শ্রাবন সবারই প্রিয়। কাজিনদের মধ্যে অনেক মিল সবার, যারা বিবাহিত তারা বাদে বাকিরা আজ আসবে সন্ধ্যে নাগাদ। মেঘা ভাবছে, এটা তো তার নিজেরই পরিবার, নিজেদের কাজিনরা আসবে। কিন্তু, মেঘা তো তাদের চেনে না। আজ অবধি কেউ তাকে দেখেনি। ইতোমধ্যে প্রায় সবাই জেনে গিয়েছে যে, মেঘা আহম্মেদ পরিবারেরই মেয়ে। অন্যরকম এক্সাইটেড সে, আজ তাদের মেহেদী।
সন্ধ্যার দিকে আসার কথা থাকলেও, সবাই বিকেলের মধ্যেই চলে এসেছে। শ্রাবন এবং ইফতির প্রায় সব কাজিন এবং বন্ধুরা এসেছে। শাফিন, রৌদ্র, সাদনান, স্নিগ্ধা, তিশা, মায়া সবাই এসেছে। মেঘাকে আজ এরাই সাজাবে, কাল হলুদে পার্লারের মেয়েরা আসবে। সবুজ রঙের কাতান শাড়িতে মেঘার সৌন্দর্য যেনো ঝলক দিচ্ছে, ম্যাচিং জুয়েলারী এবং খোপায় ফুল তো রয়েছেই। ছাদে অনুষ্ঠানটি হবে, তাই তার মাথার উপরে উড়না ধরে তাকে নিয়ে এলো মেয়েরা। স্টেজে বসিয়ে দিতেই, মেঘা চোখ ঘুড়িয়ে দেখলো খুব সুন্দর ডেকোরেট করা হয়েছে। মেয়েরা একই রঙের শাড়ি এবং একই সাজ দিয়েছে। ছেলেরা সবাই সবুজ পাঞ্জাবী পড়েছে, অপূর্ব লাগছে সবাইকে। কিন্তু, মেঘার চোখ শুধু শ্রাবনকেই খুজছে। হঠাৎ গান শুনতে পেলো ‘ Mehendi peyar wali hatoon me lagao ji ‘ গানটি শুনে সামনে তাকাতেই দেখলো, সবুজ পাঞ্জাবী সাদা পায়জামা এবং সবুজ রঙের উড়না গলায় এক সুদর্শন যুবক হেটে হেটে আসছে। মেঘার চোখ যেনো থমকে গিয়েছে, আশেপাশের সবাই তাকালো। মেহেদী দেওয়ার জন্য মেহেদী আর্টিস্টকে আনা হয়েছে, শ্রাবন এসে মেঘার হাতে নিজের নাম লিখে দিলো। মেঘা দেখলো, তার হাতে শ্রাবনের নামটি জ্বলজ্বল করছে।
🍂
নিজের পরিবারের সবাইকে এবং তার রহিমা মাকে পেয়ে মেঘা অনেক খুশী হলেও, তার মনে এক টুকরো কালো মেঘ রয়েই গেছে। দুজন ব্যক্তিকে ছাড়া নিজের বিয়ে এবং মেহেদী কোনো কিছুই তার পরিপূর্ণ নয়। এসব ভাবতেই চোখের কোণে জল এসে পড়েছে, আর কেউ লক্ষ্য না করলেও শ্রাবন তা লক্ষ্য করেছে। শ্রাবন মেঘার কাছে এগিয়ে এসে মাইক হাতে নিয়ে বললো,
” আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা এবং বড়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আমি আমার মিষ্টি মেঘপরীর জন্য সারপ্রাইজ রেখেছি। এখন আমি তা প্রদর্শন করতে চাই ”
মেঘা এবং বাকি সবাই অধীর আগ্রহে তাকালো, গান বেজে উঠলো,
Dholak me taal he
Payel me chan chan
Ghungghat ke gori hea
Cehere pe sajan
Jaha bhi e jaye
Bahare bichaye
E khusiyan hi paye
Mere dil ne duya di hea
Mere yaar ki shadi hea
গানটির তালে তালে একটি মেয়ে নাচ করছে এবং এগিয়ে আসছে, তবে মুখে চাদর পেচানো। হঠাৎ সে চাদরটি ফেলে দিলো, মেঘার যেনো বুকে গিয়ে লাগলো। অবাকতার কারনে কখন যে হাত মুখে চলে গিয়েছে নিজেও জানে না, মেয়েটি আর কেউ নয়। মেয়েটি হলো ‘ নিশি খান ‘ মেঘার কলিজার টুকরো বান্ধবী। নিশিকে মেঘা এমন সময়ে আশা করেনি, নিশি এসে জড়িয়ে ধরলো, মেঘার হাতে মেহেদী থাকায় সে জড়িয়ে ধরতে পারলো না। তবে আনন্দে কান্না করে দিয়েছে, সবাই এমন গভীর বন্ধুত্ব দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। মেঘাকে কান্না করতে দেখে শ্রাবন এগিয়ে এসে বললো,
” এইযে শা/লিকা সাহেবা, আমার বউটাকে কান্না করানোর জন্য তো আপনাকে আনি নি। ”
মেঘা এবং নিশি দুজনে হেসে দিলো। ইফতি মেঘার মন ভালো করতে এসে বললো,
” এই শ্রাবইন্না, তোর যে এতো কিউট সুইট শা/লিকা আছে আগে বলিস নি তো। হাহ! অথচ আগে আমরা প্লান করতাম, তোর শা/লিকা আমার কিংবা আমার আগে বিয়ে হলে, আমার শা/লিকা তোর। তুই কি করে মীর জাফরগিরি করলি? দেখিস, বৃষ্টির দিনে উ/ষ্টা খাইয়া কাদায় পড়বি। ”
বাকি সবাই হেসে দিলেও, শ্রাবন (😒) এই ইমোজির মতো মুখটা বানিয়ে রাখলো। ইফতির মাথায় গাট্টা দিয়ে আবারও বলা শুরু করলো,
” আমরা কেউ এই ইফতি ঝিফতির কথায় কান দেবো না। পাবনার পলাতক পা/গ/ল সে। ”
শ্রাবনের টিটকারি শুনে সবাই আবারও হাসলো। ইফতি শ্রাবনের পিঠে একটি কি/ল দিয়ে গিয়ে শান্তর পাশে বসলো। শ্রাবন এবার মোহনীয় স্বরে বলা শুরু করলো,
” আমার মেঘপরীর জন্য এটা বিশেষ সারপ্রাইজ। তবে আরেকটা সারপ্রাইজ আছে, সামনে তাকাও ”
আবারও গান বেজে উঠলো,
Taroon ka chamkta gehena ho
Jis gharme tumhare sadi ho
এই গানের সাথে ছেলেরা নাচতে শুরু করলো, একসময় দুদিকে সরে গেলো। মাঝখান দিয়ে সবুজ পাঞ্জাবী পড়া একটি ছেলে হেটে আসছে। আলোতে আসতেই মেঘা পুনরায় আনন্দে আল্পুত হয়ে গেলো। এবারের ছেলেটি হলো ‘ রাজ রায়হান ‘ মেঘার প্রানপ্রিয় রাজ ভাইয়া। এতোক্ষন এই দুজন মানুষের জন্যই মেঘার মনে এক টুকরো কালো মেঘ ছিলো। এদেরকে পেয়ে, মেঘা যেনো পরিপূর্ণ হলো। কারন, সেই ছোট্টবেলা থেকে রাজ এবং নিশি এই দুজন মানুষকে সে সব পরিস্থিতিতে কাছে পেয়েছে। কি করে নিজের বিয়ের মতো এতোবড় অনুষ্ঠানে মেঘা তাদের ছাড়া ভালো থাকে? শ্রাবনের প্রতি তার ভালোলাগা আবারও বেড়ে গেলো। রাজ মেঘার কাছে এসে বললো,
” আরে বাহ! মেঘরানীকে আজ অপরুপ লাগছে। আমি জানি রে মেঘরানী, তুই আমাকে এবং নিশিকে অনেক মিস করছিলি। তাই, শ্রাবন এবং আমি আগেই প্লান করে রেখেছিলাম। ”
মেঘা কিছুক্ষন কথা বললো, মেঘার আনন্দিত মুখ দেখে আহম্মেদ পরিবারের সবাই খুশি হলো। শান্ত এসে মাইক নিয়ে বললো,
” আচ্ছা গাইস, আমরা দেখলাম শ্রাবন মেঘাকে সারপ্রাইজ দিয়েছে। মেঘার অনুভূতি সম্পর্কে কিছু জানতে পারলে আরও ভালো হতো। আমি মেঘাকে কিছু বলার অনুরোধ করছি ”
শান্ত মেঘার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
” আয় বোনু ”
মেঘা শান্তর হাতটি ধরে এগিয়ে এসে বলা শুরু করলো,
” আসলে কি বলবো ভেবেই পাচ্ছি না, একটা মানুষ কি করে এতোটা কেয়ারিং এবং ভালোবাসাময় হতে পারে? আমি কেনো মন খারাপ করে ছিলাম, তা উনি খেয়াল করেছেন। যেই দুজন মানুষকে ছাড়া এতো এতো অনুষ্ঠান পরিপূর্ণ ছিলো না, উনি সেই দুজনকে এনে দিয়েছেন। সারপ্রাইজ দেখে আমি শিহরিত, দুজনের ভিতরে আসার সময় গানগুলোও সুন্দর ছিলো। আমার প্রানের বান্ধবী ভিতরে আসার সময় ফ্রেন্ডশিপ গান এবং আমার রাজ ভাইয়া আসার সময় ভাইবোনের গান। সব মিলিয়ে আমি প্রচন্ড খুশি, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। ধন্যবাদ দিবো না, কারন উপস্থির সব মানুষগুলো তো আমার নিজেরই। ”
রাজ হেসে বললো,
” তবে শ্রাবন তোর একটু বেশীই নিজের ”
মেঘা কিছুটা লজ্জা পেলো, শ্রাবন এতোক্ষন মেঘার গুছিয়ে কথা বলা দেখলো। অনুষ্ঠান শেষ করে খাওয়া করে, বাকিরা চলে গেলো কিন্তু কাজিনরা রইলো। সবাই মিলে ট্রুথ ডেয়ার খেলার জন্য গোল হয়ে বসলো। প্রথমেই গেলো সবচেয়ে দুষ্টু ব্যক্তিটির দিকে, অর্থাৎ শাফিনের দিকে। শাফিন ডেয়ার নিতেই, সবাই তার দিকে শ/য়/তা/নি নজরে তাকিয়ে আছে। সবার তাকানো দেখে শাফিন শুকনো ঢোক গিললো। তাকে ডেয়ার দেওয়া হলো ‘ নিচের কু/কু/রটির গায়ে পানি ঢেলে দৌড় দিতে হবে ‘ শাফিন রৌদ্রের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে বললো,
” রৌদ্র তুই দাড়া, তোর বেলায় পড়লে কি কি দিবো দেখিস। মায়ার সাথে তোর এতোদিনে যতো চক্কর সব বলামু থাম ”
রৌদ্র কিছু বলার আগেই শান্ত বললো,
” আমরা সব জানি, এখম তুই যা ”
শাফিন কাদো কাদো চোখে নিচে গেলো। বাকিরা ছাদ থেকে দেখবে। রৌদ্র আর মায়া রিলেশনশিপে আছে, তিশা তার কলেজের এক ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে আছে৷ অন্যদিকে, স্নিগ্ধা এনগেজড এবং শাফিন বিদেশে পড়াশোনার জন্য যাবে তাই এসবে নেই। তিশা একটু ঢঙ করে বেশী এবং ন্যাকামি স্বভাবের। শাফিন নিচে গিয়ে কু/কু/রটির চারপাশে হেটে হুট করে গায়ে পানি ঢেলে দিলো দৌড়। কু/কু/রটিও তাকে তাড়া করলো, ওদের দৌড়াদৌড়ি দেখে বাকিরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি করছে। শাফিন কোনোমতে জীবন বাচিয়ে এসে ধপ করে বসে পড়লো। আনন্দেই কেটে গেলো কিছু সময়, তারপর সবাই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
🍂
পরেরদিন সকালে দেরিতে উঠেছে কারন, অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে। সিফাত সাহেব এবং মাহিন সাহেবের ব/কু/নিতে সবাই ভয়ে আছে। অনুষ্ঠানের দিন সবাই দেরিতে উঠছে এবং রাতে সময়মতো ঘুমায়নি জেনে রেগে আছে তারা। একটু পরে কলিংবেলের আওয়াজে দরজা খুলতেই শেফালী বেগম ঘামতে লাগলো
চলবে
{