ষোড়শীর প্রেমের মায়ায় পর্ব -০১

বাসর সজ্জ‍ায় সজ্জিত রুম,,,,বর বিছানার উপরের ঝুলানো ফুলগুলো ছিড়ে, খাটের উপর সাজানো ফুলগুলো ছড়িয়েছিটিয়ে খাটের স্টেন্ডে আদ শোয়া হয়ে আছে। এই প্রথম কোন বাসরে বউয়ের আগে বর বসে আছে। বর বেশে বসে থাকা শ্রাবণের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। কখন আসবে স্নিগ্ধা! আর কখন সে খোপ করে ধরবে। কিন্তু তার সেই আশায় এক বালতি পানি ঢেলে স্নিগ্ধা এলো রাত ০১.০০ টায়।

শ্রাবণ ঘুমিয়ে পরেছে ততক্ষণে, স্নিগ্ধা রুমে ঢুকতে না চাইলেও পিছন থেকে কেউ একজন ধাক্কা দিয়ে উঠলো।
রাগি চোখে পিছন ফিরে একবার চোখ রাঙ্গিয়ে চেয়ে দেখল শ্রাবণের বোন শিলা হাসাহাসি করছে। ওদের দিকে তেড়ে আবার শ্রাবণের কথা মনে পরেগেল। একবার যদি জেগে যায় তাহলে আস্ত রাখবে না তাকে।আস্তে করে দরজাটা টেনে দিয়ে রুমের ভিতর ডুকে পরলো সে। বিয়ের ভারী সাজ! পুরো শরীর চুলকোচ্ছে, বিরক্ত ও লাগছে খুব।আলমারি খুলে নরমাল একটা থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরল। শাওয়ার নিয়ে রুমে ঢুকেই ভেজা চুল গুলোকে টাওয়াল দিয়ে মুছে খাটের কোণে শুয়ে থাকা শ্রাবণের দিকে চেয়ে রইল। একবার যদি জেগে থাকতো তাহলে যে কি অবস্থা করতো। ভেবেই হাসি পাচ্ছে, স্নিগ্ধা টুপকরে শ্রাবণের অন‍্যপাশে শুয়ে পরলো।কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পরই ঘুম চলে আসলো তার।
______________________________________

এপাশ থেকে ওপাশ ফিরতেই শক্ত কিছূর সঙ্গে মাথায় বারী খেলো শ্রাবণ। বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে উঠতেই চোখ খুলেই দেখতে পারলো স্নিগ্ধার মুখ! খাটের উপর থেকে উঠেই দিলো এক চিৎকার-

“স্নিগ্ধা! স্নিগ্ধা!”

স্নিগ্ধা হুম বলেই আরেকপাশে ফিরে গেলো। এত সকাল সকাল সে ঘুম থেকে সহজে উঠে না। যত যাই কিছু হোক উঠবেই না। শ্রাবণ দাতে দাত চেপে স্নিগ্ধার মাথায় টোকা মারলো। একবার, দুবার, তিনবার, স্নিগ্ধা ঘুমের ঘোরে শ্রাবণের হাত ধরে বলে উঠলো-

–“উফফ, বাবা! একটু ঘুমাতে ও দিবা না তোমরা?
বিয়ে করছি বলে কি শান্তিতে ঘুমাবো না?” চোখ বন্ধ করেই শ্রাবণের হাত জড়িয়ে ধরলো। শ্রাবণ তার হাত হেচকা টান দিল। স্নিগ্ধা হুড়মুড় করে উঠে পরলো। দেখল শ্রাবণ তার দিকে চেয়ে আছে। শ্রাবণ তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে, স্নিগ্ধা শ্রাবণের হাতটা ঝেড়ে উঠেগেল।

–” তুই এই রুমে আসলি কখন?”

— “তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে তখন।” স্নিগ্ধা স্বাভাবিক ভাবেই বলল কথাটা।

–” আমি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায়?”

–” জ্বী,আপনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন সেই সময় আমি এসেছি!”
শ্রাবণ চোখ গরম করে চেয়ে আছে। স্নিগ্ধা বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো। শ্রাবণের পাশ কাটিয়ে রুম থেকে বের হওয়ার আগেই শ্রাবণ স্নিগ্ধার হাত ধরে ফেলেছে।

–” কাল দাদুকে নিষেধ করলি না কেন বিয়ের ব‍্যাপারে? ”

–“তুমি করলে না কেন? তুমি যদি পুরুষ মানুষ হয়ে দাদুর ভয়ে কাচুমাচু করে রাজি হতে পারো। আমি হলে দোষ কি?”

— “তোকে কে বলেছে আমি রাজি হয়েছি? তোর মত কালিকে কে বিয়ে করে বলতে পারিস?”

–“আসছে আমার নবাব পূত্র! তুই কোন নবাব রে?
কোন জমিদারের নাতি তুই?”
হারামজাদা দাদুকে গিয়ে বলার মুরদ নেই তিনি এসেছে আমাকে শাসাতে।
শ্রাবণ তেতে উঠলো অসভ‍্য মেয়ে আবার কেমন চিৎকার করছে। শ্রাবণ উঠে গিয়ে স্নিগ্ধার হাত চেপে ধরল।
দরজা খুলতে নিলেই স্নিগ্ধা তার বুকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো –

–” সিনেমা পাইসোস, সিনেমা! আমাকে এসে বলবি স্নিগ্ধা আমি তোকে পছন্দ করি না, আমি তোর সঙ্গে থাকতে পারবো না! আমাকে জোর করে দাদু বিয়ে দিয়েছে, আমি মানি না বলবি, এগুলাই তো বলবি তাইনা ? ”
শ্রাবণ বেক্কেল হয়ে চেয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে।
স্নিগ্ধা আরেকটা ধাক্কা দিয়ে বলল-

–” এসব নাটক করবি তো কানের পট্টি ছিড়ে দিব!
দাত ভেঙ্গে বসিয়ে দিব! অসভ‍্য কোথাকার বিয়েতে যখন কবুল বলেছিস তখন কি মুখের মধ‍্যে তালা দিয়ে রেখেছিস?”
শ্রাবণ স্নিগ্ধার কথায় কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না।
স্নিগ্ধার কথায় তার মুখ যেন পুরাই বন্ধ।

–” শোন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে আগে যেমন তোর লুঙ্গি ধরে প‍্যাচিয়ে দিতাম আর তুই হাটতে গেলে ধপাস করে পরতি , এখন তার থেকে ও বড় কিছু করবো!”
কথাটা কানে কানে বলেই, চলে যেতে চাইলে শ্রাবণ হাত ধরে ফেলল। স্নিগ্ধার হাত ধরে বলে উঠলো —

–” শ্রাবণ কিন্তু এখন আর ছোট্ট শ্রাবণ নয়, তুই ধরবি আর আমি চেয়ে থাকবো!”

–” দেখা যাবে ”

–হুম, দেখা যাবে।”

শ্রাবণ আর স্নিগ্ধা দুজনের মধ‍্যে যুদ্ধ বেশ ভালোই লেগেছে। সেই যুদ্ধের আর তর্কের শব্দ যে বাহিরে শুনা যাচ্ছে তা দুজনের একজন ও জানে না। বাহিরে শ্রাবণের ভাই রঙ্গন এসেছিল বড় ভাই শ্রাবণকে ডেকে দিতে।সব ভুলেগেছে সে তাদের ঝগড়া শুনেই। বাহির থেকেই রঙ্গন সব শুনে দৌড়ে চলেগেল দাদুকে জানাতে।
দৌড় দিতে গিয়ে বেচারা ওয়াল ও দেখেনি, ঠাস করে ওয়ালে পা বাজিয়ে পা তার ব‍্যাথা করছে। সব ব‍্যাথাকে ফেলে সে ছুটলো দাদুকে জানাতে। রঙ্গন যেখানেই ঝগড়া হোক বা বিবাদ এখান থেকে ছুটে ওখানে খবর পৌছে দেওয়ার কাজ টা সে ভালোই পারে।
দাদুর রুমে গিয়ে দেখল তিনি অত‍্যন্ত গর্বের সঙ্গে আত্মীয়দের সঙ্গে বলাবলি করছেন, নাতি- নাতনিদের কথা, নাতি আর নাতনি জগৎ জোড়া। নাতনি যেমন ভালো নাতি ও হাজারে একটা মাত্র ছেলে। রঙ্গন দৌড়ে এসে দাদুর সামনে দাড়ালো হাসফাস করতে করতে বলে উঠলো-

–” দাদু আহ, ও বাবারে!”

–” কি, কি হয়েছে?”

–” দাদু, ইশশ ব‍্যাথা করছে!”

–” কোথায়?”

–” দাদু, শ্রাবণ ভাই…

–” কি শুরু করেছো, কথা বলছি দেখছো না, একবার বলো দাদু আহ, একবার বলো ব‍্যাথা করছে, আরেকবার বলো দাদু শ্রাবণ ভাই!স্পষ্ট কথা বলতে পারো না! স্পষ্ট ভাবে কথা বলো, ”

–” জহির সাহেব পরে কথা বলছি।” রঙ্গনকে ইশারা করলেন বলতে।

–” দাদু শ্রাবণ ভাইয়া আর স্নিগ্ধা ভাবি রাগারাগি করছে”
দাদু রেগে গিয়ে বললেন –

-” এখুনি আসতে বলো দুজনকে!”
রঙ্গন দুজনকে তারাতারি করে ডাকতে চলেগেল।
_____________________________

ড্রয়িংরুমে মাথা নিচু করে বসে আছে শ্রাবণ আর স্নিগ্ধা।
পাশে দাদু, শ্রাবণের বাবা শাহজাহান খান, চাচা সাজ্জাদ খান। আর তাদের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে শ্রাবণ। দাদু চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে দিলেন।

–” শ্রাবণ কি শুনছি তোমার নামে এগুলো? তুমি নাকি স্নিগ্ধাকে বকেছো?”

–” দাদু আমি ওকে মেনে নিতে পারবো না,”

–” চুপ,বেয়াদবের মত মুখের উপর কথা বলছো! কি সমস‍্যা স্নিগ্ধার মধ‍্যে? ”

–” দাদু ওর বয়স মাত্র ষোল!পনেরো থেকে ষোলো তে সবেমাত্র পা দিয়েছে। খুব ছোট তারপর আমার সঙ্গে মানায় না!”

–” এতে কোন সমস‍্যা হয় না, তুমি কি ভুলেগেছো ওর বাবার আর আমাদের ওয়াদা?”

–” দাদু ফুফা তখন মৃত‍্যশয‍্যায় ছিলেন, তখন আপনি এই কথা বলেছিলেন এখন……শ্রাবণের কথা শুনে এবার আর চুপ থাকতে নারেননি তার বাবা বলে উঠলেন-

–” খামোশ! এত বড় স্পর্ধা তোমার! তুমি যদি ছোট হতে না, তোমাকে চাপকে সিধে করে দিতাম হতচ্ছাড়া বাদর ছেলে!

–” বাবা আমি তো ভুল কিছু বলিনি, তোমরা একটু ভেবে দেখো আমি ওকে নিয়ে কি করে সংসার করবো?
কি আছে ওর মধ‍্যে? স্নিগ্ধা শ্রাবণের পাশে ছিল, শ্রাবণে সঙ্গে দাড়িয়ে ছিল বলে দুজনের হাত একসঙ্গে ছিল। স্নিগ্ধা শ্রাবণের হাতে একটা জোরে চিমটি কেটে দিল।
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে চাইতেই। স্নিগ্ধা কেদে উঠলো –

–” নানাভাই, আমি ওর সঙ্গে থাকবো না,”

–” কেন? কি সমস‍্যা?কি করে ভুলে গেছো সব তোমরা?”

–” নানা ভাই, ওই সময় আমরা দুজনে খুব ছোট ছিলাম।”

–“তোমাদের স্পর্ধা আর বেয়াদবি দেখে আমি অবাক হচ্ছি। এর শাস্তি তোমাদের পেতেই হবে।”

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#সূচনাঃপর্ব

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here