ষোড়শীর প্রেমের মায়ায় পর্ব -২৩

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_তেইশ

হঠাৎ তার মনে হলো তাশদীদকে ফোন করে জেনে নেওয়া যাক। দুবার রিং হওয়ার পর অপর পাশ থেকে ফোনকল রিসিভ হলো। স্নিগ্ধার হাত থেকে ফোনটা পরে যাওয়ার উপক্রম। নিজেকে সামলেই বলে উঠলো –

–” কোন হসপিটালে?”
–” কখন এরকম হয়েছে?”
–” এখন জানালেন আপনি আমাকে?”
–” আশ্চর্য নাম্বার না থাকলে ওর ফোন থেকে কল করে জানাতেন! স্নিগ্ধা তাশদীদের সঙ্গে কথা বলে হসপিটালের ঠিকানা জেনেই নাম্বারটা কেটে দিয়েছে স্নিগ্ধা।

হাসপাতালের অর্থপেডিক ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে আছে শ্রাবণ। ডান হাতে ব‍্যান্ডেজ করা চোখদুটো বন্ধ করে শুয়ে আছে, কপালের খানিকটা ব‍্যান্ডেজ করা। ওয়ার্ডের ভিতরে ড্রেসিং করানোর পর ভিআইপি কেবিনে শীফট করা হয়েছে। স্নিগ্ধা তাশদীদকে ফোন করে জেনে নিল কেবিন নাম্বার। কেবিন দুশো পাচঁ নাম্বার কেবিনে ঢুকে দেখল শ্রাবণ ভাঙ্গা হাতটা বাম হাত দিয়ে ধরে রেখেছে।
চোখ দুটো বন্ধ থাকলেও কুচঁকে রয়েছে। স্নিগ্ধা বুঝতে পারল শ্রাবণের ঘুম আসেনা চোখের উপর আলো পরলে। সে চোখের উপর হাত দিয়ে ঘুমায়। স্নিগ্ধা অন‍্যদের দিকে তাকিয়ে দেখল তারা সবাই কথা বলছে। স্নিগ্ধাকে দেখে উঠে পরল উৎপল, স্নিগ্ধা শ্রাবণের সামনে গিয়ে তার চোখের উপর হাত দিল। ছায়া পেয়ে চোখ জোড়া খুলে ফেলল জট করে শ্রাবণ। আলো পরলে ঘুম আসে নাকি?
ছায়া পরাতে চোখ খুলে স্নিগ্ধাকে একবার দেখে আবার চোখ বন্ধ করল। বন্ধ করেই বলল –

–” কখন এলি?”

–” এইতো এখন এলাম, কি করে হলো এসব? গাড়ি চালাচ্ছেন, রাগ দেখাবেন ভালো কথা তাই বলে হাই স্পিডে? একবার নিজের কথা ভাবলেন না? নিজের না ভাবুন মামির কথা ভাবলেন না? পরিবারের কারো কথা ভাবলেন না? আচ্ছা আজ যদি এক্সিডেন্টে কোন পরিবারের কোন মানুষ মারা যেত?”
উৎপল এগিয়ে এসে বলল শ্রাবণকে না বকাবকি করতে,
শ্রাবণের কোন দোষ নেই, গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা পেরিয়ে অপর প্রান্তে আসতে নিলেই, একটা বাস দ্রুত গতিতে এসে ধাক্কা দিয়ে যায় শ্রাবণকে। ডানপাশের হাতে গাড়ির ধাক্কায় হাড়ের জয়েন্ট নড়েগেছে,ধাক্কায় পরে গিয়ে শ্রাবণের কপাল ছিলে গেছে খানিকটা।

–” আপনি জানেন না উৎপলদা আজ উনি গাড়ি হাইস্পিডে চালিয়েছেন। একটু ও কেয়ার করেন না উনি কারোর!”

–” আচ্ছা বুঝেছি সব দোষ ওর! তুমি এখন জিড়িয়ে নেও, ওকে দেখে রাখো। আমরা দেখে আসি ডাক্তার কি বলেন। বেশী কিছু তো আর হয়নি, এইতো কিছু ঔষধ দিয়ে দিবে। এইতো কয়েক দিন তারপর সব ঠিক, এত চিন্তা করোনা তুমি!হাতটা ধরে টান মেরে দিয়েছে ব‍্যাস ব‍্যাটা দুদিন পরেই দেখবে এই হাত দিয়ে ব‍্যাডমিন্টন খেলতে পারবে। আচ্ছা দুজনে মিলে একটু গল্প গুজব করো। এই চল সবাই।”

স্নিগ্ধা শ্রাবণের সঙ্গে বেডে বসেছে, শ্রাবণ এখনো কথা বলেনি। স্নিগ্ধা শ্রাবণের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল –

–” কেন এভাবে হাটতে গেলেন আপনি? একটু সাবধানে দেখে চলতে ও তো পারতেন! মামি-মামা, নানা-নানু ও তো কত টেনশন করতো বলুন, সবাইকে আমি কি জবাব দিতাম? আমাদের কথা একবার ও ভাবলেন না?”
শ্রাবণ এখনো দুম ধরে বসে রয়েছে। চোখদুটো খিচেঁ বন্ধ করে রয়েছে। শুধু তার উপরের কষ্টগুলোই দেখেগেল ভিতরের কষ্টগুলো কি দেখতে পেলো না? শ্রাবণকে চুপ করে শুয়ে থাকতে দেখে, নিজের চোখের পানিগুলোকে মুছে তার সামনে থেকে উঠেগেল স্নিগ্ধা। কেবিন থেকে বেড়িয়ে দেখল সবাই কেবিনের বাইরে দাড়িয়ে আছে সে ও তাদের সামনে গেল। স্নিগ্ধা তাদের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল –

–” ডাক্তার কি বলেছে? ওনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে?”

–” হ‍্যা, তবে সাবধানে,একটু রেস্ট নিক তারপর নাহয় ওকে নিয়ে যেয়ো!”

–” হুম,”
কথার মাঝেই স্নিগ্ধাকে ডেকে উঠলো মহিমা। স্নিগ্ধাকে একপাশে নিয়ে দাড় করিয়ে দিল সবার থেকে আলাদা করে।

–“আচ্ছা স্নিগ্ধা শ্রাবণের সঙ্গে তোমার কিছু হয়েছে? মানি তোমাদের মধ‍্যে সম্পর্কটা কি ঠিক হচ্ছে না?”
মহিমার কথায় কিছুটা অবাক হয়ে চেয়ে আছে স্নিগ্ধা।

–” দেখ স্নিগ্ধা আমার মনে হয়, তোমাদের সম্পর্কটাকে আরেকটু আগানোর দরকার। তুমি কি মনে করো আমি জানিনা, তবে আমার মনে হয়। শ্রাবণের ভালোবাসায় কোন খুত আমি দেখিনি। একটা মানুষকে যতটুকু সম্মান দিয়ে আগলে রাখা যায় তার সবটুকু না হোক কিছুটা হলেও শ্রাবণ তোমাকে দেওয়ার চেষ্টা করে । জীবনে হাজারো মানুষ আসবে, কিন্তু এমন ভালোবাসার মানুষ এমন আগলে রাখার মত মানুষ কেউ আসবে না,কখনো! আচ্ছা শ্রাবণের প্রতি কি তোমার মনে একেবারেই কোন অনুভূতি হয়নি?
আমার জানামতে একটা মানুষের প্রতি যখন অপর আরেকটা মানুষ কেয়ার করে তাকে আগলে রাখে তার প্রতি সেই মানুষটার কিছুটা হলেও আবেগ অনুভূতি থাকে। তোমার কি তেমন কিছু কখনো মনে হয়নি? স্নিগ্ধার চোখ দিয়ে পানি পরছে, সে বেঞ্চে বসে পরেছে।

–” স্নিগ্ধা তুমি কি শ্রাবণকে ভালোবাসো?”

–” আপু আমি যেটুকু বুঝেছি,
ভালোবাসা জিনিসটা না কেউ মুখ ফুটে স্বীকার করে কেউ তা বুকের ভিতর আগলে রাখে,
পৃথিবীতে দুই প্রকৃতির মানুষ হচ্ছে এরা! আমায় আর শ্রাবণ ভাইকে সেই স্তরে অনায়াসেই রাখতে পারো তুমি।
আমি এসব প্রেম ভালোবাসা কিছুই বুঝতাম না। হঠাৎ করে একদিন বুঝলাম ওনার সানিধ‍্য পেলে আমি ভালো থাকি! ওনার হুটহাট করে কাছে আসা, রাতের বেলকনিতে হাতে গিটার নিয়ে পাগলামি করা! চকোলেট ভর্তি বক্সগুলো টেবিলেরড্রয়ারে লুকিয়ে রাখা। সব কেমন আমার কাছে অন‍্যরকম লাগে। সবচেয়ে বড় কথা কি জানো? তার গলার স্বরটাও আমায় খুব টানে। এই যে হঠাৎ তার এই এক্সিডেন্টের মাধ‍্যেই আমার মনে হলো আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো যদি কোন খারাপ কিছু হয়ে যায় ওনার। আমি না অন‍্য মানুষের মত হেটে হেটে, প্রতিটা মুহুর্তে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারিনা! তা আমার দ্বারা হয় না আপু, আমি এতটাই অকর্ম তার কাছে প্রকাশ ও করতে পারিনা আমিও তাকে ভালোবাসি, তারমত করে না
আমার ভালোবাসা প্রতিমুহুর্তের চঞ্চলা প্রেমিকার মত নয়। নিরবে ভালোবাসি!

—” বুঝেছি, চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো তুমি আর শ্রাবণ দুজন দুই মেরুর। দিন শেষে দুজন ই দেখো সবার থেকে আলাদা হবে, সব ঠিক হয়ে যাবে।
জানো তো স্নিগ্ধা যারা কেউ কেউ না ভালোবাসার খুব কাঙ্গাল থাকে। তাদের মধ‍্যে ভালোবাসার গভীরতাটা খুব গভীর থাকে। তাই বলবো একটু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো, তুমি ও ওর মত করে ওর পাগলামি আর আবেগ অনুভূতিতে সারা দাও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
__________________________

ডাক্তারের পরামর্শে শ্রাবণকে নিয়ে স্নিগ্ধা গাড়িতে করে বাসায় ফিরেছে। বাসায় এসে তাশদীদের সাহায‍্যে রুমে শুইয়ে দিল শ্রাবণকে। শ্রাবণই বলেছে তাকে তার রুমে শুইয়ে দিতে। তাশদীদকে আর উৎপলকে বিদায় করে স্নিগ্ধা শ্রাবণের জন‍্য সুপ গরম করে নিয়ে আসলো।
বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে, শ্রাবণকে উঠিয়ে বসানোর চেষ্টা করতে চাইলে শ্রাবণ হাত সরিয়ে ফেলল।
স্নিগ্ধা জোর করে শ্রাবণকে ধরে উঠিয়ে বসিয়ে দিল। খুব কষ্ট হচ্ছিল স্নিগ্ধার শ্রাবণকে ধরে উঠাতে। ভারী শরীরের অধিকারী লম্বাটে একটা ছেলেকে উঠানো তার সাধ‍্যে নেই।
শ্রাবণ ও কিছুটা চেষ্টা করল নিজ থেকে। স্নিগ্ধা শ্রাবণকে বসিয়ে বলল –

–” সুপটুকু খেয়ে নিন, ”

–” আমি খাবো না,”

–” না শুনবো না,”

–” আমার কাউকে খাইয়ে দেওয়া লাগবে না,দয়া দেখিয়ে খাওয়াতে আসবেন না।”

–” এখানে দয়ার কথা আসছে কেন?”

–” আমি অসুস্থ বলে আমাকে দয়া দেখিয়ে খাইয়ে দিতে এসেছেন তাই বললাম।”

–” আজেবাজে কথা বন্ধ করে সুপটা খেয়ে নিন। পুরো বাসাটা কিন্তু খালি, ক‍থা না শুনলে ভাঙ্গা হাতে এমন চেষ্টা চাপ দিব না। একদম বাপ বাপ করে চিল্লানি দিলেও কেউ আসবে না! তাই কথা কম কাজ বেশী, সুপটা খেয়ে ফেলুন। আর তাড়াতাড়ি করে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করুন।
কত ভার আপনার শরীরের সেটা দেখেছেন?”

–” আমার ভার বেশি? ইউ মিন, আই এম সো ফ‍্যাট?”

–” আমি তা বলিনি, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন, আপনার মত প্রাপ্তবয়স্ক একটা যুবককে আমার মত আধমরা মেয়ের পক্ষে টানা সম্ভব না!”

–” তাহলে তোর আমাকে ধরে উঠাতে হবে না, ইভেন তোর কোন সাহয‍্য লাগব‍ে না। ”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের কোন কথা না শুনে সুপের বাটি থেকে জোর করে শ্রাবণকে সুপ খাইয়ে দিল।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here