#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_দুই
” বাবা আমি তো ভুল কিছু বলিনি, তোমরা একটু ভেবে দেখো আমি ওকে নিয়ে কি করে সংসার করবো?
কি আছে ওর মধ্যে? স্নিগ্ধা শ্রাবণের পাশে ছিল, শ্রাবণের সঙ্গে দাড়িয়ে ছিল বলে দুজনের হাত একসঙ্গে ছিল। স্নিগ্ধা শ্রাবণের হাতে একটা জোরে চিমটি কেটে দিল।
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে চাইতেই। স্নিগ্ধা কেদে উঠলো –
–” নানাভাই, আমি ওর সঙ্গে থাকবো না,”
–” কেন? কি সমস্যা?কি করে ভুলে গেছো সব তোমরা?”
–” নানা ভাই, ওই সময় আমরা দুজনে খুব ছোট ছিলাম।”
–“তোমাদের স্পর্ধা আর বেয়াদবি দেখে আমি অবাক হচ্ছি। এর শাস্তি তোমাদের পেতেই হবে। কি ভেবেছো এভাবে ছেড়ে দেবো দুজনকে? কখনোই না! সেকান্দার আলি খান আর যাইহোক অন্যায় আর বেয়াদবি ক্ষমা করে না! এই স্পর্ধার জন্য তোমাদের শাস্তি হিসেবে দুজনকে একসাথে থাকতে হবে।”
–” নানাভাই প্লিজ! এমনটা করো না, আমার কথাটা শুনো। শ্রাবণ ভাই আর আমি তখন খুব ছোট ছিলাম, বাবা ও তখন খুব অসুস্থ ছিল। সেই মুহূর্ত তোমরা রাজি হয়েছো বলে এখন আমাদের বিয়ে দিয়ে এক করে রাখতে পারো না। আমি মানছি আমার বাবা নেই, মা নেই, বোন নেই তাই তোমরা আমাকে আগলে রাখতে শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়েছো। কিন্তু এটাও তো ভাবতে হবে যে সুখের জন্য তোমরা আমাকে শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়েছো সেই দাম্পত্য জীবনেই যদি আমরা সুখী না হই? ”
“আজ দুজন নাহয় একসঙ্গে থাকলাম তোমাদের কথা রাখতে বাধ্য হয়েই রইলাম। ভবিষ্যতে যদি আমরা আলাদা হয়ে যাই?”
–” যত বড় মুখ নয়,তত বড় কথা! লাই দিয়ে দিয়ে তোমাকে মাথার উপর উঠিয়ে ফেলেছে সবাই। আমাদের উপর কথা বলছো তুমি। এত কথা যেহেতু বলছো তাহলে শুনো শ্রাবণের সঙ্গে তুমি কালকের মধ্যে ঢাকা যাচ্ছো। শ্রাবণ আমি যদি শুনি তুমি ওর সঙ্গে কোন খারাপ আচরণ করেছো তোমাকে আমি বাড়ি থেকে বের করে দিব। এই বাড়ির দরজা দুজনের জন্য সারাজীবনের জন্য বন্ধ! তোমার পড়াশুনা থেকে শুরু করে তোমার থাকা খাওয়া সব বন্ধ, বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ফূর্তি করা বন্ধ হয়ে যাবে তোমার।”
শ্রাবণ চমকে গিয়েছে দাদুর কথায়, স্নিগ্ধার দিকে রাগি চোখে তাকাতেই, স্নিগ্ধা একটা হাসি দিল যদিও সেটা সবার আড়ালে। শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে শুনতে লাগল সব, রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।
–“আর স্নিগ্ধা তোমাকে ও বলে রাখছি, তুমি যদি এই সম্পর্ক না রাখো তোমাকে ও আমরা জায়গা দিব না।”
স্নিগ্ধা মনে মনে ভাবছে না রাখলেই ভালো, সে তার ফুফুমনি রিদ্ধিতার কাছে চলে যাবে। স্নিগ্ধা কিছু বলার আগেই শ্রাবণ বলে উঠলো –
–“আমি রাজি তোমাদের কথায়, ” শ্রাবণের কথায় স্নিগ্ধা অবাক হয়েগেল, কি বলছে সে? এইতো কিছুক্ষণ আগেই দুজন ঝগড়া করলো। একসঙ্গে থাকবে না। আর এখনই মত বদলে ফেলেছে!
–” দাদু আমি স্নিগ্ধার সঙ্গে থাকবো, তোমরা চিন্তা করো না! ওকে নিয়েই থাকবো।”
–” এই তো কিছুক্ষণ আগে বললে,ওর সঙ্গে থাকা সম্ভব নয়!”
–” বাবা আমি বলেছিলাম ঠিকই কিন্তু পরে মনে হল দাদুর কথাটা মেনে নিয়ে দেখি কি হয়।”
–” ভেরি গুড মাই সান ” ইটস্ গুড ডিসিশন ফর ইউর লাইফ!” অপরদিকে স্নিগ্ধা ভাবছে শ্রাবণ কেন এমন করলো? এত সহজে তো দুজন কখনোই মিলে না। আজ এত সহজে দাদুর কথা শুনে তাকে নিয়ে সংসার করতে চাইছে?”
–” তোমরা এখন যেতে পারো, আর শুনো শ্রাবণ কালকেই তুমি ওকে নিয়ে ঢাকায় যাবে। সেখানে তোমাদের দেখে রাখবে সাজ্জাদ খান! সাজ্জাদের বাড়িতে দুজন থাকবে, কি বলেছি বুঝতে পারছো?”
শ্রাবণের মাথায় যেন বাজ পরলো, স্নিগ্ধা যাবে তার সাথে? এই মেয়েতো তাকে এমনিতেই জ্বালিয়ে মারে। শাস্তির ভয়েই তো সে রাজি হলো এখন দুজনকে সেই আবার ও একসাথে থাকতে হবে!
–” দাদু ও কেন যাবে শুধু, শুধু! ”
–” ও যাবে, তোমরা সাজ্জাদের কাছে থাকবে স্নিগ্ধার সব দায়িত্ব তোমার উপর!”
–” ঠিক আছে দাদু,”
–” যাও এখন,” দুজনে মিলে যার যার রুমে চলে এলো।
স্নিগ্ধা রুমে ঢুকেই শ্রাবণের সামনে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল
–” এটা কি হলো?”
–” কোনটা?”
–“বুঝতে পারছিস না তুই? কেন বললি আমরা একসাথে থাকবো?”
–” আরে ওটাতো দাদুর শাস্তির কথা শুনে, তুই ভাব আজ যদি আমি ঐ কথাটা বলতাম দাদু আমাকে আর তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিত তখন আমরা কি করতাম? তুই মাত্র মাধ্যমিক দিয়েছিস, আর আমি গ্রেজুয়েশন ও কমপ্লিট করতে পারেনি! কোথায় যেতাম আমরা বলতে পারিস?”
–“স্নিগ্ধা শ্রাবণকে ধাক্কা দিয়ে বলল -তোর জন্য আমার কানাডায় যাওয়ার পথ বন্ধ হয়েগেল। রিদিতা ফুফি আমাকে বলেছিল আমাকে নিয়ে কানাডা চলে যাবে। আর আজ তোর বোকামির জন্য আমার সব প্ল্যান স্পয়েল হয়েগেল।”
–” তুই শুধু তোর নিজের একার কথাটা ভাবলি স্নিগ্ধা একবার আমার দিকটা ভাবলি না! আমি যেটা ভেবেছি সেটাই ঠিক, তুই একবার ভাব আমরা এখনো নিজের পায়ে দাড়াতে পারিনি, সেই জায়গায় কিভাবে দাদুর কথা অমান্য করি?”
–” তুই এখন এই মুহুর্তে এখান থেকে যাবি, আমি তোর কোন কথা শুনতে চাই না!”
–” বুঝার চেষ্টা কর,,, স্নিগ্ধা হাত উচু করতেই শ্রাবণ রূম থেকে বেরিয়েগেল।
খুব ছোটবেলা থেকেই দুজন এই বাড়িতে এলে কখনোই একসাথে থাকতো না। দুজনে ঝগড়া বাধিয়ে দিত, স্নিগ্ধার মা মারা যায় একটা দূর্ঘটনায় তার কয়েক বছর পরই স্নিগ্ধার বাবা ও মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে শশুরের হাতে ধরে বলে গিয়েছিলেন তার ছোট্ট মেয়েটিকে যেন তিনি দেখে রাখেন। আর যদি বিয়ে দেন তবে এই বাড়ির ছেলের বউ হিসেবেই যেন তাকে রেখে দেয়। তার মতে দাদুর বাড়ির লোকজন থেকে নানুর বাড়ির লোকজন তাকে আগলে রাখবে। স্নিগ্ধার বাবা মারা যাওয়ার পর সত্যিই কখনোই তার নানাভাই আর মামারা তাকে কখনোই এতিমের নজরে দেখেনি সব সময় তাকে এই বাড়ির মেয়ে হিসেবে আগলে রেখেছিল।
স্নিগ্ধা তার বাবার ছবিটা কোলে নিয়ে দেখতে লাগল আর বলল -” চলেগেলে তো গেলে একদম দুজনই চলেগেলে, একবার ভাবলে না এই অভাগীর কথা?
কেন আমাকে জন্ম দিলে? যদি একা করে রেখে যাও?
খুব কি অপরাধ করেছিলাম? স্নিগ্ধার গাল বেয়ে পানিগুলো ঝরঝরিয়ে পরছে। সেগুলোকে মুছে বলল –
-” যখন ঐ নীল আকাশে যাবো না, তোমাদের সঙ্গে আর কথা বলবো না! ঐ পাড়ে দুজনে মিলে তখন আঙ্গুল চুষো! আর আমি তোমাদের কাচঁকলা দিব!”
–“ছিহ! স্নিগ্ধা কি বলছিস এগুলো, মুখেও আনতে নেই এগুলো মা! তুই কেন চলে যাবি? এগুলো বলতে নেই মা, নানাভাইয়ের উপর রাগ করে মৃত্যু নিয়ে কথা বলছিস!”
–” মামি আমি উনাদেরকে বলছি, এই যে আমাকে একা ফেলে দুজন চলে গিয়েছে, আমি ও যখন উপরে যাবো আমি ওদের সঙ্গে কথা বলবো না!” স্নিগ্ধার ছোটমামি তাকে বুকে টেনে কপালের চুলগুলোকে সরিয়ে আদর করে বললেন –
–” আমার মেয়ের কারোর সঙ্গে কথা বলতে হবে না। আমি আছি না, আমি আমার মেয়েটাকে দেখে রাখবো। তুই জানিস না তোর কিছু হলে তোর এই মায়ের কষ্ট হবে। আমার তো তুই ছাড়া কেউ নেই! তুই ও যদি চলে যাস আমি কি করবো! আমার মত নিসন্তানের তো তুই সব!”
–” কে বলেছে তুমি নিসন্তান মামি? তোমার কাছ থেকে যে আমি গন্ধ পাই! মা, মা, গন্ধ মামী! এই গন্ধ যে একজন মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া যায় তুমি জানোনা?” আবেগে পুষ্পিতার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগল। সেই চোখের পানিগুলোকে মুছে, স্নিগ্ধার কপালে, গালে অজস্র চুমু দিতে লাগলেন তিনি।
চলবে।